Remove ads
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর একটি অংশ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
দেবীমাহাত্ম্যম্ বা দেবীমাহাত্ম্য (সংস্কৃত: देवीमाहात्म्यम्) একটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থ। এই গ্রন্থে মহিষাসুরকে পরাজিত করে দেবী দুর্গার(পার্বতীর কাত্যায়নী অবতার) বিজয়কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। দেবীমাহাত্ম্যম্ প্রকৃতপক্ষে 'মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর একটি অংশ। প্রাচীন বৈদিক ও পৌরাণিক যুগে এই গ্রন্থ রচিত হলেও আধুনিক সমাজ এটি পুঁথি বা গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয় খ্রিষ্টীয় ৪০০-৫০০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে। প্রাচীন মুনি ঋষিদের কাছে এটি দৈব ঘটনার স্মৃতি শ্রূতি হিসেবে ছিল। কথিত আছে, এই গ্রন্থের রচয়িতা ঋষি মার্কণ্ডেয়।
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থটি দুর্গা সপ্তশতী (সংস্কৃত: ढुर्गासप्तशती) বা কেবলমাত্র সপ্তশতী (সংস্কৃত: सप्तशती), চণ্ডী (সংস্কৃত: चण्डी) বা চণ্ডীপাঠ (সংস্কৃত: चण्डीपाठः) নামেও পরিচিত। শেষোক্ত নামটি গ্রন্থপাঠের অনুষঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অন্যদিকে দেবীমাহাত্ম্যম্ তেরোটি অধ্যায়ে মোট ৭০০ শ্লোক বর্তমান। এই কারণে এই গ্রন্থের অপর নাম দুর্গা সপ্তশতী বা সপ্তশতী। দেবীমাহাত্ম্যম্ শাক্তধর্মের সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ।[1]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে বৈদিক পুরুষতান্ত্রিক দেবমণ্ডলীর সঙ্গে সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব নবম সহস্রাব্দ থেকে বিদ্যমান নৃতাত্ত্বিক মাতৃপূজাকেন্দ্রিক সংস্কৃতির এক সম্মিলনের প্রয়াস লক্ষিত হয়।[2] এই গ্রন্থে ঈশ্বরের নারীসত্ত্বার উপর অধিক গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে। গ্রন্থে পূর্বপ্রচলিত আর্য ও অনার্য দেবীমাতৃকাকেন্দ্রিক কয়েকটি পুরাণকথাকে অত্যন্ত দক্ষতার সহিত একক উপাখ্যানসূত্রে গ্রথিত করা হয়েছে।[3] এখানে দেবী স্বয়ং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শক্তি; তিনি পুরুষতান্ত্রিক ধর্মচেতনার কোনো ম্রিয়মান পুরুষদেবতার সঙ্গিনীমাত্র নন। হিন্দু পুরাণে দেবীশক্তির এই রূপান্তর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এছাড়াও, গ্রন্থে সাংখ্য দর্শনের সঙ্গে কাহিনির একটি যোগসূত্রও বিদ্যমান।
আনুষ্ঠানিক পাঠের নিমিত্ত পরবর্তীকালে মূল গ্রন্থের সঙ্গে বেশ কয়েকটি প্রক্ষিপ্ত অধ্যায় সংযোজিত হয়। নবরাত্রি উৎসবের সময় দেবীর সম্মানে চণ্ডীপাঠের বিশেষ প্রথা রয়েছে। পূর্ব ভারতে, বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপূজা সহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে চণ্ডীপাঠ করা হয়ে থাকে। দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের নির্বাচিত অংশ নিয়ে ১৯৩০-এর দশকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উপস্থাপনায় এবং বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী পঙ্কজকুমার মল্লিকের সুরসংযোজনায় মহিষাসুরমর্দিনী নামে একটি বিশেষ প্রভাতী বেতার অনুষ্ঠান আকাশবাণীতে সম্প্রচারিত হয়। দুর্গাপূজার প্রাকমুহুর্তে মহালয়ার দিন ভোরে বেতারে সম্প্রচারিত এই অনুষ্ঠানটি আজও একই প্রকার জনপ্রিয়।
সংস্কৃত মহাত্মা বিশেষ্য পদটির বিশেষণ হল মাহাত্ম্য। এর অর্থ "মহিমা, মহত্ব, গৌরব"।[4] তৎপুরুষ সমাস দেবীমাহাত্ম্যম্ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ তাই "দেবীর মহিমা বা গৌরবগাথা"।
এই গ্রন্থের শ্লোকসংখ্যা ৭০০। এই কারণে গ্রন্থের অপর নাম হয়েছে সপ্তশতী। অন্য একটি মতে, এই গ্রন্থের নাম হওয়া উচিত সপ্তসতী; কারণ এই গ্রন্থে সাতজন "সতী" অর্থাৎ পবিত্র রমণীর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। সপ্তমাতৃকা নামে পরিচিত এই সাত দেবী হলেন – ব্রাহ্মী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, ইন্দ্রাণী ও চামুণ্ডা।[5]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে সর্বোচ্চ দেবীসত্ত্বা চণ্ডী বা চণ্ডিকা নামে পরিচিত। চণ্ডিকা শব্দের অর্থ অতিকোপনা স্ত্রী।[6] এই শব্দটি বিশেষণ চণ্ড শব্দ থেকে আগত, যার অর্থ উগ্র, ভীষণ।[7] এই শব্দটি বৈদিক সাহিত্যে পাওয়া যায় না। মহাভারতের একটি রচনা-পরবর্তীকালীন প্রক্ষিপ্তাংশে এই শব্দটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। উক্ত গ্রন্থে চণ্ডা ও চণ্ডী শব্দদুটি উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।[8]
ভারততত্ত্ববিদেরা দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থটিকে পুরাণ সাহিত্যের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করেন। এই কারণে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগেই বিভিন্ন ইউরোপীয় ভাষায় এই গ্রন্থের অনুবাদ প্রকাশিত হয়। ১৮২৩ সালে গ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশের পর ১৮২৪ সালে ফরাসি ভাষায় দেবীমাহাত্ম্যম্-এর উদ্ধৃতাংশ সহ ব্যাখ্যা প্রকাশিত হয়। ১৮৩১ সালে এই গ্রন্থটি লাতিন ও ১৮৫৩ সালে গ্রিক ভাষায় অনূদিত হয়।[9]
এছাড়াও দেবীমাহাত্ম্যম্ প্রায় সকল ভারতীয় ভাষাতেই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া এই গ্রন্থের একাধিক ভাষ্য ও গ্রন্থসম্পর্কিত অনুষ্ঠানপ্রণালীও সুলভ। তবে এই সকল ভাষ্য ও অনুষ্ঠানপ্রণালী ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের।
দেবীমাহাত্ম্যম্ শাক্ত দর্শনের বাইবেল নামে পরিচিত।[10] শাক্ত মতবাদের উৎস তথা মূলভিত্তি এই গ্রন্থটিই।[11] শাক্ত সংস্কৃতি এই গ্রন্থটিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে।[12]
টমাস বি. কোবার্নের মতে:
The Devi Mahatmya is not the earliest literary fragment attesting to the existence of devotion to a goddess figure, but it is surely the earliest in which the object of worship is conceptualized as Goddess, with a capital G.[13]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থেই প্রথম বিভিন্ন নারী দেবতা সংক্রান্ত নানান পুরাণকথা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মতাত্ত্বিক উপাদানগুলি একত্রিত করা হয়। এই একত্রীকরণকেই 'দেবীপূজা প্রথার কেলাসন' বলা হয়ে থাকে।[14]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের একটি বিশিষ্টতা হল এই গ্রন্থ পাঠের প্রথাটি। ধর্মগ্রন্থ পাঠ হিন্দুদের একটি বহুপ্রচলিত প্রথা হলেও, হিন্দু অনুষ্ঠানাদিতে দেবীমাহাত্ম্যম্ পাঠের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সমগ্র গ্রন্থটিকে ৭০০ মন্ত্রের সমন্বয়ে একটি মহামন্ত্র মনে করা হয়ে থাকে।
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে বৈদিক স্তোত্রগুলির মতোই ঋষি, ছন্দ, প্রধানদেবতা ও জপ-বিনিয়োগ নির্দেশ করা হয়েছে। হিন্দু ও পাশ্চাত্য গবেষকগণ মনে করেন, এই কারণেই এটি পৃথক ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা লাভ করেছে, এই গ্রন্থের পৌরাণিক অনুষঙ্গের সঙ্গে এর শাস্ত্রমর্যাদার কোনো সম্পর্ক নেই।[15]
দমর তন্ত্রের মতে, "যেমন যজ্ঞের মধ্যে অশ্বমেধ, দেবগণের মধ্যে হরি, তেমনই স্তোত্রের মধ্যে সপ্তশতী"। আবার ভুবনেশ্বরী সংহিতায় বলা হয়েছে, "বেদের মতো সপ্তশতীও চিরন্তন।"[16]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের একাধিক ভাষ্য রয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সন্তনবী পুষ্পাঞ্জলি, রামশর্মী, নাগেশী, ধমসোদ্ধারম, গুপ্তবতী ও দুর্গাপ্রদীপম্।[17] কাত্যায়নী তন্ত্র, গটক তন্ত্র, মেরুতন্ত্র, রুদ্রযামল ও চিদাম্বর রহস্য ইত্যাদি তন্ত্র ও পৌরাণিক গ্রন্থে দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের গুরুত্ব উল্লিখিত হয়েছে।[17] শাক্তধর্ম সংক্রান্ত আধুনিক গবেষণাতেও এই মতবাদের বিকাশে দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকৃত হয়েছে।
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে বাক ও ত্রয়ীবিদ্যারূপী বৈদিক সংস্কারগুলি স্বীকৃত। এই গ্রন্থে সাংখ্য (তিন গুণ-সমন্বিত প্রকৃতি) ও বেদান্তের দর্শনকে পরমবিদ্যা রূপে মুক্তির কারণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া এই গ্রন্থে আর্য ও অনার্য মাতৃপূজা সংস্কৃতির সমন্বয় প্রচেষ্টাও লক্ষিত হয়েছে।[18]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে বলা হয়েছে, "দেবী ভগবতী মহামায়া বিবেকিগণেরও চিত্তসমূহ বলপূর্বক আকর্ষণ করিয়া মোহাবৃত করেন। সেই মহামায়া এই সমগ্র জগৎ চরাচর সৃষ্টি করেন। তিনি প্রসন্না হইলে মানুষকে মুক্তিলাভের জন্য অভীষ্ট বর প্রদান করেন। তিনি সংসার-মুক্তির হেতুভূমা পরমা ব্রহ্মবিদ্যা-রূপিণী ও সনাতনী। তিনিই সংসারবন্ধনের কারণস্বরূপা অবিদ্যা এবং ব্রহ্মা, বিষ্ণু আদি সকল ঈশ্বরের ঈশ্বরী।"[19]
প্রত্যেক দেবতার একজন শক্তি বর্ণিত হলেও গ্রন্থে অত্যন্ত সচেতনভাবেই তাদের সংশ্লিষ্ট দেবতার সঙ্গিনী হিসেবে প্রদর্শিত করা হয়নি; বরং তাদের সংশ্লিষ্ট দেবতার শক্তিস্বরূপিনীই বলা হয়েছে। আবার দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে শক্তির নারীরূপে ও তার বাহককে পুরুষ রূপেও দেখানো হয়নি। কারণ দেখা গেছে দেবী স্বয়ং শক্তিরূপে প্রকাশিত হচ্ছেন।[20]
আদিযুগীয় সংস্কৃত পুরাণ মার্কণ্ডেয় পুরাণের ৮১-৯৩ অধ্যায়গুলি নিয়ে দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থটি সম্পাদিত হয়েছে। গ্রন্থে ঋষি মার্কণ্ডেয় জৈমিনী সহ তার শিষ্যদের নিকট এই পুরাণের উপাখ্যানগুলি ব্যক্ত করেছেন। দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের ১৩টি অধ্যায় তিনটি চরিত্র বা পর্বে বিভক্ত। প্রত্যেক অধ্যায়ের সূচনায় এক-একজন দেবীকে বন্দনা করা হয়েছে; যদিও গ্রন্থে তাদের সম্পর্কে পৃথকভাবে কিছুই বলা হয়নি।[21]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের মুখবন্ধ হিসেবে সুরথ নামে এক রাজ্যচ্যুত রাজা, সমাধি নামে নিজ পরিবার কর্তৃক বিতাড়িত এক বৈশ্য এবং উভয়কে সকল জাগতিক দুঃখ জয়ের পথ দেখানো এক ঋষির কাহিনির অবতারণা করা হয়েছে। মেধা ঋষি নামে এই ঋষি দেবী ও অসুরগণের মধ্যে সংঘটিত তিনটি মহাকাব্যিক যুদ্ধের কাহিনি বর্ণনা করেন। এই তিন কাহিনির অধ্যায়গুলির অধিষ্ঠাত্রী দেবীরা হলেন মহাকালী (প্রথম অধ্যায়), মহালক্ষ্মী (দ্বিতীয়-চতুর্থ অধ্যায়) ও মহাসরস্বতী (পঞ্চম-ত্রয়োদশ অধ্যায়),এই উপাখ্যানগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ কাহিনিটি হল মহিষাসুরমর্দিনীর কাহিনি। এই কাহিনির মূল উপজীব্য দেবী দুর্গা কর্তৃক মহিষাসুর বধের ঘটনা। সারা ভারতেই হিন্দু শিল্পকলা ও ভাস্কর্যে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে দুর্গার উপস্থিতি প্রায়শই চোখে পড়ে। দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে অন্যান্য যে সকল দেবীর উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখ্য হলেন কালী ও সপ্তমাতৃকা।[22]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের তিনটি পর্বের (প্রথম চরিত্র, মধ্যম চরিত্র ও উত্তর চরিত্র) প্রতীকতত্ত্ব সম্পর্কে কোবার্ন বলেছেন:
"The sage's three tales are allegories of outer and inner experience, symbolized by the fierce battles the all-powerful Devi wages against throngs of demonic foes. Her adversaries represent the all-too-human impulses arising from the pursuit of power, possessions and pleasure, and from illusions of self-importance. Like the battlefield of the Bhagavad Gita, the Devi Mahatmya's killing grounds represent the field of human consciousness ... The Devi, personified as one supreme Goddess and many goddesses, confronts the demons of ego and dispels our mistaken idea of who we are, for – paradoxically – it is she who creates the misunderstanding in the first place, and she alone who awakens us to our true being."[23]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের প্রথম চরিত্রে দেবী মহামায়ার স্বরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই পর্বের আখ্যানভাগ নিম্নরূপ:
চৈত্রবংশীয় রাজা সুরথ ছিলেন সমগ্র পৃথিবীর অধিপতি। কিন্তু কোলাবিধ্বংসী যবনদের হস্তে পরাভূত হয়ে তিনি সকল প্রতিপত্তি হারান। রাজার দুষ্ট অমাত্যগণ তার ধনসম্পদ ও সৈন্যবাহিনী অধিকার করে। মনের দুঃখে রাজা বনে চলে যান। কিন্তু বনে এসেও যে অমাত্যবর্গ তাকে প্রবঞ্চনা করেছিল, তাদের অমঙ্গল আশঙ্কায় তিনি সর্বদা শঙ্কিত হয়ে থাকেন। এমন সময় তার সঙ্গে সমাধি নামে এক বৈশ্যের আলাপ হয়। সমাধি ছিলেন ধনী বনিক। কিন্তু স্ত্রী-পুত্র ও আত্মীয়বর্গ তার সকল সম্পদ হরণ করে তাকে গৃহ থেকে বিতাড়িত করে। সমাধিও সুরথেরই মতো তার দুষ্ট আত্মীয়বর্গের প্রতি স্নেহ মন থেকে দূর করতে পারেননি। রাজা ও বৈশ্য উভয়ে তখন মহর্ষি মেধার কাছে গিয়ে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। মেধা ঋষি তাদের জানান যে এই মোহগ্রস্থতার কারণ দেবী মহামায়ার মায়া। তিনিই সকল জীবকে ইন্দ্রিয়াসক্ত বিষয়ের প্রতি মোহগ্রস্থ করে রাখেন। রাজা মহামায়ার উপাখ্যান শুনতে আগ্রহী হলে মেধা ঋষি তাকে মধুকৈটভ বধের কাহিনিটি ব্যাখ্যা করেন। উক্ত কাহিনি অনুসারে, প্রলয়কালে জগৎ কারণসমুদ্রে পরিণত হলে বিষ্ণু শেষনাগকে শয্যা করে যোগনিদ্রায় মগ্ন হন। এমন সময় বিষ্ণুর কর্ণমল থেকে মধু ও কৈটভ নামে দুই মহাপরাক্রমী অসুরের জন্ম হয়। তারা ব্রহ্মাকে হত্যা করতে উদ্যত হলে ভীত ব্রহ্মা মহামায়াকে স্তবমন্ত্রে তুষ্ট করেন। তিনি মহামায়াকে অনুরোধ করেন বিষ্ণুকে যোগনিদ্রা হতে জাগরিত করার জন্য। মহামায়া বিষ্ণুকে জাগরিত করেন। বিষ্ণু পাঁচ হাজার বছর ধরে মধু ও কৈটভের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। অনন্তর মহামায়া অসুরদ্বয়ের বুদ্ধিভ্রংশ ঘটান। তারা বিষ্ণুকে বর দানে উদ্যত হয়। বিষ্ণু বর চান যে তারা যেন বিষ্ণুরই হস্তে বধ্য হয়। অসুরদ্বয় জগতকে জলময় দেখে বিষ্ণুকে বলেন, জলহীন কোনো স্থানে তাদের হত্যা করতে। তখন বিষ্ণু উভয়ের মস্তক নিজের জঙ্ঘায় রেখে সুদর্শন চক্র দ্বারা ছিন্ন করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই পর্বে ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর শক্তি মহামায়ার অধীনস্থ বলে ব্যাখ্যাত হয়েছে।[24]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে বর্ণিত দেবী দুর্গার কাহিনিগুলির মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় আবার গ্রন্থের মধ্যম চরিত্র বা দ্বিতীয় খণ্ডে উল্লিখিত মহিষাসুর বধের কাহিনিটি। মধু কৈটভ বধের পর ইতোমধ্যে দেবী আদি শক্তি পার্বতী রূপে হিমালয় গৃহে জন্ম গ্রহণ করেছেন। দেবী মাহাত্ম্য অনুসারে : পুরাকালে মহিষাসুর দেবগণকে একশতবর্ষব্যাপী এক যুদ্ধে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিলে, বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মা এবং পরে তাকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সমীপে উপস্থিত হলেন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনি শ্রবণ করে তারা উভয়েই অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। সেই ক্রোধে তাদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করল। প্রথমে বিষ্ণু ও পরে শিব ও ব্রহ্মার মুখমণ্ডল হতে এক মহাতেজ নির্গত হল। সেই সঙ্গে ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়ে সেই মহাতেজের সঙ্গে মিলিত হল। সু-উচ্চ হিমালয়ে স্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে সেই বিরাট তেজঃপুঞ্জ একত্রিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করল। কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূত হওয়ায় এই দেবী কাত্যায়নী নামে অভিহিতা হলেন। অন্য সূত্র থেকে জানা যায়, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে দেবী কাত্যায়নী আবির্ভূতা হয়েছিলেন; শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে কাত্যায়ন দেবীকে পূজা করেন এবং দশমীতে দেবী মহিষাসুর বধ করেন। [25]
যাই হোক, এক এক দেবের প্রভাবে দেবীর এক এক অঙ্গ উৎপন্ন হল। প্রত্যেক দেবতা তাদের আয়ূধ বা অস্ত্র দেবীকে দান করলেন। হিমালয় দেবীকে তার বাহন সিংহ দান করলেন। এই দেবীই অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্মী রূপে মহিষাসুর বধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন (দেবীমাহাত্ম্যম্ অনুসারে, মহালক্ষ্মী দেবী মহিষাসুর বধ করেন। ইনিই দুর্গা। তবে বাঙালিরা এঁকে দশভূজারূপে পূজা করে থাকেন)। দেবী ও তার বাহনের সিংহনাদে ত্রিভুবন কম্পিত হতে লাগল।
মহিষাসুর সেই প্রকম্পনে ভীত হয়ে প্রথমে তার সেনাদলের বীরযোদ্ধাদের পাঠাতে শুরু করলেন। দেবী ও তার বাহন সিংহ প্রবল পরাক্রমে যুদ্ধ করে একে একে সকল যোদ্ধা ও অসুরসেনাকে বিনষ্ট করলেন। তখন মহিষাসুর স্বয়ং দেবীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করলেন। যুদ্ধকালে ঐন্দ্রজালিক মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে দেবীকে ভীত বা বিমোহিত করার প্রচেষ্টায় রত হলেন; কিন্তু দেবী সেই সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিলেন। তখন অসুর অহঙ্কারে মত্ত হয়ে প্রবল গর্জন করল। দেবী বললেন,
“ | গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম। ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।। | ” |
- রে মূঢ়, যতক্ষণ আমি মধুপান করি, ততক্ষণ তুই গর্জন করে নে। আমি তোকে বধ করলেই দেবতারা এখানে শীঘ্রই গর্জন করবেন॥
এই বলে দেবী লম্ফ দিয়ে মহিষাসুরের উপর চড়ে তার কণ্ঠে পা দিয়ে শূলদ্বারা বক্ষ বিদীর্ণ করে তাকে বধ করলেন। অসুরসেনা হাহাকার করতে করতে পলায়ন করল এবং দেবতারা স্বর্গের অধিকার ফিরে পেয়ে আনন্দধ্বনি করতে লাগলেন। [26][27]
দেবীমাহাত্ম্যম্-এ বর্ণিত দেবী দুর্গা সংক্রান্ত তৃতীয় ও সর্বশেষ কাহিনিটি হল শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের কাহিনি। গ্রন্থের উত্তর চরিত্র বা তৃতীয় খণ্ডে বিধৃত পঞ্চম থেকে একাদশ অধ্যায়ে এই কাহিনি বর্ণিত হয়েছে : শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই অসুরভ্রাতা স্বর্গ ও দেবতাদের যজ্ঞভাগ অধিকার করে নিলে দেবগণ হিমালয়ে গিয়ে শিব শক্তি মহাদেবীকে স্তব করতে লাগলেন (পঞ্চম অধ্যায়ে উল্লিখিত এই স্তবটি অপরাজিতস্তব নামে পরিচিত; এটি হিন্দুদের নিকট অতিপবিত্র ও নিত্যপাঠ্য একটি স্তবমন্ত্র; “যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা” ও সমরূপ মন্ত্রগুলি এই স্তবের অন্তর্গত)। এমন সময় সেই স্থানে মহামায়া পার্বতী গঙ্গাস্নানে উপস্থিত হলে, আদ্যাদেবী পার্বতী ইন্দ্রাদি দেবতার স্তবে প্রবুদ্ধা হয়ে তার দেহকোষ থেকে অম্বিকা দেবীর সৃজন করেন। দেবী পার্বতীর দেহ হতে এই দেবী অম্বিকা প্রকট হতেই দেবীর গাত্র বর্ন কালো হয়ে যায় এবং দেবী পার্বতী কালী নামে আখ্যায়িত হন। এই দেবী অম্বিকা পার্বতীর কোষ থেকে আবির্ভূত হওয়ার জন্য তিনি কৌশিকী নামে আখ্যাত হলেন ও শুম্ভ-নিশুম্ভ বধের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। শুম্ভ-নিশুম্ভের চর চণ্ড ও মুণ্ড তাকে দেখতে পেয়ে নিজ প্রভুদ্বয়কে বললেন যে এমন স্ত্রীলোক আপনাদেরই ভোগ্যা হবার যোগ্য। চণ্ড-মুণ্ডের কথায় শুম্ভ-নিশুম্ভ মহাসুর সুগ্রীবকে দৌত্যকর্মে নিযুক্ত করে দেবীর নিকট প্রেরণ করলেন। সুগ্রীব দেবীর কাছে শুম্ভ-নিশুম্ভের কুপ্রস্তাব মধুরভাবে ব্যক্ত করল। দেবী মৃদু হেসে বিনীত স্বরে বললেন, “তুমি সঠিকই বলেছ। এই বিশ্বে শুম্ভ-নিশুম্ভের বীর কে আছে? তবে আমি পূর্বে অল্পবুদ্ধিবশতঃ প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যে আমাকে যুদ্ধে পরাভূত করতে পারবে, কেবলমাত্র তাকেই আমি বিবাহ করব। এখন আমি প্রতিজ্ঞা লঙ্ঘন করি কি করে! তুমি বরং মহাসুর শুম্ভ বা নিশুম্ভকে বল, তাঁরা যেন এখানে এসে আমাকে পরাস্ত করে শীঘ্র আমার পাণিগ্রহণ করেন। আর বিলম্বে কি প্রয়োজন?” সুগ্রীব ক্রোধান্বিত হয়ে দেবীকে নিরস্ত হতে পরামর্শ দিল। কিন্তু দেবী নিজবাক্যে স্থির থেকে তাকে শুম্ভ-নিশুম্ভের কাছে প্রেরণ করলেন।
দেবীর কথায় কুপিত হয়ে অসুররাজ শুম্ভ তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে দৈত্যসেনাপতি ধূম্রলোচনকে প্রেরণ করলেন। ধূম্রলোচনের সঙ্গে দেবীর ভয়ানক যুদ্ধ হল ও সেই যুদ্ধে ধূম্রলোচন পরাজিত ও নিহত হল। এই সংবাদ পেয়ে শুম্ভ চণ্ড-মুণ্ড ও অন্যান্য অসুরসৈন্যদের প্রেরণ করল। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য দেবী নিজ দেহ থেকে দেবী কালীর সৃষ্টি করলেন। চামুণ্ডা ভীষণ যুদ্ধের পর চণ্ড-মুণ্ডকে বধ করলেন। তখন দেবী দুর্গা তাকে চামুণ্ডা আখ্যায় ভূষিত করলেন।
চণ্ড-মুণ্ডের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে সকল দৈত্যসেনাকে সুসজ্জিত করে প্রেরণ করলেন দেবীর বিরুদ্ধে। তখন তাকে সহায়তার প্রত্যেক দেবতার শক্তি রূপ ধারণ করে রণক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন। এই দেবীরা হলেন ব্রহ্মাণী, মাহেশ্বরী, কৌমারী, বৈষ্ণবী, বারাহী, নারসিংহী, ঐন্দ্রী প্রমুখ। এঁরা প্রচণ্ড যুদ্ধে দৈত্যসেনাদের পরাভূত ও নিহত করতে লাগলেন। এই সময় রক্তবীজ দৈত্য সংগ্রামস্থলে উপস্থিত হল। তার রক্ত একফোঁটা মাটিতে পড়লে তা থেকে লক্ষ লক্ষ রক্তবীজ দৈত্য সৃষ্টি হয়। এই কারণে দুর্গা কালীর সহায়তায় রক্তবীজকে বধ করলেন। কালী রক্তবীজের রক্ত মাটিতে পড়তে না দিয়ে নিজে পান করে নেন।
এরপর শুম্ভ আপন ভ্রাতা নিশুম্ভকে যুদ্ধে প্রেরণ করেন। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর দেবী দুর্গা নিশুম্ভকে বধ করলেন। প্রাণপ্রতিম ভাইয়ের মৃত্যুর শোকে আকুল হয়ে শুম্ভ দেবীকে বলল, “তুমি গর্ব করো না, কারণ তুমি অন্যের সাহায্যে এই যুদ্ধে জয়লাভ করেছ।” তখন দেবী বললেন,
“ | একৈবাহং জগত্যত্র দ্বিতীয়া কা মামপরা। পশ্যৈতা দুষ্ট মধ্যেব বিশন্ত্যো মদ্বিভূতয়ঃ।। | ” |
-একা আমিই এ জগতে বিরাজিত। আমি ছাড়া দ্বিতীয় কে আছে? রে দুষ্ট, এই সকল দেবী আমারই বিভূতি। দ্যাখ্, এরা আমার দেহে বিলীন হচ্ছে।
তখন অন্যান্য সকল দেবী দুর্গার দেহে মিলিত হয়ে গেলেন। দেবীর সঙ্গে শুম্ভের ঘোর যুদ্ধ আরম্ভ হল। যুদ্ধান্তে দেবী শুম্ভকে শূলে গ্রথিত করে বধ করলেন। দেবতারা পুনরায় স্বর্গের অধিকার ফিরে পেলেন।[27]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে হিন্দুদের চারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তোত্র সংকলিত হয়েছে। শাস্ত্রানুসারে, যাঁরা নিত্য চণ্ডীপাঠে অসমর্থ তাদের এই চারটি স্তব নিত্য পাঠের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এগুলি হল:
কোবার্ন এই চারটি স্তব সম্পর্কে লিখেছেন:
"While, in terms of quantity of verses, the Goddess's martial exploits are predominant, in terms of quality, these are surpassed by verses of another genre, viz., the hymns to the Goddess. Much of the power of the Devī Māhātmya derives from the way in which the hymnic material is held in counterpoint to the discursive account of her salvific activity in
the world, but to the reader-hearer it is clear that the devotional fervor of the text, and the synthetic work it is performing, emerge most intensely in the hymns."[32]
পৃথক ধর্মগ্রন্থ হিসেবে দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থে কয়েকটি "অঙ্গ" বা আনুষঙ্গিক পর্বাধ্যায় যুক্ত হয়েছে। এই সকল পর্বাধ্যায়গুলির শৈলী বিশ্লেষণ করে কোবার্ন এগুলিকে চতুর্দশ শতাব্দীতে সংযোজিত অংশ বলে মতপ্রকাশ করেছেন। এই অঙ্গগুলির প্রধান বিষয়বস্তু দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের আনুষ্ঠানিক ব্যবহার। মূর্তির সম্মুখে উচ্চৈঃস্বরে পাঠের নিমিত্ত এই অংশগুলি গ্রন্থে সংযোজিত হয়।[33]
চণ্ডীপাঠ শেষে দেবীর কাছে পাঠের ত্রুটির জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে অপরাধক্ষমাপণস্তোত্র পাঠ করা হয়।
শারদীয়া নবরাত্রি উৎসবে দেবীমাহাত্ম্যম্ পাঠের বিশেষ প্রথা রয়েছে। উত্তরাখণ্ড, কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ সহ উত্তর ভারতের কোনো কোনো অঞ্চলে চৈত্র নবরাত্রি উৎসবেও দেবীমাহাত্ম্যম্ পাঠ করা হয়।[38] পশ্চিমবঙ্গে দেবীমাহাত্ম্যম্ পাঠ চণ্ডীপাঠ নামে পরিচিত। দুর্গাপূজা চলাকালে চণ্ডীপাঠ করা হয়। এছাড়া বাংলায় নানান ঘরোয়া ও সামাজিক ধর্মানুষ্ঠানেও চণ্ডীপাঠের প্রথা রয়েছে।
চণ্ডীযজ্ঞ অনুষ্ঠানের সময় দেবীমাহাত্ম্যম্ পাঠ করা হয়। জনসাধারণের কল্যাণকামনায় এই যজ্ঞ সমগ্র ভারতেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।[39]
দেবীমাহাত্ম্যম্ গ্রন্থের ব্রহ্মাকৃত দেবীস্তুতি (শ্লোক ৭২ - ৮৬) এই গ্রন্থের অধিক প্রচারিত শ্লোকগুলির অন্যতম। এই শ্লোকগুলির কাব্যিক সুষমা এবং দার্শনিকতা অতি সুন্দর। নিচে বাংলা হরফে এবং বাংলা অনুবাদে শ্লোকগুলি উল্লিখিত হয়েছে।
সংস্কৃত শ্লোক | বাংলা অনুবাদ |
---|---|
ব্রহ্মোবাচ॥৭২॥ ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষ্টকারঃ স্বরাত্মিকা।
যচ্চ কিঞ্চিৎ ক্বচিৎ বস্তু সদঅসদ্বাখিলাত্মিকে। ইয়া ত্বয়া জগতস্রষ্টা জগৎ পাত্যত্তি ইয়ো জগৎ। বিষ্ণুঃ শরীরগ্রহণম অহম ঈশান এব। সা ত্বমিত্থং প্রভাবৈঃ স্বৈরুদারৈর্দেবী সংস্তুতা। প্রবোধং চ জগৎস্বামী নিয়তাং অচ্যুতো লঘু। |
ব্রহ্মা বললেন॥৭২॥ তুমি স্বাহা (পবিত্র আগুন-এর প্রাণশক্তি), তুমি স্বধা (পুর্বপুরুষদের শক্তি), তুমি-ই বষ্ট (পবিত্র আহুতি মন্ত্র) স্বরূপ স্বর-এর আধার। অর্ধমাত্রা-তেও তুমি-ই থাক সর্বদা,যা উচ্চারিত হয় না তাও তুমি-ই। তুমি ধারণ করে আছ বিশ্বকে, তুমি-ই জগৎ সৃষ্টি করেছ। সৃষ্টিরূপে তুমি ব্যপ্ত চরাচরে, এবং পালনে তুমি স্থিতিরূপা। মহাবিদ্যা তুমি, মহামায়া, মহামেধা, তুমি মহাস্মৃতি। তুমি-ই প্রকৃতি (আদি শক্তি), তুমি-ই সর্বস্ব, তুমি-ই এনেছ (সেই) তিন গুণ (সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ)। তুমি শ্রী, তুমি ঈশ্বরী, তুমি নম্রতা, তুমি বোধসম্পন্ন বুদ্ধি। (তুমি)খড়্গ, শূল, ঘোড়া,গদা, চক্রধারিণী। (অথচ পাশাপাশি তুমি) সুন্দরী, সৌন্দর্যের শেষ সীমাও ছাড়ান অপরূপা, যে সৌন্দর্য সম্ভব বলে মনে হয় তার চেয়েও বেশি সুন্দরী তুমি। যেখানে, যখন, যা কিছু বস্তু আছে - প্রকৃত বা মায়া, সবার-ই অন্তরে তুমি। এমন কি, জগৎ সৃষ্টি, পালন আর ধ্বংস করেন যিনি সেই তাকেও তুমি বিষ্ণুর শরীর গ্রহণ করে, আমার (শরীর), বা, (সেই) পরম পুরুষের তোমার প্রভাবে দেবী থামাও তুমি এই প্রায় অপরাজেয় অসুরদের। জগৎস্বামী (বিষ্ণুকে) তুমি তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙ্গিয়ে জাগিয়ে তোল। |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.