Loading AI tools
আল কায়েদার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সর্বোচ্চ আমির উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ওসামা বিন মুহাম্মাদ বিন আওয়াদ বিন লাদেন বা বিন লাদেন (আরবি: أسامة بن محمد بن عوض بن لادن; ১০ মার্চ ১৯৫৭–২ মে ২০১১ খ্রি.[3][4][5]) ছিলেন সৌদি আরবে জন্মগ্রহণকারী একজন ধনুকবের এবং আল কায়েদা নামে একটি সংগঠনের আমির ও একই সাথে এটির প্রতিষ্ঠাতা। সাধারনত তিনি ওসামা বিন লাদেন নামে পরিচিত। কয়েকজন আলেমের সাথে মিলে তিনি দুটি বিখ্যাত ফতোয়া জারি করার কারণে প্রসিদ্ধি লাভ করেন; একটি ১৯৯৬ সালে, অন্যটি ১৯৯৯ সালে। তার ফতোয়াটি ছিল, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উচিত মার্কিন সামরিক ও বেসামরিক জনগণকে হত্যা করা, যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের প্রতি সকল সহায়তা বন্ধ করে এবং মধ্যপ্রাচ্যসহ সকল মুসলিম দেশ থেকে সামরিক শক্তি অপসারণ করে।[6]
এই নিবন্ধটি উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে পরিচ্ছন্ন করা প্রয়োজন। মূল সমস্যা হল: অনেক ইংরেজি বাক্য রয়েছে। |
ওসামা বিন লাদেন | |
---|---|
আল কায়েদার প্রথম সর্বোচ্চ আমীর | |
কাজের মেয়াদ ১১ই আগস্ট, ১৯৮৮ – ২রা মে, ২০১১ | |
পূর্বসূরী | প্রতিষ্ঠাতা |
উত্তরসূরী | আয়মান আল জাওয়াহিরি |
আল কায়েদার সহপ্রতিষ্ঠাতা (আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম এবং আইমান আল জাওয়াহিরীর সাথে), ১৯৮৮ | |
মাকতাবাতুল খিদামাতের সহপ্রতিষ্ঠাতা, ১৯৮৪ | |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
মৃত্যুর কারণ | ন্যাটো সদস্যদের গুলি। |
জাতীয়তা | সৌদি আরবীয়(১৯৫৭–১৯৯৪) যাযাবর (১৯৯৪–২০১১)[1] |
উচ্চতা | ১.৯৫ মিটার[2] |
দাম্পত্য সঙ্গী | নাজওয়া গানেম খাদীজা শরীফ খাইরিয়াহ সাবার সিহাম সবর আমাল আহমেদ আস সাদাহ |
ধর্ম | ইসলাম |
সামরিক পরিষেবা | |
আনুগত্য | মাকতাবাতুল খিদামাহ (১৯৮৪–১৯৮৮) আল কায়েদা (১৯৮৮–২০১১ |
কাজের মেয়াদ | ১৯৮৪-২রা মে ২০১১ ঈসাব্দ |
পদ | আল কায়েদার সর্বোচ্চ আমীর |
যুদ্ধ | সোভিয়েত যুদ্ধ
বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ যুদ্ধ
|
ধনী বিন লাদেন পরিবারের সদস্য হিসেবে ওসামা বিন লাদেন সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেন। মোহাম্মদ বিন আওয়াদ বিন লাদেন ( তাঁর পিতা) একজন ইয়েমেনী ছিলেন, যিনি হাদরামাউত থেকে এসে সৌদি আরবে নির্মাণ কোম্পানি সৌদি বিনলাদিন গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি একজন বিখ্যাত ধনুকবের ছিলেন। তার মা, আলিয়া গানিম সিরিয়ার লাতাকিয়ায় একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য ছিলেন। ওসামা ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। এরপর তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মুজাহিদিনের বাহিনীতে যোগ দেন। আফগানিস্তানে তিনি আরববিশ্ব থেকে অস্ত্র, নগদ অর্থ ও যোদ্ধাদের প্রেরণের মাধ্যমে মুজাহিদিনদের অর্থায়নে সহায়তা করেন এবং অনেক আরবদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
১৯৮৮ সালে তিনি আল কায়েদা গঠন করেন। ১৯৯১ সালে সৌদি আরব থেকে তিনি নির্বাসিত হন। ১৯৯৪ সালে তার সৌদি নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার পর তিনি সুদানে চলে যান এবং মার্কিন চাপ ১৯৯৬ সালে তাকে চলে যেতে বাধ্য না করা পর্যন্ত তিনি সুদানেই বসবাস করতে থাকেন। ১৯৯৬ সালে ওসামা আফগানিস্তানে চলে যান এবং সেখানে একটি নতুন ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার পরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ১৯৯৮ সালে মার্কিন দূতাবাসে বোমা হামলার ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার কারণে ( এফবিআই ) তাকে দশ মোস্ট ওয়ান্টেড পলাতক ও মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করে।
বিন লাদেন ১১ সেপ্টেম্বর হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। এর পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জর্জ বুশের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তানে আক্রমণ করে এবং তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। তিনি এক দশকব্যাপী আন্তর্জাতিক অনুসন্ধানের মূল বিষয় হয়ে ওঠেন। সেই সময়ে এফবিআই তাকে ধরার জন্যে $২৫ মিলিয়ন ও পরবর্তীতে $৫০ মিলিয়ন পুরস্কার করে। ২০১১ সালের ২ মে তিনি পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে তার কম্পাউন্ডে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর অভিযানের সময় গোলাগুলিতে নিহত হন।
বিন লাদেন ইসলামী বিশ্বে একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী মতাদর্শী হয়ে ওঠেন। আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের দখলদারিত্ব সফলভাবে প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে সফল ভূমিকার কারণে ওসামাকে একজন যুদ্ধনায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই অঞ্চল জুড়ে অনেকের কাছেই তিনি একটি স্পষ্ট কণ্ঠস্বর। তা সত্ত্বেও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলায় তার সমর্থন তাকে একটি বিভাজনকারী ব্যক্তিত্বে পরিণত করে এবং পশ্চিমা বিশ্ব ও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে তাকে গণহত্যার একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিন্দিত করা হয়। ১১ সেপ্টেম্বর হামলায় তার প্রধান ভূমিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তার ব্যক্তি সম্পর্কে জনমতকে দ্ব্যর্থহীনভাবে নেতিবাচক করে তুলেছে।[7]
ওসামা বিন মুহাম্মাদ বিন আওয়াদ বিন লাদেন [8] সৌদি আরবের রিয়াদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইয়েমেন বংশোদ্ভূত মুহাম্মাদ বিন আওয়াদ বিন লাদেনের পুত্রদের মধ্য হতে একজন। সৌদি রাজ পরিবারের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল[9] এবং মুহাম্মাদ বিন লাদেনের দশম স্ত্রী ছিলেন সিরিয়ান হামিদা আল আত্তাস (তাকে আলিয়া গানেম নামেও ডাকা হয়।)[10] ১৯৯৮ এর এক সাক্ষাতকারে ওসামা বিন লাদেন নিজের জন্ম তারিখ ১০ই মার্চ, ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দ বর্ণনা করেন।[11]
মুহাম্মাদ বিন লাদেন হামিদাকে ওসামা বিন লাদেনের জন্মের কিছুদিন পরই তালাক দিয়ে দেন। আল আত্তাস হামিদাকে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের পর ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের আগে বিবাহ করেন। এবং তারা একসাথেই জীবনযাপন করেন। [12] এই দম্পতির চার সন্তান ছিল। এবং বিন লাদেন এই নতুন পরিবারেই তিন সৎভাই ও এক সৎবোনের সাথে বসবাস করতে থাকেন।[10] বিন লাদেন পরিবার কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিতে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে। যা থেকে ওসামা উত্তরাধিকারসূত্রে ২৫-৩০ মিলিয়ন ডলার প্রাপ্ত হন। [13]
বিন লাদেন এক ধর্মপ্রাণ সুন্নী মুসলিম পরিবারে লালিতপালিত হন।[14] ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত তিনি অভিজাত ধর্মনিরপেক্ষ আল-ছাগের মডেল স্কুলে পড়াশোনা করেন। [10][15] তিনি বাদশাহ আব্দুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি এবং ব্যবসায় প্রশাসন নিয়ে পড়াশোনা করেন। [16] কারো দাবি, তিনি ১৯৭৯ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন।[17] আবার কারো দাবি, তিনি ১৯৮১ সালে লোক প্রশাসনে ডিগ্রি অর্জন করেন। [18] কেউ কেউ দাবি করেন যে তিনি"কঠোর পরিশ্রমী" ছিলেন;[19] অন্য একটি পক্ষের দাবি, তিনি কোন ডিগ্রি অর্জন ছাড়াই তৃতীয় বর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন। [20] বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে বিন লাদেনের প্রধান আগ্রহের বিষয়বস্তু ছিল ধর্ম। সেখানে তিনি কুরআন এবং জিহাদের ব্যাখ্যা এবং দাতব্য কাজ উভয়ের মধ্যে জড়িত হন। [21] কবিতা লেখার প্রতিও তার ঝোঁক ছিল।[22] অধ্যয়নকালে ফিল্ড মার্শাল বার্নার্ড মন্টোগোমারী এবং শার্ল ডে গোল তার প্রিয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে ছিল। কালো ফাহল ঘোড়া তার পছন্দের তালিকায় ছিল। এছাড়া ফুটবল খেলাও তার প্রিয় ছিল। তিনি আক্রমণ ভাগের খেলা বেশি উপভোগ করতেন। তিনি ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের ভক্ত ছিলেন।[23]
১৯৭৪ সালে ১৭ বছর বয়সে বিন লাদেন সিরিয়ার লাতাকিয়াতে নাজওয়া গানেমকে বিবাহ করেন।[24] টুইনটাওয়ারে আক্রমণের ঘটনার আগেই তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়। বিন লাদেনের অন্য স্ত্রীরা হলেন, খাদীজা শরীফ (বিয়ে: ১৯৮৩, বিচ্ছেদ: ১৯৯০) খাইরিয়াহ সাবের (বিয়ে: ১৯৮৫) সিহাম সাবের (বিয়ে: ১৯৮৭) এবং আমাল আস সাদাহ (বিয়ে: ২০০০)। কিছু সূত্র নাম না জানা ষষ্ঠ স্ত্রী থাকার কথা দাবী করে। যার সাথে বিয়ের কিছুদিনের মাঝেই বিচ্ছেদ ঘটে যায়। [25] বিন লাদেন তার স্ত্রীদের গর্ভজাত বিশ থেকে ছাব্বিশজন সন্তানের পিতৃত্ব গ্রহণ করেন। [26] বিন লাদেনের কিছু সন্তান ২০০১ এর হামলার পর ইরানে পালিয়ে যায় । ২০১০-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], ইরান কর্তৃপক্ষ তাদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করছে[27]।
ওসামা বিন লাদেনের দেহরক্ষী (১৯৯৭ থেকে ২০০১ পর্যন্ত) নাসের আল বাহরি বিন লাদেনের ব্যাপারে নিজের স্মৃতিকথায় বিস্তারিত লেখেছেন। তিনি বিন লাদেনকে একজন ভীষণ নম্র ও মিশুক মানুষ এবং সচেতন পিতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।তিনি প্রায়ই তার সন্তানদের নিয়ে মরুভূমিতে আনন্দ অনুষ্ঠান করতেন। .[28]
বিন লাদেনের পিতা মুহাম্মাদ ১৯৬৭ সালে সৌদি আরবে একটি বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান।যখন তার আমেরিকা বংশোদ্ভূত পাইলট জিম হ্যারিংটন[29] ভুল স্থানে বিমান অবতরণ করান।[30] পিতা মুহাম্মাদ বিন লাদেনের পর ওসামা বিন লাদেনের সবচেয়ে বড় সৎভাই সালেম বিন লাদেন ছিলেন বিন লাদেন পরিবারের প্রধান। তিনি ১৯৮৮ সালে আমেরিকার টেক্সাসের স্যান অ্যান্টনিওতে দুর্ভাগ্যবশতঃ বিমানকে পাওয়ার লাইনের মধ্যে নিয়ে আসায় নিহত হন।[31]
এফবিআই বিন লাদেনকে লম্বা, মধ্যবয়সী এবং পাতলা গড়নের বর্ণনা করেছে। এফবিআইয়ের মতে তার উচ্চতা ১.৯৩ মি (৬ ফু ৪ ইঞ্চি) থেকে ১.৯৮ মি (৬ ফু ৬ ইঞ্চি) আর দেহের ভর ৭৩ কিলোগ্রাম (১৬০ পা)। যদিও লেখক লরেন্স রাইট তার আল কায়েদার উপর লিখিত Pulitzer Prizeপ্রাপ্ত দি লুমিং টাওয়ার বইয়ে লিখেছেন, বিন লাদেনের নিকটতম বন্ধু নিশ্চিত করেছেন, এফবিআইয়ের এই প্রতিবেদনটি অনেক অতিরঞ্জিত। আসলে বিন লাদেনের উচ্চতা ৬ ফুট (১.৮ মি) [32] অবশেষে তার মৃত্যুর পর তার উচ্চতা মাপা হলে দেখা গেল, তিনি ১.৯৩ মি (৬ ফু ৪ ইঞ্চি) লম্বা ছিলেন। [33] বিন লাদেন বাঁহাতি ছিলেন। এবং সাধারণতঃ হাতে ছড়ি নিয়ে হাঁটতেন। তিনি সাদা পাতলা কেফিয়া পরিধান করতেন। বিন লাদেন সৌদির ঐতিহ্যগত পুরুষদের কেফিয়া পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন এর পরিবর্তে ইয়েমেনী পুরুষদের কেফিয়া পরিধান করতেন।[34] বিন লাদেন অনেক ধার্মিক একজন লোক ছিলেন[35]
২০১১ সালের মে ২ তারিখে দিবাগত রাতে পাকিস্তানের আ্যবোটাবাদ শহরে মার্কিন কমান্ডোদের হামলায় (অপারেশন জেরোনিমো) ওসামা বিন লাদেন মারা যান। গোপনসূত্রে খবর পেয়ে মার্কিন কমান্ডোরা ২টি হেলিকপ্টারযোগে লাদেনের বাসভবনে হামলা চালায়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমির মাত্র ১০০০ ফুট দূরে লাদেনের এই গোপন আস্তানাটি ২০০৫ সালে নির্মাণ করা হয়। এখানে লাদেন তার কনিষ্ঠা স্ত্রী এবং পুত্র সহ বাস করতেন।
লাদেনের মরদেহ মার্কিন কমান্ডোরা হেলিকপ্টারযোগে প্রথমে আফগানিস্থানে এবং পরে মার্কিন রণতরীতে নিয়ে যায়। লাদেনের দেহ ডিএনএ প্রযুক্তির সাহায্যে শনাক্ত করা হয়। শনাক্তকরণের আরব সাগরে ফেলে দেওয়া হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.