সাইয়েদি ফার্জ মারিস্তান
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সাইয়েদি ফার্জ মারিস্তান বা ফেজ বিমারিস্তান ছিল মরক্কোর ফেসে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক মারিস্তান। এটি ১৩শ শতকে মারিনিউন রাজবংশ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ২০ শতক পর্যন্ত এটি একটি হাসপাতাল সেইসঙ্গে নিঃস্ব ও মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য একটি ধর্মশালা হিসাবে কাজ করেছিল। এটি মরক্কোর অন্যতম বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ মারিস্তান ছিল এবং সেই সময়ে এই অঞ্চলে অবস্থিত অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহকে এটি ব্যাপক প্রভাবিত করেছিল।[1]
সাইয়েদি ফার্জ মারিস্তান | |
---|---|
ভৌগোলিক অবস্থান | |
অবস্থান | ফেজ, মরক্কো |
স্থানাঙ্ক | ৩৪°০৩′৫৪.৫″ উত্তর ৪°৫৮′৩০″ পশ্চিম |
সংস্থা | |
ধরন | বিমারিস্তান |
পৃষ্ঠপোষক | মারিনিউন রাজবংশ |
ইতিহাস | |
চালু | ত্রয়োদশ শতাব্দী |
বন্ধ | ১৯৪৪ |
ভাঙন | ১৯৪৪ |
মারিস্তানের জায়গাটি বর্তমান একটি ফান্দুক ( সরাই খানার মতো ভবন ) দ্বারা দখল করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন দোকান রয়েছে। এই ভবনটি তালায়া কেবিরা রাস্তা এবং দ্বিতীয় মাওলা ইদ্রিস জাবিয়ার মাঝখানে অবস্থিত। এর পশ্চিম দিকে একটি ছোট সাধারণ চত্ত্বর রয়েছে, যার কেন্দ্রটি একটি গাছ দ্বারা পৃথক হয়েছে এবং ঐতিহাসিকভাবে তা সুক আল-হেনা বা মেহেদি বাজার হিসেবে পরিচিত হয়েছিল।[1][2][3][4]:৩৭৩–৭৪
আল যাওহারি নিজের আল সিহাহতে উল্লেখ করেছেন যে, "মারিস্তান" শব্দটি বিমারস্তান থেকে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে; যেখানে শব্দটির প্রথম অক্ষর উচ্চারণে সহজ করার জন্যে মুছে ফেলা হয়েছিল এবং তা দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত; একটি ফার্সি শব্দ বিমার, যার অর্থ হল অসুস্থ বা অসুস্থ এবং দ্বিতীয় শব্দ হল স্থান, যার অর্থ হল বাড়ি এবং এ হিসেবে শব্দটির অর্থ হল 'অসুস্থদের বাড়ি' বা হাসপাতাল।:৮ এ বিমারিস্তান শব্দটি ইসলামি যুগে হাসপাতাল বুঝাতে ব্যবহৃত হত। বিমারস্তানগুলি ছিল সাধারণ হাসপাতাল, যা চারটি বিশেষত্ব অন্তর্ভুক্ত করে: অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা, চক্ষুবিদ্যা, ট্রমাটোলজি ও মনোরোগবিদ্যা। তারপর, সময়ের সাথে সাথে তাদের কাজ ধীরে ধীরে শুধুমাত্র মানসিক রোগীদের চিকিৎসা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায় এবং বিমারিস্তান শব্দটি কায়রোতে আবু জাবাল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছিল, যেখানে ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক ব্যবস্থা অনুসারে প্রতিষ্ঠিত প্রথম হাসপাতাল হিসাবে এটি বিবেচিত হয় এবং তখন থেকে চিকিৎসার স্থান বা চিকিৎসালয় বুঝাতে বিমারিস্তান শব্দের বদলে ইংরেজি হসপিটাল বা আরবি আল মুসতাশফা শব্দটি ব্যবহৃত হচ্ছে। :৭
সাইয়েদি ফার্জ নামের উৎপত্তি নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কিছু সূত্র জানায় যে, বিমারস্তানের পাশে অবস্থিত বাব আল ফারাজ নামক একটি গেটের উল্লেখে এই নামে নামকরণ করা হয়। যদিও অন্যান্য সূত্র উল্লেখ করে যে অসুস্থ ব্যক্তিরা মারিস্তানে এমন কিছু খুঁজে পেতেন, যা তাদের কষ্ট দূর করে,:১৮৪ তাই তারা এটিকে বাব আল ফারাজ ('প্রশস্ততার দরজা' ) নামে অভিহিত করা হয় এবং সাধারণ মানুষ সময়ের সাথে সাথে নামটি বিকৃত করে এবং তা সাইয়েদি ফারাজ নামে পরিচিত হয়।
কিছু সূত্র এই নামটিকে সাইয়েদি ফার্জ নামে একজন ওলির নামে দায়ী করে; তবে অন্যান্য সূত্র নিশ্চিত করে যে, বিমারস্তান ভবনে কোনো দরবেশের সমাধি নেই। :১৮৪ কিছু ঐতিহাসিক তথ্য বলছে যে, সাইয়েদি ফার্জ নামটি চিকিৎসক ফারাজ আল-খাজরাজি নামক এই বিমারিস্তানের একজন পরিচালকের সাথে যুক্ত। যাকে আন্দালুস থেকে আবু আনান আল মারিনি বিমারস্তান উন্নত করার জন্য নিয়ে এসেছিলেন, তাই একে ফার্জ মারিস্তান :১৮৫ বা সাইয়েদি ফার্জ আল-খাজরাজি আল-আনসারী আল-গারানাতি বিমারিস্তানও বলা হয়।
কিছু সূত্র তাকে ফেজ মারিস্তান বলে উল্লেখ করেছে; যা বোঝায় যে এটি ফেজের প্রাচীনতম, সবচে' বিখ্যাত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিমারস্তান বা মারিস্তান।
মরক্কোর প্রথম মারিস্তানটি ১২শ শতকে মুওয়াহহিদিন রাজবংশের অধীনে মারাকেশে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে ইবনে রুশদ ( অ্যাভারোস ) কিছু সময়ের জন্যে কাজ করেছিলেন।[5][6] ফেস মারিস্তান ১৩ শতকের শেষের দিকে মারিনিউন সুলতান আবু ইয়াকুব ইউসুফ (সময়: ১২৮৬-১৩০৭) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[1][7] এর কার্যক্রম একটি আবাস বা ওয়াকফস্থল নামে পরিচিত , যা ধর্মীয় অনুদান দ্বারা অর্থায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছিল।[6]:৭৩
এই প্রতিষ্ঠানটি মরোক্কো ও স্পেনের অন্যত্র অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপন ও কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করেছে বলে উল্লেখ আছে। যার মধ্যে ১৪১০ সালে ভ্যালেন্সিয়ায় প্রতিষ্ঠিত মানসিকভাবে অসুস্থদের জন্য একটি হাসপাতালও রয়েছে।[3][5] এটি মূলত একটি সম্পূর্ণ হাসপাতাল হিসেবে কাজ করতো, যা ওষুধের বিভিন্ন কার্যক্ষেত্র নিয়ে কাজ করেছিল, যা সেই সময়ে মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত ওষুধের তুলনামূলকভাবে উন্নত অবস্থাকে প্রতিফলিত করে।[5][6] তৎকালীন ইসলামি বিশ্বের মারিস্তানসমূহে মানসিক রোগের চিকিৎসা করা হত সঙ্গীত, সুগন্ধি, জল এবং অন্যান্য পদ্ধতিতে তাদের প্রশমিত করার মাধ্যমে।[5][8] সিদি ফেজ মারিস্তান ফেজের সবচেয়ে বিখ্যাত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে এবং মালাগা থেকে আন্দালুসীয় চিকিৎসক আবু বকর কোরাচির মতো সেই সময়ের ওষুধ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসা শাস্ত্রীয় প্রধান পণ্ডিতরা মারিস্তানটি পরিদর্শন করেছিলেন।[1] সারস হাসপাতাল হিসেবে কাজ করা, অসুস্থ বা আহত সারস ও মানিকজোড়ের সেবা করা এবং যারা মারা গিয়েছে, তাদের কবর দেওয়াও এই মারিস্তানের একটি অদ্ভুত কাজ ছিল। প্রাণীদের জন্যে এই দাতব্য কার্যক্রমটি বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন ব্যক্তির দান ও ওসিয়ত থেকে প্রাপ্ত সম্পদের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব হয়েছিল।[6]
অসুস্থ ও দরিদ্রদের জন্য এর পরিষেবা ছাড়াও এটির ভবন ও অবস্থান ঐতিহাসিক ফেজে অন্যান্য নাগরিক পরিষেবাগুলিও প্রদান করেছে। শহরের "বহনকারীরা" –যারা হারিয়ে যাওয়া এবং পাওয়া জিনিসপত্র ফেরত দেওয়ার জন্য একটি অফিসও চালাত –তাদের সদর দফতর এখানে ছিল।[4]:২৫৮–৫৯ জনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ম্যাজিস্ট্রেট মোহতাসিবের দাপ্তরিক অফিস ও আদালতও এখানে অবস্থিত ছিল (অথবা অন্তত ২০ শতাব্দীর শুরুতে এটি ছিল)।[4]:২১৩
লিও আফ্রিকানাস ১৫ শতকের শেষের দিকে ২ বছর বিমারিস্তানটির প্রশাসনিক সচিব ( 'এডিএল ) হিসাবে কাজ করেছিলেন।[5] তিনি তার লেখায় মন্তব্য করেন যে, হাসপাতালটির পরিষেবাগুলি ইতোমধ্যেই অনেক হ্রাস পেয়েছে; রোগীদের প্রায়ই কেবল নিজেদের কক্ষে সীমাবদ্ধ রাখা হয়; সংযত করা হয় এবং এসবের জন্য কখনও কখনও নির্যাতন করা হয়। তার মতে, পরবর্তী সুলতানরা মারিস্তানটির দাতব্য সংস্থান (হেবা) তাদের নিজেদের স্বার্থে সরিয়ে নেওয়ার কারণেই পরিষেবার পতন ঘটেছে।[6] ফলস্বরূপ, তার পরবর্তী ইতিহাসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মারিস্তানটি প্রধানত শহরের নিঃস্ব, মানসিকভাবে অসুস্থ ও সমাজ থেকে বাদ পড়া অন্য ব্যক্তিদের জন্য আশ্রয় এবং খাদ্য প্রদানকারী একটি ধর্মশালা হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে হয়।[4] ১৯ শতকের মধ্যে এ পতন ইসলামি বিশ্বের অন্য অঞ্চলের মারিস্তানগুলির মধ্যেও স্পষ্ট ছিল এবং পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে তাদের বিচ্ছিন্নতার কারণে এটি আরও বৃদ্ধি পায়।[5][6][8] সিদি ফেজ হাসপাতালের একটি মূল অনুশীলন–যা ২০শ শতাব্দী পর্যন্ত অব্যাহত ছিল–আন্দালুসীয় সঙ্গীতের সাপ্তাহিক সঙ্গীতানুষ্ঠানগুলি সঙ্গীত থেরাপি হিসাবে পরিবেশন করার উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[5][6]
মারিস্তান ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত এই ক্ষমতায় কাজ চালিয়ে যায় এবং তখন তা আগুনে ধ্বংস হয়ে যায়।[5] ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে, ফরাসি ঔপনিবেশিক কর্তৃপক্ষ সিদি ফেজ মারিস্তানের উত্তরসূরি হিসাবে কাজ করার উদ্দেশ্যে একটি ভিন্ন স্থানে একটি নতুন মারিস্তান পুনরায় চালু করে এবং আধুনিক পশ্চিমা মানসিক তত্ত্ব অনুসারে এতে কাজ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল।[6][8] এই উদ্বোধনটি ঔপনিবেশিক শাসনের প্রয়াস হিসেবেও আংশিকভাবে অনুপ্রাণিত হতে পারে, যারা প্রবল বিরোধিতার মধ্যে এসে স্থানীয় মুসলিম ঐতিহ্য এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল হয় (তা দেখে যেন স্থানীয়রা ঔপনিবেশিক শক্তির প্রতি কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়)।[8] ইতোমধ্যে, মূল মারিস্তানের স্থানটিকে ঐতিহ্যগত স্থাপত্যের সাথেক্যারাভান্সরাই'র মত ভবন হিসাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল, যেখানে এখন বিভিন্ন দোকান রয়েছে।[1][2][5] এটি বর্তমানে একটি শপিং সেন্টার হিসাবে কাজ করে চলেছে, যদিও ২০১৮ সাল থেকে একে পুনরুদ্ধার করার এবং চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী একটি কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।[3]
১৯৫১ সালে ভবনটি পুনরুদ্ধারের সময় এর মসজিদও প্রকল্পের আওতাধীন ছিল। একে খান বা সিজারিয়ার শৈলীতে একটি ভবনে পরিণত করার জন্য মারিস্তানের জায়গায় পুনর্নির্মাণ ও সংগঠিত করা হয়েছিলো। তবে এতে বর্তমান বিভিন্ন দোকান রয়েছে, যেখানে কাপড় এবং ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করা হয়। মারিস্তানটির কক্ষগুলি বর্তমানে মৃৎপাত্র এবং মেহেদি বিক্রির জন্য ব্যবহৃত হয়। মরোক্কান সোসাইটি ফর দ্য হিস্ট্রি অফ মেডিসিন ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে মারিস্তানের দরজায় একটি ফলক স্থাপন করেছিল, যাতে লেখা ছিল:
"এই হাসপাতালটি ৬৮৫ হিজরি সালে ( ১২৮৬ খ্রিস্টাব্দ) মারিনীয় সুলতান ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব দ্বারা নির্মিত হয়েছিল, যেখানে তিনি চিকিৎসা শিক্ষা দিতেন। তিনি এতে দান হিসেবে বিশাল সম্পত্তি দিয়েছিলেন, যা হাসপাতালকে এই অবস্থানে পৌঁছাতে সক্ষম করেছিল। এর সমৃদ্ধি অনেক উচ্চতা চলে যায়; বিশেষ করে ১৯ শতকে। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে হাসান ইবনে ওয়াজ্জান একজন লেখক হিসাবে এই এখানে কাজ করেছিলেন। এটা সম্ভব যে, এই মারিস্তানকে পশ্চিমা বিশ্বের প্রথম মানসিক হাসপাতাল নির্মাণের একটি মডেল হিসাবে নেওয়া হয়েছিল (ভ্যালেন্সিয়া, স্পেন ১৪১০ খ্রিস্টাব্দ)। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এতে দুটি অনুশীলনে রোগীদের চিকিত্সা করা হয়েছিল।
সাইয়েদি ফারাজ বিমারিস্তানটি দীর্ঘকাল ধরে ফেজের লোকদের দ্বারা লালিত একটি ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক স্থান এবং এর অস্তিত্ব সম্পর্কে না জেনে কোন দর্শনার্থী বা ভ্রমণকারীর পক্ষে শহরটি পরিদর্শন করা অসম্ভব। সাইয়েদি ফারাজ বিমারিস্তানটিতে একাধিক চিকিৎসা বিশেষত্ব চর্চা করা হয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল: চক্ষুবিদ্যা, মনোরোগবিদ্যা, অর্থোপেডিক্স, ভেটেরিনারি মেডিসিন ইত্যাদি, যা তৎকালীন মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত চিকিৎসার তুলনামূলকভাবে উন্নত অবস্থা প্রতিফলিত করে। এটিকে ফেজের প্রাচীনতম, সবচেয়ে বিখ্যাত ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমারিস্তান হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং সেই সাথে তা ছিল মরক্কোর অন্যতম বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ বিমারিস্তান; কারণ সেই সময়ের বেশ কয়েকজন সিনিয়র মেডিকেল পণ্ডিত এটি পরিদর্শন করেছিলেন।
ক্রমান্বয়ে খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে বিমারিস্তানটি শুধুমাত্র মানসিক রোগীদের জন্যে কাজ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায় এবং এটি তখন কেবল মনস্তাত্ত্বিক ও মানসিক রোগের বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠে। এ চিকিৎসার ভিত্তি ছিল আন্দালুসিয়ান সংগীতের উপর ভিত্তি করে। সঙ্গীত, ঘ্রাণ, জল ও প্রশান্তির অন্যান্য উপায়ে ইসলামী বিশ্বের সমস্ত মারিস্তানে মানসিক রোগীদের চিকিত্সা করা হয়েছিল। আল-কানুনি তার "আরবীয় চিকিৎসার ইতিহাস, মরক্কো" বইতে মানসিক রোগীর জন্য নিযুক্ত সংগীতজ্ঞদের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন: "তারা প্রতি সপ্তাহে একবার বা দুবার উপস্থিত হয়; কারণ এটি বুক প্রশস্ত করতে ও মানব আত্মাকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে থাকে। তাই হৃদয়স্পন্দন শক্তিশালী হয় এবং শারীরিক অঙ্গগুলি তাদের কার্য সম্পাদনে ফিরে আসে।
মারিস্তানও রোগীদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য এতটাই আগ্রহী ছিল যে, তারা রোগীদের জন্য রাতে ও অন্যদের জন্য দিনের জন্য কাপড় প্রস্তুত করতেন। মারিস্তান সাইয়েদি ফার্জ বিশ্বে সাধারণভাবে এবং বিশেষ করে মরক্কোতে মনোরোগবিদ্যায় আগ্রহীদের জন্যে একটি সু-সংগঠিত ফোরাম গঠন করেছিলেন। বিশ্বের প্রাচীনতম মানসিক হাসপাতালগুলির মধ্যে একটি হিসাবে তা বিবেচিত হয় এবং এটি বিশ্বের মানসিক হাসপাতালের প্রথম আদর্শ ছিল।
মারিস্তান সাইয়েদি ফার্জ মাগরেব ও কাস্তিলের অন্যত্র অনুরূপ প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ভূমিকা পালন করেন; কারণ সম্ভবত ফাদার গিলবার্ট জোফরে, যখন তিনি খ্রিস্টান যুদ্ধে বন্দীদের উদ্ধারের জন্য ফেস শহরে এসেছিলেন, তখন এই বিমারস্তানটি থেকে উপকৃত হয়েছিলেন, যা তাকে ইউরোপের ভলেনসিয়ায় একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
সাইয়েদি ফার্জ মারিস্তানের একটি সামাজিক ভূমিকা ছিল; কারণ এর কর্মকর্তারা বয়স্ক ও দরিদ্রদের বস্ত্র ও খাবার বিতরণ করেছিলেন। অপরিচিত এবং মৃতদের মধ্যে যারা দরিদ্র হত, তাদের গোসল দেওয়া ও কাফন দেওয়ার জন্যে তা ব্যয় করা হতো এবং তাদের একটি শালীন অন্ত্যেষ্টি নিশ্চিত করা হত। বিমারস্তানটি ছিল শহরের বহনকারীদের সদর দফতর, যারা মানুষের হারিয়ে বস্তু খুঁজে তাদের কাছে পৌছে দিতো। :২৫৮–৫৯ এটি মুহতাসিবের অফিসিয়াল কার্যালয়ও ছিল এবং আদালতকেও অন্তর্ভুক্ত করেছিল। :২১৩
মারিস্তান ও সুক আল হেনার কাছে একটি সর্বজনীন রাস্তার ঝর্ণা এখনো একই নামে (সিদি ফেজ) পরিচিত রয়েছে।[9] ফেসের অন্যান্য প্রাচীরের ফোয়ারাগুলির মতোই এটির পিছনের দেয়ালগুলি আরেকটি সাধারণ আয়তক্ষেত্রাকার ফ্রেমের ভিতরে একটি সূক্ষ্ম হর্সশু খিলান দ্বারা ফ্রেম করা সাধারণ জেলিজ টাইলস দ্বারা আবৃত রয়েছে এবং জেলিজ টাইলসের মধ্যে স্থাপিত খিলানের ভিতরে, কালো এবং সাদা মার্বেলের ছোট প্যানেলগুলি অলঙ্কৃত খিলানের মৌলিক উপাদানগুলি দিয়ে খোদাই করা হয়েছে। এই শোভাকর এলাকার নীচে ও সামনে একটি জলের বেসিন রয়েছে। সজ্জিত এলাকার উপরে একটি বৃহত্তর পৃষ্ঠ; মাঝখানে একটি ডবল-পয়েন্টে ল্যাম্ব্রেকুইনসহ একটি ছোট অন্ধ খিলান ছাড়া এলাকাটি প্রায় সমতল; এর উপরে আছে একটি কাঠের ছাউনি এবং নকশায় তুলনামূলকভাবে সহজ আরবি ভাষায় রচিত একটি শিলালিপি।
সবচে' উল্লেখযোগ্যভাবে নিচের ছোট ল্যামব্রেকুইনটি একটি অন্ধ খিলানের ভিতরে একটি আয়তক্ষেত্রাকার মার্বেল প্যানেলের মতো, যেখানে এর ভিত্তি শিলালিপি রয়েছে। শিলালিপিটি ঝর্ণা সৃষ্টির বর্ণনা দেয় এবং এর প্রতিষ্ঠাতা দ্বিতীয় আব্দুল হকের ( সর্বশেষ মারিনিউন সুলতান) প্রশংসা করে। এটি আরও উল্লেখ করে যে, এ ঝর্ণার নির্মাণটি সুলতানের উজির আবু জাকারিয়া ইয়াহিয়া ইবনে জিয়ান আল-ওয়াত্তাসি ( যিনি পরবর্তী ওয়াত্তাসি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন ) কর্তৃক তত্ত্বাবধান করেছিলেন। সবশেষে তা নির্দেশ করে যে, এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল ১ম জুমাদাল উলা, ৮৪০ হিজরি (১১ নভেম্বর, ১৪৩৬ খ্রিস্টাব্দ)। এর মূল পাঠ্যের ঠিক উপরে যোগ করা আরেকটি লাইন বলে যে, এ ঝর্ণাটি ১০৯০ হিজরিতে (১৬৭৯ খ্রি.) পুনরুদ্ধার করা হয়।[9] তখন ঝর্ণাটি অনেকটাই পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং আলফ্রেড বেল বিশ্বাস করেন যে এটি সম্ভবত একবার খোদাই করা আস্তর সজ্জায় আচ্ছাদিত ছিল, যা পরে সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছিল।[9] শিলালিপি ও ছোট মার্বেল প্যানেলের অলঙ্কারগুলি মূল মেরিনীয় নির্মাণের মতই অক্ষত রাখা আছে, যখন এর উপরের কাঠের ছাউনিটি ১৭ শতকের পুনরুদ্ধার করা হয়েছে বলে তারিখ লিখিত আছে।[9] আজ পানির বেসিনের উপর বরাবর কিছু টাইলস দৃশ্যত ইঙ্গিত করে যে, এটি ১৯৮৬ সালের আধুনিক পুনরুদ্ধার, যাতে ফরাসি এবং আরবি উভয় ভাষায় সালটি উল্লেখিত আছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.