Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
এটি জনসংখ্যার ঘনত্ব, জাতিগততা, শিক্ষার স্তর, জনস্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক অবস্থা, ধর্মীয় অনুষঙ্গ এবং জনসংখ্যার অন্যান্য দিক সহ দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যার একটি পরিসংখ্যান।
দক্ষিণ কোরিয়ার জনপরিসংখ্যান | |
---|---|
জনসংখ্যা | ৫,১৮,৪৪,৮৩৪ (২০২২ প্রাক্কলন) |
বৃদ্ধিহার | ০.২৪% (২০২২ প্রাক্কলন) |
জন্মহার | ৫.৩ জন্ম/১,০০০ জন (২০২১) |
মৃত্যুহার | ৭.১২ মৃত্যু/১,০০০ জন (২০২২ প্রাক্কলন) |
গড় আয়ু | ৮২.৯৭ বছর |
• পুরুষ | ৭৯.৮৮ বছর |
• মহিলা | ৮৬.২৪ বছর (২০২২ প্রাক্কলন) |
গর্ভহার | ০.৮১ শিশুজন্ম/নারী (২০২১) |
শিশুমৃত্যু হার | ২.৮৭ মৃত্যু/১,০০০ জন্ম |
গড় অভিবাসন হার | ২.৬৩ অভিবাসী/১,০০০ জনে (২০২২ প্রাক্কলন) |
বয়স গঠন | |
০-১৪ বছর | ১২.০২% |
৬৫ বছর-তদুর্ধ্ব | 16.৭৪% |
লিঙ্গানুপাত | |
মোট | ১.০১ পুরুষ/মহিলা (২০২২ প্রাক্কলন) |
জন্মকালে | ১.০৫ পুরুষ/মহিলা |
অনুর্ধ্ব ১৫ | ১.০৫ পুরুষ/মহিলা |
৬৫-তদুর্ধ্ব | ০.৬ পুরুষ/মহিলা |
জাতীয়তা | |
জাতীয়তা | কোরিয়ান |
প্রধান জাতিগোষ্ঠী | কোরিয়ান (৯৯.৯৯%) |
ভাষা | |
কথিত | কোরীয় |
২০১২ সালের জুনে, দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা ছিল ৫০ মিলিয়ন,[1] যা ২০১৬ সালের শেষ নাগাদ সর্বোচ্চ প্রায় ৫১ মিলিয়নে পৌঁছায়।[2] তবে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দক্ষিণ কোরিয়ার মোট উর্বরতার হার (টিএফআর) হ্রাস পেয়েছে। কিছু গবেষকের মতে, বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে একবিংশ শতাব্দীর শেষ নাগাদ দেশটির জনসংখ্যা কমে দাঁড়াবে প্রায় ২৮ মিলিয়ন।[3]
২০১৮ সালের অক্টোবরে দেশটিতে মাত্র ২৬,৫০০ শিশু এবং সেবছর সর্বমোট আনুমানিক ৩,২৫,০০০ শিশুর জন্মের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় উর্বরতা আন্তর্জাতিক বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে। কারণ এর ফলে দেশটি বিশ্বের সর্বনিম্ন জন্মহারবিশিষ্ট দেশ হয়ে ওঠে।[4][5][6] দক্ষিণ কোরিয়ার উর্বরতার নাটকীয় হ্রাসের আরও একটি ইঙ্গিত হিসাবে, ২০২০ সালে দেশটি জন্মের তুলনায় বেশি মৃত্যু রেকর্ড করেছে। ফলে আধুনিক রেকর্ড শুরু হওয়ার পর এটি ছিল প্রথম জনসংখ্যা হ্রাস।[7][8]
বিশ্লেষকরা দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা হ্রাসের জন্য নিম্ন জন্মহার ও দেশটির উচ্চ অর্থনৈতিক বৈষম্যের পাশাপাশি জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়, ওইসিডি সদস্যদেশের হিসেবে নিম্ন মজুরি, কাজের সুযোগের অভাব এবং ক্রমবর্ধমান আবাসন-ব্যয়কে দায়ী করেন।[9] ফলস্বরূপ, অনেক দক্ষিণ কোরিয়ান তাদের দেশকে "হেল জোসন[lower-alpha 1] বলে অভিহিত করেছে এবং গত দুই প্রজন্ম নিজেদেরকে "সামফো"[lower-alpha 2] এবং "এন-ফো"[lower-alpha 3] বলে মনে করেছে।[10][11] এছাড়া ওইসিডি ও অন্যান্য উন্নত বিশ্বের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।[12]
বিগত বিভিন্ন শতাব্দীতে বিভিন্ন এশীয় মানুষ কোরিয়ান উপদ্বীপে স্থানান্তরিত হয়েছিল, তবে খুব কম মানুষই এখানে স্থায়ী হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া পূর্বে একটি অত্যন্ত সমজাতীয় জাতি হওয়া সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক দশকগুলিতে বিপুল সংখ্যক বিদেশী জাতিসত্তার আবাসস্থল হয়ে উঠেছে, যেখানে উত্তর কোরিয়ায় এমনটা ঘটেনি। উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ই জাতীয়তা বা নাগরিকত্বের দিক থেকে সমতুল্য এবং তারা একক, সমজাতীয় জাতিগোষ্ঠী ও রাজনৈতিক "রেইচ" (race) ধারণার অন্তর্ভুক্ত।[13] জাতীয়তাবাদীরা কোরিয়ার মোট জনসংখ্যাকে ৮০ মিলিয়ন বলে উল্লেখ করে, যার মধ্যে উত্তর কোরিয়ার জনসংখ্যাও অন্তর্ভুক্ত।[14]
অভিন্ন ভাষা এবং বিশেষ করে অভিন্ন জাতিসত্তাকে দক্ষিণ কোরিয়ানরা পরিচয়ের ক্ষেত্রে নাগরিকত্বের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে দেখে।
বয়স ও লিঙ্গ অনুসারে দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা (জনপরিসংখ্যান পিরামিড)
বয়সের কোঠা | পুরুষ | মহিলা | মোট | % |
---|---|---|---|---|
মোট | ২,৫৬,০৮৫০২ | ২,৫৪,৬০,৮৭৩ | ৫,১০,৬৯,৩৭৫ | ১০০ |
০-৪ 0–4 | ১১,৫৯,০১১ | ১০,৯৯,৬৫৯ | ২২,৫৮,৬৭০ | ৪.৪২ |
৫-৯ | ১১,৬৯,৭৭০ | ১০,৯৮,০৮১ | ২২,৬৭,৮৫১ | ৪.৪৪ |
১০-১৪ | ১২,৬২,৭৭০ | ১১,৬৫,০২২ | ২৪,২৭,৭৯২ | ৪.৭৫ |
১৫-১৯ | ১৬,৬৮,৬৮৩ | ১৫,২৫,৩৯৬ | ৩১,৯৪,০৭৯ | ৬.২৫ |
২০-২৪ | ১৮,৮৭,৭৭৬ | ১৬,৪৩,৩৩২ | ৩৫,৩১,১০৮ | ৬.৯১ |
২৫-২৯ | ১৭,২৮,৮৮৮ | ১৫,৩৬,৪০০ | ৩২,৬৫,২৮৮ | ৬.৩৯ |
৩০-৩৪ | ১৯,৮৬,৭৯৬ | ১৮,২৪,৮১৪ | ৩৮,১১,৬১০ | ৭.৪৬ |
৩৫-৩৯ | ২০,২২,৪৬৬ | ১৯,০৪,৩৯৬ | ৩৯,২৬,৮৬২ | ৭.৬৯ |
৪০-৪৪ | ২২,১৮,৪৪২ | ২১,২০,৩৮৫ | ৪৩,৩৮,৮২৭ | ৮.৫০ |
৪৫-৪৯ | ২২,১৭,০১৩ | ২১,৭১,১৪৪ | ৪৩,৮৮,১৫৭ | ৮.৫৯ |
৫০-৫৪ | ২১,৫৩,১৮৬ | ২১,১০,২৬১ | ৪২,৬৩,৪৪৭ | ৮.৩৫ |
৫৫-৫৯ | ১৯,৬৯,২৩২ | ১৯,৮৭,৬১৭ | ৩৯,৫৬,৮৪৯ | ৭.৭৫ |
৬০-৬৪ | ১৩,৭৯,৬৯৪ | ১৪,৪১,৭৬৩ | ২৮,২১,৪৫৭ | ৫.৫২ |
৬৫-৬৯ | ১০,২৮,১২৯ | ১১,১৫,৮৯৪ | ২১,৪৪,০২৩ | ৪.২০ |
৭০-৭৪ | ৭,৯৩,৮৫৫ | ৯,৭৬,৮৮৬ | ১৭,৭০,৭৪১ | ৩.৪৭ |
৭৫-৭৯ | ৫,৫৩,১৭৮ | ৮,০৯,৪৯১ | ১৩,৬২,৬৬৯ | ২.৬৭ |
৮০-৮৪ | ২,৭৬,৬২৭ | ৫,৩৭,৫৯৫ | ৮,১৪,২২২ | ১.৫৯ |
৮৫-৮৯ | ৯৮,৮৫৫ | ২,৭৪,১৩২ | ৩,৭২,৯৮৭ | ০.৭৩ |
৯০-৯৪ | ২৮,৭৫৯ | ৯৫,৯৬৪ | ১,২৪,৭২৩ | ০.২৪ |
৯৫-৯৯ | ৪,৯২৩ | ১৯,৮৭৩ | ২৪,৭৯৬ | ০.০৫ |
১০০+ | ৪৪৯ | ২,৭৬৮ | ৩,২১৭ | ০.০১ |
বয়সের কোঠা | পুরুষ | মহিলা | মোট | শতাংশ |
০-১৪ | ৩৫,৯১,৫৫১ | ৩৩,৬২,৭৬২ | ৬৯,৫৪,৩১৩ | ১৩.৬২ |
১৫-৬৪ | ১,৯২,৩২,১৭৬ | ১,৮২,৬৫,৫০৮ | ৩,৭৪,৯৭,৬৮৪ | ৭৩.৪২ |
৬৫+ | ২৭,৮৪,৭৭৫ | ৩৮,৩২,৬০৩ | ৬৬,১৭,৩৭৮ | ১২.৯৬ |
বয়সের কোঠা | পুরুষ | মহিলা | মোট | % |
---|---|---|---|---|
মোট | ২,৫৮,৬৩,৫০২ | ২,৫৭,৪৩,১৩১ | ৫,১৬,০৬,৬৩৩ | ১০০ |
০-৪ | ১০,৪১,৫৪৬ | ৯,৯০,৪৬৬ | ২০,৩২,০১২ | ৩.৯৪ |
৫-৯ | ১১,৭৭,৪২২ | ১১,১২,২১৩ | ২২,৮৯,৬৩৫ | ৪.৪৪ |
১০-১৪ | ১১,৭২,৮২০ | ১০,৯৪,৯২১ | ২২,৬৭,৭৪১ | ৪.৩৯ |
১৫-১৯ | ১৪,৬৯,০৫৩ | ১৩,৪৮,১৯২ | ২৮,১৭,২৪৫ | ৫.৪৬ |
২০-২৪ | ১৮,৫৬,৬৫৮ | ১৬,৩৯,৯০৬ | ৩৪,৯৬,৫৬৪ | ৬.৭৮ |
২৫-২৯ | ১৮,৬৮,৩০৮ | ১৬,২৯,০৭২ | ৩৪,৯৭,৩৮০ | ৬.৭৮ |
৩০-৩৪ | ১৭,৬৬,৫৮৭ | ১৫,৯৯,৯১৪ | ৩৩,৬৬,৫০১ | ৬.৫২ |
৩৫-৩৯ | ২১,১৬,৭৩৩ | ১৯,৮৩,৮৪৯ | ৪১,০০,৫৮২ | ৭.৯৫ |
৪০-৪৪ | ২০,২৩,৬৪৬ | ১৯,৩২,১২১ | ৩৯,৫৫,৭৬৭ | ৭.৬৭ |
৪৫-৪৯ | ২৩,১১,৫৬৪ | ২২,৪৫,১৯৩ | ৪৫,৫৬,৭৫৭ | ৮.৮৩ |
৫০-৫৪ | ২০,৭৬,৬১৫ | ২০,৪৬,৯২৭ | ৪১,২৩,৫৪২ | ৭.৯৯ |
৫৫-৫৯ | ২১,৬৩,৯৫৩ | ২১,৭৫,৯৬৬ | ৩,৩৯,৯১৯ | ৮.৪১ |
৬০-৬৪ | ১৬,৬৯,০২৪ | ১৭,২১,৮০৪ | ৩৩,৯০,৮২৮ | ৬.৫৭ |
৬৫-৬৯ | ১১,৩৩,২০১ | ১২,২৫,১৮৮ | ২৩,৫৮,৩৮৯ | ৪.৫৭ |
৭০-৭৪ | ৮,২৬,৪২৫ | ৯,৬৯,৮৬২ | ১৭,৯৬,২৮৭ | ৩.৪৮ |
৭৫-৭৯ | ৬,৬৪,৬১৮ | ৯,১৫,৭৫২ | ১৫,৮০,৩৭০ | ৩.০৬ |
৮০-৮৪ | ৩,৫৫,৯৬২ | ৬,৩২,৪০৮ | ৯,৮৮,৩৭০ | ১.৯২ |
৮৫-৮৯ | ১,২৮,৫৬০ | ৩,৩০,৯১৪ | ৪,৫৯,৪৭৪ | ০.৮৯ |
৯০-৯৪ | ৩২,৯৯০ | ১,১৫,৪৬৭ | ১,৪৮,৪৫৭ | ০.২৭৯ |
৯৫-৯৯ | ৭,২৬০ | ২৯,৫৮১ | ৩৬,৮৪১ | ০.০৭ |
১০০+ | ৫৫৭ | ৩,৪১৫ | ৩,৯৭২ | ০.০১ |
বয়সের কোঠা | পুরুষ | মহিলা | মোট | শতাংশ |
০-১৪ | ৩৩,৯১,৭৮৮ | ৩১,৯৭,৬০০ | ৬৫,৮৯,৩৮৮ | ১২.৭৭ |
১৫-৬৪ | ১,৯৩,২২,১৪১ | ১,৮৩,২২,৯৪৪ | ৩,৭৬,৪৫,০৮৫ | ৭২.৯৫ |
৬৫+ | ৩১,৪৯,৫৭৩ | ৪২,২২,৫৮৭ | ৭৩,৭২,১৬০ | ১৪.২৯ |
ওয়ার্ল্ডোমিটারের জনসংখ্যার পূর্বাভাসের পরিসংখ্যান অনুসারে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০২০ সালের মধ্যে +০.৩৮% বার্ষিক পরিবর্তন, ২০২৫ সালের মধ্যে +০.২৮% বার্ষিক পরিবর্তন, ২০৩০ সালের মধ্যে +০.২১% বার্ষিক পরিবর্তন এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে +০.০৭% বার্ষিক পরিবর্তন হওয়ার কথা।[17] একই পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০৪০ থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বার্ষিক পরিবর্তনের শতাংশে একটি স্থির ঋণাত্মক পরিবর্তন আসার কথা।[17]
১৯৪৮ সালে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যায় এক শক্তিশালী বৃদ্ধি দেখা যায় কিন্তু এরপর এর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রভাবে এটি নাটকীয়ভাবে ধীর হয়ে যায়। ১৯৪৯ সালে সংঘটিত প্রথম সরকারি জনশুমারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যা গণনা করা হয় ২,০১,৮৮,৬৪১ জন। ১৯৮৫ সালের জনশুমারিতে এ সংখ্যা ছিল মোট ৪,০৪,৬৬,৫৭৭।
১৯৪৯ থেকে ১৯৫৫ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম ছিলো, গড়ে প্রায় ১.১% এবং মোট জনসংখ্যা ২১.৫ মিলিয়ন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৬ সালে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯.২ মিলিয়ন। এসময় বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো ২.৮% যা পরবর্তী ১৯৬৬ থেকে ১৯৮৫ সালে কমে দাঁড়ায় ১.৭%। এরপর থেকে অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশের ন্যায় এবং স্বাস্থ্য ও সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার কারণে বার্ষিক প্রাক্কলিত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিলো ১%-এর কম। ১৯৮৯ সালের ১লা জানুয়ারি নাগাদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রাক্কলিত জনসংখ্যা ছিলো ৪২.২ মিলিয়ন।[13]
১৫ বছরের নিচে মোট জনসংখ্যার অনুপাত বিভিন্ন সময়ে বেড়েছে এবং কমেছে। ১৯৫৫ সালে জনসংখ্যার ৪১.২% ছিলো ১৫ বছরের নিচে, যা ১৯৬৬ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩.৫%। ১৯৭৫ সালে এটি কমে দাঁড়ায় ৩৮.৩%, ১৯৮০ সালে ৩৪.২% এবং ১৯৮৫ সালে দাঁড়ায় শতকরা ২৯.৯ ভাগে। অতীতে জনসংখ্যার বেশিরভাগ অংশ শিশু হওয়ায় তা দেশের অর্থনীতিতে চাপ তৈরি করেছিল, বিশেষত অর্থের এক বিশাল অংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করার কারণে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমে যাওয়া এবং বয়সের মধ্যক বেড়ে যাওয়ার (১৯৬০ থেকে ১৯৮০ সালে ১৮.৭ থেকে ২১.৮) ফলে জনসংখ্যার বয়সের গঠন তৃতীয় বিশ্বের পিরামিডাকারের পরিবর্তে উন্নত বিশ্বের ন্যায় কলামাকার ধারণ করে।[13]
১৯৬৬ সালের পরে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হার ও ১৫ বছরের নিচে মোট জনসংখ্যার হ্রাস, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সাফল্যকেই নির্দেশ করে। রাষ্ট্রপতি রি সিংমানের সরকার (১৯৪৮-৬০) এসব ব্যপারে রক্ষনশীল ছিলো। যদিও ১৯৫৭ সালে খ্রিস্টান গির্জাগুলো পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি শুরু করেছিলো। তবে ১৯৬২ সালে পার্ক চং হিয়ের সরকার এসে প্রথমবার সতর্কবার্তা শোনায় যে দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং তারা সারাদেশে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি শুরু করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাসের অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে নগরায়ন, নারী ও পুরুষ উভয়ের বেশি বয়সে বিবাহ, শিক্ষার উচ্চহার, শ্রমক্ষেত্রে বিশাল সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ এবং উন্নত স্বাস্থ্যমান।[13]
পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার মধ্যে ছিলো স্বাস্থ্য ও সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রনালয়, গৃহ বিষয়ক মন্ত্রনালয়, দ্য প্লান্ড প্যারেন্টহুড ফেডারেশন অব কোরিয়া ও দ্য কোরিয়া ইন্সটিটিউট অব ফেমিলি প্লানিং। ১৯৮০-র দশকের শেষ ভাগে তাদের কর্মসূচির মধ্যে ছিলো বিনামূল্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সরঞ্জাম ও তথ্য সরবরাহ, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি বিষয়ক পাঠদান এবং বন্ধ্যাত্বকরণে সম্মত বাবা-মায়ের জন্য বিশেষ ভাতা ও সুবিধার ব্যবস্থা (যেমন কম মুনাফায় গৃহঋণ)। ১৯৮৪ সালে ৫,০২,০০০ জন দক্ষিণ কোরীয় নাগরিক বন্ধ্যাত্বকরণ করেন, পূর্বের বছরে যা ছিলো ৪,২৬,০০০ জন।[18]
১৯৭৩ সালের মা ও শিশু স্বাস্থ্য আইন গর্ভপাতকে বৈধ করে। ১৯৮৩ সালে সরকার ৩ বা ততোধিক সন্তানের অধিকারী গর্ভবতী মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা স্থগিত করা শুরু করে। এছাড়াও সরকার ২ বা ততোধিক সন্তানের অধিকারী বাবা-মায়ের কর মওকুফ প্রত্যাহার করে।[13]
চীনের মতোই সাংস্কৃতিক আচরণ পরিবার পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কোরিয়ার ঐতিহ্যবাহী কনফুসীয় মূল্যবোধবিশিষ্ট সমাজে পুত্রসন্তান বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মায়ের দেখাশোনা এবং পারিবারিক পদবি বহন করবে এই প্রত্যাশা করা হয়। ফলে কেবল কন্যাসন্তানবিশিষ্ট বাবা-মা পুত্র সন্তানের আশায় সন্তানধারণ চালিয়ে যায়। সরকার বিবাহিত দম্পতিদের এক সন্তান গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে থাকে। এটা সরকারি সেবা ঘোষণার অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে, যা "এক সন্তান নিন এবং তাকে ভালোভাবে গড়ে তুলুন" স্লোগানের উপর জোর দেয়।[13]
১৯৬০ সালের মোট উর্বরতার হার (একজন মহিলা সারাজীবনে গড়ে যতজন সন্তানের জন্ম দেন) ৬.১ থেকে কমে ১৯৭০ সালে ৪.২, ১৯৮০ সালে ২.৮ এবং ১৯৮৪ সালে ২.৪-এ পৌঁছায়। ১৯৭৮ সালের জীবিত শিশুজন্মের সংখ্যা ৭,১১,৮১০ থেকে ১৯৮২ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ৯,১৭,৮৬০-এ। এই উন্নয়নের কারণে পরিবার পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞগণ এক নতুন "বেবি বুম" ঘটার আশঙ্কা করেন। তবে ১৯৮৬ সাল নাগাদ জীবিত শিশুজন্মের হার কমে দাঁড়ায় ৮,০৬,০৪১।[13]
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমেই হ্রাস পেতে থাকে এবং ২০০৫ থেকে ২০১০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার উর্বরতার হার ছিলো ১.২১, জাতিসংঘের মতে যা পৃথিবীর অন্যতম ক্ষুদ্রতম।[19] প্রতিস্থাপন হার ২.১-এর তুলনায় উর্বরতার হার অনেক নিচে থাকায় তা জাতীয় সতর্কবার্তার জন্ম দেয়। কেউ কেউ এক বার্ধক্যে উপনীত সমাজের আশঙ্কা করেন যার বৃদ্ধি ও বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং এটি এর বিশাল সংখ্যক বয়স্ক নাগরিকদের ভরণপোষণে অক্ষম হবে। সম্প্রতি কোরীয় সরকার তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় এ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছে এবং আশ্বাস দিয়েছে যে তারা নারীদের সন্তান ধারণে উৎসাহ প্রদানের জন্য সামাজিক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
বিংশ শতাব্দীর শেষে দেশটির জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ মিলিয়নে এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হয় ০.৯% থেকে ১.২%-এর মধ্যে। ধারণা করা হচ্ছে ২০২৩ সাল নাগাদ প্রায় ৫২.৬ মিলিয়নে গিয়ে জনসংখ্যা স্থিতিশীল হবে। এশিয়াউইক ম্যাগাজিনের কথায় "স্থিতিশীল ট্যালি ফিলিপিনের ১৯৮৩ সালের জনসংখ্যার কাছাকাছি হবে, কিন্তু তাদের [ফিলিপিনোদের] স্থানের এক তৃতীয়াংশেরও কম জায়গায় গাদাগাদি অবস্থায়"।[13]
২০১৯ সাল নাগাদ, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহার বেশ ক্ষুদ্র সংখ্যায় পৌঁছেছে। ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে দেশটির জন্মহার ০.৯৮, যা এর প্রতিস্থাপন হার ২.১ জন্মের বেশ নিচে। দক্ষিণ কোরিয়া এখন সর্বাপেক্ষা দ্রুত বার্ধক্যে অগ্রসরমান উন্নত দেশ। কোরীয় সরকার (ও তাদের জন্মহার বিষয়ে ব্যর্থ প্রচেষ্টা) এবং তরুণদের জন্য খারাপ অর্থনৈতিক পরিবেশকে এর মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।[20]
কারিগরি সমস্যার কারণে গ্রাফ এই মূহুর্তে অস্থায়ীভাবে অনুপলব্ধ রয়েছে। |
কারিগরি সমস্যার কারণে গ্রাফ এই মূহুর্তে অস্থায়ীভাবে অনুপলব্ধ রয়েছে। |
কারিগরি সমস্যার কারণে গ্রাফ এই মূহুর্তে অস্থায়ীভাবে অনুপলব্ধ রয়েছে। |
দক্ষিণ কোরিয়া পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ১৯৮৯ সালে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিলো প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ৪২৫ জন, যা '৮০-র দশকে যুক্তরাষ্ট্রের গড় জনসংখ্যার ঘনত্বের তুলনায় প্রায় ১৬ গুণ। একই সময়ে চীনে এ সংখ্যা ছিলো ১১৪, ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানিতে (পশ্চিম জার্মানি) ছিলো ২৪৬ এবং জাপানে ছিল ৩২৩। যেহেতু কোরিয়ার ৭০ ভাগ ভূমি পাহাড়ে ঢাকা এবং মূল জনসংখ্যা নিচু ভূমিতে বসবাস করে, তাই সাধারণ জনসংখ্যার ঘনত্ব এ গড় মানের চেয়ে অনেক বেশি ছিলো। ১৯৭৫ সাল নাগাদ, এটা ধারণা করা হয় যে কোরিয়ার ৫০,০০০-এর বেশি জনসংখ্যাবিশিষ্ট ৩৫ টি শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ছিলো ৩,৭০০। নগরীতে ক্রমাগত মানুষের স্থানান্তরের ফলে ১৯৮০-র দশকের শেষে এ সংখ্যা আরও বেশি ছিলো।[13]
১৯৮৮ সালে সিউলের জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিলো ১৭,০৩০, যেখানে ১৯৮০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩,৮১৬ তে। দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বুসানে ১৯৮৮ সালে জনসংখ্যার ঘনত্ব হয় ৮,৫০৪, যা ১৯৮০ সালে ছিলো ৭,২৭২। রাজধানীকে ঘিরে রাখা কিয়ংগি প্রদেশ ছিলো দেশের সর্বাপেক্ষা ঘনবসতিপূর্ণ প্রদেশ, যেখানে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহর ইনছন অবস্থিত। অন্যদিকে উত্তর-পূর্ব দিকের কাংওন প্রদেশ ছিলো সর্বাপেক্ষা কম জনসংখ্যার ঘনত্বের প্রদেশ।[13]
সরকারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বোর্ডের মতে, ২০২৩ সালে জনসংখ্যার ঘনত্ব হবে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৫৩০ জন, একই বছরে জনসংখ্যা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।[13]
দক্ষিণ কোরিয়ার গ্রামীণ এলাকা নদী অববাহিকায় ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে একসাথে অল্প কয়েকটি থেকে শুরু করে কয়েকশত ঘর পর্যন্ত রয়েছে।[21] গ্রামগুলো দক্ষিণদিকে অবস্থিত এবং পাশেই রয়েছে পর্বতমালা, যা শীতকালীন বায়ুপ্রবাহ থেকে তাদের সুরক্ষা দেয়।[21]
১৯৬০ সাল থেকে নগরায়নের গতি বৃদ্ধির কারণে গ্রামীণ জনসংখ্যায় দৃশ্যমান হ্রাস ঘটে এবং ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ জনজীবন ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।[21]
বিগত ২০ বছরে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিশ্বের তুলনামূলক সর্বনিম্ন উর্বরতা ও বিবাহের হার দেখা যায়। ২০২০ সাল নাগাদ, এটি বিশ্বের সর্বনিম্ন উর্বরতার হারযুক্ত দেশ, যেখানে এ মান ০.৮৪। সিউলে সম্ভবত বিশ্বের সর্বনিম্ন উর্বরতার হার রয়েছে, মাত্র ০.৬৩।[24]
দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যার বার্ধক্য এক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, বার্ধক্যগ্রস্থতার এ হার মানব ইতিহাসে এই প্রথমবার দেখা যাচ্ছে।[25] ১৮ বছরে বার্ধক্যের হার ৭% থেকে ১৪% (সর্বাপেক্ষা দ্রুত) হওয়ার এ ঘটনা[26] জাপানকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। পরিসংখ্যানেও এ ব্যপারটি দৃশ্যমান, যেখানে ৬৫ বা তার বেশি বয়সী জনসংখ্যার শতকরা হার ১৯৫৫ সালের ৩.৩% থেকে বেড়ে ২০০৯ সালে ১০.৭%-এ দাঁড়ায়।[27] জনসংখ্যা পিরামিডের আকৃতি ১৯৯০-এর দশকের পিরামিড আকৃতি (অধিক তরুণ জনসংখ্যা ও অল্প বয়স্ক জনসংখ্যা) থেকে ২০১০ সালে রম্বস আকৃতিতে (অল্প তরুণ জনসংখ্যা ও অধিক মধ্যবয়সী জনসংখ্যা) পৌঁছেছে।[28]
জনসংখ্যার বার্ধক্যের সাথে বেশকিছু বিষয় জড়িত। দ্রুত বার্ধক্যগ্রস্থ জনসংখ্যা শ্রমশক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষত, বিশেষজ্ঞদের ধারণা এর ফলে শ্রমজীবীদের পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে। ৫০ বা ৬০-এর দশকে উপনীত জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ স্বেচ্ছায় অবসরে চলে যায় বা যেতে বাধ্য হয়। ফলে অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় জনসংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। এছাড়া দ্রুত বার্ধক্যের ফলে শ্রমশক্তিতে তরুণ ও প্রবীণ জনবলের অনুপাতে ভারসাম্য নষ্ট হয়। যার ফলে শ্রমক্ষেত্রে প্রাণবন্ততা ও উদ্ভাবনী শক্তির অভাব দেখা দিতে পারে। উপাত্তে দেখা যায়, সমাজে তরুণদের সংখ্যা কম হলেও ১৫-৬৪ বছর বয়সী অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় জনসংখ্যা ৫৫.৫% থেকে ২০% বেড়ে ৭২.৫%-এ দাঁড়িয়েছে।[27] ফলে দেখা যাচ্ছে শ্রমশক্তির বেশিরভাগ অংশ মধ্যবয়সী কর্মীদের দ্বারা গঠিত।
একটি সম্ভাব্য পরিণতি এমন হতে পারে যে দক্ষিণ কোরিয়া বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আকর্ষণ হারাবে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভিয়েতনামের মতো দেশে স্থানান্তরিত হওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে, যেখানে সস্তায় প্রচুর তরুণ শ্রমিক পাওয়া যায়। অথবা এমন সম্ভাবনা রয়েছে যে মধ্যবয়সী এসব শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে তারা উচ্চমূল্য ধার্য করতে পারে। উপরন্তু,স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়ও উচ্চতর হতে পারে[29] এবং বয়স্কদের জন্য একটি ভাল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বজায় রাখার জন্য সরকারকে আরও অর্থ বরাদ্দ করতে হতে পারে।
খুব কম জন্মহারের কারণে, ১৯৬০-এর দশকে জন্মগ্রহণকারী এক বিশাল প্রজন্ম মারা যেতে শুরু করলে দক্ষিণ কোরিয়া রাশিয়ান ক্রস প্যাটার্নে প্রবেশ করবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ফলে বেশ কয়েক দশক ধরে জনসংখ্যা হ্রাস পেতে পারে।
২০১৬ সাল থেকে বয়স্ক জনসংখ্যার (৬৫+ বছর) সংখ্যা শিশুদের (০-১৪) ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং দেশটি একটি বয়স্ক সমাজে পরিণত হয়েছে। মোট জনসংখ্যার ১৪%-এর বয়স ৬৫ বছরের বেশি।[20]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.