রান আউট
ক্রিকেটের আইন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রান আউট (ইংরেজি: Run out) ক্রিকেটের পরিভাষাবিশেষ ও ডিসমিসালের একরূপ ধরন। ক্রিকেটের আইনের ৩৮ ধারায় রান আউট সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।[১]
আইন
একজন ব্যাটসম্যান তখনই রান আউট হবেন যখন খেলা চলাকালীন তিনি যদি ব্যাট বা স্বয়ং পপিং ক্রিজের বাইরে অবস্থান করা অবস্থায় প্রতিপক্ষীয় খেলোয়াড়ের নিক্ষিপ্ত বলে উইকেটের পতন ঘটে।
একজন ব্যাটসম্যান রান আউট হতে পারেন - তিনি রান নেয়া বা না নেয়ার উদ্দেশ্যে থাকাকালে বলটি যদি নো-বলও হয়ে থাকে। এর ব্যতিক্রমও রয়েছে:
- একজন ব্যাটসম্যান রান আউটের শিকার হবেন না যদি - তিনি বা তার ব্যাট পপিং ক্রিজ অতিক্রম করেন। তবে, উইকেট পতনের পূর্বে আঘাত থেকে বাঁচতে তিনি এটি ফেলে রেখে আসতে পারেন।
- একজন ব্যাটসম্যান রান আউটের শিকার হবেন না যদি - বোলার কর্তৃক বল ডেলিভারী হবার পর বল ফিল্ডারের স্পর্শ ছাড়াই উইকেট ফেলে দেয়া হয়। অর্থাৎ, বোলার প্রান্তে অবস্থানকারী স্ট্রাইকবিহীন অবস্থায় ব্যাটসম্যান বল মোকাবেলা করে উইকেট ভেঙ্গে ফেললে ফিল্ডিংকারী দলের কোন সদস্য বলটিকে স্পর্শ না করে তাহলে তিনি আউট হবেন না।
- একজন ব্যাটসম্যানকে যদি স্ট্যাম্পিংয়ের মাধ্যমে আউট ঘোষণা করা হয় তাহলে তিনি রান আউট হবেন না।
প্রতিপক্ষ কর্তৃক উইকেটের যে-প্রান্তের কাছাকাছি ব্যাটসম্যান অবস্থান করছিলেন তিনি রান আউট হবেন। ব্যাটসম্যান রান আউটের পূর্বে সংগৃহীত রান দলের রানের সাথে যুক্ত হবে। উইকেট পতনের ফলে বোলারের কোন কৃতিত্ব থাকবে না।
রান আউটের হার
টেস্ট ক্রিকেটে আউটের ক্ষেত্রে রান আউট চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে। কট, বোল্ড ও এলবিডব্লিউ’র পরই রান আউটের অবস্থান। প্রতি ২৯ আউটের ক্ষেত্রে ১টি রান আউট হয়ে থাকে।
একদিনের আন্তর্জাতিক ও টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে খেলোয়াড়েরা রান নেয়ার উদ্দেশ্যে দৌঁড়ানোর ঝুঁকি অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেয় ও খুব কমই রক্ষণাত্মক শট খেলে থাকে। এটি তৃতীয় সাধারণ বিষয় হিসেবে এলবিডব্লিউকে পিছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। প্রতি ৮টি আউটের ক্ষেত্রে ১টি রান আউটের ঘটনা দেখা যায়।
ব্যাটসম্যানের এগিয়ে যাওয়া
সারাংশ
প্রসঙ্গ
বোলার কর্তৃক বল ডেলিভারীকালীন সচরাচর স্ট্রাইকবিহীন ব্যাটসম্যান এগিয়ে যান। এরফলে তিনি পপিং ক্রিজ ত্যাগ করেন ও অন্য প্রান্তের উইকেটের দিকে যাবার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হন। ফলে, অপর প্রান্তে পৌঁছার জন্য রান সংগ্রহের চেষ্টা চালানো হলে সময় কম লাগবে।
বোলার বল ডেলিভারী করার পূর্বেই কখনো যদি একজন ব্যাটসম্যান পপিং ক্রিজ ছেড়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান তাহলে বোলার স্ট্রাইকবিহীন ব্যাটসম্যানকে রান আউট করার চেষ্টা চালাতে পারেন যা খেলার আইনে বিবৃত রয়েছে। যদি তাতে তিনি ব্যর্থ হন ও ব্যাটসম্যান ক্রিজে পৌঁছে যান তাহলে ডেলিভারীটি ডেড বলরূপে ঘোষণা করা হবে।
কিছু ক্রিকেটবোদ্ধাদের ধারণা যে, এ পন্থায় একজন ব্যাটসম্যানকে আউট করা খেলার উদ্দীপনা পরিপন্থী। তবে, অন্যরা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করেন যে, আইন ও ধারায় এ বিষয়টির প্রয়োগ থাকায় পেশাদারী পর্যায়ের খেলায় এগিয়ে আসার বিষয়ে রান আউটের শিকার হলে এটি বৈধপন্থায় সংঘটিত হয়েছে ও অনুশীলন করার অবকাশ রয়েছে।[২]
পূর্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জানা যায়, মহানুভূতিসম্পন্ন বোলার উইকেট পতনের চেয়ে ব্যাটসম্যানকে ক্রিজে অবস্থান করার সতর্কতা প্রদান করতে পারেন। তবে, ক্রিকেটের উজ্জ্বীবনীতে খেলার আইন কিংবা এমসিসি’র অনুসৃত ধারায় এটি উল্লেখ করা হয়নি। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে এ জাতীয় রান আউট বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়।[৩] এ ধরনের ডিসমিসালের বিষয়টি সর্বদাই ঘটে থাকে ও বিতর্কের সূত্রপাত ঘটায়।[৪][৫]
মানকড়ীয় পন্থা

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় উদাহরণ হিসেবে ভারতীয় বোলার বিনু মানকড় এ ধরনের আউটের সাথে জড়িয়ে রেখেছেন নিজেকে। ১৯৪৭ সালে ভারত দল অস্ট্রেলিয়া গমন করে। ১৩ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ তারিখে সিডনিতে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে এ ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। বল ডেলিভারীকালীন বিল ব্রাউনকে রান আউট করেন। ব্রাউন ক্রিজ ছেড়ে চলে আসার ফলে তিনি বল হাতে বেইল ফেলে দেন। এ সফরে তিনি ব্রাউনকে দুইবার আউট করেন। এরপূর্বেকার খেলায় অস্ট্রেলিয়া একাদশের বিপক্ষে তিনি এ ধরনের আউট করেছিলেন। তবে এবার তিনি ব্রাউনকে সতর্ক করেছিলেন।
অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যমে মানকড়কে অখেলোয়াড়ীসূলভের দায়ে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। অবশ্য অধিনায়ক ডন ব্র্যাডম্যানের ন্যায় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মানকড়ের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন। এ ঘটনার পর থেকে ব্যাটসম্যানের এ ধরনের আউটকে ‘মানকড়ীয় পন্থা’ নামে অনানুষ্ঠানিকভাবে পরিচিতি ঘটানো হয়ে আসছে।
স্ট্রাইকবিহীন অবস্থায় আধুনিক ব্যাখ্যা
সকল খেলাই ক্রিকেটের আইন অনুযায়ী পরচালিত হয়। বোলার দৌঁড়ানো শুরু করার পর হাতে থেকে বল মুক্ত করার পূর্বে ক্রিজের বাইরে অবস্থানকারী নন-স্টাইকারকে কোনরূপ সতর্কবাণী বাদেই রান আউট করতে পারেন। আম্পায়ারের কাছে ফিল্ডিং দলের কারো কাছ থেকে আবেদন আসলে আইনের ৪১.১৬ ধারা অনুযায়ী তিনি ব্যাটসম্যানকে রান আউটের কারণে আউট করতে বাধ্য।[৬] পূর্বেকার আইনে বোলারের এ ধরনের চেষ্টার ক্ষেত্রে আরও সীমাবদ্ধ নিয়ম ছিল। তবে এগুলো এখনো বোলারের বল ডেলিভারীকালে করা হয়ে থাকে যা আন্তর্জাতিক খেলা থেকে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।
২০১১ সালে আইসিসি টেস্ট খেলা,[৭] একদিনের আন্তর্জাতিক[৮] ও টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকের ক্ষেত্রে[৯] মানকড়ীয় পন্থায় আইন প্রয়োগে আরও নমণীয়তা প্রদর্শন করেছে। এছাড়াও, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ন্যায় পেশাদার ক্রিকেটেও এটি প্রযোজ্য।[১০]
বিভিন্ন পেশাদার খেলায় ৪২.১১ ধারা অনুযায়ী বোলারকে বল ছাড়ার পূর্বে স্ট্রাইকবিহীন ব্যাটসম্যানকে রান আউট করার অনুমোদন দিয়েছে। আম্পায়ার বোলারের বোলিংয়ে স্বাভাবিক বল অবমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।[১১]
জুলাই, ২০১৪ সালে সাবেক আন্তর্জাতিক অধিনায়ক ও আম্পায়ারদের স্বাধীন সংগঠন বিশ্ব ক্রিকেট কাউন্সিল শ্রীলঙ্কার সচিত্র সেনানায়েকের বলে জস বাটলারের আউট হবার বিষয়টিতে শ্রীলঙ্কার পদক্ষেপ গ্রহণকে স্বাগতঃ জানায় ও ব্যাটসম্যানের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে।[১২]
টেস্টে মানকড়ীয় পন্থার ঘটনা
ব্যাটসম্যানের দলকে প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে।
- বিল ব্রাউন রান আউট বিনু মানকড়, অস্ট্রেলিয়া বনাম ভারত, সিডনি, ১৯৪৭-৪৮[১৩]
- ইয়ান রেডপাথ রান আউট চার্লি গ্রিফিথ, অস্ট্রেলিয়া ব ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অ্যাডিলেড ওভাল, ১৯৬৮-৬৯[১৪]
- ডেরেক র্যান্ডল রান আউট ইয়ান চ্যাটফিল্ড, ইংল্যান্ড ব নিউজিল্যান্ড, ক্রাইস্টচার্চ, ১৯৭৭-৭৮[১৫]
- সিকান্দার বখত রান আউট অ্যালান হার্স্ট, পাকিস্তান ব অস্ট্রেলিয়া, পার্থ, ১৯৭৮-৭৯[১৬]
ওডিআইয়ে মানকড়ীয় পন্থার ঘটনা
ব্যাটসম্যানের দলকে প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে।
- ব্রায়ান লাকহার্স্ট রান আউট গ্রেগ চ্যাপেল, ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া, মেলবোর্ন, ১৯৭৪-৭৫[১৭]
- গ্রান্ট ফ্লাওয়ার রান আউট দীপক প্যাটেল, জিম্বাবুয়ে বনাম নিউজিল্যান্ড, হারারে, ১৯৯২-৯৩[১৮]
- পিটার কার্স্টেন রান আউট কপিল দেব, দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ভারত, পোর্ট এলিজাবেথ, ১৯৯২-৯৩[১৯]
- জস বাটলার বনাম সচিত্র সেনানায়েকে, ইংল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা, বার্মিংহাম, ২০১৪[২০]
টি২০আইয়ে মানকড়ীয় পন্থার ঘটনা
ব্যাটসম্যানের দলকে প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে।
- মার্ক চ্যাপম্যান রান আউট আমির কালিম, হংকং বনাম ওমান, ২০১৬ এশিয়া কাপ বাছাইপর্ব, ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
টেস্টে মানকড়ীয়বিহীন ঘটনা
- ওয়ালশ-জাফর: ১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের গ্রুপ-পর্বের খেলায় শেষ ব্যাটসম্যান সেলিম জাফরকে ক্রিজ থেকে বেশ ক্ষাণিকটা দূরে চলে যাবার পরও মানকড়ীয় কায়দায় আউট করেননি কোর্টনি ওয়ালশ। তবে, তিনি তাকে সতর্ক করে দেন। পাকিস্তান খেলায় ১ উইকেটের ব্যবধানে জয় পায় ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সেমি-ফাইনালে অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়।
- রফিক-গুল: ২০০৩ সালে মুলতানে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান-বাংলাদেশের মধ্যকার টেস্ট খেলায়ও অনুরূপ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে, পাকিস্তান দল এক উইকেটে জয় তুলে নেয়। বাংলাদেশী বোলার মোহাম্মদ রফিক সুযোগ পেয়েও পাকিস্তানের উমর গুলকে রান আউট করেননি।
- অশ্বিন-থিরিমানে: ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিন অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১১-১২ মৌসুমের কমনওয়েলথ ব্যাংক সিরিজের গ্রুপ-পর্বের খেলায় শ্রীলঙ্কার লাহিরু থিরিমানেকে মানকড়ীয় পন্থায় রান আউট করেন। তবে, খেলা পরিচালনাকারী আম্পায়ার পল রেইফেল ও বিলি বাউডেন আলোচনা করে ভারত দলকে পুনরায় বিবেচনার জন্যে অনুরোধ করেন। দলনায়ক বীরেন্দ্র শেওয়াগ এ আবেদন প্রত্যাহার করে নেন। শেওয়াগ তাদেরকে বলেন যে, অশ্বিন আউটের পূর্বে থিরিমানেকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তবে, শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে বলেন যে, তিনি ঐ সতর্কতার বিষয়টিতে সচেতন ছিলেন না।[২১]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.