Remove ads
বিমানবাহী রণতরী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বিমানবাহী রণতরী (ইংরেজি: aircraft carrier) হচ্ছে সমুদ্রে চলমান বিমানঘাটি হিসেবে কাজ করতে সক্ষম এমন যুদ্ধ জাহাজ , যাতে একটি পূর্ন-দৈর্ঘ্যের ফ্লাইট ডেক থাকে এবং এতে যুদ্ধবিমান বহন, অস্ত্রসজ্জিত করণ, উড্ডয়ন এবং পুনরুদ্ধার করার জন্য সুযোগ সুবিধা থাকে।[১] সাধারণত, এটি হল বহরের প্রধান জাহাজ, এটি একটি নৌবাহিনীকে দেশে থাকা বিমানঘাটির ব্যবহার ছাড়াই বিশ্বব্যাপী বিমান শক্তি প্রদর্শনের সক্ষমতা প্রদান করে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে জন্ম নেয়া কাঠের তৈরি বিমানবাহী রণতরী, যা বেলুন মোতায়েনে ব্যবহৃত হত, সময়ের সাথে সাথে বিবর্তিত হয়ে পারমাণবিক শক্তিচালিত যুদ্ধজাহাজে, যা যুদ্ধ বিমান, আক্রমণকারী বিমান, হেলিকপ্টার সহ বিভিন্ন ধরনের আকাশযান বহন করে পরিণত হয়েছে। স্থির-ডানার গানশিপ ও বোমারু বিমান এর মত ভারী বিমান বিমানবাহী রণতরী থেকে উড্ডয়ন করলেও বর্তমানে এদের অবতরণ সম্ভব নয়।
"বিমানবাহী রণতরীর" কোন একটি বিশেষ একক সংজ্ঞা নেই।[২] এবং আধুনিক নৌ-বাহিনী এ ধরনের বিভিন্ন প্রকারের নৌ-যান ব্যবহার করে। বিমানবাহী রণতরী শ্রেণীকরণ করা হয় উপশ্রেণী হিসাবে,[৩] এবং কখনও কখনও কোন বিশেষ স্বতন্ত্র ধরনের নৌ-বিমান পরিবহনে সক্ষম জাহাজ হিসাবে শ্রেণীকরণ করা হয়।[৪] এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার এর শ্রেণিবিভাগ করা যায় তা কোন ধরনের বিমান পরিবহন করছে তার উপরেও এবং কোন ধরনের কাজে নিযুক্ত রয়েছে তার উপরও। এডমিরাল স্যার মার্ক স্টেনহোপ, প্রাক্তন রয়াল নেভির প্রধান বলেছেন, "যদি সহজভাবে বলতে হয়, কৌশলগত দিক থেকে যে সকল উচ্চাভিলাষী দেশ আন্তর্জাতিক প্রভাববিস্তার করতে পারে তাদের বিমানবাহী রণতরী রয়েছে"।[৫]
ফেব্রুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত, বিশ্বের বারটি নৌ-বাহিনীর ৩৭টি কার্যরত বিমানবাহী রণতরী চালু রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেভির ১০টি বৃহৎ নিউক্লিয়ার-পাওয়ারড বিমানবাহী রণতরী রয়েছে (যা সুপারক্যারিয়ার নামে পরিচিত, প্রতিটি প্রায় ৮০টি ফাইটার জেট বহন করতে পারে), যা বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবাহী রণতরী; এর মোট মিলিত ডেকস্পেস অন্য সব দেশের বিমানবাহী রণতরীর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি।[৬] একই সাথে সুপারক্যারিয়ার বহরের পাশাপাশি মার্কিন নৌবাহিনীর আক্রমণ করার জন্য নয়টি উভচর আক্রমণকারী জাহাজ রয়েছে যা মূলত ব্যবহৃত হয় হেলিকপ্টার পরিবহনে (কখনও কখনও এগুলোকে হেলিকপ্টারবাহী রণতরীও বলা হয়), যদিওবা এছাড়াও এগুলো ২০টির মত উল্লম্বভাবে উড্ডয়নক্ষম বা সংক্ষিপ্ত ভূমিত্যাগের এবং অবতরণ ক্ষমতাসম্পন্ন (ভি/এসটিওএল) যুদ্ধবিমান পরিবহন করেতে পারে এবং এই সমমানের হালকা দ্রুতগামী বিমান পরিবহক রয়েছে। চীন, ফ্রান্স, ভারত ও রাশিয়ার প্রত্যেকে মাঝারি আকারের বিমানবাহী রণতরী পরিচালনা করে যা ৩০ থেকে ৫০টি ফাইটার জেট পরিবহনের ক্ষমতাসম্পন্ন, এছাড়াও বিভিন্ন হালকা দ্রুতগামী বিমানবাহী রণতরী, উভচর আক্রমণকারী জাহাজ ও হেলিকপ্টারবাহী রণতরী বিভিন্ন নৌ-বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হয়। ব্রিটেন দুইটি ২৮০ মিটার (৯২০ ফুট) লম্বা বিমানবাহী রণতরী, কুইন এলিজাবেথ-ক্লাস বিমানবাহী রণতরী এবং এইচএমএস প্রিন্স অফ ওয়েলস (আর ০৯) নির্মাণ করছে, যা ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে রয়েল নেভিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শিডিউল রয়েছে।
(দ্রষ্টব্য: কিছু তথ্যসূত্র মতে, এখানে তালিকাভুক্ত কিছু প্রকারভেদকে বিমান বাহকের শ্রেণিবিভাগ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যাবে না)
সবাৱ আগে জেনে ৱাখা ভাল যে বাংলাদেশেৱও একটি ৱনতৱি বানানোৱ জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে ৱেখেছে ৷ একটি দ্রুতগামী পরিবাহক থাকার উদ্দেশ্যে হচ্ছে প্রধান বহরের সঙ্গে কাজ করা এবং সাধারণত এগুলোর আক্রমণাত্মক ক্ষমতাকে ব্যবহার করা হয়। এগুলো হল দ্রুতগতি সম্পন্ন বৃহৎ পরিবাহক। তূলনামূলকভাবে, সাজোয়া জাহাজগুলোকে প্রতিরক্ষা প্রদান করার জন্য সহচর বাহকের উন্নয়ন করা হয়। এগুলো আকারে ছোট এবং ধীর গতিতে কম সংখ্যক বিমান পরিবাহকের সাথে চলে। বেশিরভাগ নির্মিত হয়েছিল বাণিজিক জাহাজের কাঠামোর মত করে বা বাণিজিক বিমান পরিবাহকের ক্ষেত্রে বৃহৎ কার্গো ধারণের ক্ষমতার পাশাপাশি একটি ফ্লাইট ডেক যোগ করা হয়েছে জাহাজের উপরে। হালকা বিমান বাহক হল প্রধান বহরের সাথে যথেষ্ট দ্রুত চালার জন্য, কিন্তু এর ছোট আকারের কারণে বিমান ধারণ ক্ষমতাও হ্রাস পায়। সোভিয়েত যুদ্ধবিমান পরিবাহক যা এখন ব্যবহার করে রাশিয়া আসলে বলা হয়ভারী বিমান ক্রুজার; এই জাহাজগুলো বিভিন্ন আকারের বৃহৎ বাহক হিসাবে বহরে ব্যবহৃত হয়, যার পরিকল্পনা করা হয়েছে একা বা সহচর বাহকের সাথে আক্রমণে যাবার জন্য এবং এটি প্রদান করে একই সাথে শক্তিশালী আত্মরক্ষামূলক অস্ত্রসম্ভার ও ভারী আক্রমণাত্মক মিসাইল যা একটি গাইড করা মিসাইল ক্রুজারের সমতুল্য, যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার পরিবহনের পাশাপাশি।
সারা বিশ্বে চালু থাকা যুদ্ধবিমান পরিবাহকগুলোতে মূলত চার ধরনের কনফিগারেশন দেখা যায়, বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের উপর ভিত্তি করে এই ভাগ করা হয়:
নিমিট্জ ক্লাসটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সাথে পরিষেবা দেওয়ার জন্য দশটি পারমাণবিক চালিত বিমানবাহকবাহকের একটি শ্রেণি। ১ লক্ষ টনের বেশি উত্পাটন মান হওয়ায় এগুলো ও জেরাল্ড আর ফোর্ড-শ্রেণীর বিমান বাহক হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র সুপার ক্যরিয়ার।
বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে বিমান বাহক এবং সংশ্লিষ্ট ধরনের কাজে ব্যবহৃত জাহাজ সনাক্তকারণ চিহ্নের। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত প্যানেন্ট নম্বর যা ব্যবহার করে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি এবং কিছু কমনওয়েলথ দেশ, মার্কিন জাহাজের কাঠামো শ্রেণীকরণ চিহ্ন আরো ব্যবহার করে, ন্যাটো ও অন্যান্য বেশ কিছু দেশ,[৭] এবং কানাডিয়ান কাঠামো শ্রেণীকরণ চিহ্ন।
প্রতীক | উপাধি |
---|---|
সিভি | জেনেরিক যুদ্ধবিমান পরিবাহক |
সিভিএ | আক্রমণাত্নক পরিবাহক |
সিভিএএন | পারমাণবিক শক্তিচালিত আক্রমণাত্নক পরিবাহক |
সিভিই | সহচর পরিবাহক |
সিভিজি | ফ্লাইট ডেক ক্রুজার (প্রস্তাবিত) |
সিভিএইচএ | যুদ্ধবিমান পরিবাহক, হেলিকপ্টার হামলা (অবসরপ্রাপ্ত) |
সিভিএইচই | যুদ্ধবিমান পরিবাহক, হেলিকপ্টার, সহচর, (অবসরপ্রাপ্ত) |
সিভিএল | হালকা যুদ্ধবিমান পরিবাহক |
সিভিএন | পারমাণবিক শক্তিচালিত যুদ্ধবিমান পরিবাহক |
সিভিএস | এন্টি সাবমেরিন সমরাস্ত্র পরিবাহক |
সিভিভি | যুদ্ধবিমান পরিবাহক, মাঝারি (প্রস্তাবিত) |
এলএইচএ |
ল্যান্ডিং হেলিকপ্টার হামলা, এক ধরনের উভচর আক্রমণাত্মক জাহাজ |
এলএইচডি | ল্যান্ডিং হেলিকপ্টার ডক, একটি ধরনের উভচর আক্রমণাত্মক জাহাজ |
এলপিএইচ |
ল্যান্ডিং প্ল্যাটফর্ম হেলিকপ্টার, এক ধরনের উভচর আক্রমণাত্মক জাহাজ |
১৯০৩ সালে আবির্ভাব হওয়া বায়ুর-তুলনায়-ভারী-ফিক্সড-উইং বিমান প্রতি ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেন ইউজিন বার্টন ইলাই, যিনি ১৪ই নভেম্বর ১৯১০ সালে প্রথম পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন করেন একটি কারটিসেস পুশার বিমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর জাহাজ, ক্রুজার ইউএসএস বার্মিংহামের ডেক থেকে যা নোঙ্গর করা ছিল নরফোক নেভি বে ভার্জিনিয়ায়। দুই মাস পর, ১৮ই জানুয়ারি, ১৯১১ সালে, ইলাই তার কারটিসেস পুশার বিমান অবতরণ করান সাঁজোয়া ক্রুজার ইউএসএস পেনসিলভানিয়ার প্ল্যাটফর্মের উপর যা নোঙ্গর করা ছিল সান ফ্রান্সিসকো বেতে। ৯ মে ১৯১২ সালে প্রথম একটি বিমান চলমান একটি জাহাজের ডেক থেকে উড্ডয়ন করে যা ছিল ব্রিটিশ রয়্যাল নেভির এইচএমএস হাইবেরনিয়া।[৮][৯] বিমান পরিবহনে সক্ষম জাহাজ আসে এরপর, ফরাসি জাহাজ ফোউদ্রে ১৯১১। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথমদিকে ইম্পেরিয়াল জাপানি নেভির জাহাজ ওয়াকামিয়া থেকে পরিচালিত হয় বিশ্বের প্রথম সফল জাহাজ থেকে বিমান হামলা:[১০][১১] , ৬ই সেপ্টেম্বর, ১৯১৪ সালে, ওয়াকামিয়া উড্ডয়নকৃত একটি ফরমান বিমান আক্রমণ করে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান ক্রুজার এসএমএস কাইসেরিন এলিজাবেথ কে এবং জার্মান গানবোট জাগুয়ার আক্রমণ করে টসিংটাও এর কাইয়োছোও বে, যার উভয়ি নিস্ফল ছিল।[১২][১৩] প্রথম পরিবাহক-যা বিমান হামলা চালু করে তা ছিল টোন্দ্রেন রেইড জুলাই ১৯১৮ সালে। সাতটি সোপউইথ ক্যামেল বিমান যা উড্ডয়ন করেছিল রূপান্তরিত যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস ফিউরিয়াস (৪৭) থেকে ক্ষতিগ্রস্ত করে টোন্দেরে অবস্থিত জার্মান বিমান ঘাঁটিতে এবং ধ্বংস করে দুইটি জেপেলীন্ বিমানকে।[১৪]
সমতল পৃষ্ঠের জাহাজ উৎপাদনের উন্নয়নের ফলে প্রথম বড় আকারের বহরের জাহাজ গড়ে ওঠে। ১৯১৮ সালে এইচএমএস আরগুরাস হয়ে ওঠে বিশ্বের প্রথম পরিবাহক যা একই সাথে জাহাজ থেকে নৌবাহিনীর বিমান প্রেরণ এবং পুনপ্রহন করতে সক্ষম ছিল।[১৫] এর ফলে ১৯২২ সালের ওয়াশিংটন নৌ চুক্তি হয়, যার অন্তর্ভুক্ত ছিল নতুন ভারী পৃষ্ঠের যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণ, সবচেয়ে সহজ ছিল সেই সকল যুদ্ধবিমান পরিবাহক বানানো যেগুলো ফেলে দেয়া জাহাজ থেকে বানানো হত (বা দায়িত্ব থেকে অবসর প্রাপ্ত জাহাজ থেকে) যেমন বিভিন্ন ধরনের জাহাজ: কার্গো জাহাজ, ক্রুইজার, ব্যাটেলক্রুইজার, বা যুদ্ধজাহাজ। এই পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট যুদ্ধবিমান পরিবাহক যেমন যুক্তরাষ্ট্রের লেক্সিংটন-শ্রেণীর যুদ্ধবিমান পরিবাহক (১৯২৭), জাপানের একাজি, এবং ব্রিটিশ ক্যারেজিয়াস শ্রেণীর। বিশেষায়িত পরিবাহকের বিবর্তন চলছিল একই সাথে, বেশ কিছু নৌবাহিনী ক্রয়ের আদেশ দিয়েছিল এবং যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ করছিল বিশেষ উদ্দেশ্যপূর্ণ যুদ্ধজাহাজের, পরিকল্পনা ছিল, যুদ্ধবিমান পরিবাহক হিসাবে ১৯২০ সালের মাঝামাঝি সময়ের এগুলো চালু করা, ফলে জাহাজ যেমন আইজেএন হোসো (১৯২২), এইচএমএস হেরমেস (১৯২৪), এবং বেরেন (১৯২৭) এর কমিশনিং হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই জাহাজগুলো পরিচিত হয়ে ওঠে বহর বাহক হিসাবে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.