Loading AI tools
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রথম গভর্নর, সুবাদার এবং মোঘল সম্রাজের সেনাপতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইসলাম খান শেখ আলাউদ্দিন চিশতি (১৫৭০ - ১৬১৩) ছিলেন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার প্রথম গভর্নর, সুবাদার এবং মোঘল সম্রাজের সেনাপতি। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর তাকে ইসলাম খান উপাধী দেন।
ইসলাম খান শৈশবে সম্রাট জাহাঙ্গীরের খেলার সাথী ছিলেন। তার বাবার নাম শেখ বদরউদ্দিন চিশতি এবং ফতেহপুর সিক্রি নিবাসী দরবেশ শেখ সেলিম চিশতির দৌহিত্র ছিলেন। তিনি মোঘল ঐতিহ্যের উপরে আনুষ্ঠানিক শিক্ষালাভের সুযোগ পেলেও তেমন ভাবে সামরিক প্রশিক্ষণ পাননি। তথাপি তিনি মোঘল সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর তাকে দু'হাজারী মনসবদারীতে উন্নীত করে ইসলাম খা উপাধী প্রদান করেন।[1] তিনি বাংলা সুবাদারের দায়িত্ব নেওয়ার আগে বিহার প্রদেশের সুবাদার ছিলেন।
সম্রাট আকবর বাংলা অঞ্চলে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অনেকবার অভিযান পরিচালনা করলেও সামন্ততান্ত্রিক বিদ্রোহের কারণে তা সফল হয়নি। সিংহাসনে আরোহণের পর সম্রাট জাহাঙ্গীরও বাংলা প্রদেশে কয়েকবার সৈন্যদের অভিযানে পাঠান। কিন্তু সবগুলো অভিযান ব্যর্থ হয়। ১৬০৮ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীর বাংলা বিজয়ের লক্ষ্যে ইসলাম খান কে প্রেরণ করেন। ইসলাম খানের বয়স তখন ৩৮ বছর। তিনি বাংলার রাজনীতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার প্রচারাভিযান পরিচালনার বিষয়াদির সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান বাধার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে বারো ভূঁইয়ার ভাটি এবং খাজা উসমানের অধীনস্থ আফগানি মদদদাতাদের সরিয়ে ফেলার পরিকল্পনা করেন।
ইসলাম খান তার সামরিক এবং নৌবাহিনীকে পুনগঠিত করে প্রথমে বারো ভূঁইয়াদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা করেন। তিনি উপলব্ধি করেন ভাটি অঞ্চলে যুদ্ধ জয়ের জন্য তাকে তার নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে। এই উপলব্ধি থেকে ভাটি অঞ্চলে সামরিক অভিযান পরিচালনার জন্য তিনি অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তা এবং সৈন্য নিয়োগ করেন। ইসলাম খান খুব সতর্কতার সাথে ভাটি অঞ্চলে যুদ্ধাভিযান পরিচালনা করেন, তিনি প্রথমে বারো ভূঁইয়াদের মিত্র যেমন যশোরের শক্তিশালী রাজা প্রতাপাদিত্য এবং ভুসনার রাজা সতরঞ্জিতকে দমন করেন। তিনি বাংলার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের অবাধ্য জমিদারদের বিরুদ্ধেও সৈন্য প্রেরণ করেছিলেন। ১৬০৯ সালের জুন মাসে ইসলাম খানের সৈন্যরা রাজমহল থেকে ঘোড়াঘাটে এসে পৌছায়। তিনি জুন-জুলাই মাসে ঢাকায় পৌছানোর আগে ১৬১০ সালের প্রথম কয়েক মাস বারো ভূঁইয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকেন। বারো ভূঁইয়াগণ স্তিমিত না হয়ে পুনরায় শীতলক্ষা নদীর দুপাশে তাদের অবস্থান সুসংহত করেন। ইসলাম খান তাদের বেশি সুযোগ না দিয়ে ঢাকাকে পুনগঠিত করেই তিনি বারো ভূঁইয়াদের সবগুলো ঘাঁটিতে আক্রমণ চালান এনং ১৬১১ সালের শেষের দিকে বারো ভূঁইয়াদের প্রধান মুসা খান বারো ভূঁইয়াদের সকলে ইসলাম খানের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তার এই বিজয়ের পর ইসলাম খান তার সৈন্য পাঠান খাজা উসমান খান এবং আফগানি অধিপতিদের বিরুদ্ধে। আফগানিরা উহার (মৌলভীবাজার) পালিয়ে যায় এবং নিজেদের আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে থাকে। ইসলাম খানের অনুরোধে সম্রাট উসমানের বিরুদ্ধে সৈন্যদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সুজাত খানকে প্রেরণ করেন। দুই পক্ষই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খাজা উসমানের হঠাৎ মৃত্যুতে মুঘল সৈন্যদের সুবিধা অর্জন করে। মুঘল বাহিনী আরও অগ্রসর হয়ে তাদের প্রতিপক্ষ এবং সিলেটের বায়াজিদ কেরানীর অধীনস্থ আফগানি সৈন্যদের পরাস্ত করে। ইসলাম খান পরে কামরূপ রাজ্যও অধিকার করেন।
ইসলাম খান বাংলার প্রায় সবখানেই মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি এক এক করে তার শত্রুদের আক্রমণ করেছিলেন এবং সুগঠিত মুঘল সৈন্য দ্বারা মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমন করে সবখানে এক মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যদিও পরাজিত জমিদার, ভূঁইয়া, এবং প্রধানদের অঞ্চল তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হত কিন্তু তাদের মুঘল সামরিক দলে জোড়পূর্বক যোগ দেওয়ানো হত এবং তাদের যুদ্ধ জাহাজ গুলো বাজেয়াপ্ত করা হত। মুঘল সৈন্যদলে যোগ দেওয়ার ফলে তাদের নিজেদের মিত্র জমিদার ও ভূঁইয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হত।
ভূঁইয়াদের পরাস্ত করার পর ইসলাম খান প্রাদেশিক রাজধানী সরিয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত নেন। তিনি পূর্ব বাংলা রাজমহল থেকে রাজধানী বাংলার মধ্যবর্তী অঞ্চল ঢাকাতে সরিয়ে আনেন। এ স্থানান্তর মুঘল সৈন্যরা বাংলার মূল ভূখন্ডে স্থায়ীভাবে ব্যবহার করার সুযোগ পায় এবং এলাকার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিজেদের জড়িত করে। ঢাকাকে ইসলাম খান নামান্তরিত করে জাহাঙ্গীরনগর করেন এবং আধুনিক এক শহরের গোড়াপত্তন করেন।
ঢাকার ইসলামপুর তার নামেই নামকরণ করা হয়েছে। রমনার একাংশ একসময় তার বংশের নামে মহল্লা চিশতীয়ান বলে পরিচিত ছিল। সৈয়দ আওলাদ হোসেন লেনের মসজিদটি ইসলাম খাঁ নির্মিত বলে অনুমিত হয়। ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগার যা একটি দুর্গ ছিল তা ইসলাম খান পুনঃনির্মাণ করেছিলেন। [1]
ইসলাম খান ঢাকা এবং বাংলার গভর্নর ছিলেন ১৬০৮ থেকে ১৬১৩ সাল পর্যন্ত। ১৬১৩ সালে তিনি ঢাকা থেকে ২৫ মাইল উত্তরে ভাওয়ালে রহস্যজনক এবং অনাকাঙ্খিত ভাবে মৃতুবরণ করেন। তিনি প্রথমে সমাহিত হন বাদশাহী বাগ (পুরনো হাইকোর্ট এলাকা), ঢাকা। পরে তার অবশিষ্ট ফতেহপুর সিক্রি নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার দাদা শেখ সেলিম চিশতি এর পাশে সমাহিত করা হয়। তার নামে ঢাকায় একটি বড় মসজিদ রয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.