২০০৯ শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দলের উপর আক্রমণ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
২০০৯ শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দলের উপর আক্রমণ ৩ মার্চ, ২০০৯ তারিখে সংঘটিত হয়। এতে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের সদস্যদের নিয়ে বহনকারী একটি বাসকে ১২জন বন্দুকধারী পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের কাছাকাছি এলাকায় আক্রমণ করে।[১] ক্রিকেটারগণ তখন স্বাগতিক পাকিস্তান ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দলের ছয়জন সদস্য আঘাতপ্রাপ্ত হন। ছয় পাকিস্তানি পুলিশ ও দুইজন নিরীহ সাধারণ নাগরিক এতে প্রাণ হারান।[১১] ফিলিস্তিনের সশস্ত্র জঙ্গী কর্তৃক ১৯৭২ সালে মিউনিখে অনুষ্ঠিত গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী ইসরাইলি ক্রীড়াবিদদের নিহত হবার পর এটিই প্রথম কোন জাতীয় ক্রীড়া দলের উপর সন্ত্রাসী আক্রমণ।[১২][১৩] ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, এ আক্রমণটি লস্কর-ই-ঝাংভি জঙ্গী সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত হয়েছিল।
২০০৯ পাকিস্তানে শ্রীলঙ্কা জাতীয় ক্রিকেট দলের উপর আক্রমণ | |
---|---|
![]() কালো/ধূসর রঙের রাস্তায় দলের পরিবহণ; নীল রঙে আক্রমণকারীরা পালিয়ে যায়। | |
স্থান | লাহোর, পাকিস্তান |
স্থানাংক | ৩১°৩০′৪৮.৩৬″ উত্তর ৭৪°২০′০.২৮″ পূর্ব |
তারিখ | ৩ মার্চ ২০০৯ ০৮:৪০ এএম লাহোর সময়[১] (ইউটিসি+৫) |
হামলার ধরন | অ্যাম্বুশ |
ব্যবহৃত অস্ত্র | একে-৪৭, ৬-৭ আরপিজি ও ২২-৭০ হ্যান্ড গ্রেনেড |
নিহত | ৬ পাকিস্তানি পুলিশ কর্মকর্তা ২ সাধারণ নাগরিক |
আহত | ৬ শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটার ও ২ কর্মকর্তা + ১ সংরক্ষিত আম্পায়ার |
সন্দেহভাজন হামলাকারী | অনেক[২][৩][৪][৫][৬][৭] |
অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা | ১৪-১৫[৮][৯] |
রক্ষাকারীগণ | পাঞ্জাব পুলিশ/এলিট পুলিশ[১০] |
পাকিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই সফরকারী ক্রিকেট দলগুলো নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপ করে আসছে। মে, ২০০২ সালে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল তাদের অবস্থানকারী হোটেলের বাইরে আত্মঘাতী বোমা হামলার ফলে টেস্ট সিরিজ বাতিল করে পাকিস্তান থেকে নিজ দেশে ফেরত যায়। অবশ্য পরবর্তীকালে ২০০৩-০৪ মৌসুমে তাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে পাকিস্তান সফরে এসেছিল নিউজিল্যান্ড দল।[১৪] সাম্প্রতিককালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল মাঠের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় সফর করতে অস্বীকার করে।[১৫] মুম্বই আক্রমণের প্রেক্ষিতে ভারত ক্রিকেট দল পাকিস্তান সফর স্থগিত করে ও তাদের স্থলাভিষিক্ত হয় শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল।[১৬]
সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলকে পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রপতি-ধাঁচের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা ঘোষণা করে। [১৭] ২০০৪ সালে লস্কর-ই-তৈয়বা ক্রিকেট খেলার বিপক্ষে ফতোয়া জারি করে। সংগঠনটি ক্রিকেট খেলাকে ইসলামবিরুদ্ধ বলে জানায়।[১৮] অক্টোবর, ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সফরের পর শ্রীলঙ্কা দলের এ সফর পাকিস্তানে প্রথম টেস্ট সফররূপে পরিচিতি পায়।[১৯]
কর্মকর্তাদের মতে, লাহোরের কেন্দ্রস্থলে লিবার্ট স্কয়ারের কাছে ১২জন বন্দুকধারী আত্মগোপনে ছিল। তারা শ্রীলঙ্কা দলকে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বহনকারী বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। বাসটি রাস্তা অতিক্রমকালে অতর্কিতে বাসকে লক্ষ্য করে গুলি করতে শুরু করে। পাকিস্তানি পুলিশ শ্রীলঙ্কা দলকে রক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। গুলি চলাকালে ছয় পুলিশ ও দুইজন নিরীহ সাধারণ ব্যক্তি নিহত হয়। কিছু প্রতিবেদনে প্রকাশ পায় যে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা রক্ষীরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। প্রায় ২০ মিনিট পর রকেট লাঞ্চার ও গ্রেনেড ফেলে সশস্ত্র বন্দুকধারীরা পালিয়ে যান।[১১]
বন্দুকধারীরা প্রথমে বাসের চাকা লক্ষ্য করে আঘাত হানে। পরবর্তীতে তারা বাসকে লক্ষ্য করে আঘাত চালায়।[২০] আক্রমণকারীরা বাসে রকেট আক্রমণ চালালেও তা লক্ষ্যে আঘাত হানতে ব্যর্থ হয় ও নিকটস্থ বৈদ্যুতিক খুঁটিতে আঘাত হানে। বাসচালক মেহার মোহাম্মদ খলিল প্রায় ৫০০ মিটার বাসকে সম্মুখে স্টেডিয়ামের কাছে নিয়ে যেতে সমর্থ হন। খলিলকে তার সাহসিকতায় বীর বনে যান।[২১] এছাড়াও আক্রমণকারীরা বাসকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে যা বাস চলে যাবার পর বিস্ফোরিত হয়।[২২]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.