Loading AI tools
ভ্রাম্যমান ব্যবহারের জন্য ভাজযোগ্য বহনযোগ্য ব্যক্তিগত কম্পিউটার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ল্যাপটপ হল বহনযোগ্য ব্যক্তিগত কম্পিউটার যা দেখতে ঝিনুক আকৃতির এবং ভ্রমণ উপযোগী।[১] ল্যাপটপ এবং নোটবুক উভয়কে পূর্বে ভিন্ন ধরা হত কিন্তু বর্তমানে তা মানা হয় না।[২] ল্যাপটপ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয় যেমন কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষায় এবং ব্যক্তিগত বিনোদনের কাজে।
একটি ল্যাপটপ কম্পিউটারে ডেস্কটপ কম্পিউটারের সমস্ত উপাদান এবং সকল ইনপুটগুলোকে একত্রিত করা হয়, যেখানে শুধুমাত্র একটি যন্ত্রে মনিটর, স্পিকার, কিবোর্ড এবং টাচপ্যাড বা ট্র্যাকপ্যাড থাকে। বর্তমানের বেশিরভাগ ল্যাপটপের সঙ্গেই ওয়েবক্যাম এবং মাইক্রোফোন সংযুক্ত থাকে। ব্যাটারি অথবা এসি এডাপ্টারের মাধ্যমে বিদ্যুতের সরাসরি সংযোগের মাধ্যমে ল্যাপটপ চালানো যায়। ল্যাপটপের মডেল, প্রকারভেদ ও উৎপাদনের উপর হার্ডওয়্যারের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।
বহনযোগ্য কম্পিউটারগুলোকে পূর্বে ছোট একক বাজার হিসেবে গন্য করা হত এবং এগুলো বিশেষ ধরনের প্রায়োগিক কাজে ব্যবহার করা হত যেমন সৈনিকদের কাজে, হিসাববিজ্ঞানের কাজে, বিক্রয় প্রতিনিধিদের প্রয়োজনে ইত্যাদি। এগুলো পরে আধুনিক ল্যাপটপে পরিণত হয়। এগুলো আকারে আরও ছোট, পাতলা, সস্তা, হালকা এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন হতে থাকে ফলে বহুমুখী কাজে এদের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।[৩]
যন্ত্রটিকে ল্যাপটপ নামে ডাকার ব্যাপারটি শুরু হয় আশির দশকে। তখন সাধারণ কম্পিউটার থেকে ভ্রাম্যমাণ কম্পিউটারগুলোকে আলাদা করার জন্য এই নামে ডাকা হত। এসব যন্ত্রাংশ আগের বহনযোগ্য কম্পিউটারের তুলনায় ভারি এবং এগুলো কারো কোলে বা হাটুর উপর রেখে ব্যবহার করা যেত না। কয়েক বছর পরে প্রস্তুতকারকরা আরও ছোট আকারের বহনযোগ্য যন্ত্রাংশ উৎপাদন শুরু করে যাদের ওজন ও আকার ছিল কম। এগুলোতে প্রদর্শনী ছিল এ৪ আকারের কাগজের সমান এবং এদেরকে ডাকা হত নোটবুক নামে। কারণ এগুলো তখনকার সময়ের মোটা ও ভারি ল্যাপটপের থেকে আকারে ও ওজনে ছোট ছিল।[৪]
এখন, বিশ্বের প্রায় সবজায়গায় ল্যাপটপ কথাটি বেশি ব্যবহৃত হয় এবং কিছু কিছু জায়গায় নোটবুক কথাটি এখনও চলে যেমন রাশিয়ায়। নোটবুক কথাটি ব্যবহার করা হয় বহযোগ্য যন্ত্রাংশ বুঝাতে। ডাকনামের এই ভিন্নতা সময়ের সাথে সাথে মিলিয়ে গেছে উদাহরণসরূপ, এলিয়েনওয়্যারের গেমিং যন্ত্র "এলিয়েনওয়্যার ১৮ গেমিং ল্যাপটপ" যাতে ১৮" প্রদর্শনী এবং যার ওজন ৬ কিলোগ্রামের মত, একে ল্যাপটপ এবং নোট দুটো নামেই বিবেচনা করা হয়। যদিও এটি কোলে রেখে কাজ করার উপযোগি নয় এবং নোটবুকটি ছবি আঁকার প্যাডের মত ছোটও নয়।[৫]
১৯৭১ সালে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সম্ভাবনার সাথে সাথে বহনযোগ্য ব্যক্তিগত কম্পউটারের চাহিদার সম্ভাবনাও তৈরি হয়। এলান কে ১৯৬৮ সালে জেরক্স পার্কে একটি "ব্যক্তিগত, বহনযোগ্য নিজের কাজে তথ্য ব্যবহার করা যায়" এমন যন্ত্র হিসেবে কল্পনা করেন এবং তার গবেষণাপত্র "ডায়নাবুকে" ১৯৭২ সালে বর্ণনা করেন।[৬][৭]
আইবিএমের বিশেষ এপিএল মেশিন পোর্টেবল (এসসিএএমপি) কম্পিউটারটি দেখানো হয় ১৯৭৩ সালে। এই পরীক্ষামূলক যন্ত্রটি আইবিএমের পালম প্রসেসরের উপর ভিত্তি করে নির্মিত।[৮]
আইবিএম ৫১০০, প্রথম বাণিজ্যিক বহনযোগ্য কম্পিউটার। এটি বাজারে আসে ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এর ভিত্তি ছিল এসসিএএমপি পরিক্ষামূলক যন্ত্রটি।[৯]
৮ বিটের সিপিইউ ব্যবহৃত হওয়া শুরু করলে, বহনযোগ্য কম্পিউটারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। অসবর্ন ১, ছাড়া হয় ১৯৮১ সালে, এতে ব্যবহার করা হয় জিলোগ জেড৮০ আর ওজন ছিল ২৩.৬ পাউন্ড (দশ কেজির মত)। কোন ব্যাটারি ছিল না, একটি ৫ ইঞ্চি (১৩ সে.মি.) সিআরটি প্রদর্শনী এবং ৫.২৫ ইঞ্চি (১৩.৩ সে.মি) দ্বৈত একক ঘনত্বের ফ্লপি ড্রাইভ ছিল। একই বছরে প্রথম ল্যাপটপের আকারের বহনযোগ্য কম্পিউটারের ঘোষণা আসে, এটি ছিল এপসন এইচএক্স-২০[১০]। এর মধ্যে এলসিডি প্রদর্শনী, পুনরায় চার্জ দেয়া যায় এমন ব্যাটারি, ক্যালকুলেটর আকারের প্রিন্ট্রার চেসিস ছিল। ট্যান্ডি/রেডিওশেক এবং এইচপি উভয়েই বিভিন্ন নকশার বহনযোগ্য কম্পিউটার উৎপাদন করে।[১১][১২]
১৯৮০ দশকের শুরুর দিকে প্রথম ভাঁজ করা যায় এমন ল্যাপটপ দেখা যায়। অস্ট্রেলিয়ায় ডুলমন্ট ম্যাগনাম ছাড়া হয় ১৯৮১-৮২ সালের দিকে, কিন্তু ১৯৮৪-৮৫ সালের পূর্বে বিশ্বব্যাপি এটি বাজারজাতকরন করা হয়নি। ১৯৯২ সালে জিআরআইডি বা গ্রিড কমপ্যাস ১১০০ ছাড়া হয়। এটি নাসা ও সৈনিকদের কাজে ব্যবহৃত হত। গ্যাভিলান এসসি, ১৯৮৩ সালে বাজারের আসে, যা প্রস্তুতকারক ল্যাপটপের মধ্যে প্রথম হিসেবে অভিহিত করে[১৩]। ১৯৮৩ সালের পর নতুন ইনপুট ব্যবস্থা আবিষ্কৃত হয়, যার মধ্যে ল্যাপটপেরও ইনপুট যন্ত্রাংশ ছিল, যেমন টাচপ্যাড (গ্যাভিলান এসসি), নির্দেশক কাঠি (আইবিএম থিঙ্কপ্যাড ৭০০, ১৯৯২) এবং হাতের লেখা সনাক্তকরন (লিনাস রাইট-টপ, ১৯৮৭)[১৪]। এসময় কিছু সিপিইউ এমনভাবে বানানো হয় যাতে এগুলো কম বিদ্যুত শক্তি ব্যবহার করে, ফলে ব্যাটারির স্থায়িত্ব বেড়ে যায়। এবং কিছু ল্যাপটপের প্রস্তুত নকশায় কাজে সহায়তা করার জন্য কিছু সক্রিয় শক্তি ব্যবস্থাপনার বৈশিষ্ট্যও ছিল যেমন ইন্টেল স্পিডস্টেপ এবং এএমডি'র পাওয়ারনাও ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য।
১৯৮৮ সাল নাগাদ প্রদর্শনী ভিজিএ রেজুলেশনে পৌছায়। উদাহরণসরূপ উল্লেখ্য করা যায় কমপেক এসএলটি/২৮৬। এবং রঙিন প্রদশর্নীগুলোর প্রচলন শুরু হয় ১৯৯১ সালের দিকে, ২০০৩ সালে ১৭" প্রদশর্নী আসার আগে পর্যন্ত, রেজুলেশনে এবং প্রদশর্নীর আকারে ব্যাপক পরিবর্তন হতে থাকে। এসময় হার্ডড্রাইভের (১৯৮০ সালের শেষের দিকে প্রস্তুতকৃত ৩.৫" মাপের ড্রাইভের ধারাবাহিকতায়) ব্যবহার শুরু হয়। এক সময় ২.৫" ড্রাইভ ল্যাপটপে সাধারণভাবে ব্যবহৃত হতে থাকে। ২০০০ দশকের শুরু থেকেই অপটিক্যাল ড্রাইভগুলোর ব্যবহার হতে থাকে যেমন সিডি রম, রাইটেবল সিডি রম, পরে ডিভিডি রম, রাইটেবল ডিভিডি রম, তারপরে ব্লু-রে ড্রাইভ।
১৯৭০ দশকের শেষের দিকে, বহনযোগ্য কম্পিউটারের সূচনার শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত এর আকৃতিগত পরিবর্তন বাস্তবিকই অসাধারণভাবে হয়েছে। এর মধ্যেই এর বিভিন্ন ভিন্নতা এসেছে দৃশ্যত এবং আবশ্যিকভাবে প্রযুক্তিগত দিক থেকেও।
ঝিনুকের আকৃতির ল্যাপটপগুলোকে সনাতন ধারার ল্যাপটপ বলে অভিহিত করা হয়। এগুলোর এক পিঠে প্রদশর্নী ও অন্য প্রান্তে কিবোর্ড থাকে। এটিকে সহজেই ভাঁজ করা যায়, যাতে ভ্রমনে অসুবিধা না হয়। প্রদর্শনী এবং কিবোর্ড দুটোই ব্যবহার করা যায় না যখন ভাঁজ করা থাকে। এই আকৃতির ও বৈশিষ্ট্য বিশিষ্ট যন্ত্রাংশগুলোকে সনাতন ধারার ল্যাপটপ বা নোটবুক বলে ডাকা হয়। বিশেষ করে এদের যদি প্রদর্শনী ১৩ থেকে ১৭ ইঞ্চি ব্যাসের হয় এবং একটি পূনার্ঙ্গ অপারেটিং সিস্টেম যদি চালাতে সক্ষম হয়। সনাতন ল্যাপটপগুলো হল সবচেয়ে সাধারণ আকৃতির ল্যাপটপ। যদিও ক্রোমবুক, রূপান্তরযোগ্য ল্যাটপট, আল্ট্রাবুক এবং ল্যাপলেটগুলো দিনকে দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এগুলোও একই কার্যকারিতা প্রদান করে।
একটি সাবনোটবুক অথবা একটি আল্ট্রাবহনযোগ্য (ল্যাপটপ) একধরনের ল্যাপটপ যার নকশা এবং বাজারজাতকরন করা হয়েছে বহনযোগ্যতার কথা মাথায় রেখে। এগুলো আকারে ছোট, কম ওজনের এবং প্রায়শই অতিমাত্রায় ব্যাটারির ধারনক্ষমতা সম্পন্ন হয়। এগুলো সাধারণত ছোট আকৃতির ও হালকা হয় সাধারণ মানের ল্যাপটপের তুলনায়। ওজন হতে পারে ০.৮-২ কেজি (২-৫ পাউন্ড)[১৫] এবং ব্যাটারির ধারণ ক্ষমতা হতে পারে ১০ ঘণ্টার বেশি[১৬]। নেটবুক এবং আল্ট্রাবুকের সূচনার পর থেকে, সাবনোটবুকের এবং উভয় শ্রেনীর মধ্যকার সম্পর্ক অস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। নেটবুক হল যে বৈশিষ্টগুলো না থাকলেই নয় এমন সব বৈশিষ্ট্য নিয়ে তৈরি আর এটি হল সাবনোটবুকের একটি উপশ্রেনী। কিছু আল্ট্রাবুকের প্রদর্শনী এত বড় যে তা সাবনোটবুক বলা যায়, বিশেষ কিছু আল্ট্রাবুক আবার সাবনোটবুকের শ্রেনীতেও খাপ খায়। একটি উল্লেখ্যযোগ্য সাবনোটবুকের উদাহরণ হল এ্যপল ম্যাকবুক এয়ার।
নেটবুক ল্যাপটপের একটি অন্য রূপ যাকে দামে সস্তা, ওজনে হালকা, কম শক্তি ব্যয় করার পাশাপাশি তারবিহিন যোগাযোগ ও ইন্টারনেট সংযোগের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে[১৭][১৮]। ২০০৮ সালের দিকে বাজারে নেটবুক বান্যিজিকভাবে আসে। যার বৈশিষ্ট্য ছিল হালকা ১ কেজিরও কম, প্রদশর্নী ৯ ইঞ্চির থেকে ছোট এবং দামে ৪০০ ডলারের কম। নেটবুক নামটি নেয়া হয় ইন্টারনেট/নেটওয়ার্ক থেকে যাকে সংক্ষেপে নেট ডাকা হয়। এই সংজ্ঞাটি ব্যবহার করা হয় যন্ত্রাংশের ওয়েব ভিত্তিক কম্পিউটিং কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে[১৯]। নেটবুকগুলো লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম সহযোগে ছাড়া হত যদিও পরের গুলোতে উইন্ডোজ এক্সপি, উইন্ডোজ ৭ প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। সব প্রধান নেটবুক উৎপাদকই ২০১২ সালের শেষ নাগাদ উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।[২০]
আধুনিক রূপান্তরযোগ্য ল্যাপটপগুলোতে জটিল নকশার জোড়া দেওয়ার কৌশল রাখা হয়। কিবোর্ডের সাথে প্রদর্শনীর প্যানেলের সংযোগ থাকে এমনভাবে যাতে তা আবর্তিত হতে পারে আবার বসানো যেতে পারে কিবোর্ডের বাক্সের উপর। বেশিরভাগ রূপান্তরযোগ্য ল্যাপটপে স্পর্ষ নিয়ন্ত্রিত প্রদর্শনী থাকে আবার সনাতন ধারার টাচপ্যাডও থাকে যাতে ট্যাবলেটের মত ব্যবহার করা যায়। এগুলোকে ল্যাপটপের শ্রেনীতেও ফেলা যায় আবার ট্যাবলেটের শ্রেনীতেও রাখা যায় কিন্তু ল্যাপটপ হিসেবেই ধরা হয় কারণ এগুলোর আকার, ওজনে ল্যাপটপের কাছাকাছি।
একক সংযোগটির মাধ্যমে আবর্তন ও চক্রাকারে আবর্তনের যে সুবিধা তা ল্যাপটপের যান্ত্রিক দুর্বলতা বা টেকসই নয় এমন অবস্থাকে প্রকাশ করে। কিছু প্রস্তুতকারক এই দুর্বলতা কাটানোর জন্য বেশ কিছু নতুন রীতির প্রবর্তন করেন যেমন স্লাইডিং নকশা (প্রদর্শনীকে শোয়ানো অবস্থা থেকে ঠেলে সোজা করা হয় এবং তালাবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয় ল্যাপটপের মত ব্যবহারের সুবিধার্থে)। সনাতন ল্যাপটপের তুলনায় রূপান্তরযোগ্য ল্যাপটপের বেশ কিছু দুর্বলতা রয়েছে, যদিও ছোট আকৃতি মানে সহজে বহনযোগ্য।
সাম্প্রতিক ল্যাপটপ যন্ত্রাংশ হল ল্যাপলেট। এই শব্দটি এসেছে ল্যাপটপ এবং ট্যাবলেটের সম্মিলন থেকে এবং এই যন্ত্রটি উভয়ের সংকর একটি যন্ত্র[২১]। যদিও একে অনেকেই ট্যাবলেট বলে ডাকেন তবুও ল্যাপটপের সাথে এর অনেক মিল রয়েছে এবং একে ল্যাপটপের বিকল্পও বলা যায়। এগুলোকে প্রায়শই বাজারজাত করা হয় ল্যাপটপের বিকল্প প্রতিস্থাপন ট্যাবলেট হিসেবে।
এর কার্যক্ষমতার ধরন অনেকটা আল্ট্রাবুকের কাছাকাছি কিন্তু ল্যাপলেট তৈরি হয় দুটো ভিন্ন অংশ দিয়ে, স্পর্ষ প্রদর্শনী যা কিবোর্ডের থেকে আলাদা। এগুলো খুবই চিকন (প্রায় ১০ মিলিমিটার), হালকা এবং এদের ব্যাটারিও দীর্ঘস্থায়ী হয়। মূল ধারার ট্যাবলেটের তুলনায় ল্যাপলেটকে আলাদা করা যায় এক্স৮৬ নকশার সিপিইউ'র কারণে। যেমন ইন্টেল কোর আই৫, যা উইন্ডোজ ৮.১ চালাতে পারে, ইউএসবি ও ছোট মাপের প্রদর্শনী পোর্ট, ইনপুট/আউটপুট পোর্ট সংযুক্ত থাকে।
এটিকে শুধুমাত্র বিনোদনের যন্ত্র না বলে বলা যায় ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের প্রতিস্থাপিত যন্ত্র যেহেতু এদের সেই সক্ষমতা রয়েছে। এতে বিভিন্ন ডেস্কটপের এ্যাপ্লিকেশন, বিভিন্ন পেরিফেরাল যন্ত্রাংশ যেমন মাউস, কিবোর্ড এবং বাহ্যিক প্রদর্শনীও সংযোগ করা যায়।[২২]
একটি ডেস্কটপ প্রতিস্থাপক ল্যাপটপ একধরনের বড় শ্রেনীর যন্ত্র, যা প্রাথমিকভাবে বহনযোগ্যতার জন্য ব্যবহার করা হয় না। সাধারণ ল্যাপটপের তুলনায় এগুলো দেখতে মোটা, ভারি এবং বহনযোগ্য নয় আর এগুলোকে ডেস্কটপের বিকল্প হিসেবে দেখা হয়[২৩]। কারণ ডেস্কটপের তুলনায় এগুলো ছোট এবং বহন সহায়ক। এগুলোতে ১৫ ইঞ্চির অধিক প্রদর্শনী এবং শক্তিশালী যন্ত্রাংশ উপাদান থাকে[২৩]।
অন্যান্য ল্যাপটপের তুলনায় এগুলোর ব্যাটারি স্থায়ীত্ব কম হয়, কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত ব্যাটারিই থাকে না। পূর্বে, ডেস্কটপের উপাদানগুলো এতে ব্যবহৃত হত ভাল কার্যক্ষমতা প্রদানের জন্য কিন্তু বর্তমানে তা করা হয় না।[২৪]
এধরনের বিশেষ নোটবুক কম্পিউটারগুলোকে বর্ণনার জন্য মিডিয়া সেন্টার ল্যাপটপ এবং গেমিং ল্যাপটপ নামে অভিহিত করা হয়।[১৫]
এধরনের ল্যাপটপের নকশা করা হয়েছে বিরূপ পরিবেশে পরিচালনার উপযোগি করে যেমন তীব্র দুলুনি, অতিমাত্রার তাপে, ভেজা ও ধুলা বালি যুক্ত স্থানে ব্যবহারের জন্য। সাধারণ ল্যাপটপ যেগুলো ক্রেতারা ক্রয় করে তাদের থেকে এগুলোর নকশা করা হয় আলাদা রকমের করে। এগুলো দেখতে পুরু, ওজনে ভারি, দামি হয়। সাধারণ ল্যাপটপের তুলনায় এগুলো সাধারণ ব্যবহারকারীদের কাছে দেখা যায় না।[২৫]
এধরনের ল্যাপটপের নকশার বৈশিষ্ট্য থেকে দেখা যায় কিবোর্ডের নিচে রাবারের চাদর থাকে, পোর্ট ও সংযোগের জায়গাগুলোর মুখ ঢাকা থাকে, খুব উজ্জ্বল প্রদর্শনী থাকে, সূর্যের আলোতেও ভালভাবে পড়া যায়। এটি ম্যাগনেশিয়াম ধাতব মিশ্রণ দিয়ে বানানো বাক্স ও খোপে বসানো থাকে। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত ল্যাপটপগুলোতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের খোপ এগুলোতে ব্যবহৃত হয় না। এছাড়া সলিড স্টেট ড্রাইভ স্টোরেজ যন্ত্র বা হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ ব্যবহার করা হয় যেগুলো নাড়াচাড়া করলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এই ধরনের ল্যাপটপগুলো সাধারণত জনসাধারণের নিরাপত্তার স্বার্থে নিয়োজিত পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস কর্মী বা জরুরী চিকিৎসার কাজে, সৈনিকদের কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া উপযোগীতামূলক কাজে, মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলীর কাজে, নির্মানবিদ্যায়, খনন কাজে এবং তৈল উত্তোলনের কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের কাজে ব্যবহৃত হয়। আর এগুলো বিক্রয় করা হয় প্রতিষ্ঠানভিত্তিক। কোন ব্যক্তিবিশেষের কাছে একক ভাবে বিক্রয় করা হয় না, এর জন্য কোন খুচরা বিক্রয়ের মাধ্যমও নেই।
ল্যাপটপের সাধারণ কার্যাবলি ডেস্কটপের কার্যাবলির অনুরূপ। প্রথাগতভাবে, ল্যাপটপেরগুলো ছোট আকৃতির এবং বহন করার উপযোগিতার সাথে খাপ খায় এমন নকশায় তৈরি। যদিও বর্তমানে আধুনিক অনেক ডেস্কটপেই ল্যাপটপের ছোট আকৃতির উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয়, কারণ এতে শক্তি কম খরচ হয়। ল্যাপটপের নকশার ফলে শক্তি, আকার সীমিত এবং তাপজনিত সীমার ফলেও ল্যাপটপের কার্যক্ষমতা সীমিত, কিন্তু গত কয়েক বছরে তা বেশ কমে এসেছে।
সাধারণভাবে, ল্যাপটপের উপাদানগুলো পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয় না। অল্পকিছু মাত্র, যেমন প্রসেসর পরিবর্তন করাটাও কষ্টসাধ্য বিভিন্ন কারণে (প্রসেসর কত তাপ উৎপন্ন করবে, আদৌ সমর্থন করবে কিনা, ল্যাপটপ সহজে খোলা যাবে কিনা ইত্যাদি)। খুব ছোট যেসব ল্যাপটপ রয়েছে যেমন ল্যাপলেটে হয়ত কোন উপাদান লাগানোর মত ব্যবস্থা থাকবেও না।[২৬]
ইন্টেল, এসুস, কমপাল, কোয়ান্টা এবং অন্যান্য কিছু ল্যাপটপ প্রস্তুতকারক একই ধরনের নকশা অনুসরণ করেন। এই ল্যাপটপের বিভিন্ন অংশ বিক্রয় পরবর্তী জুড়ে দেওয়ার সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে। তারা এই কাজটি করেছেন মূলত একটি মানদন্ড তৈরি করতে।[২৭]
নিচের তালিকায় ব্যক্তিগত ডেস্কটপ কম্পিউটারের সাথে ল্যাপটপের উপাদানের বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে
বেশিরভাগ আধুনিক ল্যাপটপেরই একটি ১৩ ইঞ্চি বা তার থেকে বড় মাপের রঙিন একটিভ ম্যাট্রিক্স প্রদশর্নী রয়েছে যেগুলো সিসিএফএল বা এলইডি উপর ভিত্তি করে বানানো। এগুলোর আবার বিভিন্ন মানের রেজুলেশন থাকে যেমন ১২৮০×৮০০ (১৬:১০) অথবা ১৩৬৬×৭৬৮ (১৬:৯) পিক্সেল অথবা তারো বেশি। যেসব মডেলে এলইডি রয়েছে সেগুলো কম বিদ্যুত খরচ করে এবং বেশি ঔজ্জ্বল্য দেয়। নেটবুকের প্রদশর্নীগুলো হয় সাধারণত ১০ ইঞ্চি বা তার কম পিক্সেল রেজুলেশন থাকে ১০২৪×৬০০ অন্যদিকে নেটবুক ও সাবনেটবুক যাতে ১১.৬ বা ১২ ইঞ্চি প্রদশর্নী আছে সেগুলোতে সাধারণ মানের রেজুলেশন থাকে। উচ্চ রেজুলেশনের মানে হল প্রদশর্নীতে বেশি পরিমানের সামগ্রী একসাথে দেখতে পাওয়া। এর ফলে ব্যবহারকারী বহু কাজ একসাথে করতে পারে। আবার ছোট প্রদশর্নীতে বেশি রেজুলেশন হওয়া মানে প্রদশর্নীতে চিত্রগুলো খুব সূক্ষ্ম, তিক্ষ্ম ও সুন্দর দেখাবে। রেজুলেশন বেশি হলেই তা বেশি সামগ্রী বা বস্তু দেখাবে এমন নয় কারণ প্রদশর্নিটিও বড় মাপের হতে হবে। ২০১২ সালে ম্যাকবুক প্রো যাতে রেটিনা প্রদর্শনী রয়েছে প্রথম উচ্চ মাত্রার রেজুলেশন নিয়ে আসে (১৯২০×১০৮০ বা তার বেশি)। এরপর থেকে এখন ১৫ ইঞ্চির প্রদর্শনীতেও ৩২০০×১৮০০ মাপের রেজুলেশন দেখা যায়।
বাহ্যিক প্রদর্শনীর সাথে বেশিরভাগ ল্যাপটপই সংযোগ করা যায় এবং যেসব মডেলের মিনি প্রদর্শন পোর্ট আছে সেগুলো তিনটি প্রদর্শন করতে পারে।[২৮]
একটি ল্যাপটপের সিপিইউতে বা কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটে শক্তি বাঁচানোর বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান রয়েছে। এগুলো কম তাপ উৎপন্ন করে ডেস্কটপের সিপিইউ'র তুলনায়। প্রথাগতভাবে ল্যাপটপের সিপিইউতে দুটো কোরের প্রসেসর দেখা যায়, যদিও ৪ কোরের মডেলও দেখা যায়। কম দাম এবং মূল কার্যক্ষমতার কারণ ব্যতীত ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সিপিইউ'র বেলায়, যেমন ৪ থেকে ৮ কোরের ডেস্কটপ সিপিইউগুলো ৪ কোরের ল্যাপটপ প্রসেসরগুলোকে সহজেই হারিয়ে দিতে পারে উচ্চ ক্ষমতার প্রক্রিয়াকরণ পরীক্ষায়। কারণ ডেস্কটপের সিপিইউগুলোতে শক্তি বেশি খরচ হয় যেমন ডেস্কটপের বেলায় ১৫০ ওয়াট, ল্যাপটপের বেলায় তা ৫৬ ওয়াট মাত্র।
ইন্টেল, এএমডি এবং অন্যান্য প্রস্তুতকারকরা ল্যাপটপের জন্য ব্যাপকমাত্রায় সিপিইউ তৈরী করেছেন। এক্স৮৬ নকশায় প্রস্তুত নয় এমন প্রসেসরের বেলায় উল্লেখ করা যায় মটোরোলা এবং আইবিএম কোম্পানির নাম। তারা তৈরি করেছিল পাওয়ারপিসি ভিত্তিক ল্যাপটপ যেমন অ্যাপল ল্যাপটপ (আইবুক এবং পাওয়ারবুক)। অনেক ল্যাপটপেরই খুলে ফেলা যায় এমন সিপিইউ আছে যদিও গত কয়েক বছরে তা কমে এসেছে ল্যাপটপ চিকন ও হালকা করতে গিয়ে। অন্যান্য ল্যাপটপগুলোতে সিপিইউ লাগানো থাকে মাদারবোর্ডের সাথে এবং তা প্রতিস্থাপন করা যায় না উদাহরণসরূপ বলা যায়, আল্ট্রাবুক।
পূর্বে, কিছু ল্যাপটপে ডেস্কটপের সিপিইউ ব্যবহার করা হত এতে কার্যক্ষমতা বাড়ত ঠিকই কিন্তু ওজন, তাপ বেড়ে যেত আর ব্যাটারি কম স্থায়ী হত। এর ব্যবহারও বর্তমানে কমে গেছে। ডেস্কটপের মত ল্যাপটপের সিপিইউগুলোও ওভারক্লক করা অসম্ভব। ল্যাপটপের একটি থার্মাল পরিচালনা অবস্থা এর সীমা খুব কাছাকাছি হয় এবং বেশি মাত্রায় তাপ উৎপাদনের মত অবস্থাও নেই। ওভারক্লক করার জন্য ল্যাপটপে ভাল শীতলীকরন ব্যবস্থা পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
বেশিরভাগ ল্যাপটপেই গ্রাফিক্যাল প্রক্রিয়াকরন ইউনিট সিপিইউ'র সাথে একত্রিত থাকে শক্তি ও জায়গা বাঁচানোর লক্ষ্যে। ২০১০ সালে ইন্টেল এই ব্যবস্থার প্রচলন করে কোর আই মোবাইল সিরিজগুলোতে এবং একই ভাবে এএমডি পরের বছর তাদের এপিইউ প্রসেসরগুলোতে এই ব্যবস্থার প্রচলন করে। এর আগে কম ক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রগুলো সিস্টেম চিপসেটের সাথে গ্রাফিক্স প্রসেসর সমন্বিত করত যেখানে বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রগুলোতে আলাদা গ্রাফিক্স প্রসেসর থাকত। আগে, যেসব ল্যাপটপে আলাদা গ্রাফিক্স প্রসেসর ছিল না সেগুলোতে গেম খেলা ও প্রায়োগিগ কাজ যেমন ৩ডি গ্রাফিক্স করা সম্ভব হত না। কিন্তু বর্তমানে সমন্বিত গ্রাফিক্স প্রসেসরের কারণে কম ক্ষমতা সম্পন্ন যন্ত্রগুলোতেও সক্ষমতা এসেছে। উচ্চ ক্ষমতার ল্যাপটপগুলো এখনো আলাদা করে গ্রাফিক্স প্রসেসর নিয়ে বাজারে আসে। আবার কিছু ক্ষেত্রে দ্বৈত গ্রাফিক্স প্রসেসরও দেখা যায়, সেটা হতে পারে মাদারবোর্ড বা আন্তঃক্ষেত্রে সংযুক্ত কার্ড। ২০১১ থেকে এই সব দ্বৈত গ্রাফিক্সের কার্ডগুলোতে পরিবর্তনশীল গ্রাফিক্স ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যখন কোন উচ্চ মানের গ্রাফিক্সের কাজ থাকবে না তখন এটি কম বিদ্যুত খরচ করে এমন গ্রাফিক্স প্রসেসরে পরিবর্তিত হবে এবং ব্যবহৃত হতে থাকবে। আবার যখন উচ্চ গ্রাফিক্সের কাজ আসবে তখন মূল উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন গ্রাফিক্স প্রসেসর ও কম বিদ্যুৎ খরচ করে এমন গ্রাফিক্স প্রসেসর দুটোই একসাথে কাজ করবে। এনভিডিয়ার অপটিমাস এমন একটি পরিবর্তনশীল গ্রাফিক্সের উদাহরণ।
বেশিরভাগ ল্যাপটপে থাকে এসও-ডিআইএমএম স্মৃতির একক, এগুলো ডেস্কটপেরগুলোর তুলনায় অর্ধেক আকারের। লাগানোর সুবিধার জন্য এগুলো ল্যাপটপের নিচের দিকে থাকে অথবা এমন জায়গায় থাকতে পারে যা প্রতিস্থাপন করা যায় না। বেশিরভাগেরই দুটো খোপ থাকে র্যামের জন্য। সবচেয়ে কম ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যাপটপের একটি এবং উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যাপটপের চারটি করে খোপ থাকে। বেশির ভাগ মধ্যম মানের ল্যাপটপেরই ৪-৬ জিবি র্যাম থাকে। নেটবুকগুলোতে ১-২ জিবি র্যাম থাকে এবং সাধারণত ২ জিবি পর্যন্ত বাড়ানো যায়। যেহেতু প্রায় প্রত্যেক সাধারণ ল্যাপটপে ২ টি করে খোপ থাকে ধরে নেয়া যায় দুটোতে ১৬ জিবি পর্যন্ত র্যাম বসানো যাবে। কারণ ডিডিআর৩ প্রযুক্তিতে একটি খোপে সর্বোচ্চ ৮ জিবি পর্যন্ত র্যাম বসানো যায়।
যদি একটি ল্যাপটপ টিপিএম বা ট্রাস্টেড প্ল্যাটফর্ম মডিউল লাগিয়ে বানানো হয় তবে এর মাদারবোর্ডের সাথে র্যাম লাগিয়ে দেয়া থাকতে পারে। এটা করা হয় জায়গা বাঁচাতে, চেসিসগুলোকে আরও চিকন করতে এবং নিরাপত্তার সুবিধার্থে। টিপিএম ব্যবহার করলে স্মৃতিকে জোড়া লাগিয়ে দেয়া হয় যাতে করে বুট আক্রমণ[২৯] থেকে বাঁচা যায়। এধরনের জোড়া লাগানো স্মৃতি পরে বাড়ানো বা পরিবর্তন করা যায় না।
প্রথাগতভাবে প্রধান সঞ্চয় স্থান হিসেবে ল্যাপটপে একটি হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ থাকে। কিন্তু এটা বর্তমানে ফ্ল্যাশ ড্রাইভের আবিষ্কারের ফলে অকার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কারণ যখন এটিকে বহনযোগ্য যন্ত্রে লাগানো হবে এটি বেশি বিদ্যুৎ খরচ করবে, তাপ উৎপন্ন করবে এবং এর অভ্যন্তরে নড়াচাড়া করলে ক্ষতি হতে পারে এমন যন্ত্রাংশ রয়েছে। যার ফলে ড্রাইভের এবং ডাটার ক্ষতিসাধন হতে পারে। বিশেষ করে যখন একটি ল্যাপটপ কোন ক্ষতির সম্মুখীন হয় যেমন পড়ে যাওয়া, বহন করার সময় ইত্যাদি। ফ্ল্যাশ মেমোরি প্রযুক্তির উৎকর্ষের ফলে এখন বেশিরভাগ মধ্যম থেকে উচ্চ মানের ল্যাপটপে আরও ছোট, কম বিদ্যুত খরচ করে এবং দ্রুতগতি সম্পন্ন সলিড-স্টেট ড্রাইভ ব্যবহার করে। যা ড্রাইভজনিত সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি ডাটা নষ্ট হওয়ার সম্ভবনাকে কমিয়ে এনেছে[৩০] বহনযোগ্য ল্যাপটপের জন্য। কিন্তু বেশিরভাগ কম দামি বা কম ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যাপটপে হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ এখনো বেশি ব্যবহার করা হয় এদের কম দামের কারণে।
বেশিরভাগ ল্যাপটপই ২.৫ ইঞ্চি মাপের ড্রাইভ ব্যবহার করে। এগুলো ৩.৫ ইঞ্চি মাপের ডেস্কটপ ড্রাইভের ছোট সংস্করন। এই মাপের ড্রাইভগুলো আরও ছোট, কম বিদ্যুত খরচ করে এবং কম তাপ উৎপন্ন করে। পাশাপাশি দেখা যায় এদের অসুবিধা হল এগুলোর ধারনক্ষমতা কম এবং ডাটা স্থানান্তর গতিও কম। কিন্তু এসএসডির বেলায় ছোট হওয়ার কারণে যে অসুবিধাগুলো ২.৫ ইঞ্চি মাপের ড্রাইভের হয়, তা হয় না। কারণ এসএসডিগুলোর ভেতরের নকশা করা হয়েছে যাতে কম জায়গা ধারণ করে। কিছু আরও ছোট মাপের ল্যাপটপে আরও ছোট ১.৮ ইঞ্চি মাপের হার্ডড্রাইভ ডিস্ক দেখা যায়। এসএসডিগুলো প্রথাগত মাপে, বা ১.৮ ইঞ্চি বা ল্যাপটপের প্রয়োজন অনুযায়ী এমসাটা বা এম.২ কার্ডের আকারে পাওয়া যায়।
হার্ডডিস্কের তুলনায় এসএসডি'র আরও ভালো স্থানান্তর গতি রয়েছে[৩১][৩২][৩৩] কিন্তু হার্ডডিস্ক কম দামি এবং এতে জায়গা বেশি পাওয়া যায়। ২০১৪ অনুযায়ী, বেশিরভাগ হার্ডডিস্ক ড্রাইভের সংরক্ষণ ক্ষমতা ২ টেরাবাইট যেখানে এসএসডির হল ১ টেরাবাইট।
বেশিরভাগ ল্যাপটপই একটি মাত্র ২.৫ ইঞ্চি মাপের ড্রাইভ ধারণ করতে পারে। কিন্তু কিছু সংখ্যক ল্যাপটপ আছে (১৭" থেকে বেশি বড় প্রদর্শনীর) যেগুলোতে দুটো লাগানো যায়। কিছু ল্যাপটপ আছে যেগুলোতে হার্ডড্রাইভ বা এসএসডি উভয়ই ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে এসএসডি ব্যবহার করা হয় অপারেটিং সিস্টেম অংশের জন্য আর সাধারণ ডাটা সংরক্ষণের জন্য হার্ডডিস্ক ড্রাইভ ব্যবহার করা হয়। এর ফলে আই/ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অন্য আরেকটি ব্যবস্থা হল একটি ১৬-৩২ জিবি ক্ষমতার এসএসডি ক্যাশ ড্রাইভ হিসেবে ব্যবহার করা যাতে আই/ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এবং অবশ্যই তা অপারেটিং সিস্টেম দ্বারা সমর্থিত হতে হবে।
যখন কিছু এসএসডি ড্রাইভ সাধারণ মানদন্ড অনুসরণ করে বানানো হয় না (আকারের ক্ষেত্রে) বা কোন ধরনের স্বত্তাধিকারি ডটার কার্ড প্রয়োজন হয়।[৩৪] সেইসব ল্যাপটপের ধারণ ক্ষমতা পরবর্তীতে বাড়ানোর কোন পথ নাও থাকতে পারে।
কিছু ল্যাপটপের এসএসডি ধারণ ক্ষমতা খুব কম হতে পারে। কারণ হিসেবে বলা যায় এগুলো ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয় ডাটা সংরক্ষণের সময় ক্লাউড সংরক্ষণ সেবা ব্যবহার করে। যেমন গুগল ক্রোমবুক।
বিভিন্ন ধরনের বাহ্যিক হার্ডডিস্ক ড্রাইভ অথবা এনএএস ডাটা সংরক্ষণ সার্ভারের সাথে (আরএআইডি প্রযুক্তি দিয়ে) যে কোন ল্যাপটপ কার্যত যুক্ত করে (যেমন: ইউএসবি, ফায়ারঅয়ার, ইসাটা, থান্ডারবোল্ট অথবা তার বা তারবিহিন নেটওর্য়াকের মাধ্যমে) ডাটা সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো যায়।
প্রায় সব ল্যাপটপেই একটি কার্ড রিডার থাকে যা দিয়ে মেমোরি কার্ড যেমন এসডি অথবা মাইক্রো এসডি ব্যবহার করা যায়।
সিডি/ডিভিডি/বিডি অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভগুলো প্রত্যেক পূর্নাঙ্গ ল্যাপটপেই থাকে। এবং এখন এটি ১৫ ইঞ্চ মাপের বা তার বেশি মাপের প্রদর্শনী আছে এমন ল্যাপটপের সাথে থাকবেই। তবে বর্তমানে চিকন ও হালকা ল্যাপটপের প্রচলনের কারণে এটি কম ব্যবহার করা হয়। সাবনোট বা নেটবুকে এগুলো খুব একটা খুজে পাওয়া যায় না। ল্যাপটপের অপটিক্যাল ড্রাইভগুলোর সাধারণ মান দন্ড আছে। সাধারণত সবগুলোই এমসাটা কানেক্টর দ্বারা ল্যাপটপের সাথে যুক্ত থাকে। প্রায়শই এটি পরিবর্তন করা যায়। কিছু কিছু ল্যাপটপে অপটিক্যাল ড্রাইভের জায়গায় দ্বিতীয় আরেকটি ড্রাইভ বসানো যায়, এক্ষেত্রে ক্যাডি ব্যবহার করে বাড়তি খালি অংশ ভর্তি করা হয়।
একটি নির্দেশক কাঠি, টাচপ্যাড বা দুটোই ল্যাপটপের প্রদশর্নীতে কার্সর নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হতে পারে। আর থাকে একটি কিবোর্ড যা লিখনের কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি বাহ্যিক কিবোর্ড বা মাউসও ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে লাগানো যেতে পারে। আবার এগুলো যদি হয় তারবিহিন, সেটাও লাগানো সম্ভব। প্রযুক্তির অগ্রগতিতে এখন স্পর্ষ নিয়ন্ত্রিত পর্দা ব্যবহার করেও ইনপুট দেয়া সম্ভব, এটা যদিও মোবাইলে বেশি ব্যবহার করা হয় কিন্তু বর্তমানের আল্ট্রাবুকগুলোতেও এই সুবিধা পাওয়া যায়। এছাড়া সাম্প্রতিক উইন্ডোজের সংস্করণ ৮.১ ও ১০ এই ধারাকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।
গতানুগতিক ল্যাপটপে অনেকগুলো ইউএসবি পোর্ট, একটি বাহ্যিক প্রদর্শনী পোর্ট (ভিজিএ, ডিভিআই, এইচডিএমআই অথবা মিনি প্রদশর্নী পোর্ট), অডিও ইন/আউট ইত্যাদি থাকে। বর্তমানের আধুনিক ল্যাপটপগুলোতে মিনি প্রদশর্নী পোর্ট ব্যবহার করে একসাথে তিনটি বাহ্যিক প্রদর্শনী যুক্ত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে বহু-ধারার পরিবহন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।[২৮]
ইথারনেট নেটওয়ার্ক পোর্ট যদিও পূর্বে ল্যাপটপগুলোতে পাওয়া যেত কিন্তু আধুনিক ল্যাপটপে এটি কম দেখা যায়। কারণ তারবিহিন প্রযুক্তির জনপ্রিয়তা ও বহুল ব্যবহার যেমন ওয়াই-ফাই।
আরও কয়েকটি পোর্ট যেমন পিএস/২ কিবোর্ড/মাউস পোর্ট, সিরিয়াল পোর্ট, প্যারালাল পোর্ট অথবা ফায়ারঅয়ার খুব কম দেখা যায়। অন্যদিকে, অ্যাপলের ল্যাপটপসহ আরও কিছু ল্যাপটপে থান্ডারবোল্ট পোর্ট দেখা যায়।
ইউএসবি ৩ ইন্টারফেসের সূচনার পরে, আগে যেসব পিসি কার্ড (পিসিএমসিআইএ বা এক্সপ্রেস কার্ড) স্লট দেখা যেত এখন সেগুলোর ব্যবহার কমে আসছে। কিছু বাহ্যিক উপব্যবস্থা যেমন ইথারনেট, ওয়াই-ফাই অথবা একটি তারবিহিন সেলুলার মডেম বসানো যাবে অভ্যন্তরীরন সম্প্রসারণ কার্ড প্রতিস্থাপক হিসেবে। সাধারণত এগুলোকে পাওয়া যাবে ল্যাপটপের নিচের একটি কভারে। এগুলোর সাধারণ মান হল পিসিআই এক্সপ্রেস যেটি ছোট এবং এমনকি আরও ছোট এম.২ আকারে পাওয়া যায়। নতুন ল্যাপটপগুলোতে মাইক্রোসাটার কার্যকারিতা পিসিআই এক্সপ্রেস ছোট বা এম.২ কার্ডে দেখা পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এটি ঐ স্লটগুলোকে সাটা নির্ভর সলিড স্টেট ড্রাইভের জন্য ব্যবহার করার সুযোগ দেয়।[৩৫]
বর্তমান ল্যাপটপগুলোতে লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, যেগুলো দেখতে চিকন। এর উপর আবার চওড়া লিথিয়াম পলিমার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই দুই প্রযুক্তি আগের বড় ধরনের নিকেল মেটাল-হাইড্রাইডের ব্যাটারির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। ব্যাটারির ক্ষমতা এবং স্থায়ীত্ব ল্যাপটপের মডেলের সাথে এবং কাজের সাথে ভিন্ন হয়, যা এক ঘণ্টা থেকে শুরু করে এক দিন হতে পারে। ব্যাটারির স্থায়ীত্ব দিনকে দিন কমতে থাকে, ১ থেকে ৩ বছরের প্রত্যাহিক ব্যবহারের ফলে ধারণ ক্ষমতায় বিদ্যুত সঞ্চারন ও ডিসচার্জের ধরন এবং ব্যটারির প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে পরিবর্তন আসে। এখন ল্যাপটপের ব্যাটারির মানোন্নয়নের ধারায় এমনও দেখা গেছে যে সেটি ২৪ ঘণ্টা কম্পিউটার চালাতে সক্ষম (গড় বিদ্যুত খরচের উপর)। উদাহরণ হতে পারে এইচপি এলিটবুক ৬৯৩০পি যখন একে আল্ট্রা ক্ষমতার ব্যাটারি দিয়ে চালানো হয়।[৩৬]
ল্যাপটপের ব্যাটারি বাহ্যিক একটি শক্তি সরবরাহকারী দিয়ে চার্জ দেওয়া হয় যা ডিসি ভোল্টেজ থাকে ৭.২ থেকে ২৪ ভোল্টের মধ্যে। এটি ল্যাপটপের সাথে ডিসি সংযোগকারি ক্যাবল দিয়ে যুক্ত থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি ব্যাটারিকে চার্জ করতে পারে এবং একই সাথে শক্তিও সরবরাহ করতে পারে। যখন ব্যাটারি চার্জ হয়ে যায় তখন ব্যাটারির ক্ষমতা না ব্যবহার করেই বাহ্যিক শক্তি দিয়ে ল্যাপটপ চলতে থাকে। ব্যাটারি কম সময়ে চার্জ হতে পারে যদি ল্যাপটপটি বন্ধ বা স্লিপ মোডে থাকে। চার্জারের ওজন হয় ৪০০ গ্রামের মত কিন্তু কিছু মডেলের ওজন কম বেশি হতে পারে।
কার্যপরিচালনার কারণে উৎপন্ন তাপ ল্যাপটপের মত ছোট জিনিস থেকে বের করা কষ্টকর। আগের ল্যাপটপগুলোতে তাপ শোষকগুলো সরাসরি উপাদানের উপর বসানো হত ঠান্ডা হবার জন্য। কিন্তু যখন গরম হয়ে উঠে এমন উপাদান ল্যাপটপের বেশি গভীরের স্তরে থাকে তবে একটি বড় জায়গা জুড়ে বায়ুবাহী নল বসানো হয় তাপ বের করে দেয়ার জন্য। আধুনিক ল্যাপটপগুলোতে তাপীয় নল ব্যবহার করা হয় তাপ দ্রুত যন্ত্রের কিনারে নিয়ে আসতে, অনেক ছোট ও সূক্ষ্ম ফ্যান এবং তাপ শোষক শীতলীকরন ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। সাধারণত তাপ ল্যাপটপের পেছনে বা পাশে দিয়ে বের করে দেয়া হয়। অনেকগুলো বাতাস গ্রহণকারী পথ থাকে যদিও অনেকগুলো বন্ধ থাকে বিশেষ করে ল্যাপটপকে যখন নরম জিনিসের উপর বসানো হয়। যেমন চেয়ার কুশনের উপর, ফোমের উপর ইত্যাদি।
অ্যাপলের ম্যাকবুক প্রো এবং ম্যাকবুক এয়ার তৈরী হয় এ্যালুমিনিয়ামের খাচ বা বাক্সে, বিশ্বাস করা হয় যে, এই খাপ বা বাক্সও তাপ শোষনকারী হিসেবে কাজ করে যা যন্ত্রটির মূল অংশকে ঠান্ডা করতে সহায়তা করে। সহায়তাকারী যান্ত্রিক তাপের দেখাশোনাকারী সফটওয়্যার পিসির কার্যক্ষমতা ব্যহত করতে পারে বা জরুরী মুহূর্তে কম্পিউটার বন্ধে বাধ্য করতে পারে। কারণ এগুলো তৈরী করা হয়েছে যাতে কম্পিউটার অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আগেই বন্ধ করে ক্ষতি কমিয়ে আনার জন্য। এধরনের ব্যপারগুলো ঘটে যখন একটানা ল্যাপটপ চলে বা এমন জায়গায় রাখা হয়েছে যা তাপ বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে যেমন ব্যাগে। এই ধরনের উত্তাপ বৃদ্ধির ফলে ল্যাপটপের খাপ বা বাক্সের প্লাস্টিক গলে যেতে পারে এমনকি আগুনও জ্বলে উঠতে পারে। বাজারে যেসব শীতলীকরন প্যাড পাওয়া যায় তা তাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে কাজে লাগানো যেতে পারে।
ডকিং স্টেশন বা ডক এক ধরনের ল্যাপটপের সহায়ক বস্তু যাতে একাধিক পোর্ট থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়তি সম্প্রসারণ স্লট বা প্ল্যাটফর্ম দেয়া থাকে যাতে স্থায়ী বা অপসারনযোগ্য ড্রাইভ বসানো যায়। একটি ল্যাপটপকে ডকের সাথে সহজেই জুড়ে দেয়া যায়, সাধারণত বড় ধরনের একটি তারের মাধ্যমে।
কর্পোরেট পরিবেশে ডকিং স্টেশন খুব জনপ্রিয় যেহেতু এতে করে ল্যাপটপকে একটি ডেস্কটপের রূপ দেয়া যায়। কিন্তু তা সত্বেও একে সহজে খোলা যায়, ফলে যারা বাইরে কাজ করেন তাদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।
যদি আরও বেশি পোর্টের প্রয়োজন হয় বা ল্যাপটপটি ঠিক মত বসানো না যায় তবে যে কেউ আরও কম দামি যন্ত্র ব্যবহার করতে পারে যা হল একটি পোর্ট কৃত্রিমকারী। এই যন্ত্রগুলো ল্যাপটপের পেছনে লাগানো হয় সাধারণত, ইউএসবি বা ফায়ারওয়ার দিয়ে।
ল্যাপটপ বিদ্যুত সঞ্চারন ট্রলি যাকে ল্যাপটপ ট্রলি বা ল্যাপটপ কার্ট হল এক ধরনের ল্যাপটপ বিদ্যুত সঞ্চারক যা ল্যাপটপ, নেটবুক এবং ট্যাবলেট কম্পিউটারে বিদ্যুত সঞ্চারন করতে পারে।[৩৭] ল্যাপটপ ট্রলিগুলোকে প্রধানত স্কুলে ব্যবহার করা হয় ডেস্কটপের বদলে। যেখানে ডেস্কটপ চালানো বা বিদ্যুত সঞ্চালনের মত পর্যাপ্ত পরিমাণ সকেট নেই।
ট্রলিগুলোকে এক কক্ষ থেকে অন্য কক্ষে নেয়া যায় এতে করে পুরো ভবনেই পূর্ণ বিদ্যুত না থাকলেও সঞ্চিত বিদ্যুতের মাধ্যমে ল্যাপটপ ব্যবহার করা যায় এবং আইটির ছোয়া পাওয়া যায়।[৩৮] ল্যাপটপ ট্রলি দিয়ে চুরির সম্ভাবনাও কমিয়ে আনা হয়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলামেলা থাকে এবং ল্যাপটপ, নেটবুক ও ট্যাবলেট সহজে বহন করা যায় ফলে চুরির জন্য এগুলো প্রধান লক্ষ্য হয়ে ওঠে। ট্রলিগুলো ধাতব স্টিলের তৈরী এবং যখন ব্যবহার করা হয় না তখন তালাবদ্ধ করে রাখা যায়। তবে রাতে যাতে সরিয়ে ফেলতে না পারে সেজন্যে এগুলোকে দেয়াল বা মেঝেতে স্থাপন করার ব্যবস্থা রয়েছে।[৩৭]
কিছু ল্যাপটপে সৌর প্যানেল ল্যাপটপ চালানোর মত শক্তি উৎপাদনে সক্ষম।[৩৯] একটি শিশুর জন্য একটি ল্যাপটপ কর্মসূচিতে ওএলপিসি এক্সও-১ ল্যাপটপটি পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং চালানো গিয়েছিল সৌর প্যানেল দিয়ে।[৪০] বর্তমানে তারা নকশা করছে ওএলপিসি এক্সও-৩ মডেলের যাতে এই বৈশিষ্ট্যটি থাকবে। এটি মাত্র ২ ওয়াট শক্তি দিয়ে চালানো যায়। আর সৌর প্যানেলটি ৪ ওয়াট করে শক্তি উৎপাদন করতে পারে।[৪১][৪২] স্যামস্যাঙেরও একটি নোটবুক আছে যা আমেরিকার বাজারে ছাড়া হবে এবং এটি সৌর শক্তি দিয়ে চলতে পারে যার মডেল এনসি২১৫এস।[৪৩]
ডেস্কটপ পিসির সাথে যখন ল্যাপটপকে তুলনা করা হয় বহনযোগ্যতাকে সবার প্রথমে ধরা হয়।[৪৪] এই সুবিধার কারণে ল্যাপটপকে যে কোন জায়গায় ব্যবহার করা যায়। যেমন - বাড়িতে, অফিসে, বিমানের ফ্লাইটে, মিটিংয়ে, কফি দোকানে, লেকচার হলে বা লাইব্রেরিতে, গ্রাহকের সামনে ইত্যাদি। এই বহনযোগ্যতা বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন সুবিধা দেয় সেগুলো নিচে দেখুন-
ল্যাপটপের অন্যান্য সুবিধা
ডেস্কটপ কম্পিউটারের তুলনায় ল্যাপটপের কিছু অসুবিধা রয়েছে:
ডেস্কটপ এবং ল্যাপটপের কার্যক্ষমতা প্রায় কাছাকাছি কিন্তু ডেস্কটপের দাম কমলেও ল্যাপটপের দাম সেভাবে কমেনি।[৪৯] ডেস্কটপের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটারের তুলনায় ল্যাপটপের ক্ষমতা তত বাড়েনি (বিশেষত "ওয়ার্কস্টেশন ক্লাস" যন্ত্র যেগুলোর সাথে দুই প্রসেসরের সকেট আছে) এবং নতুন আসা উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈশিষ্ট্যগুলো ডেস্কটপে প্রচলনের পরই ল্যাপটপে আসে।
ইন্টারনেট ব্রাউজ বা সাধারণ অফিস এ্যপ্লিকেশন চালাতে গেলে ব্যবহারকারীর নির্দেশের জন্যে কম্পিউটার অপেক্ষা করে বেশিরভাগ সময়ই, সেই সব কম্পিউটার (হতে পারে একেবারে কম ক্ষমতা সম্পন্ন) কোন কোন ব্যবহারকারীর কাছে দ্রুতগতি সম্পন্ন মনে হতে পারে।[৫০] ২০১০ সালে মাঝামাঝি নাগাদ সবচেয়ে কম দামি নেটবুকের দাম (২০০-৩০০ ডলার) ডেস্কটপের সবচেয়ে কম ক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটারের দামের (প্রায় ২০০ ডলার) চেয়ে বেশি ছিল। যদি প্রদশর্নীর কথা ধরা না হয়। কিন্তু কমদামি প্রদশর্নী যোগ করলে দামটা তুলনা করার মত হয়।
বেশিরভাগ উচ্চ ক্ষমতার ল্যাপটপই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সিনেমা চালানো, কিছু ৩ডি গেম খেলা এবং ভিডিও সম্পাদনা ও এনকোডিং করার মত ক্ষমতা রয়েছে। যদিও ল্যাপটপের প্রসেসর উচ্চ মাত্রার ডাটাবেজ, গণিত, ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্থিক সফটওয়্যার, ভার্চুয়াল জগতের কাজের জন্য ডেস্কটপের তুলনায় পিছিয়ে আছে। ডেস্কটপের গ্রাফিক্স প্রসেসরের তুলনায় ল্যাপটপের গ্রাফিক্স প্রসেসরও পিছিয়ে আছে। যার ফলে বৈজ্ঞানিক ও ৩ডি গেমিংয়ে ল্যাপটপের ব্যবহার সীমাবদ্ধ। কিছু প্রস্তুতকারক ডেস্কটপের সিপিইউ ল্যাপটপে লাগিয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন।[৫১]
ডেস্কটপের তুলনায় ল্যাপটপের সম্প্রসারণ ক্ষমতা খুব কম। সাধারণ হার্ড ড্রাইভ এবং মেমোরি সম্প্রসারণ তুলনামূলকভাবে সহজ। অপটিক্যাল ড্রাইভ এবং অভ্যন্তরীন প্রসারন কার্ড লাগানো যায় যদি তা হয় সাধারণ মানদন্ডের। কিন্তু অন্য সকল উপাদানগুলো যেমন মাদারবোর্ড, সিপিইউ এবং গ্রাফিক্স সহজে পরিবর্তন করা যায় না। ইন্টেল, আসুস, কমপাল, কোয়ান্টা এবং অন্যান্য কিছু ল্যাপটপ প্রস্তুতকারক একই ধরনের নকশা অনুসরণ করে বিক্রয় পরবর্তী ল্যাপটপের অংশ জুড়ে দেওয়ার বা পরিবর্তনের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে চেয়েছেন। তারা এই কাজটি করেছেন মূলত একটি মানদন্ড তৈরি করতে।
সম্প্রসারণ সীমিত হওয়ার পেছনে অর্থনৈতিক ও কারিগরি উভয় কারণই জড়িত। ল্যাপটপের আকারের নকশার কোন নিদির্ষ্টতা নেই। প্রত্যেক উৎপাদকই নিজস্ব নকশায় ল্যাপটপ তৈরি করেন ফলে ল্যাপটপের ক্রয় পরবর্তী সম্প্রসারণ করা যায় কম এবং করতে গেলেও তার খরচ হয় বেশি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় অন্য কোম্পানির উপাদান ব্যবহার করা যায় তবে তা খুবই কম এমনকি একই উৎপাদকের দুটি আলাদা ল্যাপটপ পণ্য হলেও।
কিছু সম্প্রসারণ করা যেতে পারে বাহ্যিক ইউএসবি বা সম্প্রসারণ কার্ড ধাচের যেমন পিসি কার্ড। সাউন্ড কার্ড, নেটওয়ার্ক এডাপ্টার, হার্ড ড্রাইভ, অপটিক্যাল ড্রাইভ সহ আরও অগুনিত পেরিফেরাল যন্ত্রাংশ রয়েছে কিন্তু এই সব সম্প্রসারণ ল্যাপটপের বহনযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কারণ এগুলো লাগাতে গেলে ক্যাবল বক্স প্রভৃতি বসাতে বা সংযোগ করতে হয়। আর প্রত্যেক বার বহনের সময় এগুলো খুলতে এবং লাগাতে হয়।
ল্যাপটপের ছোট, সমান্তরাল কিবোর্ড এবং ট্র্যাকপ্যাডের কারণে দীর্ঘক্ষন ধরে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে পৌনপুনিক মাংসপেশির খিল ধরা সমস্যা দেখা দিতে পারে।[৫২] এই রকম সমস্যা উত্তরণের লক্ষ্যে দীর্ঘক্ষন ল্যাপটপ ব্যবহার করলে আলাদা কিবোর্ড ও মাউস ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এগুলো সহজেই কম্পিউটারের সাথে লাগানো যায় ইউএসবি পোর্ট বা ডকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে। কিছু কিছু কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকের স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগি কিবোর্ডের ব্যবস্থার কথা বলা আছে।
ল্যাপটপের সাথে যে প্রদর্শনী থাকে তাতে ভাল করে দেখার জন্য ব্যবহারকারীকে ঝুঁকে থাকতে হয় অনেক সময়। যা ঘাড় এবং মেরুদন্ডের ব্যথ্যার জন্য দায়ী। এ সমস্যা দূর করতে বড় আলাদা প্রদর্শনী ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে যা ল্যাপটপের সাথে সহজেই জুড়ে দেয়া যায়। তাছাড়া কম্পিউটার স্ট্যান্ডও ব্যবহার করা যেতে পারে।
যারা আলাদা প্রদর্শনী ব্যবহার করতে চান না তাদের জন্য পরামর্শ হল ল্যাপটপের প্রদর্শনীটিকে এমনভাবে রাখা যাতে তা ৯০ ডিগ্রির বেশি হেলে থাকে। এতে করে ঘাড় সোজা রাখা সহজ হতে পারে।
স্টেট ইউনিভার্সটি অব নিউ ইয়র্কের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ল্যাপটপের যে তাপ নিসৃত হয় তা পুরুষ ব্যবহারকারীর কোমরের নিচে এক্ষেত্রে বিশেষকারে জননেন্দ্রীয়তে শুক্রের সংখ্যাকে হুমকির মুখে ফেলে। গবেষণায় প্রায় ২ ডজন পুরুষ ছিল যাদের বয়স ২১-৩৫ এর মধ্যে। দেখা গেছে, বসে কাজ করতে গেলে ল্যাপটপকে ভালভাবে রাখার জন্য কোলের উপর বা তলপেটের কাছাকাছি রাখতে হয় এতে করে অন্ডদেশীয় তাপমাত্রা প্রায় বেড়ে ২.১°C (৩.৭৮ °F) হয়। কিন্তু তবুও, আসলেই এটি সরাসরি কোন ক্ষতি করে কিনা তা সঠিকভাবে বলার জন্য আরও গবেষণার মাধ্যমে জানার প্রয়োজন রয়েছে।[৫৩]
২০১০ সালে ২৯ জন পুরুষের উপর করা গবেষণা প্রকাশিত হয় ফার্টিলিটি এবং র্স্টারিলিটিতে। এখানে বলা হয় যারা কোলের উপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করেন তাদের অন্ডদেশে হাইপারথার্মিয়া বা অতিমাত্রার তাপীয় অবস্থার শিকার হন যার ফলে অন্ডদেশে তাপমাত্রা ২°C বেড়ে যায়। এই তাপমাত্রার ফলে পুরুষত্বহীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেটা ল্যাপটপ কুশন ব্যবহার করেও কমানো যায় না।[৫৪][৫৫][৫৬][৫৭][৫৮]
এই প্রায়োগিগ সমস্যার সমাধান হিসেবে, পরামর্শ দেয়া হয়েছে ল্যাপটপকে কোলে না রেখে সুবিধাজনক কোন টেবিল বা ডেস্ক বা বই বা বালিশের উপর রেখে কাজ করতে যাতে করে ল্যাপটপ এবং শরীরের সর্ম্পক না থাকে। আরেকটি সমাধান হতে পারে একটি শীতলীকরন ব্যবহার করা। যা ইউএসবি'র মাধ্যমে ল্যাপটপের সাথে যুক্ত থাকে। এটি ল্যাপটপের অতিরিক্ত গরম তাপ সরিয়ে দিয়ে ল্যাপটপকে ঠান্ডা রাখে। এতে সাধারণত একের অধিক পাখা থাকে। এটি ল্যাপটপের নিচের দিকে প্লাস্টিকের খাচে বসানো থাকে।
কোলের উপর রেখে কাজ করার সময় তাপ নিসৃত হয়ে ত্বকের বিবর্নতাকে বলা হয় "ত্বকের ছেঁকা/ছেঁকা ত্বকের উপসর্গ"।[৫৯][৬০][৬১][৬২]
বহযোগ্যতার কারণেই ল্যাপটপকে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিয়ে যেতে হয়। আর এতে ডেস্কটপের তুলনায় ক্ষতির সম্ভবনাও বেশি। যন্ত্রাংশগুলো যেমন প্রদর্শনীর কেন্দ্রবিন্দু, আংটা, পাওয়ার জ্যাক বা পাওয়ারের তারগুলো ধীরে ধীরে ব্যবহারের ফলে ক্ষয় বা নষ্ট হতে থাকে। তরল যে কোন জিনিসের পতনে কিবোর্ড, ছোটখাট কোন দুর্ঘটনা ল্যাপটপের অভ্যন্তরে ব্যপক ক্ষতি করতে পারে যা ঠিক করাও ব্যয় সাধ্য। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম বছর যারা কম্পিউটার ব্যবহার করেন তাদের ডেস্কটপের তুলনায় ল্যাপটপের ভাঙ্গার হার বেশি।[৬৩]
তিন মাস পর পর ল্যাপটপ পরিষ্কার (খাদ্যকনা, ধূলো-বালি, চুল, কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি) করার পরামর্শ দেয়া হয় যাতে ল্যাপটপ ভাল থাকে। বেশিরভাগ পরিষ্কারকগুলোতে নরম কাপড় বা মাইক্রোফাইবার কাপড় দেয়া হয় এলসিডি প্রদর্শনী, কিবোর্ড পরিষ্কার করার জন্য। সংকুচিত বাতাসে দিয়ে পাখা পরিষ্কারসহ অন্যান্য পরিষ্কারক ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ল্যাপটপে যাতে কোন কঠিন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার না করা হয়। যেমন ব্লিচ।[৬৪]
আসল বাহ্যিক উপাদানগুলো দামি এবং সাধারণত মালিকানাধীন এবং পরিবর্তনযোগ্য নয়। অন্যান্য অংশগুলো কম দামি যেমন পাওয়ার জ্যাক কিন্তু এটি পরিবর্তন করতে গেলে ল্যাপটপটি খুলতে ও লাগাতে অভিজ্ঞ লোকের প্রয়োজন হবে। অন্যান্য কম দামি কিন্তু সূক্ষ্ম জিনিসগুলো হয়ত বড় দামি উপাদানের থেকে আলাদা করে কিনতে পাওয়া যাবে না।[৬৫] একটি ল্যাপটপের মাদারবোর্ড ঠিক করতে বা এলসিডি প্যানেল ঠিক করতে গেলে তা ব্যবহৃত ল্যাপটপের দামের থেকেও বেশি হতে পারে।
ছোট মাপের একটি পাখা এবং তাপ শোষকগুলোর উপর ল্যাপটপের তাপ নিঃসরন ব্যবস্থা নির্ভর করে। কিন্তু বাতাসের সাথে আসা ধুলো,বালি ইত্যাদির কারণে এগুলো ঢেকে যেতে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ ল্যাপটপেরই কোন ধরনের ময়লা পরিষ্কারক ফিল্টার থাকে না। ফলে এগুলো বছরের পর বছর ব্যবহারের ফলে, এক পর্যায়ে ল্যাপটপটি উত্তপ্ত ও শব্দ করতে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, চালু হতেই অতিমাত্রায় গরম হয়ে যাচ্ছে ল্যাপটপ। ময়লাগুলো সাধারণত তাপ শোষক এবং পাখা যেখানে মিলিত হয়েছে সেখানে জমে থাকে যেখানে সাধারণভাবে পরিষ্কার করা যায় না। বেশির ভাগ সময় কম্প্রেস এয়ার ব্যবহার করলে এগুলো জায়গা থেকে সরে যায় কিন্তু পুরোপুরি বের হয় না। যখন ল্যাপটপ চালানো হয়, সরে যাওয়া ময়লাগুলো আবার জমা হতে থাকে। সেক্ষেত্রে সম্পূর্নভাবে ল্যাপটপ খুলে সেগুলো পরিষ্কারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, প্রত্যাহিক তাপ শোষক পরিষ্কারের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে বাঁচা যায়। বেশিরভাগ ল্যাপটপই সাধারণ ব্যবহারকারী দ্বারা খোলা কঠিন এবং এতে বৈদ্যুতিক শক পাবারও সম্ভবনা থাকে।
ব্যাটারির ধারনক্ষমতা ব্যবহারের ফলে কমতে থাকে একটু একটু করে। নতুন ব্যাটারি সাধারণত পর্যাপ্ত শক্তি ধারণ করে রাখে যাতে ল্যাপটপটি চার পাঁচ ঘণ্টা চালানো যায় (ব্যবহার, ল্যাপটপের উপাদান, শক্তি ব্যবস্থাপনার উপর ভিত্তি করে)। কিন্তু যতই দিন যায় ব্যাটারির শক্তি ধারণ ক্ষমতা তত কমে যেতে থাকে, কমতে কমতে তা কয়েক মিনিটে এসে যায়। ব্যাটারিগুলো সহজেই প্রতিস্থাপন করা যায় এবং হয়ত আরও ভালো ধারনক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারিও ব্যবহার সম্ভব হতে পারে। কিছু ল্যাপটপের যেমন আল্ট্রাবুক ব্যাটারি খোলা যায় না এগুলো পরিবর্তন করতে হলে সেবা কেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়। প্রতিস্থাপিত ব্যাটারির দাম হয়ত বেশিও হতে পারে।
যেহেতু ল্যাপটপ দামি, প্রায় সবাই ব্যবহার করে এবং বহনযোগ্য, তাই চোরদের প্রধান লক্ষ্য থাকে ল্যাপটপ। প্রতিদিন আমেরিকার এয়ারপোর্ট থেকে ১৬০০ বা তারও বেশি ল্যাপটপ চুরি হয় বা হারিয়ে যায়।[৬৬] এই ল্যাপটপের হারানো মানে অনেক ব্যক্তিগত সম্পদের (ক্রেডিট কার্ড, একাউন্ট তথ্য, ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ ইত্যাদি) ক্ষতি যার দাম হারানো ল্যাপটপের থেকেও বেশি। ফলে, ল্যাপটপটির এবং এর অভ্যন্তরে রাখা তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ।
বেশিরভাগ ল্যাপটপেই ক্যানশিঙটন নিরাপত্তা স্লট থাকে যার মাধ্যমে একে ডেস্ক বা অন্যান্য স্থায়ী বস্তুর সাথে তালাবদ্ধ করে রাখা যায়। এর সাথে সাথে, বর্তমান আধুনিক অপারেটিং সিস্টেমে বা তৃতীয় পক্ষীয় সফটওয়্যারে ডিস্ক এনক্রিপশন সুবিধা রয়েছে যা দ্বারা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা করা সম্ভব। ডিস্ক এনক্রিপশন মানে হল নিদির্ষ্ট পাসওয়ার্ড বা চাবি ছাড়া তথ্যকে পড়ার অযোগ্য করে রাখার পদ্ধতি। কিছু ল্যাপটপে এখন বাড়তি সুরক্ষা হিসেবে চোখের মনি চেনার পদ্ধতি বা আঙ্গুলের ছাপ স্ক্যান করার পদ্ধতি ব্যবহার করছেন ব্যবহারকারীরা।[৬৭] চুরি যাওয়া ল্যাপটপ শনাক্ত ও উদ্ধার করতে লোজ্যাক, ল্যাপটপ কপ এবং গেজেটট্র্যাক তাদের পদ্ধতি দিয়ে সহায়তা করছে।
রবিনস v. Lower Merion স্কুল ডিস্ট্রিক্ট তাদের স্কুলে দেয়া ল্যাপটপগুলোতে বিশেষ সফটওয়্যার দিয়ে দেন যা দিয়ে লুকিয়ে ওয়েবক্যামের মাধ্যমে তাদের ছাত্রের বাড়ির তথ্য ধারণ করা যায়।[৬৮][৬৯][৭০]
ল্যাপটপ চুরি একটি ব্যাপক সমস্যা। মাত্র ৫% বা তার কম সংখ্যার মত ল্যাপটপ উদ্ধার করা গেছে প্রস্তুতকারকদের মাধ্যমে।[৭১] কিন্তু এই সংখ্যা আরও কমে আসতে পারে কারণ বিভিন্ন কোম্পানির এবং সফটওয়্যার নির্মাতার উদ্ধার পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে। উদাহরণসরূপ, লোজ্যাক ফর ল্যাপটপ একটি নিরাপত্তা প্রদানকারী সফটওয়্যার। এর সাথে একটি তদন্ত এবং উদ্ধারকারী দল বানানো হয়। যাতে থাকে অবসর প্রাপ্ত আইনি ব্যক্তিরা। তারা এই হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপ খুজে বের করে। এই সফটওয়্যার এমন একটি প্রযুক্তিতে বানানো যা চোর দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা যায় না। লোজ্যাক দ্বারা তখনই ল্যাপটপ উদ্ধার সম্ভব যখন এটি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত থাকে। ল্যাপটপটির মালিক লোজ্যাকের মাধ্যমে তার তথ্য দূর থেকে মুছে ফেলতে বা যন্ত্রটিকে তালাবদ্ধ করে দিতে পারে যাতে কেউ তার ব্যক্তিগত তথ্য দেখতে না পারে।
টেমপ্লেট:প্রধান ল্যাপটপ ব্র্যান্ড
প্রধান ব্র্যান্ডগুলো সাধারণত ভাল সেবা ও সহায়তা দিয়ে থাকে যার মধ্যে থাকে সব ধরনের কাগজপত্রাদি এবং ল্যাপটপের প্রয়োজনীয় ড্রাইভার। ড্রাইভারগুলো ইন্টারনেটে ডাউনলোডের জন্যে দেয়া থাকে ফলে ল্যাপটপের বিশেষ মডেলের উৎপাদন বন্ধ হলেও তার জন্য ড্রাইভারগুলো পাওয়া যায়। সেবা, সমর্থন, সহায়তা এবং ব্র্যান্ড ইমেজের কারণে প্রধান ল্যাপটপ প্রস্তুতকারকদের ল্যাপটপের দাম অন্যান্যগুলোর তুলনায় বেশি হয়।
কিছু ব্র্যান্ড বিশেষ শ্রেনীর ল্যাপটপের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে যেমন এলিয়েনওয়ার গেমিং ল্যাপটপে, এইচপি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এনভি ল্যাপটপে। এছাড়া নেটবুকের মধ্যে রয়েছে ইইই পিসি এবং ছোটদের ল্যাপটপ ওএলপিসি তো রয়েছেই।
অনেক ব্র্যান্ড এখন তাদের ল্যাপটপের প্রস্তুত এবং নকশা করে না। কিছু ছোট সংখ্যক "আসল নকশা প্রস্তুতকারকরা" (ওডিএম) নতুন নকশার ল্যাপটপ তৈরি করে এবং ব্র্যান্ডগুলো সেগুলোর থেকে পছন্দ মত বেছে নেয়। ২০০৬ সালে সারা বিশ্বে ৭ টি প্রধান ওডিএম প্রতি ১০টি ল্যাপটপের ৭টিই তারা তৈরী করেছে, সবচেয়ে বড় পরিমানে কোয়ান্টা কম্পিউটার যা পুরো বাজারের ৩০%।[৭২] তাই প্রায়শই ব্রান্ডের ল্যাপটপগুলোর পাশাপাশি ওডিএমের কম দামি সস্তাগুলোতে একই রকম দেখতে কম্পিউটার মডেল দেখা যায়।
১৯৮৬ সালে, ব্যাটারির মাধ্যমে চলে এমন পোর্টবল বা বহনযোগ্য কম্পিউটারের সংখ্যা ছিল পুরো কম্পিউটার বাজারের মাত্র ২ ভাগ।[৭৩] কিন্তু ল্যাপটপ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্যক্তিগত এবং ব্যবসায়িক উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য।[৭৪] ২০০৭ সালে প্রায় ১০৯ মিলিয়ন নোটবুক পিসি সারা বিশ্বে ছাড়া হয়। ২০০৬ সালের তুলনায় যা ৩৩ ভাগ বেশি।[৭৫] ২০০৮ সালে ১৪৫.৯ মিলিয়ন নোটবুক বিক্রি হবে বলে ধারণা করা হয়। এবং ২০০৯ সালে তা বেড়ে ১৭৭.৭ মিলিয়ন হবে বলে ধারণা করা হয়।[৭৬] ২০০৮ সালেই পুরো বছরের চতুর্থাংশের মধ্যে তৃতীয় ভাগেই (কোম্পানিগুলো গণনার সুবিধার্থে এক বছরকে চারভাগে ভাগ করে মানে তিন মাসে এক ভাগ) বিশ্বব্যাপি নোটবুক পিসি ডেস্কটপকে ছাড়িয়ে যায়। যার পরিমাণ ছিল ৩৮.৬ মিলিয়ন আর ডেস্কটপ ছিল ৩৮.৫ মিলিয়ন।[৭৪][৭৭][৭৮][৭৯]
আমেরিকায় ২০০৫ সালের মে মাসে ডেস্কটপ কম্পিউটারের বিক্রয়কে ল্যাপটপের বিক্রয়ের পরিমাণ ছাড়িয়ে যায়। সেই সময় নোটবুকের বিক্রয় হয় গড়ে ১১৩১ ডলারে যখন ডেস্কটপের বিক্রয়ের গড় ছিল ৬৯৬ ডলার।[৮০]
অপারেটিং সিস্টেমের ভিত্তিতে দেখলে, দেখা যায়, মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ল্যাপটপের গড় বিক্রিত দাম ২০০৮/২০০৯ কমে যায়, কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় নেটবুক কম্পিউটারের কথা। ফলসরূপ, ২০০৮ সালের আগস্টে ল্যাপটপ পাওয়া যেত মাত্র ৬৮৯ ডলারে। ২০০৯ সালে গড় বিক্রয় দাম আরও কমে ৬০২ ডলারে নেমে আসে এবং ফেব্রুয়ারিতে এটা হয় ৫৬০ ডলারে। ম্যাক ল্যাপটপের সাথে অন্য ল্যাপটপ কম্পিউটারের একটি তুলনায় দেখা যায়, যখন এই সাত মাসে, ল্যাপটপের গড় দাম, উইন্ডোজ ভিত্তিক কম্পিউটারের ক্ষেত্রে কমে মোট ১২৯ ডলার সেখানে এ্যপলের ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের কমে মাত্র ১২ ডলার (১৫২৪ থেকে ১৫১২)।[৮১]
রাগিড বা কর্কশ বা শক্ত ধাচের ল্যাপটপ গ্রিড কম্পাস কম্পিউটার স্পেস শাটল প্রোগ্রামের প্রথম থেকেই ব্যবহৃত হত। ১৯৯১ সালে প্রথম ব্যানিজ্যিক ল্যাপটপ যা মহাকাশে ব্যবহৃত হয় তা হল মেকিনটোশ বহনযোগ্য ল্যাপটপ। যে মিশনে এটি ব্যবহৃত হয় তা হল মহাকাশ শাটল মিশন এসটিএস-৪৩।[৮২][৮৩][৮৪] ম্যাক এবং অন্যান্য ল্যাপটপ কম্পিউটার মহাকাশে পাঠানো শুরু হল মহাকাশ উড্ডয়নের সময় থেকে যদিও আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে একমাত্র দীর্ঘ সময়ের উড্ডয়নে যথার্থ কম্পউটার হল থিঙ্কপ্যাড।[৮৫] ২০১১ সাল নাগাদ প্রায় ১০০টিরও বেশি থিঙ্কপ্যাড আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠানো হয়েছে। মহাকাশে যে ল্যাপটপগুলো পাঠানো হয়েছে তা সাধারণভাবে কেনা ল্যাপটপের মতই কিন্তু মহাকাশে দীর্ঘক্ষন চলার জন্য এবং তাপজনিত সমস্যা উত্তরণের জন্য এগুলোর যন্ত্রপাতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হয়। যেমন শীতলীকরন ব্যবস্থা। এটি এমনভাবে কাজ করে যা শুধু উত্তাপের অবস্থা বুঝেই কাজ করে না বরং নিম্ন কেবিন এয়ার প্রেসার বসানোর জন্য জায়গা করে।[৮৬]
রাগিড বা কর্কশ বা শক্ত, এধরনের ল্যাপটপের নকশা করা হয়েছে বিরূপ পরিবেশে পরিচালনার উপযোগি করে যেমন তীব্র দুলুনি, অতিমাত্রার তাপে, ভেজা ও ধুলা বালি যুক্ত স্থানে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু মহাকাশের ল্যাপটপ এগুলোর থেকেও ভিন্ন। মহাকাশে ব্যবহার করার সময় তাতে প্রয়োজনীয় নকশার পরিবর্তন করা হয় এবং বাণিজ্যিকভাবে যে হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হয় সেগুলো ব্যবহার করা হয় না। কাজের ধরন অনুযায়ী এই পরিবর্তনগুলো করা হয়।
ল্যাপটপের সাধারণ সহায়ক বস্তুগুলোর মধ্যে ল্যাপটপ আস্তিন, ল্যাপটপ খোপ বা বাক্স দেখা যায়। যেগুলো ল্যাপটপকে পড়ে যাওয়া বা ধাক্কা থেকে রক্ষা করে। আস্তিনগুলো চিকন এবং নমনীয় হয়, এবং এগুলো তৈরি করা হয় নেপ্রন থেকে। বাক্সগুলো মোটা ও ভারি আকৃতির হয়। কিছু কিছু বাক্স ধাতব পদার্থ দিয়ে বানানো অবস্থায় পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কিছু কিছু বাক্সে তালা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে।
আরেকটি সহায়ক বস্তু হল ল্যাপটপ শীতলীকরন যন্ত্র। এটি ল্যাপটপের অভ্যন্তরীন তাপমাত্রা কমাতে চেষ্টা করে। একটি পদ্ধতিতে শীতলীকরন যন্ত্রটি ল্যাপটপের নিচে সংযুক্ত করা হয় এবং শীতলীকরন যন্ত্রটি তখন পাখার সাহায্যে তাপ দূর করে ল্যাপটপকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। অন্য আরেকটি পদ্ধতি হল ল্যাপটপকে একধরনের প্যাডের উপর বসিয়ে রাখা যাতে করে এটি বেশি বাতাস গ্রহণ করতে পারে। ফলে উত্তপ্ত হওয়ার হাত থেকে ল্যাপটপ রক্ষা পায়।[৮৭]
যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য আগে ছিল এখন নেই-
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.