প্রবোধিনী একাদশী
কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
প্রবোধিনী একাদশী বা দেবোত্থান একাদশী হল হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথি। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন শয়নী একাদশী তিথিতে বিষ্ণু নিদ্রা যান এবং তার চার মাস পর এই তিথিতে তিনি নিদ্রা থেকে ব্যুত্থিত হন। এই চার মাসকে চতুর্মাস বলা হয়। প্রবোধিনী একাদশীতে বিষ্ণু জাগরিত হন বলে এই একাদশীকে বিষ্ণু-প্রবোধিনী (বিষ্ণুর জাগরণ) ও দেব-প্রবোধিনী একাদশী, দেবোত্থান, দেব উঠাও একাদশী বা দেব উঠি একাদশী (দেবতার জাগরণ) বলা হয়। হিন্দুমতে, চতুর্মাসে বিবাহ নিষিদ্ধ। তাই প্রবোধিনী একাদশী থেকে হিন্দুদের বিবাহের কাল শুরু হয়।[১] প্রবোধিনী একাদশী কার্তিকী একাদশী, কার্তিকী শুক্লা একাদশী ও কার্তিকী নামেও পরিচিত।[২] প্রবোধিনী একাদশীর পর কার্তিক পূর্ণিমা তিথিতে দেব-দীপাবলি বা দেবতাদের দীপাবলি উৎসব পালিত হয়।[৩]
প্রবোধিনী একাদশী प्रबोधिनी एकादशी | |
---|---|
![]() | |
অন্য নাম | দেবউট্ঠি একাদশী, দেবোত্থান, কার্তিক শুক্লা একাদশী |
পালনকারী | হিন্দু (বিশেষত বৈষ্ণব) |
ধরন | হিন্দু |
তাৎপর্য | চতুর্মাসের সমাপ্তি |
পালন | উপবাস, প্রার্থনা ও বিষ্ণু পূজা সহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান |
তারিখ | হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে নির্ধারিত হয় |
সংঘটন | বার্ষিক |
সম্পর্কিত | শয়নী একাদশী, কার্তিক পূর্ণিমা |
অনুষ্ঠান
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রবোধিনী একাদশীতে হিন্দুরা উপবাস করেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, তুলসী হলেন বিষ্ণুর পত্নী। তাই এই দিন তুলসীর সঙ্গে বিষ্ণুর আনুষ্ঠানিক বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।[৪] এই অনুষ্ঠানটি তুলসী বিবাহ নামে পরিচিত। এটি প্রবোধিনী একাদশীর পরদিন বা প্রবোধিনী একাদশীতে পালিত হয়।
পণ্ঢরপুর বিট্ঠল মন্দির

মহারাষ্ট্রে প্রবোধিনী একাদশী বিষ্ণু বা কৃষ্ণের অন্যতম রূপ বিঠোবার (বিট্ঠল) সঙ্গে যুক্ত। বারকরী তীর্থযাত্রীরা এই দিন পণ্ঢরপুরের বিট্ঠল মন্দিরে তীর্থযাত্রায় আসেন। সেখানে কার্তিক পূর্ণিমা পর্যন্ত পাঁচ দিন ধরে অনুষ্ঠান চলে।[৫] প্রবোধিনী একাদশীতে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রী মহারাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ পূজায় অংশ নেন। এটিকে ‘সরকারি-মহাপূজা’ বলা হয়।[৬]
গিরনার পর্বত
গুজরাতের ৮ লক্ষ্যেরও বেশি তীর্থযাত্রী প্রবোধিনী একাদশী উপলক্ষ্যে দুই দিন ধরে গিরনার পর্বতের চারদিকে ৩২ কিলোমিটার পথ পরিক্রমা করেন। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, এই দিন দেবতারা এই পর্বতে সমবেত হন। তাই তাদের ধন্যবাদ জানানোর জন্য এই পথ পরিক্রমা করা হয়।[৭]
পুষ্কর

রাজস্থানের পুষ্করে প্রবোধিনী একাদশীতে পুষ্কর মেলা শুরু হয়। এই মেলা পাঁচ দিন ধরে চলে এবং শেষ হয় কার্তিক পূর্ণিমায়। স্থানীয় ব্রহ্মা মন্দিরের অধিষ্ঠাতা দেবতা ব্রহ্মার সম্মানে এই মেলার আয়োজন করা হয়। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, এই পাঁচ দিন পুষ্কর হ্রদে স্নান করলে মোক্ষ লাভ করা যায়। সাধুরা এখানে এসে একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত গুহায় বাস করে। পুষ্কর মেলা প্রায় ২ লক্ষ লোক ও ২৫,০০০ উট সমবেত হয়। পুষ্কর মেলা এশিয়ার বৃহত্তম উটের মেলা।[৮][৯][১০][১১][১২]
আখ কাটার উৎসব
প্রবোধিনী একাদশীতে আখ কাটার মরসুম শুরু হয়। কৃষকরা মাঠে একটি পূজা করেন এবং তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু আখ কেটে জমির সীমায় কিছু আখ রেখে পাঁচটি আখ ব্রাহ্মণ, কামার, ছুতোর, ধোপা ও জলবাহককে দান করেন এবং পাঁচটি আখ বাড়ি নিয়ে যান। বাড়িতে বিষ্ণু ও তার পত্নী লক্ষ্মীর ছবি একটি কাঠে গোবর ও মাখন দিয়ে আঁকা হয়। আখগুলি একসঙ্গে বেঁধে সেই কাঠের চারপাশে রাখা হয়। তুলো, পান, মসূর ও মিষ্টি নৈবেদ্য দেওয়া হয় একটি যজ্ঞ করা হয়। একটি ‘প্রভাতীয়’ (জাগরণী) গান গাওয়া হয় দেবতাকে জাগরিত করার জন্য। তারপর আখগুলি ভেঙে দোলযাত্রা পর্যন্ত ছাদে ঝুলিয়ে রাখা হয়। দোলের দিন সেগুলি পোড়ানো হয়।[১৩]
স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়
স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের কাছে প্রবোধিনী একাদশী একটি গুরুত্বপূর্ণ একাদশী। ১৮০০ সালের ২৮ অক্টোবর এই দিন স্বামীনারায়ণ তার গুরু রামানন্দ স্বামীর থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।[১৪] ১৮০১ সালে ১৬ নভেম্বর এই দিনেই রামানন্দ স্বামী স্বামীনারায়ণের হাতে কর্তৃত্ব হস্তান্তর করেন।[১৪] স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের অনুগামীরা এই দিন নির্জলা উপবাস করেন এবং দেবতাদের উদ্দেশ্যে টাটকা সবজি উৎসর্গ করেন।[১৫]
তথ্যসূত্র
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.