Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বৎস বা বমস্ (পালি ভাষা ও অর্ধমাগধী ভাষায়: বচ্চ, আক্ষরিক অর্থে:"বাছুর" [1])প্রাচীন ভারতের ১৬ মহাজনপদের একটি৷ বৌদ্ধগ্রন্থ "অঙ্গুত্তর নিকায়"- এর উল্লেখ পাওয়া যায়৷ বর্তমান ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের এলাহাবাদ অঞ্চলের গঙ্গা নদী ও যমুনা নদীর সঙ্গমস্থলে ছিল এই প্রাচীন জনপদের অবস্থান[2]৷
বৎস রাজ্য | |
---|---|
৭০০ খ্রিঃ পূঃ–৩০০ খ্রিঃ পূঃ | |
বৈদিক পরবর্তী যুগে উত্তর ভারতের বৎস ও অন্যান্য মহাজনপদ | |
রাজধানী | কৌশাম্বী (বর্তমান কৌশাম্বী জেলা, এলাহাবাদ) |
প্রচলিত ভাষা | সংস্কৃত |
ধর্ম | হিন্দুধর্ম বৌদ্ধ ধর্ম জৈন ধর্ম |
সরকার | রাজতন্ত্র |
ঐতিহাসিক যুগ | ব্রোঞ্জ যুগ, লৌহ যুগ |
• প্রতিষ্ঠা | ৭০০ খ্রিঃ পূঃ |
• বিলুপ্ত | ৩০০ খ্রিঃ পূঃ |
বর্তমানে যার অংশ | এলাহাবাদ বিভাগ , উত্তরপ্রদেশ, ভারত |
বৎস রাজ্যে রাজতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং এর রাজধানী ছিল কৌশাম্বি (এলাহাবাদ শহর থেকে ৩৮ মাইল দূরে অবস্থিত 'কোসাম' গ্রামে এই নগরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে)[2]৷ শাক্যমুনি গৌতম বুদ্ধর সময়কালীন ৬ঠ-৫ম খ্রিস্টপূর্বাব্দে বৎসর শাসক ছিলেন উদয়ন৷ তাঁর মাতা, মৃগবতী ভারতীয় ইতিহাসের প্রথম দিকের একজন উল্লেখযোগ্য নারী শাসক ছিলেন।
বৎসরা ছিল কুরু বংশের একটি শাখা৷ ঋকবৈদিক যুগে কুরু রাজ্য হরিয়ানা/দিল্লি এবং গঙ্গা-যমুনা দোয়াব অঞ্চল থেকে প্রয়াগ/কৌশাম্বী অবধি বিস্তৃত ছিল এবং এর রাজধানী ছিল হস্তিনাপুর। বৈদিক যুগের অন্তিমকালে হস্তিনাপুর বন্যার কারণে ধ্বংস হয়ে যায় এবং কুরু রাজা নিকাক্ষু তার পরিজন ও বিষয়াদি সহ কৌশাম্বি নামক নতুন স্থানে তার রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। বৈদিক পরবর্তী সময়ে, যখন বহু মহাজনপদের সমন্বয়ে আর্যাবর্ত গঠিত হয়, তখন কুরু রাজবংশ, কুরু এবং বৎস-এই দুইভাগে বিভাজিত হয়। হরিয়ানা/দিল্লি/উচ্চ দোয়াব অঞ্চল কুরুদের অধীন ছিল এবং বৎসরা নিম্ন দোয়াব অঞ্চলের শাসন নিয়ন্ত্রণ করত। পরবর্তীকালে বৎসরা আরো দুটি শাখায় বিভাজিত হয়েছিল যাদের মধ্যে একটি মথুরা ও অপর শাখাটি কৌশাম্বি অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে৷
পুরাণে বলা হয়েছে যে গঙ্গার প্রবল বন্যা হস্তিনাপুরকে গ্রাস করার পরে, রাজা জন্মেজয়ের মহান পৌত্র, ভরত রাজা নিকাক্ষু নগর ত্যাগ করেন এবং কৌশাম্বীতে স্থায়ী হন। তৎকালীন কবি ভাসের লিখিত নাটক "স্বপ্নবাসদত্তা" এবং "প্রতিজ্ঞা-যৌগন্ধ্যরায়ণ"-এও একই বিবরণ দেওয়া হয়েছে৷ উভয় লেখনীতেই রাজা উদয়নকে রাজা ভরতের (ভরত কূল) বংশধর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ পুরাণে নিকাক্ষুর উত্তরসূরিদের একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে যার সর্বশেষ অন্তর্ভুক্ত নামটি হল রাজা "ক্ষেমক"-এর[3]:p.১১৭–৮৷ অন্যান্য পুরাণ অনুযায়ী, বৎস রাজ্যের নাম কাশীর রাজা বৎসর নামে রাখা হয়েছিল৷[4] অপরপক্ষে রামায়ণ ও মহাভারত অনুযায়ী রাজধানী কৌশাম্বী প্রতিষ্ঠার শ্রেয় 'কুশ' বা 'কৌশম্ব' নামধারী এক চেদি রাজপুত্রকে দেওয়া হয়৷
ইনি বৎসরাজ্যের ভরত রাজবংশের প্রথম শাসক যার সম্পর্কে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য পাওয়া গেছে৷ পুরাণ অনুসারে তাঁর পিতার নাম ছিল বসুদন্ কিন্তু কবি ভাসের কথন অনুযায়ী তার পিতা ছিলেন সহস্র্নক। রাজা শতনিক (শতনিক ২য়) বিদেহ রাজ্যের এক রাজকন্যাকে বিবাহ করেন যিনি ছিলেন উদয়নের মাতা৷ তিনি লিচ্ছবির এক সর্দারের কন্যা মৃগবতীকেও বিবাহ করেন[5]৷ রাজা দধীবাহনের শাসনকালে তিনি অঙ্গের রাজধানী চম্পা আক্রমণ করেছিলেন[3]: p.১১৯।
রাজা শতনিকের স্ত্রী এবং রাজা উদয়নের মাতা ছিলেন রানী মৃগবতী (সংস্কৃত ভাষায়) বা মিগবতী (প্রাকৃত ভাষায়)৷ তিনি বৈশালীর নৃপতি চেতকের কন্যা ছিলেন[6]। জানা যায় যে, তিনি কিছু সময়ের জন্য তার পুত্রের হয়ে রাজপ্রতিনিধি হিসাবে শাসন করেছিলেন, যদিও এসম্পর্কে ভিন্নমত আছে৷ জৈন ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে, উদয়ন নাবালক থাকাকালীন রাজা শতনিকের মৃত্যু হয়, সুতরাং যতক্ষণ না তার পুত্র পরিণতবয়স্ক এবং রাজ্যচালনায় সক্ষম হয়ে ওঠেন ততদিন রানী মৃগবতী রাজ্যচালনার ভার বহন করেন[7]৷ অপরপক্ষে ভাসের "প্রতিজ্ঞা-যৌগন্ধ্যরায়ণ" অনুযায়ী যখন অবন্তীর রাজা প্রদ্যোত রাজা উদয়নকে বন্দি করে রেখেছিলেন তখন রানী মৃগবতী রাজ্যের সম্পূর্ণ শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন এবং যে কুশলতার সঙ্গে তিনি এই দায়িত্ব সম্পন্ন করেছিলেন তা তৎকালীন অভিজ্ঞ মন্ত্রীদেরও প্রশংসা পেয়েছিল[8]৷
শতনিক ২য়-র শাসনকাল শেষ হওয়ার পরে তার পুত্র উদয়ন রাজ্যভার গ্রহণ করেন৷তিনি ছিলেন রাজা শতনিক ২য় এবং তার রানী বৈদেহী রাজকন্যার পুত্র৷ভাসের স্বপ্নবাসবদত্তা এবং প্রতিজ্ঞা-যৌগন্ধ্যরায়ণ সহ তৎকালীন বহু কিংবদন্তি ও লেখনী, যেমন "বুদ্ধ ও প্রদ্যোত" -এ তার উল্লেখ পাওয়া যায়[3]: p.১১৯৷ কথাসরিৎসাগরে তাঁর বিজয়ের দীর্ঘ বিবরণ রয়েছে।"প্রিয়দর্শিকা" গ্রন্থে তার কলিঙ্গ রাজ্যবিজয় এবং অঙ্গের সিংহাসনে রাজা দ্রধবর্মনকে পুনরায় আসীন করার ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণী দেওয়া হয়েছে৷
"ধম্মপদ" গ্রন্থে অবন্তীর রাজা প্রদ্যোতের কন্যা বাসবদত্তা বা বসুলদত্তার সাথে তাঁর বিবাহের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। এতে তাঁর আরো দুই স্ত্রী, কুরু ব্রাহ্মণের কন্যা মগ্নদিয়া এবং কোষাধ্যক্ষ ঘোষকের পালিত কন্যা সামবতীর উল্লেখ রয়েছে। "মিলিন্দপন্থ" গ্রন্থে এক কৃষক কন্যা গোপাল-মিতার উল্লেখ আছে যাকে তিনি স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। ভাসের স্বপ্নবাসবদত্তায় তার আরেক স্ত্রী পদ্মাবতীর উল্লেখ আছে যিনি তৎকালীন মগধসম্রাট দর্শকের ভগিনী ছিলেন৷ প্রিয়দর্শিকায় অঙ্গরাজ দ্রধবর্মনের কন্যা আর্য্যাংকার সাথে তার বিবাহের উল্লেখ আছে৷ রত্নাবলী গ্রন্থে তার প্রধান রানী বাসবদত্তার পরিচারিকা সাগরিকার সাথে তার প্রেমসম্পর্কের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে৷ রাজা উদয়ন এবং তার প্রধান রাণীর সন্তানের নাম ছিল বোধি[3]: pp.১৭৯–৮০৷
রাজা উদয়নের শাসনকালে শাক্যমুনি গৌতম বুদ্ধ বহুবার কৌশাম্বি আগমন করেন এবং বৌদ্ধধর্মের "আর্যঅষ্টাঙ্গ মার্গ" এবং "চার আর্যসত্যের" প্রচার করেন৷ উদয়ন নিজে ছিলেন বুদ্ধের উপাসক৷ বৌদ্ধধর্মের প্রথাগত চীনা অনুবাদ "একোত্তর আগম" অনুসারে, বুদ্ধের প্রথম নশ্বর মূর্তি রাজা উদয়নের আজ্ঞা অনুসারেই প্রস্তুত হয় এবং এই মূর্তি চন্দনকাঠের উপর খোদিত ছিল৷ রাজা প্রদ্যোতের প্রপৌত্র মণিপ্রভ অবন্তীর রাজপুত্র হিসাবে কৌশাম্বি শাসন করেছিলেন
পুরাণ অনুসারে রাজা উদয়নের ৪ জন উত্তরসূরীর নাম ছিল বাহিনী, দণ্ডপাণি, নিরমিত্র এবং ক্ষেমক৷ পরবর্তীকালে অবন্তী রাজ্যের দ্বারা বৎস রাজ্যের অধিগ্রহণ হয়৷ রাজা প্রদ্যোতের প্রপৌত্র মণিপ্রভ অবন্তীর রাজপুত্র হিসাবে কৌশাম্বি শাসন করেছিলেন[3]: pp.১৮০, ১৮০n, facing ৫৬৫৷
উত্তরকালে বৎসরাজ্য শিশুনাগবংশীয়দের দ্বারা চূড়ান্তভাবে অধিগ্রহিত এবং মগধ-এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়[9]৷
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.