Loading AI tools
ভারতীয় গবেষক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সুকুমারী ভট্টাচার্য ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য-ইতিহাস-সংস্কৃতির বিদগ্ধ গবেষক ও প্রখ্যাত অধ্যাপক। সারা জীবনে বাংলা ও ইংরাজী ভাষায় সমান দক্ষতায় তিরিশটিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। মাইকেল মধুসূদন দত্তের এই সুযোগ্য উত্তরসূরী অধ্যাপনার ক্ষেত্রেও প্রভূত সাফল্য অর্জন করেন।
সুকুমারী ভট্টাচার্য | |
---|---|
জন্ম | সুকুমারী দত্ত ১২ জুলাই ১৯২১ |
মৃত্যু | ২৪ মে ২০১৪ ৯২) | (বয়স
জাতীয়তা | ভারতীয় |
নাগরিকত্ব | ভারতীয় |
শিক্ষা | M.A.(ইংরাজি) ও M.A.(সংস্কৃত) |
মাতৃশিক্ষায়তন | কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | অধ্যাপনা (লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় - তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগ, সংস্কৃত বিভাগ) |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | ইংরাজি - হিস্ট্রি অফ ক্লাসিকাল সংস্কৃত লিটারেচর, উইমেন অ্যান্ড সোসাইটি ইন এনশিয়েন্ট ইন্ডিয়া, রিলিজিয়ন কালচার অ্যান্ড গভর্নমেন্ট, ফেটালিজম ইন অ্যানশিয়েন্ট ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান থিয়োগনি বাংলা - প্রাচীন ভারত: সমাজ ও সাহিত্য, বিবাহ প্রসঙ্গ, বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য, মন্থন, নিয়তিবাদ: উদ্ভব ও বিকাশ |
দাম্পত্য সঙ্গী | অমল ভট্টাচার্য্য |
সন্তান | তনিকা সরকার |
পিতা-মাতা | সরসীকুমার দত্ত - পিতা, শান্তবালা দত্ত - মাতা[1] |
পুরস্কার | সুরেশচন্দ্র মজুমদার স্মৃতি আনন্দ পুরস্কার |
আদি নিবাস চিত্রা নদীর তীরে শিঙে-শোলপুর গ্রাম হলেও, ১৯২১ সালের ১২ জুলাই মেদিনীপুরের মামাবাড়িতে সুকুমারী দেবীর জন্ম। কথিত আছে তার পিতামহ বিপিনবিহারী দত্ত আচারের অত্যাচারে শিশুবেলার এক খেলার সাথী-র মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেন। একাদশী বলে জ্বরাক্রান্ত বালবিধবাকে জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। হিন্দু সমাজের অযৌক্তিক আচার ব্যবহারে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কলকাতায় এসে খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত হন তিনি।[2] ছাত্র জীবনের প্রথম কয়েক মাস মেদিনীপুরে কাটিয়েই সুকুমারী কলকাতায় চলে আসেন। সেখানে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা। পরে সেন্ট মার্গারেট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক। এরপর সংস্কৃতে সাম্মানিক নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন। কারণ সে সময় প্রেসিডেন্সিতে মেয়েদের প্রবেশাধিকার ছিল না। শেষ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন। স্নাতক পরীক্ষায় সকল বিষয়ে সমস্ত ছাত্রদের মধ্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপককে ঈশান স্কলারশিপ দেওয়া হত। মেধাবী ছাত্রী সুকুমারী সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েও সেই বৃত্তি পাননি। কারণ তিনি ছিলেন খৃষ্টান। দাতা ঈশান চন্দ্র ঘোষের লিখিত নির্দেশ ছিল বর্ণহিন্দু ছাড়া আর কাউকে এই স্কলারশিপ দেওয়া যাবে না। পরিবর্তে জুবিলি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ নিয়ে ১৯৪২ সালে বিএ পাশ। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতে এমএ-তে ভর্তি হয়েও বাঙালী খৃষ্টান হওয়ার কারণে বাধার সম্মুখীন হন। শেষ পর্যন্ত ইংরাজি নিয়ে এমএ পাশ করেন।
১৯৪৫ সালে লেডি ব্র্যাবোর্ন কলেজএ ইংরাজি সাহিত্যে শিক্ষকতার শুরু। এক যুগ তিনি ছিলেন সেখানে। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি সেই কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় থেকেই প্রাইভেটে সংস্কৃতে এমএ পাশ করেন ১৯৫৪ সালে। ১৯৫৭ সালে বুদ্ধদেব বসুর আমন্ত্রণে তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে। পরের বছর সুশীল কুমার দে সুকুমারীকে সংস্কৃত বিভাগে নিয়ে যান। ১৯৮৬ সালে অবসরের সময় পর্যন্ত তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগেই ছিলেন।
সুকুমারী দেবীর তত্ত্বাবধানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে একটি ছাত্র কল্যাণ তহবিল গড়ে ওঠে।[3] দুস্থ ছাত্রদের কল্যাণে এই তহবিল আজও বর্তমান। এই তহবিলের সুবিধা নেবার পর কেউ কেউ পরবর্তী পর্যায়ে অর্থ ফেরত দিতে পেরেছে কেউ পারেনি। তার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে প্রাচীন মহাকাব্য গবেষক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী, লেখক নবনীতা দেবসেন,অভিজিৎ ঘোষ উল্লেখযোগ্য। কর্মসূত্রে সান্নিধ্য পেয়েছেন সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুশীল কুমার দে, নীরদ চন্দ্র চৌধুরী,ভি ভি কোশাম্বী, আর এস শর্মা, হীরেন মুখোপাধ্যায়, চিন্মোহন সেহানবিশের মত দিকপালেদের।[4]
স্বামী হিসাবে পেয়েছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক অমল ভট্টাচার্যকে। আজীবন বামপন্থী মতধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। কন্যা তনিকাও মায়ের মত ইতিহাসে কৃতবিদ্য। জামাতা সুমিত সরকারও শিক্ষাক্ষেত্রে স্বনামধন্য। কন্যা ও জামাতা দিল্লী প্রবাসী বলে একাই থাকতেন কলকাতায়। নাতি সুইৎজারল্যান্ডে অধ্যাপনা করেন।[5]
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় ২৩শে মে শুক্রবার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তিকরা হলেও পরের দিন দুপুরেই তিনি মারা যান।[6] তার মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। তার বাড়িতে যান শ্যামল চক্রবর্তী, রবীন দেব, দীপক দাশগুপ্ত প্রমুখ বাম নেতারা।
শেষ ইচ্ছানুসারে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে শনিবারই তার মরোনোত্তর দেহ দান করা হয়।
ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের মতে, “ওঁর কাজ প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে।”[6] সুকুমারী দেবী ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় সমাজ, পুরাণ, ইতিহাস, বেদ ইত্যাদির বিশেষজ্ঞ। পুরনো ভারতের নামে হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা যে গৌরবময় একমাত্রিক ছবিটি তুলে ধরতেন, সুকুমারী তার লেখায় যতটা পারতেন স-তথ্য পুরো ছবিটি দেওয়ার চেষ্টা করতেন। শূদ্রকের মৃচ্ছকটিক নাটকের অনুবাদ করেছিলেন সুকুমারী। [7]
সারা জীবনে বাংলা ও ইংরাজি ভাষায় তিরিশটিরও বেশি অসামান্য গ্রন্থের রচনা করেন তিনি। তবে তার নিজের লেখা সবচেয়ে প্রিয় গ্রন্থ ছিল ফেটালিজম ইন এনশিয়েন্ট ইন্ডিয়া।[4]
গ্রন্থ | প্রকাশক | টিকা |
---|---|---|
ইংরাজি | ||
The Gita: Its Why and How | গাংচিল, ২০১৩, ISBN-13 # :9789381346433[8] | |
Literature in the Vedic Age: The Saṃhitās | কে. পি. বাগচি, ১৯৮৪, ISBN-13 # :9780863112423[9] | |
History of Classical Sanskrit Literature | মোহিতলাল বনারসিদাস, ১৯৯৩, ISBN-13 # :9780863112423[10] | |
Buddhist Hybrid Sanskrit Literature | এশিয়াটিক সোসাইটি (কলকাতা, ভারত), ১৯৯২[11] | |
Religion, Culture and Government | ১৯৯৪, ISBN 13: 9780863111808[12] | |
Fatalism in Ancient India | মোহিতলাল বনারসিদাস, ১৯৯৫, ISBN-13 # :9788186552025[13] | |
The Indian Theogony Brahma, Visnu & Siva | মোহিতলাল বনারসিদাস, ২০০০, ISBN-13 # :9780140295702[14] | |
Women and Society in Ancient India | বসুমতী কর্পোরেশন, ১৯৯৪, ISBN-13 # :9788186867044[15] | |
Myths: Vedic, Buddhist, and Brahmanical | প্রোগ্রেসিভ পাবলিশার্স, ২০০২, ISBN-13 # :9788180640025 | |
Legends of Devi | ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসোয়ান, ১৯৯৫, ISBN-13 # :9788125014386 | এই গ্রন্থটির চিত্রণ করেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। |
In Those Days: Essays Vedic, Epic and Classical | পারুল প্রকাশনী, ২০১০, ISBN # :9789380034614 | |
বাংলা | ||
রামায়ণ ও মহাভারত: অনুপাতিক জনপ্রিয়তা | কামা, কলকাতা, ১৯৯৬[16] | |
প্রাচীন ভারতে নারী ও সমাজ | ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, ২০০৬[17] | এই গ্রন্থটি আনন্দ পুরস্কার পায়।[5] |
অপসংস্কৃতি | ||
বিবাহ প্রসঙ্গ | ক্যাম্প, ১৯৯৮, ISBN-13 # :9788186883068[18] | |
ইতিহাসের আলোকে বৈদিক সাহিত্য | পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষদ, ১৯৯১[19] | |
এয়োতি এবং | ক্যাম্প, ২০০৪, ISBN-13 # :9788186883532[20] | |
বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য | পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, ২০০০, ISBN-13 # :9788177510294[21] | |
বাল্মীকির রাম: ফিরে দেখা | ||
মন্থন | ||
বেদের যুগে ক্ষুধা ও খাদ্য | চিরায়ত[22] | |
ধর্ম এই সময়ে | চিরায়ত[23] | |
নিয়তিবাদ : উদ্ভব ও বিকাশ | ক্যাম্প, ১৯৯৪, আইএসবিএন ৮১-৮৬৮৮৩-০৩-৭[24] | |
হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা | দীপ প্রকাশন, ১৯৯৭, ISBN 81-85800-30-10[25] | |
প্রাচীন ভারত: সমাজ ও সাহিত্য | আনন্দ পাবলিশার্স[26] | |
প্রবন্ধসংগ্রহ | গাংচিল[27] | এই গ্রন্থটি ৪ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। সর্বশেষ খন্ডটি ২০১৪ সালে প্রকাশিত। |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.