গেরহার্ড মুলার (জার্মান: Gerd Müller, জার্মান উচ্চারণ: [ˈɡɛɐ̯t ˈmʏlɐ]; ৩ নভেম্বর ১৯৪৫ – ১৫ আগস্ট ২০২১; গের্ড মুলার নামে সুপরিচিত) একজন জার্মান পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় এবং ম্যানেজার ছিলেন। ভক্তদের কাছে ডার বোম্বার (জাতির বোমারু)[2] ডাকনামে পরিচিত মুলার তার খেলোয়াড়ি জীবনের অধিকাংশ সময় বায়ার্ন মিউনিখ এবং পশ্চিম জার্মানি জাতীয় দলের হয়ে আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছিলেন। তিনি মূলত কেন্দ্রীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেছিলেন। বিশেষ করে ছয় গজ বাক্সের নিকটে এসে নির্ভুল গোল করার জন্য বিখ্যাত এই আক্রমণভাগের খেলোয়াড় বহু ফুটবল খেলোয়াড় এবং বিশেষজ্ঞদের দ্বারা ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা গোলদাতা হিসেবে বিবেচিত হন।[2] ২০২২ সালে, তার স্মরণে ফ্রান্স ফুটবল মৌসুমের শীর্ষ গোলদাতার পুরস্কারটি গের্ড মুলার শিরোপা নামে নামকরণ করেছে।[3]
ব্যক্তিগত তথ্য | ||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পূর্ণ নাম | গেরহার্ড মুলার | |||||||||||||||||||
জন্ম | ৩ নভেম্বর ১৯৪৫ | |||||||||||||||||||
জন্ম স্থান |
নর্ডলিঙ্গেন, মিত্র-অধিকৃত জার্মানি, পশ্চিম জার্মানি | |||||||||||||||||||
মৃত্যু | ১৫ আগস্ট ২০২১ ৭৫) | (বয়স|||||||||||||||||||
উচ্চতা | ১.৭৬ মিটার (৫ ফুট ৯+১⁄২ ইঞ্চি)[1] | |||||||||||||||||||
মাঠে অবস্থান | আক্রমণভাগের খেলোয়াড় | |||||||||||||||||||
যুব পর্যায় | ||||||||||||||||||||
১৯৫৮–১৯৬৩ | ১৮৬১ নর্ডলিঙ্গেন | |||||||||||||||||||
জ্যেষ্ঠ পর্যায়* | ||||||||||||||||||||
বছর | দল | ম্যাচ | (গোল) | |||||||||||||||||
১৯৬৩–১৯৬৪ | ১৮৬১ নর্ডলিঙ্গেন | ৩১ | (৫১) | |||||||||||||||||
১৯৬৪–১৯৭৯ | বায়ার্ন মিউনিখ | ৪৫২ | (৩৯৮) | |||||||||||||||||
১৯৭৯–১৯৮১ | ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্স | ৭১ | (৩৮) | |||||||||||||||||
মোট | ৫৫৫ | (৪৮৭) | ||||||||||||||||||
জাতীয় দল | ||||||||||||||||||||
১৯৬৬ | পশ্চিম জার্মানি অনূর্ধ্ব-২১ | ১ | (১) | |||||||||||||||||
১৯৬৬–১৯৭৪ | পশ্চিম জার্মানি | ৬২ | (৬৮) | |||||||||||||||||
অর্জন ও সম্মাননা
| ||||||||||||||||||||
* কেবল ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে |
১৯৫৮–৫৯ মৌসুমে, মাত্র ১৩ বছর বয়সে, জার্মান ফুটবল ক্লাব ১৮৬১ নর্ডলিঙ্গেনের যুব পর্যায়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে মুলার ফুটবল জগতে প্রবেশ করেছিলেন এবং এই দলের হয়ে খেলার মাধ্যমেই তিনি ফুটবল খেলায় বিকশিত হয়েছিলেন। ১৯৬৩–৬৪ মৌসুমে, জার্মান ক্লাব ১৮৬১ নর্ডলিঙ্গেনের মূল দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি তার জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন, যেখানে তিনি মাত্র ১ মৌসুম অতিবাহিত করেছিলেন; ১৮৬১ নর্ডলিঙ্গেনের হয়ে তিনি ৩১ ম্যাচে ৫১টি গোল করেছিলেন। অতঃপর ১৯৬৪–৬৫ মৌসুমে তিনি বায়ার্ন মিউনিখে যোগদান করেছিলেন, বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে তিনি ৪টি বুন্দেসলিগা শিরোপা এবং ৩টি ইউরোপিয়ান কাপ শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন। বায়ার্ন মিউনিখের ১৫ মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতায় ৬০৫ ম্যাচে ৫৬৩টি গোল করেছিলেন। সর্বশেষ ১৯৭৯–৮০ মৌসুমে, তিনি বায়ার্ন মিউনিখ হতে মার্কিন ক্লাব ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্সে যোগদান করেছিলেন; ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্সের হয়ে ৩ মৌসুম খেলার পর তিনি অবসর গ্রহণ করেছিলেন।
১৯৬৬ সালে, মুলার পশ্চিম জার্মানি অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে পশ্চিম জার্মানির বয়সভিত্তিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন। পশ্চিম জার্মানি অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে মাত্র ১ ম্যাচে অংশগ্রহণ করার পর, তিনি একই বছরে পশ্চিম জার্মানির হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিষেক করেছিলেন; পশ্চিম জার্মানির জার্সি গায়ে তিনি সর্বমোট ৬২ ম্যাচে ৬৮টি গোল করেছিলেন। তিনি পশ্চিম জার্মানির হয়ে সর্বমোট ২টি ফিফা বিশ্বকাপ (১৯৭০ এবং ১৯৭৪) এবং উয়েফা ইউরো ১৯৭২-এ অংশগ্রহণ করেছিলেন, যার মধ্যে ১৯৭২ এবং ১৯৭৪ সালে হেলমুট শনের অধীনে যথাক্রমে উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ফিফা বিশ্বকাপের শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন। পশ্চিম জার্মানির হয়ে তিনি প্রতি ম্যাচে গড়ে একটির চেয়ে অধিক গোল করেছেন এবং ২০২১ সালের ১১ই জুলাই অনুযায়ী, শীর্ষ ৪৮ খেলোয়াড়ের তুলনায় কম ম্যাচ খেলা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতাদের তালিকায় ২১তম স্থানে রয়েছেন; শীর্ষ গোলদাতাদের মধ্যে তার ম্যাচ প্রতি তৃতীয় সর্বোচ্চ গোল অনুপাত রয়েছে।
ব্যক্তিগতভাবে, মুলার বেশ কিছু পুরস্কার জয়লাভ করেছিলেন, যার মধ্যে ১৯৭০ সালে বালোঁ দ’অর[4] এবং ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ সালে বর্ষসেরা জার্মান ফুটবলারের পুরস্কার অন্যতম। এছাড়াও ১৯৭০ সালে মুলার বর্ষসেরা ইউরোপীয় ফুটবল খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন। পশ্চিম জার্মানির হয়ে ১৯৭০ ফিফা বিশ্বকাপে দশটি গোল করে তিনি শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে গোল্ডেন বুট জয়লাভ করেছেন। মুলার ফিফা বিশ্বকাপে ১৪ গোল করে ৩২ বছর ধরে সর্বকালের সর্বাধিক গোল করার রেকর্ড ধরে রেখেছিলেন।[5] ১৯৯৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ ফুটবল হিস্টোরি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্স (আইএফএফএইচএস) কর্তৃক অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান প্লেয়ার অব দ্য সেঞ্চুরি নির্বাচনে মুলার নবম এবং আইএফএফএইচএস-এর ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য সেঞ্চুরি নির্বাচনে তিনি ১৩তম স্থান অধিকার করেছিলেন।[6] ২০০৪ সালে পেলে কর্তৃক নির্ধারিত বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবিত কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের তালিকা, ফিফা ১০০ তালিকায় মুলার স্থান পেয়েছেন।[2] দলগতভাবে, মুলার সর্বমোট ১৬টি শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন, যার মধ্যে ১৪টি বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে এবং ২টি পশ্চিম জার্মানির হয়ে জয়লাভ করেছিলেন।
ক্লাব ফুটবল
বায়ার্ন মিউনিখ
মুলার তার নিজ শহরের ক্লাব ১৮৬১ নর্ডলিঙ্গেনের হয়ে খেলার মাধ্যমে ফুটবলে তার খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে মুলার বায়ার্ন মিউনিখে যোগদান করেছিলেন, যেখানে তিনি ভবিষ্যত প্রজন্মের তারকা খেলোয়াড় ফ্রান্ৎস বেকেনবাউয়ার এবং সেপ মাইয়ারের সাথে একত্রে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে জার্মান ফুটবলের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ক্লাব হয়ে উঠা ক্লাবটি তখনও জার্মানির পেশাদার ফুটবল লিগের দ্বিতীয় স্তর রেজিওনাললিগা সুডে প্রতিযোগিতা করতো। এক মৌসুম পর, বায়ার্ন মিউনিখ বুন্দেসলিগায় উত্তীর্ণ হয় এবং সফলতার এক ধারা শুরু করে। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে মুলার ১৯৬০ এবং ১৯৭০-এর দশকে বেশ কয়েকটি শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন: যার মধ্যে ৪টি জার্মান চ্যাম্পিয়নশিপ, ৪টি ডিএফবি-পোকাল, টানা ৩ বার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস কাপ (একই সাথে এই শিরোপাজয়ী প্রথম পশ্চিম জার্মান দল), ১টি আন্তঃমহাদেশীয় কাপ এবং ১টি ইউরোপিয়ান কাপ উইনার্স কাপ অন্যতম। মুলার ১৯৭৪ সালের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস কাপের ফাইনালের পুনঃখেলা এবং ১৯৭৫ সালের ফাইনালে গোল করেছিলেন।[7]
একজন সুযোগ-সন্ধানী গোলদাতা হিসেবে তিনি সাতবার জার্মানির শীর্ষ গোলদাতা এবং দুইবার ইউরোপীয় শীর্ষ গোলদাতা পুরস্কার জয়লাভ করেছেন। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ৪২৭টি বুন্দেসলিগা ম্যাচে মুলার সর্বমোট ৩৬৫টি গোল করেছেন, যা বুন্দেসলিগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ (২০২১ সালের আগস্ট মাস অনুযায়ী দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন রবের্ত লেভানদোভস্কি, যিনি মুলারের চেয়ে প্রায় ১০০ গোল পিছিয়ে রয়েছেন)।[7] ১৯৭১–৭২ মৌসুমে ৪০ গোল করে একক মৌসুমের সর্বোচ্চ গোল করে বুন্দেসলিগায় রেকর্ড গড়েছিলেন; তবে এই রেকর্ডের প্রায় বছর পর ২০২০–২১ মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখের খেলোয়াড় রবের্ত লেভানদোভস্কি ৪১ গোল করে উক্ত রেকর্ডটি ভেঙ্গে ফেলেছেন।[8] মুলার বায়ার্ন মিউনিখের ১৪ মৌসুমের মধ্যে সাতটিতে ম্যাচ প্রতি একটি গোল অথবা তার চেয়ে বেশি গড়ে গোল করেছিলেন। তিনি ১৯৭২ সালে ৮৫টি গোল করে এক বছরে সর্বাধিক গোল করার রেকর্ড গড়েছিলেন;[9] এর প্রায় ৪০ বছর পর ২০১২ সালে আর্জেন্টিনীয় ফুটবল খেলোয়াড় লিওনেল মেসি ৯১টি গোল করে রেকর্ডটি ভেঙ্গে ফেলেছেন।[10][11]
ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্স
বুন্দেসলিগায় ১৪ মৌসুম অতিবাহিত করার পর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেশাদার ফুটবল লিগের শীর্ষ স্তর উত্তর আমেরিকান সকার লিগের (এনএএসএল) ক্লাব ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্সে যোগদান করেছিলেন।[12] ১৯৮০ সালে উত্তর আমেরিকান সকার লিগের ফাইনালে ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্স উত্তীর্ণ হয়েছিল, তবে তার দল শিরোপা জয়লাভ করতে ব্যর্থ হয়।[13] তিনি এই দলের হয়ে ৩ মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতায় ৮০ ম্যাচে ৪০টি গোল করেছিলেন।
আন্তর্জাতিক ফুটবল
মুলার পশ্চিম জার্মানি অনূর্ধ্ব-২১ দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে পশ্চিম জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন; উক্ত দলের হয়ে তিনি মাত্র ১টি ম্যাচে ১টি গোল করেছিলেন।
১৯৬৬ সালের ১২ই অক্টোবর তারিখে, মাত্র ২০ বছর ১১ মাস ৯ দিন বয়সে, ডান পায়ে ফুটবল খেলায় পারদর্শী মুলার তুরস্কের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রীতি ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পশ্চিম জার্মানির হয়ে অভিষেক করেছিলেন। তিনি উক্ত ম্যাচের মূল একাদশে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন; ম্যাচটি পশ্চিম জার্মানি ২–০ গোলের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল।[14] পশ্চিম জার্মানির হয়ে অভিষেকের বছরে মুলার মাত্র ১ ম্যাচে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে অভিষেকের ৫ মাস ২৮ দিন পর, পশ্চিম জার্মানির জার্সি গায়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন; ১৯৬৭ সালের ৯ই এপ্রিল তারিখে, আলবেনিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথম গোলটি করার মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রথম গোলটি করেছিলেন।[15] একই ম্যাচে আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার প্রথম হ্যাট্রিকটি করেছিলেন; তিনি উক্ত ম্যাচের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং ষষ্ঠ গোলটি করেছিলেন।[15]
মুলার মেক্সিকোয় অনুষ্ঠিত ১৯৭০ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য হেলমুট শনের অধীনে ঘোষিত পশ্চিম জার্মানি দলে স্থান পাওয়ার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন।[16][17] ১৯৭০ সালের ৩রা জুন তারিখে, তিনি মরক্কোর বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে ফিফা বিশ্বকাপে অভিষেক করেছিলেন; ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে তিনি পশ্চিম জার্মানির হয়ে ম্যাচের জয়সূচক এবং ফিফা বিশ্বকাপে তার প্রথম গোলটি করেছিলেন।[18][19][20] উক্ত বিশ্বকাপে তিনি ৬ ম্যাচে ১০টি গোল করে আসরের শীর্ষ গোলদাতা হিসেবে তিনি গোল্ডেন বুট জয়লাভ করেছিলেন।[21][22][23] অতঃপর মুলার ১৯৭৪ ফিফা বিশ্বকাপের জন্য প্রকাশিত পশ্চিম জার্মানির ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন।[24][25] উক্ত বিশ্বকাপের ফাইনালে পশ্চিম জার্মানি নেদারল্যান্ডসকে ২–১ গোলে ব্যবধানে পরাজিত করে ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জয়লাভ করেছিল।[26][27] উক্ত বিশ্বকাপে তিনি পশ্চিম জার্মানির হয়ে ৭ ম্যাচে ৪টি গোল করেছিলেন।[28] মুলার তার খেলোয়াড়ি জীবনে সর্বমোট ২টি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন, যার মধ্যে তিনি ১৩টি ম্যাচে ১৪টি গোল করে ফিফা বিশ্বকাপে সর্বাধিক গোলের রেকর্ড করেছিলেন। তার এই রেকর্ডটি ২০০৬ ফিফা বিশ্বকাপ পর্যন্ত অক্ষত ছিল, কাকতালীয়ভাবে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত উক্ত বিশ্বকাপে ব্রাজিলীয় আক্রমণভাগের খেলোয়াড় রোনালদো ১৫টি গোল করার মাধ্যমে রেকর্ডটি ভেঙ্গে দিয়েছিলেন, তবে রেকর্ডটি ভাঙ্গতে তিনি মুলারের চেয়ে অধিক ম্যাচ খেলেছিলেন।[5]
১৯৭২ সালের ১৮ই জুন তারিখে মুলার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার ৫০তম গোলটি করেছিলেন, বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে উয়েফা ইউরো ১৯৭২-এর ফাইনালের প্রথম গোলটি করার মাধ্যমে তিনি এই কীর্তি অর্জন করেছিলেন।[29][30][31] ১৯৭৪ সালের ৭ই জুলাই তারিখে মুলার ২৮ বছর বয়সে পশ্চিম জার্মানির তার সর্বশেষ ম্যাচটি খেলে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর গ্রহণ করেছিলেন। পশ্চিম জার্মানির মিউনিখের মিউনিখ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ১৯৭৪ ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালের ৪৩তম মিনিটে রাইনার বনহফের অ্যাসিস্টে জার্মানির দ্বিতীয় এবং জয়সূচক গোলটি জার্মানিকে বিশ্বকাপ জয়লাভ করতে সহায়তা করেছিল।[26][32][33][34] ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর মুলার পশ্চিম জার্মানির হয়ে খেলা ছেড়ে দেন। বিশ্বকাপ জয় উদযাপনে জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের স্ত্রীদের উপস্থিত থাকার অনুমতি দেওয়া হলেও খেলোয়াড়দের স্ত্রীদের উপস্থিতিতে অনুমতি না দেয়ায় অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের সাথে তার ঝগড়া হয়েছিল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে, তার ৯ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে তিনি সর্বমোট ৬২ ম্যাচে ৬৮টি গোল জার্মানির সর্বকালের শীর্ষ গোলদাতায় পরিণত হয়েছিলে;[7] তবে ৪০ বছর পর ২০১৪ সালে মিরোস্লাভ ক্লোসা ৭১ গোল করার মাধ্যমে রেকর্ডটি ভেঙ্গে দিয়েছেন,[35][36] যদিও রেকর্ডটি ভাঙ্গতে ক্লোসা দ্বিগুণের বেশি ম্যাচ খেলেছিলেন। ক্লোসা ১৩২তম ম্যাচে তার ৬৯তম গোলটি করেছিলেন।[37] এছাড়াও তিনি ১টি করে ফিফা বিশ্বকাপ এবং উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়লাভ করেছিলেন।
অবসর
১৯৮২ সালে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানার পর, মুলার মন্দার মধ্যে পড়ে যান এবং মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। তবে বায়ার্ন মিউনিখে তার প্রাক্তন সঙ্গীরা তাকে মদ্য পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে যেতে রাজি করিয়েছিল। মদ্যপানের আসক্তি থেকে মুক্ত হওয়ার পর তারা তাকে বায়ার্ন মিউনিখ ২-এর সহকারী কোচের চাকরি হয়েছিল। গের্ড মুলার নামে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান আডিডাস দ্বারা প্রকাশিত পোশাকের একটি সংগ্রহও রয়েছে। এটি আডিডাস মৌলিক কাজের একটি অংশ। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে, নর্ডলিঙ্গেনের রিসার স্পোর্টপার্কের পরিবর্তন করে গার্ড-মুলার-স্টাডিওন করা হয়েছে, যেখানে মুলার তার খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেছিলেন।[38][39]
খেলার শৈলী
লেখক ডেভিড উইনার তার বই ব্রিলিয়ান্ট অরেঞ্জ: দ্য নিউরোটিক জিনিয়াস অব ডাচ ফুটবলে লিখেছেন, "মুলার ক্ষুদ্রকায়, বেঁটে, বিশ্রী চেহারার এবং উল্লেখযোগ্যভাবে দ্রুত ছিল না; তিনি কখনই একজন দুর্দান্ত ফুটবল খেলোয়াড়ের প্রচলিত রীতি পূরণ করেননি, তবে স্বল্প দূরত্বে তার মারাত্মক ত্বরণ, অসাধারণ হেড এবং অস্বাভাবিক গোল করার ক্ষমতা ছিল। তার ছোট পা তাকে মাধ্যাকর্ষণের প্রতি একটি নিম্ন কেন্দ্র প্রদান করেছিল, যেন তিনি ফাঁকা জায়গায় দ্রুত গতিতে নিখুঁত ভারসাম্যের সাথে ঘুরে যেতে পারতেন, একই ক্ষেত্রে অন্যান্য খেলোয়াড়গণ পড়ে যান। অসম্ভাব্য পরিস্থিতিতে গোল করার দক্ষতাও তার ছিল।"[40]
মুকার শিথিল আলগা বল পেতে এবং রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের অতিক্রম করার জন্য গতির চরম ত্বরণ এবং বিভ্রান্তিকর পরিবর্তন ব্যবহার করেছিলেন।[41] তার সতীর্থ ফ্রান্ৎস বেকেনবাউয়ার মুলারের অস্বাভাবিক গতির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন: "তার গতি অবিশ্বাস্য ছিল। প্রশিক্ষণে আমি তার বিরুদ্ধে খেলেছি এবং আমি কখনও সুযোগ পাইনি।"[42]
ব্যক্তিগত জীবন
গেরহার্ড মুলার ১৯৪৫ সালের ৩রা নভেম্বর তারিখে পশ্চিম জার্মানির মিত্র-অধিকৃত জার্মানির নর্ডলিঙ্গেনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানেই তার শৈশব অতিবাহিত করেছিলেন। ২০১৫ সালের ৬ই অক্টোবর তারিখে এক ঘোষণায় জানানো হয়েছিল যে, মুলার আলৎসহাইমার রোগে ভুগছেন।[43] ২০২১ সালের ১৫ই আগস্ট তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।[44][45]
পরিসংখ্যান
ক্লাব
ক্লাব | মৌসুম | লিগ | কাপ | মহাদেশীয় | অন্যান্য | মোট | ||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
বিভাগ | ম্যাচ | গোল | ম্যাচ | গোল | ম্যাচ | গোল | ম্যাচ | গোল | ম্যাচ | গোল | ||
১৮৬১ নর্ডলিঙ্গেন | ১৯৬২–৬৩ | বেজির্কসলিগা শোয়াবেন | ৩ | ৪ | — | — | — | ৩ | ৪ | |||
১৯৬৩–৬৪ | ২৮ | ৪৭ | — | — | — | ২৮ | ৪৭ | |||||
মোট | ৩১ | ৫১ | — | — | — | ৩১ | ৫১ | |||||
বায়ার্ন মিউনিখ | ১৯৬৪–৬৫ | রেজিওনাললিগা সুড | ২৬ | ৩৩ | — | — | ৬ | ৬ | ৩২ | ৩৯ | ||
১৯৬৫–৬৬ | বুন্দেসলিগা | ৩৩ | ১৫ | ৬ | ১ | — | — | ৩৯ | ১৬ | |||
১৯৬৬–৬৭ | ৩২ | ২৮ | ৪ | ৭ | ৯ | ৮ | — | ৪৫ | ৪৩ | |||
১৯৬৭–৬৮ | ৩৪ | ১৯ | ৪ | ৪ | ৮ | ৭ | — | ৪৬ | ৩০ | |||
১৯৬৮–৬৯ | ৩০ | ৩০ | ৫ | ৭ | — | — | ৩৫ | ৩৭ | ||||
১৯৬৯–৭০ | ৩৩ | ৩৮ | ৩ | ৪ | ২ | ০ | — | ৩৮ | ৪২ | |||
১৯৭০–৭১ | ৩২ | ২২ | ৭ | ১০ | ৮ | ৭ | — | ৪৭ | ৩৯ | |||
১৯৭১–৭২ | ৩৪ | ৪০ | ৬ | ৫ | ৮ | ৫ | — | ৪৮ | ৫০ | |||
১৯৭২–৭৩ | ৩৩ | ৩৬ | ৫ | ৭ | ৬ | ১১ | ৫ | ১২ | ৪৯ | ৬৬ | ||
১৯৭৩–৭৪ | ৩৪ | ৩০ | ৪ | ৫ | ১০ | ৮ | — | ৪৮ | ৪৩ | |||
১৯৭৪–৭৫ | ৩৩ | ২৩ | ৩ | ২ | ৭ | ৫ | — | ৪৩ | ৩০ | |||
১৯৭৫–৭৬ | ২২ | ২৩ | ৬ | ৭ | ৬ | ৫ | ১ | ০ | ৩৫ | ৩৫ | ||
১৯৭৬–৭৭ | ২৫ | ২৮ | ৪ | ১১ | ৪ | ৫ | ৪ | ৪ | ৩৭ | ৪৮ | ||
১৯৭৭–৭৮ | ৩৩ | ২৪ | ৩ | ৪ | ৬ | ৪ | — | ৪২ | ৩২ | |||
১৯৭৮–৭৯ | ১৯ | ৯ | ২ | ৪ | — | — | ২১ | ১৩ | ||||
মোট | ৪৫৩ | ৩৯৮ | ৬২ | ৭৮ | ৭৪ | ৬৫ | ১৬ | ২২ | ৬০৫ | ৫৬৩ | ||
ফোর্ট লডারডেল স্ট্রাইকার্স | ১৯৭৯ | উত্তর আমেরিকান সকার লিগ | ২৫ | ১৯ | — | — | ২ | ০ | ২৭ | ১৯ | ||
১৯৮০ | ২৯ | ১৪ | — | — | ৭ | ২ | ৩৬ | ১৬ | ||||
১৯৮১ | ১৭ | ৫ | — | — | — | ১৭ | ৫ | |||||
মোট | ৭১ | ৩৮ | — | — | ৯ | ২ | ৮০ | ৪০ | ||||
সর্বমোট | ৫৫৫ | ৪৮৭ | ৬২ | ৭৮ | ৭৪ | ৬৫ | ২৫ | ২৪ | ৭১৬ | ৬৫৪ |
আন্তর্জাতিক
দল | সাল | ম্যাচ | গোল |
---|---|---|---|
পশ্চিম জার্মানি | ১৯৬৬ | ১ | ০ |
১৯৬৭ | ৪ | ৬ | |
১৯৬৮ | ৩ | ২ | |
১৯৬৯ | ৭ | ৯ | |
১৯৭০ | ১২ | ১৩ | |
১৯৭১ | ৮ | ১২ | |
১৯৭২ | ৭ | ১৩ | |
১৯৭৩ | ৮ | ৭ | |
১৯৭৪ | ১২ | ৬ | |
সর্বমোট | ৬২ | ৬৮ |
অর্জন
ক্লাব
|
আন্তর্জাতিক
|
ব্যক্তিগত
- বালোঁ দর: ১৯৭০[4]
- জার্মান বর্ষসেরা ফুটবলার: ১৯৬৭, ১৯৬৯[48]
- বুন্দেসলিগার ৪০ বছরের সেরা খেলোয়াড় ১৯৬৩–২০০৩[49]
- কিকার বুন্দেসলিগা মৌসুম সেরা দল: ১৯৬৮–৬৯, ১৯৬৯–৭০, ১৯৭১–৭২, ১৯৭২–৭৩[50][51][52][53]
- বুন্দেসলিগার শীর্ষ গোলদাতা (কিকার-টর্জাগারকানন): ১৯৬৭, ১৯৬৯, ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৩, ১৯৭৪, ১৯৭৮[2]
- ইউরোপীয় গোল্ডেন শু: ১৯৭০, ১৯৭২[54]
- ফিফা বিশ্বকাপ গোল্ডেন বুট: ১৯৭০[2]
- ফিফা বিশ্বকাপ ব্রোঞ্জ বল: ১৯৭০[55]
- ফিফা বিশ্বকাপ সর্বকালের সেরা দল: ১৯৭০[56]
- উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষ গোলদাতার তালিকা: ১৯৭২[2]
- উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের টুর্নামেন্ট সেরা দল: ১৯৭২[57]
- ইউরোপিয়ান কাপ শীর্ষ গোলদাতা: ১৯৭৩, ১৯৭৪, ১৯৭৫, ১৯৭৭[58]
- ফিফা অর্ডার অব মেরিট: ১৯৯৮[59]
- ফিফা ১০০: ২০০৪[2]
- গোল্ডেন ফুট: ২০০৭ (ফুটবল কিংবদন্তি হিসেবে)[60]
- ব্রাভো অটো: স্বর্ণ পুরস্কার: ১৯৭৩, ১৯৭৪; রৌপ্য পুরস্কার: ১৯৭৫; ব্রোঞ্জ পুরস্কার: ১৯৭২, ১৯৭৬[61]
- আইএফএফএইচএস কিংবদন্তি[62]
- বায়ার্ন মিউনিখের সর্বকালের সেরা একাদশ[63]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.