উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বহির্গ্রহ (ইংরেজি ভাষায়: Exoplanet বা Extrasolar planet) বলতে সৌরজগতের বাইরের যে কোনো গ্রহকে বোঝায়। বাংলায় এদেরকে বহিঃসৌরজাগতিক গ্রহ বা বহির্জাগতিক গ্রহ নামেও ডাকা হয়। ১ নভেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত মোট ৪,৮৬৪ টি বহির্গ্রহ পাওয়া গেছে যাদের অবস্থান ৩,৫৯৫ টি গ্রহ জগতে যার মধ্যে ৮০৩ টি গ্রহ জগতে একাধিক গ্রহ রয়েছে।[১] জানা গেছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তারার চারদিকে গ্রহ রয়েছে, যেমন প্রায় অর্ধেক সূর্য-সদৃশ তারার গ্রহ আছে।[২] ২০১২ সালের একটি গবেষণায় জানা গেছে যে, আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথের প্রায় ১০০ বিলিয়ন তারার প্রতিটিতে গড়ে অন্ততপক্ষে ১.৬টি করে গ্রহ আছে।[৩][৪] সে হিসেবে কেবল আকাশগঙ্গাতেই প্রায় ১৬০ বিলিয়ন তারকাবদ্ধ (তারার মহাকর্ষীয় শক্তিতে আবদ্ধ) গ্রহ থাকার কথা।[৩][৪] অন্যদিকে কোন তারার সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ নয় তথা মহাশূন্যে মুক্তভাবে ভাসমান নিঃসঙ্গ গ্রহের সংখ্যা আমাদের ছায়াপথেই হতে পারে প্রায় কয়েক ট্রিলিয়ন। পরিসাংখ্যিকভাবে বলা যায় প্রতিটি প্রধান ধারার তারার জন্য গড়ে ১ লক্ষ মুক্তগ্রহ থাকবে যাদের আকার প্লুটোর চেয়ে বড়।[৫]
অনেক শতাব্দী ধরেই বিজ্ঞানী ও দার্শনিকেরা বহির্গ্রহের সম্ভাব্যতার কথা বিবেচনা করে আসছেন। কিন্তু তাদের সংখ্যা কতো বা সৌরজগতের গ্রহগুলোর সাথে তাদের মিল কতটুকু তা জানার কোন উপায় ছিল না। ঊনবিংশ শতকের শুরু থেকে বেশ কিছু বহির্গ্রহ শনাক্ত করার দাবী উঠে যার সবগুলোই পরবর্তীকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বাতিল করে দিয়েছিলেন। নিশ্চিতভাবে প্রথম বহির্গ্রহ শনাক্ত করা হয় ১৯৯২ সালে, সে বছর পিএসআর বি১২৫৭+১২ নামক পালসারটির চারপাশে বেশ কিছু ভূসদৃশ (টেরেস্ট্রিয়াল) গ্রহ আবিষ্কৃত হয়।[৬] কোন প্রধান ধারার তারাকে আবর্তনকারী প্রথম বহির্গ্রহ শনাক্ত করা হয় ১৯৯৫ সালে, সেটি ছিল পৃথিবীর বেশ কাছে অবস্থিত তারা ৫১ পেগাসি কে চারদিনে একবার আবর্তন করে এমন একটি দানব গ্রহ।[১] সনাক্তকরণ পদ্ধতির উন্নতির কারণে বহির্গ্র আবিষ্কারের হার তারপর থেকে অনেক বেড়েছে। কিছু বহির্গ্রহের ছবি সরাসরি দুরবিন দিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছে যদিও অধিকাংশ বহির্গ্রহই আবিষ্কৃত হয়েছে অরীয় বেগ বা অন্যান্য পরোক্ষ পদ্ধতিতে।[১]
এযাবৎ আবিষ্কৃত অধিকাংশ বহির্গ্রহই বৃহস্পতি বা শনির মত গ্যাসীয় দানব গ্রহ। এর কারণ হতে পারে স্যম্পলিং বায়াস, যেহেতু গ্রহটি যত বড় তাকে পর্যবেক্ষণ করাও তত সহজ। এদের তুলনায় হালকা কিছু বহির্গ্রহও আবিষ্কৃত হয়েছে যাদের ভর পৃথিবীর মাত্র কয়েক গুণ বেশি, এদের সাধারণ নাম দানো-পৃথিবী। আধুনিক পরিসাংখ্যিক হিসাব অবশ্য বলছে দানো-পৃথিবীর সংখ্যা গ্যাস দানবদের চেয়েও বেশি।[৭] সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে পৃথিবীর সমান বা তার চেয়েও ছোট এবং পৃথিবীর মত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বেশ কিছু গ্রহ পাওয়া গেছে।[৮][৯][১০] এছাড়া রয়েছে গ্রহীয় ভরের বস্তু যারা তারার পরিবর্তে কোন বাদামী বামনদের আবর্তন করে, এবং মহাশূন্যে মুক্তভাবে ভাসমান গ্রহ যারা কোন বস্তুকেই আবর্তন করে না, তবে এদের বোঝাতে গ্রহ শব্দটি অনেক সময়ই ব্যবহার করা হয় না।
বহির্গ্রহ আবিষ্কার বহির্জাগতিক প্রাণের সম্ভাবনা বিষয়ে মানুষের আগ্রহ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।[১১] একটি তারার চারপাশে যে অঞ্চলে কোনো গ্রহ থাকলে তাতে প্রাণের বিবর্তন ঘটা সম্ভব সেই অঞ্চলকেই উক্ত তারাটির প্রাণমণ্ডল বলে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি তারার প্রাণমণ্ডলে বহির্গ্রহ আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রাণের বিকাশ যেখানে সম্ভব সেখানে বুদ্ধিমান প্রাণীর বিবর্তনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.