সূর্য
সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত নক্ষত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সূর্য (রবি নামে ডাকা হয়) সৌরজগতের কেন্দ্রের খুব কাছে অবস্থিত তারাটির নাম। প্রায় আদর্শ গোলক আকৃতির এই তারা প্রধানত প্লাজমা তথা আয়নিত পদার্থ দিয়ে গঠিত যার মধ্যে জড়িয়ে আছে চৌম্বক ক্ষেত্র।[৩] এর ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৯২ হাজার কিলোমিটার যা পৃথিবীর ব্যাসের ১০৯ গুণ, ভর প্রায় ২×১০৩০ কিলোগ্রাম তথা পৃথিবীর ভরের ৩ লক্ষ ৩০ হাজার গুণ। এই ভর সৌরজগতের মোট ভরের শতকরা ৯৯.৮৬ ভাগ।[৪] সূর্যের প্রধান গাঠনিক উপাদান হাইড্রোজেন, আসলে মোট ভরের তিন চতুর্থাংশই হাইড্রোজেন। হাইড্রোজেনের পরেই সবচেয়ে প্রাচুর্য্যময় মৌল হিলিয়াম। হিলিয়ামের চেয়ে ভারী মৌল সূর্যের মাত্র ১.৬৯% ভরের জন্য দায়ী, তারপরও এদের সম্মিলিত ভর পৃথিবীর ভরের ৫,৬২৮ গুণ। এই ভারী মৌলগুলোর মধ্যে রয়েছে অক্সিজেন, কার্বন, নিয়ন, লোহা ইত্যাদি।[৫]
![]() | |
পর্যবেক্ষণলব্ধ উপাত্ত | |
---|---|
পৃথিবী থেকে গড় দূরত্ব | ১৪৯.৬×১০৬ কিমি (৯২.৯৫×১০৬ মা) (আলোর গতিতে ৮.৩১ মিনিট) |
দৃশ্যমান ঔজ্জ্বল্য (ভি) | −২৬.৮m |
পরম মান | ৪.৮m |
বর্ণালীভিত্তিক শ্রেণীবিন্যাস | জি২ভি |
কক্ক্ষীয় বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
আকাশগঙ্গার কেন্দ্র থেকে গড় দূরত্ব | ≈ ২.৭×১০১৭ কিমি (২৭,২০০ আলোক বর্ষ) |
ছায়াপথীয় পর্যায়কাল | ২.২৫-২.৫০×১০৮ a (প্রায় ২২-২৫ কোটি সৌরবছর) |
বেগ | ≈ ২২০ কিমি/সে ছায়াপথের কেন্দ্রের চতুর্দিকে ৫৪,০০০ আলোকবর্ষব্যাপী কক্ষপথে
, ২০ কিমি/সে নাক্ষত্রিক প্রতিবেশের অন্যান্য তারার সাপেক্ষে |
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
গড় ব্যাস | ১.৩৯২ ± ১৩০×১০৬ কিমি (১০৯ পৃথিবী) |
পরিধি | ৪.৩৭৩×১০৬ কিমি |
কমলাকৃতি | ৯×১০−৬ |
পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল | ৬.০৯×১০১৮ মি² (১১,৯০০ পৃথিবী) |
আয়তন | ১.৪১×১০২৭ মি³ (১,৩০০,০০০ পৃথিবী) |
ভর | (১.৯৮৮ ৫৫ ± ০. ০০০২৫×১০৩০ কেজি (৩৩২,৯৪৬ পৃথিবী) |
ঘনত্ব | ১,৪০৮ কেজি/মি³ |
পৃষ্ঠের অভিকর্ষ | ২৭৪.০ মি সে-২ (২৭.৯ জি) |
পৃষ্ঠ থেকে মুক্তি বেগ | ৬১৭.৭ কিমি/সে (৫৫ পৃথিবী) |
পৃষ্ঠের তাপমাত্রা | ৫৭৮৫ কে |
করোনায় তাপমাত্রা | ৫ MK |
কেন্দ্রের তাপমাত্রা | ~১৩.৬ MK |
ঔজ্জ্বল্য (Lsol) | ৩.৮২৭×১০২৬ W ~৩.৭৫×১০২৮ lm (~98 lm/W ফলপ্রসূতা) |
গড় তীব্রতা (Isol) | ২.০০৯×১০৭ W m-২ sr-১ |
ঘূর্ণন বৈশিষ্ট্যসমূহ | |
ক্রান্তিকোণ | ৭.২৫° (ভূকক্ষের সাথে) ৬৭.২৩° (ছায়াপথীয় তলের সাথে) |
উত্তর মেরুর বিষুবাংশ[১] | ২৮৬.১৩° (১৯ ঘ ৪ মিন ৩০ সে) |
উত্তর মেরুর বিষুবলম্ব | +৬৩.৮৭° (৬৩°৫২' উত্তর) |
বিষুবরেখার ঘূর্ণন কাল | ২৫.৩৮ দিন (২৫ দ ৯ ঘ ৭ মিন ১৩ সে)[১] |
বিষুবরেখায় বেগ | ৭১৭৪ কিমি/ঘ |
আলোক মণ্ডলীয় গঠন (ভর অনুসারে) | |
হাইড্রোজেন[২] | ৭৩.৪৬ % |
হিলিয়াম | ২৪.৮৫ % |
অক্সিজেন | ০.৭৭ % |
কার্বন | ০.২৯% |
লোহা | ০.১৬ % |
নিয়ন | ০.১২ % |
নাইট্রোজেন | ০.০৯ % |
সিলিকন | ০.০৭ % |
ম্যাগনেসিয়াম | ০.০৫ % |
সালফার | ০.০৪ % |

তারার শ্রেণিবিন্যাস করার একটি সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে, সেই অনুসারে সূর্য জিটুভি (G2V) শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। অনেক সময় একে হলদে বামন ডাকা হয় কারণ তার তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি বর্ণালীর হলুদ-সবুজ অংশে। সূর্যের রঙ সাদা হলেও ভূপৃষ্ঠ থেকে একে হলুদ দেখাতে পারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে নীল আলোর বিচ্ছুরণের কারণে।[৬] বর্ণালী ধরন "জিটু" বলে দেয় সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা আনুমানিক ৫৭৭৮ কেলভিন বা ৫৫০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৯৪১ ডিগ্রী ফারেনহাইট, আর "ভি" দিয়ে বোঝায় আকাশগঙ্গার অধিকাংশ তারার মত সূর্যও একটি প্রধান ধারার তারা অর্থাৎ সে কেন্দ্রভাগে নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে অবিরাম হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম উৎপাদন করে যাচ্ছে। কেন্দ্রে সূর্য প্রতি সেকেন্ডে ৬২ কোটি মেট্রিক টন হাইড্রোজেন পোড়ায়। আগে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সূর্যকে অনুজ্জ্বল ও বেশ তাৎপর্যহীন একটি তারা মনে করলেও বর্তমানে জানা গেছে আকাশগঙ্গার শতকরা ৮৫ ভাগ তারার চেয়ে সূর্যের উজ্জ্বলতা বেশি, প্রকৃতপক্ষে আকাশগঙ্গার অধিকাংশ তারাই লোহিত বামন।[৭] সূর্যের ঔজ্জ্বল্যের পরম মান +৪.৮৩; কিন্তু পৃথিবীর খুব কাছে হওয়ার কারণে আকাশে একে অন্য যেকোন বস্তুর চেয়ে অনেক উজ্জ্বল দেখায়, তাই আপাত মান অনেক কম, -২৬.৭৪।[৮] সূর্যের করোনা অবিরত মহাশূন্যে প্রসারিত হতে থাকে যে কারণে সৌরঝড় অর্থাৎ সোলার স্ট্রমের জন্ম হয়। সৌরঝড় মূলত আয়নিত কণার ধারা যা হেলিওপজ তথা প্রায় ১০০ নভো-একক (সূর্য থেকে পৃথিবীর গড় দূরত্বের ১০০ গুণ) পর্যন্ত ধেয়ে যায়। সৌরঝড়ের মাধ্যমে আন্তঃনাক্ষত্রিক মাধ্যমে সৃষ্ট হেলিওস্ফিয়ার বা সৌরমণ্ডল সৌরজগতের বৃহত্তম অবিচ্ছিন্ন কাঠামো।[৯][১০]
সূর্য বর্তমানে স্থানীয় বুদবুদ অঞ্চলের স্থানীয় আন্তঃনাক্ষত্রিক মেঘের মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করছে যা আকাশগঙ্গার কালপুরুষ বাহুর ভেতরের দিকে অবস্থিত। পৃথিবী থেকে ১৭ আলোকবর্ষ দূরত্বের মাঝে তথা সবচেয়ে নিকটবর্তী ৫০টি তারার (সবচেয়ে নিকটবর্তী তারা প্রক্সিমা সেন্টাওরি ৪.২ আলোকবর্ষ দূরে) মধ্যে আমাদের সূর্য ভরের দিক দিয়ে চতুর্থ।[১১] সূর্য আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে আনুমানিক ২৪ - ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এবং কেন্দ্রের চারদিকে ২২.৫ থেকে ২৫ কোটি বছরে একবার ঘুরে আসে। ছায়াপথীয় উত্তর মেরু থেকে দেখলে সূর্যের এই আবর্তন ঘড়ির কাঁটার দিকে। আমাদের ছায়াপথ যেহেতু মহাজাগতিক অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণের (পটবিকিরণ) সাপেক্ষে হ্রদসর্প মণ্ডলের দিকে সেকেন্ডে ৫৫০ কিলোমিটার বেগে ধাবিত হচ্ছে সেহেতু পটবিকিরণের সাপেক্ষে সূর্যের বেগ কাংস্য বা সিংহ মণ্ডলের দিকে সেকেন্ডে প্রায় ৩৭০ কিলোমিটার।[১২]
পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব আনুমানিক ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার যাকে ১ নভো-একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে পৃথিবীর কক্ষপথ যেহেতু উপবৃত্তাকার সেহেতু সূর্য থেকে তার দূরত্ব পরিবর্তিত হয়, জানুয়ারি মাসে সে সূর্যের সবচেয়ে কাছে (অনুসূর) আসে এবং জুলাইয়ে সবচেয়ে দূরে (অপসূর) সরে যায়।[১৩] যাহোক, গড় দূরত্বে সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে আসতে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড সময় নেয়। এই সূর্যালোকের শক্তি পৃথিবীর প্রায় সকল জীবকে বাঁচিয়ে রাখে। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় এই আলো থেকে খাদ্য উৎপাদন করে এবং প্রাণীরা খাদ্যের জন্য এসব উদ্ভিদ বা অন্য প্রাণীর উপর নির্ভর করে।[১৪] পাশাপাশি জলবায়ু এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও সূর্যালোক প্রধান ভূমিকা রাখে। পৃথিবীর উপর সূর্যের বিশাল প্রভাব সেই প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই মানুষ অনুধাবন করে আসছে। অনেক সংস্কৃতিতে সূর্যকে তাই দেবতা মনে করা হতো। প্রকৃতপক্ষে সূর্য তার কেন্দ্রভাগে সংঘটিত নিউক্লীয় সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে অবিরাম হাইড্রোজেন পুড়িয়ে হিলিয়াম উৎপাদন করে তাপ-উত্তাপ সৃষ্টি করে সৌরজগতে বিকিরণ ঘটাচ্ছে যার কিয়দংশ পৃথিবীতে আপতিত হচ্ছে। তবে সূর্যের প্রকৃত কাঠামো সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ধারণা গড়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত বিজ্ঞানীরাও সূর্যের গাঠনিক উপাদান এবং শক্তির উৎস সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতেন না। এই প্রথমবার সূর্যের (The Sun) আবহমণ্ডল বা করোনা (Corona) অংশে প্রবেশ করল মানুষের পাঠানো কোনও মহাকাশযান। ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ইং মার্কিন মহাকাশ চর্চা কেন্দ্র নাসার (NASA) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল, এতদিন পর্যন্ত সৌরজগতের অনাবিষ্কৃত ওই অঞ্চলে প্রবেশ করেছে তাদের পার্কার সোলার প্রোব (Parker Solar Probe)। মানব সভ্যতার ইতিহাসে, এর আগে সূর্যের এতটা কাছাকাছি আসতে পারেনি কোনও মহাকাশ যান। লুইজিয়ানার নিউ অরলিন্সে (New Orleans, Louisiana), মার্কিন জিওফিজিক্যাল ইউনিয়নের সভায় এক প্রেস কনফারেন্স ডেকে এই বিরাট সাফল্যের কথা ঘোষণা করেন, নাসার হেলিওফিজিক্স বিভাগের ডিরেক্টর নিকোলা ফক্স (Nicola Fox)। ছোট্ট কথায় তিনি জানিয়ে দেন, 'আমরা অবশেষে পৌঁছেছি।' এই সাফল্য সূর্য সম্পর্কে এখনও উত্তরহীন বেশ কিছু বড় প্রশ্নের জবাবের সন্ধান দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। যেমন এখনও জানা নেই, সূর্য থেকে কীভাবে সৌর বায়ু (সূর্য থেকে ছুটে আসা শক্তিশালী কণার প্রবাহ) (Solar Wind) উৎপন্ন হয়? কেন সূর্যের পৃষ্ঠের তুলনায় এর করোনা অংশের তাপমাত্রায় বেশি? পার্কার সোলার প্রোবের গবেষণালব্ধ ফলাফলগুলি ফিজিক্স রিভিউ লেটার্স (Physical Review Letters)-এ প্রকাশ করা হয়েছে। এখনও সূর্য নিয়ে গবেষণা চলছে কারণ তার কিছু ব্যবহার এখনও পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায়নি।
বৈশিষ্ট্যসমূহ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সূর্য একটি জি-ধরনের প্রধান ধারার তারা যার ভর সৌর জগতের মোট ভরের শতকরা ৯৯.৮৬৩২ ভাগ। এর গঠন প্রায় নিখুঁত গোলকের মত, কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দিকে কমলালেবুর মত একটু চাপা। এই কমলাকৃতির পরিমাণ প্রতি ৯০ লক্ষ ভাগে এক ভাগ। অর্থাৎ সূর্যের মেরু অঞ্চলীয় ব্যস বিষুবীয় ব্যসের চেয়ে মাত্র ১০ কিলোমিটার কম। যেহেতু সূর্য প্লাজমা তথা আয়নিত গ্যাস দিয়ে গঠিত, সেহেতু এটি বিষুবীয় অঞ্চলে মেরু অঞ্চলের চেয়ে বেশি বেগে ঘোরে। এই পরিবর্তনশীল বেগকে বলা হয় ব্যবকলনীয় বেগ। এ ধরনের বেগের কারণ, সূর্যের মধ্যকার পরিচলন এবং কেন্দ্রের চেয়ে পৃষ্ঠের দিকে তাপমাত্রার ঢাল বেশি বাঁকা হওয়ায় ভরের স্থানান্তর। ভূ-কক্ষের উত্তর মেরু থেকে দেখলে সূর্যের যে বামাবর্তী কৌণিক ভরবেগ পর্যবেক্ষণ করা যায় তার কিছু অংশ এই ভর স্থানান্তরের কারণে পুনর্বন্টিত হয়। অর্থাৎ এক স্থানের ভরবেগ কমে গিয়ে অন্য স্থানে বেড়ে যায়। এই প্রকৃত ঘূর্ণন বেগের মান হচ্ছে বিষুবীয় অঞ্চলে ২৫.৫ দিন এবং মেরু অঞ্চলে ৩৩.৫ দিন। তবে পৃথিবীর সাপেক্ষে সূর্যের অবস্থান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হতে থাকায় আমরা এই আবর্তন বেগের মান পাই ২৮ পার্থিব দিন। দেখা যাচ্ছে, সূর্যের নিজ কক্ষের চারদিকে আবর্তন বেগ খুবই কম, এই ঘূর্ণন বেগ থেকে যে কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয় তা সূর্যের পৃষ্ঠ অভিকর্ষের তুলনায় ১৮০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ। গ্রহগুলোর জোয়ার বলও এ তুলনায় এত নগণ্য যে তারা সূর্যের আকার-আকৃতির কোন পরিবর্তন করতে পারে না।
সূর্য একটি পপুলেশন ১ তারা, অর্থাৎ এতে ভারী মৌলিক পদার্থের পরিমাণ বেশি। তারাটির উৎপত্তির পেছনে খুব সম্ভবত আশপাশের এক বা একাধিক অতিনবতারা (SUPERNOVA) বিস্ফোরণের ভূমিকা রয়েছে। উল্লেখ্য অতিনবতারা বিস্ফোরণ বিশাল গ্যাসীয় মেঘকে সংকুচিত করার মাধ্যমে নতুন তারা সৃষ্টির সূচনা ঘটাতে পারে। সৌরজগতে সাধারণ পপুলেশন ২ তারার (যাদের মধ্যে ভারী পদার্থ কম থাকে) চেয়ে বেশি ভারী মৌল দেখা যায়। যেমন, ইউরেনিয়াম এবং স্বর্ণ। এই ভারী মৌলগুলো সম্ভবত অতিনবতারা বিস্ফোরণের সময় তাপহারী বিক্রিয়ার মাধ্যমে, অথবা কোন বৃহৎ দ্বিতীয় প্রজন্ম তারার অভ্যন্তরে নিউট্রন শোষণ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়েছিল।
পার্থিব গ্রহগুলোর মত সূর্যের কোন নির্দিষ্ট পৃষ্ঠসীমা নেই এবং এর গ্যাসের ঘনত্ব ব্যসার্ধ্য বৃদ্ধির সাথে সাথে সূচকীয় হারে হ্রাস পায়। তথাপি এর প্রায় সুনির্দিষ্ট একটি অভ্যন্তরীন গঠন রয়েছে যা নিচে বর্ণনা করা হবে। সূর্যের ব্যসার্ধ্য নির্ণয় করা হয় কেন্দ্র থেকে আলোকমণ্ডলের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। আলোকমণ্ডল সূর্যের এমন একটি অঞ্চল যার বাইরে গ্যাস এত পাতলা হয়ে যায় যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিকিরণ নিঃসরণ করতে পারে না। এজন্যই দৃশ্যমান আলোয় আমরা সাধারণত সূর্যের আলোকমণ্ডলই দেখি।
সূর্যের অভ্যন্তরভাগ সরাসরি দেখা যায় না, সূর্য তড়িচ্চুম্বকীয় বিকিরণের প্রতি অনচ্ছ। কিন্তু সৌরকম্পনবিদ্যা-র মাধ্যমে অভ্যন্তরভাগ সম্পর্কে ধারণা লাভ সম্ভব, ঠিক ভূকম্পনবিদ্যার মত। ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট তরঙ্গের মাধ্যমে যেমন পৃথিবীর অভ্যন্তরীন গঠন সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় ঠিক তেমনি সূর্যের অভ্যন্তরভাগ দিয়ে চলমান অব-শাব্দিক চাপ তরঙ্গের মাধ্যমে সূর্যের অভ্যন্তরীন গঠনও জানা সম্ভব। এছাড়া কম্পিউটার সিম্যুলেশনের মাধ্যমেও সূর্যের অদেখা ভুবন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়।
কেন্দ্রের ভাগ
সূর্যের কেন্দ্র থেকে শুরু করে মোট ব্যাসার্ধের শতকরা ২০-২৫ ভাগ পর্যন্ত যে অঞ্চলটি রয়েছে তার নাম কোর বা কেন্দ্রভাগ। এই অঞ্চলের ঘনত্ব ১৫০ গ্রাম/ঘনসেন্টিমিটার (পানির ঘনত্বের ১৫০ গুণ) এবং তাপমাত্রা প্রায় ১ কোটি ৩৬ লক্ষ কেলভিন। অথচ সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা মাত্র ৫৮০০ ডিগ্রি কেলভিন। সোহো মহাকাশ মিশন থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, সূর্যের কেন্দ্রভাগে ঘূর্ণন বেগ বিকিরণ অঞ্চলের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশি। এই অঞ্চলে প্রোটন প্রোটন শিকলের মাধ্যমে হাইড্রোজেন সংযোজনের (ফিউশন) মাধ্যমে হিলিয়াম তৈরি হয়। এটিই সূর্যের শক্তির প্রধান উৎস। সূর্যে উৎপাদিত মোট হিলিয়ামের শতকরা মাত্র ২ ভাগ সিএনও চক্র থেকে আসে।
কেন্দ্রভাগে সূর্যের মোট শক্তির প্রায় পুরোটাই উৎপাদিত হয়। ব্যসার্ধ্যের ২৪% এর মধ্যে ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সূর্যের মোট শক্তির শতকরা ৯৯ ভাগ উৎপাদিত হয়, ৩০% এর পর আর কোন ফিউশন বিক্রিয়া দেখাই যায় না। সুতরাং সূর্যের বাকি অংশ কেন্দ্রভাগের শক্তি দিয়েই চলে, কেন্দ্রভাগ থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শক্তি বাইরের স্তরগুলোর দিকে প্রবাহিত হয়। অনেকগুলো স্তর ভেদ করে অবশেষে এই শক্তি আলোকমণ্ডলে পৌঁছায়, এরপর পদার্থ কণার গতিশক্তি বা সূর্যালোক হিসেবে মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রতি সেকেন্ডে ৯.২×১০৩৭ টি প্রোটন-প্রোটন শিকল বিক্রিয়া ঘটে। প্রতিটি বিক্রিয়ায় যেহেতু ৪টি হাইড্রোজেন মিলে একটি হিলিয়াম তৈরি হয় সেহেতু বলা যায়, প্রতি সেকেন্ডে সূর্য ৩.৭×১০৩৮ টি প্রোটনকে (প্রায় ৬.২×১০১১ কিলোগ্রাম) আলফা কণা তথা হিলিয়াম কেন্দ্রিনে রূপান্তরিত করে। সূর্যে মোট মুক্ত প্রোটনের সংখ্যা প্রায় ৮.৯×১০৫৬ টি। হাইড্রোজেনের সংযোজন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সংযোজিত ভরের শতকরা ০.৭ ভাগ শক্তিতে পরিণত হয়। হিসাব করলে দেখা যায় ভর-শক্তি রূপান্তরের মাধ্যমে সূর্যে প্রতি সেকেন্ডে ৪২ লক্ষ মেট্রিক টন শক্তি বিমুক্ত হয়। ভর ধ্বংস হয় না বরং এই ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয় যা বিকিরণ হিসেবে মহাশূন্য ছড়িয়ে পড়ে। আইনস্টাইনের ভর-শক্তি সমতুল্যতা দিয়ে এটি ব্যাখ্যা করা যায়।
তবে কেন্দ্রেভাগের সব স্থানে একই হারে বিক্রিয়াটি ঘটে না। কেন্দ্র থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি পরিবর্তিত হয়। তাত্ত্বিক মডেল থেকে দেখা যায় সূর্যের কেন্দ্রে শক্তি উৎপাদনের পরিমাণ প্রতি ঘন মিটারে ২৭৬.৫ ওয়াট। পরিমাণটি কিন্তু মোটেই বেশি নয়। এই সংখ্যা পারমাণবিক বোমার বদলে আমাদেরকে সরীসৃপদের বিপাকক্রিয়া ব্যবহৃত শক্তির কথা মনে করিয়ে দেয়। সূর্যের প্রতি একক আয়তনে উৎপাদিত সর্বোচ্চ শক্তিকে খাদ্যশস্যের বর্ধনে ব্যবহৃত সারের ব্যয়িত শক্তির সাথে তুলনা করা হয়েছে। সূর্য থেকে যে আমরা এত শক্তি পাই তার কারণ এই নয় যে, এই গ্যাসপিণ্ডের প্রতি একক আয়তনে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপাদিত হয়, বরং এইজন্যে যে সূর্যের আয়তন অনেক বেশি। একক আয়তনে শক্তির পরিমাণ অনেক কম হলেও সমগ্র আয়তনে সংখ্যাটি অনেক বড় হয়ে যায়।
কেন্দ্রভাগের সংযোজন বিক্রিয়া একটি আত্ম-সংশোধনযোগ্য সাম্যাবস্থায় আছে। বিক্রিয়ার হার যদি একটু বেড়ে যায় তাহলে কেন্দ্রভাগ উত্তপ্ত হয়ে সম্প্রসারিত হতে শুরু করে, এতে গ্যাসের ঘনত্ব কমে যায়, বিক্রিয়া হারও কমে যায়। আবার বিক্রিয়ার হার স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে কেন্দ্রভাগ সামান্য সংকুচিত হয়ে গ্যাসের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে বিক্রিয়ার হার আবার বেড়ে যায়। এভাবেই সাম্যাবস্থা রক্ষিত হয়।
বিক্রিয়া যেসব উচ্চ শক্তির গামা রশ্মি উৎপন্ন হয় তারা বিকিরিত হওয়ার মাত্র কয়েক মিলিমিটারের মধ্যেই সৌর প্লাজমা দ্বারা আবার শোষিত হয়, এরপর সামান্য নিম্ন শক্তিতে আবার বিকিরিত হয়। এভাবে বিকিরিণ-শোষণের খেলা চলতেই থাকে। এজন্যই সূর্যের কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠে শক্তি পৌঁছুতো অনেক সময় লাগে। কেন্দ্র থেকে পৃষ্ঠে ফোটনের আসতে প্রায় ১০,০০০ থেকে ১৭০,০০০ বছর লাগে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
পৃষ্ঠমুখী যাত্রার পথে ফোটন পরিচলন অঞ্চল পার হয়ে শেষে আলোকমণ্ডলে পৌঁছায়, এই স্তর পেরোলেই অবারিত মহাশূন্য, যাতে দৃশ্যমান আলো হিসেবে ফোটনগুলো ছড়িয়ে পড়ে। কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতিটি গামা রশ্মি সূর্য থেকে পালানোর পূর্বে কয়েক মিলিয়ন দৃশ্যমান তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ফোটনে রূপান্তরিত হয়। সংযোজন বিক্রিয়া গামা রশ্মির পাশাপাশি নিউট্রিনো-ও উৎপন্ন হয়, কিন্তু গামা রশ্মির মত তারা পদার্থের সাথে এত মিথস্ক্রিয়া করে না, আসলে মিথস্ক্রিয়া করে না বললেই চলে। সুতরাং উৎপাদিত নিউট্রিনোর প্রায় সবগুলোই তৎক্ষণাৎ সূর্য থেকে পালাতে সক্ষম হয়। অনেক বছর ধরে সূর্য থেকে যে পরিমাণ নিউট্রিনো পাওয়ার কথা তার চেয়ে প্রায় ৩ গুণ কম পাওয়া যাচ্ছিল। এই সমস্যার নাম দেয়া হয়েছিল সৌর নিউট্রিনো সমস্যা। কিন্তু ২০০১ সালে নিউট্রিনো স্পন্দন আবিষ্কৃত হওয়ার পর এর সমাধান হয়েছে। আসলে সূর্য থেকে অনেক নিউট্রিনো আসে, কিন্তু পৃথিবীতে দুরবিনের মাধ্যমে আমরা মাত্র ৩ ভাগের ২ ভাগ নিউট্রিনো সনাক্ত করতে পারি, কারণ পৃথিবীতে আসতে আসতে নিউট্রিনোগুলো স্বাদ পাল্টায়।
সূর্যের বয়স
সূর্যের বয়স বের করার কোন সরাসরি উপায় না থাকলেও পরোক্ষভাবে তা করা হয়েছে। যেমন পৃথিবীতে প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন প্রস্তর ও উল্কাপিণ্ডের বয়স হচ্ছে ৪৬০ কোটি বৎসর। ধারণা করা হয়, সমগ্র সৌরজগতের সৃষ্টি একই সময়ে। সেক্ষেত্রে সূর্যেরও বয়স হয় একই। [১৫]
সূর্য থেকে কিভাবে আলো উৎপন্ন হয়
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সূর্যের কেন্দ্রের পারমাণবিক বিক্রিয়ার কারণে এর বাইরের দিকের গ্যাস (প্লাজমা) খুব বেশি তপ্ত থাকে। এটাই সূর্যের আলো বিকিরণের মূল উৎস। বাড়িতে বৈদ্যুতিক বাল্বের ফিলামেন্ট তপ্ত হয়ে যেমন আলো ছড়ায়, ঠিক তেমনি সূর্যের বহিরাবরণের তপ্ত গ্যাস থেকে আলো আসে।
মহাশূন্যে সবসময়ই গ্যাস ভেসে বেড়ায়। সেই সাথে মৃত নক্ষত্রের কিংবা মৃত তারার অবশিষ্ট শক্তিও তরঙ্গাকারে মহাশূন্যে ভেসে বেড়ায়। সূর্য নামক আমাদের কাছের তারাটি আজ থেকে প্রায় ৫০০ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল মহাশূন্যে ভেসে বেড়ানো এরকমই কিছু গ্যাসীয় কণা এবং মৃত কোনো তারার অবশিষ্ট তরঙ্গ শক্তি নিয়ে। ভেসে বেড়ানো হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাসীয় কণাগুলোকে দূর থেকে ভেসে আসা তরঙ্গ শক্তি ধাক্কা দিয়ে একত্রিত করে। এরপরে সেখানে তৈরি হয় গ্যাসীয় মেঘ। গ্যাসীয় কণাগুলো পরস্পরের নিকটবর্তী হয়ে মাধ্যাকর্ষণ বলের আকর্ষণে এরা পুঞ্জীভূত হয়ে একটি গ্যাসীয় পিণ্ডে পরিণত হয়। মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে কণাগুলোর মধ্যে সংঘর্ষও হয়, যার ফলে কণাগুলো চার্জিত হয়। ফলে এরা আয়নিত গ্যাসে রূপান্তরিত হয়ে প্লাজমা অবস্থায় পরিণত হয়। এরপরে সৃষ্ট গ্যাস পিন্ডের চার্জিত গ্যাসীয় কণাগুলোর মধ্যে ফিউশন বিক্রিয়া শুরু হয়। অর্থাৎ হাইড্রোজেন গ্যাস ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে হিলিয়াম গ্যাসে রূপান্তরিত হয়। এতে শক্তি হিসেবে আলো নির্গত হয়। সূর্যের বেশীর ভাগ অংশ মানে প্রায় ৭৩ ভাগ হাইড্রোজেন গ্যাস এবং ২৫ ভাগ হিলিয়াম গ্যাস দ্বারা গঠিত। বাকী অংশগুলো অক্সিজেন, কার্বন,নিয়ন এবং আয়রন দ্বারা গঠিত। তবে এগুলোর সবই জ্বলন্ত এবং আয়নিত অবস্থায় রয়েছে।
প্লাজমা হচ্ছে পদার্থের চতুর্থ অবস্থা। পদার্থের তিন অবস্থা তথা কঠিন, তরল ও বায়বীয় ছাড়াও চার্জিত বা আয়নিত গ্যাসীয় অবস্থাকে পদার্থের চতুর্থ অবস্থা বলে। প্লাজমা অবস্থায় গ্যাসীয় কণাগুলোকে দূর থেকে দেখলে অগ্নিময় দানা দানা রূপে দেখা যায়।
সাধারণ আলোচনা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
সূর্যের ভরের শতকরা ৭৪ ভাগই হাইড্রোজেন, বাকি অংশের মধ্যে ২৫% হিলিয়াম এবং এছাড়াও রয়েছে উচ্চ ভরসম্পন্ন কিছু বিরল মৌলিক পদার্থ। সূর্যের নাক্ষত্রিক শ্রেণিবিন্যাস অনুসারে এর শ্রেণী হচ্ছে জি২ভি (G2V)। "জি২" দ্বারা বোঝায় এর পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা ৫,৫০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি K দ্বারা বোঝায় এর বর্ণ সাদা, অবশ্য পৃথিবীর পরিবেশে বিচ্ছুরণের কারণে এর বর্ণ হলুদ দেখায়। এর বর্ণালি রেখা বিশ্লেষণ করে দেখা যায় তাতে আয়নিত ও নিষ্ক্রীয় উভয় ধরনের ধাতুর বর্ণালি রয়েছে, এছাড়াও রয়েছে খুব দূর্বল হাইড্রোজেন রেখা। V-বর্ণটি দ্বারা বোঝায়, অন্যান্য অধিকাংশ তারার মতই সূর্য একটি প্রধান ধারার তারা। অর্থাৎ সূর্য তার প্রয়োজনীয় শক্তি হাইড্রোজেন কেন্দ্রীনকে কেন্দ্রীন সংযোজন প্রক্রিয়ায় হিলিয়াম কেন্দ্রীনে পরিণত করার মাধ্যমে উৎপাদন করে। এছাড়া প্রধান ধারার তারায় hydrostatic balance লক্ষ্য করা যায়, তথা এরা সম্প্রসারিত বা সংকুচিত হয়না। আমাদের ছায়াপথে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি G2 শ্রেণীর তারা রয়েছে। সূর্যের সমগ্র আকারের লগারিদমভিত্তিক বিন্য্যাসের কারণে এই ছায়াপথের ৮৫% তারার চেয়ে এর উজ্জ্বলতা বেশি। অবশ্য আমাদের আকাশগঙ্গার অনেকগুলো তারাই লাল বামন পর্যায়ে রয়েছে।
সূর্যের অবস্থান আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্র থেকে "২৫,০০০ - ২৮,০০০ আলোক বর্ষ", আর এই দূরত্বে থেকেই এটি অবিরত ছায়াপথের কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করছে। একবার কেন্দ্রের চারদিক দিয়ে সমগ্র পথ ঘুরে আসতে সূর্যের সময় লাগে "২২৫ - ২৫০ মিলিয়ন বছর"। এর কক্ষপথীয় দ্রুতি ২১৭ কিমি/সে; এ থেকে দেখা যায় সূর্য ১,৪০০ বছরে এক আলোক বর্ষ দূরত্ব এবং ৮ দিনে এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক (AU) দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে।[১৬]
সূর্য একটি তৃতীয় প্রজন্মের তারা, কাছাকাছি কোন একটি অতি নব তারা থেকে উদ্ভূত অভিঘাত তরঙ্গ এর উৎপত্তিতে একটি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল। পুরো সৌর জগতে স্বর্ণ বা ইউরেনিয়ামের মত ভারী মৌলসমূহের প্রাচুর্য লক্ষ্য করে চালিকাশক্তি হিসেবে এই ঘটনাটি প্রস্তাব করা হয়েছে। খুব সম্ভবত একটি অতি নব তারার বিবর্তনের সময় ক্রিয়াশীল endergonic কেন্দ্রীন বিক্রিয়া অথবা দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি বৃহৎ তারার অভ্যন্তরে নিউট্রন শোষণের ফলে উদ্ভূত ট্রান্সম্যুটেশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই মৌলসমূহ সৃষ্টি হয়েছে।

পৃথিবীর পৃষ্ঠতলের সকল শক্তির মূল উৎস সূর্য। সৌর ধ্রুবক নামে একটি পদের ব্যবহারই এই উৎসের প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে। সূর্যের দিকে সরাসরি মুখ করে থাকা পৃথিবী পৃষ্ঠের প্রতি একক ক্ষেত্রফলের উপর সূর্য প্রদত্ত শক্তির পরিমাণকে সৌর ধ্রুবক বলে। এর আপাত মান হচ্ছে ১,৩৭০ ওয়াট/বর্গমিটার। এই মানটি সূর্য থেকে এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক একক দূরত্বে অবস্থানকারী যে কোন বস্তুর পৃষ্ঠের জন্য প্রযোজ্য। প্রকৃতপক্ষে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বকেই এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক দূরত্ব বলা হয়। পৃথিবীতে এতোটা শক্তি পৌঁছালেও তার পুরোটা পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছে না। যখন আবহাওয়া সম্পূর্ণ পরিষ্কার থাকে এবং সূর্য সর্বোচ্চ বিন্দুতে (zenith) থাকে তখন ভূ-পৃষ্ঠে সরাসরি পতিত সৌর শক্তির পরিমাণ হয় প্রায় ১,০০০ ওয়াট/বর্গমিটার। এই শক্তিকে কাজে লাগানোর অনেকগুলো প্রাকুতিক ও কৃত্রিম উপায় আছে। উদ্ভিদ এই শক্তি ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া চালু রাখে যা থেকে প্রাপ্ত শক্তি তারা রাসায়নিক শক্তিতে (অক্সিজেন ও স্বল্প পরিমাণ কার্বন যৌগ) পরিণত করে। আবার কৃত্রিমভাবে সৌর শক্তির মাধ্যমে সরাসরি উত্তপ্ত করে বা সৌর কোষ জাতীয় বৈদ্যুতিক পরিবর্তক মাধ্যমে সৌর শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয় যা আমাদের অনেক কাজে লাগে। পেট্রোলিয়াম সহ অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানীতে যে শক্তি নিহিত থাকে তা-ও উদ্ভিদ সৌর শক্তি থেকে লাভ করেছিল। সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত শক্তিই নানাভাবে পরিবর্তীত হয় এ ধরনের জ্বালানীর দাহিকাশক্তির যোগান দেয়। সূর্যের আলোর কিছু চমৎকার জীববৈজ্ঞানিক ধর্মও রয়েছে। সৌর আলোর লুমেন ও ওয়াটের মধ্যে যে অনুপাত তা ভাল মানের প্রতিপ্রভ আলোর সাথে তুলনীয়। এর মাধ্যমে বোঝা যায় সূর্য যে আলো দেয় তা তার উত্তপ্ত করার ক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং প্রদত্ত এই আলোর পরিমাণ বিপুল। এ থেকেই গ্রীষ্মকালে গৃহাভ্যন্তরের আলোকসজ্জার জন্য সূর্যের আলোর কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়। কারণ এটি যত না উত্তপ্ত করে তার চেয়ে বেশি আলোকিত করে, আর গ্রীষ্মকালে উত্তাপ কমানো প্রয়োজন। অবশ্য সূর্যের আলোও কিছু উত্তাপ ছড়ায়। কিন্তু বৈদ্যুতিক বাতি একদিকে বেশি উত্তাপ তো ছড়ায়ই, আবার বিদ্যুৎও ব্যবহার করে। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির কিছু প্রতিষেধক গুণ রয়েছে যা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্তকরণে কাজে লাগে। সূর্যের আলোতে ভিটামিন ডি তৈরি করে যা মানব শরীরের জন্য উপকারী।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.