Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
২০১৯ সালে, বাংলাদেশের সংবাদপত্র ও নেটিজেনরা অভিযোগ করে যে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আবাসিক এলাকা নির্মাণে ৳২৬শ কোটির বেশি ব্যয় করা হয়েছে। এই অভিযোগ ও অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটে যাওয়া পরবর্তী ঘটনাগুলো দেশে রূপপুর বালিশ কেলেঙ্কারি নামে পরিচিতি লাভ করে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, দুর্নীতি দমন কমিশন ১৩ জনকে দুর্নীতির জন্য গ্রেপ্তার করেছিল, বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর এটা নিয়ে অনলাইনে ট্রোল ও মিমস শেয়ার করা সহ দেশে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব সংশয় প্রকাশ করেন।
২০১৬ সালে রূপপুরে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়। ২.৪ গিগাওয়াট উৎপাদনকারী দুটি ইউনিট ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে চালু করার পরিকল্পনা সম্বলিত ১২.৬৫ বিলিয়ন ডলার চুক্তির এই প্রকল্পে ৯০% অর্থ রুশ সরকার ঋণ দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশি পরিচালনাকারীদের কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র হস্তান্তরের আগে ঠিকাদার রোসাটম প্রথম বছর বিদ্যুকেন্দ্রের ইউনিটগুলো পরিচালনা করবে। রাশিয়া পারমাণবিক জ্বালানী সরবরাহ করবে ও পারমাণবিক বর্জ্য ফিরিয়ে নেবে।[1]
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় গ্রিন টিসি আবাসন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে এই আবাসান প্রকল্পের বাস্তবায়নের নথি প্রকাশ করা হয়। তখন গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনস্থ পাবনা পূর্ত শাখার কর্মকর্তাদের দ্বারা প্রস্তুতকৃত পণ্য ক্রয়মূল্যের নথিতে উল্লেখিত ব্যয় নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। সেই কেনাকাটার তালিকায় থাকা পণ্যগুলোর দাম বেশি পাওয়া যায়। বাংলাদেশ নাগরিক পরিষদের আহ্বায়কের মতে, বাংলাদেশে একটি বালিশের বাজার মূল্য ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত।[2] কিন্তু প্রকল্পের অধীনে প্রতিটি বালিশের মূল্য ৳৫৯৫৭ দেখানো হয়েছে, যা ছিল প্রস্তাবিত মূল্য বাজার মূল্যের প্রায় ২০ গুণ। আবাসন প্রকল্পের অধীনে নির্মিত ফ্ল্যাটে বালিশ তোলার খরচ হিসেবে ৳৯৩১ দেখানো হয়। খাট কেনার মূল্য ৳৪৩৩৫৭ দেখানো হয়েছে। প্রতিটি ডাইনিং টেবিল সেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৳১১৪৬৭৪।[3] মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নীতি অনুযায়ী, ৳৩০ কোটির বেশি ক্রয়ের জন্য কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন। তাই অনুমোদন এড়াতে পাবনার শাখা দপ্তর ৳৩০ কোটি করে ৫ ভাগে প্রকল্প ভাগ করে। এসব পণ্য কেনার কাজ পায় তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সাজিন এন্টারপ্রাইজের সরবরাহকৃত মালামাল নিম্নমানের বলে প্রমাণিত হয়। ওই এলাকার সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত বলে গণমাধ্যমগুলো খবরে প্রকাশ করে। মজিদ সন্স নামে আরেক ঠিকাদার নির্মাণ পণ্য সরবরাহে গাফিলতি করেছে বলে জানা গেছে।[4]
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তৃপক্ষ ঘটনার বিরুদ্ধে দোষীদের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব দাবি করেন, ঘটনা জানার পর তারা পণ্যের দাম নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করেছিলো। তবে কমিটির অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারেননি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক শওকত আকবর দাবি করেন, তার প্রকল্প নথিতে উল্লেখিত পণ্যের ব্যয় অযৌক্তিক নয়। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে জবাবদিহি করা হবে বলেও জানান তিনি।[3] যুগান্তরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনে করে যে ঘটনার সময় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ছিলেন, তাই তিনি নৈতিক কারণে এর দায় এড়াতে পারেন না।[5]
এমন ঘটনা যদি সত্য হয় তা তো খুবই বিপদের কথা। এমন হরিলুট চলছে অথচ দেখার কেউ নেই, শোনার কেউ নেই, কোনো স্বচ্ছতা নেই। দেশে বর্তমানে কোনো কিছুই স্বচ্ছ নয়।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এই দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের মানুষ বিষয়টি নিয়ে ট্রল ও মিমস শেয়ার করে। দেশের জাতীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ মনে করেন সরকার এই অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সময়ের সাথে সাথে দেশে দুর্নীতি বাড়বে।[3] ২০ মে ২০১৯ তারিখে ঢাকায় দুটি সংগঠন দুর্নীতির বিরুদ্ধে বালিশ নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করে। বিক্ষোভকারীরা এই দুর্নীতিকে 'ইতিহাসের সবচেয়ে বড় লুট' বলে বর্ণনা করেছেন।[2]
অনিয়মের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর তদন্তের স্বার্থে সরকার তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে।[3] তদন্ত কমিটি ২৩ জুলাই ২০১৯-এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ৩৩ জন ব্যক্তি এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এরপর ৭ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের কার্যালয়ে তলব করে। তিন দিন পর অভিযুক্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।[6] ১২ ডিসেম্বর তারিখে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী, তিনজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী, চারজন উপ-প্রকৌশলী, তিনজন সহকারী প্রকৌশলী এবং দুজন ঠিকাদার ছিলো যাদের নামে প্রকল্পে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলা হয়। মন্ত্রণালয় জানায় যে অভিযুক্তরা প্রকল্প থেকে প্রায় ৳৩৬ কোটি আত্মসাৎ করেছে।[4] গ্রেফতারের পর পাবনা জোনের উপ-প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জামিনের আবেদন করলে ২০২০ সালের জুলাই হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠায়।[7] ২৫ অক্টোবর, ২০২১-এ সমকাল জানায় যে অভিযুক্ত ঠিকাদারেরা ক্রয়াদেশের অর্থ সরকারের নিকট ফেরত দিয়েছে।[8] অন্যদিকে সাজিন কনস্ট্রাকশনের মালিক শাহাদাত হোসেন গত আগস্ট মাসে জামিন পান।[9] তাই দুর্নীতি দমন কমিশন সেপ্টেম্বরে জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করে।[10] এরপর হাইকোর্ট শাহাদাতের জামিন বাতিলের রুল জারি করে।[11] অক্টোবরে দুর্নীতি দমন কমিশন শাহাদাতকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য আবেদন করে।[12] একই মাসে বালিশ কেলেঙ্কারির তিনটি মামলা নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্ট সরকারকে ছয় মাস সময় দেয়।[13]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.