শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ

বুনো রামনাথ

নবদ্বীপের বিশিষ্ট নৈয়ায়িক, পণ্ডিত ও এবং আদর্শ শিক্ষক। উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

বুনো রামনাথ
Remove ads

রামনাথ তর্কসিদ্ধান্ত, যিনি বুনো রামনাথ হিসেবেই অধিক প্রসিদ্ধ, হলেন অষ্টাদশ শতাব্দীর নবদ্বীপের বিশিষ্ট নৈয়ায়িক, পণ্ডিত ও এবং আদর্শ শিক্ষক।[] তিনি নবদ্বীপে একটি বনে চতুষ্পাঠী স্থাপন করেছিলেন। তাঁর চতুষ্পাঠী বনের মধ্যে অবস্থিত হওয়ায় তাঁকে ‘বুনো’ বলা হতো।[]

দ্রুত তথ্য রামনাথ তর্কসিদ্ধান্ত, স্থানীয় নাম ...
Remove ads

জন্ম ও বংশপরিচয়

রামনাথ অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। ডঃ অলোক কুমার চক্রবর্তীর মতে তিনি ধাত্রিগ্রামের ভট্টাচার্যবংশীয় অভয়রাম তর্কভূষণের পুত্র ছিলেন।[] যজ্ঞেশ্বর চৌধুরী সমুদ্রগড়ে রামনাথের জন্মস্থান হিসেবে বলেছেন।[]

কর্মজীবন

রামনাথ তাঁর পাণ্ডিত্যের অসামান্য খ্যাতি অর্জন করার পর নবদ্বীপে চতুষ্পাঠী স্থাপন করে রামনাথ শিক্ষকতা করতেন।[][] জ্ঞানার্জনের সাধনায় তিনি সবসময় মগ্ন থাকতেই। তাঁর পাণ্ডিত্যের খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পরলে অগণিত ছাত্র তাঁর কাছে শিক্ষা নিতে তাঁর চতুষ্পাঠীতে আসে। তাঁর চতুষ্পাঠীতে প্রসন্নচন্দ্র তর্করত্ন সহ অনেকে শাত্রচর্চা করতেন। তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ধর্ম্মদহ বহিরগাছীর কৃষ্ণনন্দ বিদ্যা-বাচস্পতি সরস্বতী মহারাজ শ্রীশচন্দ্রের সভায় থেকে অন্তর্ব্যাকরণ নাট্য-পরিশিষ্ট নামক গ্রন্থ রচনা করে প্রসিদ্ধ হন।[] রামনাথ খুবই দারিদ্র্যের মধ্যে দিতে টোল চালালেও কখনও রাজ অনুগ্রহ নেননি। নদিয়ারাজ নবদ্বীপে এসে তাঁর দারিদ্র্যের অবস্থা দেখে তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, তাঁর কোন সাংসারিক বিষয়ে অনটন আছে কিনা। তাঁর উত্তরে তিনি বলেন[]-

অর্থাৎ, তাঁর কোন অভাব নেই, ঘরে মোটা চাল আছে আর গাছে তেঁতুল পাতা আছে, সুতরাং উদরপূর্তির কোনও চিন্তা নেই।[]

Remove ads

কিংবদন্তি

কলকাতার মহারাজ নবকৃষ্ণের সভায় এক নৈয়ায়িক দিগবিজয়ের উদ্দেশ্যে আসলে সেখানে একটি সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভায় নবদ্বীপেরপণ্ডিতমণ্ডলী থেকে নৈয়ায়িক শিবনাথ বিদ্যাবাচস্পতি ও বংশবাটীর জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আয়োজিত তর্কসভায় কেউই আগত নৈয়ায়িকের সঙ্গে যুক্তিতে পেরে না উঠলে বুনো রামনাথ সেখানে উপস্থিত হয়ে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে তাঁকে পরাজিত করে নবদ্বীপের ন্যায়চর্চার মান বজায় রাখে। তখন রাজা নবকৃষ্ণ খুশি হয়ে তাঁকে প্রচুর ধনসম্পদ দিতে চাইলে রামনাথ "কাক-বিষ্ঠা" বলে সেগুলো স্পর্শ করেন না। রামনাথ মনে করতেন অর্থই অনর্থের মূল।[]

রামনাথের দারিদ্র্যের পরিচয় তাঁর স্ত্রীর সম্পর্কে প্রচলিত জনশ্রুতি থেকে বোঝা যায়। একবার নদিয়ার রাজমহিষী নবদ্বীপ ঘাটে এলে, রামনাথের স্ত্রী ঘাট থেকে ফেরার সময় তাঁর শাড়ির জল রাজমহিষীর গায়ে লাগলে সে না দাঁড়িয়েই চলে যেতে থাকে। তখন তিনি রেগে যান এবং বলেন- “ভারি তো দু’গাছা লাল সুতো। তার আবার এতো দেমাক। ওই সুতো ছিঁড়তে কতক্ষণ?” তাঁর প্রত্যুতরে সে বলে- “এই লাল সুতো যেদিন ছিঁড়ে যাবে, সে দিন নবদ্বীপ অন্ধকার হয়ে যাবে। ”[১০][]

বুনো রামনাথের ভিটে

Thumb
পণ্ডিত বুনো রামনাথের ভিটা, সেখানে পরবর্তীতে বঙ্গ বিবুধ জননী সভা গড়ে ওঠে

বুনো রামনাথের ভিটেতে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার নবদ্বীপ তথা ভারতের সুপ্রাচীন শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে ওঠে। পাইকপাড়ার রাজা ইন্দ্রচন্দ্র সিংহের সভাপতিত্বে এবং অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মহেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় দেশের পণ্ডিতমণ্ডলী এবং সংস্কৃতের অধ্যাপকদের নিয়ে সংস্কৃত চর্চাকে পুনঃজাগরণের উদ্দেশ্যে বঙ্গ বিবুধ জননী সভা স্থাপন করা হয়েছিল।[১২][১৩] বঙ্গ বিবুধ জননী সভার সম্পাদক অরুন কুমার চক্রবর্তী বলেন-

২০১৯ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক বুনো রামনাথের ভিটে নবদ্বীপের হেরিটেজ স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।[১৫]

Remove ads

সাহিত্যে

রামনাথের রাজঅনুগ্রহ না নেওয়ার কিংবদন্তির উপর ভিত্তি করে দীনবন্ধু মিত্র তাঁর সুরধুনী কাব্যের সপ্তম সর্গে ত্যাগী পুরুষ সম্পর্কে লেখেন-

নারায়ণ সান্যালের ঐতিহাসিক উপন্যাস "রূপমঞ্জরী"তে রামনাথ তর্কসিদ্ধান্ত অন্যতম প্রধান চরিত্র (বইটি তাঁকেই উৎসর্গ করা হয়েছে)[১৮]। এই উপন্যাসে তৎকালীন বাংলা তথা ভারতবর্ষের পণ্ডিতমহলে তাঁর খ্যাতি ও প্রভাব এবং পাশাপাশি তাঁর চরম দারিদ্র্যকে তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত কিংবদন্তিগুলিও বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে উঠে এসেছে । এই উপন্যাসে, প্রধান চরিত্র হটু বিদ্যালঙ্কার (রূপমঞ্জরী) এবং তাঁর পিতার জীবনে রামনাথের পরোক্ষ প্রভাব অনস্বীকার্য (তবে তা কতটা বাস্তবিক এবং কতটা লেখকের কল্পনা, তা নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন)।

Remove ads

তথ্যসমূহ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Remove ads