২০২৪ সালে, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের অংশ কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তীকালে অসহযোগ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগে মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়।[২][৩] এরপর সারাদেশে নানা সহিংসতা ঘটে। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থক, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, সরকার ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো হয়।[৪] পদত্যাগের দিন ২৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন।[১] প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর সারা বাংলাদেশে ১,৪৯৪টি ভাস্কর্য ও স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর করা হয়েছে[৫] এবং ৫-২০ আগস্ট সারাদেশে ১০৬৮ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ২২টি উপসানালয় হামলার শিকার হয়।[৬][৭][৮]
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সহিংসতা | |||
---|---|---|---|
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের ফলাফলের অংশ | |||
তারিখ | ৫ আগস্ট ২০২৪ – বর্তমান (৩ মাস ও ১৯ দিন) | ||
অবস্থান | |||
অবস্থা | চলমান | ||
পক্ষ | |||
| |||
ক্ষয়ক্ষতি | |||
নিহত | ২৫ জন পুলিশ[১] |
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মতে, মোট ২,০১০টির বেশি হামলা হিন্দু সম্প্রদায় বা তাদের সম্পত্তির ওপর হয়েছে, যা ৪৫টি জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব হামলায় ৫ জন হিন্দু নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২ জন আওয়ামী লীগের সদস্য বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।[৯][১০][১১][১২] বাংলাদেশে আহ্মদীয়া সম্প্রদায়ের ওপরও সহিংস ইসলামী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ হয়, যা তাদের মসজিদ ও ঘরবাড়ির ক্ষতি করে।[১৩][১৪][১৫] সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ওপরও হামলা চালানো হয়।[১৬][১৭] বিক্ষুব্ধ জনতা পাঁচ থেকে নয়টি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে আক্রমণ ও ভাঙচুর চালায়।[১৮][১৯] জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য শ্যামল দত্তের অফিসেও হামলা করা হয় এবং তাকে বাংলাদেশ থেকে বের হতে বাধা দেওয়া হয়।[২০]
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের তথ্যমতে, ৫ আগস্ট থেকে ১৩ আগস্টে মধ্যে দেশে দেশে সংখ্যালঘু সংক্রান্ত ৩০টি অপরাধ হয়েছে, অধিকাংশই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হয়েছে।[২১] এছাড়া ৫ থেকে ১৪ আগস্টের মধ্যে ৫৯টি জেলায় ১ হাজার ৪৯৪টি ভাস্কর্য, রিলিফ ভাস্কর্য, ম্যুরাল এবং স্মৃতিস্তম্ভ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও উপড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে।[২২] নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ, সিলেটের শাহপরান, সিরাজগঞ্জের একাধিক, ঠাকুরগাঁওয়ের বিবি সখিনার মাজার সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু সংখ্যক মাজারে হামলা করা হয়েছে।[২৩]
সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরুর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় বিক্ষোভকারীদের হাতে থানা জ্বালিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে, ৪৫০টিরও বেশি থানা ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।[২৪] এসময় ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মুখে থানা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সরে যায়।[২৫] এতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে সহিংসতা বৃদ্ধি পায়।[২৬]
ডেইলি স্টারের তথ্যমতে, সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রথম ঘণ্টায় অন্তত ২৭টি জেলায় হিন্দুদের নানা বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।[২৭] এছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, নিপীড়ন প্রভৃতির ২০৫টি ঘটনা ঘটে।[২৮] এ সময় ভারতীয় গণমাধ্যমে থেকে অসংখ্য গুজব ছড়িয়ে পড়ে।[২৯] বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের প্রাক্তন মহাসচিব গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রামাণিক দাবি করেন, এসব আক্রমণের কারণ সাম্প্রদায়িক নয় বরং রাজনৈতিক।[৩০] তবে মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক তার বিবৃতিকে মিথ্যা ও দেশের হিন্দুদের জন্য চরম অপমানজনক ও লজ্জাকর মনে করেন এবং একই সাথে উল্লেখ করেন ২০২০ সালে ঘৃণ্য কার্যকলাপের জন্য প্রামাণিককে মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।[৩১]
ঢাকা বিভাগ
প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়াও শুধু ঢাকা বিভাগে ৭৮ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ১ টি উপসানালয় হামলার শিকার হয়।[৩২]
ঢাকা জেলা
ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়, হাসপাতালের যানবাহন ভাংচুর করা হয়, আগুন দেওয়া হয়, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হয়।[৩৩] ধানমন্ডি ৩২ নং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, ধানমন্ডি ৩ নম্বরে দলটির সভাপতির কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।[৩৪] ৫ আগস্ট, ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় এক থেকে দেড়শত জনের একটি দল মীনা রানি দাসের বাড়িতে হামলা চালায়।[৩৫] ঢাকার সাভারে কাজী জাবের নামের এক সুফি সাধকের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২৯ সেপ্টেম্বর উপজেলার বনগাঁও ইউনিয়নের চাকুলিয়া এলাকায় মাওলানা কাজী আফসার উদ্দিন বাবার বাড়ি ও মাজার শরিফে এ হামলার ঘটনা ঘটে।[৩৬] ৫ নভেম্বর, ইসলামী মহাসম্মেলনের সময় একদল তৌহিদি জনতা হয়রত হাজী খাজা শাহবাজ (রাহ:) এর মাজার ভাঙ্চুর, দায়িত্বরত ব্যক্তিরা বাধা দিতে আসলে তাদেরও মারধর, জুতা পড়ে মাজারে প্রবেশ করে লোহার রেলিং ভেঙ্গে এবং তিনটি দান বাক্স লুট করে।[৩৭][৩৮]
ফরিদপুর জেলা
ফরিদপুরের মধুখালী ও সদরপুরে হিন্দুদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। মধুখালী উপজেলার বামুন্দি গ্রামে পল্লি চিকিৎসক উত্তম কুমার রায়ের বাড়ি, ফার্মেসি এবং কালীমন্দিরে হামলা করা হয়। মধুখালীতে বিএনপির এক গ্রুপের শান্তি আনন্দ শোভাযাত্রায় আরেক গ্রুপ হামলা চালায়, ৪-৫ টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়, এতে অন্তত ১০ জন আহত হয়।[৩৯] এ সময় চার-পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পৌর বিএনপির সদস্য আজিজুল হক কর্তৃক আওয়ামীলীগ নেতার জমি দখল বাড়িতে ভাংচুর করা হয়।[৪০] চরভদ্রাসন উপজেলার ২নং চরঝাউকান্দা ইউনিয়ন নির্দলীয় চেয়ারম্যান বদরুজ্জামান মৃধার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।[৪১]
১৫ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় একটি মন্দিরে নির্মাণাধীন আটটি দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।[৪২][৪৩][৪৪]
২৯ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গা উপজেলার লালন আনন্দধামে হালমা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভাস্কর্য, লালন সাঁই ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করা হয়। বেশকিছু মূল্যবান গ্রন্থ, জার্নাল, হারমনিয়াম, একতারা, দোতারা, বায়া, জুড়ি, গিটারসহ আরও কয়েকটি বাদ্যযন্ত্র আগুনে ভস্মীভূত হয়।[৪৫]
শরীয়তপুর জেলা
৫ আগস্ট শরীয়তপুর জেলার ধানুকা মনসা বাড়ির একটি মন্দির দুর্বৃত্তরা ভাঙচুর চালায়।[৪৬] শহরের চৌরঙ্গী মোড়ের বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়। সাবেক শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পৌরসভার প্যানেল মেয়র বাচ্চু বেপারীর ক্লাবে লুটপাট-অগ্নিসংযোগ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ শেখের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। ভেদরগঞ্জ উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি মো. ফারুক মোল্লাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই সময় অন্তত ১৫টি বাড়িতে লুটপাট করা হয়, এতে ১৫ জন লোক আহত হয়।[৪৭]
নারায়ণগঞ্জ জেলা
৬ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন দেওয়ানবাগী পীরের আস্তানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।[৪৮] ১০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মাইকিন করে লোক জড়ো করে ৮০ বছরের পুরনো একটি মাজার গুড়িয়ে দেওয়া হয়।[৪৯]
কিশোরগঞ্জ জেলা
৩ অক্টোবর ভোররাতে জেলা শহরের বত্রিশ এলাকার বড় বাজার-মণিপুরঘাট রোডে শ্রী শ্রী জিউর আখড়ায় দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।[৫০][৫১][৫২]
রাজবাড়ী জেলা
৮ অক্টোবর দুর্গা পূজার ষষ্ঠীর দিন রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক ঐক্য পরিষদ মন্দিরের দুর্গাপূজা মণ্ডপের পাঁচটি প্রতিমা ভাঙচুর হয়।[৫৩]
চট্টগ্রাম বিভাগ
প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়াও শুধু চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়। তবে কোনো উপসনালয়ে হামলা হয়নি।[৩২]
কুমিল্লা জেলা
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে হেসাখাল ইউপির তেতৈয়া রৌশন শাহ্ মাজার, হিয়াজোড়া গ্রামে গণি শাহ্ মাজার, সুবেদার আবদুর রহিমের মাজার, হাবিলদার আবুল কাশেমের মাজার, আবদুল জলিলের মাজার ও নিজাম উদ্দিনের কবরস্থান এবং বক্তা সৈয়দ গোলাম মহিন উদ্দিন টিপু হিয়াজুড়ির বাড়িঘর ও মৌকরা ইউপির ফতেপুর পেটেন শাহর মাজার ভাঙচুর করা হয়।[৫৪]
নোয়াখালী জেলা
নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিনটি বাড়ি ও ৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।[৪৬] চৌমুহনী পৌরসভার মূল ভবন, অডিটরিয়াম এবং গ্যারেজসহ তিনটি ভবনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। সোনাইমুড়ী উপজেলা কমপ্লেক্সে ইউএনও-এর কার্যালয়সহ ১৩টি সরকারি দপ্তরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।[৪৭] ১৩ সেপ্টেম্বর ভোরে ১৮-২০ জনের একদল নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার ফকির চাড়ু মিজি শাহ্ (র.) মাজার (দরগাহ বাড়ির মাজার) ভাঙচুর করেন।[৫৫]
চাঁদপুর জেলা
চাঁদপুরের পুরানবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার এবং ফরিদগঞ্জের গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।[৪৬]
রংপুর বিভাগ
প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়াও শুধু রংপুর বিভাগে ২১৯ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ৯ টি উপসানালয় হামলার শিকার হয়।[৩২]
দিনাজপুর জেলা
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জে থানায় হামলা এবং ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আক্রমণ চালানোর পর আসবাবপত্র বাইরে এনে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।[৫৬] দিনাজপুর সদর উপজেলায় ফুলতলা শ্মশানঘাট এলাকায় মাঠে নির্মাণাধীন হরিসভা ঘর, দুর্গামন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে।[৫৭] আন্দোলনকর্মীরা নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।[৫৮]
ঠাকুরগাঁও জেলা
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বানা গাও সরদারভিটা গ্রামের ৪টি হিন্দু পরিবারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।[৫৯]
কুড়িগ্রাম জেলা
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার, কাশিপুর ইউনিয়নে ২ সেপ্টেম্বর রাতে পাড়ায় গাছে পোস্টার সেঁটে দেওয়া হয়। তাতে বলা হয় ‘৭ দিনের মধ্যে এই বাড়ির মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়া হবে মেয়েকে মুসলমান করা হবে।’ এরপর ১৮ সেপ্টেম্বর মাদকদ্রব্য কারবারি আলিনুর রহমান ও তার সহযোগীরা দশম শ্রেণির হিন্দু ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনা ঘটায়।[৬০][৬১]
রাজশাহী বিভাগ
প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়াও শুধু রাজশাহী বিভাগে ১৫৫ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ৩ টি উপসানালয় হামলার শিকার হয়।[৩২]
নাটোর জেলা
নাটোরে বিক্ষুব্ধ জনতা সিংড়ায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বাসায় ভাঙচুর করে। নরেশ চন্দ্র সাহা এবং তার প্রতিবেশী শিমুল সরকারের বাড়িতে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। ভাটপাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক কার্তিক চন্দ্রের বাড়িতেও হামলা করা হয়।[৪৬] বিক্ষুব্ধ জনতা সংসদ সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম শিমুলের বাসভবন জান্নাতি প্যালেসে আগুন ধরিয়ে দেয়।[৬২]
রাজশাহী জেলা
রাজশাহীর বাঘায় উপজেলায় পাকুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া পালপাড়া, ঘোষপাড়া ও বাঘা পৌরসভার কলিগ্রামের পুণ্ডরীপাড়া মন্দিরের তালা ভেঙে মন্দিরের বিভিন্ন সরঞ্জাম ও প্রতিমা ভাঙচুর করার পর হাতেনাতে আটক হয় এক মাদ্রাসাছাত্র। স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সোপর্দ করেন।[৬৩]
রাজশাহী জেলার বাঘায় সনাতন ধর্মাবলম্বীর বসতবাড়ি দখল ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় মো: আলতাফ আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে বাঘা থানা পুলিশ। ৫ আগস্ট, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে আলতাফ আলী ও তার সহযোগীরা ঘরে অনধিকার প্রবেশ করে শ্রী রূপ সনাতন দোবের কাকীমাকে মারধর করে, ৪৬ হাজার টাকা লুটে নেয় এবং প্রতিমা ভাঙচুর করে। মামলার তদন্তে আলতাফ আলীকে ৯ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়। বাঘা থানা পুলিশ বেদখল হওয়া বাড়ি ও ভূমি পুনরুদ্ধার করে শ্রী রূপ সনাতন দোবের কাকীমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে।[৬৪]
পাবনা জেলা
পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল পশ্চিমপাড়ায় শ্রী শ্রী ভদ্রা কালীমাতা মন্দিরে রাতের আঁধারে তিনটি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।[৬৫]
খুলনা বিভাগ
প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়াও শুধু খুলনা বিভাগে ২৯৫ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ৫ টি উপসানালয় হামলার শিকার হয়।[৩২]
খুলনা জেলা
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের বাড়িতে দুই দফা হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। মহেশ্বরীপূর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বিজয় কুমার সরদারের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে মালামাল লুট করে বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।[৪৬] খুলনা-৩ আসনের এমপি এস এম কামাল হোসেনের খালিশপুর এলাকার অফিস ভাঙচুর করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার অধিকারীর বাড়িতে হামলা হয়।[৬৬] ৮ আগস্ট পাইকগাছায় সাবেক ইউপি সদস্য স্বপন বিশ্বাসকে '''হত্যা''' শিকার হয়।[৬৭]
যশোর জেলা
যশোর পাইপপট্টি এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মারুফ হোসেনের বাড়িতে ককটেল হামলা করা হয়।[৬৮] বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া বাজারে হামলায় ২৫টি দোকান ভাঙচুর হয়, এবং স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা, গবাদি পশু লুট করা হয়। ধলগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে মালামাল ও পশু লুটের পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ হয়। অভয়নগরেও হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। যশোরের শাহীন চাকলাদারের কাঁঠালতলা এলাকার বাসভবনেও আগুন দেওয়া হয়েছে। শহরের চারখাম্বা মোড়ে অবস্থিত শেখ রাসেলের ভাস্কর্যটিও ভাঙচুর করা হয়েছে। শাহীন চাকলাদারের পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালে অগ্নিসংযোগ দেওয়া হয়, এই ঘটনায় ২৪ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃতবরণ করেন।[৬৯]
মেহেরপুর জেলা
মেহেরপুরে চিত্ত সাহার দোকানে হামলা ও মালামাল লুট করা হয় এবং লিনা ভট্টাচার্যের বাড়িতে হামলা করে সোনার গয়না ও দামি জিনিসপত্র নিয়ে যায়।[৭০] সন্ধ্যায় মালোপাড়ায় ছয়টি বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক পল্লব ভট্টাচার্য তরুণের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের বাড়িতে হামলা করা হয়, তার বাড়ির দুটি মোটরসাইকেল এবং টিনসেড ছাউনিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।[৭১]
বরিশাল বিভাগ
প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়াও শুধু বরিশাল বিভাগে ৬৮ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ২ টি উপসানালয় হামলার শিকার হয়।[৩২]
বরিশাল জেলা
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের গাজীতলা বাজারসংলগ্ন বিপুল চন্দ্র ও বিনয় দাসের বাড়িতে হামলা করে।[৭২] নগরীর নবগ্রাম রোডে সংসদ সদস্য কর্নেল জাহিদ ফারুক শামীমের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, তার বাসার সামনের ২৭টি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা টুটুল চৌধুরীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর সদর রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয়েও হামলা ও ভাংচুর করা হয়, সেখানেও দুইটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।[৭১]
পটুয়াখালী জেলা
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় অনন্ত মুখোপাধ্যায়ের বাসভবন হামলা করা হয়। কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদারের বাসভবনেও হামলা হয়েছে।[৪৬] পটুয়াখালীর সদর উপজেলার খলিশাখালী গ্রামে অভিলাষ তালুকদারের বাড়িতে ৭ আগস্ট রাতে হামলা ও লুটপাট হয়। পটুয়াখালীতে সরকারি দপ্তরসহ বিভিন্ন স্থাপনা, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোনালী ব্যাংক মোড়ে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যে আগুন দেওয়া হয়। পটুয়াখালীর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল হোসেনের বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।[৭৩]
ময়মংসিংহ বিভাগ
প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়াও শুধু ময়মংসিংহ বিভাগে ১৮৩ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ২ টি উপসানালয় হামলার শিকার হয়।[৩২] ১২ই অক্টোবর ৬৫ বছর বয়সী সাংবাদিক স্বপন কুমার ভদ্র হত্যার শিকার হয়।[৭৪][৭৫]
ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা জেলা
সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের বাসায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। শিববাড়ি রোডে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, দলের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের বাসায় অগ্নিসংযোগ, সার্কিট হাউজ সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর, ও অনেক আওয়ামীলীগ সমমনাদের বাড়িতে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। নেত্রকোনা সদর উপজেলার একটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করায় নয়টি গরু, ছয়টি ছাগল, সেচের যন্ত্রপাতি ও খড়ের গাদা পুড়ে যায়।[৭৬]
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের গোপালপুরে বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফে হামলা ও ভাঙচুরের চেষ্টা চালিয়েছে।[৭৭]
সিলেট বিভাগ
প্রথম আলোর তথ্যানুযায়ী ৫ থেকে ২০ আগস্ট রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়াও শুধু সিলেট বিভাগে ২৫ টি সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হামলার শিকার হয়।[৩২]
হবিগঞ্জ জেলা
হবিগঞ্জ ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আবু জাহির এবং সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মজিদ খানের বহুতল বাসভবনে ব্যাপক লুটপাট করা হয়। পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিমের বাসায় লুটপাট হয়। শহরে চেম্বার অব কমার্সের অফিস, এবং আওয়ামীলীগ কিছু নেতার বাসভবন পুরিয়ে দেওয়া হয়।[৪৭]
গুজবের বিস্তৃতি
এ সময় হিন্দুদের উপর আক্রমণকে কেন্দ্র করে ভারতীয় গণমাধ্যম থেকে অসংখ্য গুজব ছড়ানো হয়।[২৯] সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় নেতারা এসেছেন, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা এমন গুজব ছড়িয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের সীমান্ত এলাকায় জড়ো করেন।[৭৮][৭৯] বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর ‘ব্যাপক অত্যাচার’ হচ্ছে বলে বহু ভারতীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম একাউন্ট থেকে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। যুক্তরাজ্যে অবস্থিত টমি রবিনসন নামের এক অতি বামপন্থি ইনফ্লুয়েন্সার নানা ভিডিও যাচাই না করেই প্রচারের মাধ্যমে করে গুজব ছড়িয়েছেন।[২৯]
বাংলাদেশী হিন্দু ক্রিকেটার লিটন দাশের বাড়ি জ্বালানো হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছিলো। বাংলাদেশী হিন্দু সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়িতে সাম্প্রদায়িক কারণে আগুন দেওয়া হয়েছিলো বলে গুজব প্রচার করা হয়। তবে জানা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নং বাড়িতে আগুন দেওয়ায়, সেটি রাহুল আনন্দ বাড়িতে ছড়িয়ে পরে, এটা কোন সাম্প্রদায়িক হামলা নয়।[৮০]
ভারতীয় গণমাধ্যম রিপাবলিক বাংলা #AllEyesOnBangladeshiHindus এবং #SaveBangladeshiHindus দুটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে চট্টগ্রাম নবগ্রহ মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অসত্য ভিডিও প্রচার করে। এছাড়াও এই সংবাদ মাধ্যম নোয়াখালীর সেনবাগের এক নারীকে অপহরণের একটি ভিডিও সাম্প্রদায়িক হামলা বলে গুজব ছড়ায়। ভয়েস অব বাংলাদেশি হিন্দুজ নামে এক্স একাউন্ট থেকে কয়েক মাস পুরাতন লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীরহাটে আগুনে ১৫টি দোকান পুড়ে যাওয়ার ঘটনার ভিডিওকে বর্তমানে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ হিসাবে প্রচার করেছেন। বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে বেঁধে রাখার ঘটনাকে হিন্দু মেয়েদের ওপর নির্যাতনের ভিডিও দাবি করে গুজব ছড়ানো হয়। ২০২১ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছবি ও পুরাতন ঘটনার ছবি ব্যবহার করে ইসকন, কালীমন্দিরসহ বহু হিন্দু মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং ৫০০ জন মারা গিয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। ডিসমিস ল্যাব নামক ফ্যাক্ট চেককারী প্রতিষ্ঠান বলেছে, তারা ভারতীয় এক্স একাউন্ট থেকে অন্তত ৬টি ভুয়া ও গুজবের ভিডিও পেয়েছে, যেখান থেকে ভুল তথ্য ছড়ানো হছে।[৮১]
প্রতিবাদ কর্মসূচি
বাংলাদেশে ছাত্র জনতার অসহযোগ আন্দোলনে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরে সারাদেশে রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক হামলার শুরু হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় নানাভাবে এটার প্রতিবাদ জানায়।[৮২][৮৩] তারা ৯ আগস্ট, দিনাজপুরের বড় মাঠ ও বাংলাদেশের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এবং পরের দিন থেকে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সনাতনীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু মন্দির ও বাড়িঘর হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।[৮৪][৮৪] এসব কর্মসূচিতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার, বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন, দোষীদের শাস্তি, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন, পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন, এবং দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধারসহ ৮ দফা দাবি করা হয়।[৮৫][৮৬]
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সারা দেশে সহিংসতা, ভাঙচুর, লুটপাটের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে।[৮৭] বাংলাদেশ জাসদ দেশজুড়ে নিহত-আহতদের ক্ষতিপূরণ, হামলা, লুটপাট, চাঁদাবাজি, অগ্নিসংযোগ বন্ধের দাবী জানিয়ে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে।[৮৮] বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হিন্দুদের উপর হামলার প্রতিবাদ জানায় এবং স্বাধীন কমিশন করে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা-নির্যাতনের বিচারের দাবী জানায়।[৮৯][৯০]
প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তিনিও গুতেরেস বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সকল সহিংস ঘটনার পূর্ণ, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে।[৯১]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ দূতাবাস সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ একটি বার্তায় শান্তি রক্ষা করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা বলেছে, ‘‘বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ধর্মীয় স্থানগুলোতে হামলার খবর নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন৷’’[৯২][৯৩]
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি দেশের সব নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহিংসতা প্রতিরোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানান।[৯৪]
বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে ভারত সরকার একটি কমিটি গঠন করেন, যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পরিস্থিতির উপর নজর রাখবে। তারা হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে।[৯৫]
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের ওপর এই ধরনের হামলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল ধারণার বিপরীত।’’[৯২]
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতাকে "উদ্বেগজনক" বলে বর্ণনা করেছেন এবং স্বীকার করেছেন যে "এর সম্পূর্ণ মাত্রা এখনও পরিষ্কার নয়।" তিনি আশ্বস্ত করেছেন যে নয়াদিল্লি কূটনৈতিক চ্যানেল এবং বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতীয় সম্প্রদায়ের সাথে "ঘনিষ্ঠ এবং অবিচ্ছিন্ন" যোগাযোগ বজায় রেখেছে।[৯৬]
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তি ও উপাসনালয়ে হামলাকারী দুর্বৃত্তদের শনাক্ত, গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার করার দাবি জানান।[৯৭]
তসলিমা নাসরিন নিজের মতামত তুলে ধরে মন্তব্য করেন যে, ‘জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসীরা হিন্দুর ওপর হামলা করছে। তার মানে এই নয় যে আওয়ামী শাসন ভাল ছিল। সেই আমলেও হিন্দুরা অত্যাচারিত হয়েছে। স্বৈরাচারী গিয়ে সন্ত্রাসী আসে। ইসলামিস্ট গিয়ে ইসলামিস্ট আসে, কেবল মানুষ আসে না।’[৯৮]
আরো দেখুন
বহিঃসংযোগ
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.