উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অরুণ (সংস্কৃত: अरुण) শব্দটির আক্ষরিক অর্থ "লালবর্ণ", "রক্তাভ" বা "কপিশবর্ণ" এবং তিনি হলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সূর্যদেবের রথের সারথি৷[১] আদতে সূর্যের গাঢ় রক্তিম আভাকেই হিন্দু পুরাণে অরুণ নামে মানবীকরণ করা হয়৷[২]
বৌদ্ধ ধর্ম ও জৈন ধর্মের শিল্প সাহিত্যকর্মেও অরুণের উল্লেখ রয়েছে৷[৩][৪] অরুণ ছিলেন পৌরাণিক অর্ধপ্রাণী অর্ধপক্ষী গরুড়ের জ্যেষ্ঠভ্রাতা তথা অগ্রজ৷ তারা উভয়ই ছিলেন বৈদিক ঋষি কশ্যপ এবং তার স্ত্রী বিনতার পুত্র৷[১] অরুণদেবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃৃত মূর্তি এবং মন্দিরটি ওয়াট অরুণ নামে পরিচিত যা থাইল্যান্ডে অবস্থিত৷[৫][৬] হিন্দু ও ভারতীয় লোককাহিনী অনুযায়ী রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে যে, তিনি অরুণী নামে এক নারীর অবতার গ্রহণ করেন এবং সূর্যদেব ও ইন্দ্রদেবের মাধ্যমে যথাক্রমে সুগ্রীব ও বালী নামক দুই বানর সন্তানের জন্ম দেন৷[১] মহাভারত অনুসারে সূর্যদেব মহাভারতের যুদ্ধের উদ্দেশ্যে তার পুত্র কর্ণকে তার দিব্য অশ্বরথ এবং তার সারথি অরুণকে যুদ্ধ শেষ হওয়া অবধি আশীর্বাদ হিসাবে দিতে চান৷ কিন্তু কর্ণ যুদ্ধে কৃৃষ্ণের সাহায্য প্রাপ্ত অর্জুনের সাথে কোনো দিব্যঅস্ত্র বা দিব্যবস্তু ছাড়া একা প্রতিপক্ষ হতে চেয়েছিলেন৷ আবার উপনিষদ সংক্রান্ত সাহিত্য তথা বৃৃহদারণ্যক উপনিষদে অরুণ নামে এক মুনির উল্লেখ রয়েছে যার পুত্র আরুণি উদ্দালকও ছিলেন একজন বৈদিক মুনি৷[৭] হিন্দু রীতি অনুসারে যেসকল ঋষিগণ আত্ম মনোনিবেশের মাধ্যমে মুক্তির পথ খুঁজে পেতেন তারাও আরুণি উপাধিতে ভূষিত হতেন৷[১]
ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীগুলিতে একে অপরের সাথে সম্বন্ধ্যযুক্ত নয় এমন কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনায় বিভিন্ন আঙ্গিকে অরুণের উল্লেখ পাওয়া যায়৷ একটি কাহিনী অনুসারে তার উৎপত্তি অকালে এবং অসম্পূর্ণভাবে এবং আংশিকভাবে কুসুমে বিকশিত৷ একই কাহিনী অনুসারে, কশ্যপ মুনির দুই স্ত্রী বিনতা এবং কদ্রু একসাথে সন্তান কামনা করেন৷ ফলে ঋষি কশ্যপ তাদের সেই ইচ্ছাপুরণের বরদান করেন৷[৮] কদ্রু সহস্র নাগরূপী সন্তান কামনা করেন আর বিনতা কামনা করেন দুই পুত্রের জন্য৷ কশ্যপ মুনি তাদের আশীর্বাদ করেন এবং তার কুটীর থেকে দূরের বনে নিয়ে যান৷ পরবর্তীকালে যথা সময়ে কদ্রু এক সহস্র অন্ড জন্ম দেন এবং বিনতা জন্ম দেন দুটি অন্ডের৷ এগুলি পাঁচ শত বছর যাবৎ ঐ ডিমের মধ্যেই বিকশিত হতে থাকে৷ এই সময়ের মধ্যেই কদ্রু তার সহস্র অণ্ড ভাঙলে তার সহস্র নাগ সন্তান তা থেকে নির্গত হয়ে আসে৷ বিনতা তার সন্তানদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে করতে হঠাৎ একদিন তার একটি ডিম ফোটাতে উদ্যত হলে সেখান থেকে অসম্পূর্ণ আকৃৃতি প্রাপ্ত অরুণ জন্ম নেয়৷[৮] ডিম ফোটার সাথে সাথে আলোর জ্যোতি নির্গত হয় এবং অরুণ উচ্চৈঃস্বরে বেরিয়ে আসে৷ তিনি প্রভাতের সূর্যের মতো বিচ্ছুরিত রক্তিম আভাযুক্ত ছিলেন৷ কিন্তু অকালে জন্মগ্রহণ করার দরুণ মধ্যাহ্নের সূর্যের তেজের মতো তার জ্যোতি ছিলো না৷[৯]
এর পরে বিনতা আরো কিছু বছর অপেক্ষা করলে অরুণের পূর্ণ বিকশিত ভ্রাতা ও বিষ্ণুবাহন গরুড়ের জন্ম হয়৷[৮]
ওয়াট অরুণ ("প্রভাতের সাধনালয়") হলো একটি বৌদ্ধমঠ বা উপাসনালয়, যা থাইল্যাণ্ডের ব্যাংকক অঞ্চলের ইয়াই জেলাতে অবস্থিত৷ মন্দিরটির পূর্বধার দিয়ে চাও ফ্রয়া নদী বয়ে গেছে৷ মন্দিরটির নাম হিন্দু দেবতা তথা সূর্যদেবের অশ্বচালক অরুণের নামানুসারে রাখা হয়৷ এটি থাইল্যাণ্ডের অন্যতম জনপ্রিয় সূচকগুলির মধ্যে একটি৷ ভোরের প্রথম আলো মন্দিরটির ওপর পড়লে তা মুক্তোর ছটার মতো আলোকিত হয় ও আলোক বিচ্ছুরন করে৷
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.