Remove ads
এশিয়ার সার্বভৌম রাষ্ট্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। এটি ১৩টি রাজ্য ও তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। দেশটি দক্ষিণ চীন সাগর দ্বারা পূর্ব-পশ্চিমে দুইটি অঞ্চলে বিভক্ত, যেগুলি একে অপরের থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। এগুলি হল এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে অবস্থিত পশ্চিম মালয়েশিয়া বা উপদ্বীপীয় মালয়েশিয়া এবং বোর্নিও দ্বীপের উত্তরাংশে অবস্থিত পূর্ব মালয়েশিয়া। উপদ্বীপীয় মালয়েশিয়ার সাথে উত্তরে থাইল্যান্ডের স্থল- ও সমুদ্র সীমান্ত আছে, দক্ষিণে দ্বীপরাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের সাথে, এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের সাথে সমুদ্র সীমান্ত আছে। উপদ্বীপীয় মালয়েশিয়ার ভেতর দিয়ে উত্তর-দক্ষিণে একাধিক পর্বতশ্রেণী প্রসারিত হয়েছে। পূর্ব মালয়েশিয়ার সাথে উত্তরে ব্রুনাই ও দক্ষিণে ইন্দোনেশিয়ার স্থল- (বোর্নিও দ্বীপের দক্ষিণাংশে অবস্থিত কালিমান্তান প্রদেশের সাথে) ও সমুদ্র সীমান্ত আছে এবং ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের সমুদ্র সীমান্ত আছে। কুয়ালালামপুর মালয়েশিয়ার জাতীয় রাজধানী, বৃহত্তম নগরী ও কেন্দ্রীয় সরকারের আইনপ্রণয়ণ বিভাগের (সংসদ) অধিষ্ঠানস্থল। অন্যদিকে পুত্রজায়া শহরটি মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক কেন্দ্র, যেখানে সরকারের নির্বাহী বিভাগ (মন্ত্রীসভা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রণালয়সমূহ, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাসমূহ) এবং বিচার বিভাগ উভয়েই অবস্থিত। মালয়েশিয়ার জনসংখ্যাত ৩ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি, ফলে এটি বিশ্বের ৪৩তম সর্বাধিক জনবহুল দেশ। ইপোহ, ক্লাং, শাহ আলম, জোহোর বাহু, পেতালিং জায়া, সেবেরাং পেরাই ও কাজাং আরও কয়েকটি প্রধান শহর। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় (ক্রান্তীয়) অঞ্চলে অবস্থিত মালয়েশিয়াতে সারা বছর উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করে ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ১ লক্ষ ৯২ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের অতিবৃষ্টি অরণ্যের অধিকারী (যা দেশের আয়তনের অর্ধেকেরও বেশি) মালয়েশিয়া বিশ্বের ১৭টি মহাবিচিত্র দেশগুলির একটি; এখানে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় বন্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী আছে। মালয়েশিয়ার জোহোর রাজ্যের তানজুং পিয়াই শহরটি ইউরেশিয়া মহাদেশের সর্বদক্ষিণ বিন্দু।
এই নিবন্ধটিকে উইকিপিডিয়ার জন্য মানসম্পন্ন অবস্থায় আনতে এর বিষয়বস্তু পুনর্বিন্যস্ত করা প্রয়োজন। (সেপ্টেম্বর ২০২২) |
মালয়েশিয়া | |
---|---|
রাজধানী | কুয়ালালামপুর ৩°৮′ উত্তর ১০১°৪১′ পূর্ব পুত্রজায়া (প্রশাসনিক) ২.৯৪৩০৯৫২° উত্তর ১০১.৬৯৯৩৭৩° পূর্ব |
বৃহত্তম নগরী | কুয়ালালামপুর |
সরকারী ভাষা এবং জাতীয় ভাষা | মালয়[n ১][n ২][n ৩] |
স্বীকৃত ভাষা | ইংরেজি |
নৃগোষ্ঠী (২০১৮) | |
ধর্ম |
|
জাতীয়তাসূচক বিশেষণ | মালয়েশীয় |
সরকার | সংযুক্ত সংসদীয় সাংবিধানিক নির্বাচনী রাজতন্ত্র |
• রাজা | সুলতান ইব্রাহিম |
আনোয়ার ইব্রাহিম | |
আইন-সভা | সংসদ |
• উচ্চকক্ষ | দেওয়ান নেগারা (সিনেট) |
• নিম্নকক্ষ | দেওয়ান রাকিয়াত (প্রতিনিধিসভা) |
যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা | |
৩১ আগস্ট ১৯৫৭ | |
২২ জুলাই ১৯৬৩ | |
• উত্তর বোর্নিওর স্বায়ত্তশাসন | ৩১ আগস্ট ১৯৬৩ |
• মালয়েশিয়ার ঘোষণা | ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৬৩ |
আয়তন | |
• মোট | ৩,৩০,৮০৩ কিমি২ (১,২৭,৭২৪ মা২) (৬৭তম) |
• পানি (%) | ০.৩ |
জনসংখ্যা | |
• ২০২৪ আনুমানিক | ৩৪,৫৬৪,৮১০ (৪৩তম) |
• ২০২০ আদমশুমারি | ৩২,৭৩০,০০০[৪] |
• ঘনত্ব | ৯২/কিমি২ (২৩৮.৩/বর্গমাইল) (১১৬তম) |
জিডিপি (পিপিপি) | ২০২০ আনুমানিক |
• মোট | $৯০০.৪২৬ বিলিয়ন[৫] (৩০তম) |
• মাথাপিছু | $২৭,২৮৭[৫] (৫১তম) |
জিডিপি (মনোনীত) | ২০২০ আনুমানিক |
• মোট | $৩৩৬.৩৩০ বিলিয়ন[৫] (৩৬তম) |
• মাথাপিছু | $১০,১৯২[৫] (৬০তম) |
জিনি (২০১৫) | ৪১[৬] মাধ্যম |
মানব উন্নয়ন সূচক (২০১৯) | ০.৮১০[৭] অতি উচ্চ · ৬২তম |
মুদ্রা | রিংগিট (RM) (MYR) |
সময় অঞ্চল | ইউটিসি+৮ (এমএসটি) |
পর্যবেক্ষণ করা হয়নি | |
তারিখ বিন্যাস | dd-mm-yyyy |
গাড়ী চালনার দিক | বাম |
কলিং কোড | +৬০ |
ইন্টারনেট টিএলডি | .my |
|
ঐতিহাসিক মালয় রাজ্যগুলি মালয়েশিয়ার উৎস। এগুলি এবং ব্রিটিশ প্রণালী বন্দোবস্ত (স্ট্রেইট সেটেলমেন্টস) নামক আশ্রিত অঞ্চলটি ১৮শ শতক থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ মালয় এবং অন্যান্য নিকটবর্তী ব্রিটিশ ও মার্কিন উপনিবেশ জাপান সাম্রাজ্য দখলে নিয়ে নেয়।[৮] তিন বছর জাপানি দখলে থাকার পরে উপদ্বীপীয় মালয়েশিয়া সংক্ষিপ্তকালের জন্য ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত মালয় ইউনিয়ন নামে ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯৪৮ সালে এটিকে ফেডারেশন অভ মালয় নামে পুনর্গঠন করা হয়। ১৯৫৭ সালের ৩১শে আগস্ট দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করে। ১৯৬৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর স্বাধীন মালয় তৎকালীন ব্রিটিশ রাজ-উপনিবেশ উত্তর বোর্নিও, সারাওয়াক ও সিঙ্গাপুরের সাথে একত্রিত হয়ে মালয়েশিয়া গঠন করে। ১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে সিঙ্গাপুরকে ফেডারেশন থেকে বের হয়ে যায় এবং একটি পৃথক ও স্বাধীন দেশে পরিণত হয়।[৯]
মালয়েশিয়া একটি বহুনৃগোষ্ঠীয় ও বহুসাংস্কৃতিক দেশ এবং দেশটির রাজনীতিতে এর তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব পড়েছে। দেশটির জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নৃগোষ্ঠীয়ভাবে মালয়, যারা প্রধানত মালয় ভাষায় কথা বলে ও ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আরও আছে সংখ্যালঘু চীনা (প্রায় এক-চতুর্থাংশ), ভারতীয় (প্রধানত তামিলভাষী) ও আদিবাসী নৃগোষ্ঠী। দেশের সরকারি ভাষা হল মালয়েশীয় মালয় ভাষা, যা মালয় ভাষার একটি প্রমিত রূপ। ইংরেজি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। মালয়েশিয়ার সংবিধানে ইসলামকে সরকারি ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলেও সেটিতে অ-মুসলমানদেরকে ধর্মচর্চার স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার সরকার ওয়েস্টমিনস্টার সংসদীয় ব্যবস্থার আদলে তৈরি করা হয়েছে, আর যুক্তরাজ্যের "কমন" আইনব্যবস্থা দেশটির আইনি ব্যবস্থার ভিত্তি। রাষ্ট্রপ্রধান হলেন একজন নির্বাচিত রাজশাসক, যাঁকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নয়জন রাজ্য সুলতানের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান।
ঐতিহ্যগতভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ (যেমন পাম তেল, প্রাকৃতিক রবার ও টিন) মালয়েশিয়ার অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তবে দেশটিতে বাণিজ্য, পর্যটন ও চিকিৎসা পর্যটন খাতের প্রসার ঘটছে। কৃষিখাতে উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে ধান, কোকো, গোলমরিচ, নারিকেল ও কলা উল্লেখ্য; সমুদ্র থেকে মাছ এবং অতিবৃষ্টি অরণ্য থেকে কাঠ আহরণ করা হয়। দেশটিকে একটি নব্য শিল্পায়িত বাজার অর্থনীতির দেশ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা তুলনামূলকভাবে উন্মুক্ত ও রাষ্ট্রমুখী ধরনের। মালয়েশিয়া ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওপেক), পূর্ব এশিয়া সম্মেলন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহের সংঘ আসিয়ানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়া এটি জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন, কমনওয়েলথ এবং এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার সদস্য।
প্রাক-ঔপনিবেশিক মালয়েশিয়া ছিল 'ভারতীয় রাজ্যের' অংশ যেমন শ্রীবিজয়া , কদারম এবং মাজাপাহিত , যা বৃহত্তর ভারত নামে পরিচিত একটি সাংস্কৃতিক অঞ্চলের অংশ ছিল। এমন একটি সম্ভাবনা রয়েছে যে ভারত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে অভিবাসনের প্রথম তরঙ্গ কলিঙ্গের দিকে অশোকের আক্রমণ এবং দক্ষিণ দিকে সমুদ্রগুপ্তের অভিযানের সময় ঘটেছিল।
প্রাক-ঔপনিবেশিক মালয়েশিয়া ছিল 'ভারতীয় রাজ্যের' অংশ যেমন শ্রীবিজয়া , কদারম এবং মাজাপাহিত , যা বৃহত্তর ভারত নামে পরিচিত একটি সাংস্কৃতিক অঞ্চলের অংশ ছিল। এমন একটি সম্ভাবনা রয়েছে যে ভারত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে অভিবাসনের প্রথম তরঙ্গ কলিঙ্গের দিকে অশোকের আক্রমণ এবং দক্ষিণ দিকে সমুদ্রগুপ্তের অভিযানের সময় ঘটেছিল।
মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থা একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের কাঠামোতে পরিচালিত হয়। রাজা হলেন রাষ্ট্রের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকার প্রধান। মালয়েশিয়ার বর্তমান রাজা সুলতান আব্দুল্লাহ।[১০] মালয়েশিয়ার সরকার ও ১১টি অঙ্গরাজ্য সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] সরকার এবং আইনসভার দুই কক্ষের (দেওয়ান নেগারা ও দেওয়ান রাকিয়াত) উপর যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ন্যস্ত। বিচার বিভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ অপেক্ষা স্বাধীন, তবে নির্বাহী বিভাগ বিচারক নিয়োগদানের মাধ্যমে বিচার বিভাগের উপর কিছুটা প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
মালয়েশিয়ায় ৩ টি ফেডারেল টেরিটরি ও ১৩টি রাজ্য রয়েছে। ৩ টি ফেডারেল টেরিটরি হচ্ছে
১৩টি রাজ্য যথাক্রমে :
সাংবিধানিক রাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় প্রাচীন ঐতিহ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় অভিভাবক হিসেবে রাজা থাকেন। রাজা পঞ্চম সুলতান মোহাম্মদের পদত্যাগের পর সুলতান আব্দুল্লাহ সুলতান আহমাদ শাহ নতুন রাজা হিসেবে নির্বাচিত হন। প্যাহাং রাজ্যের শাসক ৫৯ বছর বয়সী সুলতান আব্দুল্লাহ ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং তিনি মালয়েশিয়ার বর্তমান রাজা।[১১]
মেয়াদোত্তীর্ণ তথ্যের কারণে এই নিবন্ধটির অংশসমূহের (যেগুলি এই অংশটুকুর সাথে সম্পর্কিত) তথ্যগত সঠিকতা সম্ভবত মানসম্মত নয়।। |
ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ (জন্ম জুলাই ১০, ১৯২৫) মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রি ও আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি। তিনি ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন দল পর পর পাঁচবার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। তিনি এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৩ সালের ৩০শে অক্টোবর তিনি স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন। অবসর গ্রহণের দীর্ঘ পনের বছর পর ৯২ বছর বয়েসে প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ব্যাপক দুর্নীতি সংশ্লিষ্টতার কারণে মাহাথির মোহাম্মদ আবারও আসেন রাজনীতিতে। ২০১৮ সালের ৯ মে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনে জয়ের পরদিন ১০ মে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
মুহিউদ্দিন ইয়াসিন তিনি মালয়েশিয়ার অষ্টম প্রধানমন্ত্রি। তিনি ১ মার্চ ২০২০ প্রধানমন্ত্রি হন।
মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তিনি দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। [১২]
মালয়েশিয়ার অর্থনীতি অপেক্ষাকৃত মুক্ত কিন্তু রাষ্ট্রকেন্দ্রিক। বর্তমানে মালয়েশিয়া একটি উঠতি শিল্পউন্নত বাজার অর্থনীতি বলে বিবেচিত।[১৩][১৪] সরকার বিভিন্ন ম্যাক্রো-অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদিও এই প্রভাব দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। মালয়েশিয়ার অর্থনীতি মূলত মুক্তবাজার অর্থনীতি। চীন , সিঙ্গাপুর ও আমেরিকা দেশটির প্রধান বাণিজ্য সহযোগী দেশ।
মালয়েশিয়া আসিয়ান এবং ওআইসি এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।এছাড়াও জাতিসংঘ, জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম) এবং কমনওয়েলথ এর সক্রিয় সদস্য হিসেবে মালয়েশিয়ার সরব উপস্থিতি রয়েছে। মালয়েশিয়ার বৈদেশিক নীতি নিরপেক্ষতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে দেশটি বদ্ধ পরিকর। এছাড়াও ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জাতীয় সম্পদ বা জাতীয় যে কোন ইস্যুতে মালয়েশিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত দৃঢ়।
মালয়েশিয়ার সাথে ইসরায়েলের কোন প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এবং ইসরায়েলকে কখনও স্বীকৃতি দেয় নি।
ফিলিস্তিনের সাথে মালয়েশিয়ার সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনকে মালয়েশিয়া নৈতিক সমর্থন দিয়ে আসছে । দখলদার ইসরায়েলী সৈন্যদের সকল প্রকার নির্যাতন,আক্রমণ এবং ফিলিস্তিনের প্রতি ইসরায়েলের দমন-পীড়নমূলক নীতিকে মালয়েশিয়া সুস্পষ্টভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
মালয়েশিয়া পড়াশোনার দিক দিয়ে বেশ উন্নত। তবে বহিরাগত ছাত্রছাত্রীদের জন্য বেশ ব্যয়বহুল।
মালয় ভাষা মালয়েশিয়ার সরকারি ভাষা। এখানকার প্রায় অর্ধেক সংখ্যক লোক মালয় ভাষাতে কথা বলে। মালয়েশিয়াতে আরও প্রায় ১৩০টি ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে চীনা ভাষার বিভিন্ন উপভাষা, বুগিনীয় ভাষা, দায়াক ভাষা, জাভানীয় ভাষা এবং তামিল ভাষা উল্লেখযোগ্য। বাজার মালয় ভাষা বহুজাতিক বাজারের ভাষা হিসেবে প্রচলিত এবং সাবাহ প্রদেশে সার্বজনীন ভাষা বা লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা হিসেবে ব্যবহৃত। আনুষ্ঠানিক ভাষা বাহাসা মালয়েশিয়া। তবে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ নিজ নিজ ভাষায়কথা বলে। দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে স্কুল পর্যায় থেকেই ইংরেজি শেখানো হয়। দৈনন্দিন যোগাযোগ এবং ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ইংরেজির বহুল ব্যবহার আছে।
দাপ্তরিকভাবে মালয়েশিয়া একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হলেও ইসলাম এর আনুষ্ঠানিক ধর্ম। মালয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩% ইসলাম ধর্মাবলম্বী। পাশাপাশি ১৯.৮% লোক বৌদ্ধ, ৯.২% লোক খ্রিষ্টান, ৬.৩% লোক হিন্দু এবং বাকিরা অন্যান্য ধর্ম পালন করে থাকে। সকল ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারেন এখানে।
মালয়েশিয়ায় সুন্নী মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ । মালয়েশিয়া শরিয়াহ ভিত্তিক সকল কাজে ‘শাফেয়ী’ মাযহাবের অনুসরণ করে থাকে।
ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় আলোচনা কিংবা যেকোন ধরনের সমস্যা নিষ্পত্তিতে ‘শরীয়াহ আদালত’র সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। তবে শরিয়াহ আদালতের কার্যক্রম এবং সিদ্ধান্ত বিয়ে,সম্পত্তির উত্তরাধিকার,বিয়ে বিচ্ছেদ, ধর্মীয় আলোচনা প্রভৃতির মাঝেই সীমাবদ্ধ।
এশিয়ার খাদ্য স্বর্গ হিসেবে পরিচিত দেশটি। নানা বর্ণ, ধর্ম আর সংস্কৃতির মানুষের অবস্থানের ফলে এখানকার খাবারও বেশ বৈচিত্রময়। মালয়, চাইনীজ এবং ভারতীয় নানা ধরনের খাবার বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং পথের পাশের স্টলে খুব কম দামে পাওয়া যায়। এছাড়া রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য এবং থাইল্যান্ডের খাবার। নানা সংস্কৃতির মানুষের নানা উৎসবের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যটি ফুটে ওঠে।
মালয়েশিয়ায় রয়েছে বহুভাষী,বহুজাতিক নৃগোষ্ঠী। ফলে অসংখ্য জাতির সহস্র ধরনের রীতি-নীতি ও আচরণের মিশেলে মালয়েশিয়ার সংস্কৃতি হয়ে ওঠেছে বৈচিত্র্যময়। তবে মালয়েশিয় সংস্কৃতির মূল ভিত্তি হলো সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও সমাজের আবহমান কাল ধরে পালন করে আসা বৈচিত্রময় দৃষ্টিভঙ্গী ও আচার-আচরণ। পাশাপাশি এটি ইসলামি সংস্কৃতির সাথে রক্ষা করেছে অভূতপূর্ব মেলবন্ধন। মালয়েশিয়ার সংস্কৃতিতে মালয় ভাষাকে সবার উপরে স্থান দেয়া হয়েছে।
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে মালয়েশিয়ার সংস্কৃতির এবং ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতি খুবই ঘনিষ্ঠ। প্রতিবেশী দেশ বলে পারষ্পরিক সাংস্কৃতিক উপাদানের বিনিময় এবং বিষয়বস্তুর ধারণে ইন্দোনেশীয়া এবং মালয়েশিয়া পরস্পর পরস্পরকে অনেক ক্ষেত্রেই প্রভাবিত করেছ। তবে তা , সত্ত্বেও সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা ও আত্নপরিচয়ের মৌলিক বিশ্বাস পালন,সংরক্ষণে মালয়েশিয়া বদ্ধ পরিকর।
ফুটবল মালয়েশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। মালয়েশিয়ার জাতীয় খেলা ব্যাডমিন্টন। ফুটবলের পরেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে ব্যাডমিন্টন। এছাড়াও হকি, টেনিস,ঘোড়দৌড়,মার্শাল আর্ট এখানে জনপ্রিয়। ২০৩৪ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ফুটবলের অন্যতম আয়োজক হতে পারে দেশটি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় মালয়েশিয়ার সরব উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। মালয়েশিয়া সর্বপ্রথম ১৯৫৬ সালে মেলবোর্ন অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়। মালয়েশিয়া এ পর্যন্ত অলিম্পিকে ৬টি মেডেল জিতেছে যার ৫টিই এসেছে ব্যাডমিন্টন থেকে।
মালয়েশিয়াতে তিন ধরনের নাগরিকত্ব ব্যবস্থা রয়েছে প্রথম হল যারা আদি নাগরিক তারা। তাদেরকে মালয় ভাষায় আস্লি বলে , তারা হচ্ছে মালয়েশিয়ার প্রথম পর্যায়ের নাগরিক । দ্বিতীয়ত রয়েছে যারা নগর সভ্যতার যুগ থেকে মালয়েশিয়ার শহর বা নগরে বাস করে, তারা মূলত আস্লি দের থেকেই এসেছে তবে বহু আগে তাদের আদি বাসস্থান ত্যাগ করেছে। তৃতীয়ত রয়েছে যারা বিভিন্ন দেশ থেকে গিয়ে ঐখানে স্থায়ী ভাবে জীবন যাপন করছে তারা । এই শ্রেণীর মধ্যে আছে চীনা, থাই, ভিয়েতনামি, তামিল, ইন্দোনেশিয়ান বাংলাদেশি, পাকিস্তানি। তাদের মধ্যে এখন সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে চীনা মালয়েশিয়ানরা, মালয়েশিয়ার বেশীর ভাগ বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন তাদের মালিকানাধীন। আর তামিলদের বেশীর ভাগ ট্যাক্সি চালক আর কিছু আছে স্বর্ণ ব্যবসায়ী।
মালায়েশিয়ায় এখন সাধারণত বহিরাগতদের নাগরিকত্ব দেয়া হয় না। তবে ঐখানে জন্ম হলে বা কোন মালয় নাগরিক কে বিয়ে করলে মালায়সিয়ার নাগরিকত্ব পাওয়া যায় ।
সেক্ষেত্রে মালায়েশিয়ার পাসপোর্ট দেয়া হয়। এবং অন্য সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়।
রাষ্ট্রীয় ভাবে সকলেই সমান সুযোগ সুবিধা ভোগ করে।
মালয়েশিয়ার প্রধান সংবাদপত্রগুলি হল উতুসান মালয়েশিয়া, দ্য স্টার এবং দ্য মালয় মেইল। এগুলির সবগুলিরই ইন্টারনেট সংস্করণ আছে। এগুলিতে স্থানীয় ইস্যু, রাজনীতি, ব্যবসা, বিনোদন এবং সংস্কৃতির উপর সংবাদ ও নিবন্ধ থাকে।
উতুসান মালয়েশিয়া ইংরেজি ও মালয় উভয় ভাষাতেই প্রকাশিত হয়। এটি ১৯৩৯ সালে সিঙ্গাপুরে যাত্রা শুরু করে। ১৯৫৮ সালে মালয়েশিয়া ব্রিটিশদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করলে তারা কুয়ালালামপুরে স্থানান্তরিত হয়। এটি মালয়েশিয়ার প্রথম অনলাইন পত্রিকা হিসেবেও ইন্টারনেটে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে এটি মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বেশি পঠিত সংবাদপত্র।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.