পীরগঞ্জ উপজেলা, রংপুর
রংপুর জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রংপুর জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পীরগঞ্জ উপজেলা বাংলাদেশের রংপুর জেলার একটি উপজেলা (তৃতীয় স্তরের প্রশাসনিক ইউনিট)। প্রশাসনিকভাবে এটি রংপুর বিভাগের রংপুর জেলার অন্তর্গত। এ উপজেলার প্রশাসনিক সদরদপ্তর বা রাজধানীর নাম পীরগঞ্জ। পলাশবাড়ী, ঘোড়াঘাট ও নবাবগঞ্জ উপজেলা, সাদুল্লাপুর ও মিঠাপুকুর উপজেলার সাথে এ উপজেলার সীমানা রয়েছে। পীরগঞ্জ উপজেলার আয়তন ৪০৯.৩৭ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ৩,৮৫,৪৯৯ জন। পীরগঞ্জ উপজেলাকে বিল উপজেলা বলা হয়।
পীরগঞ্জ | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে পীরগঞ্জ উপজেলা, রংপুর | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°২৪′৪০″ উত্তর ৮৯°১৮′৪৪″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | রংপুর জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ৪০৯.৩৭ বর্গকিমি (১৫৮.০৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[1] | |
• মোট | ৩,৮৫,৪৯৯ |
• জনঘনত্ব | ৯৪০/বর্গকিমি (২,৪০০/বর্গমাইল) |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ৮৫ ৭৬ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
প্রাচীনকালে পীরগঞ্জ উপজেলা কামরুপ রাজ্যের অংশ ছিল। কামরুপের নরক রাজার রাজত্বকালে পীরগঞ্জ উপজেলার করতোয়া নদীর তীর পর্যন্ত তার রাজত্ব বিস্তৃত ছিল। মিঠাপুকুর উপজেলার পাটকাপাড়া ও উদয়পুর পূর্বে পীরগঞ্জের বাগদুয়ার পরগণার অধীন ছিল। মধ্যযুগে পীরগঞ্জ কামতা রাজাদের অধীনে ছিল। রাজা নীলাম্বর পীরগঞ্জের চতরাহাটের পশ্চিম পার্শ্বে একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন, যা নীল দরিয়ার দুর্গ নামে পরিচিত ছিল এবং এখনও এর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা রংপুর জেলা সদর হতে ৩৮ কিলোমিটার দক্ষিণে, বগুড়া জেলা সদর থেকে ৭০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কর্কটক্রান্তি রেখার সামান্য উত্তরে অবস্থিত। উপজেলাটি ২৫°১৮’ উত্তর অক্ষাংশ হতে ২৫°৩১’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°০৮’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ হতে ৮৯°২৫’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। উপজেলার উত্তরে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা, দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা ও নবাবগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলা, রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলা, নবাবগঞ্জ উপজেলা ও ঘোড়াঘাট উপজেলা।
পীরগঞ্জ উপজেলার মোট আয়তন ৪০৯.৩৭ বর্গকিলোমিটার। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে এর গড় উচ্চতা ০০ মিটার বা ০০ ফুট। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি অনুসারে পীরগঞ্জ উপজেলা তিস্তা প্লাবন ভূমিতে অবস্থিত এবং এর ভূসংস্থান বালু মিশ্রিত বেলে দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি দ্বারা গঠিত সমভূমি, যা উত্তর থেকে দক্ষিণে কিছুটা হলেও ঢালু।
পীরগঞ্জ উপজেলার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ২১০৬ মিলিমিটার। বছরের অধিকাংশ সময়ই এখানে ক্রান্তীয় গরম ও শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এ উপজেলাতেও এপ্রিল থেকে জুন হল সবচেয়ে উষ্ণতম মাস, যার তাপমাত্রা থাকে সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি হল সবচেয়ে শীতলতম মাস, তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় এবং বাজারে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে পূর্ণ হরতাল পালিত হয়। ঐ দিন ছাত্র ও জনসাধারণের মিলিত একটি সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা না করা পর্যন্ত অবিরাম সংগ্রাম চালিয়ে যাবার আহবান জানানো হয় (সৈনিক, ২ মার্চ ১৯৫২)।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে পীরগঞ্জ ৬নং সেক্টরের অধীনে ছিল। পীরগঞ্জ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ৭ই ডিসেম্বর। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে মিত্রবাহিনী লালদিঘী নামক স্থানে রংপুর- বগুড়া মহাসড়ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পাকিস্তানি বাহিনী থানায় গোলাবর্ষণ করে এবং থানার অবকাঠামো বিধ্বস্ত করে। ১৭ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে মাদারগঞ্জ, মীরপুর এবং আংরার ব্রীজে প্রতিরোধ যুদ্ধ হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে। আগুনে পুড়ে দেয় মাদারগঞ্জ, আংরার ব্রীজ সংলগ্ন উজিরপুরের জেলেপাড়া এবং টুকুরিয়ার সুজারকুটি গ্রাম।মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ২ (আংরার ব্রীজ ও মাদারগঞ্জ হাট)।
পীরগঞ্জ উপজেলা ১টি পৌরশহর (পীরগঞ্জ পৌরসভা) ও ১৫টি ইউনিয়নে বিভক্ত। ইউনিয়নসমূহ আবার ৩০৮টি মৌজা ও ৩৩৩টি গ্রামে বিভক্ত।
ইউনিয়নসমূহ:
এক নজরে পীরগঞ্জ উপজেলা
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১৫ | ৩০৮ | ৩৩৩ | ১২১৪১ | ৩৩৩৪৫২ | ৮৪৪ | ৫২.৬৩ | ৩৮.৫৬ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৬.২৪ | ৬ | ১২১৪১ | ১৯৪৬ | ৫২.৬৩ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কাবিলপুর ৩৭ | ৭৫০৬ | ১৩৫৮৬ | ১৩০১২ | ৩৪.৪৩ | ||||
কুমেদপুর ৪৪ | ৫৮০৬ | ১০৩২৮ | ১০৩৭৬ | ৩৪.৭৮ | ||||
চতরা ৩১ | ৮৫৪৩ | ১১৯৯৬ | ১১৪১৭ | ৩৮.০১ | ||||
চৈত্রকুল ২৫ | ৭৪৭০ | ১০২০১ | ৯৮৮২ | ৩৫.৭২ | ||||
টুকুরিয়া ৯৫ | ৬৬৬৫ | ৯২১৬ | ৮৪২৭ | ৩৩.৭৮ | ||||
পাঁচগাছা ৬৩ | ৫৭২১ | ১১৪০৯ | ১১৩৪৮ | ৪৩.৭৫ | ||||
পীরগঞ্জ ৬৯ | ৫৮৯৫ | ১৬০১৬ | ১৫৩৫৭ | ৪৪.৭৯ | ||||
বড় আলমপুর ০৬ | ৭৯৬০ | ৯৪৬৭ | ৮৯১০ | ৩৪.৭৫ | ||||
বড় দরগাহ ১২ | ৫৬৭৬ | ১২৭৭৩ | ১২৩৭৫ | ৪১.১১ | ||||
ভেন্দাবাড়ী ১৮ | ৬১৯৬ | ৯৮৭৩ | ৯৪৮৭ | ৪৩.৭৭ | ||||
মদনখালী ৫০ | ৬৬৮৬ | ১০৬৮৪ | ১০০৬৭ | ৩৯.০৮ | ||||
মিঠাপুর ৫৬ | ৬৭৮৬ | ১৩৩৫৮ | ১৩০৭৫ | ৩৮.৬৮ | ||||
রামনাথপুর ৮২ | ৮৩৪৫ | ১৪৯১৮ | ১৪৪১৪ | ৩৯.৩১ | ||||
রায়পুর ৭৫ | ৫৭২৯ | ১০৪৩৯ | ৯৯৩৬ | ৪২.৩৩ | ||||
শানেরহাট ৮৮ | ৬৪৬১ | ১১৭৬১ | ১১৪৮৫ | ৩৮.০৭ |
আইনশৃঙখলা দিক থেকে এটি বাংলাদেশ পুলিশের পীরগঞ্জ থানার অধীন।পীরগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯১০ সালে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ২৪ নং রংপুর-৬ আসনটি এ উপজেলা নিয়ে গঠিত।[2]
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ছিল ৩৮৫,৪৯৯ জন,[1] যা স্বাধীন রাষ্ট্র বেলিজের জনসংখ্যার সমান।[3] এর মধ্যে ১৯২,০২৫ জন পুরুষ এবং ১৯৩,৪৭৪ জন মহিলা। নারী ও পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত ১০১:১০০, যা জাতীয় অনুপাতের উল্টো (জাতীয় অনুপাত ১০০.৩)। ৫ বছরের নিচের শিশুদের সংখ্যা প্রায় ৫৪,৪৫১ জন, উপজেলার মোট জনসংখ্যার ১৪%। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে এমন জনসংখ্যা ২৩৯,৫১১ জন, যার মধ্যে নারী ১২৪,২৮৭ জন এবং বিবাহিত নারীর সংখ্যা হল ৯৭৪৪৮ জন। ২০১১ গৃহগণনার তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় ১০১,৬৪০টি খানা বা পরিবার রয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলায় আদিকাল থেকেই উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আদিবাসী বসবাস করে আসছে এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই আদিবাসীরা সবসময় একটি স্বতন্ত্র পরিচয় বহন করে এসেছে। ঢাঁক, ঢোল, কাসর, তোরংগ, বাঁশী এ এলাকার বেশ জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র।
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী পীরগঞ্জ উপজেলার স্বাক্ষরতার হার ৪৫.৪%,[1] যা ২০০১ সালে ৩৯.০৭% ছিল। নারী স্বাক্ষরতার হার ৪৩.১% এবং পুরুষের স্বাক্ষরতার হার ৪৭.৭%।
উপজেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে - সরকারি শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজ, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ভেন্ডাবাড়ী মহিলা কলেজ, জাফরপাড়া দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা, চতরা ডিগ্রী কলেজ, পীরগন্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, পীরগন্জ কছিমননেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, পীরগন্জ আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ভেন্ডাবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, মাদারগন্জ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, খেদমতপুর উচ্চ বিদ্যালয়, শানেরহাট দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, চক করিম প্রাথমিক বিদ্যালয় অন্যতম।
এছাড়াও পীরগন্জ উপজেলায় রয়েছে - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি'র অন্তর্ভুক্ত "বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি, রংপুর" - যা ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ৫০ জন ক্যাডেট ভর্তির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।
এখানে ৩০টি হাট ও বাজার রয়েছে; এগুলোর মধ্যে আব্দুল্যাপুর হাট, কলোনি বাজার, কাউয়াপুকুর বাজার, কাদিরাবাদ হাট, কুমেদপুর বাজার, খালাশপীর হাট-বাজার, খেজমতপুর গণিরহাট, গুর্জিপাড়া হাট-বাজার, বড় দরগাহ হাট-বাজার, চতরা হাট-বাজার, ছোট উমরপুর বাজার, জামতলা হাট, জাহাঙ্গীরাবাদ হাট, পীরগঞ্জ বাজার, পীরেরহাট, বটেরহাট, বালুয়াহাট, ভেন্ডাবাড়ী হাট-বাজার, মন্ডলের বাজার, শানের হাট-বাজার, মাদারগঞ্জ হাট-বাজার, মাদারহাট, রসুলপুর বাজার, রায়পুর বাজার, কদমতলা বাজার একতা বাজার , জনতার বাজার উল্লেখযোগ্য।
জলাশয়: প্রধান নদী - করতোয়া, আখিরা, যমুনেশ্বরী।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান: লাইব্রেরি ১, ক্লাব ৭০, নাট্যদল ২, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের শাখা অফিস ১, সিনেমা হল ৩।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস: কৃষি ৭৪.৮৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭%, শিল্প ০.৫৭%, ব্যবসা ৯.১৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৬২%, চাকরি ৩.৬৫%, নির্মাণ ০.৭৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮% এবং অন্যান্য ৩.৭%।
কৃষিভূমির মালিকানা: ভূমিমালিক ৫৭.৯৪%, ভূমিহীন ৪২.০৬%। শহরে ৫৫.৮৫% এবং গ্রামে ৫৮.০১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল: ধান, গম, ভূট্টা, পান, আখ, সরিষা, আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি: পাট, অড়হর, আউশ ধান।
প্রধান ফল-ফলাদি: আম, কাঁঠাল, জাম, লিচু, পেঁপে, কলা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার: হাঁস-মুরগি ৩০, গবাদিপশু ৩৫, মৎস্য ৩৫।
যোগাযোগ বিশেষত্ব: পাকারাস্তা ১৪০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৪০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন: পাল্কি ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা: ধানকল, করাতকল, তেলকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প: লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, রেশমশিল্প, পাটের কাজ, কাঠের কাজ।
মেলা: মেলা ১০। রামনাথপুর বৈশাখী মেলা, জাফরপুরের বউরাণী মেলা, বড়বিল বারুণী মেলা, হরিণ সিংগার দিঘি বারুনী মেলা, ভেন্দাবাড়ী মেলা, পলসারের মেলা, ফুলবাড়ি মেলা ও বড় দরগাহ মহররম মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য: ধান, গম, আলু, কলা, আখের গুড়, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার: এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৩.১৫% (শহরে ৪৮.৩৯% এবং গ্রামে ১২.০৯%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ: মাগুরা (খালাশপীর) কয়লাখনি।
পানীয়জলের উৎস: নলকূপ ৯৪.০৮%, ট্যাপ ০.১৬%, পুকুর ০.২১% এবং অন্যান্য ৫.৫৫%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা: এ উপজেলার ১০.৩% (শহরে ৩৭.১২% এবং গ্রামে ৯.৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৭.৮৭% (শহরে ২৫.৯৩% এবং গ্রামে ২৭.৯৩%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৬১.৮৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র: উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১২, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১৫, দাতব্য চিকিৎসালয় ৭।
তথ্যসূত্র: আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পীরগঞ্জ উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
মধ্যযুগে সমগ্র আরব জাহানে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীয়ন হয়। ভারত উপ-মহাদেশেও প্রবাহিত হয় তার সুমেয় বায়ু। এ সময় সুলতানী আমলে বাংলাদেশে যে সমস্ত সুফি-সাধক সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেন, তাদের মধ্যে হুগলি জেলার জাফর খাঁন গাজি, খুলনা বাগেরহাটের খাঁন জাহান আলী এবং হযরত শাহ্ ইসমাঈল গাজির নাম উল্লেখযোগ্য।
হযরত শাহ ইসমাঈল গাজি (রহঃ) মক্কার কোরেশ বংশীয় একজন যোদ্ধা পুরুষ ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন পির ও দরবেশ। ইসলাম ধর্ম প্রচারের সুমহান ব্রত নিয়ে তিনি সুদুর আরব-পারস্য থেকে বহু ক্লেশকর পথ অতিক্রম করে বাংলায় এসে উপস্থিত হন। স্বপরিবারে বসবাস করেন লখ্নৌতে। এ সময় বাংলার সুলতান ছিলেন রুকনুদ্দীন বারবক শাহ (১৪৫৯-১৪৭৪ খ্রিস্টাব্দে)। শাহ ইসমাঈল গাজি প্রথমত তার রাজ দরবারে সাধারণ সৈনিক হিসেবে চাকুরিতে যোগদান করেন।
অতি অল্প সময়ের মধ্যে গাজি সাহেবের শৌর্য -বীর্যে আকৃষ্ট হয়ে সুলতান তাকে সেনাপতি দায়িত্ব দিয়ে রাজা-গজপতির বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান প্রেরণ করেন। গাজি সাহেব রাজা গজপতিকে যুদ্ধে পরাজিত করে মান্দারায়ন দূর্গ দখল করেন। পরবর্তীতে দিনাজপুরের মহিসন্তোষ ক্ষেত্রে গাজি সাহেব রাজা কামেশ্বরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। তাঁর সর্বশেষ অভিযান ছিল কামরূপ-কামতা রাজা নীলাম্বরের বিরুদ্ধে। অলৌকিকভাবে তাকে পরাজিত করে তিনি পীরগঞ্জের এই নীল দরিয়ার দূর্গ হস্তগত করেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঈর্ষান্বিত হয়ে ঘোড়াঘাটের জায়গীরদার রাজা ভান্ডুসি রায় গাজি সাহেবকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে।
পরিশেষে তার বিরূদ্ধে সুলতানের অবাধ্যতার মিথ্যা অভিযোগ এনে রুকনুদ্দীন বারবক শাহকে বিভিন্ন ভাবে প্ররোচিত করেন রাজা ভান্ডুসি রায়। ফলে ১৪৭৪ খিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি মোতাবেক ৮৭৮ হিজরির ১৪ শাবান রোজঃ শুক্রবার আছরের নামাজান্তে সুলতানের আদেশে কাঁটাদুয়ার নামক স্থানে গাজি সাহেবের শিরশ্চদ করা হয়। সুলতানের আদেশে তার মস্তক কাটা দুয়ারে এবং মস্তক বিহীন দেহ ভারতের মান্দারায়নে সমাধিস্থ করা হয়।
কাঁটাদুয়ারে আজও তার পবিত্র মাজার বিদ্যমান আছে। পীরগঞ্জের বড় বিলায় ছিল তার প্রশাসনিক দপ্তর। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গাজি সাহেবের পূর্বাপরে একশত বৎসরের মধ্যে উল্লেখিত নামে আরো দুই জন ইসলাম ধর্ম প্রচারক পীরগঞ্জের মাটিতে তশরিফ আনয়ন করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন নুর বদর জঙ্গ গাজির সেনাপতি মুহাম্মদ ইসমাঈল গাজি। আর একজন আলাউ্দ্দীন হোসেন শাহের সেনাপতি শাহ ইসমাঈল গাজি আফগানী। কাঁটাদুয়ার, বড় দরগা, সহ পীরগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে ইসমাঈল গাজির যে সমস্ত মাজার দৃষ্ট হয় তা একই ব্যক্তির নহে। এ ব্যাপারে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
পির আব্দুস সাত্তারি রচিত রিশালাতুশ শুঁহাদা নামক গ্রন্থে হযরত শাহ ইসমাঈল গাজির জীবন কাহিনী লিপিবদ্ধ আছে বলে জানা যায়। তবে সে গ্রন্থ খানা বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। রংপুরের কালেক্টর মিঃ ড্যামন্ট উক্ত গ্রন্থের কিছু অংশ ইংরেজিতে অনুবাদ করে এশিয়াটিক সোসাইটির এক জার্নালে প্রকাশ করেছিলেন। যা হোক পীরগঞ্জের ইতিহাসে হযরত শাহ্ ইসমাঈল গাজীর স্মৃতি ওতঃপ্রতভাবে বিজড়িত।
পীরগঞ্জের সাধক কবি কাজি হেয়াত মামুদ। একজন ক্ষণজন্মা মহা পুরুষ। বাংলাদেশের এক নিভৃত পল্লীতে জন্ম গ্রহণ করে স্বমহিমায় ভাস্কর তিনি। তার সম্পর্কে অনেক কাহিনী দীর্ঘদিন যাবত দাবাগ্নির মতই অজ্ঞাত ছিল। আজ সময়ের প্রয়োজনে ফেটে বেরুচ্ছে তার লেলিহান শিখা। তাই পীরগঞ্জের ইতিহাসে তার জীবন ও সাহিত্য কর্ম বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জানা, বিচার-বিশ্লেষন জরুরি।
কাজি হেয়াত মামুদ ১৬৮০ থেকে ১৬৯০ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তার জন্মস্থান বর্তমান রংপুর জেলার অন্তর্গত, পীরগঞ্জ উপজেলাধীন ১নং চৈত্রকোল ইউনিয়নিস্থ ঝাড় বিশিলা গ্রামে। তার পিতার নাম শাহ কবির। মাতার নাম খায়রুন্নেছা। তারা ছিলেন মোঘল সুবেদার মীর জুমলার বৃত্তি ভোগী এলিট মুসলিম পরিবার।
হেয়াত মামুদ স্বগৃহে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ঘোড়াঘাটে বিদ্যার্জন করেন। সে সময় বাংলা ভাষার পাশাপাশি তিনি সংস্কৃতি, আরবি ও ফারসি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। সেই সঙ্গে ইসলামি ভাব ধারায় রচিত পাশ্চাত্যের কাব্য সাহিত্যগুলো বাল্যকাল থেকেই তাকে বাংলা কাব্য সাহিত্য রচনার প্রেরণা যোগায়। তদুপরি ইসলাম ধর্মীয় আদর্শে নিজেকে গড়ে তোলার প্রয়াস উত্তরাধিকার সুত্রে প্রাপ্ত হন তিনি।
হেয়াত মামুদ শিক্ষা জীবন শেষ করে ঘোড়াঘাটের ফৌজদারের অধীনে তৎকালীন সুলুঙ্গা বাগদার পরগণার কাজি নিযুক্ত হন। কাজি অর্থ বিচারক। বিচার কার্যে তার প্রত্যুৎপন্নমতি, ন্যায়-নিষ্ঠা ও নিরপেক্ষতা সম্পর্কে অনেক জনশ্রুতি রয়েছে।
কাজি হেয়াত মামুদের প্রথম পুঁথি ‘জঙ্গনামা’। কারবালায় মুয়াবিয়া পুত্র এজিদ কর্তৃক হযরত ইমাম হোসেন (রাঃ) এর শহিদ এবং পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ নিয়ে ১৭২৩ খ্রিস্টাব্দে কবি উক্ত পুঁথি রচনা করেন। জঙ্গনামা পুঁথিতে কারবালা যুদ্ধের ভয়াবহতা কবি এভাবেই বর্ণনা করেছেন।
১৭৩২ খ্রিস্টাব্দে কাজি হেয়াত মামুদ রচনা করেন চিত্ত উত্থান বা সর্বভেদ বাণী। সর্বভেদ বাণীতে কবি বিদ্যা শিক্ষা সম্পর্কে বলেনঃ- "যার বিদ্যা নাই সে জানেনা ভাল মন্দশীরে দুই চক্ষু আছে তথাপি সে অন্ধ।" কবির কাব্য গ্রন্থ গুলো পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে লেখা। বাংলা ভাষার পাশাপাশি তিনি অনেক সংস্কৃতি, আরবি, ও ফারসি শব্দ প্রয়োগ করেছেন। তিনি মধ্যযুগীয় কবি ভারত চন্দ্রের সম-সাময়িক কবি ছিলেন।
সুদীর্ঘকাল রাজকীয় কর্মকান্ড, অধ্যাত্ব ও সাহিত্য সাধনার পর পীরগঞ্জের এই ক্ষণজন্মা সাধক কবি ১৭৬০-১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময় পরলোক গমন করেন। তার পবিত্র মাজার শরিফ জন্মস্থান ঝাড় বিশিলা গ্রামে অবস্থিত।
বিশিষ্ট পরমানু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া পীরগঞ্জের লালদীঘি ফতেপুর গ্রামে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ফেব্রুয়ারিতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আব্দুল কাদের মিয়া, মাতার নাম মরহুমা ফয়জান নেছা।
ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় ৯নং ইউনিয়নের চক করিম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অত:পর পীরগঞ্জ হাইস্কুল। তার পর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে রংপুর জেলা স্কুল থেকে আই এস সি এবং ১৯৬২ খ্রিঃ ঢাকা কলেজ থেকে এম সি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে এটমিক এনার্জির উপর ডিপ্লোমা করেন লন্ডনের ইমপিরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। লন্ডনের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করেন পি. এইচ. ডি ডিগ্রি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবর রহমান যখন আগরতলায় ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ, তখন তার ঘনিষ্ট সহকারি পীরগঞ্জের সাবেক মন্ত্রি মতিউর রহমানের অভিভাকত্বে শেখ হাসিনার সঙ্গে ড. ওয়াজেদ মিয়ার শুভ বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এই মহান বিজ্ঞানী ২০০৯ খ্রিঃ ৯ মে তারিখে পরলোক গমন করেন। ফতেপুর গ্রামে তার পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
পীরগঞ্জের বীর সন্তান সাবেক মন্ত্রি মতিউর রহমান ১৯ খ্রিস্টাব্দে রছুলপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। আপন মেধা, সততার কারণে অত্যাল্প সময়ের মধ্যে তিনি দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই সঙ্গে শেখ মুজিবর রহমানের একজন ঘনিষ্ট সহকারী হিসেবে মতিউর রহমান ছয়দফা দাবি নিয়ে উত্তর বঙ্গে প্রচারনা শুরু করেন। এসময় সরকারের বহু মামলা ও নির্যাতন চলতে থাকে।
১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে আগরতলা মামলায় শেখ মুজিবুর রহমান কারারুদ্ধ হলে তার অনুরোধে উকিল বাবা হিসেবে মতিউর রহমান শেখ হাসিনা ও ড. ওয়াজেদ মিয়ার শুভ বিবাহ নিস্পন্ন করেন। বেক খালাশ পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের ছয় দফা আন্দোলন অত্যন্ত বেকবান করেন। অসহযোগগণঅভুত্থান শুরু হয়। বাধ্য হয়ে সাধারণ নির্বাচন দেন পাকিস্তান সরকার।
১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন মতিউর রহমান পীরগঞ্জের মানুষ বিপুল ভোটে তাকে এম.এ.এ নির্বাচিত করেন। পাকিস্তান সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় ক্ষেপন ও প্রহবান করতে থাকলে ১৯৭১ খ্রিঃ ২৫ মার্চ রাতে শেখ মুজিবকে বন্দি করে পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যান। এহিয়া খান এদিকে দেশময় শুরু হয় গণ হত্যা গৃহ দাহ নারী নির্যাতন। দেশের মানুষ দলে দলে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। বলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন।
১৯৭১ খ্রিঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় মতিউর রহমান ছয় নং সেক্টরের অধীনে নয় জনের চেয়ারম্যান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের দায়িত্ব পালন করেন।দেশ হানাদার মুক্তি হলে আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রি হিসেবে পীরগঞ্জ সাধক কবি হেয়াত মামুদের পবিত্র মাজার শরিফ নির্মানের কাজ শুরু হয়।
পীরগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আবুল কালাম আজাদ (এমপি)। তিনি ১৯৫০ সালের ২৬ই নভেম্বর পীরগন্জ উপজেলার কাশেমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম ডাঃ তসির উদ্দিন সরকার। বাল্যকাল থেকে তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি দেশ ও দশের সেবায় আত্ম নিয়োগ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। দেশ হানাদার মুক্ত হলে ঢাকায় গিয়ে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ে মনযোগ দেন। অত্যাল্প সময়ের মধ্যে সততা ও মেধার দ্বারা তিনি ঢাকা জিরানি বাজারে সাথী গার্মেন্টস সহ আরো কয়েকটি ব্যবসার সাথে জড়িহন।
বর্তমানে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি।ব্যবসার পাশাপাশি রাজনীতিতে বিশেষ অবদান রাখেন আবুল কালাম আজাদ। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে পীরগঞ্জের উপনির্বচনে অংশ গ্রহণ করায় পীরগঞ্জবাসী তাকে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করেন। বর্তমানে তিনি রংপুর-২৪, পীরগঞ্জ-০৬ আসনের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি লেখালেখির সঙ্গেও জড়িত।
সজীব ওয়াজেদ জয় ২৭ জুলাই ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে জন্ম নেন। তার বাবা এম এ ওয়াজেদ মিয়া, একজন খ্যাতনামা পরমাণুবিজ্ঞানী এবং মা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। তার নানা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালে তার নানা শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা হওয়ার পরে, জয় মায়ের সাথে জার্মানি এবং লন্ডন হয়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।
ফলে তার শৈশব এবং কৈশোর কেটেছে ভারতে। নৈনিতালের সেন্ট জোসেফ কলেজ হতে স্নাতক করার পর যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এ্যট আর্লিংটন থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক শেষ করেন। পরবর্তীতে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি স্হায়ীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় বাস করছেন।
২০১০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, জয়কে পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ দেয়া হয়। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ ২০১৯ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর অবৈতনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে আওয়ামীলীগের বিগত মেয়াদের সরকারে ২০১৪ সালেও প্রধানমন্ত্রীর অবৈতনিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।
জয় ২৬ অক্টোবর ২০০২ সালে মার্কিন নাগরিক ক্রিস্টিন ওয়াজেদকে বিয়ে করেন। তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তাদের সন্তানের নাম সোফিয়া ওয়াজেদ।
বাবু মণিকৃষ্ণ সেন ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে ১ নভেম্বর রাজবাড়ী জেলার বারাদি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বেনী মাধব সেন। মাতার নাম প্রমোদা সুন্দরী। তারা পাঁচ ভাই বোন। তার মধ্যে মণিকৃষ্ণ সেন তৃতীয় ।
তার পিতা পীরগঞ্জ উপজেলারকাবিলপুরে জমিদারী সেরেস্তায় কাজ করতেন। মাত্র ছয় বৎসর বয়সে মণি কৃষ্ণ সেন কাবিলপুরে চলে আসেন। তিনি কাবিলপুর মাইনর স্কুল থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পাশ করেন। তারপর আবার নিজ বাড়িতে চলে যান। সেখানে তার বোনের কাছ থেকে পড়াশুনা করেন রাজবাড়ী হাইস্কুলে। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করেন। এর মধ্যে তার পিতৃ বিয়োগ ঘটে। তখন সে ফিরে আসেন রংপুরে। রংপুরে কৈলাশ রঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে মেট্টিক পাশ করেন।
১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বি,এ পাশ করেন রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে। অতঃপর ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম, এ এবং এল, এলবি ডিগ্রি লাভ করেন। কৈলাশ রঞ্জন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা কালীনই তিনি জমিদার ও বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন। সদস্য হন যুগান্তর দলের। সে সময় জমিদার ও বৃটিশ কর্তৃক প্রজা পীড়নে তার মনকে ব্যথিত করে তোলে। তাই তিনি হয়ে ওঠেন সংগ্রামী মনোভাবাপন্ন। ফলে বৃটিশ সরকারের রোষানলে পড়ে যান তিনি।
বিপ্লবী কর্মকান্ড করতে গিয়ে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে পুটিয়ার ট্রেন ডাকাতী মামলায় গ্রেফতার করে তাকে রাজশাহী জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। এ সময় তিনি মার্কসবাদী রাজনীতিতে পুরাপুরি ভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে যোগ দান করেন কমিউনিষ্ট পার্টিতে। বাবু মণিকৃষ্ণ সেন তেভাগা কৃষক আন্দোলন, ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলন এবং মওলানা ভাষানীর সাথে ফুলছড়িতে বিশাল কৃষক সম্মেলনে সাংগঠনিক ভূমিকা পালন করেন।
১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে যুক্ত ফ্রন্ট গঠিত হলে কাজী আঃ হালিম, মতিউর রহমান, সুফি মোতাহার হোসেন, সহ বাবু মণিকৃষ্ণ সেন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াইয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে আইয়ুব খাঁনের মার্শাল ল, তে আবার গ্রেপ্তার হয়ে কারাদন্ড ভোগ করেন মণিকৃষ্ণ সেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথমার্ধে তিনি পীরগঞ্জের সখিপুর গ্রামে আত্মগোপনে থেকে মুক্তি যুদ্ধের সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি চলে যান ভারতে। ভারতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের নেতা কর্মীদের সাথে যোগসুত্র রচনা করেন। জরুরী ভিত্তিতে ইলা মিত্রের বাসায় স্থাপন করেন মুক্তি যুদ্ধের ক্যাম্প।
মতিউর রহমান, শংকর বসু, ফয়েজ আহম্মদ প্রমুখগণের সহযোগিতায় তিনি গড়ে তোলেন `NORTH BENGAL REVOLUTION CAUNCEL১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে দেশ হানাদার মুক্ত হলে মুক্তি যোদ্ধাদের বিশাল বাহিনী নিয়ে তিনি প্রবেশ করেন রংপুর শহরে।
রাজনীতি জেল জুলুম, কারাভোগের মধ্য দিয়েও তিনি ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে পীরগঞ্জ মিঠাপুকুরে বসন্ত রোগের মহামারীতে সেবা কার্য পরিচালনা করেন। স্বাধীনতাত্তোর ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ভুখা-ফাঁকাদের জন্য খুলে দেন লংগর খানা। পরিশেষে১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে পীরগঞ্জের কাবিলপুরে প্রতিষ্ঠা করেন "প্রমোদা সুন্দরী সেন কল্যাণ ট্রাস্ট।" সে ট্রাস্টে দান করে যান তার সমুদয় বিষয় সম্পত্তি।
১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে রংপুর পৌর সভায় তাকে গুণীজন সংবর্ধনায় ভূষিত করা হয়। ১৯৯০ খিস্টাব্দের ১৬ ই ডিসেম্বরে পীরগঞ্জ বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বাবু মণিকৃষ্ণ সেন।
১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। অসুস্থ্য অবস্থায় ভারতের পাটনায় তার ভাইপোর বাসায় তিনি ২৮ অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাষ ত্যাগ করেন। বাবু মণিকৃষ্ণ সেন পীরগঞ্জের একজন অবিসংবাদিত নেতা। তিনি জীবনে দার গ্রহণ করেননি। তিনি ছিলেন চিরকুমার।
কতিপয় ক্ষণজন্মা মনীষির জন্ম স্থান এই পীরগঞ্জ উপজেলা। তন্মধ্যে শাহ্ আব্দুর রউফ অন্যতম। তিনি ১৮৮৯খ্রিস্টাব্দে পীরগঞ্জের মকিমপুর নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, তার পিতার নাম শাহ কলিম উদ্দিন।
শাহ্ আব্দুর রউফ ভারতবর্ষে মুসলিম জাগরণের প্রথম দিকে তিনি কলিকাতা আলীগড় কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন এবং বি,এল ডিগ্রি লাভ করেন।কর্মজীবনে তিনি আইন ব্যবসা শুরু করেন রংপুর জর্জ কোটে। এসময় তিনি মুসলিম লীগে যোগদান করতঃ রাজনীতিতে প্রত্যক্ষ ভুমিকা রাখেন।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম-লীগ থেকে পার্লামেন্টে সদস্য নির্বাচিত হন। রংপুর জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যন হিসেবে তিনি ১৯৩৩-১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তার সমাজ সেবা মূলক কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরুপ বৃটিশ সরকার তাকে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে খাঁন বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেন।
তিনি কবিতা লিখতেন। তার রচিত "চতুর্দশী" নামে একটি কবিতা গ্রন্থ ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় বলে জানা যায়। তার রচিত আর একটি গদ্য গ্রন্থ "আমার কর্মজীবন" (অধুনা বিলুপ্ত)। শাহ্ আব্দুর রউফ সাহেবের অর্থানুকুল্যে রংপুর সালমা গার্লস হাই স্কুল এবং পীরগঞ্জ কছিমন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত। পরবর্তীতে তার নামেই পীরগঞ্জ শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ একজন দেশ বরেণ্য ইসলামি চিন্তাবিদ ও গবেষক তিনি সুদীর্ঘ ১২ বৎসর বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং ৩৫ বৎসর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি নোয়াখালীতে জন্ম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলাধীন চতরা গ্রামে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। তার পিতার নাম আল হাজ্ব মোবারক উল্লাহ এবং মাতার নাম শাফিয়া খাতুন।
তিনি প্রথমত গ্রামের মক্তবে কোরান মাজিদ শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীতে চাটখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে আলিম,১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে ফাজিল, ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে কামিল (হাদিস) পাশ করেন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে কামিল (তাফসির), ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে কামিল (ফিকহ) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সেই সঙ্গে চট্টগ্রাম এম,ইএস কলেজ থেকে নাইট সিপটে বহিরাগত পরীক্ষার্থী হিসাবে অংশ গ্রহণ করে ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে এইচ এস সি এবং ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে বি এ পাশ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে আরবি বিষয়ে এম, এ এবং ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে পি, এইচ, ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি একজন সুলেখক ছিলেন তার প্রকাশিত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে ইমাম তাহাভীর জীবন ও কর্ম, উলুমুল কোরআন, হাদিসের আলোকে জিনজাতী ও ইবলিস, সহি বুখারির ব্যাখ্যা আওনুল বারী ইমাম মুহাম্মদ আল বুখারী (রহঃ) ও তার জামি অন্যতম। এছাড়াও তার অপ্রকাশিত অনেক গ্রন্থ রয়েছে। তার প্রবন্ধ সমূহ: বিভিন্ন ইসলামি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
জানা যায় তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৬টি, অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি ১২টি, প্রবন্ধের সংখ্যা ১৫০টি। তিনি জাতীয় পাঠ্যক্রম পুস্তক ইসলামী শিক্ষা গ্রহন্থের একজন রচয়িতা ছিলেন। যা ৬ষ্ট শ্রেণি হতে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়ে থাকে। তিনি একজন গবেষণা তত্বাবধায়কও ছিলেন। তার তত্বাবধানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ জন শিক্ষক ও গষেক পি এইচ ডি এবং ৫ জন এম, ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. মুহাম্মদ শফিকুল্লাহ দীর্ঘ কর্ম জীবনের সমাপ্তি টানিয়ে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শাহদাৎ বরণ করেন। তাকে তার পারিবারিক কবরস্থান চতরায় সমাহিত করা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.