নাউমল জিউমল মাখিজা (উচ্চারণ; মারাঠি: नाउमल जिउमल; জন্ম: ১৭ এপ্রিল, ১৯০৪ - মৃত্যু: ২৮ জুলাই, ১৯৮০) তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের করাচিতে জন্মগ্রহণকারী প্রথিতযশা ভারতীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, কোচ ও আম্পায়ার ছিলেন। ভারত ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩২ থেকে ১৯৩৪ সময়কালে ভারতের পক্ষে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ভারতীয় ক্রিকেটে মহারাষ্ট্র দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। দলে তিনি মূলতঃ অল-রাউন্ডার হিসেবে খেলতেন। ডানহাতে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ ব্রেক বোলিংয়ে দক্ষ ছিলেন নাউমল জাউমল নামে পরিচিত নাউমল জিউমল। এছাড়াও, দলের প্রয়োজনে মাঝে-মধ্যে উইকেট-রক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে তাকে দেখা যেতো।

দ্রুত তথ্য ব্যক্তিগত তথ্য, পূর্ণ নাম ...
নাউমল জিউমল
Thumb
১৯৩২ সালের গৃহীত স্থিরচিত্রে নাউমল জিউমল
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
নাউমল জিউমল মাখিজা
জন্ম(১৯০৪-০৪-১৭)১৭ এপ্রিল ১৯০৪
করাচি,
বোম্বে প্রেসিডেন্সি,
ব্রিটিশ ভারত
মৃত্যু২৮ জুলাই ১৯৮০(1980-07-28) (বয়স ৭৬)
বোম্বে (বর্তমানে মুম্বই), মহারাষ্ট্র, ভারত
উচ্চতা ফুট ৯ ইঞ্চি (১.৭৫ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনলেগ ব্রেক
ভূমিকাব্যাটসম্যান, কোচ, আম্পায়ার
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ )
২৫ জুন ১৯৩২ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৪ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৮৪
রানের সংখ্যা ১০৮ ৪,১৪০
ব্যাটিং গড় ২৭.০০ ৩২.৫৯
১০০/৫০ ০/০ ৭/১৬
সর্বোচ্চ রান ৪৩ ২০৩*
বল করেছে ১০৮ ৫১০২
উইকেট ১০৮
বোলিং গড় ৩৪.০০ ২৭.৫৪
ইনিংসে ৫ উইকেট -
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং ১/৪ ৫/১৮
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪৩
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ১১ মে ২০১৯
বন্ধ

শৈশবকাল

১৭ এপ্রিল, ১৯০৪ তারিখে সিন্ধু প্রদেশের করাচিতে জন্মগ্রহণকারী নাউমল জিউমল[1] বোম্বেভিত্তিক ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের করাচি শাখার প্রধান কেরাণীর সন্তান ছিলেন। ম্যাট্রিকুলেশন ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯২৬-২৭ মৌসুমে আর্থার জিলিগানের নেতৃত্বাধীন এমসিসি দল ব্রিটিশ ভারতে আসে। করাচিতে হিন্দু বাদ-বাকী একাদশে সদস্যরূপে এমসিসির বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। খেলায় তিনি ১৬ রান তুলেছিলেন।[2] পরের খেলাতেই জিলিগান, মরিস টেট, ইউয়ার্ট অ্যাস্টিলজর্জ গিয়েরির ন্যায় বোলারদের মোকাবেলা করে ৮৩ রানের ইনিংস খেলতে সমর্থ হন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

১৯২৬-২৭ মৌসুম থেকে ১৯৪৪-৪৫ মৌসুম পর্যন্ত তার প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। কাটের দিকেই তার অধিক ঝোঁক ছিল। রঞ্জি ট্রফির প্রথম খেলাতেই মোহাম্মদ নিসারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে সাড়া জাগিয়েছিলেন। সিন্ধু দলের পক্ষে ভারতীয় ক্রিকেটে বেশ কয়েকটি শতরানের ইনিংস উপহার দিয়েছেন। ১৯৩৮ সালে নয়ানগরের বিপক্ষে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ২০৩ রান তুলেন। ঐ মৌসুমে তার ব্যাটিং গড় ছিল ১০৪.৫০। ১৯৩২-৩৩ মৌসুমে লাহোরে অনুষ্ঠিত খেলায় সিলনের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি করেন।

১৯৩৪-৩৫ মৌসুমে রঞ্জি ট্রফির প্রথম খেলায় সিন্ধুর সদস্যরূপে পশ্চিম ভারতের বিপক্ষে অমর সিংলাধা রামজীর বোলিং মোকাবেলান্তে ৬৩ ও ৫৩ রান তুলেন। এছাড়াও বল হাতে নিয়ে ৫/৭৮ ও ৩/৫২ বোলিং পরিসংখ্যান দাঁড় করান। ১৯২২ থেকে ১৯৪৬ সময়কালে সিন্ধু পঞ্চদলীয় খেলায় অংশ নিয়ে ছয় শতক সহযোগে ৪৭ গড়ে ১,৯৯৩ রান তুলেন।

১৯৩৮-৩৯ মৌসুমে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ অপরাজিত ২০৩ রান তুলেন। সিন্ধুর সদস্যরূপে নয়ানগরের বিপক্ষে সাড়ে চার ঘণ্টা ক্রিজে অবস্থান করে এ সাফল্য পান।[3] ঐ সময়ে সিন্ধু দল প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে দ্বি-শতক সহযোগে ৩২৬ রান তুলে তাদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস খেলে।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ভারতের স্বাধীনতা লাভের পূর্ববর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত সবগুলো টেস্টই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন। ২৫ জুন, ১৯৩২ তারিখে লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটেছিল নাউমল জিউমলের। ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের প্রথম উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে অংশগ্রহণের গৌরব লাভ করেন। উভয় ইনিংসেই তার সাথে ব্যাটিং উদ্বোধনে নেমেছিলেন জনার্দন নেভলে। ঐ টেস্টই ভারতের সর্বপ্রথম টেস্ট ছিল। লর্ডস টেস্টে তিনি ৩৩ ও ২৫ রান তুলেছিলেন।

মিডলসেক্সের বিপক্ষে সোয়া ছয় ঘণ্টা ক্রিজ আঁকড়ে থেকে অপরাজিত ১৬৪ রান তুলেছিলেন। এ সময়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে সি. কে. নায়ডুর সাথে জুটি গড়ে ১৭৯ রান সংগ্রহ করেন। ডার্বিশায়ারের বিপক্ষেও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। এ সফরে ২৬টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৩০.৮৮ গড়ে ১২৯৭ রান তুলেছিলেন তিনি। উইজডেনেও তার ফিল্ডিংয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করা হয়।

ইংল্যান্ডের মুখোমুখি

১৯৩৩-৩৪ মৌসুমে ইংরেজ দল ফিরতি সফরে ভারতে আসে। প্রথম টেস্টে খেলতে পারেননি তিনি। ইংরেজ দলের বিপক্ষে আরও দুই টেস্টে অংশ নেন। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ২ ও ৪৩ রান তুলেন। কিন্তু মাদ্রাজের এম. এ. চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত টেস্টে বাম চোখে আঘাত পাবার কারণে পাঁচ রানে রিটায়ার হার্ট হন ও দ্বিতীয় ইনিংসে মাঠে নামতে পারেননি। নবি ক্লার্কের বলে হুক মারতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটে। এ পর্যায়ে বলটি বাম চোখে আধা ইঞ্চি ক্ষত সৃষ্টি করে। স্ট্রেচারে করে তাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যেতে হয়েছিল। এরফলে ঐ ইনিংসটি আর শেষ করতে পারেননি ও পরবর্তীতে আর কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করেননি।

অবসর

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর ১৯৫০-এর দশকের শেষদিকে পাকিস্তান দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলে নির্বাচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তার অভিজ্ঞতার ঝুলি পরবর্তীতে হানিফ মোহাম্মদ, নাসিম ও সাঈদের মাঝে প্রবাহিত হয়েছিল।

১৯৭১ সালে ভারতে অভিবাসিত হন। ১৯৮০ সালে বিসিসিআইয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত সূবর্ণজয়ন্তী টেস্টে ভারতের সর্ববয়োজ্যেষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তবে, তার চেয়েও বয়সে বড় জীবিত ক্রিকেটার কোটা রামস্বামী এতে উপস্থিত ছিলেন না।

২৮ জুলাই, ১৯৮০ তারিখে মহারাষ্ট্রের বোম্বেতে ৭৬ বছর বয়সে নাউমল জিউমলের দেহাবসান ঘটে। ২৮ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করলেও উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাকউইজডেন ক্রিকেট মান্থলি - উভয় সাময়িকীতে ১৮ জুলাই মৃত্যু তারিখেরূপে তুলে ধরা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.