Loading AI tools
রাজনীতিবিদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শওকত হোসেন হিরণ (১৫ অক্টোবর ১৯৫৬ - ৯ এপ্রিল ২০১৪) ছিলেন বাংলাদেশী রাজনীতিক, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এবং সংসদ সদস্য। [1][2] তিনি মেয়র থাকাকালীন বরিশাল শহরের অনেক উন্নয়ন সাধন করেছেন। [3] এজন্য তাঁকে আধুনিক বরিশালের রূপকার বলা হয়।
এই নিবন্ধে একাধিক সমস্যা রয়েছে। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির মান উন্নয়ন করুন অথবা আলাপ পাতায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
|
শওকত হোসেন হিরণ | |
---|---|
সংসদ সদস্য - বরিশাল-৫ | |
কাজের মেয়াদ ৫ জানুয়ারি, ২০১৪ – ৯ এপ্রিল, ২০১৪ | |
পূর্বসূরী | মজিবুর রহমান সারওয়ার |
উত্তরসূরী | জেবুন্নেসা আফরোজ |
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র | |
কাজের মেয়াদ ৪ আগস্ট, ২০০৮ – ১৫ জুন, ২০১৩ | |
পূর্বসূরী | মজিবুর রহমান সারওয়ার |
উত্তরসূরী | আহসান হাবিব কামাল |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | ১৫ অক্টোবর, ১৯৫৬ বাউফল উপজেলা, পটুয়াখালী, বাংলাদেশ |
মৃত্যু | ৯ এপ্রিল, ২০১৪ (বয়স ৫৮) ঢাকা, বাংলাদেশ |
রাজনৈতিক দল | বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ |
ধর্ম | ইসলাম |
বরিশাল নগরীর আলেকান্দায় মামার বাড়িতে ১৯৫৬ সালের ১৫ অক্টোবর শওকত হোসেন হিরণ জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলার কালীশুরি ইউনিয়নের আড়াইনাও গ্রাম। তার পিতা পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর আব্দুল হাসেম সরদার এবং মাতা গৃহিনী জয়নব বেগম। চার পুত্র ও ছয় কন্যার মধ্যে তিনি তৃতীয়। শৈশব থেকে শুরু করে তার সারাজীবন কেটেছে আলেকান্দায়।[4]
তিনি নগরীর নুরিয়া হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাস করেন। এরপর বি এম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং স্নাতক পাস করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বরিশাল ল' কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করেন।[5]
হিরণের স্ত্রী সমাজসেবিকা জেবুন্নেছা আফরোজ। তার ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে সুইডেনে পড়াশোনারত মেয়ে রোশনী হোসেন তৃণার বিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।[4] ছোট ছেলে সাজিদ হোসেন রাফসান ঢাকার বিএএফ শাহিন কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দেয়।
তিনি বসবাস করতেন নগরীর রিফুজী কলোনী এলাকার ডেঙ্গু সরদার রোডের ওহাব বাড়ির ‘হিরন পয়েন্ট’ নামের বাসায়।[1]
পেশায় তিনি ছিলেন ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী। এছাড়া তিনি সাউথ এ্যাপোলো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল লিমিটেড, বেলস লিমিটেড, বেলস ফার্মা ইউনানি প্রাইভেট লিমিটেড, অ্যাভান্স অ্যাসোসিয়েট প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান, এইচ পি এল ও এইচ পি এল শিপিং এবং সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের সত্ত্বাধিকারী, সাউথ এ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক কমপ্লেক্স প্রাইভেট লিমিটেড ও বেলভিউ মেডিক্যাল সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালকসহ অন্তত ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন।[2]
বরিশাল ল' কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করার পরে তিনি যোগ দেন জাসদ ছাত্রলীগে। ১৯৭৯ সালে বিএনপির ছাত্ররাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন।[2] ১৯৮৬ সালে তিনি যোগ দেন এরশাদের জাতীয় পার্টিতে। ১৯৮৮ সালে ২২ বছর বয়সে বাংলাদেশের সর্বকনিষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বরিশাল সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।[5]
১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য পদের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ঐবছর অপর একটি উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়েছিলেন হিরন।[5]
১৯৯৭ সালে ঐকমত্যের সরকারের শরিক দল জাতীয় পার্টির মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। ফলে তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি'র বরিশাল বিভাগের নেতৃত্বে আসেন।[5]
১৯৯৬ সালে তৎকালীন চীফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর হাত ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মাধ্যমে হিরণ যোগ দেন আওয়ামী লীগে।[5] ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বরিশাল সদর আসনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চার দলীয় জোট সরকারের সময়ে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন তিনি এবং তা সক্রিয়ভাবে রাজপথে থেকে করেন। তাই যোগ্যতা বিবেচনা করে ২০০৩ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনোনীত করে। সাংগঠনিক দক্ষতা ও শক্তিশালী নেতৃত্ব দিয়ে তিনি মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নকে নতুন করে সাজান। ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয় অর্জন করেন এবং মেয়র নির্বাচিত হন। হিরণ তার নিজের কার্যক্ষমতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে টানা ৩৫ বছর পর বরিশাল নগর ভবনের নেতৃত্বে নিয়ে যান। ২০১৩ সালের ১৫ জুন বিসিসি’র নির্বাচনে তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামালের কাছে পরাজিত হন।[4]
২০১২ সালের সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[4]
২০১৪ সালের ২২ মার্চ, শনিবার রাত ১০টায় হিরণের বরিশাল ক্লাবের সামনে ব্রেন স্ট্রোক হয়। এর সাথে সাথেই তিনি পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পান এবং চেতনা হারিয়ে পড়েন। তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে নিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই রোববার তাঁর মস্তিষ্কে ‘ডিকমপ্রেসিভ ক্রানেকটমি’ নামে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এরপরে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেয় এবং সেই অনুযায়ী সোমবার রাতে হিরণকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের গ্লেনঈগলস হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।[6] পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মঙ্গলবার সকালে তার একটি অস্ত্রোপচার করা হয়।[7] সেখানকার চিকিৎসকেরা হিরণের বাঁচার সব আশা ছেড়ে দেয় এবং বাংলাদেশে এনে লাইফ সমর্থন খুলে ফেলার পরামর্শ দেয়। পরবর্তী বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনরায় অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থায় রাখা হয়।[8] অবশেষে ৯ই এপ্রিল, ২০১৪; বুধবার সকাল সাতটায় তিনি পরলোকগমন করেন।[9]
তার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বি মিয়া, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, চিফ হুইফ আ স ম ফিরোজ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার সফিক আহম্মেদ নৌ-পরিবহন মন্ত্রী মো. শাজাহান খানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ শোক প্রকাশ করেন।[1][10][11]
বরিশালের উন্নয়নে হিরণ গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।[3] রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা, স্থানে স্থানে সবুজ পার্ক নির্মাণ ও বৃক্ষরোপণ করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ রাখেন তিনি। এলাকার বেশিরভাগ উন্নয়নমূলক কর্মসূচী তার সময়েই সম্পাদিত হয়। এছাড়া তিনি তার এলাকায় বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমঝোতা বজায় রেখেছিলেন।[3]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.