Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্ক বাংলাদেশের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় অবস্থিত একটি ভাস্কর্য উদ্যান।[1] উদ্যানটি সামিট পাওয়ার ৪৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র সংলগ্ন দুই একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এতে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের ভাস্কর্য, ম্যুরাল এবং শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। ৩৪০ ফুট বিশিষ্ট বাংলাদেশের দীর্ঘতম ম্যুরাল শ্রম ও সৃষ্টি এই উদ্যানে রয়েছে।[2] ভাস্কর্য উদ্যানটির শিল্পকর্মগুলো মূলত শ্রম ও সৃষ্টির সম্মিলনকে বিষয়বস্তু করে নির্মাণ করা হয়েছে। উদ্যানটির ভাস্কর্যগুলোতে আধুনিক ও সমকালীন নির্মাণশৈলী ব্যবহৃত হয়েছে।
হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্ক | |
---|---|
ধরন | উন্মুক্ত ভাস্কর্য উদ্যান |
অবস্থান | কালিয়াকৈর, গাজীপুর |
নিকটবর্তী শহর | গাজীপুর |
স্থানাঙ্ক | ২৩.৯৯১০১২° উত্তর ৯০.৩৩৮৮৮৪° পূর্ব |
আয়তন | ২ একর |
পরিচালিত | সামিট পাওয়ার ৪৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র |
অবস্থা | নির্মাণকাজ চলমান, দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত নয় |
২০১৮ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার কড্ডাতে সামিট গ্রুপের ৪৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ শেষ হবার অব্যবহিত পরেই হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্কের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও শিল্পকর্ম-সংগ্রাহক মুহাম্মদ আজিজ খানের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান উদ্যানটির জন্য ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও শিল্পকর্ম নির্মাণ করেন। ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানের কর্মজীবন ও তাঁর পাঁচ দশকের অধিক সময়ের শিল্পসাধনার প্রতি সম্মান জানিয়ে উদ্যানটির নাম ‘হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্ক’ করা হয়েছে।
উদ্যানটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে দুই একরের অধিক জায়গাজুড়ে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে উদ্যানটি উদ্বোধন করা হয়।[3][4]
হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্কে প্রায় ২০টি ভাস্কর্য রয়েছে। শিল্পকর্মগুলোর প্রধান বিষয় শ্রম ও সৃষ্টির মেলবন্ধন। এই বিষয়কে উপজীব্য করে বিদ্যুতকেন্দ্রে একটে দালানের ৩৪০ ফুট দেয়ালজুড়ে একটি ম্যুরাল নির্মিত হয়েছে, যার নাম শ্রম ও সৃষ্টি। হামিদুজ্জামান খান ম্যুরালটিতে আধুনিক সভ্যতায় বিদ্যুতের গুরুত্বকে তুলে ধরেছেন। সাদা পটভূমির উপর পাথর ও ধাতু দিয়ে তৈরি ম্যুরালটি বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতির নকশার সম্মিলনে নির্মিত। এতে শিল্পকারখানা ও বিদ্যুতকেন্দ্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন যন্ত্রাংশের অবয়ব ও আঁকাবাকা রেখা স্থান পেয়েছে। ব্যবহৃত ধাতুর মধ্যে রয়েছে স্টেইনলেস স্টিল, মার্বেল ও লোহা। এসব অবয়বের মধ্যে প্রধানত রয়েছে চাকা ও টারবাইন। বিভিন্ন আকৃতির চাকা ও চাকার খন্ডাংশ পুনঃপুনঃ ব্যবহার করা হয়েছে।
অনেকগুলো ভাস্কর্য উদ্যানের সবুজ ঘাসের উপর রয়েছে, আবার কিছু ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে সিমেন্ট পৃষ্ঠের উপরে। কিছু ভাস্কর্য ভূমিপৃষ্ঠের সবুজ ঘাসকে অক্ষত রেখেই নির্মাণ করা হয়েছে পরিবেশগত সংবেদনশীলতা রক্ষার্থে। ভাস্কর্যের বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, প্রাচীন ভাষা ও ভাষাগত বৈচিত্র্য, পাখি, লোকসংস্কৃতি, মানব-অনুভূতি ও বাংলাদেশের ইতিহাস। ভাস্কর্যের নির্মাণশৈলী প্রধানত আধুনিক ও সমকালীন। এগুলো প্রধানত বিমূর্ত প্রকাশভঙ্গিতে তৈরি। এসবের নির্মাণে জ্যামিতিক ও স্বতঃস্ফূর্ত উভয় ধরনের নকশার প্রয়োগ রয়েছে। ভাস্কর্য ও শিল্পকর্মের নির্মাণে হামিদুজ্জামান খান ধাতু, পাথর, গ্রানাইট, সিমেন্ট ও স্টিলের তার ব্যবহার করেছেন।[5]
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যার স্মরণে উদ্যানটির রয়েছে একটি ভাস্কর্য। এতে একটি রিকশায় একজন রিকশাচালক ও যাত্রীর প্রাণ বিসর্জনের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে ধাতব আকৃতিতে। একটি ভাস্কর্যে প্রস্ফূটিত হয়েছে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পাঠরত মানব প্রতিকৃতি। পৃথিবীর গতিময়তা নির্দেশ করে তিনটি চাকার সম্মিলনে নির্মিত হয়েছে একটি ভাস্কর্য। কিছু ভাস্কর্য পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বসার বেঞ্জ হিসেবে। লাইফ এন্ড লাইফলেস নামের একটি ভাস্কর্যে চাকা ও পাখির বিমূর্ত অবয়ব প্রকাশ পেয়েছে। ভাস্কর্য উদ্যানটিতে ভাস্কর্য ছাড়াও ইনস্টলেশন বা স্থাপনা-শিল্প ও চিত্রশিল্প রয়েছে। একটি স্থাপনা-শিল্প পাখির বিমূর্ত অবয়বে তৈরি এবং তা বিদ্যুতের খুটিতে স্থাপিত। অন্যান্য স্থাপনা-শিল্পের মধ্যে রয়েছে দ্য সিড এবং হুইল অফ সিভিলাইজেশন। উদ্যানের ভেতরে অবস্থিত একটি একতলা দালানে রয়েছে হামিদুজ্জামান খানের আঁকা চিত্রকর্ম। দালানটির একটি দেয়ালে সিগনাগ নামে একটি ধাতব ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে। এটির বিষয়বস্ত প্রাচীন ভাষা ও ভাষাগত বৈচিত্র্য। এছাড়া উদ্যানের অভ্যন্তরে পুকুরেও ভাস্কর্য স্থাপনের জন্য হামিদুজ্জামান কাজ করছেন।[6]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.