পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি এলাকা, যা তিনটি জেলা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি নিয়ে গঠিত। চট্টগ্রাম বিভাগের এই এলাকা পাহাড় ও উপত্যকায় পূর্ণ বলে এর নামকরণ হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১৮৬০ সালের আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম জেলার অংশ ছিল। ১৮৬০ সালে চট্টগ্রামকে ভেঙে পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠন করা হয়। ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ভেঙে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিনটি জেলা গঠন করা হয়। এই অঞ্চল জুড়ে রয়েছে দেশের মোট বনভূমির এক বিশাল অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা প্রধান নদী হলো কর্ণফুলী। এই নদীতে বাঁধ দিয়ে কাপ্তাইতে গড়ে তোলা কাপ্তাই হ্রদে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।[১]
ভূগোল
পার্বত্য চট্টগ্রাম ১৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ পর্বতশ্রেণির অংশ, যে পর্বতশ্রেণি পূর্ব হিমালয় চিন থেকে পশ্চিম মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত। এর মধ্যে বাংলাদেশের রয়েছে প্রায় ২৮০ কিলোমিটার বাই ৬০ কিলোমিটারের একটি সরু এলাকা।[২] পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান নদী চারটিঃ
- ফেনী নদী (উত্তরে)
- কর্ণফুলী নদী, যা পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহত্তম নদী (কেন্দ্রীয় অঞ্চল দিয়ে গেছে)
- সাঙ্গু ও মাতামুহুরী
তাজিনডং হলো এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ পাহাড়। যা বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়[২]
জাতিগোষ্ঠী
রাজমালা, চট্টগ্রামের ইতিহাস, বঙ্গদেশের ইতিহাস ও চট্টগ্রাম জেলা গেজেটিয়ারের সূত্রে জানা যায়, অতি স্মরণাতীত কাল থেকে খ্রিস্টীয় ১০ম শতাব্দী পর্যন্ত চট্টগ্রাম অঞ্চল ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে সংযুক্ত ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] অর্থাৎ তখন থেকে এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে ত্রিপুরারা। দশম শতাব্দীর পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রথমে ত্রিপুরা রাজের সাথে আরাকান রাজের এবং দ্বাদশ শতাব্দীর পরবর্তীকাল থেকে ত্রিপুরা, আরাকান ও গৌড়বঙ্গের মধ্যে ত্রিমুখী যুদ্ধ বিগ্রহাদি সংঘটিত হয়। ত্রিপুরাদের পর পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চীনা-তিব্বতি ভাষা পরিবারের অন্তর্গত ১১ টি জাতিগোষ্ঠী ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে। এই অঞ্চলে প্রধান তিনটি সম্প্রদায়- চাকমা, ত্রিপুরা এবং মারমাসহ সাড়ে ১৫ লক্ষ জন (২০২২ সালের পরিসংখ্যান) বসবাস করছে। এরা ছাড়াও আছে তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখো, মুরং, খিয়াং, বম, খুমি, চাক, এবং বিপুল সংখ্যক বাঙালি(৫০.০৬%)।[৩]
ধর্মবিশ্বাস
পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম। তবে অধিকাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চাকমা,মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং, চাক প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মালম্বী। ত্রিপুরারা প্রধানত হিন্দুধর্মালম্বী এবং বম, লুসাই , পাংখোয়া জনগোষ্ঠী খ্রিস্টধর্ম অনুসরণ করে। এছাড়া রয়েছে বিপুল সংখক বাঙালী মুসলমান ও হিন্দু।[৫]
ইতিহাস
৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল অধিকার করেন। ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এই এলাকা দখল করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই এলাকা পুনর্দখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রাখেন। বর্তমান নৃগোষ্ঠীগুলোর নাম (যেমন-মারমা), বিভিন্ন প্রশাসনিক পরিভাষা (যেমন- 'মাং' মানে গভর্নর, 'পো-মাং' মানে মহান অধিনায়ক বা 'রুয়াসা' বা 'রোয়াজা' মানে গ্রাম নেতা) মায়ানমারের সঙ্গে এ অঞ্চলের আদানপ্রদান প্রমাণ করে।[২] মুঘল ও প্রারম্ভিক ব্রিটিশ নথিপত্রে অঞ্চলের নাম জুমবঙ্গ, জুমমহল ও কপাসমহল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[৬][৭] মুঘল সাম্রাজ্য ১৬৬৬ হতে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবাহ বাংলার অধীনে শাসন করে। ১৭৬০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্তে আনে। ১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা এই এলাকার নাম দেয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্ট্স বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। ১৯৪৭ সালে এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি বাংলাদেশের জেলা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়।[৮] ১৯৮৪ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামকে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় বিভক্ত করা হয়।[৯]
অর্থনীতি
পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনীতি প্রায় পুরোপুরি ভূমির ওপর নির্ভরশীল। ভূমির ওপর নির্ভর করে পাঁচ ধরনের জীবিকা নির্বাহ করতে দেখা যায়:
- কৃষি
- পশুপালন
- ফলগাছ চাষ
- গৃহস্থালি কাজের জন্য কাঠ ও বাঁশ সংগ্রহ
- উদ্যান পরিচর্যা (হর্টিকালচার)
পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের ৮৩ শতাংশ ঘরের বাইরে কাজ করে থাকে অর্থাৎ, তারা বাহিরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। উল্লেখ্য,পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা পুরুষদের তুলনায় অধিক পরিশ্রমী হয় । [১০][পূর্ণ তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.