ফিরোজা বেগম
বাংলাদেশী গায়িকা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ফিরোজা বেগম (২৮ জুলাই ১৯৩০ – ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪) বাংলাদেশের প্রথিতযশা নজরুলসঙ্গীতশিল্পী ছিলেন। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে তিনি নজরুল সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাকে বাংলা সঙ্গীতের প্রতীকীরূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ফিরোজা বেগম | |
---|---|
![]() ফিরোজা বেগম | |
জন্ম | গোপালগঞ্জ, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে বাংলাদেশ) | ২৮ জুলাই ১৯৩০
মৃত্যু | ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ৮৪) | (বয়স
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পেশা | কণ্ঠশিল্পী |
পরিচিতির কারণ | নজরুল সঙ্গীতশিল্পী |
দাম্পত্য সঙ্গী | কমল দাশগুপ্ত |
সন্তান | তাহসিন, হামীন ও শাফীন |
পুরস্কার | শেলটেক পদক, স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার, বঙ্গবিভূষণ |
ওয়েবসাইট | www |
জন্ম ও পারিবারিক জীবন
ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে। তার বাবার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং মায়ের নাম বেগম কওকাবুন্নেসা। শৈশবেই তার সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ জন্মে। ১৯৫৪ সাল থেকে কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তের (যিনি বিয়ের আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং নাম কামাল উদ্দিন আহমেদ রাখেন) সঙ্গে তার বিয়ে হয়।[১] ১৯৬৭ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন। কমল দাশগুপ্ত ২০ জুলাই, ১৯৭৪ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। এ দম্পতির তিন সন্তান - তাহসিন, হামিন ও শাফীন রয়েছে। হামিন ও শাফিন - উভয়েই রকব্যান্ড দল মাইলসের সদস্য।
সঙ্গীত জীবন
১৯৪০-এর দশকে তিনি সঙ্গীত ভুবনে পদার্পণ করেন। ফিরোজা বেগম ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গানে কন্ঠ দেন। ১৯৪২ সালে ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ৭৮ আরপিএম ডিস্কে ইসলামী গান নিয়ে তার প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড হয়। এ রেকর্ডের গান ছিল- 'ম্যায় প্রেম ভরে, প্রীত ভরে শুনাউ' আর 'প্রীত শিখানে আয়া'। দশ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। কাজী নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ফিরোজা বেগম নজরুলসঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৮০টির বেশি একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। নজরুলসঙ্গীত ছাড়াও তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত-সহ বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে কন্ঠ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তার ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে।[২]
১৯৭২ সালে কলকাতায় বঙ্গ-সংস্কৃতি-সম্মেলন-মঞ্চে কমল দাশগুপ্তের ছাত্রী ও সহধর্মিণী হিসেবে তিনি ছিলেন মুখ্যশিল্পী। উভয়ের দ্বৈতসঙ্গীত সকল শ্রোতা-দর্শককে ব্যাপকভাবে বিমোহিত করেছিল।[৩]
পুরস্কার ও সম্মননা
শিল্পচর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে দেশের “সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার”[৪][৫][৬] হিসাবে পরিচিত “স্বাধীনতা পুরস্কার” প্রদান করা হয় তাকে।[৭] এছাড়াও তিনি
- একুশে পদক
- নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার
- সত্যজিৎ রায় পুরস্কার
- নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক
- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক
- সেরা নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পুরস্কার (একাধিকবার)
- নজরুল আকাদেমি পদক
- চুরুলিয়া স্বর্ণপদক
- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট
- সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস
- বঙ্গবিভূষণ (২০১৫, মরণোত্তর)[৮]
তিনি জাপানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে গোল্ড ডিস্ক, ২০১১ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন। ১২ এপ্রিল ২০১২ তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছ থেকে "বঙ্গ সম্মান" পুরস্কার গ্রহণ করেন।
২৮ জুলাই ২০১৮ সালে তার ৮৮ তম জন্মদিনে গুগল ডুডল তৈরি করে সম্মননা প্রদান করে।[৯]
মৃত্য কিডনি জটিলতায় ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.