Loading AI tools
বাংলা লেখ্য গদ্যের অপেক্ষাকৃত প্রাচীন রূপ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সাধু ভাষা হলো বাংলা লেখ্য গদ্যের অপেক্ষাকৃত প্রাচীন রূপ। এর নবীন ও বর্তমানে বহুল প্রচলিত রূপটি হলো চলিত। সাধু ভাষা অনেকটা ধ্রুপদী বৈশিষ্ট্যের এবং চলিত ভাষা অপেক্ষা স্বল্প প্রাঞ্জল। "সাধু" শব্দের এক অর্থ শিষ্ট, মার্জিত,গুরুগম্ভীর বা ভদ্ররীতি সঙ্গত। রাজা রামমোহন রায় তাঁর "বেদান্ত গ্রন্থ" রচনাটিতে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।[১] তবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এভাষাকে প্রথম প্রাঞ্জল করে তোলেন। এজন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে সাধু ভাষার জনক বলা হয়। সাধু ভাষার সঙ্গে প্রমিত বা চলিত ভাষার মিশ্রণকে দূষণীয় গণ্য করা হয়। লেখার সময় যেকোনো একটি রীতিকে গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। নচেৎ একে "গুরুচণ্ডালী" দোষে দুষ্ট আখ্যা দেওয়া হয়। তবে কবিতার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়।
সাধু ভাষা | |
---|---|
অঞ্চল | বঙ্গ |
যুগ | ঊনবিংশ শতাব্দী-বিংশ শতাব্দী (ঔপনিবেশিক যুগে বহু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত তবে বর্তমানে তেমন নেই বললেই চলে)
|
ইন্দো-ইউরোপীয়
| |
ভাষা কোডসমূহ | |
আইএসও ৬৩৯-৩ | – |
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, সাধারণ গদ্য-সাহিত্যে ব্যবহৃত বাংলা ভাষাকে সাধু ভাষা বলে।[২] এছাড়াও তিনি এ ভাষাকে সমগ্র বঙ্গদেশের সম্পত্তি বলে আখ্যায়িত করেছেন। মুহম্মদ এনামুল হকের মতে,
“ | বাংলা ভাষার সংস্কৃত শব্দ-সম্পন্ন ক্রিয়া ও সর্বনাম পদের পূর্ণরূপ ও ব্যকরণসিদ্ধ উপাদান ব্যবহার করিয়া ইংরেজি গদ্য-সাহিত্যের পদবিন্যাসের প্রণালি অনুসরণে পরিকল্পিত যে সর্বজনীন গদ্যরীতি বাংলা সাহিত্যে প্রবর্তিত হয়, তাহাকে বাংলা সাধু ভাষা বলে । | ” |
সাধু ভাষার বাক্যরীতি অনেকটা সুনির্ধারিত। এ ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ অধিক। এতে সর্বনাম, ক্রিয়াপদ প্রভৃতির রূপ মৌখিক ভাষার রূপ অপেক্ষা পূর্ণতর। চলিত ভাষা সর্বদাই নতুন নতুন ধ্বনি-পরিবর্তন করে। কিন্তু সাধু ভাষায় শব্দের রূপান্তর তেমন দেখা যায় না। যেমন, চলিত ভাষায় স্বরসঙ্গতি ও অভিশ্রুতির প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়, কিন্তু সাধু ভাষায় তেমনটা দেখা যায় না। চলিত ভাষা অপেক্ষাকৃত চটুল এবং সাধু ভাষা গম্ভীর; তবে ব্যঙ্গরচনা বা রম্যরচনায় চলিত ভাষার মতো সাধু ভাষারও সফল ব্যবহার হতে পারে। তবে সাধু ভাষায় আছে এক ধরনের স্বাভাবিক আভিজাত্য ও ঋজুতা ।
১৮০০ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ সূচিত হয়।[৩][৪] এ সময়ই সাধু ভাষার আবির্ভাব ঘটে।উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজকে কেন্দ্র করে বাংলা গদ্য চর্চা আরম্ভ হয়।[৫][৬][৭] মহাবিদ্যালয়ে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে উইলিয়াম কেরি ও তার সহকর্মীগণ গদ্যের প্রয়োজন উপলব্ধি করেন এবং তাদের প্রচেষ্টায় গদ্যের আবির্ভাব হয়।[৮] এভাবেই আরম্ভ হয় গদ্যের চলার পথ। তবে এ ধরনের ভাষা মূলত একটি আদর্শ রূপ লাভ করে দেশীয় পণ্ডিতদের মাধ্যমেই। নবজাগরণের সময় বহু সাহিত্যিক ও পণ্ডিতদের দ্বারা এ ভাষা পূর্ণতা লাভ করে।
এর পূর্বে অষ্টাদশ শতাব্দীর পর্তুগিজ ধর্মযাজক মানোএল দা আস্সুম্পসাঁউ এর রচিত কৃপার শাস্ত্রের অর্থ ভেদে সাধু ভাষার আংশিক প্রয়োগ দেখা যায়। তিনি লিখেছেন,
এখানে পরিপূর্ণ সাধু ভাষা পরিলক্ষিত হয় না। পরবর্তীতে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ দেশীয় পণ্ডিতদের লেখার ভঙ্গিই সাধু ভাষার আদর্শ রূপ ধরে নেয়া হয়।
সাধু ভাষার সঙ্গে চলিত ভাষার মূল পার্থক্য হয় সর্বনাম ও ক্রিয়াপদে। এছাড়াও বিশেষ্য পদের পার্থক্যও লক্ষণীয়। প্রমিত বা চলিত বাংলায় বিশেষ্য পদ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তদ্ভব হয় কিন্তু সাধু ভাষায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা তৎসম বা সংস্কৃত উৎসজাত হয়ে থাকে। তবে এ ভাষায় অসংস্কৃত বা বিদেশি শব্দ যে একেবারেই প্রবেশ করতে পারে না এমন নয়। কখনো কখনো সাধু রীতিতে লিখিত রচনায় অনায়াসে আরবি-ফারসি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
সাধু | চলিত | |
---|---|---|
সাধারণ বর্তমান (উত্তম পুরুষ) | করি | করি |
ভাবি | ভাবি | |
যাই | যাই | |
সাধারণ বর্তমান (মধ্যম পুরুষ) | কর | কর |
ভাব | ভাব | |
যাও | যাও | |
সাধারণ বর্তমান (নাম পুরুষ) | করে | করে |
ভাবে | ভাবে | |
যায়,যান | যায়,যান | |
সাধারণ অতীত (উত্তম পুরুষ) | করিলাম | করলাম |
ভাবিলাম | ভাবলাম | |
লিখিলাম | লিখলাম | |
সাধারণ অতীত (মধ্যম পুরুষ) | করিলে | করলে |
ভাবিলে | ভাবলে | |
লিখিলে | লিখলে | |
সাধারণ অতীত (নাম পুরুষ) | করিল, করিলেন | করল, করলেন |
ভাবিল,ভাবিলেন | ভাবল, ভাবলেন | |
লিখিল, লিখিলেন | লিখল, লিখলেন | |
সাধারণ ভবিষ্যৎ(উত্তম পুরুষ) | লিখিব | লিখব |
গ্রহণ করিব | নিব | |
পড়িব,পাঠ করিব,অধ্যয়ন করিব | পড়ব | |
সাধারণ ভবিষ্যৎ (মধ্যম পুরুষ ও নাম পুরুষ) | করিবে, করিবেন | করবে, করবে |
গাহিবে, গাহিবেন | গাবে, গাবেন | |
লিখিবে,লিখিবেন | লিখবে, লিখবেন | |
ঘটমান বর্তমান | লিখিতেছি | লিখছি |
করিতেছে | করছি | |
লম্ফ প্রদান করিতেছে | লাফ দিচ্ছে | |
ঘটমান অতীত | শুনিতেছিল | শুনছিল বা শুনছিলো |
পড়িতেছিলাম | পড়ছিলাম | |
ঘটমান ভবিষ্যৎ | দৌড়াইতে থাকিবে,ধাবন করিতে থাকিবে | দৌড়াতে থাকবে |
পড়িতে থাকিব | পড়তে থাকব | |
পুরাঘটিত বর্তমান | করিয়াছেন, করিয়াছে | করেছেন, করেছে |
হইয়াছে | হয়েছে | |
পুরাঘটিত অতীত | দেখিয়াছিলাম | দেখেছিলাম |
শুনিয়াছিল,শুনিয়াছিলো | শুনেছিল | |
পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ | দেখিয়া থাকিবে | দেখে থাকবে |
শুনিয়া থাকিবে | শুনে থাকবে | |
নিত্যবৃত্ত অতীত | যাইতাম | যেতাম |
ভ্রমণ করিতাম | বেড়াতাম, ঘুরতাম | |
অসমাপিকা | শুনিয়া | শুনে |
শুনিতে | শুনতে | |
ভাবিয়া | ভেবে | |
ভাবিতে | ভাবতে | |
উল্লেখ্য যে ভাষার সৌন্দর্য রক্ষার জন্য সাধু ভাষায় অনেক চলিত ক্রিয়াপদের রূপ যৌগিক ধাতু থেকে উৎপন্ন ক্রিয়াপদ দ্বারা নির্দেশ করা হয়।যেমন: নিব (চলিত) আর গ্রহণ করিব (সাধু)। অথবা "খাব" সাধু ভাষায় "ভক্ষণ করিব" হতে পারে। সাধু থেকে চলিত ভাষার ক্রিয়াপদে রূপান্তরিত হওয়ার সময় অসমাপিকা ক্রিয়ার যে পরিবর্তন দেখা যায় সাধারণত তা ধ্বনি পরিবর্তনের "অভিশ্রুতি" নিয়মের অন্তর্ভুক্ত হয়। যেমন:বলিয়া(সাধু) > বলে(চলিত), ভাবিয়া(সাধু) > ভেবে(চলিত) । আবার সাধু-চলিতে অনেক ক্রিয়াপদের পার্থক্য ধ্বনি-পরিবর্তনের "হ-কার লোপ" নিয়ম দ্বারা নিরূপণ করা যায়। যেমন: গাহিবে (সাধু)> গাবে (চলিত) , চাহে (সাধু) > চায় (চলিত) ইত্যাদি।
সর্বনাম | বিশেষ্য | অব্যয় | |||
সাধু | চলিত | সাধু | চলিত | সাধু | চলিত |
---|---|---|---|---|---|
তাহার | তার | শখের নারী | হাত | অদ্য | আজ |
তাহাদের | তাদের | কর্ণ | কান | তজ্জন্য | সে কারণে |
তাহারা | তারা | নাসিকা | নাক | অদ্যাপি | আজও |
তাহাকে | তাকে | ওষ্ঠ | ঠোঁট | কদাচ, কদাচিৎ | কখনো |
কাটিছে | এরা | কফোণি | কনুই | তথাপি | তবুও |
ইহাদের,ইহাদিগের | এদের | মণিবন্ধ | কবজি | নচেৎ,নতুবা | নইলে,নাহলে |
উহারা | ওরা | ঘৃত | ঘি | প্রায়শ,প্রায়শঃ | প্রায়ই |
উহাদের,উহাদিগের | ওদের | ব্যাঘ্র | বাঘ | যদ্যপি | যদিও |
যাহা | যা | শৃগাল | শেয়াল | কুত্রাপি | কোথাও |
তাহা | তা | হস্তী | হাতি | কিঞ্চিৎ | কিছু, কিছুটা, কিঞ্চিৎ |
যাহাদের | যাদের | পক্ষী | পাখি | ইত্যবসরে | এই সুযোগে |
কাহাদের | কাকে | মৎস্য | মাছ | ইত্যবকাশে | এই সুযোগে |
কেহ | কেউ | অগ্নি | আগুন | যদর্থে | যে কারণে |
কখনো কখনো ধ্বনি-পরিবর্তনের বিভিন্ন নিয়ম দিয়ে সাধু ও চলিতের শব্দগত পার্থক্য বিচার করা যায়।যেমন: "অন্ত্যস্বরাগম" নিয়মানুযায়ী সত্য > সত্যি। উল্লেখ্য যে "সত্য" শব্দটি সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা উভয়েই ব্যবহৃত হয় । "আদি স্বরাগম" এর নিয়মানুযায়ী স্পর্ধা (সাধু তবে চলিতেও ব্যবহৃত হয়) > আস্পর্ধা (চলিতে অধিক ব্যবহৃত) ।
উনিশ শতকে বাংলা গদ্যের প্রসারকালে সাধু ভাষার দুটি রূপ দেখা গিয়েছিল : বিদ্যাসাগরী ও বঙ্কিমী।[১১] প্রথমটিতে খ্যাত ছিলেন বাংলা গদ্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং সেই সঙ্গে অক্ষয়কুমার দত্ত। তাদের ভাষা বিশুদ্ধ সংস্কৃত শব্দবহুল, যাতে অসংস্কৃত শব্দ পরিহারের প্রয়াস দেখা যায়।[১২] কিন্তু দ্বিতীয় রূপের প্রধান পুরুষ বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষা সংস্কৃত শব্দবহুল হলেও তা অপেক্ষাকৃত সহজ এবং সে ভাষায় অসংস্কৃত শব্দের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল না।[১৩] বঙ্কিমী সাধু ভাষায়ই হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, দীনেশচন্দ্র সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মীর মশাররফ হোসেন, ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ সাহিত্যিকের গ্রন্থাবলি রচিত হয়; এছাড়া সমসাময়িক সাহিত্যেও কমবেশি এ ভাষা ব্যবহূত হয়েছে। এভাবে এক সময় সাধু ভাষা বাংলার আদর্শ লেখ্য ভাষা হয়ে ওঠে। সমগ্র বঙ্গদেশে তখন গদ্য-লেখায় ও চিঠি-পত্রাদিতে প্রায়শ এই ভাষা ব্যবহূত হতো; সরকারি কাজকর্ম, বিশেষত আইন-সংশিষ্ট দস্তাবেজে এর প্রয়োগ ছিল সর্বাধিক। বর্তমানে দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং সাহিত্যে এ ভাষার প্রয়োগ নেই বললেই চলে।
বিদ্যাসাগরী ও বঙ্কিমী সাধু ভাষার দুটি উদাহরণ হলো:
‘এই পরম রমণীয় স্থানে কিয়ৎক্ষণ সঞ্চরণ করিয়া, রাজকুমার অশ্ব হইতে অবতীর্ণ হইলেন এবং সমীপবর্তী বকুলবৃক্ষের স্কন্ধে অশ্ববন্ধন ও সরোবরে অবগাহনপূর্বক, স্নান করিলেন; অনন্তর, অনতিদূরবর্তী দেবাদিদেব মহাদেবের মন্দিরে প্রবেশপূর্বক দর্শন, পূজা, ও প্রণাম করিয়া কিয়ৎক্ষণ পরে বহির্গত হইলেন।’ (বেতালপঞ্চবিংশতি)[১৪]
অন্যটি হলো:
‘অনেক দিন আনন্দোত্থিত সঙ্গীত শুনি নাই, অনেক দিন আনন্দ অনুভব করি নাই। যৌবনে যখন পৃথিবী সুন্দর ছিল, যখন প্রতি পুষ্পে পুষ্পে সুগন্ধ পাইতাম, প্রতি পত্রমর্মরে মধুর শব্দ শুনিতাম, প্রতি নক্ষত্রে চিত্রা-রোহিণীর শোভা দেখিতাম, প্রতি মনুষ্য-মুখে সরলতা দেখিতাম, তখন আনন্দ ছিল। পৃথিবী এখনো তাই আছে, কিন্তু এ হৃদয় আর তাই নাই।’(কৃষ্ণকান্তের উইল)[১৫]
বর্তমানে সাধু ভাষার ব্যবহার তেমন নেই বললেই চলে। তবে কিছু পুরাতন কাগজসমূহে সংস্কারের অভাবে সাধু ভাষা রয়ে গেছে এবং সেগুলো পুনর্মুদ্রণ না করায় এমন ঘটেছে। যেমন: জমির দলিলে এখনো সাধু ভাষা দেখতে পাওয়া যায়। তবে সাধু ভাষা যে একসময় অব্যবহৃত হয়ে পড়বে তা দূরদর্শী লেখকগণ পূর্বেই অবহিত করার চেষ্টা করেছেন।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,
রূপকথায় বলে এক-যে ছিল রাজা, তার দুই ছিল রানী,সুয়োরানী আর দুয়োরানী। তেমনি বাংলাবাক্যাধীপেরও আছে দুই রানী-একটাকে আদর করে নাম দেওয়া হয়েছে সাধু ভাষা;আর একটাকে কথ্য ভাষা,কেউ বলে চলতি ভাষা, আমার কোনো কোনো লেখায় আমি বলেছি প্রাকৃত বাংলা।[১৬]
রবীন্দ্রনাথ আভিজাত্যের জন্য সাধু ভাষাকে সুয়োরানির সঙ্গে তুলনা করেছেন কিন্তু পরিণতিতে এর বিলুপ্তির কথাও বলেছেন।
রূপকথায় শুনেছি,সুয়োরানী ঠাঁই দেয় দুয়োরানীকে গোয়ালঘরে। কিন্তু গল্পের পরিণামের দিকে দেখি সুয়োরানী যায় নির্বাসনে , টিকে থাকে একলা দুয়োরানী রানীর পদে। বাংলায় চলতি ভাষা বহু কাল ধরে জায়গা পেয়েছে সাধারণ মাটির ঘরে , হেঁশেলের সঙ্গে, গোয়ালের ধারে, গোবর-নিকোনো আঙিনার পাশে , যেখানে সন্ধেবেলায় প্রদীপ জ্বালানো হয় তুলসীতলায় আর বোষ্টমী এসে নাম শুনিয়ে যায় ভোরবেলাতে। গল্পের শেষ অংশটা এখনো সম্পূর্ণ আসে নি, কিন্তু আমার বিশ্বাস সুয়োরানী নেবেন বিদায় আর একলা দুয়োরানী বসবেন রাজাসনে।[১৭]
ঔপনিবেশিক যুগেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে সাহিত্যে সাধু ভাষার ব্যাপক ব্যবহার সত্ত্বেও এর প্রাঞ্জলতা ও প্রাণের স্ফূর্তির অভাব নিয়ে নানা মতবাদের সৃষ্টি হয়। অনেক বিখ্যাত লেখকগণই (বিশেষত প্রমথ চৌধুরী) সহজবোধ্যতার জন্য চলিত ভাষাকেই আদর্শ জ্ঞান করতেন। এমনকি প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাধু ভাষায় লিখলেও পরবর্তীতে তিনিও লেখার জন্য গ্রহণ করে নেন চলিত ভাষাকেই। এভাবে সময়ের সাথে সাথে সর্বক্ষেত্রে চলিত ভাষা গ্রহণীয় হয়ে উঠতে থাকে আর হ্রাস পেতে থাকে সাধু ভাষার প্রয়োগ।
বাংলাদেশি লেখক, সমালোচক ও বুদ্ধিজীবী ড. সলিমুল্লাহ খান ২০০৫ সাল থেকে সাধু ভাষায় লেখালিখি করছেন।[১৮]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.