তুরস্কে ইসলাম

উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

তুরস্কে ইসলাম

ইসলাম হলো তুরস্কের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর ধর্ম। তুরস্কের মোট জনসংখ্যার ৯০% মানুষ সুন্নি মুসলিম। অধিকাংশ তুর্কি সুন্নি মুসলিম আইনশাস্ত্রের হানাফি মাযহাবের অন্তর্গত। এই অঞ্চলে ইসলামের প্রতিষ্ঠিত উপস্থিতি শুরু হয় ১১ শতকের শেষার্ধে, যখন সেলজুকরা পূর্ব আনাতোলিয়ায় নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করতে শুরু করে।[]

ইউরোপে ইসলাম
দেশের জনসংখ্যা অনুযায়ী শতকরা হার[]
  ৯০–১০০%
  ৭০–৮০%
কাজাখস্তান
  ৫০–৭০%
  ৩০–৫০%
উত্তর মেসেডোনিয়া
  ১০–২০%
  ৫–১০%
  ৪–৫%
  ২–৪%
  ১–২%
  < ১%

যদিও সরকারি সমীক্ষা অনুসারে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৯৯.৮%, [] তবে এটিকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করা হয়। বেশিরভাগ সমীক্ষায় মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৯৪% বা তার কম বলে অনুমান করা হয়েছে।[][][][][] সবচেয়ে জনপ্রিয় মাযহাব, হলো সুন্নি ইসলামের হানাফি মাযহাব (সামগ্রিক মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় ৯০%)। অবশিষ্ট মুসলিম সম্প্রদায় মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ৯%,[] আলেভিবাদী, জাফরি (১%)[][১০] এবং আলবীয় (আনুমানিক জনসংখ্যা প্রায় ৫-১০ লক্ষ, বা প্রায় ১% [১১][১২] ) মানুষ নিয়ে গঠিত। এছাড়া সুফিঅসাম্প্রদায়িক মুসলিমদের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উপস্থিতিও বিদ্যমান। [১০][১৩][১৪][১৫]

ইতিহাস

সারাংশ
প্রসঙ্গ

ইসলামী সাম্রাজ্য

Thumb
পরবর্তী আব্বাসীয় যুগে ইসলামী বিজয় আনাতোলিয়ায় বিস্তৃত হয়।

৭ম ও ৮ম শতাব্দীর প্রথম দিকে মুসলিমদের বিজয়ের সময়, আরব বাহিনী ইসলামী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। উমাইয়া খিলাফত ইসলামের প্রসার অব্যাহত রাখে। অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আব্বাসীয় খিলাফতের উত্থান এবং রাজধানী দামেস্ক থেকে বাগদাদ স্থানান্তরের মাধ্যমে দ্রুতই ইসলামের স্বর্ণযুগ শুরু হয়।[১৬]

Thumb
সেলিমিয়া মসজিদ, এদিরনে

পরবর্তী সময়ে প্রাথমিক সম্প্রসারণ এবং ক্রীট (৮৪০) দখল লক্ষ্য করা যায়। আব্বাসীয়রা দ্রুতই তাদের দৃষ্টি পূর্ব দিকে কেন্দ্রীভূত করে। আব্বাসীয় শাসনের ভাঙন এবং তাদের শিয়া প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতিমীয়বুয়াইদদের উত্থানের সময়, পুনরুজ্জীবিত বাইজান্টাইনরা ৯৬১ সালে ক্রীটসিলিসিয়া ও ৯৬৫ সালে সাইপ্রাস পুনর্দখল করে এবং ৯৭৫ সালে লেভান্ট অঞ্চলে প্রবেশ করে। সেলজুক তুর্কিদের আগমনের আগ পর্যন্ত, বাইজান্টাইনরা ফাতিমীয়দের সাথে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা করতে থাকে। প্রথমে তারা (সেলজুকরা) আব্বাসীয়দের সাথে মিত্রতা করে এবং পরে ডি ফ্যাক্টো বা কার্যত শাসক হিসাবে শাসন শুরু করে।

১০৬৮ সালে, আল্প আরসলান ও তাদের মিত্র তুর্কমান উপজাতিরা অনেক আব্বাসীয় অঞ্চল পুনর্দখল করে এবং বাইজান্টাইন অঞ্চলেও আক্রমণ চালায়। ১০৭১ সালের মানজিকের্টের যুদ্ধে বড় জয় লাভের পর তারা পূর্ব এবং মধ্য আনাতোলিয়া অঞ্চলের আরও গভীরে প্রবেশ করে। সেলজুক রাজবংশের বিচ্ছিন্নতার ফলে ডানিশমেন্দ, রুম সালতানাত এবং বিভিন্ন আতাবেগদের মতো ছোট ছোট প্রতিদ্বন্দ্বী তুর্কি রাজ্যগুলোর উত্থান ঘটে। এরা ক্রুসেডের সময় অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং অটোমান সাম্রাজ্যের উত্থান পর্যন্ত আনাতোলিয়ায় ক্রমশ বিস্তৃতি লাভ করে।

উসমানীয় খেলাফত

Thumb
সুলেমানিয়া মসজিদ, ইস্তাম্বুল

১২শ শতাব্দী থেকে নতুনভাবে অধিকসংখ্যক তুর্কি অভিবাসীদের আগমন ঘটে, যাদের মধ্যে অনেকেই তরিকার অনুসারী ছিলেন। এই অভিবাসীদের মধ্যে কেউ কেউ পরবর্তীতে প্রথাবহির্ভূত মতবাদ গ্রহণ করেন। আনাতোলিয়ার তুর্কিদের মধ্যে জনপ্রিয় একটি তরিকা ছিল সাফাভিয়া তরিকা, যা মূলত সুন্নি ও অরাজনৈতিক ছিল, তবে পরবর্তীতে এটি শিয়া ও রাজনৈতিক হয়ে ওঠে। ১৪শ এবং ১৫শ শতাব্দীতে, সাফাভিয়া তরিকা এবং বক্তাশির মতো তরিকা উসমানীয়দের সাথে (যারা ছিলেন প্রথাগত সুন্নি মুসলিম) পূর্ব আনাতোলিয়ার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা শুরু করে। বক্তাশি তরিকা প্রথাগত সুন্নি মুসলমানদের একটি উপদল হিসাবে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও তারা তাদের প্রথাবহির্ভূত বিশ্বাস ত্যাগ করেনি। বিপরীতে, সাফাভিরা ইরান জয় করে তাদের মতবাদ বিস্তার করে এবং প্রথাগত ইসনা আশারিয়া শিয়া ইসলামের প্রচারক হয়ে ওঠে।

Thumb
একটি আধুনিক মসজিদ, আঙ্কারা, তুরস্ক

১৪৫৩ সালে বাইজেন্টাইন রাজধানী কনস্টান্টিনোপল (বর্তমান ইস্তাম্বুল) জয়ের মাধ্যমে উসমানীয়রা আনাতোলিয়া ও থ্রেসে তাদের সাম্রাজ্য সুসংহত করে। প্রথম সেলিমের শাসনামলে উসমানীয়রা খিলাফত উপাধি পুনরুজ্জীবিত করে। যদিও এটিতে আনুষ্ঠানিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাব ছিল, তবে এখানে সুন্নি ধর্মীয় ব্যক্তিরা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতেন। তাত্ত্বিকভাবে শরিয়ার আইন মুসলিম প্রজাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল দিক নিয়ন্ত্রণ করত। বিচার বিভাগের প্রধান সুলতানের ঠিক নিচে অবস্থান করতেন এবং ক্ষমতার দিক থেকে কেবল উজিরে আজমের পরে ছিলেন।

অটোমান যুগের প্রথম দিকে ইস্তাম্বুলের প্রধান মুফতির পদ শায়খুল ইসলাম (ইসলামের নেতা) পদে পরিণত হয়, যা সাম্রাজ্যের সকল আদালতের উপর সর্বোচ্চ এখতিয়ার রাখত এবং শরিয়ার ব্যাখ্যা ও প্রয়োগে কর্তৃত্ব প্রয়োগ করত। শায়খুল ইসলামের প্রদত্ত আইনগত মতামত চূড়ান্ত ব্যাখ্যা হিসাবে বিবেচিত হত।

ধর্মনিরপেক্ষতার যুগ

Thumb
আমাসিয়ায় রাষ্ট্রপতি মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এবং মুফতি আব্দুর রহমান কামিল এফেন্দি (১৯৩০)

উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তিমকালে তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতার শুরু হয় এবং এটি আতাতুর্কের সংস্কারসমূহের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। তার নেতৃত্বে খিলাফত বিলুপ্ত হয় এবং ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তাদের ধর্মীয় ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং শেষ পর্যন্ত তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। ধর্মীয় ভিত্তি জাতীয়করণ করা হয়। প্রভাবশালী এবং জনপ্রিয় দরবেশ ও সূফী তরিকাকেও দমন করা হয়।

প্রজাতন্ত্র যুগ: ১৯২৩–বর্তমান

Thumb
কোজাটেপ মসজিদ, আঙ্কারা

তুরস্ক, যা অটোমান সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী ছিল, আন্তর্জাতিক মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতীকী নেতৃত্ব ত্যাগ করলে, সরকারের সাথে ইসলামের সম্পর্কের বড় পরিবর্তন ঘটে। ধর্মনিরপেক্ষতা (বা লাইকলিক) আতাতুর্কের "ছয় তীর" কর্মসূচির একটি অংশ ছিল, যা তুরস্ককে আধুনিকীকরণ করার উদ্দেশ্যে গৃহীত হয়।

তথ্যসূত্র

টীকা

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.