Loading AI tools
সংস্কৃত থেকে আগত পরিবর্তিত বাংলা ভাষার শব্দ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
তদ্ভব (বাংলা উচ্চারণ: [t̪ɔd̪bʱɔbo], তদ্ভবো[ক]) বলতে সংস্কৃত থেকে উদ্ভূত এবং ক্রমশ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত ও প্রচলিত শব্দদের বোঝায়।[১] একটি "তদ্ভব" হল একটি ইন্দো-আর্য উৎপত্তি (এবং এইভাবে সংস্কৃত এর সাথে সম্পর্কিত) কিন্তু যেটি মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষাসমূহ পরিবর্তনের মাধ্যমে বিকশিত হয়েছে। পর্যায় এবং শেষ পর্যন্ত উত্তরাধিকারসূত্রে একটি আধুনিক ইন্দো-আর্য ভাষা।এই অর্থে, তদ্ভবকে আধুনিক ইন্দো-আর্য ভাষার স্থানীয় (উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত) শব্দভাণ্ডার হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
তদ্ভবগুলিকে তৎসম থেকে আলাদা করা হয়, মধ্য ইন্দো-আর্য ভাষার বিকাশের পরে ধ্রুপদী সংস্কৃত থেকে ঋণ করা শব্দগুলির ক্ষেত্রে একটি শব্দ প্রয়োগ করা হয়; তৎসম এইভাবে তাদের সংস্কৃত রূপ ধরে রাখে (অন্তত বানানের দিক থেকে)।
বিশ্বের যাবতীয় ভাষার উৎপত্তি হয়েছে হাতেগোনা কয়েকটি আদি ভাষা থেকে। তাদের মধ্যে একটি হলো 'ইন্দো-ইউরোপীয়' বা 'আদি আর্য ভাষাগোষ্ঠী'। এই ভাষাগোষ্ঠী থেকে উৎপন্ন ভাষাগুলো আবার দুইটি শাখায় বিভক্ত। এর একটি হলো সতম। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়ায় একদল লোক বাস করত। তারা প্রথম যে ভাষা ব্যবহার করেছিল তার নাম 'ইন্দো-ইউরোপীয়' মূলভাষা। তারা ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে তারা ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন শাখাগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিভিন্ন শাখার ভাষার মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর একদল মানুষ ভারতে 'আর্য' নাম ধারণ করে। কালক্রমে ভারতে বসবাসকারী আর্যদের ভাষা জলবায়ুগত প্রভাবে, অনার্য ভাষাগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশ্রণের ফলে এক ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করল। মোটামুটি খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ অব্দ থেকেই চেষ্টা শুরু হলো ভাষাশাসনের। সর্বজনগ্রাহ্য একটা রূপ তৈরি হতে থাকল। এরপর পাণিনি নামে একজন ব্যাকরণবিদ খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দের দিকে তার 'অষ্টাধ্যায়ী' নামক বিখ্যাত গ্রন্থে এলোমেলো ভাষাগুচ্ছকে সংস্কার করে সর্বভারতীয় একটা সুস্থির রূপ দান করলেন। সেই থেকে এ ভাষার নাম হলো সংস্কৃত (যাকে সংস্কার/শুদ্ধ করা হয়েছে)।
সংস্কৃত ভাষা অভিজাত শ্রেণির মধ্যেই আবদ্ধ থাকলেও সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা বিস্তৃত হতে থাকে। এটি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অগ্রসর হতে থাকে। একে আদিম প্রাকৃত ভাষা বা মধ্যভারতীয় আর্য ভাষা বলা হয়।
প্রাকৃত ভাষা কথাটির তাৎপর্য হলো প্রকৃতির অর্থাৎ জনগণের কথ্য ও বোধ্য ভাষা।
পূর্বভারতীয় বাংলা ভাষায়ও এ ধরনের অনেক শব্দ প্রবেশ লাভ করে। বাংলা ভাষার উদ্ভব গৌড়ি প্রাকৃত থেকে।
সংস্কৃত শব্দগুলি পূর্বভারতে প্রথমে গৌড়ি প্রাকৃতের রূপ লাভ করে এবং পরে তা বাংলায় রূপান্তরিত হয়। যেমন: চাঁদ<চান্দ চন্দ<চন্দ্র, দই<দহি<দধি, বৌ<বউ<বহু<বধূ, মাছি<মাচ্ছি মচ্ছি<মচ্ছিঅ<মচ্ছিআ<মক্ষিকা ইত্যাদি। এ তদ্ভব শব্দগুলি বাংলা ভাষার মূল উপাদান।
বাংলা ভাষা বিবর্তনের রূপরেখা
ইন্দো-ইউরোপীয় >> সতম >> আর্য >> ভারতীয় >> প্রাচীন ভারতীয় আর্য >> প্রাচীন ভারতীয় কথ্য আর্য >> সংস্কৃত >> গৌড়ি প্রাকৃত >> তদ্ভব(বাংলা)
বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে যে শব্দগুলি ব্যবহৃত হয় তার অধিকাংশই তদ্ভব শব্দ। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও খ্যাতনামা লেখকদের রচনার শতকরা ৬০ ভাগ শব্দই তদ্ভব।
অর্থাৎ, যেসব শব্দের মূল পাওয়া গিয়েছে সংস্কৃততে এবং সংস্কৃত থেকে প্রাকৃততে এবং প্রাকৃত থেকে বাংলায় এসেছে সেগুলোকে তদ্ভব শব্দ বলে। তদ্ভব শব্দের অপর নাম খাঁটি বাংলা শব্দ।
সংস্কৃত | প্রাকৃত | তদ্ভব |
---|---|---|
মৎস | মচ্ছ | মাছ |
হস্ত | হত্থ | হাত |
চন্দ্র | চন্দ | চাঁদ |
কর্মকার | কম্মআর | কামার |
দুগ্ধ | দুদ্ধ | দুধ |
চর্মকার | চম্মআর | চামার |
ওড়িয়া শব্দগুলি কতকগুলি দেশীয় শব্দে বিভক্ত (দেশজা)। যেগুলো সংস্কৃত (তৎসম) ও সংস্কৃত থেকে সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে তদ্ভবরূপে আগত। উপেন্দ্র ভাঞ্জা রচিত সপ্তাদশ শতাব্দীর গীতাবিধান, গোপীনাথ নন্দ রচিত শব্দ তত্ত্ব অভিধান (১৯১৬), জিসি প্রহরাজের ১৮৫০০০০ শব্দসংবলিত পূর্ণচন্দ্র ওড়িয়া ভাষাকোষ (১৯৩১)-সহ প্রমোদ অভিধানে (১৯৪২) পিসি দেব এবং দামোদর মিশর ১৫০০০০ শব্দের সমন্বয়ে ওড়িয়া শব্দকে শ্রেণিবদ্ধ করেছেন দেশি, তৎসম ও তদ্ভব হিসাবে।
ওড়িয়া শব্দগুলি ওড়িয়া ধ্বনিমূল থেকে উদ্ভূত হয়েছে এবং ওড়িয়া ধ্বনিমূলগুলি সংস্কৃত ধ্বনিমূল থেকে উদ্ভূত হয়েছে; এই ওড়িয়া শব্দকে তদ্ভব কৃদন্ত শব্দ বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, "কান্না" ওডিয়া "ধাতু কাঁদ" থেকে উদ্ভূত যা সংস্কৃত "ক্রন্দ্ ধাতু" থেকে উদ্ভূত।
দ্রাবিড়, অস্ট্রো-এশীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার তিব্বত বর্মী ভাষার প্রসঙ্গে "তদ্ভব" শব্দটি সংস্কৃত থেকে গৃহীত হয়েছে এমন শব্দগুলিকে বর্ণনা করতে ব্যবহার করা হয় যা সংশোধন করা হয়েছে। সমস্ত দ্রাবিড় ভাষায় তদ্ভব ও তৎসম শব্দের একটি অনুপাত রয়েছে। সম্ভবত তামিল কম সংস্কৃত রূপ ধারণ করে। কন্নড়, তেলুগু এবং মালায়ালামের শব্দভাণ্ডারে তদ্ভব অর্ধেকরও বেশি। তাদের ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠী থেকে উদ্ভবের কারণে স্থানীয়, দ্রাবিড়, অস্ট্রো-এশীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার তিব্বত বর্মী ভাষার উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত শব্দভাণ্ডারগুলিকে "দেশি" হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.