Loading AI tools
১৯৮৯-এ মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলাদেশী লোককাহিনী নির্ভর চলচ্চিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বেদের মেয়ে জোস্না হলো তোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ১৯৮৯ সালের বাংলাদেশী চলচ্চিত্র। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ এবং তার বিপরীতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যবসাসফল ছায়াছবি। চলচ্চিত্রটির সফলতার ধারাবাহিকতায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পুননির্মাণ করে মুক্তি দেওয়া হয়। মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ এবং চিরঞ্জীত।
বেদের মেয়ে জোস্না | |
---|---|
পরিচালক | তোজাম্মেল হক বকুল |
প্রযোজক | আব্বাস উল্লাহ শিকদার |
রচয়িতা | তোজাম্মেল হক বকুল |
শ্রেষ্ঠাংশে | ইলিয়াস কাঞ্চন অঞ্জু ঘোষ মিঠুন ফারজানা ববি সাইফুদ্দিন নাসির খান শওকত আকবর প্রবীর মিত্র রওশন জামিল দিলদার |
সুরকার | আবু তাহের |
চিত্রগ্রাহক | জাকির হোসেন |
সম্পাদক | ফজলে হক |
পরিবেশক | আনন্দমেলা চলচ্চিত্র |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ২ ঘন্টা ১০ মিনিট |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
নির্মাণব্যয় | ৳২০ লাখ (তৎকালীন), ৳১.৪ কোটি (২০২২) [1] |
আয় | ৳২৫ কোটি (তৎকালীন), ৳১৭৮ কোটি (২০২২)[2] |
বঙ্গরাজের এক পরগনার কাজী সাহেবের (প্রবীর মিত্র) একমাত্র দশ বছরের মেয়ে জোস্নাকে সাপে কাটে। তাকে বাঁচানোর সকল চেষ্টা ব্যর্থ হলে কলার ভেলায় একটি চিঠি দিয়ে ভাসিয়ে দেয়া হয় নদীতে। ভাসতে ভাসতে সেই ভেলা নদীর তীরের একটি বেদে বহরের কাছে এসে থামে। বেদে বহরের নিঃসন্তান বেদে সর্দার (সাইফুদ্দিন) তাকে ভালো করে তোলে এবং জোস্না নামেই নিজের নাতনির মতো একজন পেশাদার বেদেনি হিসেবে গড়ে তোলে। জোস্না (অঞ্জু ঘোষ) একদিন রাজবাড়ি থেকে সাপখেলা দেখিয়ে ফেরার পথে বঙ্গরাজের উজিরপুত্র “মোবারক” (নাসির খান) জোস্নার সম্মানহানি করতে চায়, আর এমন সময় রাজকুমার “আনোয়ার” (ইলিয়াস কাঞ্চন) এসে তাকে উদ্ধার করে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্য গভীর প্রেম হয়ে যায়। বঙ্গরাজ- তার পুত্র যুবরাজ আনোয়ার সকল বিষয়ে এখন পারদর্শী তাই তিনি ঠিক করে উজিরকন্যা “তারা বানু”কে (ফারজানা ববি) পুত্রবধু করে আনোয়ারের উপর রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব অর্পণ করবেন। ঠিক এমন সময় আনোয়ারকে একটি সাপে কাটে, আর তাকে এমন সাপেই কেটেছে যার বিষ নামাতে কোন ওঝাই রাজি হলো না, যখন প্রায় সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ তখনই সেনাপতি পুত্র “রাজ্জাক” (মিঠুন) জোস্নাকে সাথে নিয়ে আসে। জোস্না তার নিজের জীবন বাজি রেখে আনোয়ারকে সুস্থ করে তোলে, এর আগে বঙ্গরাজ প্রতিশ্রুতি দেয়- জোস্না আনোয়ারকে সুস্থ করতে পারলে সে যা চাইবে, রাজা রাজসভায় সবার সামনে খুশি হয়ে তাকে তাই দিবেন।
এবার চাওয়ার পালা- পূর্ণ রাজসভায় সবার সামনে জোস্না গানের সুরে কী ধন আমি চাইবো রাজা গো... ও রাজ চাই যে রাজকুমারকে কিন্তু রাজার মতে জোস্নার চাওয়ার পরিমাণ এতই বেশি যে তাকে পুরস্কারতো দূরের কথা শেষ পর্যন্ত তিরস্কার করে কপালে রক্ত ঝরিয়ে রাজসভা থেকে বের করে দেয়। এবং বেদে বহরের সব ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তাড়িয়ে দেয় রাজ্য থেকে, এদিকে আনোয়ার এই ঘটনা মায়ের কাছে জানতে পেরে জোস্নাকে খুঁজতে বেরিয়ে যায়। খুঁজে পেয়ে জোস্নাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে প্রাসাদে, পিতা বঙ্গরাজের কথা অমান্য করে জোস্নাকে বিয়ে করার অপরাধে বঙ্গরাজ- পুত্র আনোয়ারের মৃত্যুদণ্ড দেন ও পুত্রবধু জোস্নাকে পাঠান বনবাসে। রানীমা নিজ কৌশলে জল্লাদের হাত থেকে পুত্র আনোয়ার ও পুত্রবধু জোস্নাকে বাঁচিয়ে দুজনকে একসাথে বনবাসে পাঠিয়ে দেন। শুরু হয় তাদের বনবাস জীবন। জোস্নার চেয়ে খাবার খেতে চায় না আনোয়ার, সে চায় নিজে কোনো কাজ করবে এবং রাজপুত্র হয়ে গেল কাঠুরিয়া।
দুজনের দিন ভালই যাচ্ছিলো, হঠাৎ একদিন নরসুন্দরের বেশে আগমন ঘটলো উজিরপুত্র মোবারকের। সে ঐ এলাকার জমিদার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, মোবারক- আনোয়ার ও জোস্নাকে চিনতে পেরে মনে মনে ফন্দি আঁটতে থাকে এবং জমিদার বাড়িতে গিয়ে রাতের আঁধারে কিছু অর্থ ও অলংকার চুরি করে জমিদারের একজন প্রহরীকে হত্যা করেন। তারপর চুরি করা জিনিসপত্র আনোয়ার ও জোস্নার ঘরের পাশে কাঠের স্তুপের মধ্য রেখে আসে। জমিদারের প্রহরী খুন হওয়ায় জোর তালাশ- কে হত্যা করলো তার প্রহরীকে খুঁজতে পাঠালো সব লোক, মোবারক সরাসরি তাদের জানায় এই জঙ্গলে এক তাগড়া জোয়ান স্ত্রী সহ বসবাস করে। জোস্না গেছে ধর্মপিতার (কাজী সাহেবের) কাছে আর এমন সময় জমিদারের প্রহরীরা আনোয়ারকে ধরে নিয়ে যায়, যখন সে জমিদারের প্রশ্নের মুখে তখনই মোবারক রক্ত মাখা খঞ্জর আর চুরি যাওয়া জিনিস পত্র নিয়ে আসে। ফলে বন্দি হয় আনোয়ার, আর জোস্না আনোয়ারকে খুঁজে হয়রান এমনসময় মোবারক তার লালসার শিকার বানাতে চায় তাকে, জোস্না মোবারকের মুখে জ্বলন্ত আগুনের ফুলকি চেপে ধরে পালিয়ে যায়।
এদিকে বঙ্গরাজ যখন পুত্র শোকে কাতর তখন সেনাপতিপুত্র রাজ্জাকের অক্লান্ত পরিশ্রম আর নিষ্ঠা রাজার মন জয় করলে, রাজা তার রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব তুলে দেন রাজ্জাকের হাতে। রানীমা গোপনে রাজ্জাককে জানায় রাজকুমার আনোয়ার এখনো বেঁচে আছে, খুশি হয় রাজ্জাক। এদিকে রাজ্জাকের হাতে রাজ্যের দায়িত্ব তুলে দেয়ায় লোভী উজির তার কন্যা তারা বানুকে রাজ্জাকের সাথে বন্ধুত্ব করতে বলে। কিন্তু তারা ক্ষোভে দুঃখে আত্মহত্যা করতে গেলে রাজ্জাক তাকে বাঁচায় এবং জানায় রাজকুমার আনোয়ার এখনো বেঁচে আছে। ঘটনাচক্রে প্রেম হয়ে যায় ওদের, রাজ্জাক তারা বানুকে ছেলে সাজিয়ে তারকা নাম দিয়ে রাজকুমারের খোঁজে তার মামা জমিদারের কাছে পাঠায়। জমিদার সাহেব তারাকে ছেলে হিসেবে পেয়ে খুশি হয়, জমিদারের কারাগারে বন্দি থাকা আনোয়ার একবুক কষ্ট নিয়ে গেয়ে উঠে- মা... আমি বন্দি কারাগারে আছিগো মা বিপদে বাইরের আলো চোখে পড়ে না। গান শুনে তারা বেরিয়ে কারাগারের কাছে এসে রাজকুমারকে বন্দি থাকতে দেখে কষ্টে বুক ভেঙে যায় তার। সে মহারাজ জানাতে চাইলে আনোয়ার বাধা দিয়ে বলে আগে আমার জোস্নাকে খুঁজে বের করো।
শুরু হয় আনোয়ারের অপরাধের বিচারকার্য বিচারক কাজী সাহেব আনোয়ারকে হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আসে তার ধর্মমেয়ে (জোস্না) অনুনয় বিনয় করে স্বামীকে ছেড়ে দিতে। কাজী সাহেব জোস্নাকে বলেন, মা এটা বিচারালয় আর বিচারালয়ের বিচারকার্য কোনো আবেগের কথা গ্রহণযোগ্য না। তারা একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে রাজকুমার সম্বোধন করলে কাজী সাহেব জানতে চায় কে রাজকুমার, আনোয়ার; বঙ্গরাজের পুত্র শুনে বিশ্বাস করেন না তিনি। এদিকে তারার পাঠানো বার্তায় রাজ্জাকের মাধ্যমে বঙ্গরাজ তার পুত্র আনোয়ার বেঁচে আছে এবং তারই রাজ্যের অধীনে একটি পরগনার জমিদারের কারাগারে হত্যার দায়ে বন্দি জানতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে রওনা দেন সেখানকার উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছেই পুত্রকে বিচারালয়ে দেখে বুকে জড়িয়ে নেন তিনি, এবং শ্যালক কাজী সাহেবকে নির্দেশ দেন রাজকুমারকে মুক্তি দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিচারক জানিয়ে দেন রাজকুমার যে নির্দোষ এটা প্রমাণ করতে না পারলে মুক্তি দেবেন না রাজকুমারকে এবং এটাই তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, এমন সময় রাজ্জাক উজিরপুত্র মোবারককে ধরে নিয়ে আসে এবং সে সব দোষ স্বীকার করে নেয়।
বিচারালয়ে হাজীর জোস্নার দাদা-দাদী, জোস্না কাজী সাহেবকে বাবা বলে ডাকলে তার পালনকারী দাদা-দাদী বলে; বাবা এলো কোথা থেকে আমরা তো তোকে সাপে কাটা অবস্থায় নদীতে একটি কলার ভেলায় ভাসানো অবস্থায় পেয়েছিলাম। শুনে চমকে উঠে কাজী সাহেব জানতে চায় তখনকার কোনো চিহ্ন আছে কি না, ওনারা একটা চিঠি বের করে দেন তার হাতে। কাজী সাহেব চিঠি দেখে চিনতে পারে, জোস্না তার কলার ভেলায় ভাসিয়ে দেওয়া মেয়ে। এরপর সবার মিলনে ইতি ঘটে চলচ্চিত্রটির।
বেদের মেয়ে জোস্না চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন আবু তাহের। এই চলচ্চিত্রে এগারোটি গান রয়েছে। এই এগারোটি গানের মধ্যে দশটি গানের গীত রচনা করছেন ছবির পরিচালক তোজাম্মেল হক বকুল।[3] এই চলচ্চিত্রের গানের অডিও ক্যাসেট মুক্তির পর এক মাসের মধ্য এক লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল।[4] ছবির বেদের মেয়ে জোস্না আমায় কথা দিয়েছে গানটি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়া হাসান মতিউর রহমানের লেখা, মুজিব পরদেশীর কন্ঠে গাওয়া 'আমি বন্দি কারাগারে' গানটি এখনো জনপ্রিয়।[5][6]
ট্র্যাক | গান | কণ্ঠশিল্পী | গীতিকার | নোট |
---|---|---|---|---|
১ | মায়ায় গড়া এই সংসারে | রথীন্দ্রনাথ রায় | তোজাম্মেল হক বকুল | |
২ | ও রানী সালাম বারেবার/পাহাড়িয়া সাপের খেলা | সাবিনা ইয়াসমিন | তোজাম্মেল হক বকুল | |
৩ | এসো এসো শাহাজাদা..গো | সাবিনা ইয়াসমিন ও অ্যান্ড্রু কিশোর | তোজাম্মেল হক বকুল | |
৪ | বেদের মেয়ে জোস্না আমায় কথা দিয়েছে | রুনা লায়লা ও অ্যান্ড্রু কিশোর | তোজাম্মেল হক বকুল | শিরোনাম গান |
৫ | প্রেম যমুনা সাঁতার দিলাম..গো | সাবিনা ইয়াসমিন | তোজাম্মেল হক বকুল | |
৬ | কি ধন আমি চাইবো রাজা..গো | সাবিনা ইয়াসমিন | তোজাম্মেল হক বকুল | |
৭ | ও তুই ডাকলি যারে আপন করে | রথীন্দ্রনাথ রায় | তোজাম্মেল হক বকুল | |
৮ | মেরনা মেরনা জল্লাদ..গো | সাবিনা ইয়াসমিন ম্যাম | তোজাম্মেল হক বকুল | |
৯ | আমারো লাগিয়া..রে বন্ধু | সাবিনা ইয়াসমিন ও অ্যান্ড্রু কিশোর | তোজাম্মেল হক বকুল | |
১০ | ওরে তারা তুই দিলি ধরা | খুরশিদ আলম ও রুনা লায়লা | তোজাম্মেল হক বকুল | |
১১ | মা.. আমি বন্দি কারাগারে | মুজিব পরদেশী | হাসান মতিউর রহমান |
চলচ্চিত্রটি ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের জরিপে বাংলাদেশের সেরা ১০ চলচ্চিত্রের তালিকায় স্থান নেয়।[7]
১৪ ফেব্রুয়ারি,২০১৯ তারিখে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বঙ্গ বিডি, চলচ্চিত্রটির পূনর্নির্মাণের জন্য আনন্দমেলা চলচ্চিত্রের কাছ থেকে স্বত্ব কিনে নেয়।[8][9][10]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.