Loading AI tools
পানি দূষন সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পানি দূষণ (জল দূষণ) হল মানুষের কার্যকলাপের ফলে জলাশয়ে দূষণ ঘটা । জলাশয় বলতে হ্রদ, নদী, সমুদ্র, ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর এবং ভৌমজলকেই বোঝায়। স্বাভাবিক পরিবেশে পানিতে দূষণকারী পদার্থ উপস্থিত থাকলে তাকে পানি দূষণ বলা হয়। অপর্যাপ্তভাবে পরিশোধিত বর্জ্যজল যদি স্বাভাবিক জলাশয়ে জমা হয়, তবে তা জলজ বাস্তুতন্ত্রের পরিবেশগত অবনতি ঘটাতে পারে। এর ফলে, ভাটির দিকে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তারা এই দূষিত জল পান এবং স্নানের কাজে অথবা সেচের কাজে ব্যবহার করতে পারে। জলবাহিত রোগের প্রকোপে সারা বিশ্বে যত মানুষ আক্রান্ত হয় বা মারা যায়, তাদের বেশিরভাগই ঘটে জল দূষণের কারণে। [1][2]
পানি দূষণকে ভূ-পৃষ্ঠতলীয় দূষণ বা ভৌমজল দূষণ – এই দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। সমুদ্র দূষণ এবং পুষ্টি দূষণ – পানি দূষণের এই দুটি উপসেট । জল দূষণের উৎস দুটি হতে পারে - হয় বিন্দু উৎস নতুবা অ-বিন্দু উৎস। বিন্দু উৎসে দূষণের একটিমাত্র চিহ্নিতযোগ্য কারণ থাকে, যেমন বেনো জল বা বর্জ্যজল পরিশোধক কারখানা। অ-বিন্দু উৎস হল আরো বেশি বিস্তৃত, যেমন কৃষিজ জল।[3] বহু সময় ধরে ক্রমবর্দ্ধিত কাজের ফলেই দূষণ সৃষ্টি হয়। দূষিত জলাশয়ে থাকা অথবা এর সংস্পর্শে আসা সমস্ত গাছ এবং জীবই এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। দূষণের ফলে একক প্রজাতিগুলো ধ্বংস হতে পারে এবং এরা যে স্বাভাবিক জৈব সংগঠনের অন্তর্গত তারও ক্ষতি হতে পারে।
জল দূষণের কারণ হিসেবে প্রচুর রাসায়নিক এবং রোগ-জীবাণুর কথা বলা যেতে পারে; তাছাড়া অনেক ভৌত স্থিতিমাপও রয়েছে। দূষকগুলো জৈব অথবা অজৈব পদার্থের হতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রাও দূষিত জলের কারণ হতে পারে। তাপীয় দূষণের একটি সাধারণ কারণ হল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং শিল্পোৎপাদন কেন্দ্রে কুল্যান্ট হিসেবে জলের ব্যবহার। উচ্চ জলীয় তাপমাত্রা অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয় যার ফলে মাছ মারা যায় এবং খাদ্যশৃঙ্খলের উপাদানও পরিবর্তিত হয়, প্রজাতির বাস্তুতন্ত্র কমে আসে, এবং এর ফলে তাপের ফলে সৃষ্ট ব্যাকটিরিয়ার নতুন প্রজাতির উদ্ভব হয়।[4][5]
জলের নমুনা বিশ্লেষণ করে জল দূষণ পরিমাপ করা হয়। ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈব পরীক্ষা করা হতে পারে। সঠিক পরিকাঠামো এবং পরিচালনা পরিকল্পনার দ্বারাই জল দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। পরিকাঠামোর মধ্যে থাকতে পারে বর্জ্যজল পরিশোধক কারখানা। বর্জ্যনিকাশী পরিশোধক কারখানা এবং শিল্পজাত বর্জ্যজলের পরিশোধক কারখানা অশোধিত বর্জ্যজলের হাত থেকে জলাশয়গুলোকে রক্ষা করতে পারে। কৃষিখামারের ক্ষেত্রে কৃষিজ বর্জ্যজল পরিশোধন এবং নির্মাণ স্থানে ভূমিক্ষয় রোধের ব্যবস্থাও জলদূষণ প্রতিরোধ করতে পারে। জল দূষণ রোধের আরেকটি উপায় হল প্রকৃতি-কেন্দ্রিক সমাধান।[6] স্রোতের গতি এবং এর পরিমাণ কমিয়ে শহরের নিকাশী ব্যবস্থার কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, জল দূষণের জন্য সেরা পরিচালনা ব্যবস্থা হিসেবে জলের পরিমাণ কমানো এবং জলের মান উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।[7]
জল যদি মানুষবাহিত দূষক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে সেই জলকে দূষিত বলা হয়। এইসকল দূষকের ফলে এই জল হয় মানুষের ব্যবহারের যোগ্য হতে পারে না, যেমন জলপানের অযোগ্য হয়ে যায়, অথবা এই জলের জীবগোষ্ঠী ধারণের ক্ষমতাই নষ্ট হয়ে যায়, যেমন মাছ। আগ্নেয়গিরি, শৈবাল পুষ্প, ঝড়, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রাকৃতিক ঘটনার ফলেও জলের গুণাগুণে এবং এর বাস্তুতান্ত্রিক অবস্থায় প্রভূত পরিবর্তন দেখা দেয়।
জল দূষণ একটি বিশ্বব্যাপী গুরুতর সমস্যা। এর জন্য সর্বস্তরে (আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব্যক্তিগত ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তর এবং কুয়ো) জলসম্পদ নীতির মূল্যায়ন এবং পুনর্মূল্যায়ন জরুরী। মনে করা হয়, বিশ্বে যত রোগ ও মৃত্যু হয়, তার মুখ্য কারণ হল জল দূষণ।[1][2] ২০১৫ সালে ১৮ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল জল দূষণ।[8]
বৈশ্বিক সামুদ্রিক পরিবেশগত সমীক্ষা নামক সংস্থার মতে জল দূষণ হল অন্যতম প্রধান একটি পরিবেশগত সমস্যা যেটা পরবর্তী দশকগুলোতে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বকে সংকটে ফেলে দিতে পারে। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন যেগুলো ৭০% অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং পৃথিবীর কার্বন-ডাই-অক্সাইডের একটি বড়ো অংশ শোষণ করে, জল দূষণ তাদের জন্য একটি অন্যতম সমস্যা। এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য সংস্থা থেকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো কার্যকরী হতে দশ বছর সময় লাগবে।[9][10][11]
ভারত এবং চীন এই দুই দেশে জল দূষণের মাত্রা অত্যন্ত বেশি। ভারতে প্রতিদিন আনুমানিক ৫৮০জন মানুষ জল দূষণজনিত রোগে (জলবাহিত রোগসমেত) মারা যায়।[12] চীনের শহরের জলের প্রায় ৯০ শতাংশই দূষিত।[13] ২০০৭ সালের হিসেবানুযায়ী, চীনের পাঁচ লক্ষ মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের থেকে বঞ্চিত।[14]
উন্নয়নশীল দেশের এই চূড়ান্ত জল দূষণের পাশাপাশি, উন্নত দেশগুলোও কিন্তু দূষণজনিত সমস্যা নিয়ে লড়াই করে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জলের মান রিপোর্টে বলা হয়েছে যে যত মাইল প্রবাহের মূল্যায়ন করা হয়েছে তার ৪৪ শতাংশ, মূল্যায়িত হ্রদের একরের ৬৪ শতাংশ এবং উপসাগর ও মোহনার স্কোয়্যার মাইলের ৩০ শতাংশকে দূষিত বলে জানানো হয়েছে।[15]
খাদ্য প্রকৃতি | ইউট্রোফিকেশন নির্গমন (প্রতি ১০০ গ্রাম প্রোটিনে গ্রাঃ PO43-eq) |
---|---|
গরুর মাংস | ৩৬৫.৩ |
চাষ করা মাছ | ২৩৫.১ |
চাষ করা ক্রাস্টাসিয়ানস | ২২৭.২ |
পনীর | ৯৮.৪ |
ভেড়া ও ভেড়ার মাংস | ৯৭.১ |
শুয়োরের মাংস | ৭৬.৪ |
মুরগী খামার | ৪৮.৭ |
ডিম | ২১.৮ |
চীনাবাদাম | ১৪.১ |
মটরশুঁটি | ৭.৫ |
তোফু | ৬.২ |
ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণের মধ্যে রয়েছে নদী, হ্রদ এবং সমুদ্রের দূষণ। ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণের একটি বিভাগ হল সামুদ্রিক দূষণ।
সমুদ্রে দূষিত পদার্থের আগমনের একটি সাধারণ পথ হল নদীর জল। এর একটি উদাহরণ হল, নর্দমার জল এবং কারখানার বর্জ্য সরাসরি সমুদ্রে গিয়ে ফেলা। উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই বিশেষ করে এই ধরনের দূষণ দেখা যায়। বাস্তবিক, সারা বিশ্বের ১০টি সর্ববৃহৎ সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণকারী দেশকে বেশি থেকে কম এই ক্রমে সাজালে হয় – চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস্, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, মিশর, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া এবং বাংলাদেশ;[17] যেসকল নদীগুলোর মাধ্যমে সমুদ্র দূষিত হয় তারা হল ইয়াঙ্গটজে, সিন্ধু, পীতনদী, হাই, নীল, গঙ্গা, পার্ল, আমুর, নাইজের ও মেকং এবং “পৃথিবীতে সমুদ্রে যত প্লাস্টিক জমা হয়, তার ৯০শতাংশ এইসকল নদীগুলো দ্বারা বাহিত হয়”।[18][19]
প্লাস্টিক আবর্জনা সমুদ্রের বড় বড় বলয়ের (ঘুর্ণি) মধ্যে আটকে পড়ে। প্লাস্টিক আবর্জনাগুলো সামুদ্রিক দূষণে সৃষ্ট বিষাক্ত পদার্থগুলোকে শোষণ করে নেয় যার ফলে সামুদ্রিক জীব এগুলো খেয়ে ফেললে তাদের শরীরেও বিষ প্রবেশ করতে পারে।[20] এইসকল দীর্ঘজীবী পদার্থগুলো অনেক সময়েই শেষমেশ সামুদ্রিক পাখি এবং প্রাণীদের পেটে চলে যায়। এর ফলে তাদের হজমের পথ আটকে যায়, যার ফলে তাদের খিদে কমে যায় অথবা এর থেকে তারা অনাহারেও ভুগতে পারে।
মূল দূষক ছাড়াও, তার লব্ধ পরিস্থিতিরও অনেক ধরনের অপ্রত্যক্ষ প্রভাব থাকে। যেমন ভূপৃষ্ঠে জলের স্রোতে পলি ভেসে থাকলে জলস্তম্ভের মধ্যে দিয়ে সূর্যরশ্মি প্রবেশ করতে পারে না এবং এর ফলে জলজ উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
ভৌমজল এবং ভূপৃষ্ঠতলীয় জলের মধ্যেকার যোগাযোগটা কিছুটা জটিল। যার ফলে, ভৌমজল দূষণকে ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণ বলা যায় না।[21] প্রকৃতিগত কারণেই, ভূগর্ভস্থ সিক্ত শিলাস্তরের দূষিত হওয়ার প্রবণতা রয়েছে, কিন্তু এই দূষণের উৎস ভূপৃষ্ঠতলীয় জলাশয়ের প্রত্যক্ষ ক্ষতি নাও করতে পারে। বিন্দু বনাম অ-বিন্দু উৎসের পার্থক্য কিছু ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে।
ভৌমজলের দূষণের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাটির বৈশিষ্ট্য এবং স্থানের ভূতত্ত্ব, জল ভূতত্ত্ব, জলবিদ্যা এবং দূষকের প্রকৃতির ওপর নজর দেওয়া হয়। ভৌমজলের দূষণের কারণের মধ্যে যেগুলো থাকে তা হল: সাধারণভাবে ঘটা (জিওজেনিক), স্থানটার শৌচব্যবস্থা, নিকাশি ব্যবস্থা, সার এবং কীটনাশকের ব্যবহার, বাণিজ্যিক এবং কলকারখানার অবাঞ্ছিত বহির্গমন, হাইড্রলিক ফাটল, ল্যান্ডফিল লিচেট।
ভূপৃষ্ঠতলীয় জল এবং ভৌমজল দুটি পৃথক সম্পদ হিসেবে প্রায়শই চর্চিত এবং আলোচিত হয়, যদিও এদের মধ্যে আন্তর্যোগ রয়েছে।[21] ভূপৃষ্ঠতলীয় জল মাটির মধ্যে দিয়ে চুঁইয়ে যায় এবং ভৌমজলে রূপান্তরিত হয়। বিপরীতক্রমে, ভৌমজলও ভূপৃষ্ঠতলীয় জলের যোগান দিতে পারে। ভূপৃষ্ঠতলীয় জল দূষণের উৎসকে সাধারণত দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়।
দূষণকারী পদার্থ যদি একটি নির্দিষ্ট চিহ্নিতযোগ্য উৎস থেকে জলপ্রবাহে যুক্ত হয় (যেমন নলের মাধ্যমে, অথবা খানার মধ্যে দিয়ে), তবে তাকে বিন্দু উৎস জল দূষণ বলা হয়। এই ধরনের উৎসের উদাহরণ হিসেবে বলা যায় কোন নিকাশী জলের পরিশোধনকারী কারখানা, কোন শিল্পকারখানা, অথবা শহরের কোন বেনোজলের নর্দমা।
ইউ.এস ক্লিন ওয়াটার অ্যাক্ট (সিডব্লুএ) বিন্দু উৎসের কেবলমাত্র নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৈরি হয়েছিল।[22] সিডব্লুএর এই সংজ্ঞা ১৯৮৭ সালে সংশোধিত হয় এবং এর ফলে এতে পৌরসভার বেনোজল নিকাশী ব্যবস্থা, শিল্পকারখানার অতিরিক্ত জলও (যেমন নির্মাণ স্থানে) স্থান পায়।[23]
অ-বিন্দু উৎস দূষণ বলতে যেখানে একটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে দূষণ ছড়ায় না, তাকে বোঝায়। এইধরনের দূষণ প্রায়শই একটি বৃহৎ অঞ্চলে অল্প পরিমাণ দূষণকারী পদার্থ জমা হতে হতে তার ক্রমবর্ধিত রূপের ফলে তৈরি হয়। এর একটি সাধারণ উদাহরণ হল সারযুক্ত কৃষিজমিতে নাইট্রোজেন যৌগের লিচিংয়ের ফলে বেরিয়ে যাওয়া।[3] কৃষিক্ষেত্রে অথবা বনাঞ্চলে বেনোজলের সাথে মাটির উপাদান বেরিয়ে যাওয়াকেও অ-বিন্দু উৎস দূষণের উদাহরণ বলা যেতে পারে।
পার্কিং স্থান, রাস্তাঘাট এবং বড়ো সড়ক থেকে দূষিত বেনোজলের নিকাশ, যাকে শহরের রানঅফ বলা হয়, তাও কিন্তু অ-বিন্দু উৎসের শ্রেণীতেই গণ্য হয়। এই রানঅফ একটি বিন্দু উৎসও হয়ে যেতে পারে কারণ এটাকে বিশেষভাবে বেনোজলের নিকাশী ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রবাহিত করা হয় এবং নলের মাধ্যমে তা স্থানীয় পৃষ্ঠতলীয় জলের মধ্যে গিয়ে মেশে।
জল দূষণকারী নির্দিষ্ট পদার্থগুলো রাসায়নিক, রোগ সংক্রামক জীবাণু, এবং ভৌত পরিবর্তন যেমন উচ্চ তাপমাত্রা এবং বিবর্ণতার মত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। রাসায়নিক এবং অন্যান্য পদার্থ যাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেসব পদার্থ প্রাকৃতিক হতে পারে (যেমন ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি), কিন্তু প্রকৃতিতে তাদের ঘনত্ব দ্বারা বোঝা যায়, তারা জলের স্বাভাবিক উপাদান না কি দূষক। প্রাকৃতিক উপাদানের উচ্চ ঘনত্ব জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর ওপরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া পদার্থের মধ্যে প্রাকৃতিক বস্তু থাকতে পারে, যেমন উদ্ভিদের অংশ (উদাঃ পাতা এবং ঘাস), আবার মনুষ্যসৃষ্ট রাসায়নিক পদার্থও থাকতে পারে। অন্যান্য প্রাকৃতিক এবং অ্যানথ্রোপোজেনিক পদার্থ জলে টার্বিডিটি (মেঘাচ্ছন্নতা) সৃষ্টি করতে পারে যা আলো প্রবেশে বাধা দেয়, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং মাছের কিছু প্রজাতির ক্ষেত্রে ফুলকাকে আটকে দেয়।[24]
জলের ভৌত রাসায়নিক অবস্থার পরিবর্তনের জন্য দায়ী যেসকল বিষয় তা হল অম্লত্ব (পিএইচ মাত্রার পরিবর্তন), বৈদ্যুতিক পরিবাহীতা, তাপমাত্রা এবং ইউট্রোফিকেশন। ইউট্রোফিকেশনের মাধ্যমে একটি বাস্তুতন্ত্রে রাসায়নিক উপাদানগুলোকে বাড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে বাস্তুতন্ত্রটির প্রাথমিক উৎপাদন ক্ষমতার বৃদ্ধি হয়। ইউট্রোফিকেশনের মাত্রার ওপর পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাব নির্ভর করে যেমন এর ফলে অ্যানোক্সিয়া (অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া) হতে এবং জলের মান গুরুতরভাবে হ্রাস পেতে পারে যার ফলে মাছ এবং অন্যান্য প্রাণীকুলের ক্ষতি হয়।
রোগসৃষ্টিকারী অণুজীবগুলোকে রোগ সংক্রামক জীবাণু বা প্যাথোজেন বলা হয়। এইসকল জীবাণুগুলো মানবদেহে বা প্রাণীদেহে জলবাহিত রোগ সৃষ্টি করতে পারে।[25] কলিফর্ম ব্যাকটিরিয়া জলবাহিত রোগের প্রকৃত কারণ না হলেও এদেরকেই জল দূষণের একটি ব্যাকটিরিয় মানদণ্ড হিসেবে সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য যেসকল অণুজীব দূষিত ভূপৃষ্ঠতলীয় জলে পাওয়া যায় এবং যেগুলো মানব শরীরের ক্ষতিসাধন করে সেগুলো হল:
রোগ সংক্রামক জীবাণু সেই নির্দিষ্ট স্থানটির শৌচব্যবস্থা (মলশোধন প্রকোষ্ঠ বা সেপটিক ট্যাঙ্ক, খাটা পায়খানা) অথবা অপর্যাপ্তরূপে শোধিত নিকাশী জলের থেকে অধিক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে।[28] পুরোনো শহরের পুরোনো পরিকাঠামোর নিকাশী ব্যবস্থায় অবাঞ্ছিত বহির্গমনের (নল, পাম্প, ভালভের ফাটল) ফলে নর্দমার দূষিত জল বাইরে চলে আসতে পারে। কিছু শহরে সংযুক্ত নিকাশী ব্যবস্থা আছে যেগুলোর দূষিত জল ঝড় বৃষ্টির সময়ে অপরিশোধিত অবস্থাতেই বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।[29] নর্দমার দূষিত জলের পাঁকও (অধঃক্ষিপ্ত) জলাশয়কে দূষিত করে।
গৃহপালিত পশু সংক্রান্ত কাজকর্ম যেখানে চলে সেসব জায়গা খারাপভাবে পরিচালিত হলেও রোগজীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।
এইসকল দূষণকারী পদার্থগুলো জৈব এবং অজৈব পদার্থ হতে পারে। অনেক রাসায়নিক পদার্থও বিষাক্ত হয়।[5]
জৈব জল দূষকের মধ্যে যেগুলো পড়ে, তা হল:
অজৈব জল দূষণকারী পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ম্যাক্রোস্কোপিক দূষণ – জল দূষণকারী দৃশ্যমান বড়ো বড়ো পদার্থ – যেগুলোকে শহরের ঝোড়ো জলের প্রেক্ষিতে ভাসমান বলা চলে, অথবা সামুদ্রিক জঞ্জাল যখন উন্মুক্ত সাগরে পাওয়া যায় এবং এইধরনের পদার্থগুলোকে নিম্নলিখিতভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়:
মানুষের দ্বারা স্বাভাবিক জলাশয়ে তাপমাত্রার উত্থান অথবা পতন হলে তাকে তাপীয় দূষণ বলে। তাপীয় দূষণের ফলে জলের ভৌত ধর্মে পরিবর্তন দেখা যায়, যা রাসায়নিক দূষণে হয় না। তাপীয় দূষণের একটা সাধারণ কারণ হল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে এবং শিল্প নির্মাতাদের দ্বারা ব্যবহৃত কুল্যান্টে জলের ব্যবহার। জলের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে তা জলের অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস করে, যা মৎস্যকুলকে ধ্বংস করে এবং খাদ্য শৃঙ্খল উপাদানের পরিবর্তন ঘটায়, প্রজাতির জীববৈচিত্র্য হ্রাস করে, এবং উষ্ণতায় তৈরি হয় এমন কিছু নতুন প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘটে।[4][5][33] শহরের বয়ে আসা জলও ভূপৃষ্ঠতলীয় জলের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারে।[34]
জলাধারের তল থেকে খুব শীতল জল অপেক্ষাকৃত উষ্ণ নদীতে উন্মুক্ত হলেও তাপীয় দূষণ ঘটে।
জল দূষণকে পদ্ধতিগতভাবে বেশ কয়েকটি বৃহৎ ভাগে ভাগ করা যায়: ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈব। বেশিরভাগের মধ্যেই রয়েছে নমুনা সংগ্রহ, এবং তারপর বিশেষভাবে কৃত বিশ্লেষণমূলক পরীক্ষা। কিছু কিছু পদ্ধতি যথাস্থানেই অবলম্বন করা হয়, নমুনা ছাড়াই, যেমন তাপমাত্রা। সরকারি সংস্থা এবং গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান প্রমিত, বৈধ বিশ্লেষণমূলক পরীক্ষা পদ্ধতিগুলো প্রকাশ করে যাতে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার ঘটনা থেকে প্রাপ্ত ফলের তুলনা করা যেতে পারে।[35]
দূষণকারী পদার্থের চরিত্র এবং সূক্ষ্যতার প্রয়োজনীয়তার ওপর নির্ভর করে ভৌত ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য জলের নমুনা সংগ্রহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা যেতে পারে। দূষণের অনেক ঘটনা (বিশেষ করে যেগুলো বৃষ্টির সাথে যুক্ত) সূক্ষ্মভাবে সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই কারণে সহজে উপলব্ধ নমুনাগুলো দূষণকারী পদার্থের মাত্রা নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়। বিজ্ঞানীরা এই ধরনের তথ্য জোগাড় করে স্ব-নমুনা পরীক্ষক যেটি কোন এক সময়ে অথবা জল নিকাশের অন্তর্বতীকালীন সময়ে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে।
জৈব পরীক্ষার নমুনা হিসেবে ভূপৃষ্ঠতলীয় জলাশয় থেকে উদ্ভিদ এবং প্রাণী সংগ্রহ করতে হয়। কি ধরনের মূল্যায়ন করা হবে তার ওপর নির্ভর করে এদের জীবসুমারি (সংখ্যা গণন) করা হয় ও জলাশয়ে ফেরত পাঠানো হয়, অথবা তাদের ব্যবচ্ছেদ করে বায়োঅ্যাসে করে শরীরে বিষের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।
জলের সাধারণ ভৌত পরীক্ষাগুলো হল, তাপমাত্রা, কঠিন বস্তুর ঘনত্ব (উদাঃ সমগ্র প্রলম্বিত কঠিন বস্তু) এবং টার্বিডিটি।
বিশ্লেষণী রসায়নের নীতি ব্যবহার করে জলের নমুনা পরীক্ষা করা হতে পারে। জৈব এবং অজৈব যৌগের জন্য অনেক প্রকাশিত পরীক্ষা পদ্ধতি রয়েছে। প্রায়শই ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলো হল, পিএইচ, জৈবরাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা (বিওডি),[36] রাসায়নিক অক্সিজেন চাহিদা (সিওডি),[36] পুষ্টিযুক্ত উপাদান (নাইট্রেট এবং ফসফরাস যৌগ), ধাতু (তামা, দস্তা, ক্যাডমিয়াম, সীসা এবং পারদ), তেল এবং গ্রীজ, সমস্ত পেট্রোলিয়াম হাইড্রোকার্বন, এবং কীটনাশক।
জৈব পরীক্ষায় উদ্ভিদ, প্রাণী অথবা অণুজীবীয় সূচক ব্যবহার করে জলের বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য নিরীক্ষণ করা হয়। এগুলো যেকোন জৈব প্রজাতি অথবা প্রজাতিগোষ্ঠী হতে পারে যাদের কাজ, সংখ্যা অথবা অবস্থা বলে দিতে পারে সেই স্থানে বাস্তুতন্ত্র অথবা পরিবেশগত অখণ্ডতা কতখানি বজায় রয়েছে।[37] এইধরনের জৈব-সূচক গোষ্ঠীর একটি উদাহরণ হল কোপপড এবং অন্যান্য ছোট জলাশয়ের ক্রাস্টাসিয়ানস যেগুলো অনেক জলাশয়ে পাওয়া যায়। এইধরনের জীবগুলোর পরিবর্তন (জৈবরাসায়নিক, শারীরবৃত্তীয়, অথবা আচরণগত) নিরীক্ষণ করে বোঝা যায় তাদের বাস্তুতন্ত্রে কোন সমস্যা আছে কি না।
উন্নত দেশের শহরে, পৌরসভার বর্জ্যজল (অথবা নিকাশী জল) কেন্দ্রীভূত নিকাশী জলের শোধনকারী কারখানা দ্বারা বিশেষভাবে পরিশোধিত হয়। ভালোভাবে পরিকল্পিত এবং পরিচালিত ব্যবস্থার মাধ্যমে (যেমন, মাধ্যমিক শোধনকারী পদক্ষেপ অথবা আরো উন্নত শোধন) ৯০ শতাংশ বা তার বেশি দূষণকারী পদার্থ নিকাশী জল থেকে দূর করা যায়।[38] কোন কোন কারখানায় অতিরিক্ত ব্যবস্থা থাকে যাতে পুষ্টিকর উপাদান এবং রোগ সংক্রামক জীবাণু দূর করা যেতে পারে, কিন্তু এইসকল আরো উন্নত শোধনমূলক পদক্ষেপ ক্রমশই আরো বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে।
কেন্দ্রীভূত শোধনকারী কারখানার পরিবর্তে (অথবা পাশাপাশি) পরিবেশভিত্তিক সমাধানও ব্যবহার করা হচ্ছে।[6]
যেসব শহরে শৌচালয়ের নর্দমার জল উপচে পড়ে অথবা সংযুক্ত নর্দমার জল উপচে পড়ে তারা সেইসব অশোধিত নির্গমন রোধ করতে এক বা একাধিক প্রকৌশলী ব্যবস্থা নেয়, যার মধ্যে রয়েছে:
যেসকল অঞ্চলে পৌরসভার শোধনকারী কারখানা নেই সেসকল জায়গায় অবস্থিত বাড়ির এবং ব্যবসায়ী অঞ্চলে ব্যক্তিগত সেপ্টিক ট্যাঙ্ক বা মলশোধনকারী প্রকোষ্ঠ থাকে যা সেই নির্দিষ্ট স্থানের বর্জ্যজলকে পূর্বেই শোধন করে দেয় এবং তা মাটিতে গিয়ে চুঁইয়ে জমা হয়। ভুল পরিকল্পিত অথবা স্থাপিত সেপ্টিক ব্যবস্থা ভৌমজলের দূষণ ঘটাতে পারে।
জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম ফর ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশনের একটি হিসেব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সমগ্র বিশ্বে প্রায় ৪৫ কোটি মানুষের কাছে নিরাপদভাবে পরিচালিত কোন স্যানিটেশন নেই।[40] স্যানিটেশনের অভাবে প্রায়শই জল দূষণ হয়, যেমন উন্মুক্ত মলত্যাগের অভ্যাসের মাধ্যমে: বৃষ্টি অথবা বন্যায় মানুষের মল মাটির তলায় চলে যায় যেখান থেকে সেগুলো ভূপৃষ্ঠতলীয় জলে জমা হতে থাকে। সাধারণ খাটা পায়খানাও বৃষ্টির জলে প্লাবিত হতে পারে। নিরাপদভাবে পরিচালিত স্যানিটেশন ব্যবস্থার ফলে এই ধরনের জল দূষণ রোধ করা যেতে পারে।[40]
কিছু শিল্পকারখানা থেকে বর্জ্যজল নিষ্কাশিত হয় যেগুলো গৃহস্থ বর্জ্যজলের মতই এবং নিকাশী জলের শোধনকারী কারখানা কর্তৃক পরিশোধিত করা যেতে পারে। যেসকল কলকারখানা থেকে বর্জ্যজলের সাথে উচ্চ ঘনত্বের জৈব পদার্থ (যেমন, তেল ও গ্রীজ), বিষাক্ত দূষণকারী পদার্থ (যেমন, ভারী ধাতু, উদ্বায়ী জৈব যৌগ) অথবা জৈব উপাদান যেমন অ্যামোনিয়া নির্গত হয়, তাদের বিশেষ রকম শোধনকারী ব্যবস্থা প্রয়োজন হয়।[41] ছোটখাটো কলকারখানাগুলো একটি প্রাক-শোধনকারী ব্যবস্থা স্থাপন করে যার দ্বারা কিছু দূষণকারী পদার্থ বেরিয়ে যায় (যেমন, বিষাক্ত যৌগ), এবং তারপর এরা সেই অর্ধপরিশোধিত বর্জ্যজল পৌরসভার নিকাশী ব্যবস্থায় মুক্ত করে।[42][43] যেসকল কলকারখানার বর্জ্যজলের পরিমাণ অত্যন্ত অধিক হয়, তারা নিজস্ব শোধনকারী ব্যবস্থা পরিচালনা করে। কিছু কলকারখানা তাদের নির্মাণ পদ্ধতির পুনর্পরিকল্পনা করে দূষণকারী পদার্থের দূরীকরণ অথবা হ্রাস করতে সফল হয়েছে; এই পদ্ধতিকে বলা হয় দূষণ রোধ।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র অথবা নির্মাণ কারখানা থেকে উৎপন্ন বর্জ্যজলের তাপ দূর করতে নিম্নলিখিত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সবথেকে বেশি পরিমাণ কৃষি দূষণ অধঃক্ষিপ্ত পলি (মাটির গুঁড়ো) জমি থেকে ধুয়ে যাবার ফলে ঘটে থাকে।[24] কৃষকরা ভূমিক্ষয় রোধ করার মাধ্যমে এইধরনের ধুয়ে যাওয়া রোধ করতে পারেন এবং মাটিকে তাঁদের কৃষিক্ষেত্রে ধরে রাখতে পারেন। কনট্যুর প্লাওয়িং, ক্রপ মালচিং, ক্রপ রোটেশান, বহুবর্ষজীবী শস্যের চাষ এবং রিপারিয়ান বাফার স্থাপন করা প্রভৃতি হল ভূমিক্ষয় রোধের সাধারণ কিছু উপায়।[45][46] কৃষিক্ষেত্রে যেসকল সার উপাদান (নাইট্রোজেন ও ফসফরাস) প্রয়োগ করা হয় তা হল, বাণিজ্যিক সার, পশুর বর্জ্য, অথবা পৌরসভার বা কলকারখানার বর্জ্যজল (প্রবাহ) বা কাদামাটি ছড়িয়ে দেওয়া। এইসকল সার উপাদানগুলো শস্যের শেষাংশ, সেচ জল, বন্য প্রাণী এবং পরিবেশগত সঞ্চয়ের মাধ্যমেও প্রবাহে মিশতে পারে।[46] কৃষকরা সার উপাদান ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা করে সারের অতিরিক্ত প্রয়োগ কমাতে পারেন এবং সার উপাদান দূষণের সম্ভাবনাকে কমাতে পারেন।[45][46] কীটনাশকের প্রভাব কমাতে, কৃষকরা সম্মিলিত কীট ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন (যার মধ্যে থাকতে পারে জৈব কীট দমন) যার ফলে কীটের ওপর নিয়ন্ত্রণও রাখা যাবে আর অন্যদিকে রাসায়নিক কীটনাশকের ওপর নির্ভরশীলতাও কমবে; এতে জলের গুণমান বজায় রাখা সম্ভব হবে।[47]
যেসকল খামারে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে পশুর অথবা মুরগী সংক্রান্ত কাজকর্ম করা হয়, যেমন খামার কারখানা সেগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কনসেন্ট্রেটেড্ অ্যানিমাল ফিডিং অপারেশনস্ অথবা ফিডলটস্ বলা হয় এবং এগুলোকে বেশি পরিমাণে সরকারি নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়েছে।[48][49] পশুর বর্জ্যের অধঃক্ষিপ্ত অংশকে অবায়বীয় হ্রদের মধ্যে রেখে শোধন করা হয় এবং তারপর স্প্রে করে বা চুঁইয়ে ফেলার মাধ্যমে ঘাসজমিতে উন্মুক্ত করা হয়। পশুর বর্জ্যের শোধনের জন্য অনেকসময় নির্মিত জলাভূমিও ব্যবহৃত হয়। কিছু পশুর বর্জ্যকে আবার খড়ের সাথে মিশিয়ে শোধন করা হয় এবং উচ্চ তাপমাত্রায় মিশ্রসারে রূপান্তরিত করে তাকে ব্যাকটিরিয়াগতভাবে নির্বীজ করে তোলা হয় এবং এভাবে খাঁটি সারে পরিণত করে মাটির উন্নতি করা হয়। এইসকল প্রযুক্তিকে "বিন্দু উৎস নিয়ন্ত্রণ" বলা হয়।
নির্মাণ অঞ্চলের পলি অধঃক্ষেপ নিম্নলিখিত উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়:
মোটরগাড়ির জ্বালানির মত বিষাক্ত রাসায়নিকের নির্গমন এবং তার ধৌতকরণকে নিম্নলিখিত উপায়ে রোধ করা যায়:
শহরের প্রবাহের নিয়ন্ত্রণ করতে হলে ঝোড়োজলের প্রবাহ এবং গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ জরুরি এবং তার সাথে দরকার দূষকের নির্গমন রোধ। স্থানীয় সরকার ঝোড়োজলের ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে শহরের প্রবাহের ফল নিয়ন্ত্রণ করে। এইসকল প্রযুক্তি, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জল দূষণের জন্য সবচেয়ে সেরা ব্যবস্থাপনা বলে উল্লেখ করেছে, তার দ্বারা জলের গুণমান নিয়ন্ত্রণ করা যায়, অন্যান্য ক্ষেত্রে জলের গুণমানের উন্নতি করাও সম্ভব এবং কিছু ক্ষেত্রে উভয়ই করা যায়।[7]
দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য লো-ইমপ্যাক্ট ডেভেলপমেন্ট প্রযুক্তিরও ব্যবহার করা যেতে পারে, সবুজ ছাদ স্থাপন এবং রাসায়নিকের উন্নত ব্যবহার (যেমন মোটর জ্বালানি এবং তেলের নিয়ন্ত্রণ, সার এবং কীটনাশক)।[52] প্রবাহ কমানোর জন্য ইনফিল্ট্রেশন বেসিন, বায়োরিটেনশন ব্যবস্থা, নির্মিত জলাভূমি, রিটেনশন বেসিন এবং এইধরনের আরো অন্যান্য উপায়।[53][54]
প্রবাহ থেকে ঘটা তাপীয় দূষণকে ঝোড়োজলের ব্যবস্থাপনা উপায় দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা যায় যার ফলে এই প্রবাহকে শুষে নেওয়া হয় অথবা ভৌমজলের মধ্যে উন্মুক্ত করা হয়, যেমন বায়োরিটেনশন ব্যবস্থা এবং ইনফিলট্রেশন বেসিন। গ্রহণকারী প্রবাহের মধ্যে নির্গমনের আগে সূর্যের উত্তাপে জল গরম হয়ে যাওয়ায় রিটেনশন বেসিন কম তাপমাত্রায় কম কার্যকরী হতে পারে।[7]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.