Loading AI tools
লিবিয়ার রাজা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আস সাইয়িদ মুহাম্মাদ ইদ্রিস বিন মুহাম্মাদ আল-মাহদি আস-সানুসি (আরবি: إدريس الأول), (১২ মার্চ ১৮৮৯–২৫ মে ১৯৮৩)[1] ছিলেন রাজতান্ত্রিক লিবিয়ার প্রথম ও একমাত্র বাদশাহ। তিনি ১৯৫১ থেকে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেছেন। এছাড়াও তিনি সানুসি তরিকার প্রধান ছিলেন। চিকিৎসা গ্রহণের জন্য তুরস্ক সফরের সময় মুয়াম্মার গাদ্দাফির নেতৃত্বে সংঘটিত একটি অভ্যুত্থানে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন।[2]
ইদ্রিস | |||||
---|---|---|---|---|---|
লিবিয়ার বাদশাহ | |||||
রাজত্ব | ২৪ ডিসেম্বর ১৯৫১ – ১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৯ | ||||
জন্ম | ১২ মার্চ ১৮৮৯ আল-জাগবুব, উসমানীয় সিরেনাইকা | ||||
মৃত্যু | ২৫ মে ১৯৮৩ ৯৪) কায়রো, মিশর | (বয়স||||
সমাধি | |||||
দাম্পত্য সঙ্গী | ফাতিমা আল-শরিফ | ||||
| |||||
রাজবংশ | সানুসি | ||||
পিতা | মুহাম্মদ আল-মাহদি আস-সেনুসি | ||||
মাতা | আয়িশা বিনতে মুকাররিব আল-বারাসা | ||||
ধর্ম | ইসলাম (সুন্নি) |
ইদ্রিস ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দের ১২ মার্চ আল-জাগবুবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই অঞ্চল সেনুসি আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র ছিল। তিনি ছিলেন সাইয়িদ মুহাম্মদ আল-মাহদি বিন সাইয়িদ মুহাম্মদ আল-সেনুসি ও তার তৃতীয় স্ত্রী আয়িশা বিনতে মুকাররিব আল-বারাসার পুত্র।[3] তার দাদা সাইয়িদ মুহাম্মদ ইবনে আলি আস-সেনুসি ছিলেন উত্তর আফ্রিকায় সেনুসি সুফি তরিকা ও সেনুসি গোত্রের প্রতিষ্ঠাতা। তার বংশলতিকা মুহাম্মদ এর সাথে যুক্ত বলে বিবেচিত হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] চাচাত ভাই আহমেদ শরিফ আস-সেনুসি পদত্যাগ করার পর ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সেনুসি তরিকার প্রধান হন। ব্রিটিশরা তাকে সিরেনাইকা অঞ্চলের আমির হিসেবে মেনে নিয়েছিল। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে ইতালীয়রাও তা মেনে নিয়েছিল। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ত্রিপলিতানিয়ার আমির হন।
জীবনের প্রথমদিক তিনি সিরেনাইকার স্বাধীনতার জন্য আলোচনায় অতিবাহিত করেন।[4] ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে লিবিয়ায় ইতালীয় অভিযানের পর তিনি নির্বাসনে যান। এরপর ঔপনিবেশিক ইতালীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিশরকে তিনি তার গেরিলা যুদ্ধের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন।[5]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইতালীয়দের কাছ থেকে মুক্তির আশায় ইদ্রিস ব্রিটিশদের সমর্থন করেছিলেন। তিনি সেনুসি গোত্র এবং সিরেনাইকার জাতীয়তাবাদীদেরকে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে এবং মিত্রবাহিনীর পক্ষে লড়াই করার জন্য নিয়ে আসেন। সেনুসি গোত্রীয় লোকেরা জার্মান ও ইতালীয় সেনাদের সম্পর্কে ব্রিটিশ ৮ম আর্মিকে গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] জার্মান ও ইতালীয় বাহিনীর পরাজয়ের পর সিরেনাইকার ব্রিটিশ সামরিক প্রশাসনের সহায়তায় তিনি সিরেনাইকার আমির হিসেবে তার রাজধানী বেনগাজিতে ফিরে আসেন এবং সরকার গঠন করেন। উত্তর আফ্রিকায় জার্মান ও ইতালীয় বাহিনীকে পরাজিত করার জন্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে সহায়তা করায় ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তাকে ব্রিটিশ অর্ডার অফ গ্র্যান্ড ক্রস প্রদান করা হয়।
সিরেনাইকার ব্রিটিশ সামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ইদ্রিস ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে সিরেনাইকা আমিরাতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এখানকার তিনটি অঞ্চলের অন্যতম ত্রিপলিতানিয়ার (অন্য আরেকটি অঞ্চল ছিল ফেজান) আমির হওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।[6] আমন্ত্রণ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি লিবিয়াকে একক শাসনের অধীনে একত্রীত করতে শুরু করেন। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে একটি সংবিধান প্রণীত হয় এবং ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে তা গৃহীত হয়। একটি জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ইদ্রিসকে লিবিয়ার বাদশাহ ঘোষণা করা হয়। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর তিনি লিবিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
বেনগাজি থেকে ইদ্রিস ব্রিটিশ ও লিবিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ উপদেষ্টা এড্রিয়ান পেল্টের সাথে স্বাধীনতার ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ ডিসেম্বর ইদ্রিসকে বাদশাহ করে লিবিয়াকে স্বাধীন ফেডারেল যুক্তরাজ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে এককেন্দ্রীক রাজতন্ত্র প্রণয়নের জন্য সংবিধান পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। আর্ল মাউন্টব্যাটেনের সাথে ইদ্রিসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি লিবিয়া সফরে আসতেন এবং এসময় প্রাসাদে অবস্থান করতেন। তারা দুজন সাহারা মরুভূমিতে ভ্রমণ করতে পছন্দ করতেন।
কোনো উত্তরাধিকারী না থাকায় ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জুন এক ধনী বেদুইন প্রধানের কন্যা আলিয়া আবদেল লামলুনকে তিনি বিয়ে করেন। পরে তার উভয় স্ত্রীর পুত্র সন্তান জন্ম হয়।[7] তবে তার সকল সন্তান শৈশবে মারা যায়।
লিবিয়া ও প্রতিবেশী দেশে আরব জাতীয়তাবাদি ও প্যান-আরববাদিদের কারণে ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে সুয়েজ সংকটের সময় মিশরে যুক্তরাজ্যের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও ইদ্রিস যুক্তরাজ্যের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তার উত্তরাধিকারী হিসেবে কেউ ছিল না। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তার ভ্রাতুষ্পুত্র হাসান আস-সেনুসিকে যুবরাজ হিসেবে মনোনীত করেছিলেন।
এসময় তেলক্ষেত্র ও ত্রিপলির নিকটে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর হুইলাস বিমান ঘাটির কারণে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। তার স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় যুবরাজ সরকারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে থাকেন এবং অভিভাবক হিসেবে কাজ করেন। ইদ্রিস ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৪ আগস্ট সিংহাসন ত্যাগের দলিলে স্বাক্ষর করেন যা সে বছরের ২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
চিকিৎসার উদ্দেশ্যে মিশর যাওয়ার পর ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর একটি অভ্যুত্থানে ইদ্রিস ক্ষমতাচ্যুত হন। মুয়াম্মার গাদ্দাফির নেতৃত্বে লিবিয়ান সেনা অফিসারদের একটি দল এই অভ্যুত্থান ঘটায়। অভ্যুত্থানের পর রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে লিবিয়াকে প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা হয়।[8] অভ্যুত্থানের ফলে ইদ্রিসের সিংহাসন ত্যাগ ও উত্তরাধিকার বিষয়ক দলিল বাতিল হয়। তুরস্ক থেকে তিনি ও তার স্ত্রী জাহাজে করে গ্রীসে চলে যান এবং সেখান থেকে মিশরে নির্বাচনে যান। তার অনুপস্থিতিতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে লিবিয়ান গণআদালতে বিচার হয় এবং মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়।
১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে ৯৪ বছর বয়সে কায়রোর ডুক্কি জেলার সুলতান প্রাসাদে মারা যান। তাকে মদিনার জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দাফন করা হয়।
লিবিয়ান গৃহযুদ্ধে অনেক প্রতিবাদকারী গাদ্দাফির প্রতিবাদে বাদশাহ ইদ্রিসের ছবি বহন করেছে। বিশেষভাবে ঐতিহ্যবাহী সেনুসি প্রভাবাধীন সিরেনাইকায় এমন দেখা যায়। রাজতন্ত্রের যুগে ব্যবহৃত তিন রঙের পতাকা বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ন্যাশনাল ট্রান্সিশনাল কাউন্সিল একে লিবিয়ার পতাকা হিসেবে গ্রহণ করে।[9]
ইদ্রিস পাঁচবার বিয়ে করেছিলেন:
ইদ্রিসের পাঁচ পুত্র ও এক কন্যা ছিল। কিন্তু শৈশবে তাদের মৃত্যু হয়। তিনি ও ফাতিমা আলজেরিয়ান এতিম বালিকা সুলাইমাকে দত্তক কন্যা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। সুলাইমার বাবা আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে ফরাসিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিহত হয়।
ইদ্রিস নিম্নোক্ত লিবিয়ান খেতাবের অধিকারী ছিলেন:[10]
তিনি নিম্নোক্ত বৈদেশিক সম্মাননা লাভ করেছেন:
মুহাম্মদ ইদ্রিস আল-সেনুসির পরিবার | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
|
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.