বেইজিং
চীনের জাতীয় রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চীনের জাতীয় রাজধানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বেইজিং বা পেইচিং[টীকা 1] (চীনা: 北京; ফিনিন: Běijīng; আ-ধ্ব-ব:[peɪ˨˩ t͡ɕiŋ˥]; ) পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্র চীনের রাজধানী। প্রদেশের সমমর্যাদায় অধিষ্ঠিত বেইজিং নগরীটি গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের অধীনে সরাসরি কেন্দ্রশাসিত পৌরসভা হিসেবে পরিচালনা করা হয়।[9] বেইজিং কথাটির অর্থ "উত্তরের রাজধানী"। সামগ্রিকভাবে বেইজিংকে চীনের রাজনীতি, শিক্ষা, বুদ্ধিবৃত্তি ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয়। এর বিপরীতে সাংহাই ও হংকং চীনের অর্থনৈতিক জীবনে আধিপত্য বিস্তারকারী দুই মহানগরী।
বেইজিং 北京 পেইচিং | |
---|---|
অতিমহানগরী / কেন্দ্রশাসিত পৌরসভা | |
বেইজিং কেন্দ্রীয় ব্যবসায় এলাকার রূপরেখা স্বর্গীয় মন্দির থিয়েনআনমেন দ্য গ্রেট হল অফ দ্য পিপল (বামে) এবং জাতীয় পরিবেশন কলা কেন্দ্র (ডানে) | |
চীনের মানচিত্রে বেইজিং / পেইচিং মহানগরীর অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৩৯°৫৫′ উত্তর ১১৬°২৩′ পূর্ব | |
দেশ | চীন |
প্রতিষ্ঠার তারিখ | ১০৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ (চৌ রাজবংশ) |
বিভাগসমূহ[1] - County-level - Township-level | ১৬টি জেলা ২৮৯টি শহর ও গ্রাম |
সরকার | |
• ধরন | পৌরসভা |
• দলের সচিব | সাই ছি |
• নগরপ্রধান | ছেন চিনিং |
• Congress Chairman | Li Wei |
• Conference Chairman | Ji Lin |
আয়তন[2] | |
• পৌরসভা | ১৬,৪১১ বর্গকিমি (৬,৩৩৬ বর্গমাইল) |
• স্থলভাগ | ১৬,৮০১ বর্গকিমি (৬,৪৮৭ বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা (২০১৮)[3] | ৪,১৪৪ বর্গকিমি (১,৬০০ বর্গমাইল) |
• গ্রামীণ | ১৫,০৪২ বর্গকিমি (৫,৮০৮ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৪৩.৫ মিটার (১৪২.৭ ফুট) |
জনসংখ্যা (2017)[4] | |
• পৌরসভা | ২,১৭,০৭,০০০ |
• জনঘনত্ব | ১,৩০০/বর্গকিমি (৩,৪০০/বর্গমাইল) |
• পৌর এলাকা (2018)[3] | ২,১২,৫০,০০০ |
• মহানগর (2017)[5] | ২,৪০,০০,০০০ |
• Ranks in China | Population: ২৭th; Density: ৪th |
প্রধান জাতিগত দল | |
• হান | ৯৫% |
• মাঞ্চু | ২% |
• হুই | ২% |
• মঙ্গোল | ০.৩% |
• অন্যান্য | 0.7% |
সময় অঞ্চল | চীমাস (ইউটিসি+৮) |
ডাক সংকেত | ১০০০০০–১০২৬২৯ |
এলাকা কোড | ১০ |
আইএসও ৩১৬৬ কোড | CN-BJ |
GDP(nominal)[6] | ২০১৭ |
- Total | ৪১ হাজার ৪৭১ শত কোটি মার্কিন ডলার (১২তম) |
- মাথাপিছু | ¥128,927 ($19,895) (1st) |
- Growth | ৬.৭% |
মাউসূ (২০১৪) | 0.869[7] (1st)—very high |
License plate prefixes | 京A, C, E, F, H, J, K, L, M, N, P, Q, Y 京B (taxis) 京G (outside urban area) 京O, D (police and authorities) |
Abbreviation | BJ / 京 (jīng) |
নগর বৃক্ষসমূহ | Chinese arborvitae (Platycladus orientalis) |
Pagoda tree (Sophora japonica) | |
City flowers | China rose (Rosa chinensis) |
Chrysanthemum (Chrysanthemum morifolium) | |
ওয়েবসাইট | Beijing Official Website International - eBeijing.gov.cn (ইংরেজি) 首都之窗-北京市政务门户网站 (চীনা) |
বেইজিং | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
চীনা | 北京 | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
হান-ইউ ফিনিন | |||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
পোস্টাল | Peking[8] Peiping (1368–1403; 1928–1937; 1945–1949) | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
আক্ষরিক অর্থ | উত্তর রাজধানী | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
ভৌগোলিকভাবে বেইজিং মহানগরীটি উত্তর-পূর্ব চীনের উত্তর চীন সমভূমি ("হুয়াপেই ফিংইউয়েন") নামক একটি প্রশস্ত ত্রিভুজাকৃতি সমতলভূমির উত্তর প্রান্তে, ইয়ানশান পর্বতমালা ও সিশান পর্বতমালার মিলনস্থলের দক্ষিণে ও পূর্বে, উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলের কাছে, পো হাই উপসাগর থেকে প্রায় ১১০ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছে। হপেই প্রদেশ বেইজিং পৌরসভাটিকে ঘিরে রেখেছে। দক্ষিণ-পূর্বে নগরীটি প্রতিবেশী নগরী থিয়েনচিনের সাথে সীমান্ত গঠন করেছে। এই তিনটি প্রশাসনিক বিভাগ একত্রে চীনের চিংচিনচি পৌর অঞ্চল ও চীনের জাতীয় রাজধানী অঞ্চল গঠন করেছে। [10]
বেইজিং মহানগরীর দক্ষিণ ও পূর্বদিকে উত্তর চীন সমভূমি অঞ্চলটি প্রসারিত হয়েছে। এর বিপরীতে নগরের উত্তর ও পশ্চিমে রয়েছে সুউচ্চ পর্বতমালা, যাদের উচ্চতা ২০০০ মিটারের বেশি হতে পারে। মহানগর এলাকার ভেতর দিয়ে হাই নদী ব্যবস্থার অনেকগুলি উপনদী প্রবাহিত হয়েছে, যাদের মধ্যে ছাওপাই নদী ও ইউংতিং নদী উল্লেখযোগ্য। বেইজিং মহানগরীটি সুসংহতভাবে গঠিত নয়; এখানে গ্রামীণ বসতি ও স্থাপনার আধিপত্যই বেশি। তাই এটিকে মহানগরীর চেয়ে প্রদেশের মতই বেশি মনে হয়। প্রাদেশিক মর্যাদাবিশিষ্ট বেইজিং মহানগরীটি ১৬টি পৌরজেলা, উপ-পৌরজেলা এবং গ্রামীণ জেলা নিয়ে গঠিত।[9] এদের মধ্যে চারটি ঘনসন্নিবিষ্ট পৌর জেলা, চারটি উপ-পৌরজেলা এবং আটটি গ্রামীণ জেলা। উপশহরগুলি দ্রুত বিকাশ লাভ করছে; এগুলিতে প্রতিনিয়ত প্রাতিষ্ঠানিক, শিল্পকারখানা ও আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে এবং কৃষিভূমিগুলিকে পৌর এলাকায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে। আটটি গ্রামীণ জেলা মূল বেইজিং নগরীতে মৌলিক খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ফলমূল, নির্মাণ সামগ্রী এবং খাবার পানির যোগান দিয়ে যাচ্ছে। তবে এই সব গ্রামীণ এলাকাতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে শিল্পকারখানার বিকাশ হয়েছে বিশেষ করে বহিঃস্থ শিচিংশান, থুংসিয়েন, ফেংথাই এবং ফাংশান অঞ্চলগুলিতে।
বেইজিংয়ের জলবায়ুতে ঋতুভেদ আছে। এর জলবায়ু মৌসুমী বায়ু দ্বারা প্রভাবিত আর্দ্র মহাদেশীয় ধরনের। উত্তপ্ত ও আর্দ্র গ্রীষ্মকালের জুলাই মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮° সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি এবং হিমশীতল ও শুষ্ক শীতকালের জানুয়ারি মাসে তাপমাত্রা ১৫° সেলসিয়াসের চেয়েও কম হতে পারে। জুন থেকে আগস্ট মাসের মধ্যে সিংহভাগ বৃষ্টিপাত হয়।
মূল বেইজিং নগরীর আয়তন ৪৫৬৭ বর্গকিলোমিটার। বেইজিং মহানগর এলাকার আয়তন ১৬৪১১ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে এটি চীনের ৪র্থ বৃহত্তম মহানগর এলাকা (কুয়াংচৌ, সাংহাই ও ছুংছিংয়ের পরে)। বেইজিং মূল নগরটি বিশ্বের ৩য় সর্বোচ্চ জনবহুল মূল শহর (সাংহাই ও করাচির পরে)। বিশ্বের রাজধানী শহরগুলির মধ্যে এটিই সবচেয় জনবহুল শহর। জনসংখ্যার বিচারে বেইজিং চীনের ২য় বৃহত্তম শহর (সাংহাইয়ের পরেই)। এর আগে অতীতে বেইজিং খ্রিস্টীয় ২য় সহস্রাব্দের প্রায় পুরোটা জুড়েই বিশ্বের বৃহত্তম শহর ছিল।[11] ২০১৭ সালে বেইজিং মহানগর এলাকাতে ২ কোটি ১৭ লক্ষ লোকের বাস ছিল। মোট জনসংখ্যার ১ কোটি ১৮ লক্ষ নিবন্ধিত অধিবাসী এবং ৭৭ লক্ষ অস্থায়ী অধিবাসী, যাদের অস্থায়ী বসবাসের অনুমোদনপত্র আছে। শহরের প্রায় ৯৫% শতাংশ লোক হান চীনা জাতিভুক্ত। বেইজিংয়ে যে চীনা উপভাষাটিতে লোকে কথা বলে, সেটিই প্রমিত বা আদর্শ ম্যান্ডারিন চীনা ভাষার তথা ফুথুংহুয়া-র ভিত্তি। বেইজিংয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ সনাতন চৈনিক লোকধর্মে বিশ্বাসী (৮৭%)। এছাড়া এখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী (১০%) বাস করেন।
বেইজিংয়ের কলকারখানাতে বস্ত্র, মোটরগাড়ি, ইলেকট্রনিক দ্রব্য, কম্পিউটার এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নির্মাণ করা হয়। বেইজিংয়ের নিজস্ব কৃষক সম্প্রদায় আছে যারা নগরের জন্য ফলমূল ও শাকসবজির চাষ করে; অন্যান্য বড় নগরে এমনটি হয় না। এছাড়া পর্যটন খাত থেকেও বেইজিংয়ের অনেক আয় হয়। বেইজিং নগরীতে চীনের বৃহত্তম সরকার-নিয়ন্ত্রিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির সদর দফতর অবস্থিত। ২০১৫ সালের ফর্চুন গ্লোবাল ৫০০ তালিকায় অবস্থিত ৫২টি বহুজাতিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় বেইজিংয়ে অবস্থিত, যা বিশ্বের অন্য যেকোনও শহরের চেয়ে বেশি।[12] এদের মধ্যে সরকারী মালিকানাধীন স্টেট গ্রিড, চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম ও সাইনোপেক গ্রুপ উল্লেখযোগ্য, যারা উপর্যুক্ত বৈশ্বিক মর্যাদাক্রমে যথাক্রমে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ স্থান দখল করেছে।[13] বেইজিং কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক এলাকাটি দ্রুততার সাথে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ, দ্রুত আধুনিকীভবন এবং নাটকীয়ভাবে পরিবর্তনশীল রূপরেখার কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। এখানে সম্প্রতি সমাপ্ত বা নির্মাণাধীন বহুসংখ্যক গগনচুম্বী অট্টালিকা এই বিবর্তনের সাক্ষ্য বহন করছে। বেইজিংয়ের চুংকুয়ানসুন এলাকাটি চীনের "সিলিকন উপত্যকা" নামে পরিচিত; এখানে চীনের উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসায় উদ্যোগের কেন্দ্রটি অবস্থিত।[14] অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্থুল আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের বিবেচনায় বেইজিং চীনের ৩য় বৃহত্তম শহর (সাংহাই ও হংকংয়ের পরে)। বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার অত্যন্ত উচ্চ। ২০০০-এর দশকের বছরগুলিতে প্রতি বছরে বেইজিং নগরীর অর্থনীতি ১০% হারে বৃদ্ধিলাভ করে। এখানে নতুন একটি বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে তোলা হয়েছে, যার নাম বেইজিং বাণিজ্যিক এলাকা।
বেইজিংয়ে সাক্ষরতার হার ৯৮%-এরও বেশি। বেইজিং নগরীতে ৯১টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে[15] যেগুলিতে প্রায় ৭ লক্ষ ছাত্র পড়াশোনা করে। এদের অনেকগুলি চীনের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়; বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় দুইটি সারা বিশ্বের সেরা ৬০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্রর্যাদাক্রমে স্থান পেয়েছে।[16]
বেইজিং গীতিনাট্য চীনের মঞ্চনাটকের একটি ঐতিহ্যবাহী রূপ যা সারা বিশ্বে চীনা সংস্কৃতির সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শনগুলির একটি হিসেবে পরিগণিত হয়। বেইজিংয়ের রন্ধনশৈলীর সবচেয়ে পরিচিত পদটি হল বেইজিংয়ের ঝলসানো হাঁস। চীনের কেন্দ্রীয় টেলিভিশন ব্যবস্থা ও চীনা আন্তর্জাতিক বেতারের প্রধান কার্যালয় বেইজিংয়ে অবস্থিত। পেইচিং ওয়ানপাও (অর্থাৎ "সান্ধ্য বেইজিং") নগরের প্রধান দৈনিক পত্রিকা।
বেইজিং চীনের জাতীয় মহাসড়ক ব্যবস্থা ও রেল ব্যবস্থার (অতিদ্রুতগামী রেলগাড়িসহ) প্রধান কেন্দ্রগুলির একটি। বেইজিং রাজধানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি ২০১০ সাল থেকে যাতায়াতকারী যাত্রীসংখ্যার বিচারে বিশ্বের ২য় ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।[17] ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী বেইজিং নগরের পাতালরেল ব্যবস্থাটি বিশ্বের ব্যস্ততম পাতালরেল ব্যবস্থা; এছাড়া এটি সাংহাই পাতালরেল ব্যবস্থার পরে এটি চীনের ২য় দীর্ঘতম পাতালরেল। নগরটিকে অনেকগুলি সমকেন্দ্রিক বৃত্তাকার রাস্তা ঘিরে রেখেছে। এর মধ্যে ২য় বৃত্তাকার রাস্তাটি পুরাতন শহরের পরিসীমা নির্ধারণ করেছে।
২০০১ সালে মনোনয়ন লাভের পর বেইজিং ২০০৮ সালে ২৯তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ উপলক্ষে শহরের উত্তরে একটি অলিম্পিক এলাকা নির্মাণ করা হয়, যেখানে প্রতিযোগিতার সিংহভাগ ক্রীড়াগুলি অনুষ্ঠিত হয়। নগরটিকে ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতার আয়োজক শহর হিসেবেও নির্বাচন করা হয়। ফলে এটি ক্রীড়ার ইতিহাসে গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন উভয় সংস্করণের অলিম্পিক প্রতিযোগিতা আয়োজনকারী প্রথম শহরে পরিণত হয়। [18]
মূল বেইজিং শহরটির কেন্দ্রে পুরাতন বেইজিংয়ের দুইটি অংশ বিদ্যমান এবং এদেরকে ঘিরে মূলত ১৯৪৯ সালের পরে নির্মিত নতুন বেইজিং শহরের আবাসিক, শিল্প ও প্রাতিষ্ঠানিক এলাকাগুলি অবস্থিত। পুরাতন শহরের উত্তর অংশে ১৩শ শতকে নির্মিত একটি বর্গাকৃতি অন্তঃস্থ শহর এবং দক্ষিণ অংশে ১৪শ শতকে নির্মিত একটি আয়তাকৃতি বহিঃস্থ শহর রয়েছে। অন্তঃস্থ শহরের একেবারে কেন্দ্রেই কুকুং নিষিদ্ধ শহর অবস্থিত। নিষিদ্ধ শহরটি চীনের মিং ও ছিং রাজবংশের সম্রাট ও তাদের পরিবারের জন্য নির্ধারিত একটি প্রাচীরঘেরা প্রাসাদ এলাকা সাধারণ নাগরিকদের এর ভেতরে ঢোকা নিষেধ ছিল। ১৯২৫ সালে প্রাসাদটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয় এবং পুরো এলাকাটিকে ১৯৪৯ সালের জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। নিষিদ্ধ শহরে ঢোকার বিশাল প্রবেশদ্বারটিকে থিয়েনআনমেন (অর্থাৎ "স্বর্গীয় শান্তির প্রবেশদ্বার") বলা হয়। এই প্রবেশদ্বারের সংলগ্ন বিশাল উন্মুক্ত চত্বরটির নাম থিয়েনআনমেন চত্বর বলা হয়। এখানে কুচকাওয়াজ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। থিয়েনআনমেন চত্বরে মাও সেতুং-এর সমাধি, চীনের জাতীয় জাদুঘর O চীনের জাতীয় আইনসভার মিলনায়তন অবস্থিত। নিষিদ্ধ শহর ও থিয়েনআনমেন চত্বর থেকে কিছুটা পূর্বে রয়েছে ওয়াংফুচিং রাজপথ, যেখানে বেইজিং শহরের সবচেয়ে পরিচিত কেনাকাটার এলাকাটি অবস্থিত। অন্যান্য প্রধান আকর্ষণীয় স্থানের মধ্যে আছে গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ, যেখানে সম্রাটেরা ছুটি কাটাতে আসতেন; এখানে খুনমিং হ্রদের পাশে ছোট ছোট বাড়ি ও বাগান রয়েছে। স্বর্গের মন্দির নামের নগর উদ্যানে দেখতে পাওয়া যাবে বর্ণিল ও বৃত্তাকার "ভাল ফসলের জন্য প্রার্থনা কক্ষ"। ২০০৮ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক প্রতিযোগিতার জন্য নির্মিত বেইজিং অলিম্পিক বাগান বা সংরক্ষিত এলাকাটিতে রয়েছে দীর্ঘ হাঁটার পথ এবং বেইজিং জাতীয় ক্রীড়াক্ষেত্র বা স্টেডিয়াম। ক্রীড়াক্ষেত্রটির স্থাপত্যে ইস্পাতের জালিকার উপস্থিতির কারণে এটিকে "পাখির বাসা" ডাকনাম দেওয়া হয়েছে। ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকাটিতে অনেক অত্যাধুনিক চিত্রপ্রদর্শনীশালা অবস্থিত। এছাড়া শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যে নির্মিত ভবনগুলি (যাদের স্থানীয় নাম "সিহেইউয়েন") এবং এই ভবনগুলির ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সরু সরু প্রাচীন রাস্তা ও অলিগলি (যাদের স্থানীয় নাম "হেইউয়েন") পর্যটকদের কাছে হাঁটার জন্য খুবই জনপ্রিয় এবং বেইজিং শহরের যত্রতত্র এদের দেখা মেলে (বিশেষত পশ্চাৎ হ্রদ এলাকাটিতে); এগুলির পাশ ধরে সারিসারি ছোট ছোট দোকান ও কফিঘর দাঁড়িয়ে আছে। বেইজিং শহরের কাছেই চীনের মহাপ্রাচীরের একটি অংশ বিদ্যমান যেখানে অনেক পর্যটক ঘুরে বেড়িয়ে আসেন। বেইজিং শহরে ও তার আশেপাশে সাতটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। এগুলি হল নিষিদ্ধ শহর, স্বর্গের মন্দির, গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ, মিং সমাধিসমূহ, চৌকৌদিয়েন, চীনের মহাপ্রাচীর ও চীনের মহাখালের অংশবিশেষ; এগুলি সবই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়।[19]
বেইজিং এর অনেক নগর-উদ্যানের জন্য সুপরিচিত। গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদটি এর সুন্দর নকশা করা বাগান , মন্দির ও সেতুর জন্য পরিচিত। তিয়েনতান উদ্যানটিতে স্বর্গের মন্দির অবস্থিত যেখানে চীনের সম্রাটরা প্রার্থনা করতেন। ১৭শ শতকে পেইহাই উদ্যানটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এখানে একটি বড় হ্রদ আছে যেখানে গ্রীষ্মকালে নৌকা ভ্রমণ করা যায় আর শীতকালে এটি বরফে জমাট বেঁধে গেলে এর উপরে অনেক মানুষ স্কেট করে।
২০১৬ সালে ২৮ কোটি ৪০ লক্ষ পর্যটক বেইজিং শহরে বেড়াতে আসেন। বেইজিং শহর পর্যটন খাতে ৫০ হাজার কোটি চীনা ইউয়ান মুদ্রা আয় করে, যা ছিল ঐ বছর শহরের স্থুল আভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ২০%। ২০১৭ সালে পর্যটক সংখ্যা, পর্যটন খাতে আয়, শহরের অর্থনীতিতে অবদান, বিদ্যমান পর্যটন অবকাঠামো ও যানবাহনের ভিত্তিতে বেইজিং শহরকে পর্যটন খাতে চীনের সেরা শহরের মর্যাদা দেওয়া হয়।[20]
বেইজিং নগরীটি চীনা সাম্যবাদী দলের স্থানীয় বেইজিং কমিটির সচিব এবং বেইজিংয়ের নির্বাচিত নগরপ্রধান - এই দুই পক্ষের যৌথ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। ২০১৮ সালে শহরের নগরপ্রধান ছিলেন ছেন চিনিন এবং সাম্যবাদী দলের স্থানীয় সচিব ছিলেন সাই ছি।
বেইজিং শহরের এলাকাটিতে তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে মানুষ বাস করে আসছে। চীনের চার মহান প্রাচীন রাজধানীগুলির সর্বশেষটি হল এই বেইজিং শহর। আদিতে বেইজিং শহরটি হান ও থাং রাজবংশের অধীনে অবস্থিত চৈনিক সাম্রাজ্যের সময়ে শহরের বর্তমান অবস্থান থেকে কিছু উত্তরে চীনের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও বাণিজ্যঘাঁটি ছিল। ১১৫৩ সালে চিন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট চুরছেন শহরটিকে তার প্রধান রাজধানী হিসেবে নির্বাচন করলে শহরটির ভাগ্যোন্নতি ঘটে। এরপর ১২৬৭ সালে পুরাতন শহরের কিছুটা উত্তর-পূর্বে ইউয়ান বা মঙ্গোল রাজবংশের রাজপুত্র কুবলাই খান-ও একই সিদ্ধান্ত নেন এবং বেইজিং শহরটির নাম বদলে "তাতু" (অর্থাৎ "বৃহৎ নগরী") রাখেন। এর পরে মিং রাজবংশ (১৩৬৮-১৭৪৪) ক্ষমতায় আসার পর প্রথম পাঁচ দশক দক্ষিণে অবস্থিত নানচিং শহরকে ("নানচিং" অর্থ "দক্ষিণের রাজধানী") রাজধানী বানানো হয় এবং পুরাতন মঙ্গোল রাজধানীটির নাম বদলে "পেইফিং" রাখা হয় ("পেইফিং" অর্থ "উত্তরীয় শান্তি")। কিন্তু মিং রাজবংশের ৩য় সম্রাট ১৪২১ সালে আবার শহরটিকে তার রাজধানী বানান এবং এর নাম দেন "পেইচিং" অর্থাৎ "উত্তরের রাজধানী"। তখন থেকেই কয়েকটি সংক্ষিপ্ত পর্ব গণনায় না ধরলে প্রায় ৭ শত বছর ধরে বেইজিং শহরটি চীনের রাজধানী হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।[21] এরপর ছিং রাজবংশের সুদীর্ঘ শাসনামলেও (১৬৪৪-১৯১১/১২) শহরটির রাজধানী মর্যাদা বজায় থাকে। ১৮৬০ ও ১৯০০ সালে বিদেশী শক্তির আক্রমণের সময় শহরটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ২০শ শতকের শুরুর দিকের দশকগুলিতে চীনে ঘনঘন সংঘটিত রাজনৈতিক পরিবর্তন সত্ত্বেও বেইজিং চীনের সবচেয়ে সমৃদ্ধিশালী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে টিকে থাকে। ১৯২৮ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত একটি পর্বে চীনের জাতীয়তাবাদী সরকার নানচিংকে তাদের রাজধানী বানায়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় চীনের রাজধানী ছুংছিং শহরে সাময়িকভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বেইজিংয়ের নাম বদলে আবারও "পেইফিং" রাখা হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে সাম্যবাদীদের বিজয়ের পরে বেইজিংকে আবারও পুরাতন নাম ও রাজধানীর পূর্ণ মর্যাদা ফেরত দেওয়া হয়। নতুন এই রাজনৈতিক মর্যাদা শহরটিকে পুনরুজ্জীবন দান করে। শহরটি খুব স্বল্প সময়ে জনসংখ্যা ও আয়তনে বহুগুণে বৃদ্ধিলাভ করে এবং শিল্পকারখানা ও অন্যান্য কর্মকাণ্ডেও ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটে। ১৯৮৯ সালে চীনা ছাত্ররা থিয়েনআনমেন চত্বরে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আয়োজন করেন। সরকারী বাহিনী এই সমাবেশে ট্যাংক নিয়ে আসে এবং প্রতিবাদ ছত্রভঙ্গ করার জন্য অনেক মানুষকে হত্যা করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সেসময় চীনা সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে।
বেইজিং / পেইচিং-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য | |||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মাস | জানু | ফেব্রু | মার্চ | এপ্রিল | মে | জুন | জুলাই | আগস্ট | সেপ্টে | অক্টো | নভে | ডিসে | বছর |
সর্বোচ্চ রেকর্ড °সে (°ফা) | ১২.৯ (৫৫.২) |
১৮.৫ (৬৫.৩) |
২৬.৪ (৭৯.৫) |
৩৩.০ (৯১.৪) |
৩৮.৩ (১০০.৯) |
৪২.৬ (১০৮.৭) |
৪০.৫ (১০৪.৯) |
৩৬.১ (৯৭.০) |
৩২.৬ (৯০.৭) |
২৯.৮ (৮৫.৬) |
২১.৪ (৭০.৫) |
১৭.৫ (৬৩.৫) |
৪২.৬ (১০৮.৭) |
সর্বোচ্চ গড় °সে (°ফা) | ১.৮ (৩৫.২) |
৫.০ (৪১.০) |
১১.৬ (৫২.৯) |
২০.৩ (৬৮.৫) |
২৬.০ (৭৮.৮) |
৩০.২ (৮৬.৪) |
৩০.৯ (৮৭.৬) |
২৯.৭ (৮৫.৫) |
২৫.৮ (৭৮.৪) |
১৯.১ (৬৬.৪) |
১০.১ (৫০.২) |
৩.৭ (৩৮.৭) |
১৭.৯ (৬৪.২) |
সর্বনিম্ন গড় °সে (°ফা) | −৮.৪ (১৬.৯) |
−৫.৬ (২১.৯) |
০.৪ (৩২.৭) |
৭.৯ (৪৬.২) |
১৩.৬ (৫৬.৫) |
১৮.৮ (৬৫.৮) |
২২.০ (৭১.৬) |
২০.৮ (৬৯.৪) |
১৪.৮ (৫৮.৬) |
৭.৯ (৪৬.২) |
০.০ (৩২.০) |
−৫.৮ (২১.৬) |
৭.২ (৪৫.০) |
সর্বনিম্ন রেকর্ড °সে (°ফা) | −২২.৩ (−৮.১) |
−২৭.৪ (−১৭.৩) |
−১৫.৯ (৩.৪) |
−৩.২ (২৬.২) |
২.৫ (৩৬.৫) |
১০.০ (৫০.০) |
১৫.৩ (৫৯.৫) |
১১.৪ (৫২.৫) |
৩.৭ (৩৮.৭) |
−৩.৫ (২৫.৭) |
−১২.৫ (৯.৫) |
−১৮.৫ (−১.৩) |
−২৭.৪ (−১৭.৩) |
অধঃক্ষেপণের গড় মিমি (ইঞ্চি) | ২.৭ (০.১০৬) |
৪.৯ (০.১৯৩) |
৮.৩ (০.৩২৭) |
২১.২ (০.৮৩৫) |
৩৪.২ (১.৩৪৬) |
৭৮.১ (৩.০৭৫) |
১৮৫.২ (৭.২৯১) |
১৫৯.৭ (৬.২৮৭) |
৪৫.৫ (১.৭৯১) |
২১.৮ (০.৮৫৮) |
৭.৪ (০.২৯১) |
২.৮ (০.১১) |
৫৭১.৮ (২২.৫১২) |
উৎস: ওয়েদার ডট কম |
বেইজিং হোটেল এই শহরের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ও ঐতিহাসিক হোটেল। পিপলস রিপাবলিক হিসেবে চিনের আত্মপ্রকাশের আনুষ্ঠানিক সূচনা এই হোটেলেই করেন মাও ৎসে-তুং এবং চৌ এন-লাই । রিচার্ড নিক্সন এবং হেনরি কিসিঞ্জার এই হোটেলেই ছিলেন। রাষ্ট্রপ্রধানগণ বেইজিং সফরে গেলে এই হোটেলে অবস্থান করেন। [22]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.