Loading AI tools
মরক্কী পরিব্রাজক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মুহাম্মদ ইবনে বতুতা বা ইবনে বতুতা (ফেব্রুয়ারি ২৪, ১৩০৪ - ১৩৬৮ অথবা ১৩৬৯, আরবি: أبو عبد الله محمد بن عبد الله اللواتي الطنجي بن بطوطة, ʾAbū ʿAbd al-Lāh Muḥammad ibn ʿAbd al-Lāh l-Lawātī ṭ-Ṭanǧī ibn Baṭūṭah) ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম পর্যটক, চিন্তাবিদ, বিচারক এবং সুন্নি ইসলামের মালিকি মাজহাবের অনুসারী ধর্মতাত্ত্বিক। তার পূর্ণ নাম হলো আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে বতুতা তিনি ১৭ রজব ৭০৩ হিজরী[1] মোতাবেক ১৩০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার দিন মরোক্কোর তাঞ্জিয়ারে জন্মগ্রহণ করেন।[2] চীন সহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় তিনি "শামস-উদ্-দ্বীন" [3] নামেও পরিচিত।
ইবন বতুতা সারা জীবন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পৃথিবী ভ্রমণের জন্যই তিনি মূলত বিখ্যাত হয়ে আছেন। একুশ বছর বয়স থেকে শুরু করে জীবনের পরবর্তী ৩০ বছরে তিনি প্রায় ৭৫,০০০ মাইল[4](১,২১,০০০কিমি) পথ পরিভ্রমণ করেছেন। তিনিই একমাত্র পরিব্রাজক যিনি তার সময়কার সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন এবং তৎকালীন সুলতানদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। বর্তমান পশ্চিম আফ্রিকা থেকে শুরু করে মিশর, সৌদি আরব, সিরিয়া, ইরান, ইরাক, কাজাকিস্তান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং চীন ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। তার কিছুকাল পূর্বে এমন দীর্ঘ ভ্রমণ করে বিখ্যাত হয়েছিলেন ভেনিসের ব্যবসায়ী এবং পরিব্রাজক মার্কো পোলো। কিন্তু ইবন বতুতা মার্কো পোলোর তিনগুণ বেশি পথ সফর করেছিলেন। ভ্রমণকালে তিনি এই উপমহাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, সুফি, সুলতান, কাজি এবং আলেমদের সাক্ষাৎ লাভ করেন। ৩০ বছরে প্রায় ৪০টি দেশ ভ্রমণ করে নিজ দেশ মরোক্কোতে ফেরার পর মরোক্কোর সুলতান আবু ইনান ফারিস তার ভ্রমণকাহিনীর বর্ণনা লিপিবদ্ধ করার জন্য কবি ইবনে যোজাইয়াকে নিয়োগ করেন। এই ভ্রমণকাহিনীর নাম রিহলা। এটিকে ১৪শ শতকের পূর্ব, মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সাম্রাজ্যের ইতিহাসের অন্যতম দলিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৫৮ সালে এ গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ বের হয়।[5]
ইবন বতুতা তার গ্রন্থে নিজের সম্পর্কে যতটুকু লিখে গেছেন তার চেয়ে বেশি কিছু জানা সম্ভব হয়নি। তিনি ১৩০৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মরোক্কোর তাঞ্জিয়ারে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[6] তার বাবা ছিলেন একজন কাজি। তার ধারণা অনুযায়ী তার পরিবার পশ্চিম আফ্রিকার লাওয়াতা যাযাবর জনগোষ্ঠীর উত্তরসূরি। তার পরিবার সুন্নি মতবাদের অনুসারী হওয়ায় কিশোর বয়স থেকেই ইসলাম ধর্মের উপর শিক্ষা লাভ করেন।[7] ১৩২৫ সালে তার বয়স যখন ২১ বছর তখন তিনি হজ্জ পালনের লক্ষ্যে মক্কার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। সেই সময় সাধারণত মরোক্কো থেকে হজ্জ করে ফিরতে হাজিদের ১৫ থেকে ১৬ মাস সময় লাগত কিন্তু এই মহান পরিব্রাজক অর্ধেক পৃথিবী ঘুরে, তিনবার হজ্জ করে তার জন্মভূমিতে ফিরেছিলেন চব্বিশ বছর পর।
হজ্জ পালন ও মুহাম্মাদ এর রওজা মোবারক জিয়ারতের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমি যেদিন জন্মভূমি তাঞ্জিয়ার ছেড়ে মক্কার পথে যাত্রা করলাম, সেদিন ছিল হিজরি ৭২৫ সালের ২রা রজব (১৪ই জুন ১৩২৫, বৃহস্পতিবার)। সেই হিসাব মতে তখন আমার বয়স ২২ বছর (২১ বছর ৪ মাস)। পথে সঙ্গী হিসাবে কাউকে না পেয়ে বা কোনও কাফেলার খোঁজ না পেয়ে আমি একাই বেরিয়ে পড়ি। তখন আমার মা বাবা বেঁচে ছিলেন। তাঁদের ছেড়ে আসার পর্বটা খুব কঠিন ছিল, বিদায়ের সময় ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল আমাদের সবার।[8]
১৩২৫ সালের ১৪ ই জুন তারিখে ইবন বতুতার বয়স ছিল ২১ বছর ৪ মাস। এ সময় তিনি মক্কা নগরীতে গিয়ে হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে জন্মভূমি ত্যাগ করেন। সে হিসেবে তার যাত্রার সূচনা হয় ১৩২৫ সালের ১৪ জুন মরক্কোর তানজিয়ার থেকে।
হজ্জের উদ্দেশ্যে তিনি উত্তর আফ্রিকার সমুদ্র তীর ঘেঁষে পায়ে হেঁটে মক্কা রওনা দেন। এই পথে তিনি আব্দ-আল-ওয়াদিদ এবং হাফসিদ সম্রাজ্য, তিমসান, বিজাইরা এবং তিউনিস হয়ে মক্কায় পৌঁছান। যাত্রা পথে তিনি তিউনিসে দুই মাস আবস্থান করেন।[9] আরব বেদুইনদের থেকে নিরাপদ থাকতে এবং অন্যান্য সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন কাফেলার সাথে এই পথ অতিক্রম করেন তিনি। তখন তিউনিসের সুলতান ছিলেন আবু ইয়াহিয়া। ১৩২৫ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে উপকূলীয় পথে সাফাক্স হয়ে কাবিস শহরে পৌঁছান। এই কাবিস শহরে তিনি তিউনিসের এক উকিলের মেয়েকে চুক্তিতে বিয়ে করেন।[10] কিন্তু পরবর্তীতে ত্রিপলি আসতে আসতে উকিলের সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাওয়ায় এই বিয়ে বেশি দিন টেকে নি। অবশ্য ত্রিপলির পরবর্তী শহর ফেজে এসে তিনি এক ছাত্রের মেয়েকে বিয়ে করেন।
১৩২৬ সালের ৫ই এপ্রিল ইবন বতুতা তৎকালীন বাহরি মামলুক সালতানাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর আলেক্সান্দ্রিয়া পৌঁছান। আলেক্সান্দ্রিয়ায় তিনি ২জন ধার্মিক তপস্বীর সাথে স্বাক্ষাৎ করেন। এদের একজন হলেন শেখ বোরহানউদ্দিন, তিনি ইবনে বতুতাকে তার বিশ্ব ভ্রমণ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, 'আমার মনে হচ্ছে তুমি বিদেশ ভ্রমণ পছন্দ করো। তুমি ভারতে আমার ভাই ফরিদউদ্দিন, সিন্ধু প্রদেশ রুকনউদ্দিন এবং চীনে বুরহানউদ্দিনের সাথে দেখা করবে এবং আমার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেবে।' অপর ব্যক্তি হলেন শেখ মুর্শিদি, যিনি ইবনে বতুতার একটি স্বপ্লের অর্থ ব্যাখ্যা করেন। এই দুই ব্যক্তির সাথে স্বাক্ষাতের পূর্বে তার এতো দূর দেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা ছিল না, কিন্তু তাদের অনুপ্রেরণায় তিনি তার বিশ্ব ভ্রমণের পরিধি আরও বিস্তার করেন।[11][12] এক সপ্তাহ সেখানে থাকার পর তিনি মামলুক সালতানাতের রাজধানী কায়রো অভিমুখে যাত্রা করেন। সেই সময় কায়রো ঐ এলাকার এটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল। কায়রোতে প্রায় ১ মাসের মতো অবস্থান করার পর তিনি মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা করেন।[13] মক্কা যাওয়ার অন্যতম পথগুলো রেখে তিনি একটি অল্প পরিচিত পথে যাবার সিদ্ধান্ত নেন যেটা নীল নদ পার হয়ে আইদাব বন্দর দিয়ে যেতে হয়।[lower-alpha 1] বন্দরে পৌঁছার পর স্থানীয় গোষ্ঠীরা তাকে কায়রো ফেরত যেতে বাধ্য করে।[14] পুনরায় কায়রো পৌঁছে তিনি একজন সুফির সাথে সাক্ষাৎ করেন। তার নাম শেখ আবুল হাসান আল সাদিদি। তিনি ইবনে বতুতাকে বলেন যে মক্কা যাওয়ার সবচেয়ে ভালো পথ হল সিরিয়া হয়ে যাওয়া কারণ এই পথ ধরে গেলে হিব্রু, বেথলেহেমে এবং জেরুসালেম পাওয়া যায় কিন্তু দুঃখের বিষয় হল মামলুক সম্রাজ্য এই পথ ভ্রমণকারীদের ডাকাত এবং লুটেরাদের থেকে সুরক্ষিত রাখার কোনো ব্যবস্থাই করে নি।
রমজান মাস দামেস্কে (বর্তমান সিরিয়ার রাজধানী) কাটিয়ে তিনি মদিনাগামী একটি কাফেলার সাথে যোগ দেন। মদিনায় মুহাম্মাদ (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করে চার দিন পর তিনি মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। মক্কা পৌঁছে হজ্জ পালন করে তিনি তাঞ্জিয়ার ফিরে যাওয়ার বদলে মধ্য এশিয়ার দিকে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
মক্কায় এক মাস কাটানোর পর ১৭ নভেম্বর ১৩২৬ তারিখে ইবন বতুতা আরব উপসাগর হয়ে ইরাকগামী এক কাফেলার সাথে যোগ দেন।[15] এই দলটি মদিনার অভিমুখে যাওয়ার পথে তাকে নাজাফ শহর পর্যন্ত নিয়ে যায়। সেখানে মুহাম্মাদের জামাতা ও ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলির কবর রয়েছে।
মাজার জিয়ারত শেষে তার কাফেলা ইরাকের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে তিনি কাফেলার সাথে ইরাক না গিয়ে দক্ষিণ দিকে টাইগ্রিস নদী পার হয়ে বসরা শহরের দিকে রওনা হন। বসরা থেকে তিনি পারস্যের সবচেয়ে বিখ্যাত শহর ইস্পাহানের দিকে যাত্রা করেন। ইস্পাহান থেকে তিনি শিরাজ শহরে যান। এই শিরাজ শহরটি মোঙ্গল আক্রমণে বিপর্যস্ত ছিল। সেখান থেকে তিনি বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন এবং ১৩২৭ সালের জুন মাসে বাগদাদ পৌঁছান। বাগদাদ শহরটিতে তখনও চেঙ্গিজ খানের নাতি হালাকু খানের সৈন্যবাহিনীর ১২৫৮ সালের আক্রমণের ছবি স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল।[16]
বাগদাদে তিনি শেষ মোঙ্গল সম্রাট আবু সাইদের সাথে দেখা করেন।[17] তার উপদেশে তিনি রাজকীয় কাফেলায় যোগ দিয়ে উত্তর দিকে সিল্ক রোড হয়ে তাবরিজ শহরে যান। তৎকালীন সময়ে তাবরিজ শহর ছিল উত্তর দিক দিয়ে মোঙ্গল সাম্রাজ্যে প্রবেশের প্রধান পথ এবং অন্যতম ব্যবসাবাণিজ্যের কেন্দ্র।[18]
সম্ভবত জুলাই মাসে ইবনে বতুতা পুনরায় বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথে তিনি মসুল ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি ইলখানাতে গভর্নরের অতিথি ছিলেন,[19] এবং তিনি সিজরা (জাজিরা ইবনে উমর) এবং মারদিন শহরগুলো ভ্রমণ করেন। সিনজারের কাছের একটি আশ্রমে তিনি একদল কুর্দির সাক্ষাৎ পান, যাদের কাছ থেকে তিনি কিছু রূপার মুদ্রা পেয়েছিলেন।[lower-alpha 2][21] এখান থেকে তিনি আরেকটি কাফেলার সাথে যোগ দিয়ে পুনরায় আরব উপদ্বীপ হয়ে মক্কা এসে দ্বিতীয়বারের মতো হজ্জ করেন এবং পরবর্তী ৩ বছর মক্কাতেই অবস্থান করেন।[22]
ইবন বতুতা পরবর্তী তিন বছরের জন্য মক্কায় অবস্থান করে ১৩৩০ সালের হজ্জ করেন। তবে ভ্রমণের বর্ণনায় অসঙ্গতির কারণে এই সময়কাল নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে ১৩২৮ সালের কোন এক সময় তিনি হজ্জ পালন করেন।[lower-alpha 3]
এরপর তিনি জেদ্দা থেকে লোহিত সাগরের তীরের দিকে যাত্রা করেন। সেখান থেকে একটি ছোট নৌকার সাহায্যে ইয়েমেন পৌঁছেন। ইয়েমেনের তৎকালীন সুলতান ছিলেন নুর-উদ-দিন। ইয়েমেনের তা’ইজ শহরে সুলতানের সাথে সাক্ষাৎ করার পর চারদিন অবস্থান করেন। তার ভ্রমণ বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে এরপর তিনি এককালীন রাজধানী সানার দিকে যাত্রা করেন, তবে সেখানকার বিস্তারিত কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় নি।[23] ধারণা করা হয় ১৩২৯ থেকে ১৩৩১ এর মধ্যবর্তী কোনো সময়ে তিনি তা'ইহ থেকে রওনা হয় এবং সেই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর এডেনে আসেন।[24]
এডেন বন্দর থেকে জাহাজে চারদিনের যাত্রা করে তিনি সোমালিয়ার তীরবর্তী জায়লা (বর্তমানে বারবারাহ আরবি শব্দ বারবারাহ অর্থ আফ্রিকার শিং)[25][26][27] শহরে পৌঁছান। জায়লা থেকে পনেরো দিনের যাত্রা করে অবশেষে ম্যাকদ্যাশ’অ (মোগাদিশু) পৌঁছান।
তার বর্ণনা মতে তৎকালীন মোগাদিসু ছিল ব্যবসাবাণিজ্যের কেন্দ্র। বিভিন্ন এলাকা থেকে বণিকেরা মোগাদিসু বন্দরে গিয়ে ব্যবসা করতেন। তখন মোগাদিসু ভালো মানের একপ্রকার সূতি কাপড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল এবং তারা এই কাপড় মিসর, সিরিয়া সহ অন্যান্য জায়গায় রফতানি করত।[28] ম্যাকদ্যাশ’অর তৎকালীন সুলতান ছিলেন আবু বকর।[29][30] সুলতানের আতিথেয়তায় মোগাদিসুতে তিনি মোট চারদিন ছিলেন। মোগাদিশু ছেড়ে তিনি সাওয়াহি’লি রওনা দেন। (আরবি শব্দ আস-সাওয়াহিল অর্থ উপকূলীয় এলাকা) সাওয়াহি’লি তৎকালীন সময়ে “বিলদ-আল-জাঞ্জ” নামে পরিচিত ছিল যার অর্থ হল জাঞ্জদের ভূমি। জাঞ্জ শব্দটা কোন ভাষা থেকে এসেছে তা জানা যায় না, তবে মধ্যযুগে আরবরা পূর্ব আফ্রিকার নিগ্রোদের এই নামে ডাকত। তার সাওয়াহি’লি আসার অন্যতম কারণ ছিল কুলওয়া (বর্তমানে কেনিয়া ও তাঞ্জানিয়ার উপকূলের কিছু অংশের নাম) শহর পরিদর্শন করা। ইবন বতুতা এই শহরকে অত্যন্ত সুন্দর শহর হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তার ভ্রমণের সময় এখানকার সুলতান ছিলেন আবুল মুজাফফর হাসান। তিনি ইসলামী কায়দায় সাম্রাজ্য চালানোর জন্য এবং তার দান দাক্ষিণ্যের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তার ভাই দাউদ তার বংশের সেই সুনাম রাখেন নি। আফ্রিকার এই অঞ্চলটিতে খুব ভালো জাতের ঘোড়া পাওয়া যেত। এখান থেকে প্রশিক্ষিত ঘোড়া ভারতে রফতানি হত। মৌসুমি বায়ুতে পরিবর্তন আসতে থাকলে ১৩৩০ সালে তিনি ওমান ও হরমুজ প্রণালী হয়ে পুনরায় হজ্জ পালনের উদ্দেশে মক্কার দিকে রওনা দেন।
মক্কায় আরো এক বছর কাটিয়ে তিনি ভারতবর্ষের সম্রাট মুহাম্মদ বিন তুঘলকের অধীনে চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৩৩০ সালে তিনি গাইড এবং কাফেলার খোঁজে আনাতোলিয়ার (বর্তমানের তুরষস্কের পূর্ব দিকে) দিকে যাত্রা করেন যেখান থেকে বণিকেরা ভারতবর্ষে গিয়ে ব্যবসা করে। সিরিয়ার লাতাকিয়া বন্দর থেকে একটি জাহাজে করে তুরস্কের দক্ষিণ দিকে আলানা পৌঁছান। তারপর পায়ে হেঁটে কুনিয়া হয়ে কৃষ্ণ সাগরের তীরে পৌঁছান।
সিনোপ হয়ে আজাক (Azaq, পরবর্তীতে Azov) শহরে পৌঁছে সেখানকার খানদের আমিরেরের সাথে দেখা করেন। আজাকে পৌঁছে দেখলেন যে আমির উজবেক খানের রাজধানী সারা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই দেখে ইবন বতুতা তার সাথে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে আমির তাকেও সাথে নেন।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত খান সাম্রাজ্য পরে ব্লু হোর্ড ও হোয়াইট হোর্ড নামে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ব্লু হোর্ড এলাকা ছিল কিয়েভ (বর্তমানে ইউক্রেনের রাজধানী) থেকে ককেশাস, আরাল সাগর ও খিবা পর্যন্ত। সুলতান মুহাম্মদ উজবেক খান (১৩১২-১৩৪০) ছিলেন ব্লু হোর্ড খানদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী।
যাত্রা পথে আস্ত্রখানে সুলতানের মহল্লার (ভ্রাম্যমাণ গ্রাম) দেখা পাওয়া যায়। সেই মহল্লাতেই সুলতান তুঘলক খানের সাথে ইবন বতুতার প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাৎ হয়। সেই সাথে তিনি সুলতানের স্ত্রীদের সাথেও সাক্ষাৎ করেন এবং অনেক উপহার সামগ্রী পান। সুলতানের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন কনস্টান্টিনোপোলের দোর্দোণ্ডপ্রতাপ সম্রাট আন্দ্রোনিকার তৃতীয় এর মেয়ে বায়লুন। বায়লুন সেই সময় আন্তঃস্বত্বা ছিলেন এবং সুলতানের কাছে তার বাবার বাড়িতে সন্তান প্রসব করার ইচ্ছা পোষণ করলে সুলতান তাকে অণুমতি দেন। সেই সাথে ইবন বতুতাকেও খাতুনের মহল্লার সাথে কনস্টান্টিনোপল যাওয়ার অণুমতি দেন। তিনি ১৩৩৪ সালের শেষের দিকে কনস্টান্টিনোপোল পৌঁছান। এটিই ছিল ইসলামী সম্রাজ্যের বাইরে ইবন বতুতার প্রথম সফর। কনস্টান্টিনোপল সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে ইবন বতুতা তার বই “রিহলা” তে বলেন :
“শহরটা আকারের দিক দিয়ে ব্যাপক বিস্তৃত এবং মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া গোল্ডেন হর্ন নদীর জন্য শহরটি দুভাগে বিভক্ত। নদীতে নিয়মিত জোয়ার ভাটা হয় । অতীতে নদী পারাপারের জন্য সেতু ছিল কিন্তু সেটা ভেঙে যাওয়ায় এখন নৌকায় করে পার হতে হয়। এ নদীর পুব পাড়ের অংশের নাম ইস্তাম্বুল। এপাড়েই আছে সম্রাটের প্রাসাদ এবং গণ্যমান্যদের বাস। এ শহরের বাজার ও রাস্তাঘাট অনেক প্রশস্ত এবং পাথর দিয়ে বাধানো। প্রতিটা বাজারে প্রবেশের জন্য বড় বড় ফটক আছে, রাতে সেগুলো বন্ধ থাকে।”
তিনি শহরের অনেক প্রসিদ্ধ জায়গার বর্ণনা দিয়েছেন, তার মধ্যে আয়া হেলেনা (Aya Helena, পরবর্তীতে Sent Helena) গির্জা। এই গির্জার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে শোনা যায় যে এটি নির্মাণ করেছিলেন আসাফ, বেরেচিয়াহর ছেলে; যিনি হযরত সুলায়মান (আ.) এর ভাতিজা ছিলেন। গ্রিকদের যত গির্জা আছে সেন্ট হেলেনা তাদের মধ্যে সবচেয়ে সেরা। দেয়াল দিয়ে চারিদিক ঘেরা গির্জাটিকে একটি শহরের মতো মনে হয়। কিছুদিন থাকার পর কনস্টান্টিনোপল থেকে অস্ত্রখানে ফিরে তিনি জানতে পারেন যে সুলতান তুঘলক তার রাজধানীতে ফিরে গেছেন। তার রাজধানী সারায় গিয়ে সুলতানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ভারত এবং চায়নার উদ্দেশে রওনা হন।
সারা থেকে প্রায় তিন মাস ধরে যাত্রা করে খাওয়ারিজম হয়ে হিন্দুকুশ পার হয়ে তিনি গজনি পৌছান। এর মাঝে তিনি তৎকালীন প্রশিদ্ধ শহর সমরখন্দ এওং খুরাশানে (বর্তমান আফগানিস্তান) সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অবস্থান করেন। তারপর ১৩৩৩ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর আরবি ৭৩৪ সালের পহেলা মহররমে সিন্ধের পাঞ্জাব পৌছান। পাঞ্জাব শহরে পৌছার সাথে সাথে ইবন বতুতার আগমন বার্তা সিন্ধের রাজধানী মুলতানের গভর্নরের কাছে এবং দিল্লির বাদশা সুলতান মোহাম্মদ শাহ এর কাছে পাঠানো হয়। সিন্ধ থেকে দিল্লি ডাক পৌছাতে স্বাভাবিকভাবে প্রায় পঞ্চাশ দিন লাগার কথা কিন্তু বাদশাহর গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ডাক দিল্লিতে মাত্র পাঁচ দিনেই পৌছে যায়। বহিরাগত যে-ই হোক, সুলতানের তরফ থেকে তাকে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হবে কি না, হলেও কোন শ্রেনীর মর্যাদা দেওয়া হবে সে ব্যাপারে দিল্লি থেকে সরকারি নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাকে সিন্ধের রাজধানী মুলতানে অপেক্ষা করতে হয়। ইবন বতুতাকেও অপেক্ষা করতে হল এবং শেষ পর্যন্ত তাকে “আজিজ” (সম্মানিত) পদবি দেওয়া হল।
পাঞ্জাব পার হয়ে নলখাগড়ার জঙ্গলের মধ্য দিয়ে জননী শহর হয়ে সিওয়াসিতান (Siwasitan, পরবর্তীতে Sehwan) পৌছান। এই শহরেই খুরাশানের নামকরা ডাক্তার আলা আল-মুককের সাথে তার দেখা হয়। এই ডাক্তারের সাথেই তিনি পরবর্তীতে লাহোর (তৎকালীন লাহারি) পৌছান। সেখানে গভর্নরের সাথে পাঁচদিন থেকে আবোহার (Abuhar, পরবর্তীতে Abohar) হয়ে ভারতে পৌছান। আবোহার ছিল বর্তমান ভারতের মূল ভূখন্ডের প্রথম শহর। ভারতে ইবন বতুতা প্রায় সাত বছর অবস্থান করেন। সুলতান তাকে দুটি ছোট গ্রাম দিয়ে দেন যাতে করে এর থেকে সংগৃহীত রাজস্ব উত্তোলন করে তিনি তার খরচ চালাতে পারেন এবং এই সময়টা তিনি মালিকি সম্প্রদায়ের কাজী হিসেবে সুলতান কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন। কাজী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম কারণ ছিল তার পিতাও কাজী ছিলেন। কাজীর দায়িত্ব পালনকালীন ইবন বতুতা অনেক বেহিসেবি খরচ করেন যা সুলতানের দৃষ্টিগোচর হয়। অপরদিকে ইবন বতুতাও সুলতানের রহস্যময় আচরনে ত্যাক্ত হয়ে ভারত থেকে চলে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন। অবশেষে সুলতান তাকে চীনের সম্রাটের কাছে দূত হিসেবে প্রেরণ করার ইচ্ছা পোষণ করলে তিনি রাজি হয়ে যান। সুলতান তার ভ্রমণের জন্য ২ টি জাহাজ, কর্মচারী এবং ক্রীতদাসের ব্যবস্থা করলেন।
চীন যাওয়ার উদ্দেশ্যে সমুদ্র তীরের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তায় তিনি একদল ডাকাত দ্বারা আক্রান্ত হন। এই আক্রমণে তিনি সবকিছু হারান কিন্তু কোনরকমে প্রাণে বেঁচে যান। প্রায় দশদিন পর তিনি পুনরায় তার সংগিদের সাথে মিলিত হন এবং বর্তমান ভারতের গুজরাটের দিকে রওনা হন। গুজরাটে তিনি সুলতানের মূল্যবান উপটৌকোনগুলোর সুরক্ষার জন্য প্রায় পঞ্চাশ জন আবিসিনিয়ান হাবসি যোদ্ধা ভাড়া করলেন এবং কয়েকদিন যাত্রা করে অবশেষে কালিকোট বন্দরে পৌছান যেখান থেকে তার চীন যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল। ইবন বতুতা কালিকোট বন্দরে পৌছানোরও প্রায় দুইশত বছর পরে পর্তুগীজ পরিব্রাজক ভাস্কো দা গামা এই বন্দরে এসে পৌছান। তিনি যখন কালিকোটের মসজিদসমূহের পরিদর্শনে ব্যাস্ত ছিলেন তখন এক আচমকা ঝড় এসে সুলতানের মূল্যবান উপটৌকোন সহ তার একটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। এতে করে ঐ জাহাজের সব নাবিক মৃত্যুবরণ করে। সুলতানের প্রেরিত সমস্ত উপহার হারিয়ে ফেলে তার আর দিল্লি ফেরৎ যাওয়ার কোন উপায় ছিল না। তাই তিনি তৎকালীন দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশের শাসনকর্তা জামাল-উদ-দীনের নিরাপত্তায় কিছুদিন থাকলেন। চীনের সম্রাটের কাছে ভারতের সুলতানের পাঠানো উপহারসামগ্রী হারিয়ে ফেলার পর ভারত ছেড়ে যাওয়া ছাড়া ইবন বতুতার আর কোন উপায় ছিল না কিন্তু তিনি তার চীন যাওয়ার ইচ্ছার প্রতি অনড় ছিলেন। তাই তিনি অবশেষে মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন।
যদিও ইবন বতুতা খুব অল্প সময়ের জন্য মালদ্বীপ আসার পরিকল্পনা করেন, তিনি এই দ্বীপে প্রায় নয় মাস অবস্থান করেন। মালদ্বীপ একসময় বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকা থাকায় এখানে খুব একটা দক্ষ কাজী ছিল না। তাই ইবন বতুতাকে মালদ্বীপেও কাজী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মালদ্বীপে অবস্থানকালীন সময়কালীন তিনি মোট চারটি বিয়ে করেন এর মধ্যে একটি করেন রাজপরিবারে।[31] তার বই রিহলা তে মালদ্বীপ সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন যে এখানকার মানুষেরা অনেক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালবাসে এবং খালি পায়ে হাটে। মেয়েদের ব্যাপারে বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন যে এখানকার মেয়েরা শরিরের নিম্নাংশ সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে কিন্তু উর্ধাংশ অনাবৃত রাখে। তিনি কাজী থাকা অবস্থায় অনেক কড়া ইসলামিক নিয়ম কানুন চালু করতে সমর্থ হলেও মেয়েদের পোশাক পরিবর্তনের ব্যাপারে তিনি তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারেন নি। মালদ্বীপে অবস্থানের শেষের দিকে ইবন বতুতার সাথে এখানকার উজিরের মনোমালিন্য দেখা দিলে তিনি সিলন (বর্তমান শ্রীলঙ্কা) হয়ে চীন যাওয়ার ইচ্ছা পোষন করেন এবং অবশেষে একটি জাহাজে চড়ে শ্রীলঙ্কা চলে যান।
শ্রীলঙ্কার মা’বার (মাদুরি) উপকূলে যাওয়ার সময় প্রচন্ড এক ঝড়ের ধাক্কায় তার জাহাজ প্রায় ডুবে গিয়েছিল। ডুবন্ত জাহাজের পেছনের পাটাতনে প্রায় সমস্ত রাত কাটানোর পর একদল হিন্দু এসে তাকে উদ্ধার করে এবং সুলতানের দরবারে পৌছানোর ব্যবস্থা করে দেয়। তখনকার দামাঘানের সুলতান ছিলেন গিয়াস-উদ-দিন যিনি ছিলেন ভারতের সূলতান মোহাম্মদের নিয়োজিত মাদুরির সামরিক গভর্নর। মাদুরিতে কিছুদিন অবস্থান কালে তিনি শ্রীলঙ্কার এডামস পিক এবং তেনাভারাম মন্দির পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে ইবন বতুতা সুলতান গিয়াস-উদ-দিনকে মালদ্বীপ দখলের জন্য প্রলুব্ধ করেন এবং আক্রমণের জন্য সেখানে সৈন্য পাঠাতে রাজী করেন। তারপর তিনি ইয়েমেন যাওয়ার উদ্দেশে একটি জাহাজে চড়েন কিন্তু সেই জাহাজের বহরে জলদস্যু কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ায় এবং সকল সহায় সম্বল হারিয়ে পুনরায় মালদ্বীপ যান। তখন পর্যন্তও তার চীন যাওয়ার ইচ্ছায় কোনরকম ভাটা পড়েনি তাই তিনি মালদ্বীপ থেকে একটি চীনা বাণিজ্য যাহাজে করে চীনের উদ্দেশে রওনা দেন। টানা তেতাল্লিশ দিন যাত্রা করে তিনি বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছান।
টানা তেতাল্লিশ রাত সাগরে কাটিয়ে অবশেষে আমরা বাংলাদেশ পৌছালাম। সবুজে ঘেরা বিশাল এক দেশ, প্রচুর চাল পাওয়া যায়। অন্য সব জিনিষও এত সস্তায় পাওয়া যায় সে দেশে যে এরকম আর কোথাও দেখিনি। তবে দেশটির আর সবকিছু হতাশাব্যাঞ্জক। খুরাশানের (বর্তমান আফগানিস্তান) লোকেরা দেশটিকে বলে “প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা জাহান্নাম"।[32]
ইবন বতুতার বর্ণনায় পাওয়া যায় মাত্র এক দিরহাম দিয়ে তখন বাংলাদেশ আটটি স্বাস্থ্যবান মুরগী পাওয়া যেত, এছাড়াও এক দিরহামে পনেরোটা কবুতর, দুই দিরহামে একটি ভেড়া এবং এক স্বর্নমূদ্রারও কম মূল্যে দাস-দাসী কিনতে পাওয়া যেত। যখন ইবন বতুতা বর্তমান বাংলাদেশে এসে পৌঁছান তখন এখানকার সুলতান ছিলেন ফখর-উদ-দিন। ইবন বতুতার বাংলাদেশে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মহান দরবেশ শেখ জালাল-উদ-দিনের (হযরত শাহ জালাল রঃ) সাথে সাক্ষাৎ করা। সিলেটের পর্বতশ্রেণির মধ্যে যেখানে শেখ জালাল-উদ-দিন থাকতেন সেখান থেকে প্রায় দুই দিনের দূরত্বেই তার দুজন শিষ্যের সাথে দেখা হয় ইবন বতুতার। তাদের কাছ থেকে তিনি জানতে পারেন যে শেখ জালাল-উদ-দিন আদেশ দিয়েছেন, পশ্চিম থেকে যে পর্যটক তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসছেন তাকে যেন স্বাগত জানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অথচ ইবন বতুতার সাথে শেখ জালাল-উদ-দিনের আগে থেকে কোন পরিচয় ছিল না কিংবা ইবন বতুতা তার আগমনের কোন খবরও শেখ জালাল-উদ-দিনকে দেননি। এখান থেকেই ইবন বতুতা শেখ জালাল-উদ-দিনের আধ্যাত্বিক ক্ষমতার ব্যাপারে ইঙ্গিত পান। হযরত শাহজালালের সাথে সাক্ষাৎ করে ফেরার পথে ইবন বতুতা একটি ছাগলের পশমের কোট উপহার পান। ইবন বতুতার বর্ণনা মতে শেখ জালাল উদ-দিন একটি পাহাড়ের গুহায় বসবাস করতেন যেখানে তারা ছাগল পোষতেন দুধ এবং মাখনের জন্য। তার সহযোগীরা প্রত্যেকেই সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন এবং কেউই এদেশীয় ছিলেন না। অবশেষে শেখ জালাল-উদ-দিনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তিনি ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দীপের উদ্দেশ্যে রওনা হন।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যাত্রা করে প্রায় চল্লিশ দিন পর সুমাত্রা উপকূলে পৌছেন। সেখানকার সূলতান আল-মালিক আজ-জহিররের আতিথিওতায় প্রায় দুই সপ্তাহ কাটানোর পর সূলতান তাকে চীন যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সহ একটি ছোট জাহাজের ব্যবস্থা করে দেন। সেখানথেকে প্রায় চল্লিশ দিন যাত্রা করে ১৩৪৫ সালে বর্তমান চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের কুয়ানজু (Quanzhou) বন্দরে পৌছান[33]।
তার বর্ণনা মতে তৎকালীন কুয়ানজুর অধিবাসীরা হুবহু মানুষের প্রতিকৃতি আঁকতে পারদর্শি ছিলেন। সুলতানের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় যখন তিনি স্থানীয় বাজারের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এক চিত্রকরের দ্বারা নিজের একটি প্রতিকৃতি আঁকিয়ে নেন। সূলতানের সাথে দেখা করে ফেরার পথে তিনি লক্ষ্য করেন যে তার এবং তার সাথীদের প্রতিকৃতি শহরের দেয়ালে দেয়ালে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি জানতে পারলেন যে শহরে কোন আগন্তুক আসলেই তার প্রতিকৃতি এভাবে টাঙিয়ে রাখা হয় যাতে করে সেই আগন্তুক কোন অপকর্ম করে পালিয়ে যেতে না পারে। জেইতুন শহরে তার সাথে কাজী আল-ইসলামের সাথে দেখা হয় যার সাথে ইবন বতুতার ভারতেও একবার দেখা হয়েছিল। কাজী আল-ইসলাম চীনে এসে ব্যবসা করে বেশ অর্থোপার্জন করেছিলেন। ইনি ইবন বতুতাকে বেশ কিছু উপহার সামগ্রী দান করেন।
ইবন বতুতার বর্ণনায় চীনের স্থাপত্য এবং শিল্পকলায় পরিপূর্নতার নিদর্শন পাওয়া যায়। তিনি চীনের চিত্রকলার অনেক প্রশংসা করেন কিন্তু চীনের খাদ্যাভ্যাস তার বিন্দুমাত্র উপভোগ্য মনে হয়নি। চীনে অবস্থানকালে তিনি বেইজিংএর গ্রান্ড ক্যানেল, ইয়াজুজ ও মাজুজ অংশে ভ্রমণ করেন। চীনের অনেক প্রশংসা করলেও চীন যে তাকে কোনভাবেই বিমোহিত করতে পারেনি তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় তার উক্তি থেকেই-
কেন যেন চীন নামের দেশটি আমাকে আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হল। দুঃখ হল এত বিশাল একটি দেশ বিধর্মীদের কবজায় আটকা পড়ে আছে বলে। যখনই আমি বাসার বাইরে যেতাম, খেয়াল করতাম কোনদিকে কোনরকম বিদ্রোহের আভাস পাওয়া যায় কি না, তারপর হতাশ হয়ে ফিরে আসতাম। দরজা বন্ধ করে নিজেকে ভিতরে আটকে রাখতাম। একান্ত প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হতাম না।[34]
চীনে ইবন বতুতা শামস-উদ-দিন নামে পরিচীত ছিলেন। তার বর্ণনায় চীনে তার কোন উপপত্নি থাকার কথা জানা না গেলেও বিভিন্ন ইতিহাসবিদের মতে চীনে তিনি একটি উপপত্নি গ্রহণ করেছিলেন। ধারণা করা হয় যে সেখান থেকেই ডিং (শামস-উদ-দিন থেকে পরিবর্তীত হয়ে চীনা ভাষায় “শিং-শু-ডিং”) পরিবারের উৎপত্তি।
[35] অবশেষে ১৩৪৬ সালে তিনি তার দেশ মরোক্কো ফেরৎ যাওয়ার উদ্দেশে সূলতানের দেওয়া একটি জাহাজে করে কুয়ানজু থেকে পশ্চিম দিকে রওনা দেন।
কুয়ানজু থেকে তিনি ভারত হয়ে মরোক্কোর পথে রওনা দেন ১৩৪৬ সালে। দুমাস জাহাজে কাটিয়ে তিনি সুমাত্রা পৌছান। সেখানে দুই মাস থেকে তিনি কাওলাম (ইতিহাসবিদদের মতে এটা বর্তমান মিয়ানমারের কোন বন্দর) বন্দর হয়ে তিনি ১৩৪৭ সালের এপ্রিলের শেষ দিকে ভারত পৌছান। ভারতে অবস্থান করার বদলে ফেরার পথে আরো একবার মক্কায় হজ্জ্ব করার পরিকল্পনা করেন কারণ তার ধারণা ছিল ভারতের সূলতান মোহাম্মদ বিন তুঘলক চীনা সম্রাটের কাছে পাঠানো উপটৌকোন হারিয়ে ফেলার জন্য তার প্রতি সদয় নাও হতে পারেন। ভারত থেকে অন্য একটি বাণিজ্যিক জাহাজে চড়ে ভারত মহাসাগর হয়ে তিনি মাসকাটের দিকে যাত্রা করেন। মাসকট থেকে হরমুজ প্রণালী হয়ে সিরাজ, ইস্পাহান হয়ে ১৩৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে বাগদাদ পৌছান। বাগদাদে পৌছে তিনি জানতে পারেন যে সেখানকার সূলতান আবু সাঈদের মৃত্যু হলে তার ফুপাতো ভাই শেখ হাসান তার সম্রাজ্য দখল করে নেন।
১৩৪৮ সালের শুরুতে তিনি সিরিয়ার ডামেস্কাসে পৌছান। সেখানকার স্থানীয় জাহিরিয়া একাডেমিতে তার সাথে মরোক্কোর তাঞ্জিয়ারের এক বিখ্যাত শেখের সাথে দেখা হয়ে যায়। তার কাছে থেকে ইবন বতুতা জানতে পারেন যে তার বাবা পনেরো বছর আগে মারা গেছেন তবে তার মা এখনও বেঁচে আছেন।[36] দামেস্কাসে তিনি ১৩৪৮ সালের শেষ পর্যন্ত থাকলেন। তখন সিরিয়া এবং গাজায় কালা জ্বরের মহামারী ছড়িয়ে পরেছে। ইবন বতুতা স্থানীয় কাজীর কাছ থেকে জানতে পারেন যে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা ২৪০০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি যখন হেবরন আর গাজা পৌছালেন তখন দেখলেন যে মহামারীর প্রোকোপ কিছুটা কমে প্রতিদিন গড়ে ১১০০ তে নেমে এসেছে। এই মহামারী থেকে বাঁচতে ইবন বতুতা প্রতিদিন রোজা রাখতেন। সেখান থেকে কায়রোতে যেয়ে সেখানেও দেখলেন মহামারী থামেনি। ইবন বতুতা কায়রো পৌছানোর আগে এখানে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা ২১,০০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।[37] কায়রো থেকে মিশরের সাঈদ বন্দর হয়ে ১৩৪৮ সালের ১৬ নভেম্বর তিনি মক্কা পৌছান। ১৩৪৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ পর্যন্ত হজ্জ্ব সেরে তিনি ফেজ হয়ে ঐ বছরেই তার নিজ দেশ তাঞ্জিয়ার পৌছান। তাঞ্জিয়ার পৌছে তিনি দেখতে পান যে তার মা ও পরলোক গমন করেছেন।[38]
তার নিজের শহর তাঞ্জিয়ারে পৌছে তিনি আসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায় তিন মাস শয্যাশায়ী থেকে সুস্থ হওয়ার পর ইবন বতুতা সূলতানের অণুরোধে যুদ্ধে (জিহাদে) অংশগ্রহণ করার জন্য রক্ষি বাহিনীতে যোগ দেন এবং সৈন্যবাহিনীর সাথে জাহাজে চড়ে আন্দালুসিয়ায় পৌছান।[39] স্পেনের খৃষ্টান শাষক আডফুনাস (Alfonso XI) দশ মাস ধরে জোবেল (জিব্রাল্টার) দখল এবং অবরোধ করে রেখেছিলেন। আডফুনাসের ধারণা ছিল যে অবরোধ করে রাখলে হয়তো মুসলিমরা পরাজিত হবে এবং দুর্গের সকলকে একসাথে বন্দি করা যাবে। কিন্তু আডফুনাস নিজেই কালাজ্বরের মহামারীতে আক্রান্ত হন এবং মারা যান। এতে করে মুসলিমদের আর আডফুনাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রয়োজন হয় না। যুদ্ধ করার প্রয়োজন না হওয়ায় ইবন বতুতা স্পেনের ভ্যালেনসিয়া এবং গ্রানাডা ভাল করে ঘুরে দেখার সুযোগ পান।
আল আন্দুস থেকে তিনি মরোক্কোতে ফেরৎ আসেন এবং আফ্রিকার এমন কিছু অঞ্চল পরিদর্শন করার ইচ্ছা পোষন করেন যেগুলো মুসলিম অধ্যুষিত কিন্তু তার এখনও সেগুলোতে যাওয়া হয় নি। তিনি মরোক্কোতে ফিরে কিছুকাল অবস্থান করে মারাক্কিস যান যেটা সাম্প্রতিক মহামারীতে একেবারে খালি হয়ে গেছে। তাই এর রাজধানী ফেজ শহরে স্থানান্তর করা হয়েছিল। সেখান থেকে পুনরায় তিনি তার নিজের শহর তাঞ্জিয়ার পৌছান।
প্রায় সমস্ত মুসলিম সম্রাজ্য ভ্রমণের পর আর একটি মাত্র মুসলিম দেশ ভ্রমণ বাকি ছিল তার, সেটি হল নিগ্রোল্যান্ড। ১৩৫১ সালের বসন্তে ইবন বতুতা সাহারা মরুভুমির উত্তরে সিজিলমাসার উদ্দেশ্যে ফেজ নগরী ত্যাগ করেন।[40] সিজিলমাসাতে তিনি কয়েকটি উট কেনেন এবং প্রায় চার মাস কাটান। সেখান থেকে ১৩৫২ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি লবণের খনির শহর তাঘাজার (Taghaza) উদ্দেশ্যে রওনা দেন। প্রায় পঁচিশ দিন পর সেখানে পৌছেন। ইবন বতুতা বর্ণনা মতে সেখানকার ঘরবাড়ি এবং মসজিদগুলো লবণের ব্লক দিয়ে তৈরী আর ছাদগুলো তৈরী ছিল উটের চামড়া দিয়ে। সেই এলাকায় গাছপালা তেমন একটা ছিল না আর এখানকার পানি অত্যন্ত লবণাক্ত ছিল তাই ইবন বতুতা তাঘাজাতে খুব কম সময় কাটান।
তাঘাজাতে প্রায় দশদিন অতীবাহিত করার পর বিরাট সাহারা মরুভূমি পার হবার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তিনি তাসারাহলার একটি মরূদ্যানে তিন দিন অবস্থান করেন এবং মরুভূমির জন্য পর্যাপ্ত রসদ ও পানি সংগ্রহ করেন। তাসারাহলা থেকে যাত্রা শুরু করে আওয়ালাতায় একবার যাত্রাবিরতি দিয়ে ট্রান্স সাহারান বাণিজ্য রুটের দিকে রওনা দেন। সিজিলমাসা থেকে এই রাস্তায় প্রায় ১৬০০ কি.মি. সাহারা মরুভূমি পার হতে তার প্রায় দুই মাস লাগে। নাইজার নদীর তীরে মালি সম্রাজ্যে পৌছে তিনি সূলতানের সাথে সাক্ষাত করেন। তৎকালীন মালি সম্রাজ্যের সূলতান ছিলেন মানসা সুলায়মান[41](মানসা একটি উপাধি অর্থ- সূলতান, এবং তার নাম ছিল সুলায়মান) যিনি ১৩৪১ সাল থেকে এখানকার সূলতান হিসেবে আছেন। মানসা সূলতান কিপ্টেমির জন্য কুখ্যাত ছিলেন। এখানকার স্থানীয়দের আতিথিওতা ইবন বতুতার কাছে মনমুগ্ধকর মনে হলেও সূলতানের আতিথিওতা খুব একটা পছন্দ হল না তার। ইবন বতুতার বর্ণনা মতে এখানকার মানুষ ধর্মভীরু হলেও এখানকার নারীরা ইসলামী পর্দাপ্রথা মানতেন না। তারা সকলেই এমনকি সুলতানের কন্যারাও সকলের সামনে বিবস্ত্র হয়ে ঘুরে বেড়াতো। মালিতেই ইবন বতুতা সার্বপ্রথম জলহস্তি দেখেন। মালিতে আট মাস অবস্থান করে তিনি তার কাফেলা নিয়ে তিম্বুক্তের দিকে রওনা হন। তিম্বুক্ত থেকে তিনি নাইজার নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত গাঁও শহরে যান। গাঁও শহরে অবস্থানকালে তিনি মরোক্কোর সম্রাট আবু ইনান ফারিসের একটি পত্র পান যেখানে তাকে মরোক্কো ফেরৎ যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছিল। সম্রাটের আদেশ পাওয়া মাত্রই ইবন বতুতা তার কাফেলা তৈরী করেন এবং মরোক্কোর উদ্দেশ্যে রওনা হন। ১৩৫৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি মরোক্কোর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন এবং ১৩৫৪ সালের শুরুর দিকে তার জন্মভূমিতে শেষবারের মত পদার্পণ করেন।
মরোক্কোর ফেজ নগরীতে গিয়ে ইবন বতুতা সুলতান আবু ইনান ফারিজ এবং তার সভাসদদের কাছে তার সমস্ত ভ্রমণ কাহিনী খুলে বলেন।[42] তার সমসাময়িক আরেক ঐতিহাসিক ইবন খালদুনের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে তারা সেসব বিশ্বাস করেন নি। তবে গল্প বলার ফলে অন্য দিক থেকে লাভ হয়েছিল ইবন বতুতার। উজিরদের মধ্য থেকে একজন ক্ষমতাধর সমর্থক জুটে গিয়েছিল তার। তার চাপে পড়ে সুলতান নিজের একান্ত সচীবদের একজন ইবন জুজাইকে তার ভ্রমণের বিস্তারিত লিখে রাখার নির্দেশ দেন। শুরু হয় বলা ও লিখার পর্ব। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে ইবন জুজাই ইবন বতুতার প্রতিটি কথা ও বর্ণনা হুবহু লিপিবদ্ধ করেন নি। তবে আরবি নাম ও জায়গার নামের ব্যাপারে অনেক সচেতন ছিলেন ইবন জুজাই। অনেক ক্ষেত্রেই তার সম্পাদনায় ত্রুটি পাওয়া গেছে। লেখার ধরন সাধারণ কিন্তু তার মধ্যে কিছু স্থানে কবিতার ছত্র যোগ করে লেখায় বৈচিত্র আনতে চেষ্টা করেছেন। কোথাও কোথাও আবার নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথাও জুড়ে দিয়েছেন। ইবন জুবাইর নামে আন্দালুসিয়ার এক পণ্ডিত দ্বাদশ শতাব্দীতে মিশর হিজাজ, সিরিয়া এবং পূর্বের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। ইবন বতুতার যেসকল ভ্রমণ পথ ও বর্ণনা ইবন জুবাইরের সাথে মিলে যায় সে জায়গায় ইবন জুজাই নতুন কোন কাহিনী না লিখে ইবন জুবাইরের ভ্রমণের বর্ণনাই তুলে ধরেছেন।
অবশেষে ১৩৫৫ সালের ৯ই ডিসেম্বর মৌখিক বর্ণনা শেষ হলে “রিহলা” নামক বইটি লিপিবদ্ধ করার কাজ শেষ হয়। রিহলা কথাটির সারমর্ম হল “মুসলিম সম্রাজ্য, এর শৌর্য, শহর এবং এর গৌরবান্বিত পথের প্রতি উৎসাহিদের জন্য একটি দান” ( আরবি:"تحفة النظار في غرائب الأمصار وعجائب الأسفار ")
ইবন জুজাই এর মতে ইবন বতুতা নিজেই বলেছেন "আল্লাহর রহমতে সমগ্র পৃথিবী ভ্রমণের মনঃকামনা পূর্ণ হয়েছে যেটা কোন সাধারণ মনুষের পক্ষে সম্ভব না।" বইয়ের শেষে ইবন জুজাই যোগ করেন
এখানে শেষ হল সফর বর্ণনার, যেটাকে আমি শেখ আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইবন বতুতার বয়ান থেকে কিছুটা সংক্ষেপিত করে লিপিবদ্ধ করেছি। যে কোন বোধসম্পন্ন মানুষ সহজেই বুঝবেন তিনি ছিলেন যুগের পরিব্রাজক। যদি কেউ বলেন যে তিনি ছিলেন মুসলমান সম্প্রদায়ের পরিব্রাজক তাহলে তিনি একটুও বাড়িয়ে না বলার দায়ে অভিযুক্ত হবেন।[43]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.