Loading AI tools
ভারতীয় দেওবন্দি ইসলামি স্কলার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহি (১৯০৭–১৯৯৬, উর্দু: محمود حسن گنگوہی) ছিলেন একজন ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত, হানাফি আলেম এবং দারুল উলুম দেওবন্দ ও মাজাহির উলুম, সাহারানপুরের প্রাক্তন প্রধান মুফতি। তিনি সাহাবী হযরত আবু আইয়ুব আনসারি রাঃ-এর বংশধর।[2] দক্ষিণ আফ্রিকায় দেওবন্দ আন্দোলনের প্রসারে তার ভূমিকা রয়েছে।
মুফতি আজম মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহি | |
---|---|
محمود حسن گنگوہی | |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
জন্ম | ১৯০৭ গাঙ্গুহ,সাহারানপুর জেলা, ব্রিটিশ ভারত |
মৃত্যু | ২ সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ ৮৮–৮৯) এলসবার্গ, দক্ষিণ আফ্রিকা | (বয়স
ধর্ম | ইসলাম |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
যুগ | আধুনিক [1] |
ব্যবহারশাস্ত্র | হানাফি |
ধর্মীয় মতবিশ্বাস | সুন্নি |
আন্দোলন | দেওবন্দি |
উল্লেখযোগ্য কাজ | ফতোয়া মাহমুদিয়া (৩২ খন্ড) |
শিক্ষা | মাজাহির উলুম, সাহারানপুর দারুল উলুম দেওবন্দ |
যে জন্য পরিচিত | ফতোয়া প্রদান |
এর প্রতিষ্ঠাতা | জামিয়া মাহমুদিয়া টেকরপুর |
মুসলিম নেতা | |
যার দ্বারা প্রভাবিত | |
যাদের প্রভাবিত করেন |
মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহি ১৩২৫ হিজরির ৮/৯ জমাদিউল সানি মোতাবেক ১৯০৭ সালে ভারতের সাহারানপুর জেলার অন্তর্গত গাঙ্গুহ নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা হামেদ হাসান শায়খুল হিন্দের শাগরেদ এবং রশিদ আহমেদ গাঙ্গোহির নিকট বায়আত ছিলেন।[3]
হযরত মুফতি মাহমুদ হাসান বিন মাওলানা হামেদ হাসান বিন হাজী খলীল বিন ওয়ালী মুহাম্মদ বিন কলন্দর বুখশ বিন মুহাম্মাদ আলী বিন গোলাম রাসূল বিন আবদুল হামিদ বিন কাজী মুহাম্মদ ফাজেল বিন জামিল মুহাম্মদ বিন কাজী মুহাম্মাদ খলীল বিন কাজী ওয়ালী মুহাম্মাদ বিন কাজী কাবীর বিন কাজী আমান বিন খাজা ফরিদুদ্দিন বিন খাজা আলাউদ্দিন বিন খাজা রুকনুদ্দিন বিন খাজা শরফদ্দিন বিন খাজা তাজুদ্দিন বিন খাজা ইসমাঈল বিন খাজা হাশেম বুজুরগ বিন খাজা ইসমাঈল বিন শায়খুল ইসলাম খাজা আবু ইসমাঈল আবদুল্লাহ আনসারী বিন খাজা আবু মানসুর বিন আলী বিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আলী বিন জাফর বিন আবু মানসুর বিন হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাযি.)[3]
মাহমুদ হাসানের প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হয় হযরত শায়খুল হিন্দের নিকট হযরত রশিদ আহমেদ গাঙ্গুহির কন্যার বৈঠকখানায়, সেখানে হাফেজ করীম বখশের নিকট কোরআন কারিম হেফজ করেন। কুরআন হেফজ শেষ করতে মাত্র সতের লাইন বাকি, এমতাবস্থায় হাফেজ করীম বখশের (যিনি অন্ধ ছিলেন) মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর গাঙ্গুহ জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আব্দুল করীম সাহেবের নিকট হেফজ সমাপ্ত করেন। সে সময় নিজের আগ্রহে উর্দু ভাষাও শিখে নিয়েছিলেন। আর আমদনামা ও বুস্তার কিছু অংশ পড়েছেন মাওলানা ফখরুদ্দীন গাঙ্গহীর নিকট। ১৩৪১ হিজরীতে মাজাহির উলুম, সাহারানপুরে ভর্তি হয়ে সরফে মীর এবং নাহুমীর ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শুরু করে মীর যাহেদ গোলাম ইয়াহইয়া, কাযী মুবারক দিওয়ানে হামাসাহ, দিওয়ানে মুতানাব্বী এবং হামদুল্লাহসহ অন্য কিতাবগুলো পড়েন ১৩৪৭ হিজরি পর্যন্ত। ১৩৪৮ হিজরির শাওয়াল মাসে দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হয়ে হেদায়া আখেরাইন এবং মিশকাত শরিফ অধ্যয়ন করেন। ১৩৪৯ হিজরিতে বায়যাভী, আবু দাউদ এবং মুসলিম শরিফ পড়েন। আর ১৩৫০ হিজরিতে শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানির নিকট বুখারি শরিফ ও তিরমিজি শরিফ পড়েন। পরবর্তী বছরে মাজাহেরুল উলুম সাহারানপুরে ভর্তি হয়ে দাওরায়ে হাদিসের সব কিতাব পুনরায় অধ্যয়ন করেন। অতঃপর মাজাহিরুল উলুমেই তাজভীদ এবং কেরাত শাস্ত্র সমাপ্ত করেন।[3]
শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হওয়ার পরপর ১৩৫১ হিজরির জিলকদের ৪ তারিখে মাজাহির উলুম, সাহারানপুরে মাসিক দশ রুপি বেতনে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং ১৩৫৩ হিজরিতে সহকারী মুফতি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৩৭০ হিজরি পর্যন্ত মাজাহির উলুম, সাহারানপুরে ওই পদে বহাল থাকেন। এ সময়ের মাঝে মীযানুচ্ছরফ থেকে হেদায়া আওয়ালাইন এবং জালালাইন পর্যন্ত সব কিতাবের দরস প্রদান করেন। সে সময় তিনি মাওলানা আব্দুর রহমান কামেলপুরী, মাওলানা আবদুল লতিফ এবং শাইখুল হাদিস মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভির তত্ত্বাবধানে কামালিয়াতের সকল স্তর অতিক্রম করেন এবং শেষ পর্যন্ত যুগশ্রেষ্ঠ ফেকাহবিদ হতে সক্ষম হন।
মাজাহির উলুম সাহারানপুরে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ১৩৭১ হিজরি থেকে ১৩৮৪ হিজরি পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর যাবত জামেউল উলুম কানপুর মাদরাসায় মুহতামিম, মুফতি ও শায়খুল হাদিসের পদে দায়িত্ব পালন করেন।
কানপুরবাসীর ওপর মুফতি মাহমুদের তাকওয়া, পরহেজগারী বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন। জামেউল উলুম কানপুর কর্তৃপক্ষ চেয়েছিলেন তিনি যেন এই মাদ্রাসায় থাকে। কিন্তু ১৩৮৫ হিজরিতে তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি হিসেবে চলে আসেন। দারুল উলুম দেওবন্দে মুফতি মাহমুদ ফতওয়া প্রদানের কাজ ছাড়াও দীর্ঘদিন পর্যন্ত সহীহ বুখারীর দরস প্রদান করেন। ১৩৮৬ হিজরিতে তাকে মাজাহির উলুম, সাহারানপুরের পৃষ্ঠপোষক নির্বাচন করা হয়। [2][4]
মুফতি মাহমুদ ছিলেন শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া কান্ধলভীর উল্লেখযোগ্য খলিফাদের একজন। নিজের বাইআতের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন,
আমার বাইআতের ঘটনাটি ছিল ১৩৪৯ হিজরিতে। তখন আমি দেওবন্দে পড়তাম। আর আমি যখনই হযরত রায়পুরী এবং হযরত দেহলভীর খেদমতে উপস্থিত হতাম তখন আখেরাতের প্রতি আগ্রহ খুব বেশি হত। আর দুনিয়ার প্রতি অনাগ্রহ বেড়ে যেত। আর যখন জাকারিয়া কান্ধলভীর নিকট যেতাম, তখন স্বীয় গুনাহ এবং দোষগুলো সামনে চলে আসত। আমি মনে করতাম আমার সংশোধন তার দ্বারাই হবে। শায়খকে প্রাধান্য দেওয়ার দ্বিতীয় কারণ হলো, বয়সের বিবেচনায় শায়খ অন্যান্যদের থেকে ছোট ছিলেন, যার দরুন বেশ কিছু সময় হযরতের খেদমতে কাটানোর সুযোগ হয়ে যাবে। অতঃপর আমি শায়খের নিকট বাইআত হওয়ার দরখাস্ত করলাম। তখন তিনি শায়খুল হাদীস হুসাইন আহমেদ মাদানির নিকট আমাকে বাইআত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বললেন, ইস্তেখারা করে নাও, অথবা নিযামুদ্দিন,রায়পুর ও থানাভবন সফর কর এবং তিনজনের মজলিসে চুপিসারে বস, অতঃপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর। আমি কোথাও যাইনি। তখন শায়খ আমাকে বাইআত করে নিলেন। বাইআতের পূর্বে কছদুস সাবীল দেখে জিকির শুরু করেছিলাম। বাইআত হওয়ার পরে শায়খ জিকির ছাড়িয়ে দিয়ে তাসবিহাত বাতলে দিলেন। দীর্ঘ দিন রিয়াযত ও মোজাহাদার পর খেলাফত লাভ করলাম।
শায়খুল হাদিস জাকারিয়া কান্ধলভীর মৃত্যুর পর তিনি তার স্থলাভিষিক্ত হন। দারুল উলুম দেওবন্দের ছাত্তা মসজিদে তার খানকাহ ছিল। খানকাতে রিয়াযাত- মুজাহাদার কাজ করতেন। দেওবন্দ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন জায়গাতে খানকাহ ছিল। এমনি ভাবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফ্রিকা, লন্ডন, বিভিন্ন দেশে তার খানকাহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসব খানকাতে হাজার হাজার আলেম এবং সাধারণ মানুষের ইসলাহী কাজ করতেন।[3]
মুফতি মাহমুদের খলিফাদের মধ্যে আবুল কাসেম নোমানী,ইব্রাহিম দেসাই ,রহমতুল্লাহ মীর কাসেমি প্রমুখ উল্ললেখযোগ্য। বাংলাদেশে তার খলিফাদের মধ্যে রয়েছেন নূর হুসাইন কাসেমী, মুফতি শফিকুল ইসলাম,মুফতি মামুনুর রশীদ, মাওলানা মোস্তাফাসহ অনেকেই মুফতি জাকির সাহেব টিকরপুর মুফতি মাহবুব বিন মশাররফ বরিশাল । তার খানকাও এখনো বাংলাদেশে বিদ্যমান। [2]
তিনি ৪ বার বাংলাদেশে আগমন করেন। ১৯৯৬ সালে মাহে রমজানে বাংলাদেশে তার সর্বশেষ সফর হয়েছিল। তখন তিনি ঢাকার মালিবাগ মাদরাসার জামে মসজিদে এক মাসব্যাপী কয়েক হাজার দেশি ও বিদেশি ভক্ত ও মুরিদদেরকে সাথে নিয়ে জিকির, তালকীন ও এতেকাফ করেন।
তিনি বাংলাদেশের ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার টিকরপুরে আল জামিয়াতুল মাহমুদিয়া টিকরপুর মাদরাসাটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তাছাড়া বাংলাদেশের ৬টি মাদরাসা এবং মালিবাগ মাদ্রাসা ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার প্রধান দুটি খানকাহও তার নেসবতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[5]
মুফতি মাহমুদ সারাজীবনে যত ফতোয়া দিয়েছিলেন তা প্রকাশ হয়েছে "ফতোয়া মাহমুদিয়া" নামে। ৩২ খণ্ডে সংকলিত এই বিশাল গ্রন্থটি হানাফি মাযহাবের একটি রেফারেন্স বই হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[6] ইতিমধ্যেই তার ৯টি মালফুজাত এবং ৯টি মাওয়ায়েজ প্রকাশিত হয়েছে। অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে,[7]
তিনি ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তার জানাজার নামাজের ইমামতি করেন বর্তমান দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মুফতি আবুল কাসেম নোমানী। হজলডেন থেকে প্রায় ৪ কি.মি. দূরে এলসবার্গে তাঁকে সমাহিত করা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.