মিহিদানা

মিহিদানা বাংলার এক সুপ্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন।^[1] বর্ধমানের মিহিদানা অতি বিখ্যাত।^[1]১৮৯৮ সাল নাগদ এই মিহিদানা পশ্চিমবঙ্গে খাস নামে পরিচিত ছিল।^[2] মিহিদানা ভারতের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টান্ন হিসেবে স্বীকৃত।^[3] মিহিদানার পেটেন্ট আইনিভাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে প্রদান করা হয়েছে।^[3] কলকাতার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিশ্ব বাংলা শোরুমে পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে মিহিদানাকে তুলে ধরা হয়েছে।^[4]

মিহিদানা
ভৌগোলিক নির্দেশক
বর্ধমানের মিহিদানা
ধরন	পশ্চিমবঙ্গের মিষ্টান্ন
অঞ্চল	বর্ধমান, পশ্চিমবঙ্গ
দেশ	ভারত
প্রস্তুতকারী	ভৈরবচন্দ্র নাগ
উদ্ভাবনকাল	১৯০৪; ১২০ বছর আগে (1904)
নথিবদ্ধ	২৯ এপ্রিল, ২০১৭
উপাদান	চাল, বেসন, জাফরান, ঘি, চিনি
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট	http://ipindiaservices.gov.in/GirPublic/Application/Details/526

উৎপত্তি

সীতাভোগ-মিহিদানার সমাবেশ

১৯০৪ সালে বড়লাট জর্জ ন্যাথানিয়েল কার্জন বর্ধমানের জমিদার বিজয়চাঁদ মহতাবকে মহারাজা খেতাব দিতে বর্ধমান ভ্রমণ করেন।^[5] কার্জনের বর্ধমান আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে বিজয়চাঁদ মহতাব বর্ধমানের জনৈক মিষ্টি প্রস্তুতকারক ভৈরবচন্দ্র নাগকে একটি বিশেষ মিষ্টি প্রস্তুত করতে বলেন।^[6] ভৈরবচন্দ্র নাগ মিহিদানা ও বর্ধমানের অপর বিখ্যাত মিষ্টান্ন সীতাভোগ তৈরী করেন।

প্রণালী

মিহিদানার প্রধান উপাদান চাল। মিহিদানা প্রস্তুতিতে সাধারণত গোবিন্দভোগ চাল, কামিনীভোগ অথবা বাসমতী চাল ব্যবহার করা হয়।^[5] চাল গুঁড়ো (যাকে স্থানীয়ভাবে সবেদা বলা হয়) করে তার সাথে বেসন, ঘি, চিনি এবং জাফরান মেশানো হয়। তারপর জল মিশিয়ে ঈষৎ পীতাভ একটি থকথকে মিশ্রণ তৈরী করা হয়। একটি ছিদ্রযুক্ত পেতলের পাত্র থেকে উক্ত মিশ্রণ কড়াইতে ফুটন্ত গাওয়া ঘিতে ফেলা হয়। তারপর দানাগুলি কড়া করে ভেজে ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে তুলে চিনির রসে রাখা হয়।^[5]

জনপ্রিয়তা

বিজয়া দশমীর দিন পরিবেশিত মিহিদানা

সুকুমার রায়ের কিশোর সাহিত্যে পাগলা দাশুর গল্পে মিহিদানার উল্লেখ আছে। বিখ্যাত কৌতুকাভিনেতা নবদ্বীপ হালদারের কৌতুকগীতি শরীরটা আজ বেজায় খারাপ-এ তিনি গেয়েছেন^[7]-

“

বাগবাজারের রসগোল্লা, ভীম নাগের সন্দেশ বর্ধমানের সীতাভোগ মিহিদানা দরবেশ

”

রজনীকান্ত সেন ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত কল্যাণী কাব্যগ্রন্থের ঔদারিক গানে বাংলার বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্নের উল্লেখ করেছেন। ঔদারিক গানে মিহিদানার উল্লেখ পাওয়া যায়-

“

যদি, কুমড়োর মত, চালে ধ’রে র’ত, পান্‌‌তোয়া শত শত; আর, সরষের মত, হ’ত মিহিদানা বুঁদিয়া বুটের মতো!

”

আরও দেখুন

• বোঁদে
• সীতাভোগ

তথ্যসূত্র

1. চক্রবর্তী, সুজয় (১৮ এপ্রিল ২০১৪)। "মিহিদানা, সীতাভোগের দেশে"। সকালের বার্তা। কলকাতা। ৪ জুলাই ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৪।
2. "কৃষ্ণ অনুসঙ্গের মিষ্টি ও অন্ন"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৪।
3. ক্ষেত্রী, রায়না (১১ এপ্রিল ২০১৪)। "Mishti Mookh: The Unknown Bengali Sweets"। timescity.com। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৪।
4. চক্রবর্তী, সুপ্রকাশ (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪)। "চাখার আগে চোখে পড়ুক মোয়া-মিহিদানা, চান মমতা"। আনন্দবাজার পত্রিকা। কলকাতা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৪।
5. সরকার, ইন্দ্রনীল (২৮ ডিসেম্বর ২০১৩)। "Sweets of Burdwan set for global plate"। দ্য টেলিগ্রাফ (ইংরাজি ভাষায়)। কলকাতা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৪।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (link)
6. মজুমদার, জয়দীপ (১৫ জানুয়ারি ২০০৭)। "Sita's Sweet Tooth"। আউটলুক (ইংরাজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০১৪।উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: অচেনা ভাষা (link)
7. দাস, অশোক। "ফ্যাণ্ডা ফ্যাচাং তরকারি"। গণশক্তি। কলকাতা। ১৭ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৪।