Loading AI tools
যে ঝিল্লির মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট অণু বা আয়ন ব্যাপন প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করতে পারে উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অর্ধভেদ্য ঝিল্লি (ইংরেজি: semipermeable membrane) হচ্ছে এক ধরনের জৈবিক অথবা কৃত্রিম, পলিমারীয় আবরণ যা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে (অথবা ক্ষেত্রবিশেষে, সুগম ব্যাপন, নিষ্ক্রিয় পরিবহন বা সক্রিয় পরিবহন এর মত আরও বিশেষায়িত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে[সন্দেহপূর্ণ ]) নির্দিষ্ট অণু বা আয়নকে এর মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার অনুমতি দেয়। এই ঝিল্লি দিয়ে অতিক্রমণের হার এর উভয় পার্শ্বের অণু বা দ্রবের চাপ, ঘনমাত্রা, তাপমাত্রা এবং প্রতিটি দ্রবের সাপেক্ষে ঐ ঝিল্লির প্রবেশ্যতা'র ওপর নির্ভরশীল। ঝিল্লি ও দ্রবের ওপর নির্ভর করে, দ্রবের আকার, দ্রাব্যতা, বৈশিষ্ট্য বা রসায়নের ওপর প্রবেশ্যতা নির্ভর করে। ঝিল্লির গঠনের ওপর ভিত্তি করে এর হার এবং প্রবেশ্যতা নির্ধারিত হয়। উল্লেখ্য যে, অর্ধভেদ্য ঝিল্লি আর বাছাইমূলকভাবে ভেদ্য ঝিল্লি (selectively permeable membrane) এক নয়। অর্ধভেদ্য ঝিল্লি কোন কোন কণাকে অবাধে প্রবেশ করতে দেয় (আকারের ভিত্তিতে); অন্যদিকে, বাছাইমূলকভাবে ভেদ্য ঝিল্লি "বাছাই" করে কোন কণা তার মধ্য দিয়ে যেতে পারবে (আকার বিবেচ্য নয়)।
জৈবিক অর্ধভেদ্য ঝিল্লি একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে লিপিড দ্বি-স্তর, যার ওপর ভিত্তি করে কোষ ঝিল্লি অবস্থান করে যা সকল জৈবিক কোষের চারপাশে পরিবেষ্টনী হিসেবে বিদ্যমান থাকে। একটি ফস্ফোলিপিড গ্রুপ (একটি ফস্ফেট মাথা এবং দুটি ফ্যাটি অ্যাসিড লেজ নিয়ে গঠিত) দুটি স্তরে বিন্যস্ত থাকে। ফস্ফোলিপিড দ্বি-স্তর (Phospholipid bilayer) হচ্ছে একটি অর্ধভেদ্য ঝিল্লি যার প্রবেশ্যতা অত্যন্ত সুনির্দিষ্ট। পানিগ্রাহী ফস্ফেট মাথাটি (hydrophillic head) বহিঃস্তরে থাকে এবং কোষের বাইরের (extracellular) ও ভেতরের (intracellular) জলীয় অংশে উন্মুক্ত অবস্থায় থাকে। পানিবিদ্বেষী লেজের (hydrophobic tail) অংশটি ঝিল্লির ভিতরের দিকে লুকায়িত থাকে। ক্ষুদ্র, অনাহিত দ্রবের প্রতি ফস্ফোলিপিড দ্বি-স্তর সর্বাপেক্ষা প্রবেশ্য। ফস্ফোলিপিড এর মধ্য দিয়ে প্রোটিন নালী ভাসমান থাকে। সামষ্টিকভাবে, এই মডেলের নাম ফ্লুইড মোজাইক মডেল। অ্যাকুয়াপোরিন হচ্ছে প্রোটিন নালী যা পানির প্রতি প্রবেশ্য।
কোন অর্ধভেদ্য ঝিল্লির মধ্য দিয়ে পানির ব্যাপন প্রক্রিয়াকে বলা হয় অভিস্রবণ। এর ফলে পানিসহ সুনির্দিষ্ট কিছু কণা ঝিল্লি ভেদ করতে পারে এবং লবণ ও অন্যান্য দূষণকারী পদার্থ রয়ে যায়। বিপরীত অভিস্রবণ প্রক্রিয়ায়, পাতলা আবরণের যৌগিক ঝিল্লি (thin film composite membrane, TFC or TFM) ব্যবহার করা হয়। এগুলো হচ্ছে অর্ধভেদ্য ঝিল্লি যা প্রধানত পানি পরিশোধন অথবা লবণ দূরীকরণ ব্যবস্থাসমূহে প্রয়োগ করা হয়। রাসায়নিক ক্ষেত্রেও এদের ব্যবহার রয়েছে, যেমন- ব্যাটারি এবং জ্বালানি কোষে। প্রকৃতপক্ষে, টিএফসি হচ্ছে এক ধরনের আণবিক ছাঁকনি যা দুই বা ততোধিক স্তরবিশিষ্ট পাতলা আবরণ দ্বারা গঠিত। অধ্যাপক সিডনী লোয়েব এবং শ্রীনিবাস সৌরিরাজন প্রথম কৃত্রিম ব্যবহারিক অর্ধভেদ্য ঝিল্লি আবিষ্কার করেন।[1] বিপরীত অভিস্রবণে ব্যবহৃত ঝিল্লিসমূহ সাধারণত পলিঅ্যামাইড দ্বারা তৈরি করা হয়। পানির প্রতি এর প্রবেশ্যতা এবং ছাঁকা যায় না এমন লবণের আয়ন ও অন্যান্য ক্ষুদ্র অণুসমূহের মত দ্রবীভূত অপদ্রব্যের প্রতি এর অপ্রবেশ্যতাই এটি বেছে নেওয়ার কারণ। অর্ধভেদ্য ঝিল্লির আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে ডায়ালাইসিস নল (dialysis tubing)
কোষীয় যোগাযোগের সাথে অর্ধভেদ্য ঝিল্লি জড়িত থাকে। কোন কোষের কোষ ঝিল্লি প্রোটিন ও ফস্ফোলিপিড দ্বারা গঠিত।[2] সংকেতবাহী অণুসমূহ কোষ ঝিল্লির প্রোটিনের কাছে রাসায়নিক বার্তা প্রেরণ করে। এই সংকেতবাহী অণুগুলো প্রোটিনের সাথে যুক্ত হয়, যা প্রোটিনের গঠনকে বদলে দেয়।[3] প্রোটিন কাঠামোতে পরিবর্তন একটি সংকেত ধারাক্রমের সূচনা ঘটায়।[3] ঝিল্লি-ভিত্তিক ব্যবস্থার সুবিধা গ্রহণ করে এমন একটি প্রক্রিয়ার উদাহরণ হচ্ছে কলা এবং কোষীয় সংরক্ষণ প্রযুক্তি। সেখানে দেখা যায় যে, সংরক্ষণের পূর্বে ও পরে অবিরাম সংকেত প্রদানের কারণে,[4] অসংলগ্ন কোষের তুলনায় সংলগ্ন কোষসমূহ যেমন- মাতৃকোষ[5] (stem cells) ও মায়োব্লাস্ট[6] থেকে শ্রেয়তর ফলাফল পাওয়া যায়।
অন্যান্য ধরনের অর্ধভেদ্য ঝিল্লি হচ্ছে ক্যাটায়ন বিনিময় ঝিল্লি (CEM), আধান মোজাইক ঝিল্লি (CMM), দ্বি-মেরু ঝিল্লি (BPM), অ্যানায়ন বিনিময় ঝিল্লি (AEM), ক্ষার অ্যানায়ন বিনিময় ঝিল্লি (AAEM), এবং প্রোটন বিনিময় ঝিল্লি (PEM)।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.