Remove ads
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মাকালকান্দি গণহত্যা বা মাকালকান্দি হত্যাকাণ্ড হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনীর দ্বারা বাংলাদেশের অবিভক্ত সিলেট জেলার হবিগঞ্জ উপ-বিভাগের অধীনে মাকালকান্দি গ্রামে বাঙ্গালী হিন্দুদের উপর সংগঠিত একটি হত্যাকাণ্ড, যা ১৯৭১ সালের ১৮ই আগস্ট পরিচালিত হয়।[১][২][৩][৪][৫]
মাকালকান্দি গণহত্যা | |
---|---|
স্থান | মাকালকান্দি, হবিগঞ্জ, সিলেট, বাংলাদেশ |
তারিখ | ১৮ই আগস্ট, ১৯৭১ সকাল ৯টা (ইউটিসি+৬:০০) |
লক্ষ্য | বাঙ্গালী হিন্দু |
হামলার ধরন | বার্স্ট ফায়ার, গণহত্যা, |
ব্যবহৃত অস্ত্র | মেশিনগান |
নিহত | ১০০ জনের অধিক |
আহত | ৪০ |
হামলাকারী দল | পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, রাজাকার |
মাকালকান্দি গ্রামটি বর্তমান বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলায় অবস্থিত। ১৯৭১ সালে, হবিগঞ্জ সিলেট জেলার অধীনে একটি উপ-বিভাগ ছিল এবং বানিয়াচং এশিয়ার সবচেয়ে বড় গ্রাম ছিল। বানিয়াচংয়ের উত্তর-পশ্চিম দিকে, উত্তর থেকে দক্ষিণদিক বরাবর ৭মাইল এবং পূর্ব-পশ্চিম দিকে ৫ মাইল ভূখণ্ডের একটি হাওর রয়েছে, যার আয়তন প্রায় ৩৫ বর্গমাইল। এই ভূখণ্ডের অভ্যন্তরেই মাকালকান্দি, ১৫০০ হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটি অবস্থিত। যেহেতু এখানে মাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল, তাই স্বাক্ষরতার হার ৩৫% এর কিছু বেশি ছিল। এই গ্রামের লোক চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং অধ্যাপক ছিলেন। অর্থনৈতিকভাবে গ্রামটি সমৃদ্ধ ছিল। এখানে একটিও খুঁড়ে ঘর ছিলনা।[১]
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে, মাকালকান্দি গ্রামের লোকেরা তাদের নিরাপদ মনে করেছিল যেহেতু গ্রামটিকে চারিদিকে হাওর প্রাকৃতিক দুর্গের মতো বেষ্টন করে রেখেছিল। সুতরাং, তারা ভারত চলে যায়নি। এমনকি স্থানীয় এম.পি গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন তার পরিবারকে সুরক্ষার জন্য মাকালকান্দি গ্রামে পাঠান। আশপাশের গ্রাম থেকে অনেক হিন্দু শরণার্থী হিসেবে মাকালকান্দি গ্রামে আশ্রয় নেয়। যাইহোক, বানিয়াচং গ্রামের সৈয়দ ফজলুল হক রাজাকার হিসেবে যোগ দেয় এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে। ১৭ই আগস্ট পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং সহচরদের মধ্যে একটি আলোচনা হয়, যেখানে হক পাকিস্তানি দখলদারি সেনাবাহিনীদের মাকালকান্দি গ্রামে আক্রমণ চালাতে প্ররোচিত করে।[১]
১৮ই আগস্ট, মেজর দুররানির নেতৃত্বে পাকহানাদারের একটি দল খুব ভোরে নৌকায় করে মাকালকান্দির দিকে আসতে থাকে। তাদের সাহচর্যে ছিল পুলিশ অফিসার জয়নাল আবেদিন এবং স্থানীয় রাজাকার সৈয়দ ফজলুল হক। সকাল নয়টার দিকে, তারা মাকালকান্দি গ্রামে এসে পোঁছে। এটি ভিসারি পূজার দিন ছিল। গ্রামবাসীরা পূজার আয়োজন করতে ছিল।গ্রামের পশ্চিম দিকের শতবছরের পুরনো চণ্ডী মণ্ডপে, ভক্তরা পীতলের প্রতিমাগুলো পরিষ্কার এবং ঘষামাজা করছিল। তরুণ ছেলেমেয়েরা উপাসনার জন্য ফুল সংগ্রহ করছিল। হঠাৎ, পাকিস্তানি সৈন্যরা নৌকা থেকে গুলি চালানো শুরু করে। গ্রামবাসীরা যে যেদিকে পারে, পালাতে থাকে। অনেকে সূতা নদীতে ঝাঁপ দেয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা নৌকা থেকে নেমে পরে এবং চান্দি মণ্ডপের দিকে যায়। তারা বারজন গ্রামবাসীকে ধরে ফেলে এবং চণ্ডী মণ্ডপের সামনে একই সারিতে দাঁড় করায়। এগার জন ব্যক্তিকে গুলি করে মারা হয়, যখন কংস মোহন দাশ বারতম ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আহত হয়েও গণহত্যা থেকে বেঁচে যায়।[২] অবশেষে, পাক হানাদাররা সারা গ্রাম তন্নতন্ন করে এবং বিশজন লোককে গুলি করে হত্যা করে। দেহগুলো সুতা নদীতে ফেলে দেয়। আহত হয়ে ৪০ জনের মতো লোক পালাতে সক্ষম হয়। যদিও তারা ভারত যেতে সক্ষম হয়েছিল, তবে বেশিরভাগ লোক আহত হয়ে মারা যায়। মহিলাদের ধর্ষণ করা হয় এবং রাজাকাররা সারা গ্রাম লুটপাট করে নেয়। সারা গ্রামে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
২০০৮ সালে, নূরে আলম সিদ্দিকি, হবিগঞ্জ উপজেলার ঐসময়কার উপজেলা নির্বাহী অফিসার গণহত্যার ৩৭তম বার্ষিকীতে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করেন।[২] স্মৃতিস্তম্ভে গণহত্যার শিকার ৭৮ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়।[৪]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.