Loading AI tools
সাংবাদিক ও লেখক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় (জন্ম: জুলাই, ১৭৮৭ – মৃত্যু: ২০ অক্টোবর, ১৮৪৮) সমাচার চন্দ্রিকা পত্রিকার সম্পাদক ও বাংলা সাহিত্যের প্রথম কথাসাহিত্যিক। ভবানীচরণ গোঁড়া হিন্দুসমাজের প্রতিনিধি ছিলেন ও বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা ও চেতনা বিস্তারের প্রবল বিরোধিতা করেন। বাংলা ভাষার উন্নতিকল্পে কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকও রচনা করেন।
বর্ধমান জেলার উখড়ার নারায়ণপুর গ্রামে ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। পিতা রামজয় বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার কলুটোলা অঞ্চলে বসবাস করতেন। ছেলেবেলার পিতার তত্ত্বাবধানে নানা বিষয় এবং বাংলা, সংস্কৃত, ফার্সি ও ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করেন। এরপর ভবানীচরণ নিজ যোগ্যতায় বিভিন্ন ইউরোপীয় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বিশপ রেজিনাল্ড প্রমুখ ইউরোপীয়ের অধীনে কর্ম করেন। ১৮২২ সালে সমাচার চন্দ্রিকা পত্রিকা প্রকাশ করেন ও ১৮২৮ সালে প্রভাবশালী সমাজপতি হিসাবে জুরি নিযুক্ত হন। ১৮৩০ সালে রাজা রামমোহন রায়ের সংস্কার আন্দোলনের বিরুদ্ধে রাধাকান্ত দেবের নেতৃত্বে ধর্মসভা গঠিত হলে তিনি তার সম্পাদক নিযুক্ত হন। সতীদাহ প্রথা রদ, ভারতের অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশি ধাঁচে সংস্কার প্রবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং দেশে বিদেশি অর্থনৈতিক উপনিবেশ স্থাপন রোধে জমিদারদের দেশীয় সম্পদ উন্নয়নের প্রস্তাব করেন। তার রচিত সাহিত্যগ্রন্থগুলি তৎকালীন সমাজের দুর্নীতির আবরণ উন্মোচন করে দিয়েছিল।
৪ ডিসেম্বর ১৮২১ সালে সাপ্তাহিক সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন ভবানীচরণ। পরে রামমোহন রায়ের সঙ্গে ধর্মমত নিয়ে বিরোধ বাধায় তিনি এই কাজ ত্যাগ করেন। ১৮২২ সালের ৫ মার্চ কলুটোলায় নিজে প্রেস স্থাপন করে প্রকাশ করেন ‘সমাচার চন্দ্রিকা’। রক্ষণশীল হিন্দুসমাজের মুখপত্র হিসাবে পত্রিকাটি সপ্তাহে দুই দিন প্রকাশিত হত। প্রমথনাথ শর্ম্মণ ছদ্মনামে রচনা করেন তার বিখ্যাত গদ্যগ্রন্থ নববাবু বিলাস। [1]
কলিকাতা কমলালয় (১৮২৩) ও নববাবুবিলাস (১৮২৫) গ্রন্থদুটিতে তার আক্রমণের লক্ষ্য ছিল কলকাতার বাবু কালচার ও নব্যোদ্ভূত ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী। এছাড়া দূতীবিলাস নামে একটি কাব্য (১৮২৫) ও নববাবুবিলাস-এর দ্বিতীয় পর্ব নববিবিবিলাস (১৮৩১) উল্লেখযোগ্য। এছাড়া শ্রীশ্রীগয়াতীর্থ বিস্তার (১৮৩১), আশ্চর্য্য উপাখ্যান (১৮৩৫) ও পুরুষোত্তম চন্দ্রিকা (১৮৪৪) নামে তিনটি গ্রন্থ রচনা ও হাস্যার্ণব (১৮২২), শ্রীমদ্ভাগবত (১৮৩০), প্রবোধ চন্দ্রোদয় নাটকং (১৮৩৩), মনুসংহিতা (১৮৩৩), ঊনবিংশ সংহিতা (১৮৩৩), শ্রীভগবদ্গীতা(১৮৩৫) ও রঘুনন্দন ভট্টাচার্য কৃত অষ্টাবিংশতি তত্ত্ব নব্য স্মৃতি (১৮৪৮) সম্পাদনা করেন।
সংস্কার বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হওয়ায় নবজাগরণের পরবর্তী পর্যায় থেকেই ভবানীচরণ সমালোচিত ও নিন্দিত হতে থাকেন। তার সাহিত্যের অশ্লীলতার মোড়কে নীতিবাক্য প্রচারের অভিযোগ ওঠে। ডক্টর অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের তার রচনা সম্পর্কে বলেছেন, “‘বাবুর উপাখ্যান’ বা ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যঙ্গ আখ্যানগুলি অর্ধশিক্ষিত ধনী সন্তানদের কুৎসিত আমোদ-প্রমোদের কথা সাধুভাষায় বলা হলেও উদ্দেশ্যটি তত সাধু ছিল না। বাইরের দিক থেকে এসব নকশায় রঙ্গকৌতুক, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও গল্পের আমেজ থাকলেও ভিতরে ছিল ‘পর্নো’ (porno)-কেচ্ছা-কেলেংকারি। সমাজের কুরীতি দেখিয়ে সভ্যভব্য মানসিকতা সৃষ্টি, এই জন্যই ভবানীচরণ ও অন্যান্য নকশাকারেরা কলম ধরেছিলেন; কিন্তু রোগের চেয়ে ঔষধই হয়েছিল প্রাণঘাতী।” [2]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.