Loading AI tools
বাংলাদেশী ভাস্কর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হামিদুজ্জামান খান একজন খ্যাতিমান বাংলাদেশী শিল্পী ও ভাস্কর। ফর্ম, বিষয়ভিত্তিক ও নিরীক্ষাধর্মী ভাস্কর্যের জন্য তিনি সুপরিচিত। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত একাত্তর স্মরণে শীর্ষক কাজের জন্য তিনি ভাস্কর হিসেবে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে খ্যাতি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের রাজধানী সিউলে অলিম্পিক ভাস্কর্য পার্কে ভাস্কর্য স্থাপনের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিচিতি অর্জন করেন।
হামিদুজ্জামান খান | |
---|---|
জন্ম | ১৯৪৬ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা আর্ট কলেজ (বর্তমানে চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ) |
পুরস্কার | একুশে পদক (২০০৬) |
উল্লেখযোগ্য নকশা | সংশপ্তক |
১৯৫০-এর দশকে ভাস্কর্য নভেরা আহমেদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভাস্কর্যে আধুনিক ধারার সূচনা ঘটার পরে হামিদুজ্জামান খান তাঁর স্বকীয় ধারার আধুনিক কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভাস্কর্যের প্রসারে অবদান রাখেন। তাঁর ভাস্কর্যে এক্সপ্রেশনিজম বা প্রকাশবাদ, মিনিমালিজম বা অল্পায়নের মত নির্মাণশৈলী লক্ষ্য করা যায়। তিনি ভাস্কর্য হিসেবে আধা-বিমূর্ত ও বিমূর্ত – উভয় ধারাতেই কাজ করেছেন।
ভাস্কর্য ছাড়াও হামিদুজ্জামান খান তাঁর চিত্রকর্মের জন্যেও সুপরিচিত। ১৯৬০-এর দশকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন জলরঙের চিত্রকর্মের জন্য তাঁকে প্রশংসা করেছিলেন ও উৎসাহ দিয়েছিলেন। এছাড়া ১৯৭৬ সালে প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন মুম্বাইতে একটি প্রদর্শনীতে তাঁর ভাস্কর্যের প্রশংসা করেন। হামিদুজ্জামান খানের জলরঙ ও অ্যাক্রিলিক চিত্রকর্মে বিমূর্ত প্রকাশবাদের ধারা লক্ষ্য করা যায়। তাঁর চিত্রকর্মের প্রধান বিষয়বস্ত নিসর্গ ও মানবশরীর।
ভাস্কর্যে অবদানের জন্য ২০০৬ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন। ১৯৭০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষকতা করেছেন। পাঁচ দশকেরও অধিক সময়ের কর্মজীবনে তাঁর শিল্পকর্ম বাংলাদেশ, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, বুলগেরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শিত বা স্থাপিত হয়েছে।
হামিদুজ্জামান ১৯৪৬ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারত অধীনস্থ বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ জেলায় সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা সায়েমউদ্দিন খান ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক এবং মাতা রাবেয়া খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। হামিদুজ্জামান তাঁর তিন ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী হেমেন্দ্রনাথ মজুমদারের বাড়ি ছিল সহশ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম গচিহাটায়। হামিদুজ্জামান প্রায়ই সেখানে যেতেন এবং হেমেন্দ্রনাথের চিত্রকর্ম দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। হামিদুজ্জামান প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন তার নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তারপর বনগ্রাম আনন্দ কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। নীরদচন্দ্র চৌধুরীর ভাইয়ের পুত্র তার সহপাঠী ছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি স্কেচ করতেন। এসময় তিনি তার দাদার একটি ছবি এঁকেছিলেন যা তার দাদার মুখের আকৃতির সাথে মিলে যায়।[1]
মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ভৈরব কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু এই ধরনের পড়াশোনা তার ভালো লাগত না। তাই তিনি পড়াশুনা ছেড়ে সিলেট চলে যান। পরে তার এলাকার পোস্টমাস্টার হামিদুজ্জামানের বাবাকে ছেলের আর্ট কলেজে পড়ার আগ্রহের কথা জানান। তার বাবা তাকে নিয়ে যান শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের বাসায়। জয়নুল আবেদীন তাকে আর্ট কলেজে ভর্তি করতে সাহায্য করেন। আর্ট কলেজে হামিদুজ্জামান প্রখ্যাত শিল্পী জয়নুল আবেদিন, সফিউদ্দিন আহমেদ, আমিনুল ইসলাম ও মুস্তফা মনোয়ারের সান্নিধ্য লাভ করেন। জয়নুল আবেদীন হামিদুজ্জামানের জলরঙ-এর কাজের প্রশংসা করতেন এবং তাকে উৎসাহিত করেছিলেন জলরঙে অনুশীলনের জন্যে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন বার্মার (বর্তমান মায়ানমার) রাষ্ট্রপতি নে উইন আর্ট কলেজ পরিদর্শনে এলে জয়নুল আবেদীন তাঁকে হামিদুজ্জামানের অঙ্কিত একটি শিল্পকর্ম উপহার হিসেবে প্রদান করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা আর্ট কলেজ (বর্তমান চারুকলা অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এসময় বিশিষ্ট শিল্পী আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে আর্ট কলেজে ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।[2]
ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন ১৯৬৭ সালে হামিদুজ্জামান সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হন। এতে তাঁর মাথার করোটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন প্রধান সার্জন ডা. আছিরউদ্দিনের পরামর্শে ও সহায়তায় তিনি করোটির অস্ত্রোপচারের জন্যে ১৯৬৯ সালে সমুদ্রপথে যুক্তরাজ্যে যাত্রা করেন। ডাকারে যাত্রাবিরতিকালে হামিদুজ্জামান আফ্রিকান ঐতিহ্যবাহী দারুশিল্প ও মুখোশ দেখে আকৃষ্ট হন। এছাড়া কেপটাউনের পাথুরে পর্বত, ঝর্ণা ও সমুদ্র তাকে আকৃষ্ট করে। যুক্তরাজ্যে পৌছে হামিদুজ্জামান এডিনবরা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতাল ত্যাগের পর তিনি প্রায় এক মাস এডিনবরায় অবস্থান করেন। এসময় তিনি স্কটিশ জাতীয় জাদুঘর এবং এডিনবরায় একটি উদ্যানে বিখ্যাত ভাস্কর হেনরি মুরের ভাস্কর্য দেখে অভিভূত হন। এরপর লন্ডনে তিনি চারমাস অবস্থান করেন। লন্ডনে হামিদুজ্জামান ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ভিক্টোরিয়া এন্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম, ন্যাশনাল গ্যালারি এবং টেট গ্যালারির প্রাচীন ভাস্কর্য, ব্রিটিশ চিত্রশিল্পীদের ছবি ও শিল্পকর্ম দেখেন। টার্নার জন কনস্টেবলের নৈসর্গিক চিত্রকর্ম তাঁকে আকৃষ্ট করে।[3] এডিনবরা ও লন্ডনে আধুনিক শৈলীর ভাস্কর্যে বিমূর্ত আঙ্গিকের প্রভাব, নাগরিক পরিবেশ ও ভূদৃশ্যের নান্দনিক গুণ বৃদ্ধিতে বৃহদায়তন ভাস্কর্যের ব্যবহার হামিদকে বিশেষভাবে ভাস্কর্যের ব্যাপারে আগ্রহী করে। প্যারিসে দুই সপ্তাহ অবস্থানকালে তিনি লুভ্র জাদুঘরে পিকাসো, মাতিস, রদ্যাঁ প্রমুখ শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখেন। সুইস ভাস্কর জিওকোমিতির একক প্রদর্শনী তাঁকে আধুনিক ধাঁচের ভাস্কর্যের প্রতি আকৃষ্ট করে।[3][4][5] এছাড়া প্যারিসের উন্মুক্ত অঙ্গনে অসংখ্যা ব্রোঞ্জ ও মার্বেল পাথরের ভাস্কর্য দেখে তিনি অভিভূত হন। এরপর ইতালিতে সেন্ট পিটার্স চার্চে অসংখ্যা ভাস্কর্য এবং বিশেষ করে মাইকেলেঞ্জেলোর পিয়েতা, সিস্টিন চ্যাপেল সিলিং প্রত্যক্ষ করেন। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালি ভ্রমণকালে প্রখ্যাত শিল্পীদের ভাস্কর্য ও শিল্পকর্ম পরিদর্শন হামিদুজ্জামানকে প্রবলভাবে আলোড়িত করে এবং বিশেষভাবে ভাস্কর্যের প্রতি আগ্রহী করে তোলে। ১৯৬৯ সালে হামিদ চিকিৎসা ও বিদেশ ভ্রমণ শেষে ঢাকায় ফিরে আসেন। ইতোমধ্যে আর্ট কলেজে প্রখ্যাত শিল্পী আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে ভাস্কর্য বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। হামিদ ভাস্কর্য শেখার ইচ্ছার কথা আবদুর রাজ্জাকের কাছে প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে হামিদ তাঁর শিক্ষক আবদুর রাজ্জাকের অধীনের ছয় মাস ভাস্কর্য শেখেন।[2][6]
হামিদুজ্জামান খান ১৯৭৩ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য ভারত সরকারের বৃত্তি অর্জন করেন। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সালে উপমহাদেশের প্রখ্যাত বারোদার মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা লাভ করেন। বারোদায় হামিদুজ্জামান প্রখ্যাত ভারতীয় শিল্পী ও ভাস্কর রাঘব কানেরিয়া, মাহেন্দ্র পান্ডিয়া, শঙ্ক চৌধুরী, কে. জি. সুব্রামানিয়ানের অধীনে শিক্ষালাভ করেন।[4] বারোদায় পড়াকালীন বোম্বের এক প্রদর্শনীতে তার ভাস্কর্য প্রথম পুরস্কার লাভ করে এবং প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনকে আকৃষ্ট করে।[2] ১৯৭৬ সালে তিনি বারোদা মহারাজা সাহজিরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাস্কর্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[4]
১৯৮২ থেকে ১৯৮৩ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের স্কাল্পচার সেন্টার স্কুল থেকে মেটাল কাস্টিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।[1] এসময় নিউ ইয়র্ক সিটিতে হেনরি মুরের একটি ভাস্কর্য প্রদর্শনী দেখে হামিদ প্রভাবিত হন।[7] ১৯৮২ সালে বিশ্বব্যাংক হামিদুজ্জামানের তিনটি চিত্রকর্ম ক্রয় করে এবং ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে স্থাপন করে। নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে তিনি যেসব ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিলেন, সেগুলো নিয়ে ১৯৮৩ সালে ওয়াশিংটন, ডি.সি.-তে বাংলাদেশ দূতাবাসে ভাস্কর্য প্রদর্শনী হয়।[4]
ভাস্কর্য চর্চার আগে হামিদুজ্জামান খান জলরঙের চিত্রকর্ম প্রদর্শন ও বিক্রয় করে খ্যাতি লাভ করেন। আর্ট কলেজের ছাত্র থাকাকালীন হামিদের বেশ কিছু জলরঙের চিত্রকর্ম জয়নুল আবেদীন ক্রয় করেন। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত প্রথম গ্যালারি 'আর্ট অ্যাসেম্বল গ্যালারি'-তে হামিদের একটি জলরঙের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে তাঁর অনেকগুলো চিত্রকর্ম বিক্রয় হয়। এছাড়া ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত হামিদের অঙ্কিত জলরঙের চিত্রকর্ম নিয়ে ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম ক্লাবে প্রদর্শনী হয় এবং সেই প্রদর্শনীর সবগুলো চিত্রকর্ম চট্টগ্রাম ক্লাব কিনে নেয়। প্রাপ্ত অর্থ বিদেশে চিকিৎসা লাভের ক্ষেত্রে হামিদকে সাহায্য করে।[2]
হামিদুজ্জামান ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হামিদ পাকিস্তান সৈন্যদের প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও ছাড়া পান। ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ ঢাকার নিউ মার্কেট এলাকায় হামিদুজ্জামান অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। যুদ্ধের নৃসংশতা এবং বাঙালিদের অভাবনীয় দুর্দশা হামিদকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। ফলে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে প্রথম দুই দশকে ভাস্কর্য হিসেবে তিনি যেসব ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন, সেসবের অধিকাংশই মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় একাত্তর স্মরণে শিরোনামে নির্মিত হয়। ১৯৭২ সালে চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সাথে তিনি জাগ্রত চৌরঙ্গী নামে একটি ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য কাজ করেন। এতে একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। গাজীপুরে জয়দেবপুর চৌরাস্তার মোড়ে স্থাপিত এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য।[8] বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত প্রথম জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে হামিদুজ্জামান ব্রোঞ্জ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় তৈরি ভাস্কর্য নিয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং শ্রেষ্ঠ ভাস্কর-এর পুরস্কার অর্জন করেন। তাঁর পুরস্কারজয়ী ভাস্কর্যটির নাম ছিল দরজা, এটি একটি ঘরের দরজার কোণায় পড়ে থাকা যুদ্ধে শহীদ মানবদেহের প্রতিকৃতি।[7]
বাংলাদেশে হামিদুজ্জামান খান জাতীয় পর্যায়ে খ্যাতি লাভ করেন বঙ্গভবনের প্রবেশপথে ফোয়ারায় স্থাপিত পাখি পরিবার শীর্ষক ভাস্কর্যের মাধ্যমে। ভাস্কর্যের তিনটি পাখি ব্রাশ পাইপ ও শিট দিয়ে তৈরি এবং গোলাকার বেদী মার্বেল পাথরে মোড়ানো। পাখিগুলোর মাথা মিলে মিনারের মত আকৃতি। হামিদ ভাস্কর্যের ফর্ম বক পাখি থেকে নিয়েছিলেন এবং কাজটি করতে তাঁর নয় মাস সময় লেগেছিল। ভাস্কর্যটি স্থাপনের পরে তৎকালীন মন্ত্রি ও সরকারী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ সেটি পছন্দ করেননি। তাঁরা বলেছিলেন যে সেটি সরিয়ে ফেলা হবে। তবে ফরাসী রাষ্ট্রদূত বঙ্গভবনে কাজের প্রয়োজনে এলে ভাস্কর্যটি লক্ষ্য করে করেন এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে অবহিত করেন যে সেটি ফ্রান্সের সমকালীন ভাস্কর্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এ ঘটনার পরে হামিদকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ করা হয় এবং মন্ত্রী ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ ভাস্কর্যটির প্রশংসা করেন। শিল্প-সমালোচকরা ভাস্কর্যটিকে বাংলাদেশে আধুনিক ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ উপস্থাপনা বলে আখ্যায়িত করেন। শিল্প সমালোচক সৈয়দ আলী আহসান তাঁর বইয়ে এই কাজটিকে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন।[2]
১৯৮১ সালে সিলেটের জালালাবাদ সেনানিবাসে হামিদের একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বে গঠিত ভাস্কর্যটির নাম হামলা। একই বিষয়বস্তকে কেন্দ্র করে ১৯৮৫ সালে বাংলা একাডেমিতে মুক্তিযোদ্ধা শীর্ষক তাঁর আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। হামিদের প্রথম একক প্রদর্শনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ গ্যালারিতে ১৯৮২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। তাতে প্রধানত তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যসমূহ প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনীতে প্রচুর জনসমাগম ঘটে এবং শিল্প সমালোচক ও সমঝদাররা প্রদর্শনীটির ব্যাপারে ইতিবাচক মন্তব্য প্রকাশ করেন।[8] ১৯৮৬ সালে নয়া দিল্লীর ললিত কলা একাডেমির আয়োজনে ৬ষ্ঠ ত্রিবার্ষিক শিল্প প্রদর্শনীতে হামিদুজ্জামান বাংলাদেশের পক্ষ হতে আনুষ্ঠানিকভাবে অংশ নেন। ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো-তে ১৯৮৭ সালে হামিদের একক ভাস্কর্য প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত জাতীয় ভাস্কর্য প্রদর্শনীতে হামিদুজ্জামান শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার অর্জন করেন।[9] ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে জিয়া সার কারখানার সম্মুখে ১৯৮৮ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় তাঁর নির্মিত জাগ্রতবাংলা শীর্ষক আরেকটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়।[10]
হামিদুজ্জামান খান ১৯৮৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল অলিম্পিক কমিটি থেকে তাঁর একটি ভাস্কর্য স্থায়ীভাবে স্থাপনের জন্য আমন্ত্রণ পান। ভাস্কর্যটির নাম স্টেপস্ (সিড়ি)। এটি কপার দিয়ে তৈরি, উচ্চতা ১৩ ফুট।[11] সিউল অলিম্পিক পার্কের ভাস্কর্য উদ্যানে একশ পঞ্চাশটি দেশের ভাস্কর্যের পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের অংশগ্রহণ হিসেবে স্থান পায়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পাঠাগারের সম্মুখে ১৯৮৯ সালে হামিদের সংশপ্তক নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। মূল ভাস্কর্যটির উচ্চতা ১২ ফুট এবং বেদীর উচ্চতা ১৩ ফুট। বেদী লাল ইট দ্বারা নির্মিত এবং মূল ভাস্কর্য ব্রোঞ্জের পাত দিয়ে তৈরি। এতে শত্রুর আঘাতে দেহ থেকে একটি হাত ও একটি পা বিচ্ছিন্ন হওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার অবয়বকে আধুনিক শৈলীতে উপস্থাপন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা প্রচণ্ড গতিতে ধাবমান, কোন বাঁধাই তাকে আটকাতে পারছে না। সংশপ্তক বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের উপর নির্মিত ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে।[12] এই ভাস্কর্যটির অবয়বের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে বিভিন্ন উপাদান ও আঙ্গিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে হামিদ ভাস্কর্য স্থাপন করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ২০০৩ সালে ঢাকার পান্থপথে ইউটিসি ভবনের প্রবেশপথের দেয়ালে স্থাপিত ফ্রিডম ফাইটার (মুক্তিযোদ্ধা) শীর্ষক ইস্পাতের ভাস্কর্য। ১৯৯৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার পুয়ো ইন্টারন্যাশনাল মডার্ন স্কাল্পচার সিম্পোজিয়ামে হামিদকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এই সিম্পোজিয়াম উপলক্ষ্যে তিনি ১০ ফুট উচ্চতার একটি ইস্পাতের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন, যেটি পুয়ো বোদরেক পার্কে স্থাপিত হয়। ময়মনসিংহ সেনানিবাসে ১৯৯৯ সালে মুক্তিযোদ্ধা নামে হামিদের আরেকটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্য স্থাপিত হয়।[6]
হামিদুজ্জামান খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ভাস্কর্য বিভাগে অধ্যাপক হন ২০০০ সালে। ২০০১ সালে ঢাকা সেনানিবাসে বিজয় কেতন নামে হামিদের একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। এতে একদল মুক্তিযোদ্ধার অবয়ব পরিস্ফুটিত হয়েছে। গুলশানের ইউনাইটেড ভবনের প্রবেশপথে পাখি নামে তাঁর একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। ভাস্কর্যে পাখিগুলো বিমূর্ত ধারায় উপস্থাপিত হয়েছে। ২০০৪ সালে ঢাকার আগারগাঁও-এ বিশ্বব্যাংক দপ্তরে হামিদের একাধিক শিল্পকর্ম স্থাপন করা হয়। দপ্তরের প্রবেশমুখে রিলিফ ভাস্কর্য, ভবনের ভেতরে ১৮টি তৈলচিত্র, টেরাকোটা, মাছের প্রতিকৃতি বিশিষ্ট ধাতব ভাস্কর্য ও ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। এছাড়া ভবনের ভেতরে অ্যাট্রিয়ামে হামিদের ফ্লাইং বার্ড্স (উড়ন্ত পাখি) ৫৬ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্য স্থাপিত হয়, যার নাম পাখি। এতে বিমূর্ত আঙ্গিকে পাখির অবয়ব বিশিষ্ট একই ধরনের তিনটি ফর্ম ঝুলন্ত ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
২০০৫ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন হামিদুজ্জামানকে ফার্মগেটে একটি ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য অনুরোধ করে। ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সম্মুখে মাছ নামে ভাস্কর্যটি স্থাপিত হয়েছে, যাতে স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিতে তিনটি মাছ উপস্থাপিত হয়েছে। এটি নির্মিত হয়েছে ইস্পাত দ্বারা। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভো থিয়েটার প্রাঙ্গনে হামিদুজ্জামানের দুইটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। গাজীপুরে অবস্থিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে হামিদের শিখা নামে একটি বিমূর্ত ধারার ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। এতে শিক্ষার ফলে মানবিক দ্যুতি ও জ্ঞানের বিকাশ ঘটার ধারণাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর্যটির উচ্চতা ৩২ ফুট, প্রস্থে ১৩ ফুট এবং এটি ধাতব নির্মিত।
২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনুরোধে হামিদ শান্তির পাখি নামে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। এটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দের (টিএসসি) সম্মুখে স্থাপিত হয়েছে। ভাস্কর্যটি স্টেইনলেস ইস্পাতে তৈরি এবং এতে একদল পাখি বিমূর্ত আঙ্গিকে একটি তির্যক কলামের উপরে উপস্থাপিত হয়েছে। ২০০৭ সালে হামিদুজ্জামান খান টিকাটুলিতে অবস্থিত ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেনকে কেন্দ্র রোজ গার্ডেন শিরোনামে করে একটি বই প্রকাশ করেন। এই বইতে তিনি রোজ গার্ডেন প্রাসাদের বিভিন্ন বিষয়বস্তু কালি-কলম, ক্রেয়ন এবং জলরঙ মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। বইতে ভবনের দেয়ালে কারুকাজ ছাড়াও তিনি চাঁদনী রাতে, বর্ষায়, দিবালোকে বিভিন্ন সময় রোজ গার্ডেন দেখতে কেমন লাগে, প্রাসাদ চত্বরের সাদা সিমেন্টের ভাস্কর্য, গোলাপ বাগানের সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছেন। ২০১১ সালে মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন প্রাঙ্গনে ইউনিটি নামে হামিদের একটি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়। ইস্পাত দিয়ে নির্মিত ভাস্কর্যটির উচ্চতা ৩২ ফুট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগ থেকে ২০১২ সালে হামিদ অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর হামিদুজ্জামান খান রেট্রোস্পেকটিভ নামে ১৯৬৪ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত তাঁর নির্মিত শিল্পকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনী আয়োজন করে। এতে প্রায় ৩০০টি ভাস্কর্য এবং ২৫টি চিত্রকর্ম উপস্থাপন করা হয়। ২০১৮ সালে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হামিদুজ্জামানের কর্মজীবন ও তাঁর পাঁচ দশকের শিল্পসাধনার প্রতি সম্মান জানিয়ে ‘হামিদুজ্জামান ভাস্কর্য পার্ক’ নামে একটি ভাস্কর্য উদ্যান প্রতিষ্ঠিত হয়।[13] সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খানের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় সামিট গাজীপুর ৪৬৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র চত্বরের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক পরিবেশে ২ একর জায়গার এই উন্মুক্ত উদ্যানে হামিদুজ্জামান প্রায় ২০টি ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন। এছাড়া উদ্যানটিতে হামিদুজ্জামানের স্থাপনা-শিল্প ও চিত্রকর্মও রয়েহে।[14]
মতিঝিলে সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের প্রবেশ পথের ভেতরের দেওয়ালে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল তৈরি করেন ২০২১ সালে।
২০১৮ সাল অবধি, হামিদের ৩৩টি একক প্রদর্শনী হয়েছে। পাঁচ দশকের অধিক সময়ের কর্মজীবনে হামিদের নির্মাণ করা ১৫০-এর বেশি ভাস্কর্য বাংলাদেশ, ভারত, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপিত বা প্রদর্শিত হয়েছে।
হামিদুজ্জামান খান তাঁর ভাস্কর্য প্রধানত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, পাখি, মানব শরীর ও নৈসর্গিক উপাদানকে বিষয়বস্তু করে নির্মাণ করেন। এছাড়া বেশ কিছু ভাস্কর্যে তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতি ও অভিজ্ঞতাও বিষয়বস্তু হিসেবে স্থান পেয়েছে। তাঁর অধিকাংশ ভাস্কর্য ব্রোঞ্জ ও ইস্পাতে তৈরি। তবে তিনি পাথর, অ্যালুমিনিয়াম, সাদা গ্রানাইট, মার্বেল এবং মিশ্র-মাধ্যমেও কাজ করেছেন। তাঁর বৃহদায়তনের ভাস্কর্যগুলি সাধারণত কংক্রিট ও ব্রোঞ্জে তৈরি। কর্মজীবনের প্রথমদিকে তিনি প্রকাশবাদের ধারায় ভাস্কর্য নির্মাণ করলেও ২০০০-এর পরবর্তী কাজগুলোতে মিনিমালিজম বা অল্পায়ন বৈশিষ্ট্য প্রাধান্য পেয়েছে। কর্মজীবনের দ্বিতীয় ভাগে হামিদুজ্জামান ফর্মের পরিমিতি ও শুদ্ধতা অন্বেষণে জোর দিয়েছেন। তাছাড়া উপাদানের অন্তর্গত স্বভাব এবং ক্ষমতাও তিনি নিরীক্ষা করেন। তাঁর ভাস্কর্যের বিন্যাসে স্থাপত্যিক ও জ্যামিতিক আকৃতির প্রয়োগ রয়েছে। হামিদের ভাস্কর্য সম্পর্কে শিল্প-সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ লিখেছেন:
"হামিদ ষাটের দশকের হলেও উত্থান তাঁর সত্তরের দশকে এবং তাঁর কাজ ১৯৭১-এর যুদ্ধস্মৃতিতে আকীর্ণ। এ জন্য ফর্মের নানামুখী ভাঙনের মধ্যে তাঁর স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠে। তাছাড়া হামিদ আধুনিক ও সমকালীন ভাস্করের যে নিরীক্ষা দেখেছেন দেশের বাইরে তাতে রিপ্রেজেন্টেশনাল নিয়মে বা রদ্যাঁ, মুরে থাকা তাঁর সম্ভব হয়নি। বরং ভাস্করদের মধ্যে তিনি অনেকখানি নিয়েছেন রুমানিয়ার ব্রকুজির অমল ফর্মের ভাস্কর্য থেকে। তবে তাঁর মূল অভিনিবেশ মিনিমালিজমে। অল্পায়ন বা মিনিমালিজমে ফর্মকে যাভেব শোধিত করা হয়, তার প্রতি স্পষ্ট সমর্থন অনুভব করা যায় হামিদের ভাস্কর্যে।...প্রগাড়ভাবে অল্পায়নে তিনি বিশ্বাসী। তাঁর কাজ নৈসর্গিক জ্যামিতি ধারণ করে আছে। বিশদ প্রকৃতি নেই, বিশোধিত নিসর্গ নির্যাস তাতে প্রত্যক্ষ করা যায়।...তাঁর কাজে স্থিরত্বের ব্যঞ্জনা নেই বললেই চলে। ফরাসি দার্শনিক অঁরি বের্গসন বলেছেন যে বিবর্তন প্রক্রিয়া ও শৈল্পিক সৃজনশীলতা অর্থাৎ প্রকৃতির বিকাশশক্তি ও মানুষের সৃজন-আবেগ একই উৎস থেকে উৎসারিত। হামিদের মনোভঙ্গিতে এই দার্শনিক তত্ত্বের সমর্থন মেলে। এই ভাস্কর প্রধানত কৌনিক, তীর্যক, উড্ডীন ভঙ্গির ফর্মে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। হামিদ প্রধানত গতিরই শিল্পী। শিল্পী জীবনের শুরুতে তিনি যে এক্সপ্রেশনিজমের অনুসারী হয়েছিলেন তা-ই যেন এখন আরো পরিশ্রুতি পেয়েছে।"
ভাস্কর হিসেবে সুপরিচিত হলেও হামিদ জলরঙের চিত্রকর্মের জন্যেও বাংলাদেশে খাতি অর্জন করেছেন। প্রখ্যাত শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের হাতে হামিদুজ্জামান খানের জলরঙে হাতেখড়ি। হামিদ তাঁর শিক্ষক মুস্তাফা মনোয়াররের অঙ্কন রীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। চারুকলা অনুষদের ছাত্র থাকাকালে হামিদের জলরঙের প্রশংসা করে জয়নুল আবেদীন বলেছিলেন:
"হামিদ, তোমার হাতে জলরং-এ আঁকা ছবি ভাল হয়। জলরঙ কখনও ছেড়ে দিবে না। দেখবে এই জলরঙই তোমাকে একদিন বহুদূর নিয়ে যাবে।"
হামিদের জলরঙ ও অ্যাক্রিলিক চিত্রকর্মের বিষয়বস্ত হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে নৈসর্গিক উপাদান ও ল্যান্ডস্কেপ, হাওড় বা নদী, পাখি, গ্রামীণ দৃশ্য, বন, পর্বত ইত্যাদি। শিল্পীজীবনের প্রথমদিকে তিনি নগর জীবনের অনেক ছবি এঁকেছেন। জলরঙে বাস্তববাদী পরিস্ফুটনের পাশাপাশি তিনি বিমূর্ত আঙ্গিকের প্রয়োগ করেছেন। তাঁর চিত্রকর্মের ক্যানভাসে স্থানিক বিন্যাসের প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া চিত্রকর্মে ভাস্কর্যের ফর্ম বা আকৃতির প্রভাব প্রচ্ছন্ন।
হামিদুজ্জামান খান ১৯৭৬ সালে আইভি জামানকে বিয়ে করেন। আইভি জামান চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগ থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন। পেশাগতভাবে তিনি একজন শিল্পী ও ভাস্কর।[15] তাদের দুই ছেলে রয়েছে, জুবায়ের জামান খান কপার এবং জারিফ হামিদুজ্জামান।[16]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.