Loading AI tools
ভারতীয় রাজনীতিবিদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (২৩ নভেম্বর ১৯০৭ - ৩০ জুলাই ২০০৪),( যিনি হীরেন মুখোপাধ্যায় বা হীরেন মুখার্জি নামেও পরিচিত) , ছিলেন একজন ভারতীয় (বামপন্থী) রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং গভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী শিক্ষাবিদ। তিনি ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে সেই সময়ের নিষিদ্ধ ভারতীয় কমিউনিস্টপার্টির সদস্য হন। তিনি ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত টানা পঁচিশ বৎসর কলকাতার উত্তর-পূর্ব লোকসভা কেন্দ্র হতে নির্বাচিত ভারতের লোকসভার সংসদ সদস্য ছিলেন। [1] [2] [3] ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি জরুরী অবস্থাকে সমর্থন করায় তিনি প্রতাপচন্দ্র চন্দ্রের কাছে পরাজিত হন। [4] [5]
হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় | |
---|---|
সংসদ সদস্য, লোকসভা | |
কাজের মেয়াদ ১৯৫২ – ১৯৭৭ | |
পূর্বসূরী | নতুন আসন |
উত্তরসূরী | প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র |
সংসদীয় এলাকা | কলকাতা উত্তর-পূর্ব |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | কলকাতা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ব্রিটিশ ভারত | ২৩ নভেম্বর ১৯০৭
মৃত্যু | ৩০ জুলাই ২০০৪ ৯৬) | (বয়স
জাতীয়তা | ভারতীয় |
রাজনৈতিক দল | ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি |
দাম্পত্য সঙ্গী | বিভা চট্টোপাধ্যায় |
পিতামাতা | শচীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (পিতা) প্রফুল্লনলিনী দেবী (মাতা) |
পুরস্কার | পদ্মবিভূষণ |
তিনি ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন। এর আগে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে পদ্মভূষণে ভূষিত হয়েছিলেন। [6] অসাধারণ পাণ্ডিত্য এবং বিশ্বকোষীয় স্মৃতির ও সুস্নাত ব্যক্তিত্বের অধিকারী তিনি বাংলা ও ইংরাজী উভয় ভাষারই প্রগাঢ় বৌদ্ধিক সত্তার সুবক্তা ছিলেন। সুস্পষ্ট কণ্ঠে অনবদ্য অক্সোনিয়ান ইংরাজী উচ্চারণে আর বাংলায় কলকাতায় প্রচলিত রীতি ও স্বরপ্রক্ষেপন শৈলিতে তার ভাষণ অভিনন্দিত হত। তিনি ভারতের সর্বকালের অন্যতম উল্লেখযোগ্য সংসদীয় বক্তা ছিলেন।
হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায়। পিতা শচীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও মাতা প্রফুল্লনলিনী দেবী। তাদের আদি নিবাস ছিল অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার হালিশহরে। হীরেন্দ্রনাথের বিদ্যালয়ের পাঠ কলকাতার তালতলা হাই স্কুলে। এরপর ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইতিহাসের অনার্স নিয়ে বি.এ. পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন এবং ঈশান স্কলারশিপ লাভ করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে এম.এ পাশ করেন। তৎকালীন বাংলা সরকারের স্কলারশিপ নিয়ে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন যান। অক্সফোর্ডের সেন্ট ক্যাথরিন কলেজে উচ্চ শিক্ষা লাভের পর বি.লিট. (অক্সন) ডিগ্রি পান এবং লন্ডনের লিঙ্কনস ইন হতে 'ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল' হওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন। [1]
হীরেন মুখোপাধ্যায় প্রথমে অধ্যাপনা দিয়েই কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৪-৩৫ খ্রিস্টাব্দে অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও রাষ্ট্রনীতি বিষয়ের প্রভাষক ছিলেন। ১৯৪০-৪৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও রাজনৈতিক দর্শনের প্রভাষক ছিলেন। তবে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রধান ছিলেন।[1] কলেজে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি বাম রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে সেসময়ের নিষিদ্ধ ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হন এবং ওই বৎসরেই প্রতিষ্ঠিত প্রগতি লেখক সংঘের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস কনফারেন্স, নাগপুর, 1940; সম্পাদক "ইন্দো-সোভিয়েত জার্নাল", কলকাতা, 1941-45; চেয়ারম্যান, ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন (আইপিটিএ) সম্মেলন, বোম্বে, 1943; প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, সোভিয়েত ইউনিয়নের বন্ধু, এবং যুগ্ম সচিব, 1944-52; যুগ্ম সম্পাদক, "ক্যালকাটা উইকলি নোটস" (ল জার্নাল), 1945-52; সদস্য, বেঙ্গল কমিটি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, 1947-49; সভাপতি, বেঙ্গল মোশন পিকচার্স এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন 1946 সাল থেকে; সহ-সভাপতি, বেঙ্গল প্রাদেশিক ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস, 1948-49। 1948 এবং 1949-এ দুবার বিনা বিচারে কারাভোগ করেছেন।
তিনি কলকাতা উত্তর-পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হয়ে ১৯৫২,১৯৫৭, ১৯৬২, ১৯৬৭ এবং ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে টানা পাঁচবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ভারতের লোকসভার সদস্য হন। বিরোধী কমিউনিস্ট পার্টির সংসদীয় নেতা হিসাবে অনন্য সাধারণ ভূমিকা তিনি পালন করেছন। ভারতের সংসদীয় ইতিহাসে তথা জাতীয় জীবনে স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন।
১৯৬৯-৭০ খ্রিস্টাব্দে, ১৯৭৩-১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সদস্য হন এবং ১৯৭৫-৭৬ খ্রিস্টাব্দে, ১৯৭৬-৭৭ খ্রিস্টাব্দে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান হন। ভারতের লোকসভা প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রেলিয়ায় কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সে, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ইতালিতে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন কনফারেন্সে, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিলে ইয়াউন্ডে, ক্যামেরুন (পশ্চিম আফ্রিকা) এবং ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বরে রোমে যান।
এছাড়াও তিনি পার্লামেন্ট লাইব্রেরির সাম্মানিক উপদেষ্টা, ১৯৭৮-৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়ে ব্যুরো অফ পার্লামেন্ট স্টাডিজ অ্যান্ড ট্রেনিং-এর এবং লোকসভার অধ্যক্ষের সাম্মানিক উপদেষ্টাপদেও ছিলেন।
১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক টেক-ইন, ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে বার্লিনের জার্মান একাডেমিতে বক্তৃতার জন্য এবং ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার কাজাখস্তানের আলমা আটায় বর্তমানের আলমাতিতে লেলিনের উপর আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক ব্যস্ততা সত্ত্বেও, হীরেন মুখোপাধ্যায় একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কার লাভ করেন। হন; এবং ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কার এবং ২০০০ খ্রিস্টাব্দে নজরুল পুরস্কার লাভ করেন। ত্রিপুরা সরকার ২০০২ খ্রিস্টাব্দে অদ্বৈত মল্লবর্মণ পুরস্কার প্রদান করে। ২০০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি "যুগের যন্ত্রণা ও প্রত্যয়ের সংকট" শীর্ষক বইটির জন্য "মুজাফফর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার" লাভ করেন।
আজীবন সেবার জন্য তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মভূষণ এবং ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন।
হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সাত দশক ধরে ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষায় অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছেন এবং পঞ্চাশটির মত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
তাঁর ইংরেজি এবং বাংলা দুই ভাষার রচনাতেই এক স্বতন্ত্র এবং অনবদ্য শৈলীর সুস্পষ্ট ছাপ লক্ষ্য করা যায়।ইতিহাস, সমাজ, দর্শন, সাহিত্য, কাব্য, রাজনীতির যেকোন বিষয়ে বিষয়বস্তুর গভীরতা সত্ত্বেও তিনি ক্লাসিক্যাল থেকে কথোপকথন পর্যন্ত বিশাল শব্দভাণ্ডার হতে শব্দচয়ন, যথোপযুক্ত ও সারগ্রাহী উপস্থাপনায়, মনোমুগ্ধকর হালকা এবং উচ্ছ্বাস রচনার মধ্যে প্রকাশ করতে পারতেন।তিনি একজন সক্রিয় পত্রলেখক ছিলেন এবং প্রতিটি সাংবাদিকের উত্তর স্বহস্তে লিখে দিতেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। প্রখর স্মৃতিশক্তিতে তিনি ভাষণে, রচনায় সংস্কৃত ভাষার উদ্ধৃতি যোগ করতেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল –
সর্বজন শ্রদ্ধেয় কমিউনিস্ট নেতা হীরেন মুখোপাধ্যায় ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুলাই কলকাতায় প্রয়াত হন। তার মৃত্যুতে ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ১লা আগস্টেদ্য হিন্দু পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে গোপাল গান্ধী হীরেন মুখোপাধ্যায়কে "কমিউনিস্ট ঋষি" হিসাবে আখ্যা প্রদান করেন
তাঁর অশেষ গুণাবলী এবং প্রায়শই জ্বালাময়ী বাগ্মীতা সত্ত্বেও,ব্যক্তিগত আচার-আচরণে হীরেন মুখোপাধ্যায় ছিলেন এক শান্ত প্রকৃতির এবং সুস্নাত ব্যক্তিত্বের মানুষ। ভারতের রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ ও প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। নিজের কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়াও ভালোবাসা, প্রশংসা, শ্রদ্ধা পেয়েছেন তৎকালীন প্রবীণ ও নবীন কংগ্রেস নেতাদের কাছ থাকেও। তিনি পার্লামেন্ট তথা ভারতের জাতীয় জীবনে এমন ছাপ রেখে গেছেন যে, তার জন্মশতবর্ষ স্মরণে রেখে ভারতের অন্যতম সেরা পার্লামেন্টারিয়ানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপনার্থে ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ হতে ভারতের লোকসভায় প্রথম "প্রফেসর হীরেন মুখার্জি মেমোরিয়াল পার্লামেন্টারি লেকচার" শীর্ষক বক্তৃতার সূত্রপাত করা হয়। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ আগস্ট প্রথম বক্তৃতা প্রদান করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে বক্তৃতায় অংশ নেন বাংলাদেশী নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাঙ্কার অধ্যাপক মুহাম্মাদ ইউনূস। ২০১০ ও ২০১২ʼ খ্রিস্টাব্দে বক্তৃতা প্রদান করেন যথাক্রমে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জগদীশ ভগবতী এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী, HE Lyonchen Jigmi Y. Thinley৷ লোকসভা সচিবালয় পঁচিশ বৎসরব্যাপী লোকসভায় তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা সংগ্রহ করে "সংসদে হীরেন মুখার্জি" শিরোনামের একটি সংকলন প্রকাশ করে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.