Loading AI tools
বাংলাদেশি সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বেবী মওদুদ (ইংরেজি: Baby Moudud) (জন্ম: ২৩শে জুন, ১৯৪৮[1] - মৃত্যু: ২৫শে জুলাই, ২০১৪)[2] ছিলেন একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশী সাংবাদিক, লেখক এবং রাজনীতিবিদ।[3] তিনি নারী অধিকার আন্দোলনের অন্যতম একজন নারী সংগঠক ও বিশ্লেষক এবং কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (সিজেএ) ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস ছিলেন। বেবী মওদুদ ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের একজন সংসদ সদস্য[4][5] এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বা দশম জাতীয় সংসদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বাল্য বন্ধু ও সজ্জন।[6] এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেবী মওদুদের হৃদ্যতা পূর্ণ সম্পর্ক ছিল।[6]
বেবী মওদুদ | |
---|---|
জন্ম | আ এ এন মাহফুজা খাতুন (বেবী মওদুদ) ২৩ জুন ১৯৪৮ |
মৃত্যু | ২৫ জুলাই ২০১৪ ৬৬) | (বয়স
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | সাংবাদিক, লেখক এবং রাজনীতিবিদ |
কর্মজীবন | ১৯৬৭-২০১৪ |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | শেখ মুজিবের 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' |
দাম্পত্য সঙ্গী | মোঃ হাসান আলী |
সন্তান |
|
পিতা-মাতা |
|
বেবী মওদুদ ছিলেন অদম্য বাঙালি ও জাতীয়তাবাদী।[7] বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকতাসহ শিশু কিশোরদের নিয়েও প্রচুর লেখালেখি করেছেন। তাকে শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও অনেকে মনে করে থাকেন।[8] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত হন এবং নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা আসনে সংসদের ৩৫০ ও সংরক্ষিত – ৫০ আসনের (ঠাকুরগাঁও – ৩) সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[9][10]
১৯৪৮ সালের ২৩শে জুন কলকাতার বর্ধমান জেলায় বেবী মওদুদ জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম এ এন মাহফুজা খাতুন হলেও তাকে সবাই বেবী মওদুদ নামে চেনেন। তার পিতা 'আবদুল মওদুদ' ছিলেন পাকিস্তান সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বা বিচারপতি।[11] আবদুল মওদুদ পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি শহরে থাকতেন এবং ইসলামাবাদে গিয়ে অফিস করতেন। বেবীর মাতার নাম 'হেদায়েতুন্নেসা' ছিলেন গৃহবধূ। ছয় ভাই এবং তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।[12]
জন্মের সময় আকিকা দিয়ে তার নাম রাখা হয় আফরোজা নাহার মাহফুজা খাতুন। জন্মের পর তার মা তাকে বেবী জনসন পাউডার মাখাতেন, সেটা দেখে তার বড় ভাই তাকে বেবী বলে ডাকতে শুরু করে। এত বড় নাম ভালো লাগত না বলে বড় হয়ে লেখালেখি করতে এসে তিনি নিজেই নিজের নাম বেবী মওদুদ রাখেন। বেবী মওদুদ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মারজি-উল হকের ছোট বোন।[13]
ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে ঠাকুরগাঁও জেলার সাংবাদিক হাসান আলীর সাথে বেবী মওদুদের বিয়ে হয়। হাসান আলী দৈনিক সংবাদের একজন অভিজ্ঞ রিপোর্টার ছিলেন। পরবর্তীতে হাসান আলী মুখ্য রিপোর্টার, নগর সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক হয়েছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশের একজন সাম্যবাদী দলের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ সালে চারটি বাদে সব পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে আইন পেশায় মনোনিবেশ করেন।
১৯৮৫ সালের এপ্রিল মাসে স্বামী অ্যাডভোকেট মো. হাসান আলীর অকাল মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে বেবী মওদুদ নিজেই তার দুই পুত্র রবিউল হাসান অভী ও শফিউল হাসান দীপ্তর সম্পূর্ণ দায়িত্ব নেন এবং নতুন করে জীবন-সংগ্রাম শুরু করেন। কিন্তু নীতি ও আদর্শ থেকে তিনি কখনও বিচ্যুত হননি।[14]
১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে অনার্সসহ ১৯৭১ সালে মাস্টার্স সম্পূর্ণ করেন তিনি।[15] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রাবস্থায় তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে জড়িত হন।[16] নারীর অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে একনিষ্ঠ, সমাজসেবায় অগ্রণী, সাহিত্য সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ কিংবা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা সত্ত্বেও বেবী মওদুদ ছিলেন মূলত পেশাদার সাংবাদিক।[17]
মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার সময়কালীন বেবী মওদুদ পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য হিসেবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পূর্বে ১৯৬৭-৬৮ সাল পর্যন্ত রোকেয়া হলের ছাত্রী সংসদের সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।[18]
১৯৬৭ সাল থেকে পেশাগত জীবনে সাংবাদিকতায় জড়িত বেবী মওদুদ দৈনিক সংবাদ, সাপ্তাহিক ললনা, দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক মুক্তকন্ঠে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। বিবিসির বাংলা বিভাগের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বাংলা বিভাগ গড়ে তোলার প্রসঙ্গে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।[19] নতুন কলেবরে যখন সাপ্তাহিক বিচিত্রা প্রকাশিত হয় তখন তিনি এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুকাল পর্যন্ত অনলাইন নিউজপোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে সোস্যাল অ্যাফেয়ার্স সম্পাদক ছিলেন বেবী মওদুদ।[20] এই সাময়িকীর সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ রেহানা।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাবতীয় আন্দোলনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি ছিলেন ঘনিষ্ঠ সহযোগী। অতীতের সমস্ত প্রতিবন্ধকতায় বেবী মওদুদ পথভ্রান্ত না হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অটল আস্থা রেখেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকের শেষ এবং ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে পাকিস্তানের করাচীতে বেবী মওদুদ জাতিসংঘের নতুন স্থায়ী প্রতিনিধি ড: এ কে এম আব্দুল মোমেনের সাথে বাংলাদেশের নারী ও শিশু পাচার বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করেন।[21] নব্বইয়ের দশকে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে হত্যাকারী-দালাল নির্মূল কর্মিদলের বিভিন্ন আন্দোলনেও বিক্ষুব্ধ ছিলেন বেবী মওদুদ।
২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংসদ সদস্য মনোনীত হোন।[22][23] বাংলাদেশের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং লাইব্রেরি কমিটির সদস্য হিসেবেও তিনি কার্যভার পালন করেন।[24] সাংবাদিকতার পাশাপাশি রকমারি বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখিতে লিপ্ত ছিলেন বেবী মওদুদ। তিনি কয়েকটি শিশুতোষ ও আত্মকথন গ্রন্থ রচনা করেছেন। নারী মুক্তির অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সম্পর্কে তার সম্পাদনায় ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত 'রোকেয়া চিরন্তনী প্রতিকৃতি' গ্রন্থ বাংলা সাহিত্যের সম্পদ।[25] বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ সম্পাদনাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বইও রয়েছে তার। বেবী মওদুদের অর্থানুকূল্যে ২০০০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে 'ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক' গ্রন্থের প্রথম সংস্করণ, ২০০৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে দ্বিতীয় সংস্করণ এবং তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে ২০১২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে। সারা জীবন তিনি মানবতার একনিষ্ঠ সাধনা করেছেন।[26] প্রতিবন্ধীসহ সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বেবী মওদুদের।[27]
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটি সংস্করণের ক্ষেত্রেও বেবী মওদুদের ভূমিকা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। তিনি শিশুদের জন্য বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। সেগুলো হলো : দীপ্তর জন্য ভালবাসা, পবিত্র রোকেয়া পাঠ, টুনুর হারিয়ে যাওয়া, শান্তর আনন্দ, এক যে ছিল আনু, আমার রোকেয়া, মুক্তিযোদ্ধা মানিক, কিশোর সাহিত্য সমগ্র, আবু আর তার এবং জল দিয়ে লিখি।
তার রচিত অন্য পুস্তকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো : মনে মনে (ছোট গল্প), শেখ মুজিবের ছেলেবেলা, দুঃখ-কষ্ট ভালবাসা, পাকিস্তানে বাংলাদেশের নারী পাচার, গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তার পরিবার ইত্যাদি। আমাজন ডট কমে তার পাঁচটি বইয়ের উল্লেখ রয়েছে। সেগুলো হলো : আমার রোকেয়া, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ, নিভৃত যত্নে, রোকেয়া : চিরন্তনী প্রতিকৃতি এবং সুশি পুষি টুশি।
|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)|তারিখ=
(সাহায্য)বেশ দীর্ঘদিন ধরে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২৫শে জুলাই, ২০১৪ বাংলাদেশ স্থানীয় সময় শুক্রবার বেলা তিনটায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বেবী মওদুদ।[28][29] মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।[30]
তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গভীরভাবে শোক প্রকাশ করেন।[31][32] এরআগে ১২ জুলাই ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেবী মওদুদকে দেখতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।[33] এ সময় প্রধানমন্ত্রী চিকিৎসকদের কাছে বেবী মওদুদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন।[34] মৃত্যুর সংবাদ শুনে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রধানমন্ত্রী ইউনাইটেড হাসপাতালে যান।[35][36]
ধানমন্ডির শাহী ঈদগাহ মাঠে তার প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় জানাজা হয় জাতীয় প্রেসক্লাবে। শুক্রবার রাতে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে স্বামী অ্যাডভোকেট মো. হাসান আলীর কবরে শায়িত করা হয় বেবী মওদুদকে।[37][38]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.