Loading AI tools
তিব্বতীয় বৌদ্ধ ধর্মের বিদ্যায়তন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
র্ন্যিং-মা (তিব্বতি: རྙིང་མ་, ওয়াইলি: rnying ma) তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের চারটি প্রধান সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনতম। তিব্বতীতে র্ন্যিং শব্দের অর্থ প্রাচীন। এই সম্প্রদায়কে অনেক সময় স্ন্গা গ্যুর (তিব্বতি: སྔ་འགྱུར།, ওয়াইলি: snga 'gyur, ZYPY: Nga'gyur) বলা হয়ে থাকে। এই কথাটির অর্থ প্রাচীন অনুবাদ সম্প্রদায়। অষ্টম শতাব্দীতে তিব্বতে তিব্বতী লিপি ও ব্যাকরণের উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে সংস্কৃত থেকে তিব্বতী ভাষায় বিভিন্ন বৌদ্ধ গ্রন্থ অনুবাদের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়।
র্ন্যিং-মা | |||||||||||
তিব্বতি নাম | |||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
তিব্বতি | རྙིང་མ་ | ||||||||||
| |||||||||||
চীনা নাম | |||||||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 寧瑪派、紅教 | ||||||||||
সরলীকৃত চীনা | 宁玛派、红教 | ||||||||||
|
তিব্বত সম্রাট স্রোং-ব্ত্সন-স্গাম-পোর রাজত্বে বৌদ্ধ ধর্ম তিব্বতে প্রবেশ করে[n 1] এবং সম্রাট খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সানের রাজত্বে দ্রুত প্রসার লাভ করে। [n 2] ৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শান্তরক্ষিত ও পরে পদ্মসম্ভবকে আমন্ত্রণ জানান। সম্রাট বৌদ্ধ পুথিগুলিকে তিব্বতী ভাষায় অনুবাদের নির্দেশ দিলে এই দুই বৌদ্ধ পণ্ডিত ১০৮ জন অনুবাদক ও পদ্মসম্ভবের প্রধান পঁচিশজন শিষ্যের সহায়তায় এই সুবৃহৎ অনুবাদকর্মের তত্ত্বাবধান করেন। পদ্মসম্ভব তন্ত্র এবং শান্তরক্ষিত সূত্র সম্বন্ধীয় গ্রন্থের অনুবাদ করেন। এই দুই পণ্ডিত সম-য়ে বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করলে এই মঠটি বৌদ্ধ ধর্ম প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান সম-য়ে বৌদ্ধবিহারে ৭৯২ থেকে ৭৯৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দুই বছর ব্যাপী লাসা পরিষদ নামে এক ধর্মীয় বিতর্কসভার আয়োজন করেন। এই বিতর্ক চৈনিক বৌদ্ধধর্মের প্রতিভূ হিসেবে চান গুরু হেশাং মোহেয়ান এবং ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের প্রতিভূ হিসেবে শান্তরক্ষিতের শিষ্য কমলশীলের মধ্যে সংগঠিত হয়। বিতর্কের শেষে কমলশীল বিজয়ী ঘোষিত হন।[3][4]:৬৬ এই ঘটনার পরে খ্রি-স্রোং-ল্দে-ব্ত্সান ভারতীয় বৌদ্ধধর্মকে তিব্বতী বৌদ্ধধর্মের মূল ভিত্তি বলে ঘোষণা করেন।[3]
তিব্বতবিদ গ্যুসেপ তুচ্চির মতে চান গুরু কিম হো-শাংয়ের দর্শনই হল র্ন্যিং-মা সম্প্রদায়ের অতিযোগ তত্ত্বের ভিত্তি।[5] র্ন্যিং-মা সম্প্রদায়ের নিকটে চান বৌদ্ধধর্ম কিম হো-শাংয়ের শিক্ষা সম-য়ে বৌদ্ধবিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষু সাং শির মাধ্যমে, পাও-টাং ঊ-চুর শিক্ষা য়ে-শেস ওয়াংপোর মাধ্যমে ও হেশাং মোহেয়ান মাধ্যমে প্রবেশ করে।[6] কিন্তু তিব্বতবিদ জন রেনল্ডসের মতে তিব্বতীরা কয়েকটি অনুবাদকর্ম ছাড়া চীনা বৌদ্ধধর্মের ওপর প্রায় কোন উৎসাহ দেখায়নি।[n 3] তিব্বতবিদ সাম ভ্যান স্কাইক এই বিষয়ে জোর দেন যে, চান বৌদ্ধধর্ম সূত্র ও অতিযোগ তন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত বলে র্ন্যিং-মা সম্প্রদায়ের ওপর চীনা প্রভাব নেই বললেই চলে।[8]
অষ্টম হতে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত একমাত্র র্ন্যিং-মারাই তিব্বতের একমাত্র বৌদ্ধ ধর্ম সম্প্রদায় ছিল। তিব্বত সম্রাট গ্লাং-দার-মার রাজত্বকালের পর থেকে প্রায় তিনশত বছর তিব্বতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলাকালীন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর প্রচন্ড অত্যাচার করা হয়। এর ফলে এই তিনশ বছর তিব্বতে বৌদ্ধরা লুকিয়ে তাদের ধর্ম চর্চা করেন। একাদশ শতাব্দীর পর থেকে র্ন্যিং-মা ধর্মসম্প্রদায়ের পুনরায় উদ্ভব ঘটে। কিন্তু এই সময়ে র্ন্যিং-মার সাথে গ্সার মা ধর্মসম্প্রদায়গুলিরও উদ্ভব ঘটায় তিব্বতী বৌদ্ধধর্মে র্ন্যিং-মাদের একাধিপত্যের অবসান ঘটে।
র্ন্যিং-মা সম্প্রদায় সমগ্র বৌদ্ধ যানগুলিকে নয়টি ভাগে ভাগ করেছেন। মূলতঃ শ্রবকযান, প্রত্যেকবুদ্ধযান ও বোধিসত্ত্বযান নামক তিনটি সূত্রযানের সাথে ক্রিয়াতন্ত্রযান, চর্যাতন্ত্রযান ও যোগতন্ত্রযান নামক তিনটি বহির্তন্ত্রযান এবং মহাযোগ, অনুযোগ ও অতিযোগ নামক তিনটি অন্তর্তন্ত্রযান যোগ করে এই বিভক্তি করা হয়েছে। মঞ্জুশ্রীমিত্র অতিযোগযানকে চিত্তবর্গ, অভ্যন্তরবর্গ এবং উপদেশবর্গ এই তিন ভাগে ভাগ করেন। পরবর্তী তিব্বতী বৌদ্ধ সম্প্রদায়গুলি মহাযোগযানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে অনুত্তরযোগতন্ত্র এবং অতিযোগযানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মহামুদ্রা তত্ত্বের উদ্ভাবন করেন।
একাদশ শতাব্দীর পরে তিব্বতে গ্সার মা বৌদ্ধ সম্প্রদায়গুলির উদ্ভবের পর এই নতুন সম্প্রদায়গুলি র্ন্যিং-মাদের তান্ত্রিক গ্রন্থগুলিতে ভারতীয় প্রভাবকে দূর করতে চায়। এর ফলে বু-স্তোন-রিন-চেন-গ্রুব তঞ্জুর সম্পাদনার সময় র্ন্যিং-মাদের তান্ত্রিক গ্রন্থগুলিকে অপসারণ করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় র্ন্যিং-মারা মহাযোগ, অনুযোগ এবং অতিযোগযানের চিত্তবর্গ ও অভ্যন্তরবর্গ নামক তাদের তন্ত্রগুলিকে র্ন্যিং-মা-র্গ্যুদ-'বুম (তিব্বতি: རྙིང་མ་རྒྱུད་འབུམ, ওয়াইলি: rnying ma rgyud ‘bum) নামক সংকলন গ্রন্থে সংঘবদ্ধ করেন।
তিব্বতেরা অন্যান্য বৌদ্ধ ধর্মসম্প্রদায়েরা যেরকম রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিল, ঐতিহাসিকভাবে র্ন্যিং-মা ধর্মসম্প্রদায় কখনোই সেই ক্ষমতা লাভ করেনি। সেই কারণে এই সম্প্রদায়ের বৌদ্ধদের তিব্বতের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক যন্ত্র থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। এছাড়া তাদের প্রধান লামার কেন্দ্রীয় শাসনের অস্তিত্বও ছিল না। গণচীন যখন তিব্বতকে নিজেদের রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করে, সেই সময় দলাই লামার অনুরোধে এই সম্প্রদায়ের প্রধান লামার পদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এতে তাদের প্রসাসনিক অংশগ্রহণ বাড়লেও তাদের রাজনৈতিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা খুব একটা বৃদ্ধি পায়নি।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.