পলাশবাড়ী উপজেলা
গাইবান্ধা জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গাইবান্ধা জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পলাশবাড়ী বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা। প্রশাসন পলাশবাড়ী থানা গঠিত হয় ১৫ মার্চ ১৯৩৭ এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
পলাশবাড়ী | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে পলাশবাড়ী উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৫°১৭′৩″ উত্তর ৮৯°২১′১৪″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | রংপুর বিভাগ |
জেলা | গাইবান্ধা জেলা |
পলাশবাড়ী উপজেলা | ১৯৮৩ |
সংসদীয় | গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) জাতীয় সংসদ আসন- ৩১ |
সরকার | |
• এমপি | খালি (স্বতন্ত্র) |
আয়তন | |
• মোট | ১৯০.৬৭ বর্গকিমি (৭৩.৬২ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১)[১] | |
• মোট | ২,৩১,৭৫৫ |
• জনঘনত্ব | ১,২০০/বর্গকিমি (৩,১০০/বর্গমাইল) |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৫৪.৯% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
পোস্ট কোড | ৫৭৩০ |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৫৫ ৩২ ৬৭ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
পলাশফুলের বাগান থাকায় পলাশফুলের নামে পলাশবাড়ী নাম করণ হয়েছে বলে লোক স্মৃতিতে জানা যায়। কবি জসীমউদ্দিন এ উপজেলা থেকে ঘুরে আসার পর নিজের বাড়ির নাম দিয়েছিলেন পলাশবাড়ী।
ব্রিটিশ আমলে ১৯২১ সালে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মরহুম খান মোহাম্মদ দারাজ হোসেন খান, ফজর উদ্দিন তালুকদার, এম কে রহিম, ডাঃ কছির উদ্দিন প্রমূখ ব্যক্তি বর্গগণের নেতৃত্বে তদানিন্তন পলাশবাড়ীর নেতৃবৃন্দ স্বাধীন পলাশবাড়ী ষ্টেস্ট ঘোষণা করেন ও ব্রিটিশ সরকারের অফিস আদালত কোট-কাচারী বয়কোট করে সংগ্রাম পরিষদের আওতায় জুরির মাধ্যমে মামলা মোকদ্দমা নিস্পত্তির জন্য আদালত গঠন এবং অফিসের হাট নামক স্থানে কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন পতাকা উড়িয়ে স্বাধীন পলাশবাড়ীর কার্যক্রম পরিচালনা করেন। স্বাধীন পলাশবাড়ী ষ্টেস্ট এর পতাকা ছিল ডানে মসজিদ, বামে মন্দির উপরে অর্ধচন্দ্র এবং নীচে একটি নদী ও তার তীরবর্তী জমিতে ধানের কিছু চারাগাছ অঙ্কিত ছিল।স্বাধীন পলাশবাড়ী ষ্টেস্টের একটি বিপ্লবী শান্তি সেনা বাহিনী ও একটি সেচ্ছা সেবক বাহিনী গঠন করা হয়েছিল।
এ উপজেলার রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবোজ্জল ইতিহাস। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার পলাশবাড়ীতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি যুদ্ধ হয় মুক্তিযুদ্ধের সময়। স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পাক বাহিনীর গতি রোধ করে তাদের উত্তরবঙ্গে প্রবেশ দুই দিন পিছিয়ে দিয়েছিল পলাশবাড়ীর আপামর জনতা। পরে তাদেরকে গণহারে হত্যা করে পাকিস্তানি সৈন্যরা। ‘স্বাধীন পলাশবাড়ী ’ গঠনের আহ্বায়ক ছিলেন তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী এবং সদস্য সচিব ছিলেন ফারুক চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের রমনা রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর স্থানীয় জনগণ উপজেলার রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে। এর শাস্তি হিসেবে পাকবাহিনী পলাশবাড়ী হাটে এসে গুলিবর্ষণ করে এবং তাতে ১ জন নিহত হয়। পরবর্তী সময়ে পাকবাহিনী স্থানীয় বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পলাশবাড়ীতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ২১ জন পাকসেনা নিহত হয়, ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীন হন। ১৭ এপ্রিল তারিখেও এরকম অপর একটি যুদ্ধে ১১ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকবাহিনী উপজেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের অফিসে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং বহুসংখ্যক নিরীহ লোককে ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করে। ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পলাশবাড়ী নিয়ন্ত্রণে নেয়। উপজেলায় ২টি গণকবর (কাশিয়াবাড়ি গণকবর, বৈরী হরিণমারী গণকবর) ও ১টি বধ্যভূমির (সড়ক ও জনপথ বিভাগ অফিস সংলগ্ন বধ্যভূমি) সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে ১টি শহীদ মিনার ‘পলাশবাড়ি শহীদ মিনার’ এবং ১টি স্মৃতিফলক (জাফর-মুংলিশপুরের স্মৃতিফলক) স্থাপন করা হয়েছে।
এ অঞ্চলে বৈশাখ মাসে বৈশাখী মেলা বসে। এছাড়াও পৌষ পার্বণ ও নবান্ন উৎসব পালন করে থাকে।
এ উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান উত্তর বংগের গাইবান্ধা জেলার ব্রক্ষপুত্র নদের ডান তীরে ২৫.০৩ হতে ২৫.৩৯ উত্তর অক্ষাংশে এবং ৮৯.১২ হতে ৮৯.৪২ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। ১৯০.৬৭ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলাটির উত্তরে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা ও সাদুল্লাপুর উপজেলা, দক্ষিণে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা; পূর্বে গাইবান্ধা সদর উপজেলা ও সাঘাটা উপজেলা, পশ্চিমে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলা।
পলাশবাড়ী উপজেলার আয়তন- ১৮৫.৩৩ বর্গকিঃমিঃ।
পৌরসভা- ১টি ও ইউনিয়ন - ৮টি : ১নং কিশোরগাড়ী, ২ নং হোসেনপুর, পলাশবাড়ী পৌরসভা, বরিশাল, মহদীপুর, বেতকাপা, পবনাপুর, মনোহরপুর ও হরিনাথপুর। পলাশবাড়ী পৌরসভা ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। পলাশবাড়ী পৌরসভার মোট আয়তন ১৮.৩৮ বর্গকি.মি ও ২৪ টি মৌজা নিয়ে গঠিত। এর ওয়ার্ড সংখ্যা-০৯ টি।
২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পলাশবাড়ীর মোট জনসংখ্যা ২৬০৮০৬; যার মধ্যে ৫০.৫৪% পুরুষ ও ৪৯.৪৬% মহিলা। মুসলমান ৯২.৪৮ %, হিন্দু ৭.০২% ও অন্যান্য ০.৫%।
শিক্ষার গড় হার ৫৪.৯%; পুরুষ ৫১.৪%, মহিলা ৪৪.০%। এখানে ২০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, কমিউনিটি ১টি, অনিবন্ধিত বেসরকারি ০৪টি, কিন্ডারগার্টেন ২৪টি, এনজিও প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র ১৯৯টি ও স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা ০৭টি, উচ্চ মাদ্রাসা সংযুক্ত ইবতেদায়ী ১৮টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪০টি, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১টি, কারিগরি কলেজ ২টি, সরকারি কলেজ ১টি, বেসরকারি কলেজ ৭টি, মহিলা কলেজ ৩টি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ১টি।
এখানে বিদ্যালয় গমনোপযোগি শিশুর সংখ্যা ৪৯০৪৪ জন, বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত শিশুর সংখ্যা ৪৯০৪৪ জন, নীট ভর্তির হার প্রায় ১০০%, ঝরে পড়ার হার প্রায় ৭.১৪%, উপস্থিতির হার প্রায় ৮৬.৪%।
এছাড়াও, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তিকৃত শিশুর সংখ্যা ৬০৪৪ জন, প্রাথমিক শিক্ষা চক্র সমাপ্তির হার প্রায় ৯৩%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পলাশবাড়ী সরকারি কলেজ (১৯৬৪), পলাশবাড়ী এস.এম পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১১), বাসুদেবপুর চন্দ্রকিশোর স্কুল এন্ড কলেজ (১৯১৭), রওশনবাগ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), পলাশবাড়ী পিয়ারী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৫)।
ইটের ভাটা, ওয়েল্ডিং কারখানা। কুটিরশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বিড়িশিল্প, কাঠের কাজ। জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৪.৩০%, অকৃষি শ্রমিক ১.৯৫%, শিল্প ১.১৫%, ব্যবসা ১২.৮৭%, পরিবহন ও যোগাযোগ ৬.২৪%, চাকরি ৫.৯৬%, নির্মাণ ১.৩৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিট্যান্স ০.১৫% এবং অন্যান্য ৫.৮৩%। এখানকার প্রধান শস্যের মধ্যে রয়েছে ধান, কলা, গম, ভুট্টা ও শাকসবজি। এই এলাকায় ভুট্টার চাষ নতুন হলেও এর বাম্পার ফলনের কারণে ভুট্টা অত্র এলাকার এক অন্যতম অর্থকরী ফসল।
আখিরা নদী স্থানীয় নাম মর্চ নদী ও নলেয়া নদী। করতোয়া নদী উপজেলার পশ্চিম সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
সরকারী হাসপাতাল- ১টি (৫০শষ্যা)
স্বাস্থ্য কেন্দ্র / ক্লিনিক- ০৯টি, (ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র)
২০০০ইং সালে ৪ঠা এপ্রিল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জনাব রশিদুন্নবী (চান) নিজ উদ্যোকে প্রতিষ্টা করেন। পলাশবাড়ী উপজেলা সদর হইতে ০.৫০কিলো মিটার যাহা বগুরা মহাসড়কের পশ্চিম পাশ্বে অবস্থিত। এখানে পার্ক সহ বিভিন্ন প্রজাতির শিল্পকলা মহিষীগনের চিত্র কলা সহ প্রণী ও মানুষের ভাস্কর বিভিন্ন প্রজাতির জীব জন্তর ও খেলা ধুলার যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে।
সংযোগানন্দ গিরি স্মৃতি মন্দির শত বছরের কাল পরিক্রমায় কিশোরগাড়ী ইউনিয়নস্থিত কাশিয়াবাড়ী গ্রামে শ্রীশ্রী সংযোগানন্দ গিরির স্মৃতি মন্দির রয়েছে। এই মন্দিরে প্রতি বছর বুদ্ধ পুর্ণিমাতে মহাসমারোহে তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন পুজা ও অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। এ পুজানুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— প্রথম দিন অধিবাস ও সমবেত উপাসনা। দ্বিতীয় দিন উষালগ্নে মঙ্গল আরতি, প্রভাতী শিবসঙ্গীত, শিবপূজা, বিষ্ণুপূজা, গুরুপূজা, সপ্তসতী চণ্ডী পাঠ, পুষ্পাঞ্জলি ও দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণ। বিকালে ধর্মসভা ও বিশ্বশান্তিকল্প্পে সমবেত প্রার্থনা এবং রাতে স্মৃতি মন্দিরে মহাশক্তির পূজা ও সমবেত প্রার্থনা। তৃতীয় দিন শীতলা দেবীর পূজা ও হোম। এ উপলক্ষে কিশোরগাড়ী সকল হিন্দু ধর্মর জনবহল হতে বহু পুন্যার্থীর শুভাগমন ঘটে।
যাতায়াত -পলাশবাড়ী উপজেলা রাব্বী মোড় থেকে সিএনজি/ রিক্সা যোগে কাশিয়াবাড়ী বাজার হইতে দক্ষিনে ২কিঃমি আসতে হবে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.