Loading AI tools
হিন্দু কলেজ কলকাতা থেকে নির্গত হওয়া চরমপন্থী বাঙালি মুক্ত চিন্তাবিদদের একটি দল উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইয়ং বেঙ্গল হল হিন্দু কলেজের ছাত্রদেরকে সমসাময়িক কলকাতা সমাজ কর্তৃক প্রদত্ত সামাজিক বুদ্ধিবাদী একটি অভিধা বিশেষ। তাঁরা সবাই হিন্দু কলেজ এর মুক্তবুদ্ধি যুক্তিবাদী শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও-র অনুসারী ছিলেন।[1] হিন্দু কলেজে ডিরোজিও-র কর্মকাল ছিল ১৮২৬ সাল থেকে ১৮৩১ সাল। ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদেরকে জীবন ও সমাজ-প্রক্রিয়ার প্রতি যুক্তিসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করার শিক্ষা দিয়েছিলেন। তিনি শিখিয়েছিলেন কি করে সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহ গড়ে উঠে ও বিকশিত হয় এবং কী করে মানুষ মৃত ও সেকেলে ধ্যান-ধারণা ও সমাজ-সংগঠনের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ছাত্রদেরকে জ্ঞানানুরাগী হতে এবং যে কোনো অন্ধবিশ্বাস পরিত্যাগ করতে দীক্ষা দিয়েছিলেন ডিরোজিও। এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত ছিল ইতিহাস আর দর্শন। তাঁর পুনরাবৃত্ত উপদেশ ছিল ‘সত্যের জন্য বাঁচা, সত্যের জন্য মরা’। ১৮২৮ সালে প্রকাশিত হয়। এর ফলে উনবিিংশ শতকে কলকাতায় হিন্দু কলজের অধ্যাপক ডিরোজিওর নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু হয়
ডিরোজিও-র প্রিয় ছিলেন হিন্দু কলেজের একদল বুদ্ধিদীপ্ত ছাত্র। এঁদের মধ্যে [2]
এঁরা সবাই ছিলেন মুক্তচিন্তা দ্বারা উজ্জীবিত। হিন্দু সমাজের বিদ্যমান সামাজিক ও ধর্মীয় কাঠামো এঁদেরকে বিদ্রোহী করে তুলেছিল। প্রাচীন ও ক্ষয়িষ্ণু প্রথা তথা ধর্মীয় সংস্কার ও সামাজিক শৃঙ্খলমুক্তির উল্লেখযোগ্য প্রয়াস হিসেবে ইয়ং বেঙ্গল-এর সদস্যগণ মদ্যপানে আনন্দবোধ করতেন। হিন্দুদের কুসংস্কার আর কতিপয় নিষ্ঠুর সামাজিক ও ধর্মীয় আচারের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টান মিশনারিগণ যে সকল যুক্তি ব্যবহার করতেন, ইয়ং বেঙ্গল-এর অনেক সদস্য সেসব যুক্তিকে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করতেন। দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় ও কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এঁদের অনেকই হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন।
১৮২৮ সালে ডিরোজিও ও তাঁর ছাত্রেরা ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’ গঠন করেন। এ অ্যাসোসিয়েশন বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠান করত। অ্যাসোসিয়েশনের সভায় প্রচুর জনসমাগম হতো। মাঝেমধ্যে বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট গুণীজনও উপস্থিত হতেন। ডিরোজিও-র ছাত্রেরা ভলতেয়ার, হিউম, লক, টমাস পেইন প্রমুখের রচনাবলি গভীর অভিনিবেশে অধ্যয়ন করতেন এবং বিতর্ককালে এঁদের রচনা প্রায়শ উদ্ধৃত করতেন।
১৮৩৮ সালে এঁদেরই স্থাপিত আরেকটি সংগঠনের নাম ‘সোসাইটি ফর দি অ্যাকুইজিশন অব জেনারেল নলেজ’। তারাচাঁদ চক্রবর্তী ছিলেন এ সোসাইটি-র সভাপতি এবং প্যারীচাঁদ মিত্র ও রামতনু লাহিড়ী ছিলেন এর সম্পাদক।
ডিরোজিও ও তাঁর শিষ্যেরা ১৮২৮ এবং ১৮৪৩ সালের মধ্যে বেশ কিছু সাময়িকী প্রকাশ করেন। এসব পত্র-পত্রিকার মধ্যে ছিল পার্থেনন, হেস্পারাস, জ্ঞানাম্বেষণ, এনকোয়েরার, হিন্দু পাইওনিয়ার, কুইল এবং বেঙ্গল স্পেক্টেটর।
হিন্দু ধর্মের উপর আক্রমণের পাশাপাশি ইয়ং বেঙ্গল ঔপনিবেশিক সরকার সূচিত পাশ্চাত্যকরণ প্রক্রিয়াকেও জোরালোভাবে সমর্থন করে। ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনকে উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণের সর্বাপেক্ষা বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। নিন্দা ও প্রশংসা দুই-ই ইয়ং বেঙ্গল-এর সদস্যরা পেয়েছিলেন। এদেশে পাশ্চাত্য চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রচলনের পেছনে যে উদ্যোগ কাজ করে তাতে ইয়ং বেঙ্গল সরাসরি জড়িত ছিল। এ প্রয়াস থেকেই ১৮৩৫ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইয়ং বেঙ্গল শবব্যবচ্ছেদ বিষয়ে প্রচলিত সংস্কার ভেঙে ফেলার জন্য মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের উৎসাহিত করে। কোনো কোনো পণ্ডিতের মতে ইয়ং বেঙ্গল-এর বিদ্রোহীরাই বাংলার নবজাগরণের অগ্রদূত। এ জাগরণে ইয়ং বেঙ্গল-এর অবদান সংশয়াতীত। ইয়ং বেঙ্গল ইংরেজিকে অফিস-আদালতের ভাষা হিসেবে প্রবর্তনের সমর্থক ছিল। কলকাতায় কতিপয় গণপাঠাগার স্থাপনের বিষয়টিকে তারা স্বাগত জানায়। পাশ্চাত্যের প্রতি অন্ধ আনুগত্যই ছিল ইয়ং বেঙ্গল-এর সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। প্রাচ্য জীবনচর্চাকে তারা কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনে করত। এ বিশ্বাস থেকে তারা পাশ্চাত্য রীতি-নীতি অভ্যাসকে বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করে, যদিও এ-ক্ষেত্রে তারা সর্বাংশে সফল হতে পারে নি। সবচেয়ে বড় কথা, পাশ্চাত্য প্রীতির ফলে তারা এদেশের সাধারণ মানুষের চোখে, সর্বোপরি তাদের অভিভাবকদের চোখে ঘৃণার পাত্র হয়ে পড়ে। মুক্তচিন্তা ও নৈব্যক্তিক জিজ্ঞাসার তাৎপর্য অনুধাবন করার মতো পরিপক্বতা ইয়ং বেঙ্গল-এর ছিল না। পাশ্চাত্য সভ্যতা সম্পর্কে অসম্পূর্ণ জ্ঞান এবং প্রাচ্য সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে তারা প্রথমদিকে বাংলার কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে হেয় প্রতিপন্ন করেছিল। পরবর্তী সময়ে অবশ্য তাঁরা বাংলা ভাষা সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য স্বাক্ষর রাখতে সমর্থ হয়েছিলেন। প্যারিচাঁদ মিত্রের কলম থেকে বের হয়ে এসেছিল প্রথম বাংলা উপন্যাসের খসড়া আলালের ঘরের দুলাল। বাংলা ভাষায় পত্রপত্রিকা সম্পাদনা, বিতর্কসভা (সাধারণ জ্ঞানোপার্জিকা সভা, বেথুন সোসাইটির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন এঁরা), গ্রন্থ প্রকাশ প্রভৃতির মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার পথে এগিয়ে এসেছিলেন ইয়ংবেঙ্গলরা। কৃষ্টদাস পাল ‘Young Bengal Vindicated’ শীর্ষক লিখিত ডিসকোর্সে ইয়ংবেঙ্গলদের সম্পর্কে বলেছিলেন " The blood that boiled within them when in the May flush of youth, having become cool, they have sobered themselves down in their literary habits. They are now the zealous advocates of Bengali." ইযংবেঙ্গলরাই বাংলা সাহিত্য মাইকেলের মতো কবি বা বঙ্কিমচন্দ্রের মতো ঔপন্যাসিকের আগমনপথ রচনা করতে সাহায্য করেছিলেন। এই বিষয়টি নিয়ে কস্তুরী মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.ফিল. গবেষণা করেছেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.