Loading AI tools
১ জুলাই ২০১৬ সালে গুলশানে জঙ্গি আক্রমণ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হোলি আর্টিজান হামলা দ্বারা ২০১৬ সালের ১লা জুলাইয়ে সংঘটিত হামলাকে বুঝানো হয়। সেদিন স্থানীয় সময়ে রাত ০৯:২০ মিনিটে[6] নয়জন হামলাকারী ঢাকার গুলশান এলাকায় অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারিতে গুলিবর্ষণ করে।[4][5] হামলাকারীরা বোমা নিক্ষেপ ও কয়েক ডজন মানুষকে জিম্মি করে এবং পুলিশের সঙ্গে তাদের গুলি ও বোমাবর্ষণের ফলে অন্তত চার পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হয়।[4][7] এই ঘটনায় মোট আটাশ জন মানুষ নিহত হয়, যাদের মধ্যে সতেরো জন বিদেশি, দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা এবং ছয় জন বন্দুকধারী।[8][9][10] পরবর্তীতে বন্দুকধারীদের এক জনকে বন্দী করা হয় এবং ১৩ জন জিম্মিকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী, পুলিশ, র্যাব এবং যৌথবাহিনী কর্তৃক মুক্ত করা হয়।[11][12][13]
১-২ জুলাই ২০১৬ ঢাকা সন্ত্রাসী হামলা | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ | |||||||
ঢাকায় হামলার অবস্থান | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
বাংলাদেশ | ইসলামি সন্ত্রাসী | ||||||
জড়িত ইউনিট | |||||||
প্রধান প্রতিপক্ষ জড়িত অন্যরা
|
| ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
২ পুলিশ অফিসার নিহত, ৫০ জন আহত [2] | ৫[3] | ||||||
২২ বেসামরিক নাগরিক নিহত[3] ও ২০–৬০ জন জিম্মি[1][4][5] |
২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ব্লগার এবং ধর্মনিরপেক্ষদের উপর হামলা বাড়তে থাকে।[14][15] গুলশান ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং এখানে অনেক বিদেশী দূতাবাস অবস্থিত।[5] আর এখানে বাংলাদেশি মুসলমানদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিদেশী নাগরিক এবং অমুসলিমরা বসবাস করে এবং অবস্থান করে। তাই উগ্রবাদী জঙ্গিরা ইসলামের দোহাই দিয়ে এই এলাকাটিকে লক্ষ্য করে জঙ্গি হামলা চালায় যা ইসলামের দৃষ্টিতেও গ্রহণযোগ্য নয় এবং এটি এক ধরনের মারাত্মক অপরাধ।
আক্রমণ স্থানীয় সময় ৯টা ২০ মিনিটের দিকে শুরু হয়। অন্তত পাঁচজন হামলাকারী রেস্টুরেন্টে বোমা, বন্দুকসহ প্রবেশ করে এবং একজন আক্রমণকারীর হাতে একটি তলোয়ার ছিল। ঢোকার পর রেস্টুরেন্টে জিম্মি করার আগে গুলি ছুড়তে থাকে ও বোমা ফাটায়, জিম্মিদের বেশীরভাগ ছিল বিদেশী। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের সাথে তাদের গোলাগুলি হয়, এতে দুই জন পুলিশ নিহত হয় ও আরো অনেক আহত হয়। পরে পুলিশ রেস্টুরেন্ট সহ পুরো এলাকা ঘেরাও করে রাখে এবং একটি উদ্ধার অভিযানের পরিকল্পনা করে।[16] এ সময় পুলিশ মাইকে বারবার জিম্মিদের ছেড়ে দিয়ে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালে জঙ্গিরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে তিনটি শর্ত দেয়:[17]
রেস্টুরেন্টে ভিতর থেকে ছবি টুইটারে আইএসআইএল-পন্থী অ্যাকাউন্টগুলি থেকে প্রচার হয় এবং এতে কয়েকটি লাশ ও রক্তের দাগ মেঝের উপর পড়ে থাকতে দেখা যায়।[4]
সরকার প্রধানের নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী 'অপারেশন থান্ডারবোল্ট' পরিচালনা করে। ৬ জুলাই শুক্রবার রাত থেকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে অবস্থানরত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব অপারেশন থান্ডারবোল্ট পরিচালনা করে। সেনাবাহিনীর ১ নং প্যারাকমান্ডো ব্যাটেলিয়ন এর নেতৃত্বে ঘটনা শুরুর পরদিন, শনিবার, সকাল ৭টা ৪০ মিনিটে অপারেশন শুরু করে। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স ১নং প্যারা কমান্ডো (চিতা) মাত্র ১২-১৩ মিনিটেই ঘটনাস্থলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। অপারেশন থান্ডারবোল্ট সফল হয় এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১ নং প্যারা কমান্ডো ব্যাটেলিয়ন এর অপারেশন, পেশাদারিত্ব প্রশংসনীয় হয়। যৌথ বাহিনী হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রাথমিকভাবে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত ৪টি পিস্তল, একটি ফোল্ডেডবাট একে-২২, ৪টি অবিস্ফোরিত আইআইডি, একটি ওয়াকিটকি সেট ও ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।[18]
বিশ জন বিদেশী নাগরিক, ছয় জন বন্দুকধারী এবং দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনার রাতেই নিহত হন। বিদেশীদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। যেখানে আরও পঞ্চাশ জন, যাদের বেশিরভাগ পুলিশ সদস্য,[19] আহত হন।[2][20] নিহতদের মধ্যে দুই জন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন, যাদের একজন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার এবং অন্যজন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।[21][22][23] নিহতদের মধ্যে জাপানি ও ইতালীয় নাগরিক ছিল।[4] ১৯ বছর বয়সী এক ভারতীয় নাগরিকও নিহত হয়।[24] বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রাথমিকভাবে ঘোষণা করে যে নিহতদের সকলে বিদেশী ছিল এবং অপরাধীরা জিম্মিদের "ধারালো অস্ত্র দ্বারা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল"।[20] এদের মধ্যে যারা কুরআন থেকে একটি আয়াত বলতে পেরেছিল শুধুমাত্র সেসকল অ-মুসলিমরা রক্ষা পেয়েছিল।[25][26] পরে মৃতদেহগুলির মাঝে বেকারির একজন শেফের লাশ শনাক্ত করা হয়। ৮ জুলাই ২০১৬ তারিখে বেকারির একজন আহত কর্মী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান
নিহতদের মধ্যে সাত জন জাপানি নাগরিক ছিল – পাঁচ জন পুরুষ এবং দুই জন নারী – যাদের জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির সাথে যুক্ত ছিল। সেই সময় নারীদের মধ্যে একজন গর্ভবতী ছিলেন।[27] তরিশি জৈন, ভারতীয় জাতীয়তার, বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ বছর বয়সী ছাত্রীকেও হত্যা করা হয়।
মৃতদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:[30][3][31][32][33]
সামরিক ও যৌথ বাহিনী দ্বারা উদ্ধার অভিযানের সময় নিহত পাঁচজন সন্ত্রাসী হল:[3]
আহতদের মধ্যে ২৫ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।[35] এদের মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত মহানগরসহ ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, দুই অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও একজন পরিদর্শক।[36]
ইতালীয় উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিও জিরো বাংলাদেশে আসেন এবং ঘটনার স্থল পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি ইতালীয় ৯ ব্যক্তির লাশ নিয়ে ইতালিতে ফিরে যান। ময়নাতদন্তে পাওয়া যায় যে ৯ ইতালীয় নাগরিককে হত্যার আগে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হয়। মৃত্যুর আগে কয়েকজনকে ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয় ও কয়েকজনের শরীরের অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। পরে তারা ধীরে ধীরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যায়। নয় ইতালীয় নাগরিক "মন্থর ও যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু" ভোগ করে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে।[37][38]
এই হামলার সাতজন জাপানী নাগরিকের লাশ দেখতে ও তাদের শনাক্ত করার জন্য জাপানি নাগরিকদের স্বজনরা বাংলাদেশে আসেন, তাদের সঙ্গ দেন জ্যেষ্ঠ উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেইজি কিহারা। তাদের সাথে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ও দেশটির দাতা সংস্থা জাইকার কয়েকজন কর্মকর্তাও আসেন।[39] ঢাকার বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় যেখানে জাপানের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবেউ উপস্থিত থাকেন।[40] ৫ জুলাই সাত জাপানী নাগরিকের লাশ নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৮টা ৪৫ মিনিটে একটি বিশেষ বিমান জাপানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করে।[41]
ইসলামিক স্টেটের অধিভুক্ত সংবাদ সংস্থা, 'আমাক' এই হামলার দায় স্বীকার করে এবং ২০ জনকে হত্যার দাবি জানায়। ঘটনার পর তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করে এবং হুমকি দেয় এটি সবেমাত্র শুরু ভবিষ্যতে আরো হামলা হবে। [42]
আক্রমণের ৫ হামলাকারীর মাঝে একজন ফেসবুকে জাকির নায়েকের অনুসারী ছিলেন বলে বাংলাদেশী পত্রিকা ডেইলি স্টারে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, "জাকির নায়েকের বক্তব্য আমাদের জন্য একটি নজরদারির বিষয়। আমাদের এজেন্সিগুলো এর উপর কাজ করছে।"[43] এর ২ দিন পর মহারাষ্ট্র সরকারের সিআইডি বিভাগ তদন্তের ফলাফল হিসেবে জানায় যে, তারা জাকির নায়েকের বক্তৃতায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ খুজে পায় নি।[44] ডেইলি স্টার উক্ত বিতর্ক নিয়ে জাকির নায়েকের নিকট ক্ষমা চেয়ে মন্তব্য করে যে তারা কখনোই নায়েককে উক্ত হামলার জন্য দোষারোপ করে নি।[45] পত্রিকাটি বলে যে, এটি শুধুমাত্র এটাই তুলে ধরেছে যে, কীভাবে তরুণরা তার বক্তব্যকে ভুলভাবে বুঝছে।[45][46][47] তবে, এঘটনার পরপরই বাংলাদেশ সরকার নায়েকের পিস টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়।[48] তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এর কারণ হিসেবে বলেন যে "পিস টিভি মুসলিম সমাজ, কুরআন, সুন্নাহ, হাদিস, বাংলাদেশের সংবিধান, আমাদের সংস্কৃতি, আচার-প্রথা ও রীতিনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।"[6]
হামলার দুই বছর পর এই ঘটনায় নিহত দুই পুলিশ সদস্য এসি রবিউল এবং ওসি সালাহউদ্দিনের স্মরণে গুলশানে মৃণাল হকের তৈরি ‘দীপ্ত শপথ’ নামক একটি স্মারক ভাস্কর্য উদ্বোধন করা হয়।[75]
শনিবার বিকেল, এই ঘটনা উপর ভিত্তি করে নির্মিত। ২০১৯ সালের এই চলচ্চিত্রটি এখনো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের কাছ থেকে মুক্তির অনুমতি পায়নি।[76] ২০২২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ফারাজ নামক হিন্দি ও ইংরেজি ভাষার ভারতীয় চলচ্চিত্রটি এই ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত।[77]
হামলার পর গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করে পুলিশ। দুই বছর তদন্তের পর ২০১৮ সালে আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। মামলার তদন্তে ঘটনার সাথে মোট ২১ জনের জড়িত থাকার তথ্য পায় পুলিশ। এর মধ্যে ঘটনার দিন ও পরে ১৩ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। হোলি আর্টিজানে চালানো কমান্ডো অভিযানে নিহত জঙ্গিরা হলো - রোহান ইমতিয়াজ, খায়রুল ইসলাম পায়েল, সামিউল মোবাশ্বির, শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল এবং নিবরাস ইসলাম। এছাড়া পরে জঙ্গিবিরোধী অন্য অভিযানগুলোতে নিহত হন তামিম চৌধুরী, মারজান, সারোয়ার জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান, তানভীর কাদেরী, তারেক রায়হান এবং ছোটো রায়হান এছাড়া হামলার ঘটনার পর আটক হওয়া ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত করিমকে চার্জশিটে অব্যাহতি দেয়া হয়। ২০১৯ সালের ২৭শে নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালত হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা মামলার রায়ে সাতজন জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরপর সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গিদের ‘ডেথ রেফারেন্স’ এবং আসামিপক্ষের করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৩০ অক্টোবর ২০২৩ দিন ধার্য করে হাইকোর্ট। ঐ দিনের রায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত সাত জঙ্গির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় হাইকোর্ট। আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া ব্যক্তিরা হচ্ছেন - জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে রাশ, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, হাদিসুর রহমান সাগর, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মামুনুর রশিদ রিপন এবং শরিফুল ইসলাম খালিদ।[78]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.