বলবীর রাজ কাপুর (জন্ম: ১৮ মার্চ, ১৯৩৮ - মৃত্যু: ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭), যিনি শশী কাপুর নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। এছাড়াও, হিন্দি চলচ্চিত্র অঙ্গনে চলচ্চিত্র পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন শশী কাপুর[২]

দ্রুত তথ্য শশী কাপুর, জন্ম ...
শশী কাপুর
Thumb
২০০৫ সালে শশী
জন্ম
বলবীর রাজ কাপুর

(১৯৩৮-০৩-১৮)১৮ মার্চ ১৯৩৮[১]
মৃত্যু৪ ডিসেম্বর ২০১৭(2017-12-04) (বয়স ৭৯)
অন্যান্য নামবলবীর
শশী
বলবীর রাজ
শশা (তাঁর ভাই শাম্মী কাপুর ব্যবহার করতেন)
শশী বাবা
পেশাঅভিনেতা, পরিচালক, নির্মাতা
কর্মজীবন১৯৪১-১৯৯৯ (অবসর)
দাম্পত্য সঙ্গীজেনিফার কেন্ডাল (১৯৫৮-১৯৮৪; মৃত্যু)
সন্তানকুণাল কাপুর
করণ কাপুর
সঞ্জনা কাপুর
পিতা-মাতাপৃথ্বীরাজ কাপুর (বাবা)
রমাস্বামী কাপুর (মা)
আত্মীয়রাজ কাপুর (ভাই)
শাম্মী কাপুর (ভাই)
দেখুন - কাপুর পরিবার
পুরস্কারপদ্মভূষণ (২০১১)
বন্ধ

ভারতের বলিউডের চলচ্চিত্রে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী বিখ্যাত কাপুর পরিবারের অন্যতম সদস্য তিনি। ব্যাপকসংখ্যক হিন্দিভাষী চলচ্চিত্রের পাশাপাশি স্বল্পসংখ্যক ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্রেও তাঁর অংশগ্রহণ রয়েছে।

২০১১ সালে চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদান রাখার প্রেক্ষিতে ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন।[৩] ২০১৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার লাভ করেন। পৃথ্বীরাজ কাপুররাজ কাপুরের পর কাপুর পরিবারের তৃতীয় সদস্যরূপে ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা পান।[৪]

শৈশবকাল

তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায় শশী কাপুরের জন্ম।[৫] বিখ্যাত অভিনেতা রাজ কাপুরশাম্মী কাপুরের ছোট ভাই তিনি। পৃথ্বীরাজ কাপুর তার বাবা। মুম্বইয়ের মাতুঙ্গার ডন বস্কো হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন।

চার বছর বয়সেই অভিনয়কর্মে সংশ্লিষ্ট হন। পৃথ্বী থিয়েটারে গমনকালে বাবা পৃথ্বীরাজ কাপুরের পরিচালনায় ও নির্দেশনায় নাটকসমূহে অভিনয় করেন। ১৯৪০-এর দশকের শেষদিকে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। বাণিজ্যিকধর্মী চলচ্চিত্র সংগ্রাম, দানা পানিতে 'শশীরাজ' নামে আবির্ভূত হন। পৌরাণিক চলচ্চিত্রে ঐসময়ে একই নামে আরও একজন শিশু শিল্পী অভিনয় করতো। আগ ও আওয়ারায় শিশুশিল্পী হিসেবে স্মরণীয় অভিনয় করেন। ঐ চলচ্চিত্রসমূহে তার বড়ভাই রাজ কাপুরের ছোটকালের চরিত্রে এবং ১৯৫০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সংগ্রাম চলচ্চিত্রে অশোক কুমারের ছেলেবেলার চরিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৪ সময়কালে সর্বমোট চারটি হিন্দি চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী ছিলেন তিনি।

কর্মজীবন

পোস্ট বক্স ৯৯৯-এ সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। উল্লেখ্য যে, এ চলচ্চিত্রটি সুনীল দত্তের অভিষেক চলচ্চিত্র ছিল। ১৯৬১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ধর্মপুত্র চলচ্চিত্রে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এরপর থেকে ১১৬টি হিন্দি চলচ্চিত্রে অংশ নিয়েছেন। তন্মধ্যে, ৬১টিতে একক নায়ক, ৫৫টিতে বহুনায়কের অংশগ্রহণ এবং ২১টিতে পার্শ্ব অভিনেতা ও ৭টি চলচ্চিত্রে বিশেয দৃশ্যে হাজির হন।

১৯৬০-এর দশক থেকে শুরু করে ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বলিউডের অত্যন্ত জনপ্রিয় তারকায় পরিণত হয়েছিলেন। ১৯৬৩ সালে দ্য হাউজহোল্ডারশেক্সপিয়ার-ওয়াল্লার ন্যায় ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্রসমূহে অংশ নেন। ভারতের অন্যতম প্রথম অভিনেতাদের একজনরূপে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে অংশ নিয়েছেন তিনি।[৬] অভিনেত্রী নাদিরার সাথে আবেগময় চলচ্চিত্র চার দিওয়ারি এবং মেহেন্দি লাগি মেরে হাতের ন্যায় সামাজিক চলচ্চিত্রে অংশ নিয়ে সাড়া জাগান। ১৯৬০-এর দশকে অভিনেত্রী নন্দা সাথেও বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে জুটি গড়েন।[৭] ১৯৯০-এর দশকে এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, নন্দা তার প্রিয় নায়িকা এবং অন্যতম পরামর্শদাত্রী ছিলেন।[৮] অন্যদিকে, নন্দাও শশী কাপুরকে তার প্রিয় নায়করূপে স্বীকার করেছেন।

১৯৬০-এর দশকের শেষভাগ থেকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রাখী, শর্মিলা ঠাকুর, জিনাত আমানের সাথে জুটি গড়েন। এছাড়াও, হেমা মালিনী, পারভিন ববিমৌসুমি চট্টোপাধ্যায়ের সাথেও নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। তন্মধ্যে, হেমা মালিনীর বিপরীতে ১০টি চলচ্চিত্রে ছিলেন। বহুনায়ক নিয়ে গড়া প্রেম কাহানীতে রাজেশ খান্নার সাথেও কাজ করেছেন।

১৯৭৮ সালে নিজস্ব চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ফিল্ম ভালাস প্রতিষ্ঠা করেন। এ প্রতিষ্ঠান থেকে জুনুন, কলিযুগ, ৩৬ চৌরঙ্গী লেন, বিজেতা ও উৎসব নির্মাণ করেন।[৯] ১৯৯১ সালে তার নির্দেশনায় ও পরিচালনায় আজুবা মুক্তি পায়। এতে তিনি সহনায়ক হিসেবে অমিতাভ বচ্চন ও ভাইপো ঋষি কাপুরের সাথে অংশ নেন।

চলচ্চিত্র জীবনের শুরু থেকে নন্দা, প্রাণ, ধর্মেন্দ্র, দেব আনন্দ, ইসমাইল মার্চেন্ট, রাজেশ খান্না, সঞ্জীব কুমার তার নিকটতম বন্ধু ছিলেন। এছাড়াও, অমিতাভ বচ্চন, যশ চোপড়া, এমজিআর, কিশোর কুমার, মোহাম্মদ রফি, লতা মঙ্গেশকরসহ অনেকের সাথেই জানাশোনা ছিল তার।

১৯৮৭ সাল থেকে খুব কমই অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৮৮ সালে পিয়ার্স ব্রসনানের সাথে দ্য ডিসিভার্স চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।[১০] ১৯৯৪ সালে মুহাফিজ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার বিশেষ লাভ করেন। ১৯৯৬ সালে গালিভার্স ট্রাভেলসের টেলিভিশন সংস্করণে রাজা চরিত্রে ছিলেন। চলচ্চিত্রে তার সর্বশেষ ও সাম্প্রতিক অংশগ্রহণ ছিল ১৯৯৮ সালের মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ'র আত্মজীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র জিন্নাহ। ঐ চলচ্চিত্রে তিনি অনুবাদক ছিলেন। এছাড়াও, মার্চেন্ট আইভরি প্রোডাকশন্স থেকে একই সালের মুক্তিপ্রাপ্ত সাইড স্ট্রিটসেও একই ভূমিকায় ছিলেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে চলচ্চিত্র জগৎ থেকে পুরোপুরিভাবে অবসর নেন। এরপর থেকে তাকে আর কোন চলচ্চিত্রে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

ব্যক্তিগত জীবন

১৯৫৬ সালে কলকাতায় নিজ নিজ থিয়েটারে প্রশিক্ষণ গ্রহণকালীন ইংরেজ অভিনেত্রী জেনিফার কেন্ডাল সাথে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। সহকারী মঞ্চ ব্যবস্থাপক ও অভিনেতা হিসেবে বাবার থিয়েটার গ্রুপ পৃথ্বী থিয়েটারে কাজ করতেন। জিওফ্রে ক্যান্ডলের শেক্সপিয়ারীয় গ্রুপ ঐ সময়ে কলকাতায় আসে ও তার কন্যাই জেনিফার। বেশ কয়েকবার স্বাক্ষাৎকারের পর তারা একে-অপরের দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। শুরুতে ক্যান্ডলের বাবা এতে বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়ান ও বৌদি গীতা বালির সমর্থনে জুলাই, ১৯৫৮ সালে তাদের সম্পর্কে পরিণয়ে গড়ায়।[১১] তারা একত্রে কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। ৫ নভেম্বর, ১৯৭৮ তারিখে মুম্বইয়ে তারা পৃথ্বী থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন।[১২] এ দম্পতির কুণাল কাপুর, করণ কাপুরসঞ্জনা কাপুর - তিন সন্তান রয়েছে।[১৩] ১৯৮৪ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে জেনিফারের দেহাবসান ঘটে।

২০ জুলাই, ২০১২ তারিখে আন্ধেরির কোকিলাবেন হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার হয়। একইদিন তিনি হাসপাতাল থেকে মুক্তি পান।[১৪]

সম্মাননা

সেপ্টেম্বর, ২০০৭ ওমানের মাস্কাটে অনুষ্ঠিত শশী কাপুর চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যমণি ছিলেন তিনি। ৫৫তম বার্ষিক ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অনুষ্ঠানে তাকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ২০১১ সালে ভারত সরকার প্রদত্ত পদ্মভূষণ পদকে ভূষিত হন।[৩] একই সালে মোহাম্মদ রফি পুরস্কার পান।[১৫] মে, ২০১৫ সালে ইউনিয়ন মন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছ থেকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।[১৬]

রচিত গ্রন্থ

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

আরও পড়ুন

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.