Loading AI tools
ইংরেজি ভাষার জাপানি ম্যাগাজিন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
জাপান একো একটি ইংরেজি ভাষার জাপানি ম্যাগাজিন যা ১৯৭৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত সময়ে জাপান একো ইনক. কর্তৃক মুদ্রিত হয়ে আসছিল। মূলত জাপানি ভাষায় প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ ও নিবন্ধের ইংরেজি অনুবাদ নিয়ে এ ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো, জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় প্রকাশিত 'জাপান একো' প্রধানত প্রতিদিনকার ঘটনা বা ইস্যু নিয়ে জাপানিদের নিজস্ব চিন্তা ও রচনা সম্পর্কে বহির্বিশ্বকে জানতে সহায়তা করে।[1] যদিও স্বাধীনভাবে প্রকাশিত হতো, তবুও জাপান একো'র টিকে থাকাকালীন সময়ে এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল জাপান সরকার।
২০১০ সালের বাজেটে বরাদ্দ কমে গেলে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালনায় এ ম্যাগাজিন জাপান একো ওয়েব নামধারণ করে একটি সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক ওয়েবসাইটে পরিণত হয়। সবশেষ, দুই বছর পর জাপান সরকার এটি বন্ধ করে দেয় এবং একই ধরনের অন্য একটি প্রকল্পে পরিবর্তিত করে যা জাপান ফরেন পলিসি ফোরাম নামে অভিহিত হয়।
জাপান একো প্রকাশের ধারণা কাযুতোশি হাসেগায়ার, তিনি তৎকালীন সময়ে জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহির্বিশ্ব জনসংযোগ বিভাগে কর্মরত ছিলেন, এবং জাপানের মুদ্রণ মাধ্যম সম্পর্কে বিদেশি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ঘটে যাওয়া তথ্যবিভ্রাট এবং ভুল বোঝাবুঝির ঘটনায় বেশ বিরক্ত ছিলেন।[2] হাসেগায়া তার এই কাজে টোকিও মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সমাজবিজ্ঞানী ইওশিহিকু সেকিকে নিযুক্ত করেছিলেন, জিজি প্রেসের প্রতিবেদক তাকেশি মুছিদার ১৯৭৪ সালে স্বাধীনভাবে প্রতিষ্ঠিত জাপান একো ইনক. কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত নতুন এই ম্যাগাজিনের প্রথম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[3][4]
জাপান একো'র বেশিরভাগ বিষয়বস্তু ছিল মূলত জাপানি ভাষায় লিখিত বিভিন্ন প্রবন্ধের অনুবাদ, মাঝে মাঝে যা ছিল মুল লেখার সংক্ষিপ্ত রূপ।[5] এই ম্যাগাজিনের প্রতিটি সংখ্যায় প্রকাশ করার জন্য সম্পাদক প্রধানত সে সময়ে জাপান বা আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে জাপানের প্রধান প্রধান পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধসমুহ থেকে নির্বাচন করতেন। তাৎক্ষণিকভাবে নভেম্বর, ১৯৭৪ সালের প্রথম সংখ্যায় মোট আঠারটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় যা ছুঁয়াকরন, শঅকুঁন, ঝিঁইও, শুঅকুঁন গেন্দাঁই, বুংগেইশুনঁঝু, এবং শেইরন-সহ নানাবিদ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত বিভিন্ন বিষয়ের নিবন্ধ যেমন, ১৯৭০এর তেল সংকট, আলেক্সান্দ্র্ সলজেনিৎসিনের মামলা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে জাপানের সম্পর্ক যেখানে তখন জাপানি প্রধানমন্ত্রী কাকুয়েই তানাকার রাষ্ট্রীয় সফরের প্রতিবাদে সাধারণ জনসাধারণের মাঝে বিক্ষোভ চলছিল, জাপানি লেফটেন্যান্ট হিরো ওঁনোদার মামলা ছিল উল্লেখযোগ্য।[6] জাপান একোর সম্পাদক বলেন তাদের অভিপ্রায় হল "দায়িত্বশীল ও তথ্যসমৃদ্ধ জাপানি মতামতের নিখুঁত প্রতিফলন",[1] যদিও বেশিরভাগ সম্পাদক ছিল রাজনৈতিকভাবে কেন্দ্রানুগত।[7]
জাপান একো প্রথম দিকে ত্রৈমাসিক হিসেবে প্রকশিত হলেও ১৯৯৭ সালের পর থেকে এটি দ্বি-মাসিক হিসেবে প্রকাশিত হয়ে এসেছে।[8] এছাড়াও এর ফরাসি সংস্করণ ১৯৭৯ থেকে ২০০৯ এবং স্পেনিশ সংস্করণ ১৯৮৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে।[9]
জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাপান একো ইনক এর প্রধান নির্বাহী তাকেশি মুছিদারের নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল যে সাময়িকীর অর্থায়ন করলেও তারা কখনো নিবন্ধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাবেনা, যদিও জাপান একো সহায়তার জন্য সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল ছিল জাপান সরকারের নিকট।[7] জাপান সরকার সাময়িকীর স্থায়িত্বকালে ৭০ শতাংশ মুদ্রিত কপি, অর্থাৎ বার্ষিক প্রায় ৫০,০০০ কপি কিনে নিত এবং বিনামূল্যে নিজেদের দূতাবাস, কনস্যুলেট দপ্তরে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রন্থাগার ও গবেষকদের নিকট বিতরণ করত।[7][8] দ্য ইকোনোমিস্ট সাময়িকী উল্লেখ করে যে, জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সহায়তা চলমান রেখেছিল কেননা জাপান ইকো তাই দেখাতো “জাপান সরকার বহির্বিশ্বের কাছে দেশের যে চিত্র দেখাতে চাইতো।”[10]
এছাড়াও জাপান একো ব্যক্তিগত সাবস্ক্রিপশন, টয়োটা মটরস এবং জাপান এয়ারলাইন্সের নিকট বাল্ক বিক্রয় এবং জাপান একো ইনক. কর্তৃক স্বাধীন অনুবাদ সেবা প্রদানের মাধ্যমেও আয় করতে সক্ষম ছিল।[11][12]
ম্যাগাজিন ফর লাইব্রেরিজ সূত্রের বর্ণনা মতে, একটি অনন্য ত্রৈমাসিক হিসেবে জাপান একো ছিল বিশেষ গুরুত্ববহ কেননা এটি জাপানিদের স্বজাতিক রীতি-প্রকৃতিতে নিজেদের উপস্থাপন করেছিল বিদেশি ‘বিশেষজ্ঞের’ মধ্যাস্থতা ছাড়াই।” [5] এ সূত্র আরও নির্দেশ করে, ‘বিতর্কিত বিষয়সমূহ’ পরিহার করা হতো না।[5]
জাপান একো এর মান ও পাঠযোগ্যতার জন্য কানাডিয়ান প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুদেইও কর্তৃকও প্রশংসিত হয়েছিল।[2] ১৯৮৭ সালে টোকিও সম্পর্কে প্রকাশিত একটি বিশেষ সংষ্করণকে দ্য জাপান টাইমস-এর একজন কলামলেখক উক্ত বিষয়ে প্রকাশিত অন্যতম সেরা এক সংষ্করণ হিসেবে মন্তব্য করেন।[13] এবং নানচিনের গণহত্যার মতো বিতর্কিত বিষয়ে এ ম্যাগাজিনের কাভারেজকে ‘আবেগের উত্তাপ ছড়ানো নয় বরং প্রকৃত ঘটনার উপর বেশি আলোকপাত’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে জাপানের অন্যতম দৈনিক দ্য ইয়োমিউরি শিমবুন।[14]
হিউ কার্তেজ্জির মতো অসংখ্য পণ্ডিতগণ এ ম্যাগাজিনের বিষয়ে নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন,[15] যদিও তিনি ২০০৬ সালের একটি সংখ্যার সমালোচনা করেছেন যাতে শোইচি ওয়াতানেবি এবং তারো আসোঁর একটি সাক্ষাৎকার পুনঃমুদ্রিত হয়েছে এবং যেখানে ওয়াতানেবি নানচিনের গণহত্যা বিষয়টি এড়িয়ে গেছে ও জাপানি এক্সেপশনালিজমের ওকালতি করেছে।[16] একই ধরনের মানসিকতায় দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত একটি সংখ্যার কঠোর সমালোচনা করেছে যাতে বেশ কয়েকজন লেখক ২য় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে জাপানকে দায় হতে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “জাপান কেবল মাত্র নিজেদের টিকে থাকা নিশ্চিত করেছে, আর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ না করার কোন বিকল্প পন্থা ছিল না।”"[11]
রয় এন্ড্রু মিলার তার জাপান'স মর্ডান মিথ বইতে জাপান একোর সমালোচনা করেছেন আরো বিস্তৃত পরিসরে, যেখানে তিনি একে জাপানি জাতীয়তাবোধ থেকে উৎসারিত সেই অভিন্ন ভাষিক আর সাংষ্কৃতিক অলিখিত ধারণাসমূহ প্রচারের জনসংযোগের ঢাল বলে অভিহিত করেছেন।[17]
জাপানের বর্ধিত বাজেট ঘাটতি কমানোর উদ্দেশ্যে ইউকিঁও হাতোয়ামার নতুন সরকারের সংস্কার বিভাগ ২০০৯ সালে বাজেট কাটছাটের ক্ষেত্র খোঁজ করছিল। এই বিভাগ সরকারকে জাপান একোর মতো বিদেশি ভাষার ম্যাগাজিন ক্রয় ও বিতরণের জন্য নিরুৎসাহিত করে।[18]
সরকার প্রাথমিকভাবে এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে গেলে কর্তেজ্জির মতো জাপান বিশারদেরা এর বিরোধিতা শুরু করে এবং তাদের আন্দোলনের ফলেই জাপানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরবর্তিতে জাপান ইকো অনলাইন প্রকাশে সম্মত হয়, যা বার্ষিক ইজারার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ দরদাতা কোন কোম্পানি কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে।[8][15]
জাপান একো ইনক. ২০১০ সালে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে জাপান একো ওয়েব প্রকাশ করে।[19] নতুন অনলাইন সাময়িকী দ্বি-মাসিক হিসেবে জাপনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মালিকানায় ইংরেজি ও চাইনিজ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছিল, যদিও আগের মত জাপান একো ইনক.-এর সম্পাদকই সাময়িকীর বিষয়বস্তু নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা পালন করতেন যাতে প্রকাশনাটি সরকারের প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে না পড়ে।[19] যাত্রা শুরুর পর প্রচারণা এড়িয়ে সঠিক, তাৎক্ষণিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রকাশের জন্য এই ম্যাগাজিন এশিয়ান পলিটিকস অ্যান্ড পলিসি জার্নাল কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে।[20]
সবশেষ ২০১১ সালে জাপান একো ইনক. ইজারার প্রাক্কালে জাপান একো ওয়েব-এর প্রকাশক হিসেবে এর প্রকাশনাকে অলাভজনক খাত হিসেবে চিহ্নিত করলে জাপান সরকারের সাথে তাদের দীর্ঘ ৩৭ বছরের সহযোগিয়াত সমাপ্তি ঘটে।[21] জাপান একো ইনক. রুপান্তরিত হয় নিপ্পন কমিউনিকেশন ফাউন্ডেশনে এবং তারা জাপান একোর একই দর্শনে প্রকাশ করেছে নিজেদের অনলাইন সাময়িকী নিপ্পন.কম[22]
পরবর্তী অর্থবছরে জাপান জার্নাল নামে নতুন একটি গোষ্ঠী এটি প্রকাশ করে,[23] যার পরে সরকার জাপান ইকো ব্র্যান্ড বিলুপ্তি ঘোষণা করে এবং নভেম্বর ২৬, ২০১২ সালে জাপান ইকোর উত্তরসূরীর নাম হয় জাপান ফরেন পলিসি ফোরাম[24][25]
xxx
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.