ইন্দো-গ্রিক রাজ্য বা গ্রিকো-ইন্ডিয়ান রাজ্য হল এক হেলেনীয় রাজ্য যার বিস্তৃতি ছিল বর্তমান আফগানিস্তানজুড়ে আর ভারতীয় উপমহাদেশের পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী কিছু অঞ্চল ( পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল ও ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল) পর্যন্ত যা খ্রিষ্টপূর্ব সময়কালের শেষ দুই শতাব্দী সময়জুড়ে ত্রিশেরও অধিক সংখ্যক রাজার শাসনাধীন ছিল যারা প্রায়শই পরস্পরের মধ্যে বিবাদে জড়িয়ে পড়তেন।
ইন্দো-গ্রিক রাজ্য | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
180 খ্রিস্টপূর্ব–খ্রিস্টাব্দ ১০ | |||||||||
ইন্দো-গ্রিক অঞ্চল আনু. ১০০ খ্রিস্টপূর্ব | |||||||||
রাজধানী | Alexandria in the Caucasus (Kapisi/Bagram) তক্ষশীরা (Sirkap) Chiniotis (Chiniot) সগল (শিয়ালকোট) Peukelaotis (Charsadda, Pushkalavati) | ||||||||
প্রচলিত ভাষা | গ্রিক (গ্রিক লিপি) পালি (খারোষ্ঠি লিপি) সংস্কৃত প্রাকৃত (ব্রাহ্মী লিপি) | ||||||||
ধর্ম | গ্রিক বহুঈশ্বরবাদ বৌদ্ধধর্ম হিন্দুধর্ম জরাথ্রুস্ট্রিয়ান | ||||||||
সরকার | রাজতন্ত্র | ||||||||
রাজা | |||||||||
• ১৮০–১৬০ খ্রিস্টপূর্ব | অ্যাপোলোডটাস I | ||||||||
• ২৫ খ্রিস্টপূর্ব – খ্রিস্টাব্দ ১০ | Strato II & Strato III | ||||||||
ইতিহাস | |||||||||
• প্রতিষ্ঠা | 180 খ্রিস্টপূর্ব | ||||||||
• বিলুপ্ত | খ্রিস্টাব্দ ১০ | ||||||||
আয়তন | |||||||||
১৫০ খ্রিস্টপূর্ব[1] | ১১,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (৪,২০,০০০ বর্গমাইল) | ||||||||
| |||||||||
বর্তমানে যার অংশ |
খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে গ্রিকো-বাকট্রিয়ান রাজা ডেমেট্রিয়াসের ভারতীয় উপমহাদেশে আক্রমণের মধ্যদিয়ে এই রাজ্যের গোড়াপত্তন ঘটে। ভারতীয় উপমহাদেশের গ্রিকরা পরবর্তীকালে বাকট্রিয়ায় (বর্তমানে আফগানিস্তান ও উজবেকিস্তানের মধ্যবর্তী সীমান্ত অঞ্চল) অবস্থানরত গ্রিকো-বাকট্রিয়ান ও বর্তমান ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সেসময় বসবাসকারী ইন্দো-গ্রিকদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়। ইন্দো-গ্রিক শাসকদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিলেন মিনেনডার (মিলিন্দ)। তার রাজ্যের রাজধানী ছিল পাঞ্জাবের শকল এ (বর্তমান শিয়ালকোট)।
"ইন্দো-গ্রিক রাজ্য" বলতে সাধারণ অর্থে কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন রাজবংশের শাসনাধীন রাষ্ট্রকে বোঝান হয় যেসব রাষ্ট্রের প্রথাগতভাবে কয়েকটি আঞ্চলিক রাজধানী ছিল যেমন তক্ষশীলা (বর্তমান পাকিস্তানের অধীনস্থ পাঞ্জাব), পুষ্কলবতী এবং শকল। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলো সম্পর্কে সামান্যকিছু ধারণা পাওয়া যায় মাত্র; উদাহরণস্বরূপ টলেমির জিওগ্রাফিয়া ও পরবর্তী গ্রিক রাজাদের নামাবলী থেকে পাওয়া তথ্য ইঙ্গিত করে যে একসময় ইন্দো-গ্রিক রাজ্য বলয়ের দক্ষিণে থিওফিলাস এর আধিপত্য ও তার অধীন এক সত্রপ বা রাজ্যাংশ ছিল।
দুই শতাব্দীব্যাপী শাসনামলে, ইন্দো-গ্রিক রাজারা গ্রিক ভাষা ও প্রতীকের সাথে ভারতীয় ভাষা ও প্রতীকগুলোকে সংযুক্ত করেন যা তাদের মুদ্রাগুলোর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় এবং গ্রিক ও ভারতীয় বিভিন্ন কলাকৌশলের মধ্যে সমন্বয় ঘটান যা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। ইন্দো-গ্রিক সংস্কৃতির ব্যাপ্তি বর্তমান সময়েও যে বিস্তর প্রভাব ফেলেছে, বিশেষত গ্রিকো-বুদ্ধিস্ট শিল্পের মাধ্যমে তা সহজেই নজরে পড়ে। জাতিগত দিক থেকে ইন্দো-গ্রিকরা কিছু পর্যায়ে বর্ণসংকর ছিল। পলিবিয়াসের মতে প্রথম ইউথুডেমাস ছিলেন একজন মেগনেসীয় গ্রিক। পিতার দিক থেকে বিবেচনা করলে পুত্র হিসেবে ইন্দো-গ্রিক রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম ডেমেট্রিয়াসের জাতীয়তা ছিল গ্রিক। সেলুউকিড শাসক তৃতীয় এনটিওকাস (যিনি পারস্য বংশোদ্ভূত ছিলেন) এর কন্যার সাথে ডেমেট্রিয়াস বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। পরবর্তী সময়কার ইন্দো-গ্রিক শাসকদের জাতীয়তা খুব একটা স্পষ্ট নয়। যেমন, আর্টিমিডোরাস (খ্রিস্টপূর্ব ৮০ সাল) ইন্দো-সিথিয়ান বংশোদ্ভূত বলে মনে করা হয়, যদিও এনিয়ে বতর্ক রয়েছে।
মিনেনডারের মৃত্যুর পর তার রাজ্যের সিংহভাগ অঞ্চল বিভক্ত হয়ে যায় এবং ইন্দো-গ্রিক প্রভাব তুলনামূলকভাবে ক্ষীণ হয়ে পড়ে। রবি নদীর উত্তরে নতুন ছোট-বড় বহু রাজ্যের উত্থানের পাশাপাশি এসব রাজ্যে নতুন মুদ্রারও প্রচলন শুরু হয় যেসব মুদ্রায় যুদ্ধবিজয়ের চিহ্ন অঙ্কিত হয়েছিল। এসব রাজ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম হল অযোধ্যা, অর্জুনযান, অদম্বর। অযোধ্যা ও অর্জুনযান এই দুই রাজ্যই যুদ্ধজয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে বলা হয়। দত্ত রাজ্য ও মিত্র রাজ্য এই দুই মথুরা রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ১০ম খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইন্দো-সাইথিয়ানদের আক্রমণের পর ইন্দো-গ্রিকদের বিলুপ্তি ঘটলেও আত্মগোপনে থাকা কিছুসংখ্যক গ্রিক পরবর্তী ইন্দো-পার্থিয়ান আর কুশান শাসকদের শাসনামলে বহু শতাব্দী পর্যন্ত বসবাস করেছিল।
ইতিহাস
যে সব তথ্যসূত্র থেকে ইন্দো-গ্রিকদের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় তার বেশির ভাগই হেলনীয় যুগের উৎস থেকে এসেছে। ভারতীয় উৎসগুলো এদিক থেকে দুর্বল। ইন্দো-গ্রিক ইতিহাসের গ্রিকো-রোমান উৎসগুলোর মধ্যে জাস্টিন হলেন প্রধান। অগাস্টাস সিজারের সময় রোমান ইতিহাসবিদ পম্পেয়াস ট্রগাসের গ্রিক উৎস থেকে সংগৃহীত তথ্যগুলোকে তিনি সংকলিত করেন। ভূগোলবিদ স্ট্রাবো তার ভারতবর্ষ ও ইউরেশিয়ার বর্ণনায় গ্রিক রাজা মেনানডার, ইউথুডেমাস ও তার পুত্র ডেমেট্রিয়াসের কথা উল্লেখের পাশাপাশি গ্রিক রাজারা ভারতে আলেক্সান্ডারের চেয়েও বেশি রাজ্যবিজয় ও রাজ্য বিস্তার করেছিলেন বলে উল্লেখ করেন। এই তথ্য তিনি পেয়েছিলেন ইরাটোস্থেনিসের কাছ থেকে যা তিনি সম্পূর্ণভাবে বিশ্বাস করতেন না। মেনানডারের কথা আরো জানা যায় পলিবিয়াসের বইয়ের খুঁজে পাওয়া কিছু অংশে। ভারতীয় উৎসগুলোর মধ্যে মিলিন্দ পঞঞা তে মিনেনডার বা মিলিন্দের উল্লেখ রয়েছে যেখানে মিলিন্দ ও নাগসেন নামের এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মধ্যকার কথোপকথনের বর্ণনা রয়েছে। তবে নামের ধরন ভারতীয় হওয়ায় প্রশ্ন থেকে যায় যে ভারতীয় রাজা মিলিন্দই আসলে মিনেনডার কিনা। এছাড়া ১ম খ্রিষ্টাব্দে রচিত যবন রাজ্য নামক লিপিতে ইন্দো-গ্রিকদেরকে যবন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চৈনিক পরিব্রাজকদের বেকট্রিয়া ভ্রমণকালীন বর্ণনা থেকেও কিছু কিছু তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন সাহিত্যকর্মে যেমন যুগপুরাণ ও মহাভাষ্য এ যবনদের মথুরা পাঞ্জাব সাকেত ও পাটলিপুত্র আক্রমণের বিবরণ পাওয়া যায়। কালিদাসের মালবিকাগ্নিমিত্রম নাটিকায় গ্রিক ও মধ্য ভারতীয় সুঙ্গদের সংঘর্ষের কথা উল্লেখ রয়েছে।
ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রিকদের প্রারম্ভিক অবস্থান
৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারতী উপমহাদেশের উত্তরাঞ্চল জয় করে হাইপেসিস (বিপাসা) নদীর অববাহিকা পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করেন এবং ব্যুসেফালা সহ আরো অনেক সত্রপ ও রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উপনিবেশ ঘটান। এর পর তিনি সেনাবহরসহ দক্ষিণদিকে অগ্রসর হন। পাঞ্জাবের সত্রপগুলো পরুশ ও তক্ষশিলার অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা ট্রাইপারাডিসাসের চুক্তি দ্বারা নিশ্চিত হয়। গ্রিক সেনাবহরের পরিশিষ্ট অংশকে এসব সত্রপে সেনাপতি ইউডেমাসের নেতৃত্বাধীন রাখা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩২১ এর পর থেকে ইউডেমাস তক্ষশিলায় ক্ষমতা ধরে রাখেন এবং ৩১৬ এ ভারত থেকে প্রস্থান করেন। এদিকে দক্ষিণে আরেক সেনাপতি এগেনর পুত্র পাইথন বেবিলনের উদ্দেশ্যে ভারত ত্যাগের আগ পর্যন্ত গ্রিক রাজ্যগুলো শাসন করেছিলেন।
খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ সনের দিকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য নন্দ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করলে তাতে অন্যান্য জাতি জনের সাথে গ্রিকরাও যোগ দেয়। বিশাখদত্ত রচিত 'মুদ্রারাক্ষস' ও জৈন পাণ্ডুলিপি 'পরিশিষ্ট পার্বণে'র বিবরণ থেকে জানা যায় হিমালয় অঞ্চলের রাজা পর্বতক (পরুশ নামেও পরিচিতি) চন্দ্রগুপ্তের মিত্র ছিলেন। এই মিত্রতার ফলে যবন (গ্রিক), কম্বোজ, শক (সিথিয়ান), কিরাত (নেপালী), পারসিক ও বল্লিকদের নিয়ে সংগঠিত এক শক্তিশালী সেনাদলের সহায়তায় চন্দ্রগুপ্ত পাটলিপুত্র জয় করেন।
খ্রিস্টপূর্ব ৩০৫ এ প্রথম সেলেউকাস ইন্ডাস (সিন্ধু) আক্রমণ করলে চন্দ্রগুপ্তের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষের শুরু হয়। ভারতীয়দের সাথে গ্রিকরা বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপনের প্রস্তাব দেয়ার মাধ্যমে এই যুদ্ধের অবসান ঘটে ও শান্তিচুক্তি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সেলেউকাস তার রাজ্যের উত্তর পশ্চিমে আরাকোশিয়া পর্যন্ত অঞ্চল চন্দ্রগুপ্তের কাছে সমর্পন করেন এবং ৫০০ যুদ্ধহাতি উপহার স্বরূপ লাভ করেন।
বৈবাহিক সম্বন্ধের চুক্তিটি সম্পর্কে তেমন পরিষ্কারভাবে জানা যায় না। সেলেউকাসের সাথে ভারতীয় কোন নারীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে চন্দ্রগুপ্ত ও তার পুত্র বিন্দুসার গ্রিক রাজবংশীয় নারীদের সাথে বৈবাহিক সম্বন্ধ স্থাপন করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। প্রাচীন ভারতের পৌরাণিক নিদর্শন ভবিষ্যপুরাণের প্রতিসর্গ পর্বে মৌর্যবংশের বিবরণে চন্দ্রগুপ্তের সাথে সেলেউকাসের কন্যার বিবাহের তথ্য জানা যায়। চন্দ্রগুপ্ত জৈন ধর্মের অনুসারী হলেও সেলেউকাস কন্যা হেলেনকে বিবাহের পর রাজমহিষী করেছিলেন। তিনি ভারতীয় ও গ্রিকদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং গ্রিক জনসাধারণ মৌর্য সাম্রাজ্যে বসবাস করতে থাকে বলে জানা যায়।
উডকক সহ বেশ কয়েকজন দার্শনিক চন্দ্রগুপ্তের দৌহিত্র অশোককে বংশের দিক থেকে অর্ধেক বা একচতুর্থাংশ গ্রিক বংশীয় বলে বর্ণনা করেন। মৌর্য রাজসভায় একটি বিশেষ পরিষদের কথা জানা যায় যা গ্রিক ও পারসিকদের কল্যাণে নিয়োজিত ছিল। সম্রাট অশোকের শিলালিপিতে ভারতীয় ভাষার পাশাপাশি গ্রিক ভাষায় বর্ণিত রয়েছে যে তিনি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন এবং বহু গ্রিক জনসাধারণও বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তার শাসনামলে ভারতীয় গ্রিকরা বৌদ্ধধর্মের উৎকর্ষ সাধনে ও অশোক স্তম্ভ নির্মাণে অনেক অবদান রাখে। পার্শ্ববর্তী গ্রিকরাজ্যে অশোক বৌদ্ধধর্ম প্রাচরের জন্য ধর্মরক্ষিত ও মহাধর্মরক্ষিতদের মত গ্রিক বংশীয় বৌদ্ধদার্শনিকদের রাজপ্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী গ্রিক রাজ্যের সাথে মৌর্যদের বাণিজ্যিক ও শিল্প সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
গ্রিকো-বাকট্রিয়ান ও ইন্দোগ্রিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা
বাকট্রিয়ায় (বালখ) আলেক্সান্ডার অনেকগুলো রাজ্য প্রতিষ্ঠা ও শাসন করেছিলেন যেমন, আলেকজান্দ্রিয়া অব অক্সাস (অধুনা আয় খানম), ও আলেকজান্দ্রিয়া অব ককেশাস (অধুনা বাগ্রাম)। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ এ আলেকজান্ডারের প্রয়াণের পর প্রথম সেলেউকাস নিকেটর বেকট্রিয়ার সিংহাসন লাভ করেন এবং সেলেউকিড সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বেকট্রিয়ার একজন সত্রপ রাজা ডাইয়ডটাস ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সেলেউকিড সাম্রাজ্য থেকে পৃথক হয়ে গ্রিকো-বেকট্রিয়ান রাজ্য গঠন করেন। একটা কালপঞ্জি থেকে জানা যায় সেলেউকিড রাজা এনটাইয়কাসের শাসনামলে বেকট্রিয়ায় তার মুদ্রার প্রচলন ছিল না যা থেকে ধারণা করা হয় যে তার শাসনামল শুরুর আগেই বেকট্রিয়া স্বতন্ত্রতা লাভ করে। অন্য একটি কালপঞ্জির তথ্যানুযায়ী সেলেউকিড সাম্রাজ্যের সাথে সিরিয়দের তৃতীয় যুদ্ধের রেশ ধরে ডাইয়ডটাস পৃথক রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন বলে ধারণা করা হয়। নবগঠিত রাজ্যকে 'সহস্র নগরীর সমৃদ্ধশালী বেকট্রিয়া সাম্রাজ্য বলে' জাস্টিন আখ্যায়িত করেন যা ক্রমে আরো শক্তিধর হয়ে উঠে এবং পূর্ব ও পশ্চিমে বিস্তার লাভ করে।
অন্যদিকে পার্থিয়ায় স্বঘোষিত রাজা এনড্রেগোরাসকে পরাজিত করে arsaces পার্থিয়ান সাম্রাজ্য জয়ের মাধ্যমে মূল গ্রিক সাম্রাজ্যের সাথে গ্রিকো-বেকট্রিয়ানদের স্থল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এতে গ্রিক শাসনাধীন মিশরের সাথে বেকট্রিয়ার সমুদ্রবাণিজ্য প্রসার লাভ করে।
ডাইয়ডটাসের পর তার পুত্র দ্বিতীয় ডাইয়ডটাস সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি দ্বিতীয় সেলেউকাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য পার্থিয়ান রাজা আরসেকিস এর সাথে সন্ধি করেন। পলিবিয়াসের মতে ডিওডেটাস ইউথুডেমাসের হাতে পরাজিত হন, যিনি একজন মেগনেসিয় গ্রিক এবং সম্ভবত তিনি সোগদিয়ার সত্রপ ছিলেন। তিনি তার রাজ্যকে সোগদিয়া ও আলেকজান্দ্রিয়া অব এস্কেট পর্যন্ত বিস্তৃত করেন। সেলেউকিড রাজা তৃতীয় এনটাইয়কাসের কাছে ইউথুডেমাস প্রথম পর্যায়ে পরাজিত হলেও পুনরায় বেকট্রিয়ায় সংগঠিত হয়ে আক্রমণ প্রতিহত করেন। অবশেষে এ প্রস্তাব দেন। এনটিওকাস পার্থিয়ার রাজাকে পরাজিত করার পর বেকট্রিয়া পশ্চিমে উত্তরপূর্ব ইরানসহ পার্থিয়া পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। উত্তর দিকে ইউথুডেমাস সোগদিয়া ও ফারঘানা শাসন করেছিলেন এবং খ্রিস্টপূর্ব ২২১ সনে আলেকজান্দ্রিয়া অব এস্কেট থেকে চীনের দিকে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন যা চীন অন্তর্ভুক্ত তুর্কিস্তান পর্যন্ত পৌঁছায়। এরই মাধ্যমে চীনের সাথে পশ্চিমা গ্রিকিদের সরাসরি সংযোগ ঘটে। চীন ও বেকট্রিয়ার মধ্যে বাণিজ্যক, অঅর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রসার লাভ করে। চীনে গ্রিক সভ্যতার অনেক নিদর্শনের খোঁজ পাওয়া গেছে। চীনের বিভিন্ন শিল্পকর্মে গ্রিক সংস্কৃতির প্রভাবও পরিলক্ষিত হয়। চৈনিক পরিব্রাজকদের বর্ণনায় বেকট্রিয়া ভ্রমণের সময় চীনের বহু দ্রব্য সামগ্রী বেকট্রিয়ার বাজারে বিক্রি হত বলে জানা যায়।
ইউথুডেমাসের পুত্র প্রথম ডেমিট্রয়াস গ্রিকো-বেকট্রিয় রাজাদের মধ্যে প্রথম ভারত মুখী অভিযাত্রা করেন বলে ধারণা করা হয়। তিনি ইন্দো- গ্রিক রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুঙ্গদের হাতে মৌর্জ সাম্রাজ্যের পতন তাকে ভারত আক্রমণের উৎসাহ জাগায় বলে মনে করা হয়। আরাকোশিয়া ও কাবুল উপত্যকায় প্রথম ডেমিট্রিয়াসের মুদ্রার সন্ধান মিলে তাতে ধারণা জন্মায় ডেমিট্রিয়াস কাবুল উপত্যকা ও গান্ধার জয় করে ভারতে প্রবেশ করেন। কিন্তু মধ্য ভারতে তার নামাঙ্কিত মুদ্রার উপস্থিতি নেই যা থেকে বলা যায় তিনি ভারতের মূল ভূখন্ডে অগ্রসর হননি বা অগ্রসর হওয়ার পূর্বেই মৃত্যুবরণ করেন। আলেকজান্ডারের মতই হাতির মাথা আকৃতির শিরস্ত্রাণ পরিহিত ডেমিট্রিয়াসের প্রতিমূর্তি যুক্ত মুদ্রা পাওয়া যায় যা ভারত জয়ের প্রতীক। হিন্দু কুশের দক্ষিণাঞ্চল জয়ের জন্য তিনি ভারতের অধিপতি উপাধি লাভ করেছিলেন। তিনি হেরাকেলদের কাছ থেকে মৃত্যু-পরবর্তী অনিকেতো (অপরাজেয়) উপাধি লাভ করেছিলেন যা আলেক্সান্ডারকেও বলা হত। পরবর্তী গ্রিক রাজা লাইসিয়াস, ফিলক্সেনোস এবং আরতিমিডরাস এই উপাধি ব্যবহার করেছিলেন।
ডেমিট্রিয়াসের মৃত্যুর পর বেশ কয়েকজন রাজা ভারত দখল করলেও তাদের নিজেদের মধ্যেকার বিবাদের সুযোগ নিয়ে প্রথম এপলোডটাস স্বতন্ত্রতা ঘোষণা করেন। তিনি একজন যথাযথ ইন্দো-গ্রিক ছিলেন। ভারতে তার প্রচুর সংখ্যক মুদ্রা পাওয়া গেছে এবং তিনি গান্ধার ও পাঞ্জাবের পশ্চিমাঞ্চলে শাসন করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রথম এপলোডটাস এর পর দ্বিতীয় এনটাইয়কাস রাজ্য জয় করেছিলেন অথবা পাশাপাশি অবস্থানে রাজ্য শাসন করেছিলেন। তিনি সম্ভবত বেকট্রিয় রাজা প্রথম এনটাইয়কাস এর পুত্র।
প্রথম মিনেনডার এর রাজত্ব
ইন্দো-গ্রিক রাজাদের মধ্যে মিনানডার (আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব ১৬৫/১৫৫) হলেন সবচেয়ে বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ। তার নামাঙ্কিত মুদ্রা উত্তর পাঞ্জাব পর্যন্ত পাওয়া গেছে। যেহেতু তিনি অনেক আগে থেকেই ভারতে শাসন করছিলেন সেহেতু তিনি পূর্বদিকে অগ্রসর হন। পাঞ্জাব জয়ের পর তিনি শগলে তার রাজধানী স্থাপন করেন এবং সমগ্র উত্তর ভারতে বেশ কয়েকবার রাজ্য জয়ের অভিযান চালান যা মৌর্য রাজধানী পাতনা পর্যন্ত পৌঁছায়। খ্রিস্টপূর্ব ১৬১ থেকে ১৩০ সন পর্যন্ত মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি পাঞ্জাবের শাসনকর্তা ছিলেন।
স্ট্রাবো উল্লেখ করেন, এপলোডরাসের মতে ভারতীয় উপকূলবর্তী রাজ্য সিন্ধু ও সম্ভবত গুজরাতও ইন্দো-গ্রিক রাজ্যসীমার অন্তর্গত হয়েছিল। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে কাবুল উপত্যকা ও উত্তর পাঞ্জাবে ইন্দো-গ্রিক রাজ্যের বিস্তৃতি নিশ্চিত করা গেলেও এই সীমার বাইরের অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি তেমন একটা ছিল না বললেই চলে আর থাকলেও তা খুব স্বল্প সময়ের জন্যই ঘটেছিল।
কিছু সূত্র দাবি করে যে ইন্দো-গ্রিকরা মিনানডারের নেতৃত্বে শুঙ্গ রাজধানী পাটলিপুত্র জয় করেছিল তবে এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আরেকটি সূত্র বলে যে ইন্দো-গ্রিকরা মূলত স্থানীয় ভারতীয় রাজাদের আহবানে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিল মাত্র। ধরে নেয়া যায় তারা পাটলিপুত্র আক্রমণ করেছিল কিন্তু তাদের মূল রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধার কারণে সেই অভিযান থেকে সরে আসতে হয়েছিল।
ঐদিকে বেকট্রিয় রাজা ইউক্রেটাইডিস দ্বিতীয় খ্রীস্টপূর্বাব্দের মাঝামাঝি সময়ে ইন্দো-গ্রিক রাজ্যের উপর আক্রমণ করেন। তিনি আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব ১৭০ ও ১৫০ এর মধ্যে ইন্ডাস (সিন্ধু) পর্যন্ত জয় করেছিলেন। মেনানডার তাকে পরাজিত করে হারানো রাজ্য উদ্ধার করেন। মিনানডারকে শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী ইন্দো-গ্রিক রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। অন্য রাজাদের চেয়ে তার সর্বাধিক সংখ্যক মুদ্রা ভারতের সবচেয়ে বেশি অঞ্চল জুড়ে খুঁজে পাওয়া গেছে। বৌদ্ধ সাহিত্যকর্ম মিলিন্দ প্রঞঞা তে মেনান্ডারের সবিস্তর বর্ণনা রয়েছে। এতে তার বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত হওয়া ও একজন অরহৎ হয়ে উঠার কথা উল্লেখিত রয়েছে।
মিনানডারের মৃত্যুর পর নতুন নতুন রাজ্য ও প্রজাতন্ত্রের উত্থান ঘটে যা তার সাম্রাজ্যের পরিধি সংকীর্ণ করে দেয়। এইসব রাজ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অযোধ্যা আর অর্জুনযান। এসব রাজ্যে বিজয় স্মারক সংবলিত নতুন মুদ্রা চালু করা হয়েছিল। জুনাগড় এ আবিষ্কৃত রাজা রুদ্রদমনের শিলালিপিতে মিনানডারের শাসন থেকে অযোধ্যার স্বাধীনতা লাভের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। দ্বিতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সিথিয়ান ও য়ুইজিরা উত্তর দিক থেকে বেকট্রিয়ায় আক্রমণ করে। খ্রীস্টপূর্ব ১৩০ সনে এই আক্রমণের দরুন শেষ গ্রিকো-বেকট্রিয় রাজা হেলিওক্লিস প্রাণ হারান এবং গ্রিকো-বেকট্রিয়ান রাজ্যের পতন ঘটে। বেকট্রিয়ার পতনে পার্থিয়ানরাও ভূমিকা রেখেছিল। খ্রীস্টপূর্ব ১৩০ এর দিকে মেনানডার মৃত্যুবরণ করার পর ইন্দো-গ্রিক রাজ্যের ঘটনাবলীর কোন ঐতিহাসিক কোন সাক্ষ্য প্রমাণ বা দলিল পাওয়া যায় না। মুদ্রা ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সময়কাল বিশ্লেষণের মাধ্যমে পরবর্তী ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা করা হয়।
ইন্দো-গ্রিক শাসনামল ঠিক কতকাল পর্যন্ত টিকে ছিল তা নিয়ে সঠিক কোন তথ্য নেই। সম্ভবত রাণী এগাটোক্লিয়া, তার পুত্র স্ট্রাতো ও নিসিয়াস মিনানডারের রাজ বংশীয় সদস্য ছিলেন। তবে এটা নিশ্চিত নয় যে তারা মিনানডারের পর পরই রাজ্য শাসন করেছিল। ইন্দো-গ্রিক রাজ্যের পশ্চিমে নতুন অনেক রাজার আবির্ভাব ঘটে যেমন প্রথম জোইলাস, লিসিয়াস, এনটিয়াক্লিড ও ফিলক্সিনোস। এই রাজারা খুব সম্ভব ইউক্রেটিড ও ইউথুডেমিড রাজবংশের সদস্য বা তাদের আত্মীয় ছিলেন। বেকট্রিয়ার পতনের পর মেনাডারের উত্তরসুরি জোইলাস ভারতের পশ্চিমাংশ শাসনকালে যে মুদ্রার প্রচলন করেন তাতে হেরাকেল এর মুগুরের সাথে সিথিয়ানদের তীর-ধনুক পাশাপাশি যুক্ত করে জয়মালা পরিবেষ্টিত প্রতীক ও অশ্বারোহী মানুষের প্রতীক চিহ্নিত করা রয়েছে। এই অশ্বারোহী মানুষ দিয়ে খুব সম্ভব সাইথিয়ান অথবা য়ুইজিদের বোঝানো হয়েছে যারা বেকট্রিয়ায় আক্রমণ করেছিল। ধনুকের প্রতীকটির সাথে ঐতিহ্যবাহী হেলেনীয় ধনুকের মিল পাওয়া যায় যার ছবি রাজ্যের পূর্বাংশের শাসক ইন্দো-গ্রিক রানী এগাথক্লিয়া মুদ্রায় অঙ্কিত রয়েছে। ইন্দো-সিথিয়ান রাজা মউজের সাথে তক্ষশিলার ইন্দো-গ্রিক রাজাদের শখ্যতা ছিল বলে জানা যায়। রাজা প্রথম এপোলোডটাসের পর থেকে ইন্দো-গ্রিক রাজারা মুদ্রায় গ্রিক ও খারষ্ঠি ভাষার একত্রে ব্যবহার করতেন। কিন্তু শেষদিকের রাজারা কিছু বিশেষ মুদ্রারও প্রচলন করেন সম্ভবত সিথিয়ান ও য়ুইজি দের সাথে আদান প্রদানের জন্য যারা পরবর্তীকালে সেসব রাজ্য শাসন করেছিল।
মুদ্রানীতি
কতিপয় বেকট্রিয় রাজা ডেমিট্রিয়াসের মৃত্যুর পর ভারতবর্ষ অধিগ্রহণ করেন। বেকট্রিয় রাজা পানতালিয়ন ও আগাথোক্লিস প্রথম তাদের মুদ্রাগুলোতে গ্রিক ভাষার পাশাপাশি ভারতীয় ব্রাহ্মীলিপি ব্যবহার শুরু করেছিলেন। তারা মুদ্রাগুলোর ভারতীয় করণের জন্য হিন্দু দেবদেবী, বিষ্ণুর অবতার, বুদ্ধ ও বৌদ্ধ চিহ্ন ছাড়াও ভারতের কিছু জন্তুর অবয়ব মুদ্রিত করেন। এই ধরনের মুদ্রা তক্ষশিলায়ও আবিষ্কৃত হওয়ায় ধারণা করা হয় তাদের শাসনামলে (আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫-১৭০) গান্ধার বেকট্রিয়ার অধীনে ছিল। পরবর্তীকালের রাজাদের মুদ্রায় উভয় ভাষার প্রচলন থাকলেও গ্রিক দেবদেবীর প্রতিরূপ বেশি প্রাধান্য পেত। প্রথম ও দ্বিতীয় মেনানডারের মুদ্রায় বৌদ্ধধর্মীয় ধর্মচক্র চিহ্নের ব্যবহার বেশ প্রকট।
ইন্দো-গ্রিক রাজ্যের পতন
রাজা ফিলোক্সেনোস (খ্রিস্টপূর্ব ১০০-৯৫) পারপামিসাদি ও পাঞ্জাব শাসন করার সময় ইন্দো-গ্রিক রাজ্য অনেকগুলো ছোট বড় রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পরে। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে ধীরে ধীরে রাজ্যের পূর্ব ভাগ ভারতীয়রা এবং পশ্চিমে সিথিয়ান, য়ুইজি এবং পার্থিয়ানরা দখল করে। এই সময় জুড়ে প্রায় বিশ জন রাজার নাম জানা যায় যারা রাজ্য শাসন করেছেন। সর্বশেষ দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ট্রাটো ১০ম খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পাঞ্জাবে শাসন করেন।
হিন্দুকুশ অঞ্চলে শাসন অবসান
এই অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া মুদ্রাগুলো থেকে সাকুল্যে আট জন রাজার নাম জানা যায়। তাদের মধ্যে সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ হলেন রাজা হার্মিয়াস যিনি প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৮০ সন পর্যন্ত পারোপেমিসেডি (হিন্দুকুশের অঞ্চল) শাসন করেন। তার মৃত্যুর পরপরই য়ুইজি বা শকরা বেকট্রিয়া থেকে আক্রমণ করে তার রাজ্য দখল করে। পরবর্তীকালে রাজা হিপোস্ট্রাটাস কিছু অংশ রক্ষা করে রাজত্ব করেছিলেন। হার্মিয়াসের মৃত্যুর বহুকাল পর পর্যন্ত নতুন রাজারা কুষাণ রাজা কুজুল কদফিসেস এর মুদ্রার সাথে হার্মিয়াসের প্রতীক চিহ্নত মুদ্রা সম্মিলিত ভাবে প্রচলন ও ব্যবহার করেন। মুদ্রায় ইন্দো-গ্রিক রাজাদের আদলে তারা গ্রিক চিহ্ন ও অক্ষর ব্যবহার করতেন।
নটিওকাস হার স্বীকার করে মিত্রতা স্থাপনের জন্য ইউথুডেমাসের পুত্র ডেমিট্রিয়াসের সাথে নিজের কন্যার বিবাহের
রাজ্যের মধ্যাঞ্চলে ক্ষমতা চ্যুতি
খ্রিস্টপূর্ব ৮০ সনের দিকে ইন্দো-সাইথিয়ান রাজা মউজ উত্তর-পশ্চিম ভারতে কিছুকাল রাজত্ব করার পর ইন্দো-গ্রিকদের কাছে পরাজিত হন। ইন্দো-গ্রিক রাজাদের উত্তরসুরিদের মধ্যে রাজা হিপোস্ট্রাটাস সার্থকভাবে রাজত্ব করেছিলেন। কিন্তু ইন্দো -সাইথিয়ান রাজা প্রথম এজিস এর কাছে পরাজিত হন। আবিষ্কৃত মুদ্রাগুলো থেকে জানা যায় দুই রাজ্যের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। যদিও ইন্দো-সাইথিয়ানরা সামরিক ও প্রশাসনিকভাবে রাজ্য শাসন করত, তারা গ্রিক ও ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল যা তাদের মুদ্রাগুলোতে গ্রিক ও খারোষ্ঠি ভাষা, গ্রিক দেবদেবীর ব্যবহার থেকে সহজেই বোঝা যায়। ধারণা করা হয় গ্রিকরা সম্পূর্ণভাবে নির্মুল হয়ে যায়নি বরং ইন্দো-সাইথিয়ানদের শাসনে সম্প্রীতির সাথে সহবস্থান করেছিল। সীলমোহরযুক্ত একটি আংটির লেখা থেকে সর্বশেষ যে ইন্দো-গ্রিক রাজার নাম জানা যায় তিনি হলেন থিওডেমাস।
পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের পরাজয়
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে রাজা মিনেনডারের মৃত্যুর পরেই ইন্দো-গ্রিক রাজ্যের পূর্বাঞ্চল হারাতে হয়। এরপরেও গ্রিকরা মথুরার কিছু অংশ নিয়ে রাজত্ব করেছিল বলে ধারণা করা হয়। সম্ভবত মিত্র, শুঙ্গ বা দত্তদের কাছে তারা মথুরা থেকে রাজ্য চ্যুত হয়। তাড়িত হয়ে গ্রিকরা পশ্চিমে পাঞ্জাবের কিছু অংশে শাসন করে। রাজাকার সর্বশেষ ইন্দো-গ্রিক রাজা দ্বিতীয় স্ট্রাটো ও তৃতীয় স্ট্রাটো শক রাজা রাজবালা এর কাছে পরাজিত হয়ে রাজত্ব হারান।
আরও দেখুন
- Greco-Bactrian Kingdom
- Yavana era
- Yavana Kingdom
- Seleucid Empire
- Greco-Buddhism
- Indo-Scythians
- Indo-Parthian Kingdom
- Kushan Empire
- Roman commerce
- Timeline of Indo-Greek Kingdoms
- Gandhara Kingdom
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.