Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইদ্রিসীয় রাজবংশ (আরবি: الأدارسة, প্রতিবর্ণীকৃত: al-Adārisah) ছিল একটি আরব শিয়া মুসলিম রাজবংশ যারা ৭৮৮ থেকে ৯৭৪ সাল পর্যন্ত মরক্কো শাসন করেছিল। এর প্রতিষ্ঠাতা প্রথম ইদ্রিসের নামানুসারে বংশটির নামকরণ করা হয়েছিল। ইদ্রিসীয়রা ছিল আলীয় ও হাসানীয় রাজবংশ এবং নবী মুহম্মদের বংশধর। ইদ্রিসীয়দের ঐতিহ্যগতভাবে প্রথম মরক্কান মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বিবেচনা করা হয় যারা এই অঞ্চলকেন্দ্রিক পরবর্তী রাজবংশ ও রাজ্যগুলির মঞ্চ স্থাপন করেছিল।[1]:৮১ তাদের রাজত্ব মরক্কোর প্রারম্ভিক ইসলামায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল এবং প্রধান নগরকেন্দ্রগুলোতে আরব অভিবাসন ও আরবায়ন বৃদ্ধিতেও তত্ত্বাবধান করেছিল।:৮৩-৮৪:৫২
ইদ্রিসীয় রাজবংশ الأدارسة | |||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
৭৮৮–৯৭৪ | |||||||||||
পতাকা | |||||||||||
৮২০ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে সর্বোচ্চ ব্যাপ্তিতে ইদ্রিসীয় সাম্রাজ্য | |||||||||||
অবস্থা | মরক্কোর শাসক রাজবংশ | ||||||||||
রাজধানী | ওলিলি (৭৮৮–৮০৮) ফেজ (৮০৮–৯২৭) হাজর আন-নসর (৯২৭–৯৮৫) | ||||||||||
প্রচলিত ভাষা | আরবি, বর্বর ভাষাসমূহ | ||||||||||
ধর্ম | শিয়া ইসলাম
| ||||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||||
ঐতিহাসিক যুগ | মধ্যযুগ | ||||||||||
• প্রতিষ্ঠা | ৭৮৮ | ||||||||||
• বিলুপ্ত | ৯৭৪ | ||||||||||
|
ঐতিহাসিক আরব রাজ্য এবং রাজবংশ | ||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
| ||||||||||||||||
মাশরিক রাজবংশ
| ||||||||||||||||
ফখ যুদ্ধের পর পূর্বদিকে আব্বাসীয় খিলাফতকে পলায়ন করে প্রথম ইদ্রিস স্থানীয় আমাজিগ বর্বর মিত্রদের সহায়তায় ৭৮৮ সালে বর্তমান মরক্কোর ভলুবিলিসে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি এবং তাঁর পুত্র দ্বিতীয় ইদ্রিস পরবর্তীকালে ফেজ শহরটি আরও পূর্ব দিকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ফেজ একটি ইদ্রিসীয় রাজ্যের রাজধানী হয়ে ওঠে যা বর্তমান মরোক্কো এবং পশ্চিম আলজেরিয়ার বেশিরভাগ অংশ শাসন করেছিল। দ্বিতীয় ইদ্রিসের মৃত্যুর পর রাজ্যটি তার প্রতিদ্বন্দ্বী পুত্রদের মধ্যে বিভক্ত হয়েছিল। একটি বিরোধের পরে, রাজবংশের কর্তৃত্ব পুনরায় শুরু হয় এবং ৮৩৬ এবং ৮৬৩ সালের মধ্যে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে। নবম শতাব্দীর শেষের দিকে তারা বারবার চ্যালেঞ্জ এবং স্থানীয় বিরোধিতার মুখোমুখি হয়েছিল। দশম শতাব্দীতে এই অঞ্চলটি জেনাতা উপজাতির রাজনৈতিক আধিপত্যের অধীনে চলে আসে যারা এই অঞ্চলে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি ফাতিমীয় খিলাফত এবং কর্ডোবার উমাইয়া খিলাফতের পক্ষে প্রক্সি যুদ্ধ করেছিল। ৯২৭ সালে ইদ্রিসীয়রা স্পষ্টতই ফেজ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল, তবে তাদের ঘাঁটি হাজর আন-নসর থেকে মরক্কোর উত্তরের একটি হ্রাসপ্রাপ্ত অঞ্চলে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল। তারা অবশেষে ৯৭৪ সালে পরাজিত এবং ক্ষমতা থেকে অপসৃত হয় এবং ৯৮৫ সালে তাদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের সংক্ষিপ্ত প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়।
ইদ্রিসিরা আরব বংশোদ্ভূত ছিল।[2] তারা ছিল শিয়া মতবাদের জাইদি শাখার অনুসারী।[3]
ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ এই বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।[4] আব্বাসীয় ও শিয়াদের মধ্যে ফাখের যুদ্ধের পর ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ মাগরেবে পালিয়া যান। প্রথমে তিনি তাঞ্জিয়ার আসেন। এটি তৎকালীন যুগে মরক্কোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। ৭৮৮ সালা নাগাদ তিনি ভলুবিলিসে বসবাস শুরু করেন।
ভলুবিলিসের শক্তিশালী আওরাবা বার্বাররা তাকে তাদের ইমাম মনোনীত করে। তারা মূলত তিলিমসান অঞ্চলের বাসিন্দা ছিল। ৬৭০ ও ৬৮০ এর দশকে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে তারা কুসাইলাকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু ৮ম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধ নাগাদ তারা উত্তর মরক্কোয় বসতি স্থাপন করে। তাদের নেতা ইসহাক রোমান শহর ভলুবিলিসে তার কেন্দ্র স্থাপন করেন। এই সময় নাগাদ আওরাবারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তাদের বসবাসের অঞ্চলের অধিকাংশ গোত্রই ছিল খ্রিষ্টান, ইহুদি, খারিজি বা পৌত্তলিক সম্প্রদায়ের। নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থানকে দৃঢ় করার জন্য তারা একজন শরিফি ইমামকে স্বাগত জানিয়ে থাকতে পারে। ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ আওরাবাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হন। ৭৮৯ সালে তিনি ভলুবিলিসের দক্ষিণপূর্বে মেদিনাত ফাস নামে একটি বসতি স্থাপন করেন। ৭৯১ সালে ইদ্রিস ইবনে আবদুল্লাহ একজন আব্বাসীয় গুপ্তচর কর্তৃক বিষপ্রয়োগে নিহত হন। মৃত্যুকালে তার কোনো পুরুষ উত্তরাধিকারী ছিল না। কিন্তু তার মৃত্যুর অল্প কিছুকাল পর তার স্ত্রী কানজা তার পুত্র দ্বিতীয় ইদ্রিসের জন্ম দেন। ইদ্রিসের বিশ্বস্ত সাবেক দাস রশিদ তার সন্তানকে বড় করেন এবং তার পক্ষে রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। ৮০১ সালে রশিদ আব্বাসীয়দের হাতে নিহত হন। পরের বছর ১১ বছর বয়সে দ্বিতীয় ইদ্রিসকে আওরাবারা ইমাম ঘোষণা করে।
উত্তর মরক্কোর অধিকাংশ অঞ্চলে নিজের নিয়ন্ত্রণ বিস্তৃত করতে পারলেও প্রথম ইদ্রিস আওরাবা নেতৃত্বের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলেন। দ্বিতীয় ইদ্রিস এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসেন। তিনি ওয়ালিলিতে আরব বসতিস্থাপনকারীদের স্বাগত জানান। দুইজন আরবকে তিনি তার উজির ও কাজি নিযুক্ত করেছিলেন। আওরাবা নেতা ইসহাক তিউনিসিয়ার আগলাবিদের সাথে মিলে তার বিরুদ্ধে পরিকল্পনা শুরু করেন। এর ফলেই ইদ্রিস ইসহাককে হত্যা করেন। ৮০৯ সালে তিনি আওরাবা সংখ্যাগরিষ্ঠ ওয়ালিলি থেকে ফেজে নিজের দপ্তর স্থানান্তর করেন। এখানে তিনি আল-আলিয়া নামক নতুন বসতি গড়ে তোলেন। দ্বিতীয় ইদ্রিস তার বাবার প্রতিষ্ঠিত ফেজের উন্নয়ন করেন। এখানে তিনি দুই দফায় আরব অভিবাসীদের স্বাগত জানান। এর মধ্যে একটি অভিবাসীদল ৮১৮ সালে কর্ডোবা থেকে এবং অন্য দল ৮২৪ সালে আগলাবি তিউনিসিয়া থেকে আসে। এর ফলে অন্যান্য মাগরেবি শহরের তুলনায় ফেজের আরব বৈশিষ্ট্য বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয় ইদ্রিস ৮২৮ সালে মারা যান। এসময় ইদ্রিসি রাষ্ট্র পশ্চিম আলজেরিয়া থেকে দক্ষিণ মরক্কো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এবং তা মরক্কোর প্রধান রাষ্ট্র হয়ে উঠেছিল।
দ্বিতীয় ইদ্রিসের মৃত্যুর পর রাজবংশের পতন শুরু হয়। তার পুত্র ও উত্তরসুরি মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিসের শাসনামলে রাজ্য তার সাত ভাইয়ের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। ফলে মরক্কো ও আলজেরিয়ায় আটটি ইদ্রিসি রাষ্ট্রের জন্ম হয়।[5] মুহাম্মদ ইবনে ইদ্রিসের হাতে শুধু ফেজের শাসনভার ছিল। তার অন্যান্য ভাইদের উপর তার শাসন কর্তৃত্ব ছিল আনুষ্ঠানিক। এই সময় শহরগুলিতে ইসলামি ও আরব সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে এবং মরক্কো ট্রান্স-সাহারার বাণিজ্য থেকে মুনাফা অর্জন করে।
ইসলামি ও আরব সংস্কৃতির বিকাশ সত্ত্বেও তা শুধু শহরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল। মরক্কোর অধিকাংশ জনগণ বার্বার ভাষা ব্যবহার করত। ইদ্রিসি রাজবংশও বার্বার প্রভাবিত ছিল। ৮৭০ এর দশকে ইবনে কুতাইবা তাদেরকে প্রথার দিক থেকে বার্বার বলে বর্ণনা করেছেন। ১১শ শতাব্দী নাগাদ রাজপরিবার সম্পূর্ণরূপে মরক্কোর বার্বার সমাজের সাথে একীভূত হয়ে পড়ে। ১১শ শতাব্দীতে এসকল বার্বার ইদ্রিসিদের মধ্য থেকে হামুদিদের উত্থান হয় এবং তারা উত্তর মরক্কো ও দক্ষিণ স্পেনের কয়েকটি শহরের ক্ষমতা নিতে সক্ষম হয়েছিল।
৮৬৮ সালে মাদইয়ুনা, গাইয়াতা ও মিকণাসার বার্বার খারিজি গোত্রগুলি ইদ্রিসিদের বিরুদ্ধে একজোট হয়। সেফরুতে তাদের ঘাঁটি ছিল। তারা ইদ্রিসি শাসক আলি ইবনে উমরকে পরাজিত ও হত্যা করতে সক্ষম হয় এবং ফেজ দখল করে। তার ভাই ইয়াহিয়া ৮৮০ সালে পুনরায় শহর অধিকার করতে সক্ষম হন এবং নতুন শাসক হন। ইদ্রিসিরা কয়েক দফা বারগাওয়াতা ও সিলিলমাসার খারিজি ও নেকুরের সুন্নিদের উপর হামলা চালায় কিন্তু এসকল নিজেদের রাজ্যের অঙ্গীভুত করতে সক্ষম হয়নি।
৯১৭ সালে মিকণাসা গোত্র ও তাদের নেতা মাসালা ইবনে হাবুস তাদের মিত্র ফাতেমীয়দের পক্ষে ফেজ আক্রমণ করে। ইয়াহিয়া ইবনে ইদ্রিসকে ফাতেমীয়দের আধিপত্য মেনে নিতে বাধ্য করা হয়। প্রথম হাসান আল-হাজাম ৯২৫ থেকে ৯২৭ সাল পর্যন্ত ফেজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পেরেছিলেন। উৎখাতের উদ্দেশ্যে ফেজ থেকে মিকণাসা গোত্র মরক্কোজুড়ে ইদ্রিসি পরিবারের সদস্যদের সন্ধান শুরু করে। অধিকাংশ ইদ্রিসি উত্তরপশ্চিম মরক্কোর জাবালা গোত্রের কাছে আশ্রয় নেয়। জাবালা অঞ্চলে হাজার আন-নাসার দুর্গে তাদের শক্তঘাটি ছিল। এখান থেকে তারা তাদের ক্ষমতা পুনর্গঠনের চেষ্টা চালায়। শেষ ইদ্রিসি শাসক হাসান ইবনে কানুন কর্ডোবা কর্তৃক তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।
ফাতেমীয় আধিপত্য – (৯১৭-৯২৫)
— রাজবংশ — ইদ্রিসি রাজবংশ | ||
পূর্বসূরী — |
মরক্কোর আমির ৭৮৯–৯১৭ ৯২৫–৯২৭ ৯৩৭–৯৭৪ |
উত্তরসূরী — উমাইয়া আধিপত্য |
পূর্বসূরী উমাইয়া রাজবংশ |
কর্ডোবার খলিফা হামুদি শাখা ১০১৬–১০২৩ ১০২৫–১০২৭ |
উত্তরসূরী উমাইয়া রাজবংশ (পুনপ্রতিষ্ঠিত) |
পূর্বসূরী — কর্ডোবা খিলাফতের ভাঙ্গণ |
মালাগা তাইফা হামুদি শাখা ১০২৬–১০৫৭ |
উত্তরসূরী — গ্রানাডা তাইফার সাথে একীভূত |
পূর্বসূরী — কর্ডোবা খিলাফতের ভাঙ্গণ |
আলজেসিরাস তাইফা হামুদি শাখা ১০৩৯–১০৫৮ |
উত্তরসূরী — সেভিল তাইফার সাথে একীভূত]] |
পূর্বসূরী মারিনি রাজবংশ |
মরক্কোর সুলতান জওতি শাখা ১৪৬৫–১৪৭২ |
উত্তরসূরী ওয়াতাসি রাজবংশ |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.